পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের বোলান জেলার কাছে একটি ট্রেন ছিনতাই হওয়ার পর এখন পর্যন্ত দেড়শর বেশি যাত্রীকে উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এতে নিহত হয়েছেন ২৭ বিচ্ছিন্নতাবাদী। বুধবার (১২ মার্চ) রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে ডন এমন খবর দিয়েছে।
কোয়েটা থেকে পেশওয়ারমুখী জাফর এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটিতে প্রায় ৫০০ যাত্রীকে জিম্মি করছে দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। তাদের দাবি না মানা হলে সব জিম্মিকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছিল।
কোয়েটা থেকে ১৫৭ কিলোমিটার দূরে মাশকাফ টানেলের কাছে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) এই নজিরবিহীন জিম্মি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ট্রেনটিতে হামলা চালিয়ে প্রায় ৫০০ যাত্রীকে জিম্মি করেছে। তাদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক সদস্য ছিলেন।
রেডিও পাকিস্তানের খবর বলছে, এখন পর্যন্ত নারী-শিশুসহ ১৫৫ যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। এছাড়া ২৭ বিচ্ছিন্নতাবাদী নিহত হয়েছেন। বাকিদেরও নিঃশ্বেষ করে দিতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে ট্রেন থামিয়ে প্রায় ৫০০ যাত্রী জিম্মি, দাবি না মানলে হত্যার হুমকি
নিরাপরাধ যাত্রীদের কাছে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরা অবস্থান নিয়েছে বলেও খবরে দাবি করা হয়েছে। রেডিও পাকিস্তান জানিয়েছে, ‘সম্ভাব্য পরাজয় নিশ্চিত হয়ে সাধারণ যাত্রীদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা।’
তিনটি ভিন্ন জায়গায় নারী ও শিশুদের জিম্মি করে রেখেছে আত্মঘাতী হামলাকারীরা। যে কারণে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। কারাকোরাম পর্বতশ্রেণির দুর্গম এলাকা হওয়ায় অভিযান ব্যাহত হচ্ছে জানিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী বলছে, জিম্মিদের উদ্ধারে বোলান পাসের দাদার এলাকায় তারা ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে।
জিম্মিদের মধ্য থেকে হতাহতের পরিমাণ এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু কর্মকর্তারা বলছেন, গোলাগুলিতে লোকোমোটিভের চালক ও নিরাপত্তা বাহিনীর আট সদস্যসহ মোট ১০ জন নিহত হয়েছেন।
সামরিক অভিযানে কারা কারা মুক্ত হয়েছেন; তাদের পরিচয়ও জানা সম্ভব হয়নি বলে ডনের খবর জানিয়েছে।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এই ঘটনার দায় স্বীকার করে বিএলএ বলছে, তারাই ট্রেনটি থামিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করেছেন। নিরাপত্তা বাহিনী পিছু না হটলে যাত্রীদের হত্যা করা হবে।
এই হামলার নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নকবী বলেন, ‘নিরাপরাধ যাত্রীদের ওপর যেসব নরপশু গুলি চালিয়েছে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেলুচিস্তান সরকার জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অঞ্চলটিতে কয়েক দশক ধরে সরকার, সেনাবাহিনী ও চীনা স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে প্রায়ই হামলা চালিয়ে আসছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। তারা প্রদেশটির খনিজ সম্পদের হিস্যা দাবি করে আসছেন।
বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা দাবি করা বিএলএ গত কয়েক দশক ধরে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। তাদের অভিযোগ, বেলুচিস্তানের গ্যাস ও খনিজসম্পদ অন্যায়ভাবে শোষণ করছে পাকিস্তান সরকার।
ডনের তথ্যমতে, গত বছর থেকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা বেড়েছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে কোয়েটা রেলওয়ে স্টেশনে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় ২৬ জন নিহত ও ৬২ জন আহত হন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছেন ট্রাম্প
থিংকট্যাংক পাক ইনস্টিটিউট ফর পিস স্টাডিজের (পিআইপিএস) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর এবং চলতি বছরের শুরুতে সন্ত্রাসী হামলার কারণে পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সেই ২০১৪ সালের পর্যায়ে চলে গেছে।
এতে বলা হয়, যদিও ২০১৪ সালের মতো চলতি বছর পাকিস্তানের কোনো সুনির্দিষ্ট অঞ্চল সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে নেই, কিন্তু বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখাওয়ার বিভিন্ন অংশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। ২০২৪ সালে ওই অঞ্চলটিতেই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা সবেচেয়ে বেড়েছে।
বিএলএ ছাড়াও বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ) নামের আরেকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী অঞ্চলটিতে সক্রিয় বলে পাকিস্তানের একাধিক সংবাদমাধ্যম-সূত্রে জানা জায়।