আইএমএফ
আইএমএফের শর্তের ভিত্তিতে বাজেট করা হয়নি: অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের ভিত্তিতে করা হয়নি।
বাজেট পরবর্তী ভাষণে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের মতো আইএমএফ বাংলাদেশে এসেছে এবং অর্থনীতিতে সহায়তা করার জন্য কিছু সুপারিশ করেছে। আমরা আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের প্রেসক্রিপশন নিয়েছি, কিন্তু বাজেট তৈরিতে সেগুলো অনুসরণ করিনি।’
শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আইএমএফ শুধু অর্থ দিয়ে দেশগুলোকে সাহায্য করছে না, তারা অর্থনীতির ওপরও নজরদারি করছে। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো।
মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বারবার করা প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতির ক্রমবর্ধমান প্রবণতা নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, ‘আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কিত, কিন্তু এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়। আমরা জনগণকে খাওয়ানো বন্ধ করতে পারি না।’
তিনি বলেন, সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নমনীয় উপায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে খাদ্য সরবরাহ করে আসছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মুদ্রাস্ফীতির কারণ চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি এবং সেগুলোর সমাধান করার চেষ্টা করছি। আমাদের যদি কোনো ছাড় দিতে হয়, আমরা তা করব।’
আরও পড়ুন: বাজেট অবাস্তব, এভাবে মূল্যস্ফীতি রোধ করা সম্ভব নয়: সিপিডি
মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি, অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অর্থমন্ত্রী দাবি করেন, নতুন বাজেটে মূলত দরিদ্র জনগণের সুবিধার দিকে মনোনিবেশ করা হয়েছে।
সবাইকে কর দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ট্যাক্স নেট প্রসারিত করেছি যাতে আরো কর সংগ্রহ করা যায়।’ অতীতের অন্যান্য বাজেটের মতো এটিও আগামী নির্বাচন এবং জনগণ উভয়কেই লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা বাজেটের লক্ষ্য থেকে জনগণ বা নির্বাচনকে আলাদা করতে পারি না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিগত বাজেটে করা সব প্রকল্পই বাস্তবায়িত হয়েছে।
কামাল বলেন, এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে রেমিট্যান্স আয়ে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।
আরও পড়ুন: বাজেট: নাগরিকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
নিম্নমুখী প্রবণতার পর, রেমিট্যান্স আয় আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আমরা আমাদের রিজার্ভের মাধ্যমে আমাদের পাঁচ মাসের আমদানি বিল মেটাতে পারি।
তিনি বলেন, সরকারের কিছু পদক্ষেপের পর ধীরে ধীরে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর অনুরোধে বাংলাদেশের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, রেমিট্যান্স এবং ব্যাংকিং খাত নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব দেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯ জুন তার মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে যেখানে এটি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রেমিট্যান্স এবং রিজার্ভ বৃদ্ধির পরিকল্পনা তৈরি করবে।
তিনি দাবি করেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ বাড়লেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রির মাধ্যমে বাজার থেকে বেশি অর্থ উত্তোলন করায় মূল্যস্ফীতি বাড়বে না।
আরও পড়ুন: উচ্চাভিলাষী জিডিপি ও মুদ্রাস্ফীতির অনুমান, বাজেট বাস্তবায়নে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে: সিপিডি
বাংলাদেশের অর্থনীতি সংস্কারে ভূমিকা রাখবে আইএমএফের ঋণ
গত ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ‘রেসিলিয়েন্ট সাসটেইনেবল ফান্ড’ এর আওতায় ঋণ সহায়তার প্রথম কিস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। ডলারের হিসেবে যার পরিমাণ ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
আইএমএফ থেকে সাড়ে তিন বছর ধরে সাত কিস্তিতে যে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ পাচ্ছে, তার মূল্যও কম নয়।
কারণ, এ ঋণের বিপরীতে মোটা দাগে ৩৮টি শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। আর এই অর্থনীতি সংস্কারের শর্ত পূরণের মূল্য দিতে হতে পারে দেশের খেটে খাওয়া মানুষদের।
আইএমএফের মূল শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- আন্তর্জাতিক নিয়মের সঙ্গে মিল রেখে এদেশের রিজার্ভ ব্যবস্থা পুনর্গঠন করা, ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া, ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে একটি নির্দিষ্ট দাম ঠিক করা, সব সময় জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিলিয়ে সমন্বয় করা, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহের হার বৃদ্ধি ইত্যাদি।
এছাড়াও বিভিন্ন খাত থেকে উল্লেখযোগ্য হারে ভর্তুকি কমানো, ব্যাংকঋণের সুদের হার বৃদ্ধি, ডলারের একদর করাসহ আইএমএফ যে সকল সুপারিশ বাংলাদেশ সরকারকে বাস্তবায়ন করতে বলেছে; সেগুলার একটি সরাসরি প্রভাব দেশের সাধারণ জনগণের ওপর পড়ছে।
বাংলাদেশ মূলত জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি দিয়ে থাকে; যার পরিমাণ জিডিপির ০.৪ শতাংশ।
বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশ সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ প্রতিবছর প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার এবং গ্যাসে প্রায় ০.৪ বিলিয়ন ডলার।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ব্যাংকের আশা আইএমএফ ঋণের প্রথম কিস্তি আগামী মাসের মধ্যে আসবে: মুখপাত্র
বাংলাদেশে বিগত বছরগুলোতে কয়েক দফায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। কারণ আইএম এফ এর শর্ত হলো অলাভজনক খাতগুলো থেকে ভর্তুকি তুলে নেওয়া।
মূলত গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি, বরং এসব পণ্যের মূল্যের বড় একটি অংশ আগে সরকার পরিশোধ করত, কিন্ত এখন সেটি ভোক্তা পর্যায়ে পরিশোধ করতে হচ্ছে।
ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিলে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ বাড়িয়ে দেবে। এতে পণ্য ও সেবা উৎপাদনের খরচ বেড়েছে, ফলে বেড়েছে পণ্যের দামও। যার ভুক্তভোগী হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ।
যদি ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে রাতারাতি এদেশে ডলারের দাম বেড়ে যাবে এবং ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হতে পারে।
তখন পণ্য আমদানিতে খরচ আরও বেড়ে যেতে পারে, যা মূল্যস্ফীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
এদিকে, ঋণপ্রাপ্তির প্রথম দুই বছরে কর-জিডিপি দশমিক ৫০ শতাংশ এবং তিন বছরে দশমিক ৭০ শতাংশ হারে বৃদ্ধির কথা বলেছে আইএমএফ।
দেশের রাজস্ব প্রশাসনের প্রবণতা হচ্ছে, যারা কর দেন তাদের ওপরই বাড়তি করের বোঝা চাপানো।
অর্থাৎ এদেশের কর-রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রটি বিস্তৃত হলেও আমাদের কর সংগ্রহ ব্যবস্থায় যথেষ্ট ফাঁক-ফোকর রয়েছে। এদেশের চাকরিজীবীরাই একমাত্র নিয়মিত কর দেয়।
যদি কর-রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য মাথাপিছু কর বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তবে সেটি হবে কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের ওপর একটি বাড়তি বোঝা।
সরকার ইতোমধ্যে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে; যার প্রভাব জিনিসপত্রের দামের ওপর পড়েছে। এগুলোতে সরকার আর ভর্তুকি দিতে রাজি নয়। জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে বর্তমানে যে জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক বাজারদরের কাছাকাছিই আছে।
আরও পড়ুন: সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি চূড়ান্ত করতে ঢাকায় আসছেন আইএমএফ’র ডিএমডি
২০২৬ সালের মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের মধ্যে ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনতে বলেছে আইএমএফ।
এদিকে আইএমএফকে বাংলাদেশ জানিয়েছে, ব্যাংকের পুনঃতফসিল করা ঋণকেও খেলাপি ঋণের হিসাবে আনা হচ্ছে, যা আগামী জুনের মধ্যে কার্যকর হবে।
এর বাইরে দ্রুততম সময়ে আয়কর আইন ও শুল্ক আইন প্রণয়ন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন, ফাইন্যান্স কোম্পানি আইনের সংশোধন এবং দেউলিয়া আইন প্রণয়নের শর্তও রয়েছে আইএমএফের।
শুধু ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে বাংলাদেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩৪৩.৯৬ বিলিয়ন টাকা এবং এই খেলাপী ঋণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলছে।
আইএমেফের এই শর্তটি বাস্তবায়ন করা গেলে দেশে ঋণ খেলাপির পরিমাণ অনেকটা কমে যাবে বলে আশা করা যায়।
এছাড়াও, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে তিন মাস পরপর জিডিপির তথ্য প্রকাশ, প্রকৃত ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের হিসাবায়ন পদ্ধতি এবং আন্তর্জাতিক নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপ পদ্ধতির প্রণয়ন আগামী জুনের মধ্যেই বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
আইএমএফের ঋণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির যে সংস্কার হবে বলে মনে করা হচ্ছে, সেই সংস্কারের ঢেউয়ের প্রভাব শুধু নির্দিষ্ট কোনো একটি শ্রেণির মানুষের ওপরে না পড়ে, দেশের সকল মানুষের ওপর ন্যায়সঙ্গতভাবে পড়ুক; তবেই দেশের উন্নয়ন টেকসই হবে।
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
আরও পড়ুন: আইএমএফ’র ঋণ একটি চারিত্রিক সনদের মতো: প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মশিউর
৭ বছর পর রিজার্ভের পরিমাণ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে
ব্যাংকগুলোর চাহিদা মেটাতে নিয়মিত ডলার বিক্রির মধ্যে আমদানি দায় মেটাতে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) সবশেষ অর্থ পরিশোধের পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে।
সোমবার দেশটির রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।
তবে উল্লেখ করা উচিত যে বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে একটি অপ্রচলিত গণনা পদ্ধতি অনুসরণ করে, যাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ প্রকাশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা সব বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে দেখানো হয়। তবে, আগামী মুদ্রানীতিতেই রিজার্ভ হিসাব করতে এ পদ্ধতি ব্যবহার করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রিজার্ভের হিসাব বাংলাদেশ দুভাবে করছে। প্রথমত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা সব বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে দেখানো হচ্ছে। আরেকভাবে ইডিএফসহ বিভিন্ন তহবিলের অর্থ বাদ দেয়া হচ্ছে।
২০২১ সালে আইএমএফ প্রথমবারের মতো ঘোষণা করেছিল যে এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের বইতে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের পরিমাণ দেখানো হয়েছে।
অথচ ৮ বিলিয়ন ডলারের সিংহভাগ রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে (ইডিএফ) বরাদ্দ- প্রকৃতপক্ষে যা ৭ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে একটি বৃহৎ ঋণ রয়েছে, যা ৫২৫ মিলিয়ন ইউরোতে দেওয়া হয়েছে এবং শ্রীলঙ্কাকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়া হয়েছে, স্পষ্টতই দেশটি এখন এ অর্থ ফেরত দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই।
আরও পড়ুন: আইএমএফের হিসাবে আরও কমে যাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ!
প্রায় প্রত্যেক অর্থনীতিবিদ রিজার্ভ গণনার ক্ষেত্রে মনে করে যে ‘যা ব্যয় করা যায় না তা গণনা করা উচিত নয়।’
এই নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের সরকারি পরিসংখ্যান থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার তথ্যটি সংমোধন উচিত।
সুসংবাদ হল যে সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক অবশেষে আইএমএফের সঙ্গে তাদের লেনদেনের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে এবং রবিবার তারা ঘোষণা করে যে আগামী ১ জুলাই তার পরবর্তী অর্ধ-বার্ষিক মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় রিজার্ভ গণনার জন্য আইএমএফের প্রস্তাবিত পদ্ধতি অনুসরণ করবে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবার কিছুটা চাপে পড়েছে, কারণ অভ্যন্তরীণ রেমিটেন্সের প্রবাহ এবং রপ্তানি আয় হ্রাসের প্রবণতা দেখায যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি চলে এসেছিল ২০১৫-১৬ সালে। ২০১৬ সালের জুনে এটি ছিল ৩০ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। সুতরাং, প্রায় ৭ বছর পর সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সেই স্তরে নেমে গেছে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রায় ৮ মাস আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল।
২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বরে আকু-কে ১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার অর্থ দেওয়ার ফলে সরকারি রিজার্ভের পরিমাণ ৩৮ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩৭ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ৮ বিলিয়ন ডলার বিয়োগ করলে প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে
রিজার্ভ দিয়ে ৯ মাসের খাবার আমদানি করতে পারবো: শেখ হাসিনা
বাংলাদেশ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি: আইএমএফ দল
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সফরকারী দল বলেছে, অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বর্ধনশীল।
রবিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য আইএমএফ মিশন প্রধান রাহুল আনন্দ বলেছেন:‘একটি চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক পটভূমিতে, বাংলাদেশ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি। তবে ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতির চাপ, বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতা এবং প্রধান বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর ধীরগতি বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং টাকার মানের ওপর প্রভাব ফেলবে।’
সাম্প্রতিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক খাতের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করতে আনন্দের নেতৃত্বে দলটি ২৫ এপ্রিল ঢাকায় পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জনে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ: আইএমএফ
প্রতিনিধি দলটি আইএমএফ-সমর্থিত কর্মসূচির অধীনে মূল প্রতিশ্রুতি পূরণের ব্যাপারেও অগ্রগতি দেখেছে।
আনন্দের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এটি আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ধিত ক্রেডিট সুবিধা (ইসিএফ) /বর্ধিত তহবিল সুবিধা (ইএফএফ) / স্থিতিস্থাপকতা এবং টেকসই সুবিধা (আরএসএফ) ব্যবস্থার প্রথম পর্যালোচনাতে মূল্যায়ন করা হবে, যা এই বছরের শেষের দিকে করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
সফরকালে আইএমএফ দল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং অন্যান্য সরকারি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
প্রতিনিধি দলটি বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি, দ্বিপক্ষীয় দাতা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছে।
আরও পড়ুন: বিবিএসের জিডিপি ও মুদ্রাস্ফীতির তথ্য নতুন পদ্ধতিতে হালনাগাদে সন্তুষ্ট আইএমএফ
আইএমএফ-বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠক: সমন্বিত এক্সচেঞ্জ রেট ও প্রতিযোগিতামূলক ঋণের হারকে অগ্রাধিকার
চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জনে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ: আইএমএফ
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সর্বশেষ প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে যে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, আগামী অর্থবছরে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জিডিপি বৃদ্ধির হারের দিক থেকে ভিয়েতনামের পরে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে থাকবে।
আইএমএফ এর এশিয়া ও প্যাসিফিক মে ২০২৩-এর আঞ্চলিক অর্থনৈতিক আউটলুক রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৪ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে চীন ও ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: আইএমএফ-বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠক: সমন্বিত এক্সচেঞ্জ রেট ও প্রতিযোগিতামূলক ঋণের হারকে অগ্রাধিকার
বাংলাদেশে চাহিদা-ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার কারণে ২০২৩ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশে নেমে আসবে।
যা এখনও চীনের পাঁচ দশমিক দুই শতাংশের অনুমিত প্রবৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি।
তবে বাংলাদেশের চেয়ে চীনের অর্থনীতি অনেক বড়।
আইএমএফের প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে বাংলাদেশের জন্য সম্প্রতি অনুমোদিত এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করবে।
এছাড়া স্থিতিস্থাপকতা এবং টেকসই সুবিধা ব্যবস্থা জলবায়ু বিনিয়োগের অগ্রাধিকারের অর্থায়ন এবং দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু ঝুঁকির বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে আর্থিক স্থানকে প্রসারিত করবে।
প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে।
এছাড়া বিশেষ করে বাংলাদেশ এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জসহ এই অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ উদীয়মান বাজারে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনে আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করে।
আরও পড়ুন: বিবিএসের জিডিপি ও মুদ্রাস্ফীতির তথ্য নতুন পদ্ধতিতে হালনাগাদে সন্তুষ্ট আইএমএফ
কিছুটা স্বস্তির জন্য আইএমএফের ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ: আইএমএফের এমডিকে প্রধানমন্ত্রী
বিবিএসের জিডিপি ও মুদ্রাস্ফীতির তথ্য নতুন পদ্ধতিতে হালনাগাদে সন্তুষ্ট আইএমএফ
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) দেওয়া শর্তাবলী বাস্তবায়নের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি প্রতিনিধি দল।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস কার্যালয়ে বিবিএসের সঙ্গে এক বৈঠকে আইএমএফ দল এ সন্তোষ প্রকাশ করে।
বৈঠকে আইএমএফ গতানুগতিক পদ্ধতির পরিবর্তে মুদ্রাস্ফীতি (ভোক্তা মূল্য সূচক), জিডিপি (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) এবং ত্রৈমাসিক জিডিপি সম্পর্কিত হালনাগাদ তথ্য জানতে চায়।
বৈঠকে এসব বিষয়ে আইএমএফকে অবহিত করেছে বিবিএস।
সূত্র জানায়, আইএমএফ প্রতিনিধিদল স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিক তথ্যও চেয়েছে।
বিবিএসের মহাপরিচালক মতিয়ার রহমান ইউএনবিকে বলেন, আইএমএফ মুদ্রাস্ফীতির নতুন পদ্ধতিতে যাওয়ার অগ্রগতি জানতে চায়।
তিনি বলেন, ‘আমরা যেভাবে মুদ্রাস্ফীতি গণনা করি তা আর এভাবে করা হয় না, এটি পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রায় ৯৫ শতাংশ দেশ আইএমএফের মিশ্র পদ্ধতি ব্যবহার করে মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপ করে, বাংলাদেশ নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করবে।’
আরও পড়ুন: আইএমএফ-বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠক: সমন্বিত এক্সচেঞ্জ রেট ও প্রতিযোগিতামূলক ঋণের হারকে অগ্রাধিকার
নতুন মূল্যস্ফীতিতে খাদ্যপণ্যের দাম হবে ১৫৩টির পরিবর্তে ২৬৩টি। পণ্য ৭২০টি। তারা (আইএমএফ দল) বিষয়টির অগ্রগতি জেনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানান বিবিএস মহাপরিচালক ।
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই তাদের জিডিপি পরিসংখ্যান ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রকাশ করে। বাংলাদেশ বছরে একবার করে। নিম্নমুখী হলে প্রকৃত জিডিপি প্রকাশ করতে দেড় থেকে দুই বছর সময় নেওয়ার উদাহরণও রয়েছে দেশে। আবার বিবিএসের যে কাজগুলো করার কথা তা অনেক সময় অর্থ মন্ত্রণালয় করে থাকে।
ত্রৈমাসিক জিডিপি প্রসঙ্গে মতিয়ার বলেন, সরকার বছরে চারবার জিডিপির তথ্য প্রকাশ করবে। তবে এটি ২০২৪ ক্যালেন্ডার বছর থেকে শুরু হবে। তথ্য-উপাত্তের কাজ এগিয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: কিছুটা স্বস্তির জন্য আইএমএফের ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ: আইএমএফের এমডিকে প্রধানমন্ত্রী
৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের ২য় কিস্তি: আলোচনার জন্য ফের ঢাকায় আসছে আইএমএফ দল
বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের প্রথম কিস্তির ব্যবহার এবং দ্বিতীয় কিস্তি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি দল আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকায় আসছে।
সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র ইউএনবিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়ুন: আইএমএফের পরামর্শে নতুন ভিত্তি বছরে মার্চ থেকে মুদ্রাস্ফীতি গণনা করবে বিবিএস
সূত্র জানায়, ২৫ এপ্রিল থেকে ২ মে সফরকালীন আইএমএফ দলটি মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আইএমএফ এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ তিন থেকে চার সদস্য বিশিষ্ট দলের নেতৃত্ব দেবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেসবাউল হক জানান, সফরকালে সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইএমএফ টিমের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করবে।
গত ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ কর্তৃক অনুমোদিত ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের মধ্যে ৪৭৬ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রথম ধাপ পেয়েছে বাংলাদেশ।
২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো পরিমাণ পরিশোধ করা হবে। এইভাবে, আরও ছয়টি কিস্তি বাকি আছে।
আরও পড়ুন: ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি নিয়ে আলোচনা করতে ২৫ এপ্রিল ঢাকায় আসছে আইএমএফ প্রতিনিধিদল
মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আইএমএফ সাধারণত প্রতিটি ধাপ বিতরণের আগে সম্মতির বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে। এ অনুযায়ী, আইএমএফ’র একটি দল আগামী সেপ্টেম্বরে আসবে দ্বিতীয় ধাপ বিতরণের আগে ঋণের শর্ত পূরণের পর্যালোচনা করতে।
সাধারণত প্রতিটি বাজেট ঘোষণার আগে, একটি আইএমএফ মিশন বাজেট সহায়তা নিয়ে আলোচনা করতে ঢাকায় আসে। এখন যেহেতু ঋণ কার্যক্রম চলছে, বাজেট সহায়তার পাশাপাশি ঋণের শর্ত পূরণের বিষয়গুলোও আলোচনায় আসবে বলে সূত্র জানায়।
বৈশ্বিক ঋণদাতা এই প্রতিষ্ঠানটি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণের প্রথম কিস্তি দেওয়ার পর বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট হ্রাস পেয়েছে।
আইএমএফ এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) এবং এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) এর অধীনে প্রায় ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং রেজিলেন্স এন্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি ফর বাংলাদেশ’র অধীনে প্রায় ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফ থেকে ৪৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রথম কিস্তি পায়।
আরও পড়ুন: আর্থিক খাত সংস্কার নিয়ে আলোচনা করতে ঢাকায় আসছে আইএমএফ দল
আর্থিক খাত সংস্কার নিয়ে আলোচনা করতে ঢাকায় আসছে আইএমএফ দল
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচিত ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে, আর্থিক খাত সংস্কার নিয়ে আলোচনা করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি দল চলতি সপ্তাহে ঢাকা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এসময় আইএমএফ দল বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তাদের সঙ্গে এবং বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবে। কেননা প্রায় ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ রেজিলেন্স এন্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) –এর অধীনে বিতরণ করা হবে।
আরএসএফ বাংলাদেশের জলবায়ু বিনিয়োগের বিষয়টিকে সমর্থন করতে, জলবায়ু অর্থায়নকে প্রভাবিত করতে এবং আমদানি-নির্ভর জলবায়ু বিনিয়োগ থেকে অর্থপ্রদানের ভারসাম্যের চাপ কমাতে সাশ্রয়ী ও দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের ঋণ অনুমোদন বিবেচনা করতে পারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র ইউএনবিকে জানিয়েছে, এখানে অবস্থানকালে প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের জন্য ঋণের পরবর্তী কিস্তি দেয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকের হালনাগাদ তথ্য জানতে চাইবে।
ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ, বৈদেশিক মুদ্রার হার, মুদ্রানীতি, ঋণ পুনরুদ্ধার, সুদের হার, জিডিপি এবং মুদ্রাস্ফীতির বিষয়সহ বিভিন্ন নীতি সংস্কার বাস্তবায়ন করছে।
প্রস্তাবিত সংস্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে- বেসরকারি খাতকে জ্বালানি আমদানির অনুমতি দেয়া এবং খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো।
এছাড়া, জ্বালানি পণ্যসহ আমদানি পণ্যের দাম ব্যবহারভিত্তিক করা এবং কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা হবে।
এই ব্যবস্থাগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ইতোমধ্যে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও সূত্র জানায়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের জন্য ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন দিল আইএমএফ
বাংলাদেশ ব্যাংকের আশা আইএমএফ ঋণের প্রথম কিস্তি আগামী মাসের মধ্যে আসবে: মুখপাত্র
অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
দেউলিয়া অবস্থার মধ্যেই শ্রীলঙ্কায় শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে অধিকাংশ নাগরিক ক্রুদ্ধ ও উদ্বিগ্ন এবং তারা স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করার মতো অবস্থায় নেই।
দেশটির অনেক বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মযাজক রাজধানীতে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
অনেক মানবাধিকার কর্মী এবং সাধারণ নাগরিকও তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে স্বাধীনতা বার্ষিকী উদযাপনকে অর্থের অপচয় হিসেবে অভিহিত করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে, সমালোচনা সত্ত্বেও সশস্ত্র সৈন্যরা কলম্বোর প্রধান এসপ্ল্যানেড বরাবর প্যারেড করে, নৌবাহিনীর জাহাজ সমুদ্রে যাত্রা করার সময় ব্যবহৃত সামরিক সরঞ্জাম প্রদর্শন করে এবং হেলিকপ্টার ও বিমানগুলো শহর প্রদক্ষিণ করে।
ক্যাথলিক ধর্মযাজক রেভ. সিরিল গামিনি ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতার স্মরণে এই বছরের অনুষ্ঠানকে একটি ‘অপরাধ ও অপচয়’- বলে অভিহিত করেছেন, দেশ যখন এমন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যদিয়ে হচ্ছে।
গামিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে জানতে চাই যে তারা ২০০ মিলিয়ন রুপি (৫৪৮ হাজার ডলার) খরচ করে গর্বের সঙ্গে কোন স্বাধীনতা উদযাপন করতে যাচ্ছে?’
তিনি আরও বলেন, ক্যাথলিক চার্চ উৎসব উদযাপনে জনসাধারণের অর্থ ব্যয় করাকে ক্ষমা করে না এবং কোনও যাজক সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ শ্রীলঙ্কার ২২ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশ খ্রিস্টান, যাদের বেশিরভাগই ক্যাথলিক। সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও দেশটিতে চার্চের মতামতকে সম্মান করা হয়।
বিশিষ্ট বৌদ্ধ সন্ন্যাসী রেভ. ওমালপে সোবিথা বলেন, স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের কোনো কারণ নেই এবং অনুষ্ঠানটি অন্য দেশে তৈরি অস্ত্রের প্রদর্শনী মাত্র।
শ্রীলঙ্কা কার্যকরভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনায় কোনো সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত, এই বছর প্রায় ৭ ডলার বিলিয়ন বিদেশি ঋণ পরিশোধ স্থগিত করেছে।
দেশটির মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৫১ ডলার বিলিয়ন ছাড়িয়েছে, যার মধ্যে ২৮ বিলিয়ন ডলার ২০২৭ সালের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারি থেকে উদ্ভূত দীর্ঘস্থায়ী সংকটগুলোর শীর্ষে স্বল্পমেয়াদি ঋণ এবং পরিশোধে গুরুতর ভারসাম্য সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যেমন- জ্বালানি, ওষুধ ও খাদ্য।
ঘাটতির কারণে গত বছর দেশব্যাপী বিক্ষোভ দেখা দেয়; যা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে দেশ ছেড়ে পালাতে এবং পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল।
তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের অধীনে অর্থনৈতিক অবস্থার কিছুটা উন্নতির লক্ষণ দেখা গেছে। কিন্তু জ্বালানির ঘাটতির কারণে বিদ্যুতের ঘাটতি অব্যাহত রয়েছে, হাসপাতালগুলোতে ওষুধের ঘাটতি রয়েছে এবং কোষাগার সরকারি কর্মচারীদের বেতন পরিশোধের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে লড়াই করছে।
অর্থনৈতিক সংকট জনগণকে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত করে তুলেছে।
দেশের ব্যয় পরিচালনার জন্য সরকার আয়কর দ্রুত বৃদ্ধি করেছে এবং এই বছর প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দকৃত তহবিল ৬ শতাংশ কমানোর ঘোষণা করেছে।
এছাড়াও, দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের কারণে গড়ে ওঠা দুই লাখেরও বেশি সদস্যের সামরিক বাহিনীর আকার, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় অর্ধেক হ্রাস পাবে।
সরকারের স্বাধীনতা উদযাপন এবং অর্থনৈতিক বোঝা কমাতে ব্যর্থতার নিন্দা জানিয়ে শুক্রবার রাজধানীতে একদল নেতাকর্মী নীরব বিক্ষোভ শুরু করেন।
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি পেল বাংলাদেশ
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার বৃহস্পতিবার পেয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফের ঋণ অনুমোদনের তিন দিন পর বাংলাদেশ ব্যাংক এই অর্থ পেয়েছে।
তিনি ইউএনবিকে নিশ্চিত করেছেন যে আইএমএফ থেকে প্রথম কিস্তি দেয়ার ফলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার যা তিন হাজার ৩৬৯ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) ও এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) এর আওতায় বাংলাদেশ প্রায় ৩৩০ কোটি ডলার এবং রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় প্রায় ১৪০ কোটি ডলার পাবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের জন্য ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন দিল আইএমএফ
রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় ১৪০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য তৈরি তহবিল থেকে ঋণ গ্রহণকারী বাংলাদেশ এশিয়ায় প্রথম।
বাংলাদেশ সাতটি কিস্তির মাধ্যমে ঋণ পাবে এবং দুই শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
বাংলাদেশ ২০২২ সালের জুলাই মাসে আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছিল। তখন আইএমএফ আশ্বস্ত করে যে বৈশ্বিক ঋণদাতা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে গত বছরের জুলাইয়ে বোর্ড সভার সময় এক ফাঁকে আইএমএফ আলোচনা করে।
আলোচনা অনুযায়ী, রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে আইএমএফের সহায়তা নিয়ে আলোচনা করতে ঢাকা সফর করেন।
পরে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আন্তোয়নেট মনসিও সায়েহ চলতি বছরের ১৪ থেকে ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ সফর করেন এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
আরও পড়ুন: ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ: আইএমএফ অনুমোদন করতে পারে সোমবার
বাংলাদেশকে ঋণ দিতে আইএমএফ’র কোনো শর্ত নেই: সংসদে প্রধানমন্ত্রী