বিজ্ঞান-ও-প্রযুক্তি
স্টারলিংকের ইন্টারনেট নিয়ে আপনার যা জানা প্রয়োজন
দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক। শুরুতে স্টারলিংক দুটি প্যাকেজ দিয়ে শুরু করছে—স্টারলিংক রেসিডেন্স ও রেসিডেন্স লাইট। মাসিক খরচ একটিতে ৬ হাজার টাকা, অপরটিতে চার হাজার ২০০ টাকা। সেট-আপ যন্ত্রপাতির জন্য এককালীন খরচ হবে ৪৭ হাজার টাকা।
তবে বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা দিতে স্টারলিংকের যাত্রা শুরু হওয়াতে এ সম্পর্কে জনমনে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এ সম্পর্কিত নানা জিজ্ঞাসা ও তার জবাব দিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। নিচে প্রশ্ন ও জবাবগুলো তুলে ধরা হলো।
* স্টারলিংকের কী ডেটা লিমিট রয়েছে?
স্টারলিংকের কোনো ডেটা লিমিট নেই বলে নিশ্চিত করা হয়েছে বিবৃতিতে।
* স্টারলিংক সত্যিকার অর্থে সরকার কাদের জন্য করেছে? এর সেবাগ্রহীতা কারা?
প্রেস উইংয়ের পাঠানো তথ্যমতে, দেশের প্রত্যন্ত ও দূরবর্তী অঞ্চল— যেমন পার্বত্য অঞ্চল, হাওরাঞ্চল কিংবা বনাঞ্চলের মতো জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে স্টারলিংক ব্যবহার করা হবে। সারা দেশের যেকোনো স্থান থেকেই এই সেবা ব্যবহার করা যাবে।
আরও পড়ুন: স্টারলিংক কী? কীভাবে কাজ করে ইলন মাস্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা
বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এখনো ফাইবার পৌঁছায়নি। সেসব জায়গায় মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে সেবাদান করা হয়, যেটির সক্ষমতা কম। এ সমস্যা সমাধানে স্টারলিংকের একটা সেট-আপ বক্স কিনে গ্রামের মানুষও লো লেটেন্সি এবং উচ্চ গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
এতে সংসদ ভবনে কিংবা উপদেষ্টার বাসভবন বা তার অফিসে যেই স্পিডে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয, ঠিক একই স্পিডে ওইসব অঞ্চলেও ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
* স্টারলিংক কি উদ্যোক্তা বান্ধব? উদ্যোক্তারা ইন্টারনেট সেবা প্রদানে কীভাবে স্টারলিংক ব্যবহার করতে পারবেন?
সরকারের ভাষ্যে, স্টারলিংক উদ্যোক্তা বান্ধব হবে। এটির দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় একজন না পারলে কয়েকজন মিলে একটি সেট-আপ বক্স কিনে একসঙ্গে কয়েকজন ব্যবহার করতে পারবে। এটির ওয়াইফাই রেঞ্জ আনুমানিক, আনুমানিক ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ মিটার। এই জোনের মধ্যে যেসব উদ্যোক্তা থাকবেন তারা সবাই মিলে তহবিল গঠন করে ৪৭ হাজার টাকা দিয়ে একটি সেট-আপবক্স কিনে উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
এ নিয়ে আইনে কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরী করা হয়নি বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া, শহরের বাসভবনে ওয়াইফাই শেয়ারিং করেও ইন্টারন্টে ব্যবহার সম্ভব হবে। স্টারলিংকে যেহেতু বিল্টইন রাউটার আছে, তাই রাউটার থেকে রাউটারে আইএসপি সেটাপেও ব্যবহার সম্ভব।
পাশাপাশি মাইক্রোক্রেডিট অথোরিটি (এমআর) কিংবা ফাইন্যান্সিয়াল অর্গানাইজেশন কিংবা ব্যাংক থেকে সেট-আপ বক্স কেনার জন্য উদ্যোক্তাদের অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা করারও আশ্বাস দিয়েছে সরকার।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নাগরিক সেবার যারা উদ্যোক্তা হবেন, তাদের জন্য সহজে স্টারলিংক নেওয়ার জন্য ফাইন্যান্সিয়াল প্যাকেজ তৈরিরও পরিকল্পনা করছে সরকার।
তাছাড়া, স্টারলিংকের মূল্য কিছুটা বেশি বলে স্বীকার করে সরকার জানিয়েছে, দাম বেশি থাকার কারণে এটি শেয়ার করে ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ রাখা হয়নি।
এটি ব্যবহার করে ব্যবসা মডেল তৈরির পাশাপাশি কেউ যদি এই স্টারলিংক ব্যবহার করে তা ইন্টারনেট নিয়ে (মোবিলিটি এবং রোমিং সুবিধা ছাড়া) সেটাকে ফিড করে যদি ইন্টারনেট ব্যবহার করে সেক্ষেত্রেও কোনো বাধা নেই।
এ ছাড়াও ড. ইউনূসের ফোন লেডি ধারণার কথা উল্লেখ করে জানানো হয়, যেকোনো ঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান (এমএফআই) বা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) বা অন্য কোম্পানিগুলো বা ফাইন্যান্সিয়াল অর্গানাইজেশনগুলো চাইলে ওয়াইফাই লেডি হিসেবে নতুন একটি উদ্যোক্তার ধারা সৃষ্টি করতে পারে। তারা চাইলে শুধুমাত্র গ্রামীণ মহিলাদেরকে একটা বিশেষ ঋণ দিতে পারে যার মাধ্যমে তারা স্টারলিংক নিয়ে ইন্টারনেট সেবা বিক্রয় করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভবন ছাড়াও ইনফরমাল কো-ওয়েবিং বিজনেসের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারবেন।
* স্টারলিংকের মাধ্যমে জাতীয় সার্বভৌমত্ব বিঘ্নিত হবে কী?
বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, স্টারলিংকের একটি লোকাল গেটওয়ে থাকবে। এর কমার্শিয়াল টেস্ট রান ও গ্রাউন্ড টেস্ট চলমান। এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য স্টারলিংক কোম্পানিকে ৯০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে, ইতোমধ্যে ১০ দিন অতিবাহিত হয়েছে। ৯০ দিনের সময়সীমা পার হলেই তাদের লোকাল গেইটওয়ে বাধ্যতামূলক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। ফলে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পাশাপাশি ডিভাইসের ক্ষেত্রে রেট, ভ্যাট, ট্যাক্স থাকায় এনওসি (বিভাগীয় অনাপত্তি সনদ) নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: স্টারলিংক বাংলাদেশের ডিজিটাল জগতে বিপ্লব আনবে: প্রধান উপদেষ্টা
* চলমান চীন-মার্কিন বাণিজ্য দ্বন্দ্বের মধ্যে স্টারলিংকের ব্যবহারে অনুমতি প্রদানে কোনো প্রভাব পড়বে কী ?
চলমান পরিস্থিতিতে এই প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের ভাষ্যে, বাংলাদেশ যোগাযোগ প্রযুক্তির বিচারে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়।
বাংলাদেশে ৪জি বা ৫জি টেকনলোজিতে সর্বাধুনিক নেটওয়ার্ক ও ব্যাকবোন স্থাপনে চীনা প্রযুক্তিই ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া বিটিসিএল, টেলিটক সংস্থার অধীন চীনা অর্থায়নে ও প্রকৌশলীদের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে।
চীন কিংবা মার্কিন ব্যবসায়ীরা স্বাধীনভাবে যেন বাংলাদেশে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে উন্মুক্তভাবে ব্যবসা করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে চায় সরকার। সব দেশকেই একইরকম সুবিধা দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ।
* আবাসিক গ্রাহকদের জন্য স্টারলিংক এর দাম কী সহনীয়?
একটি ভবনের কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাটের সদস্যরা মিলিতভাবে এই সেবাটি কিনে থাকে তাহলে উদ্যোক্তা ও ভোক্তাদের জন্য বিষয়টি সহজ হবে। এতে এককালীন দামটা বেশি হলেও বা সেট-আপব্যয়টা বেশি হলেও সবার মধ্যে সরবরাহ হয়ে যাওয়ার পর আর খরচ বেশি মনে হবেনা বলে মনে করে সরকার।
* রিজিওনাল প্রাইস বিবেচনায় স্টারলিংকের ব্যয় কী বাংলাদেশে বেশি?
রিজিওনাল প্রাইস বিশ্লেষন করে বাংলাদেশে স্টারলিংকের দাম সবচেয়ে কম বলে জানিয়েছে সরকার। এমনকি শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, থাইল্যান্ডের চেয়েও কম এই দাম।
* সরকারি কোম্পানির স্বার্থ কিভাবে রাখা হচ্ছে?
বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, দুই ভাবে সরকারি কোম্পানির স্বার্থ সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রথমত, সাবমেরিন কেবল কোম্পানির মাধ্যমে এবং দ্বিতীয়ত স্যাটেলাইট কোম্পানির মাধ্যমে।
৩ দিন আগে
দেশে স্টারলিংকের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু
স্টারলিংক আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে। মঙ্গলবার (২০ মে) সকালে সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এমন তথ্য জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফাইজ় তাইয়েব আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘সোমবার (১৯ মে) বিকালে তারা ফোন কলে আমাকে বিষয়টা জানিয়েছেন এবং আজ সকালে তাদের এক্স হ্যান্ডেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।’
‘শুরুতে স্টারলিংক দুটি প্যাকেজ দিয়ে শুরু করছে- স্টার্লিংক রেসিডেন্স এবং রেসিডেন্স লাইট। মাসিক খরচ একটিতে ৬০০০ টাকা, অপরটিতে ৪২০০। সেটাপ যন্ত্রপাতির জন্য ৪৭ হাজার টাকা এককালীন খরচ হবে,’ যোগ করেন তিনি।
ফাইজ় তাইয়েব আহমেদ বলেন, এখানে কোন স্পীড ও ডাটা লিমিট নেই। ব্যক্তি ৩০০ এম্বিপিএস পর্যন্ত গতির আনলিমিটেড ডেটা ব্যবহার করতে পারবেন। বাংলাদেশের গ্রাহকরা আজ থেকেই অর্ডার করতে পারবেন। এর মাধ্যমে ৯০ দিনের মধ্যে যাত্রা শুরুতে স্যারের প্রত্যাশাটি বাস্তবায়িত হলো।’
আরও পড়ুন: স্টারলিংকের লাইসেন্সে বিটিআরসির সবুজসংকেত, মন্ত্রণালয়ে চিঠি
তিনি বলেন, ‘খরুচে হলেও এর মাধ্যমে প্রিমিয়াম গ্রাহকদের জন্য উচ্চমান এবং উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রাপ্তির টেকসই বিকল্প তৈরি হয়েছে।’
‘পাশাপাশি, যেসব এলাকায় এখনো ফাইবার কিংবা দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছেনি, সেখানে কোম্পানিগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণ এর সুযোগ পাবেন, এনজিও ফ্রিল্যান্সার এবং উদ্যোক্তারা বছরব্যাপী নিরবিচ্ছিন্ন উচ্চগতির ইন্টারনেটের নিশ্চয়তা পাবেন,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী।
৩ দিন আগে
আপনার চাকরি খেয়ে ফেলবে এআই: ফাইভারপ্রধানের হুঁশিয়ারি
চাকরির বাজারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ক্রমাগত পরিবর্তনশীল প্রভাব নিয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরাইলি বহুজাতিক অনলাইন মার্কেটপ্লেস ফাইভারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিকা কাউফম্যান। এআইনির্ভর ভবিষ্যতে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে দক্ষতা ও খাপ খাইয়ে নেওয়ার সক্ষমতা বাড়াতে জোর দেন তিনি।
ফাইভারের একটি অভ্যন্তরীণ মেমোর বিস্তারিত বিবরণে তিনি এমন হুঁশিয়ারি দেন। পরবর্তীতে সেটি সামাজিকমাধ্যমেও শেয়ার দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এমন খবর দিয়েছে।
যেভাবে দ্রুতগতিতে প্রযুক্তির বিকাশ ঘটছে, তাতে অনলাইন প্ল্যাটফর্মনির্ভর বাজারসহ শিল্পকারখানা নতুন করে ঢেলে সাজানোর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। সেই দিকে আভাস দিয়ে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলায় উপযুক্ত করে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে ফ্রিল্যান্সার্স ও কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মিকা কাউফম্যান বলেন, ‘কঠিন সত্য হলো—আপনার কর্মসংস্থান দখল করতে আসছে এআই, আমার চাকরিটাও তারা নিয়ে নেবে। এটা আপনাদের জেগে ওঠার ডাক। তাতে হোক না আপনি প্রোগ্রামার, ডিজাইনার, পণ্য ব্যবস্থাপক, ডেটা বিজ্ঞানী, আইনজীবী, বিক্রেতা কিংবা কোনো ব্যবসায়ী। আপনাদের কর্মসংস্থান কেড়ে নিতে ধেয়ে আসছে এআই।’
“একসময় যেসব কাজকে সহজ বলে বিবেচনা করা হতো, এখন আর সেগুলোর অস্তিত্ব নেই। আবার যে কাজগুলো কঠিন বলে বিবেচনা করা হতো, সেগুলো সহজ হয়ে গেছে। আর যে কাজগুলো অসম্ভব বলে মনো হতো, সেটা এখন নতুন ‘কঠিন কাজ’।”
তিনি বলেন, ‘আপনি যা করছেন, সেখানে যদি একেবারে ব্যতিক্রমী মেধাবী না হন, কয়েক মাসের ব্যবধানে আপনাদের কর্মসংস্থান পরিবর্তনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে,’ বলেন ফাইভারের এই প্রধান নির্বাহী।
আরো পড়ুন: ইসরাইলকে এআই সরবরাহের প্রতিবাদ: মাইক্রোসফটের ২ প্রকৌশলী বরখাস্ত
সর্বশেষ এআই উদ্ভাবন নিয়ে আরও লেখাপড়া ও দক্ষতা অর্জনে কর্মীদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মিকা কাউফম্যান বলেন, ‘এআই প্রোগ্রাম লার্জ ল্যাংগুয়েজ মডেলসের (এলএলএমএস) ওপর দক্ষতা অর্জন করতে হবে।’
যারা এটার কদর বুঝবেন না, অর্থাৎ দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন না, তাদের ক্যারিয়ার ঝুঁকিতে পড়বে বলেও হুশিয়ার করেন ফাইভার প্রধান নির্বাহী। কাজেই কর্মীদের আরও দক্ষতা ও দ্রুততার সাথে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সার্চ জায়ান্ট গুগল ‘সেকেলে’ হয়ে যাবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন মিকা কাউফম্যান।
১৬ দিন আগে
স্টারলিংকের লাইসেন্সে বিটিআরসির সবুজসংকেত, মন্ত্রণালয়ে চিঠি
বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা দিতে স্টারলিংকের লাইসেন্সের জন্য সবুজসংকেত দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। পরে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। টেলিযোগাযোগ আইন অনুযায়ী, কাউকে লাইসেন্স দেওয়ার আগে বিটিআরসিকে মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি নিতে হবে।
গত ৭ এপ্রিল স্টারলিংক ‘বাংলাদেশে নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) স্যাটেলাইট সার্ভিসেস অপারেটরদের জন্য নির্দেশিকা’ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রক কাঠামোর অধীনে বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহের জন্য বিটিআরসির কাছে আবেদন করা হয়েছে।
পরে ২৫ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ৯০ দিনের মধ্যে দেশে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবার বাণিজ্যিক উদ্বোধন করা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
কর্মকর্তারা জানান, বিদেশি স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড গেটওয়ে ব্যবহার করে দেশে পরীক্ষামূলকভাবে স্টারলিংকের পরিষেবা চালানো হয়েছে।
তবে, বাণিজ্যিকভাবে স্টারলিংকের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোম্পানিটিকে নন-জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট অরবিট (এনজিএসও) নীতি মেনে চলতে হবে। এই নীতিমালায় স্থানীয় ব্রডব্যান্ড গেটওয়ে বা আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) ব্যবহার করতে হয়।
ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হলো স্টারলিংক। কোম্পানিটি বাংলাদেশে পরিষেবা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য লাইসেন্স পেতে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছে।
স্টারলিংক ইন্টারনেট পরিষেবা বাংলাদেশে চালু করার লক্ষ্য হলো বারবার ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়াকে রোধ করা।
আরও পড়ুন: স্টারলিংক বাংলাদেশের ডিজিটাল জগতে বিপ্লব আনবে: প্রধান উপদেষ্টা
দেশে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করার জন্য বাজারে স্টারলিংকের প্রবেশকে বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও উদ্যোক্তাদের জন্য এটি উপকারী হবে।
বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো এরইমধ্যে স্টারলিংকের গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপনে সহযোগিতা করছে, যা স্যাটেলাইট সংযোগকে একীভূত করতে সহজতর করবে।
বিশ্বব্যাপী, ইলন মাস্কের স্পেসএক্স পরিচালিত স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট জগতে একটি বড় নাম, যা দিন দিন আরও বেশি সম্প্রসারিত হচ্ছে।
অ্যামাজনের প্রজেক্ট কুইপার, ওয়ানওয়েব এবং টেলিস্যাটের মতো কোম্পানিগুলোও লো-আর্থ-অরবিট স্যাটেলাইটগুলোর কনস্টেলেশন স্থাপন করছে, যা বিশেষত দূর্গম এবং অল্প সেবা প্রাপ্ত এলাকাগুলোতে উচ্চ-গতির ব্রডব্যান্ড সেবা দেবে।
স্টারলিংক বর্তমানে ৬ হাজারের বেশি স্যাটেলাইট চালাচ্ছে এবং বিশ্বজুড়ে তিন মিলিয়নের বেশি ব্যবহারকারীকে সেবা দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি এমন এলাকায় বড় পরিবর্তন আনতে পারে, যেখানে সাধারণ ফাইবার-অপটিক বা মোবাইল ব্রডব্যান্ড সেবা পাওয়া যায় না বা কাজ করে না।
আরও পড়ুন: স্টারলিংক কী? কীভাবে কাজ করে ইলন মাস্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা
২৫ দিন আগে
দেশে ৩ স্তরে কমছে ইন্টারনেটের দাম
দেশে তিন স্তরে নতুন করে কমছে ইন্টারনেটের দাম। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ও ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) পর্যায়ে ১০ শতাংশ এবং ন্যাশনাল ট্রান্সমিশন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ দাম কমাবে ফাইবার অ্যাট হোম। পাশাপাশি মোবাইল সেবাদাতা ৩টি বেসরকারি কোম্পানিকেও ইন্টারনেটের দাম কমানোর আহ্বান জানিয়েছে সরকার।সোমবার (২১ এপ্রিল) সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ফাইবার অ্যাট হোম ম্যানেজমেন্টের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফাইজ় তাইয়েব আহমেদ।
মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমানোর পদক্ষেপে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিও সামান্য কিছুটা কমে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ১০ শতাংশ দাম কমছে ইন্টারনেটের
ইতোমধ্যে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) লাইসেন্স প্রাপ্ত কোম্পানিগুলোর অ্যাসোসিয়েশন থেকে পাঁচ এমবির পরিবর্তে ৫০০ টাকায় ১০ এমবি ইন্টারনেট প্রদানের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তাইয়েব আহমেদ।
তিনি বলেন, এর আগে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি সকল আইআইজি এবং আইএসপি গ্রাহকদের জন্য ১০ শতাংশ, এবং পাইকারি গ্রাহকদের জন্য অতিরিক্ত ১০ শতাংশ সহ মোট ২০ শতাংশ দাম কমিয়েছে।
এ নিয়ে তিন থেকে চারটি স্তরে ইন্টারনেটের মূল্য কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী বলেন, এখন শুধু মোবাইল সেবাদাতা ৩টি বেসরকারি কোম্পানির দাম কমানো বাকি। তাছাড়া মোবাইল কোম্পানিগুলোকে ইতোমধ্যে ডিডব্লিউডিএম সুবিধা ও ডার্ক ফাইবার সুবিধা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এ কারণে বেসরকারি মোবাইল কোম্পানিগুলোর ইন্টারনেটের দাম না কমানোর কোন ধরনের যৌক্তিক কারণ কিংবা অজুহাত অবশিষ্ট থাকে না বলে মত দেন তিনি। তাইয়েব আহমেদ বলেন, ‘সরকার মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরগুলোকে (এমএনও) পলিসি সাপোর্ট দিয়েছে এবং সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় স্তর গুলোতে ওপাইকারি পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমিয়েছে। এখন তাদের জাতীয় উদ্যোগে শরিক হবার পালা।’
তাছাড়া মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমানোর পদক্ষেপে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিও সামান্য কিছুটা কমে আসবে বলেও মত দেন তিনি।
আরও পড়ুন: স্টারলিংক কী? কীভাবে কাজ করে ইলন মাস্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা
তিনি বলেন, সরকার আশা করে অতি দ্রুতই তিনটি বেসরকারি মোবাইল কোম্পানি অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে মোবাইল ইন্টারনেটের মূল্য পতনের ঘোষণা দিবে।
৩২ দিন আগে
বাদী পক্ষে লড়তে আদালতে এআই-উকিল!
আদালতে উপস্থিত হয়ে বিচারকরা এক ব্যক্তির আপিলের শুনানি শুরু করলেন। বাদী পক্ষের উকিল হাজির হলেন ভিডিওতে। কিন্তু মজার বিষয় হলো, এই উকিলের কোনো পেশাগত ডিগ্রি নেই। এর চেয়েও আশ্চর্যের বিষয় হলো বাস্তবেই তার কোনো অস্তিত্ব নেই, তিনি কোনো মানুষই নয়!
তিনি মূলত কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তায় তৈরি করা এক এভাটার (কোনো মানুষের প্রতিকৃতি)।
এমনই চমকপ্রদ একটি ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে। স্থানীয় সময় গেল ২৬ মার্চ জেরোমি ডিওয়াল্ড নামে এক ব্যক্তির চাকরি সংক্রান্ত একটি আপিল শুনানিকালে এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি।
নিজের পক্ষে কোনো উকিল না থাকায় তিনি এআইয়ের সহায়তায় একটি এভাটার বানিয়ে তাকেই আদালতের সামনে উপস্থাপন করেছেন। তবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তার চালাকি ধরে ফেলেন বিচারকরা।
আপিলের শুনানির সময় নিজের পক্ষে কথা বলার জন্য একটি ভিডিও উপস্থাপন করার অনুমতি চেয়েছিলেন ডিওয়াল্ড। শুনানির দিন বিচারক স্যালি মানজানেট ডানিয়েল বলেন, ‘আপিলকারী তার বক্তব্য উপস্থাপনের একটি ভিডিও দিয়েছেন, ভিডিও এখন চালু করা হবে।’
আরও পড়ুন: ডিপসিক: এআইয়ের দুনিয়ায় চ্যাটজিপিটি ও জেমিনির লড়াকু প্রতিপক্ষ
ভিডিওটি চালু হলে স্ক্রিনে (পর্দায়) বেশ গোছালো ও পরিপাটি পোশাক পরিহিত এক সুদর্শন যুবককে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘আদালতের সদয় বিবেচনার জন্য জানাচ্ছি, আমি বিচারকদের সামনে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বাদীর পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরতে উপস্থিত হয়েছি।’
সঙ্গেই সঙ্গেই তাকে থামিয়ে দিয়ে বিচারক জানতে চান, ‘এই ব্যক্তি মামলার কোনো আইনজীবী কিনা? বাদী ডিওয়াল্ড জানান, ‘ভিডিওর ব্যক্তি আসলে মানুষ নন, এআইয়ের সহায়তায় একে তিনি তৈরি করেছেন আাদলতে তার পক্ষে কথা বলার জন্য।’
এ কথা শুনে রেগে আগুন হয়ে বিচারক বললেন, ‘আমি প্রতারিত হতে পছন্দ করি না।’ ডিওয়াল্ডকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি যখন আবেদন করেছেন, এই বিষয়ে তখনই আদালতকে অবগত করা প্রয়োজন ছিল।’
এরপরে বিচারকদের কাছে ক্ষমা চান মামলার বাদী ডিওয়াল্ড। তিনি জানান, ‘কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে তিনি এই কাজ করেননি। তার আইনি বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য কোনো আইনজীবী পাননি। এ কারণে তার আইনি বক্তব্য তুলে ধরতে এই এভাটার বানিয়েছেন তিনি।’
ডিওয়াল্ড সাধারণত কথা বলার সময় তোতলান, তার উচ্চারণে অস্পষ্টতা রয়েছে। তিনি আশা করেছিলেন এ ধরনের কোনো সীমাবদ্ধতা ছাড়াই আদালতে কথা বলতে পারবে ওই এভাটার। তবে তার আশার গুড়ে বালি পড়তে লেগেছে মাত্র কয়েক সেকেন্ড। বিচারক ধরে ফেলেন ভিডিওর ব্যক্তি আসল নন।
বার্তা সংস্থা এসোসিয়েট প্রেসের (এপি) এক খবরে বলা হয়েছে, সান ফ্রান্সিসকোর এক টেক কোম্পানি থেকে একটি এআই টুল কিনে ওই এভাটার তৈরি করেছিলেন ডিওয়াল্ড। তিনি তার চেহারার অনুরূপ করেই ওই এভাটার বানাতে চেয়েছিলেন। তবে শুনানির আগে তা সম্ভব হয়নি।
যেহেতু তিনি কোনো উকিল পাননি, তাই তার নিজেকেই এই বক্তব্য উপস্থাপন করতে হত। এ কারণেই ঠিকঠাকভাবে কথা বলার জন্য তিনি এআইয়ের দিয়ে ওই ভিডিও তৈরি করে আদালতে পাঠান। তবে যে উদ্দেশ্যে তিনি এই কাজ করেছিলেন সেক্ষেত্রে সফল তো হননি, বরং আদালতে রীতিমতো বিচারকের ঝাড়ি খেয়েছেন ওই ব্যক্তি।
আরও পড়ুন: ওপেনএআই কিনতে প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার প্রস্তাব মাস্কের
তবে বিচারিক কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে কিন্তু প্রথম নয়, খোদ আইনজীবীরাই এর ব্যবহার করে সমস্যায় পড়েছেন।
এর আগে ২০২৩ সালের জুনে একটি মামলায় এআইয়ের ব্যবহার করে ৫ হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হয়েছিল নিউ ইয়র্কের দুই আইনজীবীকে। তারা এআইয়েরর সহায়তা নিয়ে কয়েকটি মামলার উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছিলেন, তবে বাস্তবে ওই ধরনের কোনো মামলার অস্তিত্বই ছিল না।
জরিমানা দেওয়া ওই দুই আইনজীবী জানান, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা যে কৃত্তিম মামলার বিবরণ তৈরি করবে এটি তারা বুঝতেই পারেননি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেনও একই ধরনের সমস্যায় পড়েছিলেন। ভুল মামলার তথ্য দিয়েছিল এআই।
তবে ডিওয়াল্ড ভুলে এই এভাটার ব্যবহার করলেও অ্যারিজনার সুপ্রিমকোর্ট কিন্তু বিভিন্ন আদালতের বিধিনিষেধগুলো সাধারণ জনগণকে জানানোর জন্য অনেকটা একই রকম এভাটার ব্যবহার করে থাকে। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা যে কতদ্রুত এগিয়ে চলছে তারই জ্বলন্ত প্রমাণ এসব ঘটনা।
ডিওয়াল্ডের মামলাটি এখনও চলমান রয়েছে।
৪৬ দিন আগে
স্টারলিংক কী? কীভাবে কাজ করে ইলন মাস্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা
প্রথিতযশা মার্কিন উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের মস্তিষ্ক প্রসূত প্রযুক্তি সেবা ‘স্টারলিংক’। ছোট্ট এই শব্দটি সমগ্র বিশ্ব জুড়ে তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক অদেখা ভূবনের বার্তা দিয়ে চলেছে। চলমান দশকে ইন্টারনেট ব্যবস্থার মধ্যমণি হওয়ায় প্রযুক্তিগত বিবর্তনটিকে ঘিরে চলছে সমূহ উদ্দীপনা। অধিকাংশ উন্নত দেশগুলোতে বিস্তার লাভের পর উন্নয়নশীল অঞ্চল পরিক্রমায় স্টারলিংকের এবারের গন্তব্য বাংলাদেশ। এই প্রেক্ষাপটে চলুন জেনে নেওয়া যাক- কী এই স্টারলিংক, আর এর কার্যপদ্ধতিই-বা কী।
স্টারলিংক কী
পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ চালু করা প্রথম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক সার্ভিসেস, এলএলসি। পরিচালনা প্রতিষ্ঠানের নামানুসারেই উপগ্রহ ক্লাস্টারের নাম হয়েছে স্টারলিংক। আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানটি এই স্যাটেলাইটগুলোর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপি ইন্টারনেট সেবা দিয়ে থাকে। গোটা বিশ্ব জুড়ে ইলন মাস্কের এই প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক রয়েছে ১০০টিরও বেশি দেশে।
স্টারলিংকের যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালের মে মাসে ৬০টি স্যাটেলাইটের চালুর মাধ্যমে। বর্তমানে এই সংখ্যা দাড়িয়েছে ৭ হাজারেরও বেশি এবং এগুলো খুব কাছাকাছি কক্ষপথে থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে এই অবস্থানটি প্রায় ৩৫ হাজার ৭৮৬ কিলোমিটার উপরে। এগুলো পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে (এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও) উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা দিতে সক্ষম।
আরো পড়ুন: দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এসি চালুর পূর্বে যে সতর্কতা জরুরি
২০২১ সালের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা কেন্দ্রিক এর প্রথম বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় প্রথম জনসাধারণের কাছ থেকে প্রি-অর্ডার নেওয়া হয়েছিলো।
স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা কীভাবে কাজ করে
.
ইন্টারনেট সংযোগের প্রক্রিয়া
শহরাঞ্চলের পাশাপাশি অনুন্নত এলাকাগুলোতেও সমানভাবে কার্যকর স্টারলিংক পরিষেবা। স্টারলিংক গ্রাহকের কম্পিউটার বা অন্য কোনও ডিভাইস থেকে ডাটা রিকোয়েস্ট প্রথমে নিকটতম স্যাটেলাইটে পৌঁছায়। সেই রিকোয়েস্ট পরবর্তীতে প্রেরিত হয় উদ্দিষ্ট গন্তব্যের কাছাকাছি আরেকটি স্যাটেলাইটে। তারপর রিকোয়েস্টটি সেই স্যাটেলাইটের অধীনে থাকা সুনির্দিষ্ট ডাটা সার্ভারে প্রবেশ করে। এরপর কাঙ্ক্ষিত তথ্যটি নিয়ে একই ভাবে গ্রাহকের কম্পিউটার বা অন্য কোনও মোবাইল ডিভাইসে ফিরে আসে। এভাবে পৃথিবীর দুই প্রান্তে থাকা ডিভাইসের মধ্যে ইন্টারনেট নির্ভর যোগাযোগ স্থাপন করা হয়।
স্যাটেলাইটগুলোর মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ রক্ষার্থে গেটওয়ে হিসেবে বসানো হয় গ্রাউন্ড স্টেশন। এগুলো উপগ্রহ থেকে ডেটা গ্রহণ করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর পথ সুগম রাখে।
আরো পড়ুন: অনলাইন বই বাজার: ঘরে বসেই যে ১০ ওয়েবসাইট থেকে কিনতে পারেন পছন্দের বই
একটি গ্রাউন্ড স্টেশন সাধারণত ৪ হাজার ৩০৬ বর্গফুট জায়গা জুড়ে প্রশস্ত হয়। এখানে বন্ধনীতে ঘেরা থাকে ৯ দশমিক ৪ ফুট উচ্চতার ৯টি অ্যান্টেনা।
উন্নত প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য
স্টারলিংকের প্রদক্ষিণরত উপগ্রহগুলোর অবস্থান আদর্শ জিওস্টেশনারি কক্ষপথের উচ্চতার ১/১০৫ থেকে ১/৩০ অংশের মধ্যে। কক্ষপথটি নন-জিওস্টেশনারি হিসেবে অভিহিত এবং এখানে স্যাটেলাইটগুলো ২৪ গিগা হার্টজ-এর উপরে উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডে কাজ করবে। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে তুলনামূলক ভাবে কাছাকাছি হওয়ায় এই ব্যান্ডে বিস্তৃত কভারেজ পাওয়া যাবে। একই সাথে স্যাটেলাইট ও গ্রাউন্ট স্টেশনের মধ্যকার যোগাযোগটিও হবে অধিক কার্যকর।
পৃথিবী থেকে স্যাটেলাইট যোগাযোগের লেটেন্সি বা বিলম্ব থাকে প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ মিলি সেকেন্ড। এই মাত্রা বর্তমান কেবল ও ফাইবার নেটওয়ার্কের তুলনায় অনেক কম। এই গতিতে ভিডিও কনফারেন্সিং ও অনলাইন গেমিং-এ অভূতপূর্ব রিয়েল-টাইম অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে।
আরো পড়ুন: ছোটদের বাংলা ভাষা শেখার ১০টি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ
পিয়ার-টু-পিয়ার প্রোটোকল ব্যবহার করায় স্টারলিংক বর্তমান সময়ের আইপিভি৬ (ইন্টারনেট প্রোটোকল ভার্সন ৬) থেকে অধিক সহজ। এই প্রোটোকল মূলত ইন্টারনেটের আওতায় একত্রে কতগুলো ডিভাইস সংযুক্ত হতে পারবে এবং সেগুলোর মধ্যে তথ্যের লেনদেন কতটুকু নিরাপদ হবে তা নির্দেশ করে। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো নেটিভ এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন। এই প্রক্রিয়ায় প্রেরকের ডিভাইসে এনক্রিপ্ট করা ডাটা শুধুমাত্র প্রাপকের ডিভাইসে ডিক্রিপ্ট করা হয়। ফলে পরিষেবা প্রদানকারীসহ তৃতীয় কোনও পক্ষের কাছে সেই ডাটা উন্মুক্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
এই সর্বক্ষেত্রে পিয়ার-টু-পিয়ারের অবস্থান আইপিভি৬-এর ওপরে।
এছাড়া স্টারলিংকের আরও আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে দ্রুতগতির ডাউনলোড। সম্প্রতি ঢাকায় এর পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা হয়েছে। এ সময় ডাউনলোড গতি ছিলো ২৩০ এমবিপিএস (মেগাবিট্স পার সেকেন্ড) এবং আপলোড ২০ এমবিপিএস।
আরো পড়ুন: কীভাবে জানবেন ঢাকার যানজটের সর্বশেষ অবস্থা?
সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী
স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য গ্রাহককে টেলিভিশনের ডিশ অ্যান্টেনার মতো একটি যন্ত্র বসাতে হবে। এটি সেই স্যাটেলাইটগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। যন্ত্রটি ক্রয়ের সময় এর সাথে পুরো একটি টুলকিট দেওয়া হয়। এতে স্টারলিংক অ্যান্টেনা ছাড়াও থাকে স্ট্যান্ড, স্টারলিংক কেবল, জেন থ্রি রাউটার, এসি কেবল এবং পাওয়ার অ্যাডাপ্টার। অ্যান্টেনা যে কোনও জায়গায় মাউন্টের জন্য উপযোগী। এমনকি ট্রেনের মতো দ্রুতগামী কোনও বস্তুর ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। তবে শর্ত হচ্ছে- আকাশ ও অ্যান্টেনার মাঝে কোনও প্রতিবন্ধকতা থাকা যাবে না।
এই অ্যানটেনার সঙ্গে স্টারলিংকের রাউটারটি যুক্ত করে গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। এই টুলকিট এবং গ্রাউন্ড স্টেশন সম্মিলিত ভাবে স্টারলিংককে সম্ভাবনাময় করে তুলেছে। কেননা এতে করে দুর্গম পাহাড় বা জঙ্গলেও উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন সম্ভব হবে।
এই রাউটারে এক সাথে ২৫৪টি ডিভাইস যুক্ত হতে পারে। অবশ্য কোম্পানির পক্ষ থেকে ৫০টির কম ডিভাইস ব্যবহারের পরামর্শ রয়েছে।
আরো পড়ুন: ডিপসিক: এআইয়ের দুনিয়ায় চ্যাটজিপিটি ও জেমিনির লড়াকু প্রতিপক্ষ
ইন্টারনেট পরিষেবার লাইসেন্স
আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্টারলিংককে বিশ্বের যে কোনও অঞ্চলে সেবা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হয়। সেখানকার জাতীয় টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষের অনুমতির পরেই সেবার বিপণন শুরু হয়।
এর জন্য স্টারলিংক নির্দিষ্ট দেশের সাথে দীর্ঘস্থায়ী আন্তর্জাতিক চুক্তিতে যায়। এই চুক্তির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত থাকে লাইসেন্সিং-এর সাধারণ সময়সীমা এবং করনীতি।
স্টারলিংক ব্যবহারের নানা ক্ষেত্র
আবাসিক চাহিদার পাশাপাশি করপোরেট ক্লায়েন্টও রয়েছে স্টারলিংকের। ইতোমধ্যে তারা বিস্তৃত পরিসরে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সেবা রয়েছে এয়ারলাইনস, জাহাজ, বিনোদনমূলক যানবাহন, ও ট্রাকসহ নানা ধরণের পরিবহনে।
আরো পড়ুন: লেখকদের সৃজনশীলতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব: ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধা
এছাড়া বিভিন্ন দেশের মিলিটারি বা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট চাহিদার ভিত্তিতে তারা বিশেষ সেবা দিয়েছে।
৫৭ দিন আগে
১০ শতাংশ দাম কমছে ইন্টারনেটের
বাংলাদেশে সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির সব ধরনের ইন্টারনেটের দাম ১০ শতাংশ কমছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
শনিবার (২২ মার্চ) কোম্পানির বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এর ফলে মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড সার্ভিস দুই ক্ষেত্রেই কোম্পানিগুলোর খরচ কমে আসবে বলে জানান তিনি।
ফয়েজ আহমদ জানান, ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। মানুষ যেন সাশ্রয়ে ইন্টারনেট পায় সেজন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: আর কোনো পরিস্থিতিতে যাতে ইন্টারনেট বন্ধ না হয়, সেই নীতিমালা হচ্ছে: ফয়েজ আহমদ
পাইকারি পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমানো এই উদ্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের ফলে ইন্টারনেটের আন্তর্জাতিক গেটওয়ে লেভেলে সব ব্যান্ডউইথের দাম ১০ শতাংশ কমে আসবে। এছাড়া ব্যাকবোন পর্যায়ে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে ডিডাব্লিউডিএম সুবিধা দেওয়ার কথা হচ্ছে।’
এতে ট্রান্সমিশন বাবদ টেলিকম কোম্পানিগুলোর খরচ ৩৯ শতাংশ কমে যাবে বলে মত দেন প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী।
তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে টেলিকম অপারেটরদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অপারেটররা ভোক্তা পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।'
তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ আরও জানান, আগামী বছরের মাঝামাঝিতে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সিমিউই-৬ এর সঙ্গে যুক্ত হবে বাংলাদেশ।
৬১ দিন আগে
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এসি চালুর পূর্বে যে সতর্কতা জরুরি
বছর জুড়ে গরমের তুলনায় শীতের আধিক্য যারপরনাই কম। এরপরেও ঠান্ডা মৌসুমে একটানা বেশ কিছু দিন যাবত এয়ার কন্ডিশনার (এসি) বন্ধ থাকে। এই স্বল্প বিরতির পর গ্রীষ্মের শুরুতে এসি চালু করার আগে কিছু সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। অন্যান্য বৈদ্যুতিক ও গৃহস্থালির যান্ত্রিক আসবাবপত্রের মতো এসিরও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। সেখানে দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে খুটিনাটি ত্রুটির অবকাশ থাকে। বন্ধ থাকা এসির ভেতরে জমে যাওয়া ধুলোবালির স্তর ও ছত্রাকের কারণে হতে পারে শাসকষ্ট। এমনকি রয়েছে এয়ার কন্ডিশনার বিস্ফোরণের ঝুঁকি। চলুন, উষ্ণ মৌসুমের শুরুতে স্বাস্থহানী ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়িয়ে এসি ব্যবহার নিশ্চিত করতে জরুরি বিষয়গুলো বিস্তারিত জেনে নেই।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা এয়ার কন্ডিশনার নিরাপদে চালানোর জন্য ১০টি করণীয়
.
ইভাপোরেটর কয়েল ও ব্লোয়ার মোটর নিরীক্ষণ
এই সরঞ্জাম দুটি থাকে এসি সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ ইউনিটে। অনেক দিন বন্ধ থাকার ফলে ইভাপোরেটর কয়েলে ময়লা জমে থাকলে তাপ স্থানান্তর প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।
ব্লোয়ার মোটরে ময়লা জমলে এটি সঠিকভাবে ঘুরতে পারে না। ফলে সিস্টেমের উপর এটি অতিরিক্ত চাপ ফেলে।
সামগ্রিক ভাবে এমন পরিস্থিতি এসির কার্যকারিতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এছাড়া কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ায় পরবর্তীতে বিদ্যুৎ খরচ বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই এসি ছাড়ার পূর্বে এই সরঞ্জামগুলো যথাযথ ভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া আবশ্যক।
আরো পড়ুন: মোবাইল ফোন বিস্ফোরণ: কারণ ও বাঁচার উপায়
ডাক্ট, ভেন্ট এবং এয়ার ফিল্টার পরীক্ষা
শীতল বায়ু ডাক্ট ও ভেন্টের মাধ্যমে ঘরের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছায়। দিনের পর দিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকলে এগুলোতে ধুলো, ময়লা বা ছাঁচ জমে যায়। এগুলো এসির বাতাসকে বিষাক্ত করে, যা অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা সৃষ্টির কারণ হতে পারে।
এয়ার ফিল্টার এসির বায়ু থেকে ধুলো, ময়লা এবং অন্যান্য কণাকে ফিল্টার করে। আর এই ফিল্টারেই ময়লা জমে যাওয়া মানে বাতাসের গুণমান কমে যাওয়া। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ময়লার আস্তর জমে ফিল্টার বন্ধ হয়ে বায়ুপ্রবাহেও বাধা সৃষ্টি হয়। এছাড়া ময়লা ফিল্টার ব্যাকটেরিয়া ও ছাঁচের বৃদ্ধি বাড়ায়, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। তাই এগুলো অপরিষ্কার রেখে এসি ব্যবহার করা একদমি উচিত নয়।
কন্ডেন্সার কয়েল পরিষ্কার করা
এসির বাইরের ইউনিটে থাকা এই সরঞ্চামটি তাপ স্থানান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসির দীর্ঘ সময়ের নিষ্ক্রিয়তায় এই কয়েলেও ধুলো, ময়লা বা আবর্জনা জমা হতে পারে। এর ফলে গোটা কন্ডেন্সারসহ কম্প্রেসরের উপরও অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ক্রমান্বয়ে এটি সিস্টেমের আয়ু কমিয়ে দেয় এবং পরবর্তীতে ব্যয়বহুল মেরামতের প্রয়োজন পড়ে।
কন্ডেন্সার কয়েল পরিষ্কার করার জন্য নরম ব্রাশ বা কম প্রেশারের পানি ব্যবহার করা যেতে পারে।
আরো পড়ুন: টপ লোড বনাম ফ্রন্ট লোড ওয়াশিং মেশিন: জেনে নিন সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ
রেফ্রিজারেন্টের মাত্রা নিরীক্ষণ
এসির শীতলকরণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত যে তরল বা গ্যাসীয় পদার্থটি এসির মধ্যে তাপ স্থানান্তরিত করে তার নাম রেফ্রিজারেন্ট। সঠিক সময়ে পরিষ্কারের দীর্ঘসূত্রিতায় রেফ্রিজারেন্টের মাত্রা কমে যেতে পারে। এ অবস্থায় এসি ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে চললেও ঠান্ডা বাতাস তৈরি করতে পারে না।
এমন পরিস্থিতিতে কন্ডেন্সার ও কম্প্রেসর উভয়েই অতিরিক্ত চাপের সম্মুখীন হয়। এমনকি এতে অন্যান্য যন্ত্রাংশও দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
রেফ্রিজারেন্ট লিকের ফলে অনেক সময় এসির অদ্ভূত শব্দ করে। তাই এসি চালানোর সময় যে কোনও অস্বাভাবিক শব্দকে গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত।
এর বাইরে রেফ্রিজারেন্ট লেভেল যাচাইয়ের কাজটি নিজে করা কঠিন। তাই এক্ষেত্রে সরাসরি পেশাদার ইলেক্ট্রিশিয়ানের সরণাপন্ন হওয়া উচিত। উপরন্তু, মাত্রা কম থাকলে তা বাড়ানোর জন্যও তাদেরকেই ডাকতে হবে।
আরো পড়ুন: এয়ার পিউরিফায়ার: প্রয়োজনীয়তা, দাম, জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ও নতুন মডেল
কম্প্রেসর পরীক্ষা করা
এসির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই উপাদানটির কাজ হচ্ছে রেফ্রিজারেন্টকে সংকুচিত করে শীতলকরণ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করা। তাই এই কার্যটি সঠিক ভাবে সম্পাদিত হচ্ছে কিনা তা যাচাই করা নিতান্তই জরুরি।
কম্প্রেসর অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলে বা এর মধ্যে অস্বাভাবিক শব্দ হলে বুঝতে হবে এতে সমস্যা আছে। এই সমস্যা এড়াতে কম্প্রেসরের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি, আর এর জন্য একজন পেশাদারের প্রয়োজন পড়বে।
থার্মোস্ট্যাট সেটিংস যাচাই করা
এসির শীতলকরণ প্রক্রিয়ার আরও একটি প্রয়োজনীয় যন্ত্র থার্মোস্ট্যাট, যেটি মূলত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। সঠিক পদ্ধতিতে কাজ করার জন্য এসির একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়। এর কমবেশি হলে নিয়মিত ঠান্ডা বাতাস পাওয়া যায় না। তাই থার্মোস্ট্যাট সেটিংস যথাযথ হওয়া জরুরি।
ভুল সেটিংস দীর্ঘ মেয়াদে এসির কার্যকারিতায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এর দরূণ ভবিষ্যতে ঘন ঘন মেরামতেরও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। আর বারবার মেরামত মানেই অতিরিক্ত খরচের ধকল।
আরো পড়ুন: কীভাবে জানবেন ঢাকার যানজটের সর্বশেষ অবস্থা?
বৈদ্যুতিক সংযোগ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা পরীক্ষা
এসি সিস্টেমের সাথে সংশ্লিষ্ট পাওয়ার লাইন ও সার্কিট ব্রেকার ঠিক মত কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করা জরুরি। ভোল্টেজে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তারতম্য ঘটা সিস্টেমে সঠিক বিদ্যুৎ প্রবাহে বাধা আরোপ করতে পারে। সার্কিট ব্রেকার পাওয়ার লাইনকে ব্যাকআপ দিতে না পারলে পুরো যন্ত্রের ভয়াবহ ক্ষতি সাধনের আশঙ্কা থাকে।
প্রায় সময় ঘরের ভেতরে যন্ত্রকে পরিপাটি করে রাখা হলেও বাইরে অংশে একদমি ভ্রূক্ষেপ করা হয় না। চোখের আড়ালে থাকায় এই যন্ত্রাংশটির কথা অনেকেই এড়িয়ে যান। অথচ এর আশেপাশে অনুপযুক্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত বিড়ম্বনার দিকে ধাবিত করতে পারে।
তাই বছরের কিছু নির্দিষ্ট সময়ে রুটিন মেনে এই আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় যন্ত্র সংলগ্ন জায়গাগুলো পরিষ্কার করা উচিত।
প্রথমবার ফ্যান মুডে চালানো
অনেক দিন বন্ধ থাকা এসি প্রথম চালোনার সময় সরাসরি কুলিং মুডে দেওয়া উচিত নয়। কেননা এতে সিস্টেমের ভেতর অনাকাঙ্ক্ষিত ত্রুটির কারণে যান্ত্রিক গোলযোগের দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুন: শিশুদের টিকটক আসক্তি: ঝুঁকি থেকে যেভাবে বাঁচবেন
আগে ফ্যান মুডে চালিয়ে সিস্টেমের ভেতরে জমে থাকা আর্দ্রতা শুকিয়ে নিতে হবে। ফ্যান মুডে এসি শুধু সিস্টেমের আভ্যন্তরীণ ফ্যানটি চালায়। এতে ময়লা বা ছাঁচের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং বাতাসের গুণমান উন্নত করে। কয়েক ঘন্টা ফ্যান মুডে রাখার পর কুলিং মুডে সুইচ করা যেতে পারে।
টেস্ট রান
গরমের শুরুতে প্রথম এসি চালুর উদ্দেশ্য হতে হবে টেস্ট রান। শীতল হওয়ার উদ্দেশ্যে এসি ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজ করা যাবে না। বরং এই টেস্ট রানের পুরোটা সময় মনোন্নিবেশ এসির দিকে রাখতে হবে।
সূক্ষভাবে খেয়াল করতে হবে কোনও অস্বাভাবিক শব্দ আসছে কিনা, বায়ুপ্রবাহ কিভাবে হচ্ছে, এবং সারা ঘর ঠান্ডা হতে কেমন সময় লাগছে। কোনও অসংলগ্নতা দেখা দিলে উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে। কোনও কিছু নিয়ে সন্দেহ থাকলে সরাসরি বিশেষজ্ঞ ইলেক্ট্রিশিয়ানের সরণাপন্ন হতে হবে।
পেশাদার টেকনিশিয়ানের সাহায্য নেওয়া
উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো ব্যাপারে যথাযথ নিশ্চিত হয়ে তবেই নিজে নিজে এসি যাচাইয়ের দিকে যাওয়া উচিত। কারিগরি বিষয়গুলোর বোঝাপড়া নিয়ে কোনও সমস্যা থাকলে সর্বোত্তম পন্থা হলো পেশাদারদের দ্বারস্থ হওয়া। নতুবা না বোঝার কারণে অসাবধানে যে কোনও ভুলে হিতে বিপরীত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
আরো পড়ুন: নতুন স্মার্টফোন কিনছেন, জেনে নিন সেটি আসলেই নতুন কিনা!
রক্ষণাবেক্ষণের পুরো সময়টাতে টেকনিশিয়ানের সাথে থেকে সব বুঝে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। কি সমস্যা হয়েছিলো, কেন হয়েছিলো, এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের সমস্যা এড়াতে করণীয়সমূহ তাকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে হবে।
এক্ষেত্রে প্রথমে যে কোম্পানির নিকট থেকে এসিটি কেনা হয়েছিলো তাদেরকে কল করা উত্তম। তারা তাদের নিজস্ব পণ্যের ব্যাপারে জানে এবং একই ধরণের ত্রুটির সমাধান অন্যান্য গ্রাহকদেরও দিয়ে থাকে। তাই তাদের কাছ থেকে এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ পরিষেবাটি পাওয়া যাবে। গ্যারান্টি ও পার্ট্স ওয়ারেন্টি থাকলে বিনামূল্যে সেবার ও পার্ট্স বদলে দেওয়া হবে। আর গ্যারান্টি-ওয়ারেন্টি না থাকলে সেবার জন্য নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে।
তাছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান থেকে প্রদত্ত টেকনিশিয়ানরা পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। যন্ত্রের যে কোনও সমস্যার ব্যাপারে তারা স্বপ্রণোদিত হয়েই গ্রাহকদের যাবতীয় জিজ্ঞাসার জবাব দিয়ে থাকে।
শেষাংশ
গরমের শুরুতে এয়ার কন্ডিশনার চালনার আগে এই সতর্কতাগুলো অনুসরণ করা মানে নানা বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পাওয়া। এসির বাইরের ও ভেতরের প্রতিটি সরঞ্জাম সূক্ষ্মভাবে পরিদর্শন করা অপরিহার্য। ডাক্ট ও ভেন্ট থেকে শুরু করে কম্প্রেসার পর্যন্ত যে কোনওটিতে কিঞ্চিত ত্রুটি পরবর্তীতে সমূহ ঝামেলার সৃষ্টি করতে পারে। সরঞ্জামগুলো পরিষ্কারের পর উৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে ফ্যান মুডে চালিয়ে একবার টেস্ট রান করে দেখা। উপরুন্তু, যান্ত্রিক বিষয়াদি নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকলে পেশাদার টেকনিশিয়ানের সাহায্য নেওয়া উত্তম।
আরো পড়ুন: রাতে বাসে বা গণপরিবহনে নিরাপদে ভ্রমণে কিছু সতর্কতা
৭১ দিন আগে
স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত কে এই জামাল নজরুল
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের কৃতিত্বস্বরূপ প্রতি বছরের মতো এবারও সাতজনকে স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত করেছে বাংলাদেশ সরকার। এই সাতজনের মধ্যে অন্যতম অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম।
২০২৫ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন জামাল নজরুল।
কে এই অধ্যাপক জামাল নজরুল
শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা পৃথিবীর প্রথম সারির পদার্থবিজ্ঞানীদের সঙ্গে সমস্বরে উচ্চারিত হয় জামাল নজরুলের নাম। বলা হয়ে থাকে, মৌলিক পদার্থবিজ্ঞানে জামাল নজরুলের মতো অবদান এ দেশের আর কোনো বিজ্ঞানীর নেই।
১৯৩৯ সালে বিচারক বাবার কর্মস্থল ঝিনাইদহে জন্ম নেওয়া এই বিজ্ঞানীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় কলকাতায়। সেখান থেকে ফিরে কিছুদিন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেন। পরে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান জামাল। সেখানে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি।
এই কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ই বদলে দিয়েছে জামালের জীবনকে। বিশ্বখ্যাত এই বিদ্যাপীঠে গণিত ট্রাইপজের তিন বছরের কোর্স দুই বছরে শেষ করেন তিনি। গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডির পাশাপাশি লাভ করেন ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি। বলা বাহুল্য, বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকজন বিজ্ঞানী কেবল এই ডিগ্রি অর্জনের সম্মান লাভ করেছেন।
জামাল নজরুলের শিক্ষক, বন্ধু আর সহপাঠীদের নাম শুনলে চক্ষু ছানাবড়া হয়ে যেতে পারে কারও কারও।
কেমব্রিজে নজরুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন বিশ্বখ্যাত পদার্থ ও মাহাকাশবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। এছাড়া শিক্ষক ফ্রিম্যান ডাইসন, পদার্থবিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যান, ভারতের সুব্রহ্মনিয়াম চন্দ্রশেখর, পাকিস্তানের আবদুস সালাম, ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ও অমিয় বাগচী, সহপাঠী জয়ন্ত নারলিকার, ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জিম মার্লিস—এরা সবাই ছিলেন জামাল নজরুলের ঘনিষ্ঠজন ও শুভাকাঙ্ক্ষী।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন ৭ জন, প্রজ্ঞাপন জারি
১৯৮৩ সালে জামাল নজরুলের বিখ্যাত গবেষণা নিবন্ধ দ্য আল্টিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স প্রকাশিত হলে কেমব্রিজ-পাড়ায় রীতিমতো সাড়া পড়ে যায়। এই গবেষণাকে বলা হয় আইনস্টাইন-পরবর্তী ধ্রুপদী ধারার সবচেয়ে সফল গবেষণার একটি।
কেমব্রিজে জামাল নজরুলের যখন জয় জয়কার, ঠিক তখনই এক মারাত্মক সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। বিদেশে তিন দশকের বিলাসী জীবন ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন প্রখ্যাত এ বিজ্ঞানী।
১৯৮৪ থেকে ২০১৩ সাল, জীবনের শেষ ২৯ বছর দেশের মানুষের কল্যাণে বিজ্ঞান সাধনা আর অধ্যাপনায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন তিনি। তার হাতেই গড়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক গণিত ও ভৌতবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট। ১৯৮৭ সালে এই বিভাগ উদ্বোধনে বাংলাদেশে এসেছিলেন নজরুলের প্রিয়জন পাকিস্তানের নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক আব্দুস সালাম।
২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণের পরও ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে জামাল নজরুল আমৃত্যু সংযুক্ত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে।
বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সের স্বর্ণপদক, একুশে পদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কারের পাশাপাশি এবার স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত এ মহান বিজ্ঞানীর জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন দেশের প্রতি উদার মমত্ববোধ আর দেশের মানুষের থেকে পাওয়া আকুণ্ঠ ভালোবাসা।
৭২ দিন আগে