জাতিসংঘ
যুদ্ধ বন্ধ করুন, খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করুন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে: বিশ্বনেতাদের প্রতি অধ্যাপক ইউনূস
বিশ্বনেতাদের প্রতি যুদ্ধ বন্ধ করে ক্ষুধা দূর করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, প্রতি বছর বিশ্বে সামরিক ব্যয়ে ব্যয় হয় ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার, অথচ ক্ষুধা দূর করতে কয়েক বিলিয়ন ডলারও জোগাড় করা যায় না। পাশাপাশি বিদ্যমান কাঠামোর রূপান্তর ঘটিয়ে বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ছয় দফা প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আয়োজিত ২০২৫ সালের ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামে (ডব্লিউএফএফ) মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ক্ষুধা দূর করতে আমরা কয়েক বিলিয়ন ডলারও তুলতে পারি না, অথচ অস্ত্র কেনায় সারা বিশ্বে ব্যয় হয়েছে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। এটাকেই কি আমরা উন্নয়ন বলব?’
তিনি বলেন, ‘ক্ষুধা ও সংঘাতের দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে। আমাদের অবশ্যই যুদ্ধ থামাতে হবে, সংলাপ শুরু করতে হবে এবং সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
ছয় দফা প্রস্তাব তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করুন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে টিকে থাকার সক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করুন।’
এ সময় খাদ্য সরবরাহের শৃঙ্খল (সাপ্লাই চেইন) স্থিতিশীল রাখতে আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি। এছাড়া অর্থায়ন, অবকাঠামো ও বৈশ্বিক অংশীদারত্বের মাধ্যমে স্থানীয় উদ্যোক্তা, বিশেষত তরুণ উদ্যোক্তা গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বাণিজ্যনীতি যেন খাদ্য নিরাপত্তাকে ব্যাহত না করে, বরং সহায়তা করে।’
তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সুযোগ নিশ্চিত করুন, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের, গ্রামের তরুণ-তরুণীদের জন্য।’
৫২ দিন আগে
অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ সাধারণ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ নির্বাচন আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সময় সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত বিশেষ দূত সার্জিও গোরের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
সার্জিও গোর প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের এ প্রচেষ্টায় সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলে আশ্বাস দেন।
বৈঠকে উভয় পক্ষ বাণিজ্য, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা, সার্কের পুনরুজ্জীবন, রোহিঙ্গা সংকট এবং ঢাকাকে লক্ষ্য করে বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিস্তার-সহ বিস্তৃত দ্বিপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
কক্সবাজারের ক্যাম্পে বসবাসরত দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহায়তা কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা। এর জবাবে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, রোহিঙ্গাদের জন্য তাদের জীবনরক্ষাকারী সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
ড. ইউনূস বলেন, সার্ক পুনরুজ্জীবনে তৎপরতা জোরদার করেছে অন্তর্বর্তী সরকার, যা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করতে পারেনি।
আরও পড়ুন: নিউইয়র্কে রোহিঙ্গা সম্মেলনের লক্ষ্য রাজনৈতিক সমাধান: মৌনির সাতৌরি
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ আসিয়ানে যোগদানে আগ্রহী। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্ত হলে বাংলাদেশের উন্নয়ন আরও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টা।
এ ছাড়া নেপাল, ভুটান ও ভারতের সাত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে পারলে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও দ্রুত হবে।
বৈঠক শেষে সার্জিও গোরকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান তিনি।
এর আগে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে সোমবার দুপুরে (নিউইয়র্ক সময়) এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা। বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক মো. আরিফুল ইসলাম.
সফর সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা ঢাকা থেকে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যোগ দেন। এ ছাড়া জামায়াত নেতা নকিবুর রহমান তারেক যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধি দলে যুক্ত হন।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হচ্ছেন ৪ রাজনীতিবিদ
এ ছাড়া প্রতিনিধি দলে রয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, জ্বালানি উপদেষ্টা এম ফাওজুল কবির খান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকি, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, প্রধান উপদেষ্টার প্রধান সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম ও প্রেসসচিব শফিকুল আলম।
৭৩ দিন আগে
জামায়াত আমিরের সঙ্গে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টার সাক্ষাৎ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় রাজধানীর বসুন্ধরায় জামায়াত আমিরের কার্যালয়ে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয় বলে দলটির এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
এসময় হুমা খানের সঙ্গে ছিলেন জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির মানবাধিকার বিষয়ক জুনিয়র উপদেষ্টা ব্যারিস্টার তাজরিয়ান আকরাম খান।
সাক্ষাতের শুরুতেই হুমা খান জামায়াত আমিরের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন ও তার পূর্ণাঙ্গ সুস্থতা কামনা করেন। পরবর্তীতে আন্তরিক পরিবেশে উভয়পক্ষ পারস্পরিক মতবিনিময় করেন।
চলতি বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার আয়োজিত ‘জুলাই স্মরণ সভায়’ জামায়াত আমিরের দেওয়া বক্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মিস হুমা খান।
পড়ুন: জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ইইউ রাষ্ট্রদূত মিলার
আলোচনায় তারা বাংলাদেশে বিদ্যমান মানবাধিকার পরিস্থিতি, গুম-খুনের বিচারসহ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে খোলামেলা মতবিনিময় করেন। হুমা খান জামায়াতের প্রস্তাবিত সংস্কার কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে জামায়াত আমির তাকে বিস্তারিত অবহিত করেন।
উল্লেখ্য, এসময় ডা. শফিকুর রহমান জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলকে নিজের দলের উদ্যোগে ‘জুলাই শহীদদের’ স্মরণে প্রকাশিত ইংরেজি সংস্করণের ১২ খণ্ডের বই উপহার দেন।
দলটির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এবং ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমান প্রমুখ।
৮৭ দিন আগে
লেবাননে শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিল জাতিসংঘ
আগামী বছরের শেষ নাগাদ লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ। বাহিনীটি মোতায়নের প্রায় পাঁচ দশক পর যুক্তরাষ্ট্র ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের চাপে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতভাবে এ প্রস্তাব গৃহীত হয়।
সিএনএন জানিয়েছে, প্রথমে ছয় মাসের মধ্যে লেবানন থেকে শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রত্যাহারের দাবি জানায় যুক্তরাষ্ট্র। পরে এক বছরের চূড়ান্ত সময়সীমার প্রস্তাব দেয় ওয়াশিংটন। সবশেষ ১৬ মাস মেয়াদি একটি চূড়ান্ত প্রস্তাবে সম্মতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর আওতায় লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে ২০২৬ সালের শেষ পর্যন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাবে শান্তিরক্ষী বাহিনী।
১৯৭৮ সালে দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের হামলার পর সেখানে জাতিসংঘ অন্তর্বর্তীকালীন বাহিনী (ইউএনআইএফআইএল) মোতায়ন করে। এরপর ২০০৬ সালের ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের এই বাহিনীর মেয়াদ আরও বাড়ানো হয়। ফলে দশক ধরে ইউএনআইএফআইএল দক্ষিণ লেবাননের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে চলেছে।
আরও পড়ুন: জোরপূর্বক ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ যুদ্ধাপরাধের শামিল: জাতিসংঘ
গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে এক বছরের মধ্যে ইউএনআইএফআইএল তাদের ১০ হাজার ৮০০ সামরিক ও বেসামরিক সদস্য এবং সব জাতিসংঘ সরঞ্জাম প্রত্যাহার করবে। এ সময়ে সীমিত কিছু কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি থাকবে বাহিনীটির।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণ লেবাননের জাতিসংঘ-চিহ্নিত সীমান্তরেখা ‘ব্লু লাইন’-এর উত্তরে নিরাপত্তা প্রদানের একমাত্র দায়িত্ব পালন করবে লেবানন সরকার। পাশাপাশি ইসরায়েলকে ওই রেখার উত্তরের এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত বছর ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের সময় এ বাহিনী উভয়পক্ষের সমালোচনার মুখে পড়ে। মার্কিন কংগ্রেসের অনেক সদস্যও ইউএনআইএফআইএলের তীব্র সমালোচনা করেন সে সময়।
ওয়াশিংটনের দাবি, এ বাহিনী কেবল অর্থের অপচয় করছে এবং হিজবুল্লাহর প্রভাব নির্মূল ও লেবাননের সেনাবাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে দীর্ঘায়িত করছে। এরই মধ্যে ইউএনআইএফআইএলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে বড় ধরনের কাটছাঁট করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
তবে লেবাননের সেনাবাহিনী এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেনি বলে দাবি করেছে দেশটির সরকার।
গৃহীত ওই প্রস্তাবে লেবাননের সশস্ত্র বাহিনীকে সরঞ্জাম, উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা জোরদার করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
এদিকে, ইউরোপের অনেক দেশ, বিশেষত ফ্রান্স ও ইতালি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। তাদের ভাষ্যে, লেবানিজ সেনাবাহিনী সীমান্ত এলাকায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আগে শান্তিরক্ষী বাহিনী চলে গেলে সেখানে এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হবে। এই সুযোগ হিজবুল্লাহ সহজেই কাজে লাগাতে পারবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশগুলো।
৯৮ দিন আগে
মিয়ানমারের বন্দিশিবিরগুলোতে নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ
জাতিসংঘ সমর্থিত একটি স্বাধীন তদন্ত দল মিয়ানমারের বিভিন্ন বন্দিশিবিরগুলোতে গত এক বছরে সুনিয়ন্ত্রিত নির্যাতন ও যৌন সহিংসতার ব্যাপক প্রমাণ পেয়েছে। নির্যাতনের ধরনগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক শক, গলাকাটা, গণধর্ষণ ও যৌনাঙ্গ দাহসহ নানা অবর্ণনীয় বর্বরতা।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) আন্তর্জাতিক এই স্বাধীন তদন্ত দলটির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানান দলের প্রধান নিকোলাস কোউমজিয়ান। প্রতিবেদনে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মিয়ানমার ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকার থেকে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গৃহযুদ্ধের কবলে পড়েছে। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ওপর নির্মম নিগ্রহের পর সামরিক শাসনের বিরোধীরা অস্ত্র হাতে নিয়েছেন এবং বর্তমানে দেশটির বৃহৎ অংশে সংঘাত অব্যাহত রয়েছে।
তদন্ত দল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের শনাক্তকরণে বেশ অগ্রগতি করেছে। এসব নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বন্দি ক্যাম্পগুলো অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার যোদ্ধা ও নিরীহ বেসামরিকদের নির্বিচারে হত্যা করেছে। এসব হত্যাকাণ্ডে সামরিক বাহিনী, যুক্ত সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং বিরোধী সংগঠনের সদস্যরা জড়িত।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের আটক কেন্দ্রগুলোতে লাঠি দিয়ে মারধর, চালানো, বৈদ্যুতিক শক দেওয়া, গলাকাটা, গণধর্ষণ, যৌনাঙ্গ দাহসহ অন্যান্য যৌন সহিংসতার ঘটনা নিয়মিত ঘটছে।
নিকোলাস কোউমজিয়ান বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে মিয়ানমারে বর্বরতার মাত্রা ও ঘনত্ব বাড়ছে। আমরা প্রত্যাশা করি শীঘ্রই এই অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। আমরা চোখ দেখা ও অন্যান্য প্রমাণ সংগ্রহ করেছি, যা মিয়ানমারের বন্দি ক্যাম্পগুলোতে নির্যাতনের প্রমাণে যথেষ্ট।’
পড়ুন: তহবিল সংকটে বর্ষায় স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রোহিঙ্গারা: জাতিসংঘ
তদন্ত দল দেশটির রাখাইন রাজ্যের সংঘর্ষ ও নির্যাতনের বিষয়ে নতুন অনুসন্ধান শুরু করেছে, যেখানে বর্তমানে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও বিরোধী আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াই চলছে।
২০১৭ সালে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। গত বছর রাখাইনের সংঘর্ষ বৃদ্ধির কারণে আরও প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
২০১৮ সালে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের অধীনে প্রতিষ্ঠিত ‘মিয়ানমার স্বাধীন অনুসন্ধান যন্ত্র’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে আসছে। এই দল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত মামলার প্রমাণাদি সরবরাহ করেছে।
১১৪ দিন আগে
তহবিল সংকটে বর্ষায় স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রোহিঙ্গারা: জাতিসংঘ
প্রবল বর্ষায় স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছেন বাংলাদেশের কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরে আশ্রিত লাখ লাখ রোহিঙ্গারা। তহবিল সংকটের কারণে এই ঝুঁকি আরও বেড়েছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
বাংলাদেশে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থী শিবিরে জীবন সবসময়ই কঠিন। তবে, বর্ষাকালে এই দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। বর্ষার মৌসুমে নানা ধরনের দুর্ভোগের মধ্যে যেতে হয় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে। ভূমিধস, জলাবদ্ধতা, পয়ঃনিষ্কাশন ও পানি সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ নানা দুর্ভোগ যেন এখানকার নিত্যদিনের ঘটনা।
ইউএনএইচসিআরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের দিয়ে রাস্তা-পাহাড়ি ঢাল মেরামত ও অন্যান্য জরুরি কাজ করিয়ে বিনিময়ে তাদের কিছু পারিশ্রমিক দেওয়া হতো। এতে তাদের সংসার চালাতে কিছুটা হলেও সহায়তা হতো। কেউ কেউ বলছেন, আগে এই আয় দিয়ে পরিবারে বাড়তি খাবার আনা যেত। কিন্তু এখন সেটি আর সম্ভব হচ্ছে না। বৈশ্বিক তহবিল সংকটের কারণে এই কার্যক্রম বন্ধের পথে রয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, আগে এমন প্রকল্পে যেখানে ৩০ থেকে ৪০ জন রোহিঙ্গা কাজ করতেন, এখন সেখানে ৭-৮ জনকেও সুযোগ দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে শিবিরের রাস্তাঘাট, সেতু, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও টয়লেট মেরামত কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বর্ষাকালে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
ইউএনএইচসিআরের ওই প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী মানবিক সহায়তায় অর্থ বরাদ্দ কমানোর ফলে শরণার্থী জনগোষ্ঠীগুলোর এর ওপর সরাসরি প্রভাবের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল রোহিঙ্গাদের খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ও আশ্রয়ের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণে সহায়তা আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
জীবনের অন্যতম ভরসা
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা জাহিদ আলম নামের ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি বলেন, আমরা মাসে যে পরিমাণ খাবার পাই, তা খুবই সীমিত। রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে যে সামান্য আয় হতো, তা দিয়ে নিজের দুই সন্তানের জন্য বাড়তি কিছু খাবার কিনতে পারতাম। এখন সেটাও আর সম্ভব হচ্ছে না।
পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ: রাষ্ট্রদূত তারেক
জাহিদ ও তার স্ত্রী—দুজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। রক্ষণাবেক্ষণের কাজ তাদের পুষ্টি সহায়তার পাশাপাশি সামাজিকীকরণের সুযোগও তৈরি করে দিয়েছিল। কিন্তু এখন তা বন্ধের পথে।
আফরোজা সুলতানা নামের ব্র্যাকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি কেবল একটি কর্মসূচি ছিল না, এটি ছিল তাদের জীবনের অন্যতম ভরসা। এটি শুধু পারিশ্রমিকই দেয়নি, মানুষকে আত্মমর্যাদা দিয়েছে, পরিবার চালানোর সামর্থ্য দিয়েছে এবং ন্যূনতম চাহিদা পূরণের বিকল্প ব্যবস্থাও তৈরি করেছে।’
তিনি জানান, এই কর্মসূচি বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন রোহিঙ্গারা। অনেক শিশু বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ছে, কেউ কেউ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হচ্ছেন, আবার অনেকে বিপজ্জনক পথে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টাও করছেন।
অবকাঠামোগত ঝুঁকি
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বরাদ্দ সহায়তা তহবিলে ঘাটতির কারণে কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে জরুরি অবকাঠামোগত রক্ষণাবেক্ষণ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষার সময় সড়ক, সেতু, চলার পথ ও পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হলেও তা সম্ভব হচ্ছে না।
২০২৪ সালের শুরুতে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার রোহিঙ্গা পাঁচ শতাধিক বেশি অবকাঠামো প্রকল্পে নিয়োজিত ছিলেন। কিন্তু চলতি বছর এই কার্যক্রমের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। ফলে ভাঙা রাস্তা-সেতু ও বন্ধ ড্রেন এখন শিবিরজুড়ে স্বাভাবিক চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আফরোজা সুলতানা বলেন, ‘এসব কারণে শিবিরে বসবাসকারীদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও চলাচল হুমকির মুখে পড়ছে।’
২৪ বছর বয়সী জয়নব বেগম বলেন, ‘আমাদের আশপাশে একটি ল্যাট্রিন, কিন্তু ভূমিধসের ঝুঁকিতে সেটি ব্যবহার করতেও ভয় পাচ্ছি।’
পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট আঞ্চলিক নিরাপত্তায় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
তহবিল সংকটের কারণে শিবিরে অবকাঠামোগত ঝুঁকির পাশাপাশি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেবাও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, মিয়ানমার থেকে আরও রোহিঙ্গা আসায় মানবিক সেবার ওপর চাপ বেড়েছে।
চলতি মাসের ১১ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি সতর্ক করে জানায়, অতিরিক্ত তহবিল পাওয়া না গেলে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা, জ্বালানি, খাদ্য সহায়তা এবং শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম আরও বিঘ্নিত হতে পারে।
এমন অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
১৩৮ দিন আগে
জোরপূর্বক ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ যুদ্ধাপরাধের শামিল: জাতিসংঘ
ইসরায়েল অধিকৃত জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরের ঐতিহ্যবাহী ফিলিস্তিনি জনপদ থেকে ব্যাপক হারে জোরপূর্বক ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তর (ওএইচসিএইচআর)। এটিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী জাতিসংঘ যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
ওএইচসিএইচআরের তথ্যমতে, মাসাফের ইয়াত্তা অঞ্চল থেকে ১২০০ ফিলিস্তিনি নাগরিকের জোরপূর্বক স্থানান্তরের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জাতিসংঘের দপ্তরটি এক বিবৃতিতে জানায়, দক্ষিণ হেবরনের মাসাফের ইয়াত্তা এলাকায় ফিলিস্তিনিদের সব ধরনের নির্মাণ ও পরিকল্পনার অনুমতি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক প্রশাসন।
তাদের দাবি, ওই এলাকাটি সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হবে।
ওএইচসিএইচআর আরও জানায়, গত কয়েক মাসে ইসরায়েল ব্যাপকভাবে বাড়িঘর ভাঙচুর, ফিলিস্তিনি নাগরিক ও মানবাধিকারকর্মীদের নির্বিচার গ্রেপ্তার ও নির্যাতন, পাশাপাশি মাসাফের ইয়াত্তার ভেতর ও আশপাশে চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে, যার মাধ্যমে সেখানকার ফিলিস্তিনিদের বাধ্যতামূলকভাবে উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে ওই এলাকায় বসবাসরত অবৈধ ইহুদি বসতি থেকে আসা দখলদাররা প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনি নারী, শিশু ও প্রবীণদের ওপর হামলা ও হয়রানি চালাচ্ছে যেন তারা বাধ্য হয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধের দাবি ইসরায়েলি মন্ত্রীর
এদিকে, ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির গাজায় চলমান মানবিক সহায়তাকে ‘সম্পূর্ণ লজ্জাজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং এই সহায়তা অস্থায়ীভাবে নয় বরং সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।
সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে কট্টর ডানপন্থি এই মন্ত্রী দাবি করেন, হামাসই গাজায় খাদ্য ও পণ্যের নিয়ন্ত্রণ করছে। সহায়তা বন্ধ করলেই দ্রুত বিজয় অর্জন সম্ভব।
ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় বেন-গভিরের মতো কট্টর ডানপন্থি নেতারা শুরু থেকেই গাজায় সহায়তা পাঠানোর বিরোধিতা করে আসছেন। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মানবিক বিপর্যয় রোধে সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে আসছে।
ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধ থামলেও দীর্ঘদিনের ফিলিস্তিন সংকটে কোন অগ্রগতি নেই। এ অঞ্চলে ইসরায়েলি হামলা ও আগ্রাসন চলমান।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৯০ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
মন্ত্রণালয় অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫৬ হাজার ১৫৬ জন হাজার নিহত ও ১ লাখ ৩২ হাজার ২৩৯ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক আহত বা পঙ্গুত্ববরণ করেছেন।
আরও পড়ুন: ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ
১৬১ দিন আগে
ইসরায়েলে বড় পরিসরে হামলা ইরানের, জাতিসংঘে চিঠি
নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ইসরায়েলে বড় পরিসরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এতে তেল আবিবের বেশ কয়েকটি ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড আদম (এমডিএ)। এই হামলায় অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
রবিবার (২২ জুন) এক বিবৃতিতে ইরানের হামলার বিষয়টি জানায় এমডিএ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তেহরানের হামলায় বেশ কয়েকটি দ্বিতল আবাসিক ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কিছু ভবন ধসে পড়েছে।’
এর আগে, ইরানের হামলার পর ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার খবর পেয়ে অন্তত ১০টি স্থানে উদ্ধারকাজের জন্য রওনা দেওয়ার কথা জানায় এমডিএ।
সংস্থাটির বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গত কয়েক মিনিটে সতর্কতামূলক সাইরেন শোনার পর যেসব স্থানে হামলার খবর পাওয়া গেছে, সেসব জায়গার উদ্দেশে উদ্ধারকারী দল রওনা দিয়েছে।’
সংস্থাটির সম্প্রচারিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি ভবনের অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং আশপাশের অন্যান্য ভবনেরও উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সে সময় ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক উদ্ধারকারী ও জরুরি সেবাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নাগরিক ও সেনারা এখন বৈধ লক্ষ্যবস্তু: ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভির হুঁশিয়ারি
ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলে গোলাবারুদ পড়ার ঘটনাস্থলে কর্মকর্তারা ও বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ইউনিট কাজ করছে।
উত্তরাঞ্চলীয় শহর হাইফার এক কর্মকর্তাও ওই শহরে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।
জেরুজালেমে অবস্থানরত মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রযোজক জানিয়েছেন, তিনি শহরের আকাশে বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন এবং ভিডিওতে আকাশে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্রও দেখা গেছে।
১৬৫ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে কমছে সন্তান জন্মদানের হার, জাতিসংঘের জরিপে উদ্বেগ
নম্রতা নাংগিয়া ও তার স্বামী মুম্বাইয়ে তাদের পাঁচ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলেও আরেকটি সন্তান নেওয়ার চিন্তা করছিলেন। তবে দ্বিতীয় সন্তানের ব্যয় তারা বহন করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান এই দম্পতি।
নম্রতা মুম্বাইয়ে একটি ওষুধ কোম্পানিতে কাজ করেন। তার স্বামীও সেখানে একটি টায়ার কোম্পানিতে কর্মরত। তবে একটি সন্তানেরই স্কুল ফি, স্কুল বাস, সাঁতার শেখা ও চিকিৎসাসহ সন্তানের নানাবিধ খরচ বহন করতে হিমশিম খাওয়া এই দম্পতি দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে বারবার সরে আসছেন।
এ বিষয়ে নম্রতার ভাষ্য, ‘আমাদের সময় শিশুকালটা ভিন্ন ছিল। আমরা শুধু স্কুল যেতাম, অতিরিক্ত কোনো কার্যক্রম ছিল না। আর এখন সন্তানকে সাঁতার শেখাতে, আঁকা শেখাতে পাঠাতে হয়, দেখতে হয় যে সে আর কী শিখতে পারে।’
এই ধরনের পরিস্থিতি এখন কেবল মুম্বাইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, এটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, অর্থনৈতিক সংকট, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত উদ্বেগ, উপযুক্ত সঙ্গীর অভাব ও বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি মিলিয়ে শত কোটি মানুষ তাদের কাঙ্ক্ষিত সন্তানের সংখ্যা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছেন।
জরিপে উদ্বেগজনক জন্মহার
ওই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইউএনএফপিএ প্রথমবারের মতো জন্মহার পতনকে কেন্দ্র করে জোরালো অবস্থান নিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, হাঙ্গেরি, জার্মানি, সুইডেন, ব্রাজিল, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়া—এই ১৪টি দেশে পরিচালিত জরিপে মোট ১৪ হাজার মানুষের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই দেশগুলো বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্ব করে বলে খবরে বলা হয়েছে।
এসব দেশের মধ্যে রয়েছে উচ্চ ও নিম্ন আয়ের দেশ এবং উচ্চ ও নিম্ন জন্মহারের দেশ। তরুণদের পাশাপাশি প্রজনন বয়স অতিক্রান্ত ব্যক্তিদেরও জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ইউএনএফপিএর প্রধান ড. নাটালিয়া কানেম বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে জন্মহার নজিরবিহীনভাবে কমছে। অধিকাংশ মানুষ দুই বা ততোধিক সন্তান চান, কিন্তু সক্ষমতার অভাবে বাস্তবে তা পারছেন না। সেটিই আসল সংকট।’
আরও পড়ুন: মৃত শিশুর জন্মহারে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ
এ বিষয়টিকে সংকট বলার মাধ্যমে দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউরোপে জন্মদানের প্রবণতা নিয়ে গবেষণা করা ও ফিনল্যান্ড সরকারের পরামর্শদাতা হিসেবে কর্মরত জনসংখ্যা বিশ্লেষক আনা রোটকির্চ।
তিনি বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে দেখা যায়, মানুষ যত সন্তান চায় বাস্তবে তার চেয়ে কম নিচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সন্তান কম হচ্ছে, বেশি নয়।’
জরিপে অংশ নেওয়া ৫০ বছরের বেশি বয়সী উত্তরদাতাদের ৩১ শতাংশ বলেছেন যে, তারা যত সন্তান চেয়েছিলেন তা নিতে পারেননি। এই বিষয়টিই তাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে বলে মন্তব্য করেন রোটকির্চ।
ইউএনএফপিএর এই জরিপটি মূলত একটি প্রাথমিক ধাপ, পরবর্তীতে এটি ৫০টি দেশে বিস্তৃতভাবে পরিচালনা করা হবে।
বড় বাধা অর্থনৈতিক সংকট ও সময়ের অভাব
জরিপ থেকে জানা গেছে, ৩৯ শতাংশ মানুষ অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে সন্তান নিতে পারেননি। দক্ষিণ কোরিয়ায় এই হার সর্বোচ্চ (৫৮ শতাংশ), আর সুইডেনে সর্বনিম্ন (১৯ শতাংশ)।
অন্যদিকে গর্ভধারণে সমস্যায় থাকা মানুষের হার মাত্র ১২ শতাংশ। এই হার থাইল্যান্ডে ১৯ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৫ শতাংশ, নাইজেরিয়ায় ১৪ শতাংশ ও ভারতে ১৩ শতাংশ।
এই জরিপের বিষয়ে হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির জনসংখ্যা বিশ্লেষক অধ্যাপক স্টুয়ার্ট গাইটেল-বাস্টেন বলেন, ‘জাতিসংঘের কোনো সংস্থা কমসংখ্যক সন্তান গ্রহণের বিষয়ে আগে কখনো এত গুরুত্ব দেয়নি।’
‘এতদিন পর্যন্ত এই সংস্থা মূলত অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ ও গর্ভনিরোধক পদ্ধতির অভাব নিয়েই বেশি জোর দিয়েছিল। তবে এখন তারা জন্মহার হ্রাসের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানাচ্ছে।’
আরও পড়ুন: জাপানে সবচেয়ে কম শিশু জন্মহার ২০২৩ সালে, কমেছে বিয়ের হারও
ড. নাটালিয়া কানেম বলেন, ‘আমরা এখন এমন একটা সময় দেখছি যখন একদিকে অতিরিক্ত জনসংখ্যা নিয়ে কথা হচ্ছে, অন্যদিকে জনসংখ্যা কমে যাওয়ার উদ্বেগও দেখা দিয়েছে। তবে এ সম্পর্কিত আলোচনা অনেক সময় অতিরঞ্জিত তো বটেই, কখনো কখনো প্ররোচনামূলক নীতির দিকেও চলে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘কখনো নারীদের বেশি সন্তান নেওয়ার জন্য, আবার কখনো কম সন্তানের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।’
৪০ বছর আগেও চীন, কোরিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড ও তুরস্কে জন্মহার বেশি থাকায় উদ্বেগ ছিল। অথচ ২০১৫ সালের মধ্যে এই দেশগুলো জন্মহার বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেন ড. কানেম।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক স্টুয়ার্ট সতর্ক করেন, ‘এসব দেশে কম জন্মহার, বয়স্ক জনসংখ্যা ও স্থবির জনসংখ্যাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে জাতীয়তাবাদী, অভিবাসন-বিরোধী ও লিঙ্গ সম্পর্কে রক্ষণশীল নীতিগুলো বাস্তবায়ন করতে দেখা যাচ্ছে। তবে আমরা চাই, এসব হঠকারী নীতি যেন গ্রহণ না করা হয়।’
ইউএনএফপিএ আরও বলছে, আর্থিক সীমাবদ্ধতার চেয়েও বড় বাধা হলো সময়ের অভাব। মুম্বাইয়ের নম্রতার ঘটনাটি এ প্রসঙ্গে একেবারে মিলে যায়।
প্রতিদিন অফিস যাওয়া-আসায় অন্তত তিন ঘণ্টা চলে যায় তার। বাড়িতে ফিরে ক্লান্ত হয়ে পড়লেও মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাতে চান তিনি। দিন শেষে দেখা যায়, পর্যাপ্ত ঘুমের সময়ই পাচ্ছে না তাদের পরিবার।
নম্রতা বলেন, ‘একেকটা কর্মদিবসের পর একজন মা হিসেবে অপরাধবোধ কাজ করে যে, সন্তানের সঙ্গে যথেষ্ট সময় কাটাতে পারছি না। তাই আমরা কেবল একজনকেই নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।’
১৭৬ দিন আগে
সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ভূমিকার প্রশংসা ইইউর
১৯৮৮ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন উল্লেখ করে তাদের এই ভূমিকার প্রশংসা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) এক বার্তায় ঢাকাস্থ ইইউ দূতাবাস এ কথা জানিয়েছে।
বার্তায় বলা হয়, সংঘাতের অবসান ও প্রাণ রক্ষার এই প্রচেষ্টার স্বীকৃতি জানাই আমরা। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ইইউ দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের এই কর্মকাণ্ড আমাদের নিরাপদ রাখে এবং বাংলাদেশের সমৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।
১৯০ দিন আগে