সরকার
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে: মির্জা ফখরুল
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে 'গণহত্যা' আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকার দেশ শাসন করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) এক বিবৃতিতে তিনি সাম্প্রতিক দিনগুলোতে নিহত, পঙ্গু ও আহত হওয়া নিরীহ মানুষের সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।
ফখরুল বলেন, সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে ছাত্র-জনতার ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমন করা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহার ও সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন: ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করাই আ. লীগের লক্ষ্য: মির্জা ফখরুল
তিনি দাবি করেন, ‘আওয়ামী লীগ সব সময় লাশের ওপর দিয়ে হেঁটে ক্ষমতায় এসেছে। ক্ষমতা ধরে রাখতে গত কয়েকদিনে নিরীহ ছাত্র ও জনতাকে পাখির মতো গুলি করে চালানো গণহত্যার ঘটনা পাকিস্তানি আগ্রাসনের স্মৃতি জাগায়।’
ফখরুল বলেন, জনগণের টাকায় কেনা গোলাবারুদ, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড শিক্ষার্থীদের ওপর কী পরিমাণ ব্যবহার করা হয়েছে তা দেশবাসীকে জানাতে হবে।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, 'রাষ্ট্রীয় টাকায় কেনা হেলিকপ্টার ব্যবহার করে' এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য সরকারকে একদিন জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'যে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা দিতে পারে না, সে সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।’
নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ভয়ানক ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠীকে পরাজিত করতে এবং জনগণের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে সব দেশপ্রেমিক, রাজনৈতিক দল, ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের প্রতি বিএনপি আহ্বান জানাচ্ছে।’
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব রাষ্ট্রীয় শক্তি ও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের উচ্ছেদ করে বিএনপির নেতা-কর্মী ও ছাত্রদের গ্রেপ্তার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন: খালেদার নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে পরিণতি ভোগ করতে হবে: মির্জা ফখরুল
সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ফখরুল বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অন্তত তিন হাজার লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ‘এটা জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জাজনক।’
তিনি দাবি করেন, বিরোধী দলের নেতাদের তুলে নিয়ে গিয়ে দমন করার চার-পাঁচ দিন পর আদালতে হাজির করা হচ্ছে, যা আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকার গুমের ভয়ংকর সংস্কৃতি অব্যাহত রেখে মানুষের মনে ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। ‘আমি এ ধরনের জঘন্য কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ হামলায় হতাহতের যে নৃশংস নজির সৃষ্টি হয়েছে, তা দেশে-বিদেশের সব স্বৈরশাসকের নির্মম নিষ্ঠুরতাকে ছাড়িয়ে গেছে।
ফখরুল অভিযোগ করেন, সরকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্যর্থতা ঢাকতে নির্বিচারে বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করছে।
তিনি আরও বলেন, সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, ‘আজকেও (শুক্রবার) আমাদের দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ অনেক সিনিয়র নেতার বাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়েছে। সাধারণ মানুষের গ্রেপ্তার, কারাবাস, নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে।’
বিরোধী দলের গ্রেপ্তার হওয়া সব নেতার বিরুদ্ধে দায়ের করা 'মিথ্যা' মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশ স্বাধীনতা হারাবে: মির্জা ফখরুল
কোটা সংস্কারে সরকার সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে কিছুই করবে না: আইনমন্ত্রী
কোটা সংস্কারে সরকার সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে কিছুই করবে না বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, ‘কোটার বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দেবে সরকার সেটা বিবেচনা করবে, সেটার প্রতিপালন করার চেষ্টা করবে।’
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করেন। এরপর সাত থেকে আটজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে মামলা করেন। আজ যারা কোটা আন্দোলন করছেন, তারা তো হাইকোর্টে যাননি। হঠাৎ একদিন যখন হাইকোর্টের রায়ের কথা পত্রিকায় বের হয়েছে, তখন তারা আন্দোলনে নেমে পড়েছেন। তারা হাইকোর্টে না গিয়ে রাস্তায় আন্দোলনে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
প্রশ্ন উঠেছে, কোটা আদালতের বিষয় নয়, সরকারের বিষয়- উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আদালতে যখন একটি বিষয় যায়, তখন সরকার অপেক্ষা করে আদালত কী বলে। তারপর সরকারের পদক্ষেপ নেওয়ার সময় হয়। তাই কোটার বিষয়ে সরকার আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। সরকার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতকে সম্মান করবে।’
আরও পড়ুন: হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন আইনমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকারী ছাত্রছাত্রীরা চাইলে আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের বক্তব্য আদালতের সামনে তুলে ধরতে পারেন। আদালত মূল দরখাস্ত বিবেচনা, নিষ্পত্তিকালে তাদের বক্তব্য বিবেচনায় নেবেন। সর্বোচ্চ আদালত তাদের এ আশ্বাস পর্যন্ত দিয়েছেন। তারপরও এ আন্দোলন করার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে? আন্দোলনের যে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে, এর প্রয়োজনীয়তা থাকে?’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে ইনডেমনিটি আইনের ধারাবাহিকতায় আমরা কিন্তু এখন ছাত্রদের মুখে স্লোগানের কথা শুনছি। যারা আন্দোলন করছেন, তারা যদি- আমি কে, তুমি কে, আমরা বাঙালি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান- বলতেন তাহলে আমি অবশ্যই বলতাম তারা সঠিক পথে আছেন।’
আনিসুল হক বলেন, ‘যৌক্তিক কথা প্রধানমন্ত্রী শুনবেন। জনগণের জন্য যেটি ভালো হয়, সেটি প্রধানমন্ত্রী করবেন, কিন্তু তার সরকার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হবে না। সেই আদর্শ হলো বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’
‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কেউ নষ্ট করতে পারবে না। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ অসম্মান করতে পারবে না। এ চেতনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ এবং একটি আইনের শাসনে প্রতিষ্ঠিত দেশ হিসেবে পরিচিত করার সংগ্রামে লিপ্ত হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাংলাদেশে বিচারহীনতার জন্ম দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট করে দেওয়ার হাতিয়ার হয়েছিল। এই অধ্যাদেশ জন্ম দিয়েছিল- বাংলাদেশে রাজাকার, আল-বদর এবং নিজামী মুজাহিদরাই থাকবে, মুক্তিযোদ্ধারা থাকবে না।’
ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাংলাদেশের অনেক ক্ষতি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের ১২ই নভেম্বর এই অর্ডিন্যান্স বাতিল করে প্রমাণ করে দেন যে, বাংলাদেশের জনগণ এই অর্ডিন্যান্স সহ্য করবে না।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সংসদ সদস্য তারানা হালিম, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী, বঙ্গবন্ধু গবেষক মো. হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক নেতা মানিক লাল ঘোষ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রেতাত্মারা: আইনমন্ত্রী
কোটা নিয়ে সব পক্ষের বক্তব্য শুনে ন্যায়বিচার করবেন আদালত: আইনমন্ত্রী
সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম কোটা আন্দোলনকারীদের
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের দাবির বিষয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে এবং পুলিশের দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
রবিবার বেলা ৩টা ২০ মিনিটে রাজধানীর গুলিস্তানে জিপিওর কাছে এ আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
আরও পড়ুন: যৌক্তিকতা না থাকলে কোটা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা বাতিল হতে পারে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি বলেন, 'আমরা সরকারের কাছ থেকে আশ্বাস পাচ্ছি না। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে আমরা সংসদে আমাদের এক দফা দাবির বিষয়টি উত্থাপনের জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলাম। আমরা চাই তিনি আইন পাসে ভূমিকা রাখবেন এবং জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডাকবেন।’
তিনি বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংসদ অধিবেশন ডেকে সেখানে আমাদের দাবির বিষয়ে আইন পাসে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে। আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে এই সমস্যা সমাধানে দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চাই। জনদুর্ভোগ হোক এমন কোনো কর্মসূচি নিতে আমাদের বাধ্য করবেন না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিন।’
উল্লেখ্য, গুলিস্তানের জিপিওর কাছে পুলিশ বাধা দিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বারো সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলকে পুলিশ পাহারায় বঙ্গভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রতিনিধি দলটি দুপুর আড়াইটার দিকে রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আদিল চৌধুরীর কাছে স্মারকলিপি জমা দেন।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন এবং বঙ্গভবন অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন।
আরও পড়ুন: কোটা সংস্কার: বাকৃবিতে গণ পদযাত্রা ও স্মারকলিপি প্রদান
কোটা ইস্যু এখনও বিচারাধীন থাকায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে নিয়োগ স্থগিতের সুপারিশ সংসদীয় কমিটির
আওয়ামী লীগ সরকার সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ডুবাচ্ছে: আমীর খসরু
ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ভারী বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার জন্য সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগের দুঃশাসন ও রাজনীতির কারণে বাংলাদেশ সব দিক থেকে ডুবে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দেশ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে ডুবে গেছে। এখন দেখবেন ঢাকা শহর পানিতে ডুবে যাচ্ছে। আসলে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের কারণেই বাংলাদেশ চতুর্দিকে ডুবছে।’
শুক্রবার (১২ জুলাই) এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে কারণ এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের পর্যায়ে সক্ষম ও মেধাবীদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয় না।
তিনি বলেন, ‘প্রশাসন যদি দলীয় লোকদের দ্বারা পরিচালিত হয়, তাহলে ঢাকা শহর ডুবে যাবে, পুরো বাংলাদেশ ডুবে যাবে।’
কয়েকটি বিরোধী দলের প্লাটফর্ম ‘গণতন্ত্র মঞ্চের’ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু।
তিনি বলেন, ‘কোটা পদ্ধতি নিয়ে আমার অবস্থান পরিষ্কার। এই শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশের মেধাবীদের খাটো করতে চায়। আওয়ামী লীগ এভাবে শাসন করতে থাকলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে মেধাবীদের কোনো সুযোগ থাকবে না, বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ারও কোনো সুযোগ থাকবে না।’
আরও পড়ুন: সরকারের দুঃশাসন দেশকে ধ্বংস করছে: ফখরুল
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে মেধাবী জাতি হিসেবে দেখে বলে মনে হয় না। ‘একটি ফ্যাসিবাদী সরকার একটি বুদ্ধিমান দেশে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না। বুদ্ধিমান লোকেরা সত্য কথা বলে, সত্যের পথে চলে, আওয়াজ তোলে এবং প্রতিরোধ করে।’
খসরু কোটা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও তাদের ভোটাধিকারের দাবিতে একই দৃঢ় সংকল্প নিয়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বাংলাদেশের নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কোটা আন্দোলন ইতোমধ্যে মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে। ছাত্র ও যুবসমাজ এখন সমগ্র জনগোষ্ঠীর আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করছে।’
তিনি আরও বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল বা পুনর্বহাল শুধু আইনি বিষয় নয়, এটি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিষয়।
সরকার যেন দ্রুত নীতিনির্ধারণী ভিত্তিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠন করে আমাদের কর্মসংস্থান কীভাবে হবে সে বিষয়ে একটি কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবিও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরের মতোই চীন থেকে খালি হাতে ফিরে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের হতাশ করেছেন বলেও মন্তব্য করেন সাইফুল হক।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশ ও নাগরিকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দেশের সম্পদ লুটপাট ও জনগণকে দমন অব্যাহত রেখেছে।
তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বিরোধী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
সাকি বলেন, ‘এই ফ্যাসিবাদী সরকার কোনও কথাই শুনছে না। জনগণ আশা করে, বিরোধী দলগুলো আবারও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে এবং এই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করবে।’
আরও পড়ুন: চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলের সমর্থন
সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে সরকারের পরিপত্র বলবৎ: কোটা প্রসঙ্গে তথ্য প্রতিমন্ত্রী
সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে ২০১৮ সালে কোটা বাতিল-সংক্রান্ত সরকারের পরিপত্র বলবৎ আছে উল্লেখ করে জনদুর্ভোগ তৈরি থেকে আন্দোলনকারীদের বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বুধবার (১০ জুলাই) দুপুরে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে প্রতিমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
এতে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত শুধু স্থিতাবস্থার আদেশ দেননি। শুধু স্থিতাবস্থার আদেশ দিলে কোটা বিষয়ে সরকারের পরিপত্র বাতিল করে উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছিলেন সেটি বলবৎ থাকত। খেয়াল করতে হবে, সর্বোচ্চ আদালত কোটার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন অর্থাৎ কোটা বিষয়ে সরকারের জারি করা পরিপত্র এখন আবার বলবৎ হলো।’
আরও পড়ুন: সাংবাদিকদের মিথ্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী হাইকোর্টের রায় কার্যকর নয়। অর্থাৎ, এই মুহূর্তে দেশে কোনো কোটা নেই। তবে, এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রদান বাকি আছে। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রদানের ক্ষেত্রে আদালত অবশ্যই শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি বিবেচনা করবেন।’
তথ্য প্রতিমন্ত্রী ওই স্ট্যাটাসে আরও বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের এই কার্যক্রম পুরোপুরি সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সরকারও এ বিষয়ে কোনো কিছুই করতে পারবে না। এ বিষয়ে কোনো ঘোষণাও দিতে পারবে না। এই মুহূর্তে যেহেতু দেশে কোনো কোটা নেই, কাজেই, এখন জনদুর্ভোগ তৈরি হয় এই ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় আসার পরে নির্বাহী বিভাগ তথা সরকার নিশ্চই কোটা বিষয়টি নিয়ে যুগোপযোগী সংস্কারের উদ্যোগ নেবে।’
বুধবার সকালে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
একইসঙ্গে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে চার সপ্তাহের মধ্যে লিভ টু আপিল করতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: তথ্যের সততা নিশ্চিতের অঙ্গীকার করতে হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
অপপ্রচারকারীদের বিপক্ষে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের শক্ত অবস্থান নিতে হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
সরকারের দুঃশাসন দেশকে ধ্বংস করছে: ফখরুল
সরকার দুঃশাসনের মাধ্যমে দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) এক দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ একদলীয় বাকশাল শাসন কায়েম করে। তারা এখন ভিন্নভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে।’
ক্ষমতাসীনরা নির্বাচনি ব্যবস্থা, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে এবং প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতিকরণ করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘দেশ এখন ধ্বংসের পথে। এই আওয়ামী লীগ সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন বাংলাদেশ আরও দ্রুত অতল গহ্বরে যাবে।’
দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে এবং অর্থনীতি, শিক্ষাসহ সব খাত পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমাদের এখন প্রয়োজন হলো সবার মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা। সেই ঐক্যকে কাজে লাগিয়ে আমরা রাজপথের আন্দোলনকে বেগবান করে তাদের (আওয়ামী লীগ) পরাজিত করব।’
এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দ্রুত রোগমুক্তি কামনা করে রাজধানীর নয়াপল্টনের মওলানা ভাসানী মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।
আরও পড়ুন: অসুস্থ খালেদা জিয়ার জীবন ঝুঁকিতে: ফখরুল
ফখরুল বলেন, বিদেশে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে তাকে কোনো শর্ত ছাড়াই কারাগার থেকে মুক্ত করতে কঠোর আন্দোলন অপরিহার্য।
তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রীর (খালেদা জিয়া) মুক্তি ও গণতন্ত্রকে পৃথক ইস্যু হিসেবে দেখার কোনো কারণ নেই। আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করলে গণতন্ত্র ফিরে আসবে এবং দেশ সুরক্ষিত হবে।’
ফখরুল আরও বলেন, দেশের সমস্যা সমাধান ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা প্রয়োজন। সেই লক্ষ্য অর্জনে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি। আমরা সবাই মিলে কাজ করলে কেউ আমাদের পরাজিত করতে পারবে না।
বিএনপি উত্তর ও দক্ষিণ যুবদলের নবগঠিত কমিটির নেতাদের অভিনন্দন জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটিগুলোর নেতৃত্বে সংগঠনগুলো আরও শক্তিশালী হবে এবং এই সরকারকে পরাজিত করতে ভূমিকা রাখবে।’
আরও পড়ুন: চলমান আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছে বিএনপি, সরকারের এ অভিযোগ উড়িয়ে দিলেন ফখরুল
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই সরকারের: মন্ত্রী
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
বুধবার (৩ জুলাই) সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
পিরোজপুর থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. শামীম শাহনেওয়াজের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন চাকরিতে প্রার্থীর সংখ্যা অনেকাংশে বাড়বে। ফলে নিয়োগে প্রতিযোগিতা বাড়তে পারে। এটি ৩০ বছরের কম বয়সি প্রার্থীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করতে পারে।’
আরও পড়ুন: ব্লু ইকোনমি বাস্তবায়নে এডিবিকে সহায়তার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশনজট না থাকায় বর্তমানে শিক্ষার্থীরা ১৬ বছরে এসএসসি থেকে শুরু করে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করে ২২ থেকে ২৩ বছরে।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর হওয়ায় তারা মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের পরও চাকরিতে আবেদন করার জন্য কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ বছর সময় পান।
তিনি বলেন, ‘একজন প্রার্থীর বয়সসীমা ৩০ বছরের মধ্যে আবেদন করলে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ১ থেকে ২ বছর সময় লেগে যায়। ফলে চাকরিতে যোগদানের ন্যূনতম বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছর করার দাবি আসলে ওটার কাছাকাছি বিষয়।’
সরকারি কর্ম কমিশনের প্রতিবেদন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের বয়স ও লিঙ্গভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী কম বয়সি (২৩-২৫ শতাংশ) সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীর সংখ্যা সর্বোচ্চ (৩৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ) এবং তার থেকে বেশি বয়সিদের গ্রুপে (২৯ বছরের বেশি) সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীর সংখ্যা সর্বনিম্ন (১ দশমিক ৭১ শতাংশ)।
মন্ত্রী আরও বলেন, অবসরের বয়সসীমা ৫৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫৯ বছর করায় স্বাভাবিকভাবেই শূন্যপদের সংখ্যা কমেছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো হলে বিভিন্ন চাকরিতে প্রার্থীর সংখ্যা আরও বেশি হবে।
বয়সসীমা বাড়ানো হলে বর্তমানে যাদের বয়স ৩০ বছরের বেশি তারা এ সুযোগ পাবেন। এতে ৩০ বছরের কম বয়সি প্রার্থীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন: পাটের ব্যাগ বাজারে এনে প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যাগ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হবে: পাটমন্ত্রী
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জামের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
রেল করিডোর ও ভারতের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক নিয়ে মিথ্যাচার করছে সরকার: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, ভারতকে রেল করিডোর এবং সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে সই হওয়া ১০টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) নিয়ে সরকার মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে দেশের জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এইঅভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, সরকার বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করার ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি বলেন, 'তারা (সরকার) কখনোই বাংলাদেশের জনগণকে সত্য কথা বলেনি। তারা সব সময় মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, সই করা সমঝোতা স্মারকের অর্থ হলো- এগুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করবে।’
তিনি বলেন, সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো- সরকার যে রেল করিডোর দিচ্ছে তা বাংলাদেশের কোনো কাজে আসবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারা (ভারত) তাদের রেললাইনের জন্য আমাদের জমি ব্যবহার করবে। সেখানে বাংলাদেশের কোনো লাভ হবে না। তারা (ভারত) আকাশ, স্থল ও নৌপথে অংশীদারিত্ব দিয়েছে। অংশীদারিত্ব ও কানেক্টিভিটি নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। বাংলাদেশ কী পেল? সেটাই মূল প্রশ্ন। আমারা কিছুই অর্জন করিনি।’
আরও পড়ুন: খালেদার নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে পরিণতি ভোগ করতে হবে: মির্জা ফখরুল
ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ এখনো তিস্তাসহ অন্যান্য অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পায়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি। বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই আমরা সমঝোতা স্মারক নিয়ে সত্য কথা বলছি। আমরা কোনো ষড়যন্ত্র করছি না। বরং অবৈধ শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশকে অন্যের মুখাপেক্ষী করার ষড়যন্ত্র করছে।’
এর আগে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নতুন পদপ্রাপ্তদের সঙ্গে নিয়ে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মির্জা ফখরুল।
তারা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন।
ফখরুল অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের সব কাঠামো ধ্বংস করে বাংলাদেশে একদলীয় শাসন করে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ এখন আইনের শাসনের অভাবে ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। ‘আর্থিক অনটনের কারণে মানুষও কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।’
তিনি বলেন, আইনের শাসন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করায় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আজ জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে শপথ নিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দল সব সময় যে কোনো ধরনের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গিবাদ দমনের নামে প্রতিপক্ষকে হয়রানি ও কারাগারে আটকে রাখছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতীয় রেল নেটওয়ার্ক আত্মঘাতী হবে: ফখরুল
ভারতবিরোধী বক্তব্য: সরকারকে উৎখাতে আন্তর্জাতিক সমর্থন থাকার দাবি বিরোধীদের
বিএনপি নেতাসহ বেশ কয়েকজন বিরোধী নেতা আন্তর্জাতিক সমর্থন নিয়ে 'সরকার পতনের' হুমকি দিয়ে ভারতবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফর ও ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার ঘোষণার পর তারা এ ধরনের বক্তব্য দিতে শুরু করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে এবি পার্টির নেতা ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ দিল্লিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে ভারতীয় ট্রেন যাওয়ার পরিণতি ভয়াবহ হবে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে ফুয়াদ বলেন, 'বাংলাদেশে রেললাইন উপড়ে ফেলা, বগিতে আগুন দেওয়ার রাজনীতি চলছে। দিল্লি এটা ভালো বোঝে। শুধু চুক্তি সই করলেই ট্রেন নিরাপদে পৌঁছানো নিশ্চিত হবে না।’
বাংলাদেশি রেললাইন ব্যবহার করে ভারতীয় ট্রেন চলাচল বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন নুরুল হক নুর। একই সঙ্গে তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারের পতনের জন্য গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন থাকবে।’
আরও পড়ুন: সরকার উৎখাতের চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য জনগণ প্রস্তুত: বিএনপি
এই সরকারকে হটাতে রাজপথে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের সমর্থন করবে। সম্প্রতি এক জনসভায় নুর বলেন, 'আমরা কখনোই বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় ট্রেন চলাচলের অনুমতি দেব না।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই চুক্তিকে 'ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করা' বলে অভিহিত করার কয়েকদিন পর নুর ও ফুয়াদ এই ধরনের হুমকি দেন।
ফখরুল বলেন, 'বাংলাদেশ সবকিছু দিয়েছে, কিন্তু চুক্তি থেকে ভারতের কাছ থেকে কিছুই নিতে পারেনি।’
জামায়াতের মুখপত্র হিসেবে কাজ করা এক্স (পূর্বে টুইটার) হ্যান্ডেল বাশারকেল্লাও নুর এবং ফুয়াদের সুরের প্রতিধ্বনি করে বেশ কয়েকটি টুইট পোস্ট করেছে।
ভারতবিরোধী বক্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন বাংলাদেশকে পথ হিসেবে ব্যবহার করে প্রতিবেশী দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারতীয় ট্রেনের প্রাস্তাবিত ট্রানজিট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চলছে।
আরও পড়ুন: সরকার উৎখাতে বিএনপির সঙ্গে ডান-বামরা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সাপের মাথাসম্বলিত ট্রেনের ইঞ্জিন এবং রক্তাক্ত রেললাইন চিত্রিত করা হয়। একই সঙ্গে ভারতীয়দের স্বার্থে পদ্মা সেতু বানানো হয়েছে বলে অদ্ভুত দাবি করা হয়েছে। এমন কিছু ছবি সামাজিক মাধ্যমে ঘুরছে।
কয়েক মাস আগে বিএনপির সিনিয়র নেতা রুহুল কবির রিজভী 'বয়কট ইন্ডিয়া' প্রচারণা শুরু করেছিলেন, যার প্রতিধ্বনি করেছিল জামায়াতে ইসলামী।
লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই সরকারকে ভারতের 'দাস' বলে অভিহিত করেছেন। এদিকে গত বছর বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়, বিএনপি বেশ কিছুদিন ধরেই ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছিল। এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ একটি ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের জন্য ছিল বলে জানা গেছে। এরপর ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম মহানগর স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের দায়ে সাবেক মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভারতবিরোধী বক্তব্য 'একপেশে'। কারণ, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করতে পারবে, এরকম একটি মৌলিক বিষয় তারা বাদ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: সরকার উৎখাতের হুমকি বা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কোনো লাভ হবে না: প্রধানমন্ত্রী
‘আন্তর্জাতিক মানের মোবাইল সেবা নিশ্চিতে সরকার বদ্ধপরিকর’
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দিতে সরকার কঠোর ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করবে।
প্রতিশ্রুত সেবা দিতে না পারলে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের অবশ্যই তাদের গ্রাহকদের আর্থিকভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে জানান তিনি।
পলক বলেন, এটি বাস্তবায়নে নিয়মিত মনিটরিং ও অডিট করা হবে।
আরও পড়ুন: অনলাইন জুয়ায় জড়িত ৫০ লাখ মানুষ: পলক
রবিবার (৩০ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে মোবাইল অপারেটরদের গ্রাহক সেবার মান-সংক্রান্ত বিটিআরসি আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে কলড্রপ নিয়ে অপারেটরগুলো থেকে যে তথ্য দিক না কেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না গ্রাহকদের কাছ থেকে একটা উল্লেখযোগ্য চিত্র না পাব, ততক্ষণ পর্যন্ত শুধু কাগজে-কলমে বা ডিজিটাল উপস্থাপনায় আমি ব্যক্তিগতভাবে সন্তুষ্ট হব না। যেভাবেই হোক আমরা গ্লোবাল বেঞ্চমার্কে উন্নীত হতে চাই। কারণ এটা আমাদের দেশের ব্র্যান্ডিংয়ের একটা বড় প্রভাব ফেলে।
পলক বলেন, কলড্রপ একটা নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের মোবাইল গ্রাহকেরা যেমন এ বিষয় নিয়ে অসন্তুষ্ট। বিটিআরসি যে পরীক্ষাগুলো করেছে সে রিপোর্ট অনুসারে কোয়ালিটি অব সার্ভিস খুব একটা সন্তোষজনক নয়।
কলড্রপ নিয়ে ঢাকার কয়েকটি এলাকার ড্রাইভ টেস্টের ফলাফল পর্যালোচনা করে পলক বলেন, শহর বা গ্রাম যেখানেই হোক আমরা মিডিয়ার যে রিপোর্ট, সেগুলো আমলে নেব এবং সেখানে আমরা ড্রাইভ দেব।
ফাইন্যান্সিয়াল অডিট এবং টেকনিক্যাল অডিটের ওপর জোর দেওয়া হবে জানিয়ে পলক বলেন, ইন্টারনেটের গতি কেন কম হচ্ছে, গ্রাহকের প্রতিক্রিয়া কী সেগুলো আমলে নিয়ে ড্রাইভ দেব। আমরা কারিগরি পরিদর্শন দল গঠন করেছি, তারা সেগুলো টেস্ট করছে।
পলক বলেন, মোবাইল অপারেটরসমূহ গ্রাহকদের সেবা প্রদান, গ্রাহক পর্যায়ে সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট প্রদান ও অপারেটর যেসব সুবিধা আমরা দিচ্ছি সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতে আমরা কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও মোবাইল অপারেটরসূমূহের সম্মিলিত উদ্যোগে দেশে মোবাইল সেবাকে গ্রোবাল স্ট্যান্ডার্ডে উপনীত করতে সম্ভাব্য সব কিছু করা হবে।
আরও পড়ুন: ইসরোর সঙ্গে যৌথভাবে ছোট স্যাটেলাইট তৈরি করবে বাংলাদেশ: পলক
তিনি আরও বলেন, আমাদের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টের থার্ড টার্মিনাল অক্টোবরে উদ্বোধন হতে পারে। অক্টোবরকে টার্গেট করে চারটি মোবাইল অপারেটরকে একটা চ্যালেঞ্জ দিতে চাই, যেন অক্টোবরের ৩০ তারিখের মধ্যে ফাইভজি ওখানে নিশ্চিত করতে পারে। পাশাপাশি গুলশান, বনানী, মতিঝিল, আগারগাঁও এলাকায় ফাইভজি এনাবল অনেক স্মার্টফোন ব্যবহার করা হয় বেশি। আমার বিশ্বাস এখানেও মনোযোগ দেবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনায় কীভাবে ফাইভজি ও আইওটি কীভাবে ব্যবহার করতে পারি সে বিষয়েও কাজ করছি। আমরা আশা করি সেখানেও দ্রুত ফাইভজি ব্যবহার করতে পারব।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অ্যামটব সভাপতি ও গ্রামীণ ফোন সিইও ইয়াসির আজমানসহ মোবাইল ফোন অপারেটরসমূহের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ইন্টারনেটের জনপ্রিয় ছোট ছোট প্যাকেজের পক্ষে পলক