মৃত মো. মামুন হোসেন (৩১) মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার লস্করপুর গ্রামের আবুল হোসেন মিস্ত্রীর ছেলে। তিনি পেশায় একজন অটোরিকশাচালক ছিলেন।
নবাবগঞ্জ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম শেখ জানান, মঙ্গলবার দুপুরে থানা হাজতের টয়লেটের ভেতরের গ্রিলের সাথে লুঙ্গি দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় মামুনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেন তারা।
তিনি জানান, রবিবার নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নের দেওতলা খ্রিষ্টানপাড়া গ্রামের একটি নির্জন স্থানের বাঁশঝোপ থেকে অজ্ঞাতনামা এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তার পরিচয় মেলে। দুই সন্তানের জননী ওই নারীর নাম রাজিয়া সুলতানা (৩৫)। মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার লস্করপুর গ্রামের প্রবাসী ইয়াকুব ঢালীর স্ত্রী তিনি।
লাশ উদ্ধারের পর প্রাথমিক তদন্তে ওই নারীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার সন্দেহে সেদিনই পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। ওই নারীর লাশ উদ্ধারের সংবাদ তাৎক্ষণিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে লস্করপুর গ্রামের বাসিন্দারা মামুনকে আটক করে পিটুনি দিয়ে শ্রীনগর থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। পরে তারা নবাবগঞ্জ থানা পুলিশকে বিষয়টি অবগত করে আমাদের হেফাজতে দিলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তার কথাবার্তায় ব্যাপক অসঙ্গতি পাওয়া যায়।
‘পরে তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল। এসময় মামুন হাজতের টয়লেটে গিয়ে ভেতর থেকে লক করে টয়লেটের গ্রিলের সাথে গলায় লুঙ্গি পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। বিষয়টি থানার সিসি ক্যামেরায় স্পষ্ট ধারণ রয়েছে,’ বলেন ওসি।
খবর পেয়ে ঢাকা জেলার দুইজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরেজমিনে এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। লাশ উদ্ধারের পর উপজেলার ইউএনও এইচ এম সালাউদ্দিন মনজু এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। লাশ বিকালে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে এ পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
প্রাথমিক তদন্ত ও লস্করপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে ওসি সিরাজুল আরও জানান, নিহত ওই নারীর সাথে মামুনের বাবা আবুলের পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল।
এ নিয়ে শত্রুতার জের ও বাবার সাথে অবৈধ সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরে রাগে ক্ষোভে মামুনই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এছাড়াও যে গ্যারেজে অটোরিকশা রাখা ছিল ঘটনার দিন রাতে মামুনই গ্যারেজ থেকে অটোরিকশা বের করেছিল বলে আমরা প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পেয়েছি। সুতরাং মামুনই রাজিয়াকে হত্যা করে লাশ ওই নির্জন স্থানের বাঁশঝোপে ফেলে গিয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বলেন ওসি।