ধান
ধান-গমের বিকল্প খাবার হতে পারে কাসাভা
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের এই সময়ে মানব জাতিসহ গৃহপালিত প্রাণির খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এদিকে বৈরি আবহাওয়ায় ধান ও গমের উৎপাদন কমছে। অপরদিকে জনসংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। এমন অবস্থায় ধান, গম, চালের উপর নির্ভরতা কমাতে পারে কাসাভা। বাংলাদেশে কাসাভা সাধারণত শিমুল আলু নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে খাবারের খোঁজে লোকালয়ে ২ বানর
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল উদ্ভিদ ও বিজ্ঞান বিভাগের সম্মেলনকক্ষে শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় কৃষি অনুষদের ফসল উদ্ভিদ ও বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির কাসাভার বিভিন্ন গুনাগুণ, ব্যবহার ও কাসাভা চাষের সম্ভাবনা ও প্রতিকূলতা সম্পর্কে তার গবেষণালব্ধ তথ্য উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে।
সম্মেলনে গবেষক ছোলায়মান আলী ফকির জানান, কাসাভা পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম শর্করা জাতীয় খাদ্য এবং প্রায় ৮০ কোটি মানুষের প্রধান খাদ্য।
তিনি আরও জানান, এটি শর্করা, আমিষ, চর্বি, আঁশ, খনিজ দ্রব্য, বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন-সি, লৌহ ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। এটি উচ্চ তাপমাত্রা ও কম উর্বর মাটিতেও জন্মাতে সক্ষম। সিদ্ধ করে, পুড়িয়ে এমনকি গোল আলুর মতো অন্যান্য তরকারির সঙ্গেও রান্না করে কাসাভা আলু খাওয়া যায়।
তিনি জানান, কাসাভা আটার সঙ্গে মিশিয়ে রুটি, পরোটা, কেক, পিঠা তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। আমেরিকার দেশ হাইতি, মেক্সিকান রিপাবলিক, পেরাগুয়ে, পেরু, আফ্রিকা তানজানিয়া, কেনিয়া, জাম্ববিয়া, ঘানা, নাইজেরিয়া ও এশিয়ার ভিয়েতনাম, ভারতের কেরালা ও তামিলনাড়ু রাজ্যে, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে এই আলু স্যুপ, চিপস, ট্যাপিওকা (সাগুসদৃশ খাবার), পুডিং ইত্যাদি হিসেবে খাওয়া হয়।
এছাড়া কাসাভার পাতায় ডিমের মতো পুষ্টিগুণ রয়েছে।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় পানিবন্দি ২ হাজার পরিবার, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
ছোলায়মান আলী ফকির জানান, দেশের পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে এই পাতা সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। তাছাড়া এ পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণের পর উদ্ভাবিত পিলেট ও আটা গরু, ছাগল, মহিষ, মাছ ও পোল্ট্রিকে খাবার হিসেবে দেওয়া যায়। তবে কাসাভা গাছের সর্বত্র বিষাক্ত সায়ানোজেনিক গ্লুকোসাইড থাকে। তাই বিষাক্ত কিছু জাতের কাসাভার ডগা ও পাতা খেয়ে গরু-ছাগল মারা যেতে পারে। তবে সিদ্ধ বা প্রক্রিয়াজাত করলে এই বিষক্রিয়া আর থাকে না।
সাতক্ষীরায় চিনিগুঁড়া ধানে তৈরি ১৮ প্রতিমা
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আগামী ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে দেবী দুর্গা ঘোড়ায় (ঘোটকে) চড়ে স্বর্গ থেকে মর্ত্তলোকে আসবেন। এরপর মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমীর পূজা শেষে দশমীতে (২৪ অক্টোবর) বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে আবারও ঘোড়ায় চড়ে তিনি ফিরে যাবেন স্বর্গলোকে।
এ পূজা উদযাপন উপলক্ষে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মুরারিকাটি উত্তর পালপাড়া মন্দিরে এবার ১০০ কেজি চিনিগুঁড়া ধানের শৈল্পিক কারুকাজে নির্মাণ হয়েছে ১৮টি প্রতিমা।
পূজা শুরুর এখনও ১০ দিন বাকি থাকলেও ধান দিয়ে নির্মাণ করা প্রতিমা দেখতে মানুষের ভিড় বেড়েই চলেছে। যেন উৎসবের আগেই উৎসবের আমেজ।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিমাগুলো মনে হচ্ছে সোনা দিয়ে মোড়ানো হয়েছে। পুঁথির মতো একটা একটা করে ধান দিয়ে গেঁথে তৈরি করা হয়েছে এ প্রতিমা, যা অপরূপ সৌন্দর্য বর্ধন করেছে।
আরও পড়ুন: শনিবার মহা ষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা
প্রতিমা তৈরির কারিগর শিল্পী পল্লত বিশ্বাস বলেন, ১৮টি প্রতিমা পূর্ণাঙ্গভাবে তৈরি করতে সম্পূর্ণ একমাস সময় লেগেছে। এই মণ্ডপে দুর্গা, কার্তিক গণেশ, সরস্বতী, লক্ষ্মী, অসুরসহ আনুষঙ্গিক ১৮টি প্রতিমা তৈরির জন্য প্রথমে কাঠ, বাঁশ, পাট, নকশী কাপড় পা ও বিচুলির ফ্রেম বা কাঠামো, মাটি ও বিশেষ শৈল্পিক কারুকাজ হিসেবে ব্যয়বহুল চিনিগুঁড়া ধান ব্যবহার করা হয়েছে। কিছু কিছু অংশে ব্যয়বহুল রং স্প্রে করা হয়েছে। যার কারণে প্রতিমাগুলোর সৌন্দর্য আরও বর্ধিত হয়েছে।
মুরারিকাটি পালপাড়া পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য ও শিক্ষক প্রদীপ পাল বলেন, প্রতি বছর ভিন্ন আঙ্গিকে তৈরি করা হয় এ পূজা মণ্ডপের প্রতিমাগুলো। এ বছর প্রায় ১০০ কেজি চিনিগুঁড়া ধান ব্যবহার করা হয়েছে এ প্রতিমা তৈরিতে। প্রতিমা তৈরির পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হয়েছে আরও কয়েকদিন আগে এরই মধ্যে ধানের প্রতিমা দেখতে ভিড় করছেন অনেকে।
স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামাপদ পাল বলেন, ‘এবার যুব কমিটির আয়জনে ১ লাখ টাকার মতো খরচ করে ধানের প্রতিমা নির্মাণ হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে অচেনা মানুষের ভিড়ে মুখর হচ্ছে পূজা মণ্ডপ। পূজা শুরু হলে আমাদের যেসব স্বেচ্ছাসেবক আছে, তা দিয়ে শৃঙ্খলা কতটুকু রক্ষা করা যাবে জানি না। তাই প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা চাই।’
মণ্ডপে আসা অঞ্জলি পাল বলেন, ‘পালপাড়ায় ৪০টি সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবার বসবাস করে। এবার এ দুর্গাপূজা উদযাপনে এই প্রথম এত সুন্দর প্রতিমা তৈরি করেছে যুব কমিটি, যা সত্যি প্রশংসিত।’
যা মজুদ আছে তাতে খাদ্যসংকটের কোনো সম্ভাবনা নেই: খাদ্যমন্ত্রী
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে তিনি খাদ্য সংকটের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না।
সম্প্রতি ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নওগাঁ-১ আসনে তিনবারের সংসদ সদস্য এই মন্ত্রী বলেন, দেশের কোনো জমি যাতে অনাবাদি না থাকে তার জন্য তার মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘চলতি আমন মৌসুমের পরই আসছে বোরো মৌসুম। আমরা পদক্ষেপ নেব যাতে সব চাষযোগ্য জমিতে বোরো চাষ হয়। আমরা ইতোমধ্যেই কৃষি মন্ত্রণালয়কে বলেছি আসন্ন বোরো মৌসুমে যথাযথ সেচের ব্যবস্থা করতে।’
মন্ত্রী বলেন, আগামী ফসলের মৌসুমে কৃষকরা যাতে সর্বোচ্চ উৎপাদনের জন্য তাদের জমি চাষ করতে পারে সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সংসদ সদস্যকে তাদের নির্বাচনী এলাকায় সতর্ক থাকতে বলেছেন।
তিনি বলেন, যেকোনো সংকট এড়াতে সরকার কৃষকদের উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহিত করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উর্বর জমিতে অসংখ্য ফসলের চাষ হয়। আমরা পাই আমন, আউশ ও বোরো। যদিও এ বছর বৃষ্টিপাত কম বা না হওয়ায় খরার মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছিল, পরে জুলাই-আগস্টের বৃষ্টিপাত আমাদের ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। কিছু ফসল আছে, যেগুলো রোপণ করতে দেরি হয়েছে। তাই সেগুলোর ঘাটতি হতে পারে। সব মিলিয়ে যে কোনো ধরনের খাদ্য সংকট মোকাবিলায় আমরা অত্যন্ত সতর্ক রয়েছি।’
দেশে বর্তমানে কী পরিমাণ খাদ্য মজুদ রয়েছে সে সম্পর্কে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন যে প্রত্যেককে খাওয়ানোর জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের কাছে ১৭ লাখ টন চাল মজুদ রয়েছে। আরও পাঁচ লাখ ৩০ হাজার টন চাল পাইপলাইনে রয়েছে। এছাড়া শিগগিরই মিয়ানমার থেকে ৩০ হাজার টন চাল নিয়ে একটি জাহাজ বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। অক্টোবরের শেষ নাগাদ আমাদের কাছে মোট ২০ লাখ টন চাল মজুদ থাকবে।’
তিনি বলেন, দেশের খাদ্য চাহিদা মেটানোর ক্ষমতা সরকারের রয়েছে।
সাধারণত সবসময় ১০ থেকে ১২ লাখ টন চালের মজুদ থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে যে খাদ্য মজুদ রয়েছে তা খোলা বাজারে বিক্রি (ওএমএস), পরীক্ষামূলক ত্রাণ (টিআর) এবং কাজের বিনিময়ে খাদ্যসহ (কাবিখা) বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচিতে ব্যয় করা হয়। এই মজুদ ফুরিয়ে গেলে আমরা খাদ্য আমদানি করব।’
তিনি আরও বলেন, আমাদের এর থেকেও বেশি মজুদ আছে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সাধারণত ভারত থেকে আমদানি করলেও এখন মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানির পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘আমরা থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে ছাড়পত্র পেয়েছি। আমাদের কাছে কম্বোডিয়া থেকে চাল আমদানির অফার রয়েছে। আমরা চাল আমদানির জন্য আরও উৎস খুঁজছি। খাদ্য সংকট দেখা দিলে আমরা এই দেশগুলো থেকে খাদ্য আমদানি করে যেকোনো সংকট মোকাবিলা করতে পারব।’
মন্ত্রী বলেন, আমদানিকারকদের সরকারি কোষাগারে মাত্র ৫ শতাংশ ট্যাক্স পরিশোধ করে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই সুযোগ সংক্রান্ত সরকারি আদেশ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
তিনি বলেন, যদি দেখি যে কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন তাহলে আমরা এই এসআরও (সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রক আদেশ) বাড়াব।
বর্তমান বিদ্যুতের সংকট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকলে অবশ্যই কৃষি কাজ ব্যাহত হবে। বিশেষ করে সেচের সময় এটি বেশি প্রয়োজন। এতে ধান উৎপাদন কম হবে। তবে এ বিষয়টি আমার মন্ত্রণালয়ের কাজ না। এটি কৃষি মন্ত্রণালয় দেখবে। আশা করি এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় সেচ মৌসমে কার্যকরী ব্যবস্হা নিবে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, উৎপাদন যাতে বৃদ্ধি পায় সে বিষয়ে কৃষি মন্ত্রনালয় ও সংশ্লিস্ট সংস্থা সমন্বয় করে মনিটরিং করা হবে।
ধান মজুতের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমেছে ব্যবসায়ীরা: খাদ্যমন্ত্রী
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ধান মজুতের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমেছে ব্যবসায়ীরা।
তিনি বলেন, ধান কিনে মজুত করার অসুস্থ প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের মাঝে। সবাই প্রতিযোগিতা করে ধান কিনছে, ভাবছে ধান কিনলেই লাভ। এ অসুস্থ প্রতিযোগিতা ভালো পরিণতি আনবে না।’
রবিবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয় থেকে ‘বোরো ২০২২ মৌসুমে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ ও বাজার মনিটরিং সংক্রান্ত অনলাইন মতবিনিময় সভায়’ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মন্ত্রী এই সব কথা বলেন।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, অধিকাংশ মিল মালিক বাজার থেকে ধান কিনলেও তারা উৎপাদনে যাচ্ছেন না।
আরও পড়ুন: সততা ও নিষ্ঠার সাথে দেশ গঠনে অবদান রাখার আহ্বান খাদ্যমন্ত্রীর
বাজারে নতুন চাল এখনও আসছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন বাজারে যে চাল পাওয়া যাচ্ছে তা গত বছরের পুরাতন চাল। তাহলে নতুন ধান যাচ্ছে কোথায়? মিল মালিকদের প্রতি এ প্রশ্ন রাখেন মন্ত্রী।
এ অবস্থা চলতে দেয়া হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কে কত পরিমাণ ধান কিনছেন এবং কে কত পরিমাণ চাল ক্রাসিং করে বাজারে ছাড়ছেন তা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন করপোরেট হাউস ধান চালের ব্যবসা শুরু করেছে। তারা বাজার থেকে ধান কিনে মজুত করছেন এবং প্যাকেটজাত করছেন। প্যাকেটজাত চাল বেশি দামে বাজারে বিক্রিও হচ্ছে। তাই চালের ব্যবসায় সম্পৃক্ত কর্পোরেট হাউসগুলোর সঙ্গে দ্রুততম সময়ে বৈঠক করতে খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
ভারত থেকে গম দেয়া বন্ধ হচ্ছে গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে অথচ শুধু ভারত নয় বিশ্বের অনেক দেশ বাংলাদেশকে গম দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে চিঠি পাঠিয়েছে বলে উল্লেখ করেন সাধন চন্দ্র মজুমদার।
আরও পড়ুন: কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দেশে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়েছে: খাদ্যমন্ত্রী
তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলে ঝড় ও বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি হয়েছে। কোন জেলায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক হিসাব জানা না গেলে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে না। তাই কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঠিক তথ্য দেয়ার নির্দেশনা দেন মন্ত্রী।
কুড়িগ্রামে তিন দিনের বৃষ্টিতে জলমগ্ন পাকা ধান বিনষ্টের আশঙ্কা
গত তিনদিনের বৃষ্টিতে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার আটটি ইউনিয়নে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে শত শত বিঘা আধাপাকা বোরো ধান। এসব ইউনিয়নের নদী অববাহিকায় এবং মরাখাল সংলগ্ন এলাকার জলমগ্ন থাকা পাকা ধানগুলোর অর্ধেকটা এখন চিটা হয়ে গেছে। বিপাকে পরে বাধ্য হয়েই সেই আধাপাকা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে কৃষক।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় এক লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় টার্গেট অর্জিত হয়েছে ১৩ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে সদরে ২৫ ভাগ ধান কর্তন করা হয়েছে। বাকী ধানগুলো এখনও জমিতে পড়ে রয়েছে। এসব ধান নিয়ে চিন্তিত রয়েছে কৃষক। গত তিনদিন অফিস বন্ধ থাকায় এখন পর্যন্ত কৃষি বিভাগের কাছে বোরোধান জলমগ্ন হওয়ার কোন পরিসংখ্যান নেই।
আরও পড়ুন: ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না কিশোরগঞ্জের হাওরের ধানচাষিরা
সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢলে ৩’শ কোটি টাকার ধান ক্ষতিগ্রস্ত!
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চলতি বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জ জেলার ৩১টি হাওরের ২০ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন ধান পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
স্থানীয় কৃষক, হাওরের ফসলরক্ষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত সংগঠনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে, কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী তলিয়ে যাওয়া জমির পরিমাণ পাঁচ হাজার ৭৭৫ হেক্টর। যাতে থেকে ২৮ হাজার ৮৭৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হতো।
এদিকে, কৃষি বিভাগের এই তথ্যের সঙ্গে একমত নন জেলার কৃষকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন। তাদের মতে, কৃষি বিভাগ হাওরের ফসলের প্রকৃত চিত্র গোপন করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে লুকোচুরি করছে।
এ প্রসঙ্গে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, কৃষি বিভাগ বলছে ২০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাস্তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে তিনি জানান, হাওর বাঁচাও আন্দোলনের পরিসংখ্যানে এর চিত্র কিছুটা হলেও পাওয়া যায়। ৩১টি হাওরের ২০ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। এ নিয়ে কৃষি বিভাগ কেন লুকোচুরি খেলছে তা আমাদের মাথায় আসে না। লুকোচুরি না করে প্রকৃত তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হবে।
তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে কৃষক বাঁচলেই দেশ বাঁচবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন ও ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তথ্যের জন্যে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: বন্যার পানি হাওরে ঢুকে ফসলহানির আশঙ্কা সুনামগঞ্জের কৃষকদের
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা বলেন, আমরা হাওরের ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে একটা স্টাডি করছি। যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। তবে, এই মুহূর্তে বলতে গেলে তলিয়ে যাওয়া ফসলের পরিমাণ ১৫ হাজার হেক্টর হতে পারে। প্রতি হেক্টরে ছয় মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হলে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে ৯০ হাজার মেট্রিক টন ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। এর ক্ষতির পরিমাণ ১৫০ কোটি টাকা। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। অনেকে একেবারে কাঁচা ধান কেটেছেন। যা ওজনে কম হবে। এটাও একটা ক্ষতির অন্যতম কারণ।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, মূল হাওরের ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। হাওরের ওপরের অংশের প্রায় ২২ হাজার হেক্টর জমির ফসল এখনো কাটা বাকি রয়েছে। ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জ জেলায় মোট পাঁচ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যায়। এতে ২৮ হাজার ৮৭৫ মেট্রিক টন ধানের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ধানের পরিমাণ প্রায় ৭০ কোটি টাকা।
তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদেরকে প্রণোদনা দেবে কৃষি বিভাগ। এজন্য তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আগামী কৃষি মৌসুমে প্রণোদনা দেয়া হবে।
জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় ও আসাম প্রদেশে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে মার্চের শেষ সপ্তাহে হঠাৎ করেই সুনামগঞ্জের সকল নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকে। ২ এপ্রিল থেকে শুরু করে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত বাঁধ ভেঙে ও পানি উপচে জেলার ছোট বড় ৩১টি হাওরের প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে যায়।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন সরেজমিন তথ্য সংগ্রহের পর সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রকাশ করে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি হেক্টর জমিতে পাঁচ মেট্রিক টন বা ১২৫ মণ ধান উৎপাদন হয়।
এক মণ ধানের দামেও মিলছে না শ্রমিক
বৈরী আবহাওয়ার শঙ্কায় আগেভাগেই বোরো ধান ঘরে তোলা তোড়জোড় চলছে উপকূলীয় নদী বেষ্টিত ফেনীর সোনাগাজীর কৃষকদের মাঝে। তবে এখনও কাটার উপযোগী ৭০ শতাংশ বোরো ধান জমিতে রয়েছে। বর্তমানে এই অঞ্চলের কৃষকরা ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এর মধ্যেই বৃষ্টি সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চরম শ্রমিক সংকট।
শ্রমিক সংকটের কারণে সময় মতো ধান কাটতে পারছেন না অনেক কৃষক। শুধু তাই নয়, এক মণ ধানের দামে মিলছে না একজন শ্রমিকও। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় কয়েক হাজার কৃষককে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফেনীতে গত এক সপ্তাহ ধরে এক মণ ধান ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু তার বিপরীতে একজন শ্রমিক ১ হাজার থেকে ১২’শ টাকা চাওয়ায় কৃষকেরা চরম লোকসানের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
আরও পড়ুন: লাল বাঁধাকপি চাষ: বদলে দিয়েছে কৃষক বেলালের ভাগ্য
পরশুরাম উপজেলার পৌর এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায়। কিন্তু শ্রমিকদের জনপ্রতি এক হাজার থেকে ১২’শ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। সঙ্গে দুই বেলা খাবার। অন্যান্য খরচ যেমন জমি চাষ, সেচ, চারা, সার, কীটনাশক ও শ্রমিক খরচতো আছেই। এতে আমার ৪০ শতক জমিতে প্রায় ২-৩ হাজার টাকা করে লোকসান হচ্ছে।
সোনাগাজী উপজেলার উপকূলীয় চর চান্দিয়া এলাকার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, এক সময় মঙ্গা প্রবল রংপুর অঞ্চলের ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া গেলেও এখন আর নেই। ফলে এলাকার শ্রমিকরা কৃষকদের কাছে অতিরিক্ত মুজুরি হাকাচ্ছে।
ধান কাটা শ্রমিক কবির আহাম্মদ বলেন, ‘আমি আবুল খায়েরের সঙ্গে (মালিক) ধান কাটার জন্য দৈনিক ১ হাজার টাকা করে পাঁচ দিনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। দুপুরে-রাতে ভাত খাওয়া ও সকালের নাশতাও মালিক বহন করবেন।
পরশুরাম ডাকবাংলা মোড় এলাকার ধান ব্যবসায়ী আবদুল কাইয়ুম জানান, তিনি প্রতিমণ ধান ৬৮০ টাকা করে কিনছেন। ধানের চাহিদা না থাকায় দাম হঠাৎ কমে গেছে। এ ছাড়া শ্রমিক খরচও ওই টাকা থেকে বাদ যাবে।
আরও পড়ুন: হলুদে ছেয়ে গেছে মাঠ, সরিষার বাম্পার ফলনের আশায় কৃষক
পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সত্যনগর গ্রামে দেখা গেছে, কৃষক আবুল কাশেম ছয় জন শ্রমিক নিয়ে বোরো ধান কাটছেন। তিনি বলেন, ধান কাটা শ্রমিক পাওয়া খুব কষ্টের। পেলেও তাদের মজুরি উচ্চমূল্যের। তাই আগামী মৌসুমে আর বোরো চাষাবাদ করবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
পরশুরাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, পরশুরাম উপজেলায় চলতি বছর ৩ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এবার বাম্পার ফলনও হয়েছে।
উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেব রঞ্জন বণিক বলেন, বোরো আবাদের জন্য সবকিছুই অনুকূলে ছিল। বিদ্যুৎ, পানি, সার, বীজ কোনো কিছুরই সমস্যা ছিল না। চলতি মৌসুমে ধানের ফলনও ভালো হয়েছে।
আরও পড়ুন: দেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় সচল গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের পাম্প
ফেনীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তারেক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর ৩০ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। বোরো ধানের দাম কম থাকায় আমরা কৃষকদের ধান ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিচ্ছি। যাতে করে তারা সংরক্ষিত ধান পরে বিক্রি করে দামটা ভালো পান। একই সঙ্গে শ্রমিক সংকট থাকায় কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিনে কৃষকদের সহজভাবে ধান কাটা, মাড়াই, বস্তা প্যাকেটজাতকরণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, শ্রমিক সংকট ও বৈরী আবহাওয়ার শঙ্কায় কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিনে সমতল ভূমিতে ৫০ শতাংশ ও উপকূলীয় এলাকায় ৭০ শতাংশ সরকারিভাবে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে।
ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না কিশোরগঞ্জের হাওরের ধানচাষিরা
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইন, নিকলী হাওর উপজেলার ধানচাষিরা এবার বোরো ধান কাটার মৌসুমে চামরাঘাট, ভৈরব, আশুগঞ্জের পাইকারি বাজারে ধানের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না।
ফলে মণ প্রতি ধানচাষিরা ১৫০-২৫০ টাকা লোকসান গুনছেন। যা তাদের আর্থিক সমস্যার মুখে ঠেলে দেবে।
ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে অবিরাম বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় হাওরের চাষীরা ইতোমধ্যে দু’বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রশাসন, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্দেশে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কায় হাওর এলাকার কৃষকেরা আধপাকা ধান কাটা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষকেরা আধপাকা ধান কাটার ফলে এগুলো পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না। এতে তারা বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাছাড়া বোরো শ্রমিক সঙ্কটে লোকসান বেড়েছে। কারণ কৃষকেরা বোরো ফসল কাটার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিক পেতে অতিরিক্ত টাকা গুনছেন।
আরও পড়ুন: তলিয়ে যাওয়া ফসল নিয়ে হাওরের কৃষকের হাহাকার
এবার ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া হাওরের কৃষকেরা হতাশায় নিমজ্জিত করছে। তারা এখন বিলাপ করছে এবং কীভাবে তারা স্থানীয় ঋণদাতাদের কাছ থেকে নেয়া তাদের ঋণ শোধ করবে তা ভেবে দিন পার করছে।
ধানের ন্যায্য মূল্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাওরাঞ্চলের বোরো চাষিরা। কৃষকেরা ব্রি ধান ২৮ বিক্রি করতে পাইকারি বাজারে যাওয়ার পর থেকে তাদের হতাশা আরও বেড়েছে।
চামরাঘাট চালের বাজার পরিদর্শন করে ইউএনবি প্রতিনিধি দেখতে পান হাওর এলাকার কৃষকেরা নদীপথে ধান নিয়ে আসছেন। রাইস মিল মালিকেরা এখান থেকে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনেন।
এ বছর ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা। কারণ হাওর এলাকায় উৎপাদিত ধান খুব কম দামে কিনছেন মিল মালিকেরা।
শ্রম খরচসহ মোটা ধানের প্রতি মণের উৎপাদন খরচ ৯০০ টাকার কাছাকাছি, যেখানে তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকায়। চিকন ধান বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকায়, যেগুলোর উৎপাদন খরচ ১০০০ টাকার কাছাকাছি।
ইটনা উপজেলার ধনপুরের কৃষক করিম মিয়া জানান, এক মণ ধান উৎপাদনে তার খরচ হয়েছে এক হাজার টাকার বেশি। কিন্তু স্থানীয় বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে কম দামে ধান বিক্রি করায়।
অষ্টগ্রাম উপজেলা থেকে ভৈরব বাজারের পাইকারি বাজারে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক আমিন মিয়া জানান, অষ্টগ্রামের অধিকাংশ কৃষকই মালিকদের কাছ থেকে ফসলি জমি ইজারা নিয়ে বোরো ধান চাষ করেছেন। তাদের অনেকেই স্থানীয় পাওনাদারদের কাছ থেকে টাকাও ধার নিয়েছেন। তাই কৃষকেরা এ বছর ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় ঋণ পরিশোধ করে জীবিকা নির্বাহ করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
তিনি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ইটনা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘হাওর এলাকার অধিকাংশ কৃষকই অতিদরিদ্র। ধারের টাকা পরিশোধ করতে বৈশাখের প্রথম দিকেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন তারা। কারণ বৈশাখ মাসে তাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে মহাজনরা। তারা কয়েকদিন পর ধান বিক্রি করতে পারলে ধানের ভালো দাম পাবে।’
আরও পড়ুন: বন্যার পানি হাওরে ঢুকে ফসলহানির আশঙ্কা সুনামগঞ্জের কৃষকদের
তলিয়ে যাওয়া ফসল নিয়ে হাওরের কৃষকের হাহাকার
সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় শুরু
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি ২৭ টাকায় ধান ক্রয় শুরু করছে সরকার।
এছাড়া সরকার ৭ মে থেকে শুরু করে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চাল সংগ্রহ করবে বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার খাদ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন খাদ্যমন্ত্রী।
এসময় মজুতদারির বিরুদ্ধে সতর্ক করে মন্ত্রী বলেন, ধানের মজুদ বন্ধ করতে মন্ত্রণালয় নজরদারি রাখবে।
আরও পড়ুন: এবার ভাঙল হালীর হাওরের বাঁধ, ঝুঁকিতে হাজার হেক্টর পাকা ধান
তিনি চাল সংগ্রহের জন্য ৭-১৬ মে’র মধ্যে খাদ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে তাদের চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য মিল মালিকদের আহ্বান জানান। কেননা ধান সংগ্রহের সময়কাল আর বাড়ানো হবে না।
২৪ ফেব্রুয়ারি সরকার ২০২২ সালের আসন্ন মৌসুমে ছয় দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন (মেট্রিক টন) বোরো ধান এবং ১১ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন নন-বয়েলড চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।
বোরো ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ২৭ টাকা, সেদ্ধ চাল ৪০ টাকা কেজি এবং আতপ চাল (নন বয়েলড) ৩৯ টাকা কেজি।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে খাদ্য পরিকল্পনা ও মনিটরিং কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
টাঙ্গাইল, নওগাঁ, দিনাজপুর, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বরিশাল, ঝিনাইদহ জেলার জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, মিল মালিক ও কৃষক প্রতিনিধিরা ভার্চুয়ালি এতে যোগ দেন।
আরও পড়ুন: সরকার ভর্তুকি মূল্যে কৃষককে সার পৌঁছে দিচ্ছে: খাদ্যমন্ত্রী
তলিয়ে যাওয়া ফসল নিয়ে হাওরের কৃষকের হাহাকার
সুনামগঞ্জের শাল্লায় সবচেয়ে বড় ছায়ার হাওরের মাউতির বাঁধ ভেঙে রবিবার সকাল থেকে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। দেখতে দেখতে হাওরের সব জমির পাকা ধান ডুবে যায়। একই সঙ্গে কেটে রাখা ধানের বোঝা ও খড়কুটোও তলিয়ে যায়। এই ঘটনায় হাজারো কৃষকের কান্নায় পুরো হাওর ভারি হয়ে উঠেছে।
এদিকে জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে যে হাওরের ৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ। কিন্তু কৃষকদের দাবি, ৬০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। এর মধ্যে অনেক কাটা ধান আবার জমিতেই রয়ে গেছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, শাল্লার মাউতির বাঁধ (৮১ নম্বর পিআইসি) ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ শুরু হতে থাকলে কৃষকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। কৃষকরা কাটা ধান, নাকি জমির পাকা ধান, না খড় তুলে আনবেন এই নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছে। কেউ কেউ আবার কাটা ধানের স্তুপের পাশে বসে কাঁদতে আছেন।
আরও পড়ুন: অসময়ের বন্যা থেকে ফসল রক্ষায় নতুন প্রকল্প আসছে: পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী
ভাঙা বাঁধের পাশে কাটা ধানের স্তুপের কাছে বসে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন আভা রানী দাস। স্বামী কানন দাসের মাথায় ধানের বোঝা তুলে দিতে দিতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বললেন, ‘তারা খালি নিজের চিন্তা করে, বাঁধে লাখ লাখ টেকা দুর্নীতি করে। আমি ২৫ কেয়ার (আট একর) ধান করছিলাম। ৫ কেয়ার (আধ একরের কম) কাটছিলাম, অখন নিতাম পাররাম না, নিতে নিতে ইগুন নষ্ট অই যাইবো।’
আভা রানীর মতো তলিয়ে যাওয়া ফসলের চিন্তায় হাওরে বসেই কাঁদছেন আফাজ মিয়া, সিরাজ উদ্দিন, মনির মিয়াসহ হাজারো কৃষক।
ফসল হারানোর সংশয় নিয়ে তারা বললেন, ‘এই বাঁধ ভাঙতে পারে না, তদারকি ও অবহেলায় বাঁধটি ভেঙে আমাদের সর্বনাশ হয়েছে।’
আরও পড়ুন: বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও হাজারো পরিবার পানিবন্দি
কৃষক জামাল মিয়া বলেন, ‘যারা বাঁধের কাজে গাফলতি করেছে তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।’
তলিয়ে যাওয়া বাঁধের কাছে দাঁড়ানো আঙ্গাউড়ার হিমেল সরকার নামে স্থানীয় একজন বলেন, রবিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মোটরসাইকেলে যাত্রী নিয়ে খালিয়াজুরীর কৃষ্ণপুরে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ বাঁধের নিচে বুরুঙ্গা দিয়ে পানি যাচ্ছে দেখে হাওরে থাকা কয়েকজন কৃষককে জানাই। তারা বাঁশ বস্তা ছাড়াই খড় দিয়ে একঘণ্টা পানি ঠেকানোর চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই বাঁধ ভেঙে যায়। পরে সকাল ৭টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসেন, কিন্তু তিনি কিছুই করতে পারেননি।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের শাল্লার সভাপতি তরুন কান্তি দাস বললেন, হাওরে ৭০ ভাগ ধানকাটা হয়েছে তবে ২০ ভাগ কাটা ধান খেতেই আছে। ৪৮ ঘণ্টায় পুরো হাওর ডুবে যাবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) বাঁধের কাজে মনোযোগী ছিল না,তাই আজ এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
একই মন্তব্য করেন শাল্লা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মাউতির বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি কৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমি ভালো করে বাঁধের কাজ করেছি। পানির চাপে বাঁধ ভেঙে গেছে। আমি শনিবার রাতেও বাঁধের ওখানে ছিলাম।’
আরও পড়ুন: আগাম প্রস্তুতির কারণে এবার হাওরে ক্ষতি কম হয়েছে: পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তালেব বলেন, পানির চাপ বেশি থাকায় বাঁধ রক্ষা করা যায়নি।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী এসএম শহীদুল ইসলাম বলেন, রবিবার সকালে দায়িত্বশীলদের বাঁধ ঠেকানোর কাজ করতে কোনো বাধা ছিল না। কেন করলেন না তারাই ভালো বলতে পারবেন।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হাওরে ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। ভেঙে যাওয়া বাঁধটি মেরামতের সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে এবং বাঁধ নির্মাণে যদি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি কোনো অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।