জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদের অর্থ লোপাট ও দুর্নীতি নিয়ে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের সংবাদ প্রকাশকে ভুল অ্যাখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে দলটি।
এনসিপি এক জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার (৩১ মে) এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের নিন্দা জানিয়ে বলে, আতিক মোর্শেদকে নাহিদ ইসলামের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা সঠিক নয়। নাহিদ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনকালে আতিক তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু তিনি বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফাইজ তাইয়্যেব আহমেদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত আছেন।
এছাড়াও, গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এনসিপি আহ্বায়ক স্পষ্ট করেছেন, উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নগদ বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে ছিল। ফলে নগদ সংক্রান্ত ব্যাপারে তাকে জড়িয়ে এমন প্রতিবেদন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছে এনসিপি।
দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি – একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত রেডিমেইড প্রতিবেদনকে তথাকথিত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হিসাবে জনগণের সামনে উপস্থাপনের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে উঠেছে। এর আগে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের আমলে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে এ ধরণের ফরমায়েসি সংবাদ প্রকাশের নজির আমরা দেখেছি। বর্তমান সময়ে ঠিক একই ধরণের কার্যক্রম ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার প্রতিধ্বনি করছে এবং আরেকটি এক-এগারোর প্রেক্ষাপট তৈরি করছে।’
আরও পড়ুন: সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ভারতের সঙ্গে কোনো আপস নয়: সারজিস
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরপর কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়া একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের মিডিয়া সেল থেকে অব্যাহতভাবে এনসিপি এবং নাহিদকে টার্গেট করে ফটোকার্ড প্রকাশ করা হয়েছে, যা গভীর উদ্বেগের ও শঙ্কাজনক বলে দাবি করেছে এনসিপি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটি জানায়, ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা এমন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতি নির্মাণ করতে চাই, যেখানে পারস্পরিক সমালোচনা হবে গঠনমূলক, যুক্তিনির্ভর ও বস্তুনিষ্ঠ। ভিত্তিহীন প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার প্রবণতা পারস্পরিক সম্মান ও আস্থা নষ্ট করে রাজনৈতিক অঙ্গনের পরিবেশ আবারও পূর্বের ন্যায় দ্বন্দ্বমুখর ও আক্রোশমূলক করে তুলতে পারে; যা সকল পক্ষেরই পরিহার করা উচিত বলে আমরা মনে করি।’
বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ করে এনসিপি অবিলম্বে বিভ্রান্তিকর তথ্যের সংশোধন এবং ভুল স্বীকার করে পেশাদার সাংবাদিকতার ন্যূনতম দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়েছে।
দেশের গণমাধ্যম প্রসঙ্গে এনসিপি জানায়, ‘গণঅভ্যুত্থানের পরও বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো থেকে প্রত্যাশিত ভূমিকা আমরা দেখছি না। রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরের ন্যায় গণমাধ্যমেও পতিত ফ্যাসিবাদের তল্পিবাহকদের দেখা যাচ্ছে। খোদ অভ্যুত্থান ও শেখ হাসিনার পরিচালিত গণহত্যাকেই নানা মহল বিতর্কিত এবং প্রশ্নসাপেক্ষ করার প্রয়াস চালাচ্ছে।’
আরও পড়ুন: কেবল মার্কা দেখে ভোট দিলে দেশে পরিবর্তন আসবে না: সারজিস
এছাড়াও, গণমাধ্যমে পুরোনো কায়দায় রাজনৈতিক দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর থেকেই কিছু রাজনৈতিক পক্ষকে গণমাধ্যমের মালিকানা ও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখলে তৎপর হতে দেখা গেছে। যাতে বিভিন্ন অলিগার্ক মাফিয়া মিডিয়া মালিকদের সংশ্লিষ্টতাও স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে বলে দাবি রাজনৈতিক এ দলটির।
এ ধরনের কর্মকাণ্ড গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা সংকুচিত করবে উল্লেখ করে এনসিপির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমরা হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করছি- গণমাধ্যমের মালিকানা ও পদের হাতবদল হয়েছে শুধু; গুণগত কোনো পরিবর্তন আসেনি। এই দুরবস্থা নিরসনে অনতিবিলম্বে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সংস্কার প্রতিবেদন বাস্তবায়ন করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে এনসিপি।’
পাশাপাশি গণমাধ্যমের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণের মাধ্যমে যারা এক-এগারোর পুনরাবৃত্তির চেষ্টা করছেন, চব্বিশের অভ্যুত্থানে প্রতিফলিত গণসার্বভৌমত্বের অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের মোকাবিলা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে এনসিপি।