মাথার খুলি
দাসদের মাথার খুলির পাত্রে পানীয় খেতেন অক্সফোর্ডের শিক্ষকরা!
ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায় হলো দাসপ্রথা। কালো চামড়ার লাখ লাখ মানুষকে আফ্রিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলগুলো থেকে জোরপূর্বক আমেরিকা ও ইউরোপে বিক্রি করা হতো। দাসপ্রথার ভয়াবহতা সম্পর্কে কমবেশি সব মানুষই কখনো না-কখনো শুনেছেন।
নানা অনুসন্ধান বা গবেষণায় দাসদের প্রতিনিয়তই অত্যাচার-নিপীড়নের নতুন কোনো তথ্য উঠে আসছে। এমনকি মারা যাওয়ার পর তাদের দেহাবশেষও মুক্তি পায়নি অত্যাচার থেকে। মাথার খুলি দিয়ে তৈরি হয়েছে পাত্র!
মানুষের মাথার খুলি দিয়ে বানানো সেই পাত্রে কয়েক দশক ধরে পানীয় খেতেন অক্সফোর্ডের ওরচেস্টার কলেজের শিক্ষকরা! শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও ঔপনিবেশিক যুগে লুট করা মানব দেহাবশেষ নিয়ে অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে এমন বলা হয়েছে।
মানুষের খুলিকে পলিশ করে, রূপা দিয়ে হাতল ও চারপাশে নকশা করে অত্যন্ত সুন্দর করে এই পাত্রটি তৈরি করা হয়েছিল। মাত্র দশ বছর আগেও প্রতিনিয়ত এই পাত্র থেকে ওয়াইন খেতেন; পরে ওয়াইন চুইয়ে পড়া শুরু করলে তাতে চকোলেট খেতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
সম্প্রতি ওরচেস্টার কলেজের পিট রিভারস জাদুঘরের প্রত্নতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড্যান হিকসের আসতে চলা নতুন বই ‘এভরি মনুমেন্ট উইল ফল’ বইয়ে এসব লজ্জাজনক তথ্য উঠে এসেছে।
হিকস জানান, কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী ও অতিথিদের মধ্যে মানুষের খুলি দিয়ে বানানো পাত্রে পানীয় খেতে অস্বস্তি বাড়ার কারণে ২০১৯ সালের দিকে এই পাত্রের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় এই পাত্রটি কোথা থেকে আর কী করে কলেজের খাবারের টেবিলে জায়গা পেল; তা জানতে হিকসকে অনুসন্ধান করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: দাবানল কী ও কেন হয়? পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়ানক কয়েকটি দাবানল
হিকস বলেন, ঔপনিবেশিক ইতিহাস নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। তবে সেসব বিতর্ক সাধারণত এই ঔপনিবেশিক শাসন থেকে যারা লাভবান হয়েছে তাদের কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। যেমন সিসলি রোডস কিংবা এডওয়ার্ড কলস্টন— যাদের নামে অনেক স্ট্যাচু কিংবা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে।
তবে হিকস চেয়েছিলেন এসব লাভবান নয় বরং ঔপনিবেশিক শাসনের যারা শিকার, যাদের নাম ইতিহাস থেকে মুছে গিয়েছে, তাদের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসতে। তিনি বলেন, ব্রিটিশ সংস্কৃতি ও শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ নিয়ে থাকা বর্ণবাদের কারণে এসব মানুষকে একদমই গুরুত্ব দেওয়া হতো না। এ ধরণের অমানবিকতা ও পরিচয় ধ্বংস করাও সহিংসতার অংশ বলে মনে করেন তিনি।
পাত্রটির খুলির মালিক কে, তার একদম সঠিক কোনো তথ্য পাননি হিকস। তবে কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যমতে, খুলিটি আনুমানিক ২২৫ বছর আগের। খুলির আকার ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে হিকস জেনেছেন, খুলিটি একজন দাস নারীর এবং তাকে ক্যারিবিয়ান অঞ্চল থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল।
খুলিটি কার সেটির কোনো তথ্য লিপিবদ্ধ না থাকলেও খুলি দিয়ে তৈরি পাত্রটির মালিকের নাম কিন্তু রূপা দিয়ে খোদাই করা ছিল। ১৯৪৬ সালে কলেজে এই পাত্রটি উপহার দেন সাবেক শিক্ষার্থী জর্জ পিট রিভারস।
যিনি একজন ইউজেনিসিস্ট ছিলেন। একটি বিশেষ জাতিকে সন্তান উৎপাদনের অনুমতি দেওয়ার মাধ্যমে মানুষের উন্নতি করার ধারণাকে ইউজেনিকস বলা হয়। এই ধারণার সাথে বর্ণবাদ ও নাৎসি তত্ত্বের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যে কারণে পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই এই নীতিকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করছেন না। নাৎসি শাসক ওসওয়াল্ড মোসলিকে সমর্থন করার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার তাকে কারাবন্দিও করেছিল।
যাইহোক, খুলিটি জর্জ পিট পেয়েছিলেন তার দাদা হেনরি লেন ফক্স পিট রিভার্সের থেকে। তিনিই পিট রিভার্স মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি ১৮৮৪ সালে একটি নিলামে এই পাত্রটি কিনেছিলেন। সে সময় পাত্রটিতে একটি কাঠের হাতল ছিল। সেটির নিচে রানী ভিক্টোরিয়ার নাম খোদিত ছিল এবং তার অভিষেকের বছরেই অর্থাৎ ১৮৩৮ সালে তৈরি করা হয়েছিল পাত্রটি। নিলামে পাত্রটি বিক্রি করেছিরেন বার্নাড স্মিথ নামে এক ব্যক্তি। হিকসের ধারণা এটি তিনি তার বাবার থেকে উপহার পেয়েছিলেন। স্মিথের বাবা ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ভিক্টোরিয়ান যুগে রয়েল আর্মিতে কর্মরত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ব্রিটেনে গর্ভপাতের পর ‘শোক ছুটি’ পাবেন মা-বাবা
আফ্রিকান ক্ষতিপূরণ সম্পর্কিত ব্রিটেনের ‘অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের’ সদস্য ও লেবার পার্টির এমপি বেল রিবেরিও অ্যাডি বলেন, ‘ঔপনিবেশিক সহিংসতা ও শোষণের মাধ্যমে গড়া সমৃদ্ধ এই প্রাচীরে দাঁড়িয়ে অক্সফোর্ডের ডনরা মানুষের মাথার খুলি দিয়ে বানানো পাত্রে পানীয় খাচ্ছেন— দৃশ্যটি ভাবলেই কেমন যেন গা গুলিয়ে বমি আসে! হতে পারে খুলিটি একজন দাসের, যাকে এতটাই তুচ্ছ করা হয়েছে যে তার মাথার খুলিকে একটি পাত্রে তৈরি করা হয়েছে!’
এ বিষয়ে ওরচেস্টার কলেজের এক মুখপাত্র বলেন, বিংশ শতাব্দীর দিকে মাঝে মাঝে এই পাত্রটি প্রদর্শন করা হতো, আবার অনেক সময় ব্যবহারও করা হতো। তবে কতবার ব্যবহার করা হয়েছে তার কোনো সঠিক তথ্য নেই। তবে ২০১১ সাল থেকে এর ব্যবহার সীমিত করা হয়। আর ২০১৫ সালে পুরোপুরি ব্যবহার করা বন্ধ হয়ে যায়।
গবেষকদের ও আইনি পরামর্শ মেনে কলেজ কর্তৃপক্ষ পাত্রটিকে সম্মানের সঙ্গে সংগ্রহশালায় রাখার ও এর ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি।
এই খুলিটির বিষয় ছাড়াও ঔপনিবেশিক আমলে লুট হওয়া আরও কিছুর খুলির তথ্য হিকসের বইয়ে আছে। এরমধ্যে ফিল্ড মার্শাল লর্ড গ্রেনফিল্ডের একজন জুলু কমান্ডারের খুলি লুটের তথ্য আছে।
২২৬ দিন আগে
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাথার খুলি ও মগজ ছাড়া কন্যা শিশুর জন্ম
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এক দম্পতির ঘরে মাথার খুলি ও মগজ ছাড়া একটি কন্যা শিশু জন্ম নিয়েছে।
সোমবার বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের গাইনী বিভাগের নরমাল ডেলিভারিতে শিশুটির জন্ম হয়।
জন্ম নেওয়া শিশুটি অসুস্থ হলেও তার মা তানজিনা বেগম সুস্থ আছেন।
তানজিনা বেগম নাসিরনগর উপজেলার বলাকুট ইউনিয়নের বলাকুট গ্রামের জসিম উদ্দিনের স্ত্রী।
আরও পড়ুন: যশোরে জোড়া লাগা যমজ কন্যা শিশুর জন্ম
হাসপাতাল ও নবজাতকের পরিবার সূত্রে জানা যায়, নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগরের শহীদ মিয়ার মেয়ে তানজিনা বেগমের সাথে প্রায় দুই বছর আগে একই উপজেলার ভলাকুটের মৃত সফিল উদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিনের বিয়ে হয়। প্রায় এক বছর আগে তানজিনা গর্ভবতী হয়। এরপর থেকে সে বিভিন্ন গাইনী চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
আরও পড়ুন: নাটোরে জোড়া লাগা ২ কন্যা শিশুর জন্ম
তানজিনা যখন ৭ মাসের গর্ভবতী তখন গাইনী চিকিৎসক ডালিয়া আক্তার তাকে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে জানান, জন্ম নিতে যাওয়া শিশুটি শারীরিক ভাবে অসুস্থ হবে এবং তার মাথার খুলি হবে না। কিন্তু চিকিৎসকের সেই কথা তানজিনার শ্বশুর বাড়ির লোকজন কর্ণপাত করেননি।
সোমবার বিকালে তানজিনার প্রসব বেদনা উঠলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে, গাইনী বিভাগে কোন প্রকার অপারেশন ছাড়া শিশুটি জন্ম নেয়। শিশুটি জন্ম নেওয়ার পর তার মাথা খুলি ও মগজ ছিল না।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের গাইনী চিকিৎসক মাহফিদা আক্তার হ্যাপী জানান, শিশুটি মাথার খুলি ও মগজ ছাড়া জন্ম নিয়েছে। এ ধরনের শিশুদের এনেনসেফালি (Anencephaly) বলা হয় মেডিকেলের ভাষায়।
তিনি আরও বলেন, এই ধরণের শিশুরা সচরাচর ২৪ ঘণ্টা থেকে ৪৮ ঘণ্টা বেঁচে থাকে। শিশুটিকে হাসপাতালের শিশু বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালে রেফার করেছি এই কন্যা শিশুটিকে।
১৬৫৫ দিন আগে
ঠাকুরগাঁওয়ে ৪ বস্তা মানুষের হাড় উদ্ধার
ঠাকুরগাঁও, ২২ সেপ্টেম্বর (ইউএনবি)- সদর উপজেলার ভুল্লি বাজারে একটি নৈশকোচের কাউন্টার থেকে তিনজন মানুষের মাথার খুলিসহ চার বস্তা হাড় উদ্ধার করেছে পুলিশ।
২২৬৬ দিন আগে