বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ভোলায় প্রায় ৫ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড় ও অতিজেয়ারের পানি আঘাতে জেলার চরফ্যাশন, মনপুরা ও তজুমদ্দিন উপজেলায় হাজারের অধিক ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ভেসে গেছে সহস্রাধিক গবাদি পশু। এতে অনেক পরিবার বাস্তুহারা হয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে।
শুক্রবার (৩০ মে) সকাল থেকেই জেলায় বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করেছে। এদিন, দুপুরের পর জেলার ঢাল চরসহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। ভোলায় অস্বাভাবিকভাবে নদীর পানির চাপ ও ঝড়ো বাতাসে কয়েক হাজার ঘর বাড়ি ও অসংখ্য গাছপালা বিধ্বস্ত হয়েছে।
লঘুচাপের প্রভাবে ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় এখনও তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছেন।
এ ছাড়াও, ভোলার লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলার বেড়িবাঁধের দুই স্থানে ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অন্যদিকে ঝড়ো বাতাসে ইলিশা লঞ্চঘাটের ৩টিসহ ৫টি পল্টন বিধস্ত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলার সাগর মোহনার ঢালচর, চর কুকরি-মুকরি ও মুজিবনগর ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঢালচরের অধিকাংশ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চর কুকরি-মুকরির চর পাতিলা এলাকা ও মুজিবনগর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ তিন ইউনিয়নে প্রায় ৭ থেকে ৮ শতাধিক গরু-ছাগল পানিতে ভেসে গেছে।
চরফ্যাশনের ঢাল চর ইউনিয়নের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম জানান, দুপুরে আবারও জোয়ারের পানিতে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। এতে, বহু ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নে অস্বাবিক জোয়ারের পানিতে অনেক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে একটি মাদরাসার টিনের চাল উড়ে গেছে।
লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ, রমাগঞ্জ, ধলীগৌরনগর, চরভূতা ও পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ২০টি বসতবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। পাশাপাশি অন্তত ৫০০টি বসতবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া, উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব সৈয়দাবাদ এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে দুইটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অতিবৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানির কারণে চরকচুয়াখালী ও পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
এদিকে, মনপুরা উপজেলার কলাতলির চরসহ বাঁধের বাইরের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ৩ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বেশ কিছু গবাদি পশু ভেসে গেছে।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি জানান, চরফ্যাশনের তিনটি ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ৭ থেকে ৮ শতাধিক গবাদিপশু ভেসে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ৫০০ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিখন বনিক সাংবাদিকদের জানান, মনপুরার কলাতলি ইউনিয়নে বাঁধ না থাকায় পানিতে সেখানকার ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এছাড়াও বাঁধের বাইরে কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে তিন হাজার ৪০০ ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখনো পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্তের খবর পাওয়া যায়নি।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদ দৌলা জানান, মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে ভোলার লালমোহনের সৈয়দাবাদ ও তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের স্লুইসগেট এলাকায় বেড়িবাঁধ ছুটে যায়। এতে লালমোহনে ২০ মিটার ও তজুমদ্দিনে ১৫ মিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লালমোহনের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে এবং তজুমদ্দিন উপজেলার বাঁধ সংস্কার কাজ চলছে।
এদিকে মেঘনার মধ্যবর্তী চরাঞ্চলগুলোতে ঘরবাড়ির ক্ষতির পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক মহিষ ভেসে যাওযার খবর পাওয়া গেছে। জোয়ারের পানিতে সহস্রাধিক পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে ভোলাকে রক্ষায় টেকসই বাঁধের দাবি জানান স্থানীয়রা।
ভোলা জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান জানান, বৃহস্পতিবার বিকালের ঝড়ে ৫ হাজার ২০০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২০৪টি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘চরফ্যাশনের ঢালচর, চর পাতিলা, কুকরী মুকরীতে ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। শুক্রবার বিকালে ভাঙা বেড়িবাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক। এসময় তিনি জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ শুরু হয়েছে।