আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলের তিনটি প্রদেশে বিমান হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় তালেবান সরকার পাকিস্তানকে দায়ী করলেও, ইসলামাবাদ এ অভিযোগ নাকচ করেছে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) আফগান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ দাবি করেন, পাকিস্তান আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলের তিনটি প্রদেশে এ হামলা চালিয়েছে। এতে ১ জন নারীসহ ৯টি শিশু মারা গেছে।
তিনি আরও দাবী করেন, কুনার ও পাকতিয়া প্রদেশে পৃথক হামলায় আরও ৪ জন আহত হয়েছে।
মুজাহিদ এ আক্রমণকে নৃশংস উল্লেখ করে একে আফগান ভূখন্ডের ওপর হুমকি হিসেবে মন্তব্য করেছেন। এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে সঠিক সময়ে জবাব দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এদিকে, রাওয়ালপিণ্ডির গ্যারিসন শহরে সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আহমদ শরিফ চৌধুরী হামলায় সংশ্লিষ্ঠতার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পাকিস্তান কখনও সাধারণ জনগনকে হামলা করে না। দেশে সহিংসতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী পাকিস্তানের তালেবানদের টার্গেট করে এ অভিযান শুরু হয়েছিল বলে জানান তিনি।
এর আগে, চলতি বছরের অক্টোবরে কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্ততায় যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়। তবে, দুই দেশের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা অব্যাহত রয়েছে। কাতার ও তুরস্ক এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।
সম্প্রতি, ইরান বিবাদমান পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধে নতুন করে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে।
ইরানের জাতীয় সুপ্রিম সিকিউরিটি কাউন্সিরের সেক্রেটারি আলী লারিজানি মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ জানান, সাম্প্রতিক পাকস্তান সফরে তিনি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।
এ হামলার আগের দিন (সোমবার) সকালে ২ জন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী ও ১ জন বন্ধুকধারী পাকিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর পেশোয়ারের ফেডারেল কন্সটেবুলারিতে হামলা চালিয়েছিল। এতে সংস্থাটির ৩ জন কর্মকর্তা নিহত ও ১১ জন আহত হয়।
এ হামলায় পাকিস্তানের সন্দেহের তীর সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান বা তাহরিক-ই-তালেবান’র (টিটিপি) দিকে।
ফেডারেল কনস্টেবুলারি হলো পাকিস্তানের একটি আধা-সামরিক বাহিনী, যা সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত।
এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র শরিফ চৌধুরী দাবি করেন, আফগানিস্তান থেকে আগত ৩ জঙ্গি এই হামলা চালিয়েছে।
টিটিপি তালেবান থেকে পৃথক একটি গোষ্ঠী।
তবে পাকিস্তানের দাবি, আফগান তালেবানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এই গোষ্ঠীর। টিটিপির অনেক নেতা আফগানিস্তানে লুকিয়ে আছে বলেও ধারণা তাদের।
এর আগে ২০২২ সালে কাবুল টিটিপি এবং পাকিস্তানের সাথে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে। এরপর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেয়।
সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য-ভিত্তিক অভিযান জোরদার করেছে। জানুয়ারি থেকে, পাকিস্তানের জঙ্গিবিরোধী এই অভিযানে ১ হাজার ৮৭৩ জন জঙ্গিকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর এই মুখপাত্র।
মঙ্গলবার, সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে আফগান সীমান্তের কাছে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম খাইবার পখতুনখোয়া প্রদেশের বান্নুতে ‘ভারত-সমর্থিত’ যোদ্ধাদের একটি আস্তানায় অভিযান চালানোর সময় নিরাপত্তা বাহিনী ২২ জন জঙ্গিকে হত্যা করেছে।
সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে নিহত বিদ্রোহীদের আফগানিস্তান এবং ভারত সমর্থিত খাওয়ারিজ হিসেবে উল্লেখ করেছ। তবে কাবুল এবং নয়াদিল্লি এই ধরনের গোষ্ঠীগুলিকে সহায়তা প্রদানের কথা অস্বীকার করেছে।