সরকার
ট্রেন সেবা লাভজনক করতে লোকোমোটিভ কেনার উদ্যোগ
বাংলাদেশে ট্রেন সেবা থেকে ক্ষতি কমে এলেও এখনো পুরোপুরি লাভজনক হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী শেখ মঈনুদ্দিন। তাই এ খাতকে আরও লাভজনক করতে আধুনিক লোকোমোটিভ কেনা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
ইউএনবিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে শেখ মঈনুদ্দিন বলেন, রেল খাতকে লাভজনক করতে হলে আমাদের আরও আধুনিক লোকোমোটিভ কেনা প্রয়োজন। লোকোমোটিভের অভাবই এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা। নতুন লোকোমোটিভ ক্রয় করা হলে ট্রেন চলাচল বাড়বে, যাত্রীদের যাতায়াত আরও সহজ হবে এবং খরচও কমে আসবে।
তার ভাষ্যে, ট্রেনে যাত্রীর অভাব নেই। আমরা যাত্রীদের জন্য নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় ভ্রমণ নিশ্চিত করতে চাই। লোকোমোটিভের ঘাটতি পূরণ করতে পারলে ট্রেন সার্ভিস আরও দ্রুত ও কার্যকর হবে।
শেখ মঈনুদ্দিন আরও বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই পাবলিক ট্রান্সপোর্ট খাত সরাসরি লাভজনক নয়। কিন্তু খরচ কমিয়ে দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এটি টেকসই করা সম্ভব। এজন্য আমাদের প্রশাসনিক দক্ষতা ও নীতিনির্ধারণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
শেখ মঈনুদ্দিন জানান, নতুন ট্রেন সংযোগের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে মাস্টার প্ল্যানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কিছু অংশে কাজ শুরু করেছি। ঈশ্বরদী এলাকায় ট্রেনলাইন সোজা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এতে অনেক কিলোমিটার পথ কমে যাবে।
লোকোমোটিভ কেনার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনের চেয়ে কিছু বেশি লোকোমোটিভ কেনার পরিকল্পনা আছে। আশা করছি, আগামী এক মাসের মধ্যেই টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
হাই-স্পিড বা পাতাল ট্রেন বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে শেখ মঈনুদ্দিন বলেন, আমাদের দেশে এখনো সে ধরনের অবকাঠামো প্রস্তুত নয়। গ্রীন রেলওয়ে নিয়ে আলোচনা চলছে, তবে এগুলো বাস্তবায়নে আরও সময় লাগবে।
যমুনা ট্রেন প্রকল্প সম্পর্কে তিনি জানান, পুরনো লাইনের সংস্কারকাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। নতুন প্রকল্পের কাজও আগামী মাসের মধ্যেই শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
৪৩ দিন আগে
সংখ্যালঘুদের বিপদে না ফেলতে সরকারের প্রতি আহ্বান মির্জা ফখরুলের
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানি বা ভোগান্তির শিকার না হন, সে বিষয়ে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় ৫০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির বিএনপিতে যোগদান অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে দলে যোগ দেন।
এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পরিষ্কার করে সরকারকে বলতে চাই, বিশেষ করে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে- আমরা দেখতে চাই না যে, আপনারা আমাদের সংখ্যালঘু মানুষদের কোনো রকম বিপদের মধ্যে ফেলছেন বা কোনো রকম সমস্যা তৈরি করছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে অনেক খবর আসে। দয়া করে এই সম্প্রদায়ের মানুষদেরকে কখনো হয়রানি করবেন না। তারা আমাদের সদস্য, আমাদের ভাই, আমরা তাঁদের পাশে আছি এবং সমস্ত শক্তি নিয়ে থাকব।’
নতুন সদস্যদের স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন এখন থেকে। আপনারা আমাদের বন্ধু। আমরা আপনাদের পাশে আছি।’
জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাইরের কিছু কিছু মানুষ, কিছু দেশ, কিছু মিডিয়া (গণমাধ্যম), তারা বাংলাদেশের ব্যাপারে একটা মিথ্যা প্রচারণা করার চেষ্টা করছে। আমরা এ ধারণা পাল্টে দিতে চাই।’
বিএনপির আদর্শ প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ২০১৬ সালে তিনি একটা কর্মসূচি দিয়েছিলেন, অর্থাৎ ২০৩০ সালে বাংলাদেশকে আমরা কেমন দেখতে চাই, তার ওপর তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন অনেকগুলো। তার মধ্যে একটা প্রস্তাব ছিল যে বাংলাদেশকে তিনি একটা রেইনবো স্টেট হিসেবে দেখতে চান। অর্থাৎ রংধনু একটা রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চান। রংধনু যেখানে অনেক রং থাকে একসাথে মিলে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন যে দুর্গা পূজায় এবং তার আগের দুর্গাপূজতেও আমাদের বিএনপির নেতা-কর্মীরা আপনাদের প্রতিটি পূজা মণ্ডপে আপনাদের কাছে গেছে এবং আপনাদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার নিজের এলাকা ঠাকুরগাঁও এলাকায় সেথানে ২৬৫টি পূজা মণ্ডপ আছে সেখানে তাদের সঙ্গে আমাদের নেতা-কর্মীরা আমরা পূজার যে আনন্দ সেটাকে ভাগ করে নিয়েছি।’
৪৫ দিন আগে
চিকিৎসাধীন নুরকে ড. ইউনূসের ফোন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করবে সরকার
শুক্রবার রাতের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এসময় তিনি বলেন, নুর ও অন্যান্যদের উপর নৃশংস হামলার নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। পাশাপাশি তার এবং অন্যান্য আহত নেতাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
শনিবার(৩০ আগস্ট) বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার বাইরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি হাইকোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে গঠন করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ এবং সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস সচিব জানান, যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডক্টর খলিলুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা নূরকে আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসাসেবা দেওয়া ও প্রয়োজনে আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আশ্বাস দেন।
অধ্যাপক ইউনূস নুরকে এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের কথাও জানান।
আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা রবিবার বিএনপি, জামায়াত এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করবেন এবং বর্তমান পরিস্থিতি এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করবেন।
পড়ুন: নুরের জ্ঞান ফিরেছে, উচ্চপর্যায়ের মেডিকেল বোর্ড গঠন
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির সঙ্গে বিকাল ৩টায়, জামায়াত এবং এনসিপির সাথে যথাক্রমে বিকাল সাড়ে ৪টা এবং সন্ধ্যা ৬টায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে আলম বলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠান থেকে সরকারকে কোনো ষড়যন্ত্র থামাতে পারবে না।
তিনি বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জানানো হয়েছে যে নির্বাচন যথাসময়ে, রমজানের আগে অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের একজন বিশিষ্ট নেতা এবং গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং জনগণের অধিকারের অক্লান্ত নেতা নুরের উপর নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা জানায় অন্তর্বর্তী সরকার।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই ধরণের সহিংসতা কেবল নুরের উপরই নয়, বরং ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামে জাতিকে একত্রিত করা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেতনার উপরও আক্রমণ।’
সরকার বাংলাদেশের জনগণকে আশ্বস্ত করেছে যে, এই জঘন্য ঘটনার একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত অত্যন্ত জরুরিভিত্তিতে করা হবে।
এতে বলা হয়েছে, প্রভাব বা পদ নির্বিশেষে কোনো ব্যক্তিকে জবাবদিহিতা থেকে ছাড় দেওয়া হবে না। স্বচ্ছতা এবং দ্রুততার সঙ্গে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।
তাৎক্ষণিকভাবে, নুর এবং তার দলের অন্যান্য আহত সদস্যদের চিকিৎসা তদারকি করার জন্য একটি বিশেষায়িত মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার তাদের সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘যদি তাদের অবস্থা খারাপ হয়, তাহলে রাষ্ট্রীয় খরচে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের বিদেশে নিয়ে যাওয়া হবে। এই সংকটময় সময়ে নুর, তার দলের আহত সদস্য এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে দেশবাসীর দোয়া ও সংহতি রয়েছে।’
সরকার বলেছে, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নুর ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন।
একজন ছাত্রনেতা হিসেবে, তিনি বিভিন্ন কণ্ঠস্বরকে একত্রিত করে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে নির্ভীকভাবে দাঁড়িয়ে যুবসমাজকে সংগঠিত করেছিলেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং পুলিশ হেফাজতে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছিল। সেসময় তার ভূমিকা একটি স্বাধীন, সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য আমাদের জনগণের সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষার প্রতীক ছিল।
তার সাহস এবং ত্যাগ চিরকাল আমাদের জাতির ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।
সরকার বলেছে, ‘এই মুহূর্তে জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। আমাদের সংগ্রামের অর্জন রক্ষা করার জন্য, জনগণের ম্যান্ডেটের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার জন্য এবং গণতন্ত্রে আমাদের সফল উত্তরণ নিশ্চিত করতে এই ঐক্য অপরিহার্য।’
পড়ুন: নুরের ওপর হামলার ঘটনায় তারেক রহমানের নিন্দা, তদন্তের আহ্বান
সরকার যথাসম্ভব দৃঢ়ভাবে সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করে বলেছে, জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এটি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার।’
এতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার ও গণতন্ত্রপ্রেমী দেশপ্রেমিক জনগণ নির্বাচন বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত করার সকল ষড়যন্ত্র, বাধা, অথবা প্রচেষ্টাকে দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করবে। ‘জনগণের ইচ্ছার জয় হবে এবং কোনো অশুভ শক্তিকে আমাদের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে দুর্বল করতে দেওয়া হবে না।’
৯৬ দিন আগে
সরকার বহুমুখী পরিবহন পরিকল্পনা নিয়েছে: ফাওজুল কবির খান
সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন, সরকার একটি বহুমুখী পরিবহন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যেখানে সব পথকে আমরা একত্র করে দেখব। সড়ক, রেল, নৌপথ যেখানে যেটি উপযুক্ত সেখানে সেটি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ভুমি অধীগ্রহণ একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। এখান থেকে বেরিয়ে অন্যান্য পরিবহনে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।
রবিবার (২৪ আগস্ট) সকালে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস এলাকায় ভোগড়া থেকে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার ঢাকা বাইপাস সড়কের ১৮ কিলোমিটার অংশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
পড়ুন: চাকরি অধ্যাদেশের কিছু ধারা অপপ্রয়োগের আশঙ্কা আছে: ফাওজুল কবির
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দেশে দক্ষ প্রকৌশলী না থাকায় বাইরে থেকে লোক এসে সড়ক ও রেলপথ বানিয়ে দিয়ে যায়। অথচ আমাদের দেশের বুয়েট থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার ইঞ্জিনিয়ার বের হয়। এটা অনেক লজ্জার বিষয়। সুতরাং বিদেশিদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশে দক্ষ প্রকৌশলী তৈরির চেষ্টা করতে হবে।
তিনি বলেন, আশেপাশের দেশের তুলনায় আমাদের সড়কের নির্মাণ ব্যয় বেশি। এছাড়া এটি দুর্নীতির একটি বড় ক্ষেত্র। এগুলো কমানো গেলে রাস্তায় নির্মাণ ব্যয় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমানো সম্ভব।
পরে উপদেষ্টা ফিতা কেটে মহাসড়কের টোল প্লাজা ও প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এসময় তার সঙ্গে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক শরফ উদ্দিন চৌধুরী, পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান, জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীনসহ প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজকরা জানান, পিপিপি ভিত্তিতে জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক ঢাকা-বাইপাস ৪-লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্লাটি গাজীপুরের ভোগড়া থেকে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক প্রকল্প।
সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সড়কের নকশা, নির্মাণ, অর্থায়ন, পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ ডিবিএফওটি মডেল অনুসরণে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সড়কটি ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ককে সংযুক্ত করে।
রবিবার প্রকল্পের আওতাধীন ১৮ কিলোমিটার অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলো। প্রকল্পের নির্মাণকাজ আগামী বছরের জুন মাসে সম্পন্ন হবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
ঢাকা বাইপাস সড়ক প্রকল্পের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম আকন্দ বলেন, প্রকল্পের ফলে ঢাকা শহরে প্রবেশ ব্যতিরেকেই পণ্যবাহী যানবাহন কম সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর হতে ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে যাতায়াত করতে পারবে।
এতে একইসঙ্গে ঢাকা শহরের যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি হ্রাস পাবে বলে জানিয়েছেন সড়ক ব্যবহারকারী ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
১০২ দিন আগে
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়লো এক মাস
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আরও এক মাস বাড়িয়ে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে সরকার।সোমবার (১১ আগস্ট) রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিশনের মেয়াদ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
এর আগে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো বিবেচনা ও গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই কমিশনকে।
কমিশনের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজকে সহ-সভাপতি করা হয়েছে।
সদস্য হিসেবে রয়েছেন— জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
আরও পড়ুন: জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি খুঁজতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনায় ঐকমত্য কমিশন
১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করা এই কমিশনকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় শেষ হচ্ছিল আগামী ১৫ আগস্ট।
কমিশন নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের কার্যক্রমসহ নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ এবং দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের জন্য কাজ করছে। এ লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে এবং এ বিষয়ে পদক্ষেপের সুপারিশ করবে কমিশন।
কমিশনের সচিবালয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় হিসেবে কাজ করছে।
১১৫ দিন আগে
অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকার: ড. ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নতুন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা ঘিরে তারা জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য কাজ করছেন, যা ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য’ নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারবে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমাদের লক্ষ্য পরিষ্কার, আমরা এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে সব বাংলাদেশি শান্তিতে, গর্বের সঙ্গে, স্বাধীনতা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবেন।
তিনি বলেন, আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি। আমাদের সংস্কার কর্মসূচির পাশাপাশি আমরা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের আইনি জবাবদিহির আওতায় আনতে কাজ করছি।
তবে ন্যায়বিচার কেবল শাস্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। ‘ন্যায়বিচার মানে—রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যেন আর কখনো জনগণকে দমন, নিশ্চুপ বা ধ্বংস করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না হয়।’
অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান, ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা বক্তব্য দেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘গত বছরের ঘটনাগুলো স্মরণ করতে গিয়ে আমরা তাদের কথা মনে করি—যারা এই স্বপ্নের জন্য জীবন দিয়েছেন। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের পথ তৈরি করেছে। তারা একটি নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করেছেন—যা আশাবাদ, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
পড়ুন: দেশে জনগণের প্রতিনিধিত্বের সরকার খুবই জরুরি: মির্জা ফখরুল
জাতিসংঘ মানবাধিকার মিশন, ঢাকা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, যেখানে জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা, নাগরিক সমাজ, তরুণ প্রতিনিধি ও আন্তর্জাতিক অংশীদাররা অংশ নেন।
প্রধান উপদেষ্টার অনুরোধে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইআর) ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলি নিয়ে একটি স্বাধীন তথ্য-অনুসন্ধান মিশন পরিচালনা করে।
এই মিশনের প্রতিবেদন ২০২৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়, যেখানে বিস্তৃত তথ্য ও ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ দেওয়া হয়।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আমি জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানাই—আমাদের সবচেয়ে অন্ধকার সময়ে পাশে থাকার জন্য। আমি ভবিষ্যতেও এই অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিতে আশাবাদী।’
এই আয়োজন ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে—যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর তাৎপর্যের মুহূর্ত।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এটি ছিল এমন একটি মুহূর্ত, যখন হাজার হাজার নারী-পুরুষ—অধিকাংশই তরুণ—অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন এবং আমাদের দেশের মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধার করেছিলেন। তাদের সাহস কেবল আমাদের জনগণের হয়ে নয়, গোটা মানবতার পক্ষেই উচ্চারিত হয়েছে।’
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়—বিশেষত জাতিসংঘের অবিচল সমর্থনের কথা স্বীকার করেন, যারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা সংকট এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টের কঠিন সময়েও বাংলাদেশের পাশে ছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ সকল মানুষের অবিচ্ছেদ্য অধিকার রক্ষা ও সংজ্ঞায়নের উদ্যোগ নেয়—ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ বা মর্যাদা নির্বিশেষে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা আমাদের পৃথিবীর নৈতিক দিশারি হয়ে ওঠে, এবং এর মূলনীতি বাংলাদেশের সংবিধানেও দীর্ঘদিন ধরে অন্তর্ভুক্ত।’
পড়ুন: বিচার-সংস্কার, নির্বাচন পাশাপাশি হতে হবে: জামায়াত আমির
গত ১৬ বছরে এই অধিকার বারবার অস্বীকার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
‘আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো দখল হয়ে যায়। স্বাধীনতা খর্ব করা হয়। শাসনব্যবস্থায় সহিংসতা হয়ে ওঠে প্রধান অস্ত্র। গত জুলাইয়ে আমাদের সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে এই বাস্তবতাকে প্রত্যাখ্যান করেছে,’ বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ স্পষ্টতা, সংকল্প ও অসাধারণ সাহসিকতার সঙ্গে নিজেদের অধিকার পুনরুদ্ধার করেছে।’
গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার পরপরই অধ্যাপক ইউনূস মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে ওএইচসিএইচআরকে স্বাধীন অনুসন্ধান পরিচালনার জন্য অনুরোধ জানান—এই সময়কাল ছিল ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট।
‘আমরা বিশ্বাস করতাম, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য সত্য-উদঘাটন শুধু ন্যায়বিচারের জন্য নয়, বরং নিরাময়ের জন্যও অত্যন্ত জরুরি।’
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হাইকমিশনারের প্রতিবেদনে এই হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতা প্রকাশ পায়। যাতে দেখা গেছে, জুলাইয়ের কয়েক সপ্তাহেই আনুমানিক ১ হাজার ৪০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সহিংসতা ছিল পদ্ধতিগত, পরিচালিত এবং পূর্ববর্তী শাসনব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তর থেকে সমন্বিতভাবে সংঘটিত। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এতে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধের তাৎক্ষণিক উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।’
এই অনুসন্ধানের তথ্য আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাও সমর্থন করেছে—যার মধ্যে বিবিসি ও আল জাজিরার প্রতিবেদন উল্লেখযোগ্য।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা হাইকমিশনারের কার্যালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ—তারা কেবল মানবাধিকার লঙ্ঘনকে নথিভুক্ত করেনি, বরং একটি বিস্তৃত সুপারিশমালা দিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর কখনো না ঘটে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এসব সুপারিশ অন্তর থেকে গ্রহণ করেছি—অন্য কারো দায়ে নয়, নিজেদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে।’
সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ব্যাপক সংস্কার শুরু করেছে বলে জানান অধ্যাপক ইউনূস।
‘আমরা ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করেছি এবং জোরপূর্বক গুম প্রতিরোধবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদে যোগ দিয়েছি। চলতি মাসেই আমরা ওএইচসিএইচআরের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছি, যাতে ঢাকায় একটি সহায়ক মিশন প্রতিষ্ঠা করা যায়,’ বলেন তিনি।
এই মিশন সংস্কার কর্মসূচিতে কারিগরি সহায়তা দেবে এবং মানবাধিকার রক্ষায় সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও নাগরিক সমাজকে সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে।
‘অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকেই জাতিসংঘ আমাদের রূপান্তর প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।’ তিনি বলেন, ‘আমি মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে ধন্যবাদ জানাই—তার অবিচল সমর্থন ও সংহতির জন্য এবং এ বছরের মার্চে বাংলাদেশ সফরের জন্য।’
তিনি জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক, ওএইচসিএইচআরের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং টিম, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস এবং মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খানকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান তাদের অসাধারণ ও ঐতিহাসিক অবদানের জন্য।
১২৮ দিন আগে
দেশে জনগণের প্রতিনিধিত্বের সরকার খুবই জরুরি: মির্জা ফখরুল
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেশের সমস্যাগুলোকে ধীরে ধীরে সমাধান করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের ওপর আমি জোর দিতে চাই। আমি বিশ্বাস করি একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমাদের সমস্যাগুলোকে ধীরে ধীরে সমাধান করবে। বৈপ্লবিক কোনো ঘটনা ঘটবে, এটা সম্ভব নয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সেই পরিবর্তনটা অবশ্যই আসবে।’
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান উপলক্ষে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার আয়োজনে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীতে ‘জুলাই স্মরণ’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের এই জায়গায় আরেকটি সমস্যা, যা সম্ভবত নিজেরাই তৈরি করেছি—সহনশীলতার অনেক অভাব আমাদের মধ্যে আছে। এই জায়গা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সহনশীল হতে হবে ও ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা পারব।’
পড়ুন: ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার আহ্বান ফখরুলের, সংস্কারে ঐকমত্যকে স্বাগত
ফখরুল বলেন, ‘২০২২ সালে আন্দোলনের সময় অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আমরা একসঙ্গে আন্দোলন করেছিলাম, ৩১ দফা কর্মসূচি নিয়ে আমরা জনগণের সামনে এসেছিলাম। যেদিনই কর্মসূচি নিয়ে সামনে আসি, সেই দিন আমাদের ওপর গুলি হয়েছে। অফিসের সামনের সভা করতে দেয়নি পুলিশ, গুলি করেছে এবং মিরপুরের একটি ছেলে শহীদ হয়েছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরাও চাই অতি দ্রুত এই হত্যার বিচার হোক। জরুরি সংস্কারগুলো অতি দ্রুত হোক। তবে একটি জিনিস মনে রাখা প্রয়োজন—জনগণের প্রতিনিধিত্বসম্পন্ন সরকার খুবই জরুরি। কারণ ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করা আর ম্যান্ডেট ছাড়া কাজ করার মধ্যে অবশ্যই কিছু পার্থক্য আছে।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে এবং জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে—এমন আশা প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা।
তিনি বলেন, ‘আরও বড় একটি প্রশ্ন আছে—তা হলো প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মাণ করতে হবে, যা আওয়ামী লীগ সরকার ভেঙে দিয়েছে। এজন্য আমাদের এত সমস্যা। প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরায় নির্মাণ করতে হবে। কাজটা সহজ নয়, সময় লাগবে, ধৈর্য ধরতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিগত ১৫-১৬ বছর ধরে আমরা ফ্যাসিস্ট শাসকের অধীনে থেকে গোটা জাতি নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছে। আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলেছি, প্রতিবাদ করেছি। অসংখ্য নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, হত্যার শিকার হয়েছেন। বিচারের নামে অনেক রাজনৈতিক নেতা, আলেম-ওলামা হত্যা করা হয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে অতিদ্রুত জুলাই-আগস্টে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে প্রতিবেদন তৈরি করায় জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাকে ধন্যবাদ জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের শুরুটা অনেক আগেই। ১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা, মানুষের অধিকারগুলো বিলীন করে দেওয়া এবং একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তারা কাজ করেছে।’
পড়ুন: জনগণের জীবনমান উন্নয়নে রাষ্ট্র সংস্কারের আহ্বান ফখরুলের
এসময় জুলাই-আগস্টে শহীদ, আহত ও অঙ্গহানির শিকারদের প্রতি দল ও নিজের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি ভয়াবহ ও বিভীষিকাময় সময় পার করেছি। এটি সত্য যে, সেই সময়টি আমাদের জন্য ছিল ভয়ংকর। আমাদের দলের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছিল। এখনও সব মামলা উঠানো হয়নি, কিছু বাকি রয়েছে। ১ হাজার ৭০০ নেতাকর্মী জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমরা অনেক কথা বলি, আসলে একটি বছর খুব বড় সময় নয়। এই সময়ে তারা অনেকগুলো কাজ করেছেন। অস্বীকার করার উপায় নেই। তারা যে বড় কাজটি এগিয়ে নিয়েছেন, তা হলো সংস্কারের কাজ।’
তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে খালেদা জিয়া বলেছিলেন রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। এই কাঠামোয় মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, তা পূরণ করা যাবে না। সেজন্য ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছিলেন তিনি। সেখানে ছিল বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ওই ৩১ দফার মধ্যে এই সংস্কারগুলোর কথা বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রে কিছু মতবিরোধ থাকবেই। রাজনৈতিক দলগুলো সব একমত হবে না। এই বিষয়টিকে বড় করে দেখিয়ে জাতির মধ্যে অযথা বিভক্তির সৃষ্টি করা হচ্ছে। পত্রিকার বরাতে ১২টি বিষয়ে একমত হওয়ার কথা উল্লেখ করে মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলে দাবি করেন ফখরুল। বাকি বিষয়গুলোতে নিশ্চয়ই দায়িত্ব থাকবে—যারা সরকারে যাবেন, তারা বাকি কাজগুলো সমাধান করবেন।’
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘তরুণরা ভবিষ্যতে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবেন, যেখানে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষ তার অধিকার নিয়ে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়তে পারবে। আমাদের শিশুদের আর এভাবে প্রাণ দিতে হবে না।’
১২৮ দিন আগে
তিন শ্রেণির আরও ১৭৫৭ জুলাই যোদ্ধার গেজেট প্রকাশ
তিন ক্যাটাগরির আহত আরও এক হাজার ৭৫৭ জন জুলাই যোদ্ধার গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার।
সোমবার (২৯ জুলাই) রাতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তালিকার গেজেট প্রকাশ করা হয়।
‘ক’ শ্রেণির (অতি গুরুতর আহত) ১০৯ জন, ‘খ’ শ্রেণির (গুরুতর আহত) ২১০ জন ও আট বিভাগে ‘গ’ শ্রেণির (আহত) এক হাজার ৪৩৮ জন জুলাই যোদ্ধার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
‘গ’ শ্রেণির মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে ২২৬ জন, রংপুর বিভাগে ৯০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১১১ জন, বরিশাল বিভাগে ১১৬ জন, সিলেট বিভাগে ৮৮ জন, খুলনা বিভাগে ১৬৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৩৬ জন এবং ঢাকা বিভাগের ৪০৬ জন জুলাই যোদ্ধা রয়েছেন।
'জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫' এর ৭ (খ) ধারা এবং রুলস অব বিজনেস ১৯৯৬ এর সিডিউল-১ (অ্যালোকেশন অব বিজনেস) এর ক্রমিক নং ২৩-এ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে দেওয়া ক্ষমতাবলে এই গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল প্রশিক্ষণ দিয়ে জুলাই যোদ্ধাদের আত্মকর্মসংস্থানে সহায়তা করা হবে: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে পাওয়া তালিকা যাচাই-বাছাই করে প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এ নিয়ে মোট জুলাই যোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ালো ‘ক’ শ্রেণিতে ৬০২ জন, ‘খ’ শ্রেণিতে এক হাজার ১১৮ জন ও ‘গ’ শ্রেণিতে ১২ হাজার ৩৮ জন।
এই সংক্রান্ত বিধিমালা অনুযায়ী, ‘ক’ শ্রেণির আহতরা এককালীন ৫ লাখ টাকা পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তাদের ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে বাকি ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এরা প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন।
‘খ’ শ্রেণির আহতরা এককালীন ৩ লাখ টাকা পাবেন। গত অর্থবছরে তাদের এক লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি ২ লাখ টাকা চলতি অর্থবছরে দেওয়া হবে। তারা মাসিক ১৫ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন।
‘গ’ শ্রেণির আহতরা এককালীনে এক লাখ টাকা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এ টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তারা প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন।
১২৯ দিন আগে
বিমান দুর্ঘটনায় পালিত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় শোক
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় মঙ্গলবার (২২ জুলাই) পালিত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় শোক।
এ উপলক্ষে বাংলাদেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রয়েছে।
নিহতদের মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনায় মঙ্গলবার বাংলাদেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, মন্ত্রিপরিষদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবনের ওপরে অর্ধনমিত জাতীয় পতাকা উড়ছে। কোনো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কালো ব্যাজ ধারণ করতেও দেখা গেছে।
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় সর্বশেষ মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ২৭ জন নিহত এবং ৭৮ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিমান দুর্ঘটনার পর সোমবার (২১ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে রাষ্ট্রীয় শোক পালনের কথা জানানো হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে একটি বিদ্যালয়ে পতিত হওয়ার ফলে কোমলমতি শিশুসহ অনেক মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গভীরভাবে শোকাহত। এই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করা হবে।
আরও পড়ুন: বিধ্বস্ত বিমানটি প্রশিক্ষণ নয়, ছিল যুদ্ধবিমান
অন্যদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনায় মঙ্গলবার সারাদেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার।
নিহতদের রূহের মাগফিরাত ও রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসারত আহতদের সুস্থতা কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে দেশের সব মসজিদের খতিব, ইমাম ও মসজিদ কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
আজ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে দুপুর দেড়টায় (বাদ যোহর) এ উপলক্ষে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
১৩৬ দিন আগে
সরকারকে পক্ষপাতিত্ব না করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান মির্জা আব্বাসের
অন্তর্বর্তী সরকারকে 'পক্ষপাতমূলক আচরণ' পরিহার ও দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা মির্জা আব্বাস।
তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, দয়া করে, পক্ষপাতমূলক আচরণ বন্ধ করুন। এটি দেশের ক্ষতি করছে।’ জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে শুক্রবার (১৮ জুলাই) এক মৌন মিছিল উদ্বোধনের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্বাস সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, একটি পক্ষের প্রতি ঝুঁকে এবং অন্য পক্ষকে পাশ কাটিয়ে বিএনপিকে নির্মূলের করার চেষ্টা করবেন না। ‘কখনও এমন চিন্তা করবেন না।’
তিনি বলেন, বিএনপি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে এবং সহযোগিতা করার চেষ্টা করছে।
আব্বাস বলেন, ‘আমরা এখনও আপনাদেরকে (সরকারকে) সমর্থন করছি। তাই, দয়া করে খুব শিগগিরই একটি জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশে চলমান অস্থিরতা শান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু যদি তা না হয়—তাহলে মানুষ বিশ্বাস করবে যে, আপনারাই দেশকে অস্থিতিশীল করছেন—যাতে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে পারেন।’
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে ৩৬ দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ সিটি ইউনিট নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
পড়ুন: বিভ্রান্তির রাজনীতির মাধ্যমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে একটি দল: সালাহউদ্দিন
কিছু রাজনৈতিক নেতার সাম্প্রতিক আপত্তিকর মন্তব্যকে উল্লেখ করে আব্বাস বলেন, কেউ কেউ বলেছেন বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হওয়ার পর বিএনপির নাম গিনেস বুকে লেখা হবে।
তিনি বলেন, ‘তারা বিএনপিকে মুছে ফেলতে চায়। আমি তাদের বলছি, দয়া করে জিভ সংযত রাখুন। এটা আপনার জন্য, দেশের জন্য এবং জনগণের জন্য ভালো হবে।’
বিএনপির এই নেতা রাজনৈতিক নেতাদের তাদের দল সম্পর্কে এমন বাজে এবং অযৌক্তিক মন্তব্য না করারও আহ্বান জানান, যাতে জনরোষের সৃষ্টি না হয়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের উত্তেজিত করার চেষ্টা করবেন না বা আমাদের অন্য দিকে ঠেলে দেবেন না। আপনারা বিএনপির সঙ্গে লড়াই করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিএনপি ঝগড়ায় জড়াবে না। বিএনপি বিশৃঙ্খলার দল নয়। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে এবং জনগণের সঙ্গে থাকে।’
৫ আগস্টের পর কিছু রাজনৈতিক নেতার লম্বা দাবির সমালোচনাও করেন মির্জা আব্বাস। বলেন, ‘আমি জানি না তারা কী পেয়েছে বা কোথা থেকে সাহস পেয়েছে। আমরা আশা করি আপনারা শক্তিশালী এবং সাহসী হয়ে উঠবেন, কিন্তু দয়া করে বিএনপির মতো সত্যিকারের দেশপ্রেমিক দলের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন গুজব এবং অপবাদ ছড়াবেন না।’
মিটফোর্ডে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন যুবদল নেতা খুনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু কেউ কেউ এই ঘটনাকে বাংলাদেশ থেকে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতায় আসার পথ পরিষ্কার করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন বিএনপি ক্ষমতায় আসতে মরিয়া। এটা সত্য নয়। বিএনপি ১৭ বছর ধরে রাজপথে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই করছে। এখন আপনারা বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতা দখল করতে চান।’
পড়ুন: চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির তীব্র নিন্দা বিএনপির
তিনি সতর্ক করে বলেন, যারা ক্ষমতায় আসার পথ মসৃণ করতে বিএনপিকে সরিয়ে দিতে চান তারা ভুল করছেন। ‘যতক্ষণ পর্যন্ত বিএনপির একজনও নেতা বা কর্মী বেঁচে থাকবেন, ততক্ষণ আপনাদের বিএনপিকে নির্মূল করার স্বপ্ন কখনোই পূরণ হবে না।’
আব্বাস বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীদের ১৭ বছর ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং তারা জানে কীভাবে রাস্তায় প্রতিবাদ করতে হয় এবং কীভাবে জেলে টিকে থাকতে হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই হুমকি দিয়ে আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করবেন না।’
বক্তৃতার শুরুতে আব্বাস জুলাইয়ের বিদ্রোহের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের চেতনা ও আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং দেশ গঠনে কাজ করার পরিবর্তে কিছু দল তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল ও রাজনীতিতে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য শহীদদের ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।
পরে, বিএনপি নেতাকর্মীরা মৌন মিছিল বের করে। মিছিলটি কাকরাইল, শান্তিনগর, মৌচাক এবং মালিবাগ ক্রসিং হয়ে আবুল হোটেলের কাছে গিয়ে শেষ হয়।
১৩৯ দিন আগে