সরবরাহ
বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধিতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ৩০ টাকা
দেশের প্রধান উৎপাদন এলাকা পাবনা ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে ঢাকায় নতুন উৎপাদিত পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার প্রতি কেজিতে পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা কমেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার, কারওয়ান বাজার ও শ্যামবাজারের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেঁয়াজের মৌসুম শুরু হওয়ায় পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে।
ফলে পাইকারি বাজারে দাম কমেছে এবং ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি এই পেঁয়াজের দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়।
এক সপ্তাহ আগেও ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়।
আরও পড়ুন: শিগগিরই ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ ও খেজুরের দাম কমবে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী হাজী মোকাররম ইউএনবিকে বলেন, ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ আসার খবর পেয়ে কৃষকরা দ্রুত পেঁয়াজ তুলে বাজারে বিক্রি শুরু করেন। ফলে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে এবং পেঁয়াজের দামও কমেছে।
রাজধানীর শ্যামবাজারের আমদানিকারক ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নারায়ণ সাহা বলেন, ‘বর্তমানে যথাসময়ে বাজারে এসেছে মৌসুমি পেঁয়াজ। এর প্রভাব পড়েছে বাজারের দামে। কৃষকদের রক্ষায় এখন আর পেঁয়াজ আমদানির প্রয়োজন নেই।’
নারায়ণ আরও বলেন, এখন সঠিক উপায়ে পেঁয়াজ সংগ্রহ এবং ভবিষ্যতে বাজারের চাহিদার জন্য সাবধানে সংরক্ষণের উপর জোর দেওয়া দরকার।
বাজারে আসা পেঁয়াজ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে বছরের বাকি সময়ে দাম স্বাভাবিক থাকবে বলে তিনি মনে করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশসহ ৬ দেশে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি ভারতের
তিন সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা
দু-একদিনের মধ্যে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বাড়বে: নসরুল হামিদ
দু-একদিনের মধ্যে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
রবিবার (২১ জানুয়ারি) মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'আমরা আশা করছি, ঢাকায় গ্যাসের ঘাটতি কমে আসবে এবং দু-একদিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’
তিনি বলেন, দেশে ফ্লোটিং স্টোরেজ ও রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) থেকে আবারও উৎপাদন শুরু হয়েছে এবং ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: নতুন চিন্তাকে গ্রহণ করতে চাই: নসরুল হামিদ
‘এর মধ্যে একটির শিগগিরই রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে’ জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণত শীতকালে গ্যাস সরবরাহে কিছু সমস্যা হয়।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু প্রায় ৮০ শতাংশ আবাসিক গ্রাহক এখন এই তরল গ্যাস ব্যবহার করছে, তাই সরকার এলপিজি সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শুধু ঢাকা ও আশপাশের এলাকার গ্রাহকরা পাইপলাইন গ্যাস ব্যবহার করে, অবশিষ্ট গ্রাহকরা এলপিজি ব্যবহার করে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, যদি মোট গ্রাহক থেকে শিল্পভিত্তিক গ্রাহকদের বাদ দেওয়া হয়, তাহলে গৃহস্থালি গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫ লাখ।
তিনি আরও জানান, আগামী ৩ বছরের মধ্যে দেশের সব গ্রাহকের জন্য গ্যাস মিটার স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
আরও পড়ুন: ২০২৬ সালের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে: নসরুল হামিদ
শীত মৌসুমের শুরু থেকেই তীব্র গ্যাস সংকটে ভুগছে দেশবাসী। কিন্তু শুক্রবার এফএসআরইউগুলোর মধ্যে একটিতে প্রযুক্তিগত ত্রুটি দেখা দিলে পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে। তবে এফএসআরইউ মেরামত করে চালু করা হলে চট্টগ্রাম ও আশপাশের গ্যাস সরবরাহে সামান্য উন্নতি হয়।
এদিকে, ৪৫ দিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের মধ্যে থাকা আরেকটি এসএফআরইউও পুনরায় কাজ শুরু করে যার ফলে সরবরাহে আরেকটু উন্নতি হয়। কিন্তু গ্যাস সংকট পুরোপুরি সমাধান হয়নি।
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের কোনো কোনো এলাকায় প্রচণ্ড গ্যাস সংকট এবং কোনো এলাকায় গ্যাসের চাপ খুবই কম রয়েছে।
আরও পড়ুন: ১৫ জানুয়ারির মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন হতে পারে: নসরুল হামিদ
সবজির দাম কিছুটা কমলেও মাছ-মাংসের দাম বেশি
সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আলু ছাড়া শীতকালীন সবজির দাম কিছুটা কমেছে। তবে শুক্রবার রাজধানীর কাঁচাবাজারে মাংস ও মাছের দাম ছিল চড়া।
সবজির দাম কমলেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী হারুন অর রশীদ বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর সবজিসহ সব পণ্যের দাম তুলনামূলক বেশি।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ৫ টাকায় ব্যাগ ভর্তি সবজির বাজার চালু
কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারে ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, মৌসুমের এই সময়ে আলু, টমেটো ও গাজরের দাম সাধারণত প্রতি কেজি ২০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে থাকে। কিন্তু মান ভেদে এসব জিনিস বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজির মধ্যে।
এই অতিরিক্ত দাম অবসরপ্রাপ্ত এবং নির্দিষ্ট আয়ের গোষ্ঠীর জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমালে ভোক্তাদের জন্য স্বস্তি বয়ে আনছে।
তবে শুক্রবার কারওয়ান বাজারে শীতকালীন সবজির প্রায় সবগুলোই বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে সূর্যমুখী ফুলে আকৃষ্ট হচ্ছেন মানুষ
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আলু ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পেঁয়াজ ৭০ টাকা, রসুন ২২০ টাকা, আদা ২০০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে অসন্তোষ রয়ে গেছে মাছ ও মাংসের বাজারে। ব্রয়লার মুরগি ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং সোনালি মুরগি (পাকিস্তানি জাতের) ৩২০-৩৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে অনেক স্থানে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া গরুর মাংস এখন সর্বত্র ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি ডজন বাদামি ডিম (মুরগি) ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, সাদা ডিম ৫-১০ টাকা কম। হাঁসের ডিম প্রতি ডজন ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা এবং দেশি গৃহপালিত মুরগির ডিম প্রতি ডজন ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভরা মৌসুমেও শরীয়তপুরে অস্বাভাবিক সবজির দাম
কয়েক মাস আগের তুলনায় এখন মাছের দাম বেশি। তবে তেলাপিয়া, পাঙ্গাস ও কার্প জাতীয় মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি দরে। অন্যান্য মাছের মধ্যে আড়াই কেজি থেকে দুই কেজি ওজনের রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছ (চাষের) ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাবদা, টেংরা, কই, বোয়াল, চিতল ও ইলিশ মাছ কেজিতে ৬০০ টাকার নিচে নয়।
কারওয়ান বাজারে কোরাল, বোয়াল, নদীর পাঙ্গাসের মতো বড় সাইজের মাছ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১১০০ টাকায়।
দাম বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান ইউএনবিকে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধে তার অফিস থেকে অভিযান চালানো হবে।
তিনি আরও বলেন, কয়েক মাস আগে তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে দাম নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজ ও আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন।
আরও পড়ুন: তীব্র শীতে বোরো ধানের বীজতলা ও সবজির ক্ষতির আশঙ্কায় যশোরের কৃষকরা
শফিকুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন জেলার হিমাগার পরিদর্শন করে আলুর পর্যাপ্ত মজুদ পেয়েছেন, যদিও দাম বাড়তি ছিল।
পেঁয়াজ ও আলুর উচ্চমূল্য অব্যাহত থাকলে সরকার এসব পণ্য আমদানির সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাংলাদেশে ভোক্তারা কঠিন সময় পার করছেন।
খামারের ডিম, ব্রয়লার মুরগি ও চাষের মাছ দেশের লাখ লাখ দরিদ্রের জন্য প্রধান প্রোটিনের উৎস।
নাজের বলেন, এ ধরনের সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী তাদের প্রোটিন ও অন্যান্য পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভরা মৌসুমেও লালমনিরহাটে সবজির দাম আকাশচুম্বী
ব্যাংকে ডলারের সরবরাহ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি: বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংকগুলোতে মার্কিন ডলারের সরবরাহ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি, তাই বিনিময় হার কমানো যৌক্তিক বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি)।
বৃহস্পতিবার(২৩ নভেম্বর) রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিবির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
তিনি বলেন, গত বছর স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক ঋণের দায় ছিল ১৬ বিলিয়ন ডলার, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে।
এছাড়া চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত রয়েছে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখন তাৎক্ষণিক ডলার পেমেন্ট দিয়ে এলসি খোলা হয়। এছাড়া ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহ এখন চাহিদার চেয়ে বেশি। ফলে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেডা) সিদ্ধান্ত সঠিক বলেও জানান ওই মুখপাত্র।আরও পড়ুন: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে
তিনি বলেন, চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে মার্কিন ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয়। ডলার পরিষেবা এবং পণ্য ক্রয় এবং পরিষেবা ঋণ এবং বৈদেশিক দায় পরিশোধ করতে ব্যবহৃত হয়।
এখন আমদানি মূল্য মনিটরিং করা হচ্ছে। ফলে ডলারের চাহিদা কমে গেছে বলে জানান তিনি।
গত বুধবার এক বছরের ও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো ব্যাংকগুলো মার্কিন ডলারের বিনিময় হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে ডলারের দাম ০.৫০ (পঞ্চাশ পয়সা) টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে।
আরও পড়ুন: মেহেরপুর সীমান্তে ৩৩,২০০ মার্কিন ডলার উদ্ধার করেছে বিজিবি
এছাড়া আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির জন্য ডলারের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ৫০ (পঞ্চাশ পয়সা) টাকা।
বুধবার সন্ধ্যায় বাফেডা ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এক বৈঠকে ডলারের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রবাসী কিনতে ডলারের দাম হবে ১১০ টাকা এবং রপ্তানি আয় হবে ১১০ টাকা, যা আগে ছিল ১১০ টাকা ৫০ পয়সা।
আমদানি দায় মেটাতে ডলারের দাম নেওয়া যাবে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা, যা আগে ছিল ১১১ টাকা।
তবে প্রবাসী আয়ের ওপর সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও একই পরিমাণ প্রণোদনা দিতে পারে। এর ফলে সুবিধাভোগীরা অভ্যন্তরীণ প্রবাসী আয়ের জন্য ডলার প্রতি সর্বোচ্চ ১১৫ টাকা ৫০ পয়সা পাবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন বিবৃতি সত্ত্বেও ব্যাংকগুলো এখনো ডলার প্রতি ১২১ টাকা বা তার বেশি হারে প্রবাসী আয় কিনছে।
আরও পড়ুন: খোলা বাজারে ১৫ টাকা বেশি দামে ডলার বিক্রি
মিশরকে গাজায় সীমিত মানবিক সহায়তা সরবরাহের অনুমতি ইসরায়েলের
বুধবার ইসরায়েল বলেছে, তারা মিশরকে গাজা উপত্যকায় সীমিত মানবিক সহায়তা সরবরাহের অনুমতি দেবে। গাজার একটি হাসপাতালে বিস্ফোরণে শত শত মানুষ নিহত এবং গাজার সংগ্রাম করা চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টির একদিন পর ওই অঞ্চলে ১০ দিনের অবরোধের প্রথম ফাটল দেখা দেয়।
গাজা শহরের আল-আহলি হাসপাতালে বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই অঞ্চলে বৃহত্তর সংঘাত রোধের আশায় ইসরায়েল সফর করার সময় পানি, খাদ্য এবং অন্যান্য সরবরাহের অনুমতি দেওয়ার ঘোষণাটি ঘটে।
মঙ্গলবার রাতে বিস্ফোরণের পেছনে কারা ছিল তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী দাবি করা হলেও অনেক আরব নেতা ইসরায়েলকে দায়ী বলে মন্তব্য করায় বিক্ষোভ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। গাজায় হামাসের কর্মকর্তারা ইসরায়েলি বিমান হামলাকে দায়ী করে বলেছেন, এতে শত শত মানুষ নিহত হয়েছে। ইসরায়েল তাদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে এবং ভিডিও, অডিও ও অন্যান্য তথ্য প্রকাশ করেছে যা দেখায়- গাজায় সক্রিয় আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের রকেট মিসফায়ারের কারণে বিস্ফোরণটি হয়েছিল। ইসলামিক জিহাদ এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) স্বাধীনভাবে কোনও দাবি বা প্রমাণ যাচাই করেনি।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাস গাজায় হামলা চালানোর পর পরই ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। সরবরাহ শেষ হয়ে যাওয়ায় গাজার অনেক পরিবার দিনে এক বেলা খাবার কমিয়ে দিয়েছে এবং নোংরা পানি পান করতে বাধ্য হয়েছে।
বাইডেন বলেন, মিশরের প্রেসিডেন্ট ক্রসিংটি খুলে দিতে এবং মানবিক সহায়তাসহ ২০টি ট্রাকের একটি প্রাথমিক দলকে প্রবেশের অনুমতি দিতে সম্মত হয়েছেন। তিনি বলেন, হামাস যদি সহায়তা বাজেয়াপ্ত করে, তাহলে তা ‘শেষ হয়ে যাবে’। হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার থেকে এই সহায়তা কার্যক্রম শুরু হবে।
উত্তর সিনাইয়ের রেড ক্রিসেন্টের প্রধান খালিদ জায়েদ জানান, ইসরায়েলি বিমান হামলায় বিধ্বস্ত হওয়া সীমান্তের ওপারের রাস্তাটি মিশরকে অবশ্যই মেরামত করতে হবে। ২০০টিরও বেশি ট্রাক এবং প্রায় ৩ হাজার টন পরিমাণ সহায়তা রাফাহ ক্রসিংয়ে বা তার কাছাকাছি অবস্থান করছে। স্থানটি মিশরের সঙ্গে গাজার একমাত্র সংযোগ।
আরও পড়ুন: অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তার আহ্বান জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞের
মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শৌকরি আল-আরাবিয়া টিভিকে বলেছেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহায়তা সরবরাহ করা হবে। বিদেশি ও দ্বৈত নাগরিকদের দেশ ছাড়তে দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত ক্রসিংটি স্বাভাবিকভাবে চলছে এবং (ক্রসিং) সুবিধাটি মেরামত করা হয়েছে।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, বাইডেনের অনুরোধে এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ইসরায়েল মিশর থেকে খাদ্য, পানি বা ওষুধ সরবরাহ ‘বাধা দেবে না’, যতক্ষণ না তারা গাজা উপত্যকার দক্ষিণে বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এবং হামাসের কাছে না যায়। বিবৃতিতে জ্বালানির কোনো উল্লেখ করা হয়নি, যা হাসপাতালের জেনারেটরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
আরও পড়ুন: গাজার দক্ষিণাঞ্চলে শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৪০ ফিলিস্তিনি
সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে দ্রব্যমূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে: বাণিজ্যমন্ত্রী
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভবিষ্যতে বাজারে যাতে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সে জন্য তৎপরতা চলছে।’
তিনি বলেন, বাজারে অস্থিতিশীলতা রোধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত মনিটরিং করছে।
তিনি আরও বলেন, বাজারে পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ বজায় রাখতে আমদানি বাধা অপসারণ, শুল্ক হ্রাস, গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিককরণ, বন্দরে দ্রুত ছাড়পত্র নিশ্চিতকরণ, এলসি খোলার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পণ্য আমদানি তদারকিসহ সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, চিনি ও ভোজ্যতেলের ওপর আরোপিত শুল্কহার আরও যৌক্তিক করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সংসদে ওষুধ ও কসমেটিকস বিল-২০২৩ কণ্ঠভোটে পাস
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনে সড়কে যাতে কোনো ধরনের বাধা না পড়ে সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পোল্ট্রি মার্কেটে অনিয়ম বা একচেটিয়া আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে অনুরোধ করা হয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ভোজ্যতেল ও চিনির স্থানীয় বাজার মূল্য আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সময়ে সময়ে সমন্বয় করা হয়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, ডলারের দর বৃদ্ধি এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি করা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘যার প্রভাব মশলাদার পণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে পরিলক্ষিত হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ভারত, চীন ও পাকিস্তানসহ আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে মোট বাণিজ্য ঘাটতি ২৩ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারতের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানের সঙ্গে ৪৬৬ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলার, ভুটানের সঙ্গে ১৪ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ডলার এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে ১ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে।
অন্যদিকে নেপাল, শ্রীলঙ্গা ও মালদ্বীপের সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন: ভূমি উন্নয়ন কর বিল ২০২৩ সংসদে পাস
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ১৫ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের কারণে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ১১ লাখ ২৫ হাজার প্রবাসী কর্মী বিদেশে নিযুক্ত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, জনশক্তি রপ্তানির জন্য ১৮টি দেশ ও হংকংয়ের সঙ্গে চুক্তি/সমঝোতা স্মারক রয়েছে।
কুয়েত, কাতার, ওমান, লিবিয়া, মালদ্বীপ, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, জর্ডান, বাহরাইন, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ব্রুনাই, সিঙ্গাপুর, মরিশাস, কম্বোডিয়া, গ্রিস ও জাপান।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে মাল্টা, আলবেনিয়া, রোমানিয়াসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে চুক্তি/সমঝোতা স্মারক সইয়ের পরিকল্পনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: কৃষি জমির স্বার্থে বালু উত্তোলন বন্ধে পদক্ষেপ নিতে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ
নিত্যপণ্য সরবরাহ প্রক্রিয়া দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান বাণিজ্যমন্ত্রীর
ভারত থেকে বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত প্রক্রিয়া দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
শুক্রবার (২৫ আগস্ট) ভারতের জয়পুরে অনুষ্ঠিত জি-২০ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মন্ত্রীদের সভার আগে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে সাইডলাইনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ আহ্বান জানান তিনি।
ভারত থেকে বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের প্রক্রিয়া প্রণয়নের অগ্রগতির জন্য টিপু মুনশি ভারতীয় বাণিজ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রস্তাবিত ব্যবস্থার দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য তার ক্রমাগত সমর্থন কামনা করেন।
এ সময় টিপু মুনশি সম্প্রতি পেঁয়াজের ওপর ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দামের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: বাণিজ্য সম্পর্কিত গবেষণা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার আহ্বান বাণিজ্যমন্ত্রীর
এ প্রসঙ্গে পীযূষ গোয়েল জানান, বিশ্বব্যাপী উৎপাদনে ব্যাঘাত, সরবরাহের ঘাটতি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট অসুবিধাগুলো কাটিয়ে উঠতে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রতিকূল আবহাওয়া এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে ভারতও কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন ঘাটতিতে ভুগছে। এ কারণে ভারত সরকারকে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
তিনি বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করে বলেন, খুব শিগগিরই এ সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।
বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের উপর থেকে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য ভারত সরকারের প্রতি অনুরোধ করলে পীযূষ গোয়েল এ বিষয়ে সর্বোচ্চ বিবেচনার আশ্বাস দেন।
এ ছাড়া, অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী দুই মাসের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে উপস্থাপন এবং এগুলো নিষ্পত্তি করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী জি-২০ মন্ত্রী পর্যায়ের ঘোষণা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মূল্যবান অবদানের প্রশংসা করে বলেন, ভারত সবসময় বাংলাদেশের সঙ্গে বিশেষ বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্বকে মূল্যায়ন করে থাকে।
পরে টিপু মুনশি সৌদি আরবের বাণিজ্যমন্ত্রী এমই মাজিদ আল কাসাবির সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করেন।
এর আগে ২৪-২৫ আগস্ট জয়পুরে অনুষ্ঠিত জি-২০ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মন্ত্রীদের সভায় যোগদান দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
সভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশসহ গ্র্যাজুয়েশন ট্র্যাকে থাকা দেশগুলোকে ২০২৬ সালের পর এলডিসি দেশসমূহের জন্য প্রযোজ্য শুল্কমুক্ত কোটা মুক্ত বাজার সুবিধা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে সমর্থন প্রদানের জন্য জি-২০ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।
আগামী ১৩তম ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন (ডব্লিউটিও) মিনিস্টারিয়াল কনফারেন্সে (এমসি১৩) এলডিসি থেকে উত্তরণপ্রাপ্ত দেশগুলোর পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তিনি জি-২০ দেশের মন্ত্রীদের অনুরোধ করেন।
উল্লেখ্য, শুক্রবার সন্ধ্যায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি দিল্লিতে অনুষ্ঠিতব্য বিজনেস-২০ (বি-২০) সামিটে বক্তব্য রাখবেন।
আরও পড়ুন: বাঙালির মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপোষহীন: বাণিজ্যমন্ত্রী
ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতে আইনের সঙ্গে সচেতনতা জরুরি: বাণিজ্যমন্ত্রী
চাঁদপুরে সরবরাহ বাড়লেও ইলিশ এখনও সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে
গত কয়েকদিন (৫/৬) চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছ ঘাটে ইলিশের সরবরাহ অনেক বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার মণ ইলিশ দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলো থেকে এ ঘাটে মাছটি আসছে।
ট্রলার, ট্রাক ও পিকআপে এসব মাছ এখানে আসতে থাকে সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত।
সরবরাহ বেশি হওয়ায় মাছ ঘাট আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে। ঘাটের প্রায় ৪ থেকে ৫ শত দিনমজুর ব্যস্ত সময় পার করছে। এমনটাই জানিয়েছেন নুর ইসলাম, হান্নান, আনিসসহ আরও কয়েকজন। পাশাপাশি বরফ কলগুলোও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ মাছই ৭০০, ৮০০ ও ৯০০ গ্রাম ওজনের।
এখান থেকে মাছগুলো প্যাকেট হয়ে আবার বিভিন্ন স্থানে- ঢাকার কাওরানবাজার, আজমপুর, আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা; গাজীপুরের টঙ্গী; টাঙ্গাইল; কিশোরগঞ্জ; জামালপুর; ময়মনসিংহ; শ্রীমঙ্গল; সিলেটের বাজারগুলোতে সরবরাহ করা হয়ে থাকে ট্রাকে। এখন আর রেলে এসব মাছ পাঠানো হয় না।
প্রতি কেজি ইলিশ ১৫০০ পাইকারি দামে বিক্রি হচ্ছে। এ মাছ আবার শহরের বাজারে খুচরা ১ হাজারর ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ওদিকে পদ্মার ইলিশ এখনো কম ধরা পড়ছে। ভরা মৌসুমেও প্রতিদিন প্রায় ৪০ মণও পাওয়া যায় না বলে উল্লেখ করেন জেলে ও বিক্রেতারা।
আরও পড়ুন: ইলিশ ধরার ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে রবিবার মধ্যরাতে
ডিমের দাম বৃদ্ধির পেছনে বাজার অব্যবস্থাপনা
গত এক দশকে ডিমের উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি বাড়লেও বাজার তদারকি এবং সরবরাহের চ্যালেঞ্জের কারণে ডিমের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে গ্রাহকেরা প্রতি ডজন ডিমের জন্য প্রায় এক কেজি ব্রয়লার মুরগি কেনার সমান টাকা খরচ করছে।
এক ডজন ফার্মের মুরগির ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। দেশি মুরগির ডিম কোথাও কোথাও প্রতি ডজন ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতি ডজন লাল ডিম বা ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকায়; সাদা ডিম ১৫০-১৬০; দেশি ডিম ২২০-২৩০ টাকা এবং হাঁসের ডিম ২০০-২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া মহল্লার দোকানগুলোয় প্রতি পিস ডিম ১৫ থেকে ১৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বারিধারা নতুনবাজার মালিক সমিতির সভাপতি আলম ইউএনবিকে বলেন, আমি মনে করি বাজার অব্যবস্থাপনার কারণেই ডিমের দাম বার বার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরিতে সরবরাহের অব্যবস্থাপনা ও বাজারে তদারকির অভাব রয়েছে। সময়ে সময়ে কোনো একটি পণ্যের দাম হুট করে বাড়লে তার কারণ চিহ্নিত করতে হবে।
আরও পড়ুন: প্রয়োজনে ডিম আমদানি করা হবে: মন্ত্রী
তিনি বলেন, লোক দেখানো বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা বাদ দিয়ে বাজারে হুট করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে দেওয়া বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। না হলে ডিমের দাম যে হারে বাড়ছে তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
গুলশান কাঁচা বাজারে ডিম ক্রেতা নাদিম ইউএনবিকে বলেন, বাজার মনিটরিং ব্যবস্পনায় দুর্বলতা রয়েছে, ফলে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামত হুট করে দাম বাড়াচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। একটি ডিমের উৎপাদন খরচ কত আর ব্যবসা করবে কতটা টাকা, এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তদারকি না থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
ডিম ও মুরগি উৎপাদনকারী প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার ইউএনবিকে বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনায় অবশ্যই সমন্বয় থাকতে হবে। তদারকি জোরদার করতে হবে। উৎপাদন খরচের সঙ্গে ডিম-মুরগির দাম যৌক্তিক হারে সমন্বয় হতে হবে। তাহলে খামারিরা উৎপাদন বন্ধ করবেন না। তাতে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে।
তিনি আরও বলেন, কোনো চক্র যাতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে না পারে, তা দেখার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। তা না হলে ডিম দাম নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, এক সপ্তাহ আগেও বাজারে ফার্মের ডিমের দাম ছিল প্রতি ডজন ১৪০-১৫০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ ডিম উৎপাদক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি ডিমের প্রয়োজন হয়। আর ডিমের একটি বড় অংশ আসে সারা দেশের খামারগুলো থেকে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশে গত ১০ অর্থবছরে ডিমের উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ১৭ কোটি, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৩৩৮ কোটি।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিমের হালি ছিল ৩৪ টাকা। বর্তমানে বাজারের ফার্মের মুরগির ডিমের হালি ৫৫-৬০ টাকা।
এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ইউএনবিকে বলেন, ‘আমাদের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সার্ভে অনুযায়ী, একটি ডিম উৎপাদনে সাড়ে ১০ টাকার ওপর খরচ পড়ে। তারপর অন্যান্য ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে কিছু লাভের বিষয় থাকে। আমার কাছে মনে হয়েছে, একটি ডিমের দাম ১২ টাকার বেশি নির্ধারিত হওয়া উচিত না। এই ১২ টাকা নির্ধারিত হলে যারা উৎপাদনকারী তাদেরও লাভ হবে। এর বাইরে কেউ অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি করলে ভোক্তা অধিকার আইনের আওতায় যারা কর্তৃপক্ষ, তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উৎপাদনকারীদের বিভিন্নভাবে অনুরোধ করেছি, বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এরপরেও যদি কেউ জনদুর্ভোগ ডেকে আনে, তা দেখভাল করার জন্য ভোক্তা অধিকার আইন আছে। ভোক্তাদের অধিকার দেখার জন্য কর্তৃপক্ষ আছে। তারা প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেবেন।’
আরও পড়ুন: ডিম এখন আর সাশ্রয়ী প্রোটিনের উৎস নয়
মন্ত্রণালয় দাম নির্ধারণ করে দেবে কিনা- এ বিষয়ে রেজাউল করিম বলেন, এটা দাম নির্ধারণ করার বিষয় না। এরআগে ২০১০ সালে ছোট বাচ্চা মুরগি ও অন্যান্য বিষয়ের দাম নির্ধারণের বিষয় উঠেছিল। সেক্ষেত্রে আদালত প্রশ্ন তুলেছিলেন, মন্ত্রণালয় এভাবে দাম নির্ধারণ করে দিতে পারে না।
রবিবার (১৪ আগস্ট) সকালে এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চাইলেই ডিম আমদানি করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ইমপোর্ট পারমিশন লাগবে। তাদের সহযোগিতা ছাড়া ডিম আমদানির সুযোগ নেই। আমি আশা করবো শিগগিরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গ্রিন সিগন্যাল দিলেই ডিম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
বাণিজ্যমন্ত্রীর এ বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, ‘ডিম আমদানি করা না করার বিষয়টি আমরা অন্যভাবে বিবেচনা করবো। এই বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইন্ডিপেন্ডেন্টলি বিবেচনা করবে কি করবে না এটা তাদের বিষয়। আমার কাছে মনে হয়েছে দেশে যে উৎপাদন আছে, আমরা যদি বাজার ব্যবস্থা বিন্যাস করতে পারি তবে আমদানির কোনো প্রয়োজন হবে না।’
বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাজারে ডিমের দাম কত হবে তা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করে দিলে আমাদের জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ডিমের বাজার হঠাৎ অস্থিতিশীল হওয়ায় ভোক্তা অধিকার রাতে-দিনে রাজধানীর বিভিন্ন আড়তে অভিযান চালাচ্ছে এবং জরিমানা করছে।’
আরও পড়ুন: ডিমের ডজনে বাড়ল ৩০-৩৫ টাকা
বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান: দেশব্যাপী ১৫০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের ব্যবধান বাড়ছে। ফলে সোমবার সারাদেশে এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) অফিসিয়াল তথ্যানুসারে, রবিবার দেশে ১৬ হাজার মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে প্রকৃত বিদ্যুত ঘাটতি ছিল প্রায় এক হাজার ৪০১ মেগাওয়াট।
এদিন সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে মোট বিদ্যুত উৎপাদন ছিল ১৪ হাজার ৫৯৯ মেগাওয়াট।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে লোডশেডিং: সরকারের পক্ষে অবস্থান পাক জ্বালানি মন্ত্রীর
বিপিডিবি আরও জানায়, দেশে ১৬ হাজার মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে ১৫ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়া লোডশেডিংয়ের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে সন্ধ্যঅ ৭টা থেকে রাত ১১টায় মোট ৮৪০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হবে।
তবে বিপিডিবির অধিকাংশ শীর্ষ কর্মকর্তা মনে করেন, বিভিন্ন কারণে আজকের পূর্বাভাস অনুযায়ী অপারেটিং প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে না।
তারা বলেন, উচ্চ তাপমাত্রার কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্র বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
এছাড়া বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কিছু প্ল্যান্টের মেশিন উচ্চ তাপমাত্রা এবং ট্রিপ সহ্য করতে পারে না।
বিপিডিবি পরিসংখ্যানে জানা যায়, দেশে মোট এক হাজার ২৯১ মেগাওয়াট লোডশেডিং হবে, যার মধ্যে খুলনা অঞ্চলে ৩৫০ মেগাওয়াট সর্বোচ্চ লোডশেডিং হবে। তারপরে ময়মনসিংহে ২৪৯ মেগাওয়াট, কুমিল্লা ২৪০ মেগাওয়াট, রাজশাহী ২১০ মেগাওয়াট, রংপুরে ১৩২ মেগাওয়াট, সিলেটে ১০০ মেগাওয়াট এবং ঢাকায় লোডশেডিং হবে। তবে চট্টগ্রাম ও বরিশালে কোনো লোডশেডিং থাকবে না।
এতে আরও জানা যায়, বিআইএফপিসিএলের কয়লাচালিত রামপাল মৈত্রী সুপার থার্মাল প্ল্যান্ট দুইদিন আগে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে আর চালু করা যায়নি। ফলে প্ল্যান্ট থেকে ৬১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে না জাতীয় গ্রিড।
অন্যদিকে বিপিডিবির আরেক কর্মকর্তা জানান, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রিডের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে, যার ফলে বিদ্যুত ঘাটতি বাড়ছে।
আরও পড়ুন: ফেনীতে লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ
খুলনায় তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন