৭০'এ পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদের সাধারণ নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনে জয়ী হতে বাঙালিদের মন জয় করার জন্য ব্যতিব্যস্ত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। তারই প্রেক্ষিতে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ঢাকার অদূরে সাভারে সবুজের সমারোহে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য অধ্যাদেশ জারি করা হলো। বছরখানেক যেতে না যেতেই ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
৭১-এ রণাঙ্গনের দীর্ঘ নয় মাস পর মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতি ঘটে। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয়। সেইসাথে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উন্মোচিত হয় মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তার নতুন দ্বার। প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় ক্যাম্পাস ভিত্তিক সাংবাদিক সংগঠনের; যারা শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বস্তুনিষ্ঠতা ও সাহসিকতার সহিত সত্যকে প্রকাশ করার মানসিকতা লালন করবে। দেশবাসীকে নিজেদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অক্সিজেন সরবরাহ করবে।
সেই চাহিদার উপর ভিত্তি করেই ক্যাম্পাস ভিত্তিক দেশের প্রথম সাংবাদিক সংগঠন হিসাবে ১৯৭২ সালের ৩ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি-(জাবিসাস) আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।
সত্য ও নির্ভীকতাকে ছাপিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল ক্যাম্পাস গড়ার এক দীপ্ত শপথে দেশ ও জাতির স্বার্থে দৃঢ়তার সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করার প্রত্যয় সংগঠনটির।
বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) জাবি সাংবাদিক সমিতি সাফল্যের ৫৩ পেরিয়ে ৫৪-তে পদার্পণ করেছে।
ঈদের ছুটিতে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তেমন কোনো কার্যক্রম বা আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। ছুটি শেষে ক্যাম্পাস খোলার পর জমকালো আয়োজনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের কথা জানান সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিষ্ঠার সময় স্থায়ী কোনো কার্যালয় না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বিরুনী হলের ক্যান্টিনে জাবির প্রথম ব্যাচের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী রাশেদ আহমেদ আলীকে সভাপতি এবং একই ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আবুল কাশেমকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এটিই সংগঠনটির প্রথম কার্যনির্বাহী কমিটি হিসাবে পরিচিত।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সংগঠনটি সত্য, ন্যায় ও সাম্যের উপর দাঁড়িয়ে নির্ভীকতা ও সাহসিকতার সহিত শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের পর দেশব্যাপী সকল যৌক্তিক আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছে সংগঠনটি। ৯০'এর এরশাদবিরোধী আন্দোলন, ৯৮'এর ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন, যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন অন্যতম। দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন নির্যাতনবিরোধী সেল প্রতিষ্ঠার রুপকার এই জাবিসাসই।
সর্বশেষ ২৪'এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে সংগঠনটি। দেশের সকল সংবাদ মাধ্যম যখন দেশের তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীকে উপেক্ষা করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিল। সারা দেশে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া আন্দোলনকারীরা যখন দিশেহারা তখন তাদের প্রাণে আশার সঞ্চার ঘটিয়েছিল এই সংগঠনটি।
এই সংগঠনের সাহসী সাংবাদিকরা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করেছিল। যার ফলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি দিনের জন্যও আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়েনি।