ভাষা
ক্যানবেরায় বহু ভাষা ও সংস্কৃতির ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে অমর একুশে উদযাপন
অস্ট্রেলিয়ায় বহু ভাষা ও সংস্কৃতির ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে পালিত হলো শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দেশটির রাজধানী ক্যানবেরায় প্রভাত ফেরীসহ বাংলাদেশ হাইকমিশনের এসব আয়োজনে অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরি (এসিটি) সরকারের মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত-কূটনৈতিকসহ প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
ক্যানবেরার তেলোপিয়া পার্কে মানুকা সার্কিট ও নিউ সাউথ ওয়েলস স্ট্রিটের ক্রসরোডে স্থাপিত অস্থায়ী শহিদ মিনারে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
প্রভাত ফেরী সকাল ৬.৩০ মিনিটে শুরু হয়ে মানুকা ওভাল ঘুরে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে শেষ হয়।
এতে অংশগ্রহণ করেন অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরি (এসিটি) সরকারের মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত-কূটনৈতিক,অষ্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি, বিভিন্ন ভাষা-ভাষীদের প্রতিনিধি, অষ্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী ও অভিবাসীগণ এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তা/কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
অংশগ্রহণকারীরা অস্থায়ী শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় ভাষা শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আরও পড়ুন: প্রতিটি ভাষাকে সম্মান করে ‘আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সঙ্গত’ বিশ্ব চায় বাংলাদেশ
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম আল্লামা সিদ্দিকী, এসিটি সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাসেল স্টিফেন স্মিথ, পরিবেশ মন্ত্রী রেবেকা ভাসারত, বহুসংস্কৃতি বিষয়ক ছায়ামন্ত্রী পিটার কেইন, অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের রাষ্ট্রদূত মনপ্রিত ভোরা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন।
এম আল্লামা সিদ্দিকী এ সময় ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদশের স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত দীর্ঘ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাধারণ নেতৃত্বের কথা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, বিশ্বের প্রায় ৭ হাজার ভাষার প্রতিটি জীবন্ত যাদুঘর এবং অনন্য জ্ঞানের আধার। প্রতিবছর এ ৭ হাজার ভাষার মধ্যে কমপক্ষে ১টি ভাষা বিলুপ্ত হচ্ছে উল্লেখ করে বাংলাদেশের হাইকমিশনার বিশ্বের প্রতিটি ভাষা সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এসময় বক্তাগণ মহান শহিদ দিবস ও আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন।
ভারতের রাষ্ট্রদূতসহ বক্তারা ভাষার সম্মান রক্ষায় বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং বহু সংস্কৃতিবাদ ও ভাষার অন্তর্ভুক্তির ওপর জোর দেন।
একুশের ব্যাপারে সম্যক অবহিত করা এবং নৃ-তাত্ত্বিক ভাষাসহ সকল মাতৃভাষার সম্মানার্থে এই অস্থায়ী শহিদ মিনার তিনদিনব্যাপী খোলা রাখা হয়েছে।
সকাল ৮ টায় হাইকমিশন প্রাঙ্গণে হাইকমিশনার এম আল্লামা সিদ্দিকী জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করতে বিপুল অর্থের প্রয়োজন: শাহরিয়ার আলম
এসময় দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। এছাড়া নিজ নিজ ধর্মমত ও প্রথা মোতাবেক ভাষা শহিদদের উদ্দেশ্যে মৌন প্রার্থনা এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিবসটির প্রথম প্রহরের অনুষ্ঠান শেষ হয়।
সন্ধ্যায় দেড় শতাধিক অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী ও অভিবাসী বাংলাদেশির অংশগ্রহণে বাংলাদেশ হাইকমিশনে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ওপর এক আলোচনা সভা আয়োজন করা হয় যাতে হাইকমিশনারসহ অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা শেষে ভাষা শহিদদের স্মরণে ও বাংলাদেশকে উপজীব্য করে স্থানীয় বাংলাদেশি শিল্পীদের পরিবেশনায় এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এদিকে, একুশের চেতনা, তাৎপর্য, ইতিহাস বিষয়ে এবিসি রেডিও ক্যানবেরা আজ সকালে হাইকমিশনার এম আল্লামা সিদ্দিকীর লাইভ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। এসময় তিনি একুশের চেতনা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও সংস্কৃতির মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে প্রতি বছর বাংলাদেশ হাইকমিশন ক্যানবেরা গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন ।
ঝালকাঠিতে প্রয়াত ৩ ভাষা সৈনিককে সম্মাননা প্রদান
ঝালকাঠিতে মহান শহিদ দিবস উপলক্ষে ঝালকাঠির প্রয়াত তিন জন ভাষা সৈনিককে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেছে জেলা প্রশাসন।
বুধবার ঝালকাঠি শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়াত এই তিন ভাষা সৈনিকের পরিবারের হাতে সম্মাননা তুলে দেন।
প্রয়াত তিন ভাষা সৈনিকরা হলেন- মোহাম্মদ আলী খান, আ. রশিদ ফকির ও লাইলি বেগম।
আরও পড়ুন: ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ সম্মাননা পেলেন খালেদা জিয়া
১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনে ঢাকায় ছাত্রদের ওপর গুলি বষর্ণে নিহত রফিক, শফিক, জব্বার, সালাম, বরকতসহ নাম না জানা আরও শহীদের মৃত্যুর খবর আসার পরে তৎকালীন সময়ে স্কুলের ছাত্র মোহাম্মদ আলী খানের নেতৃত্বে ঝালকাঠিতে ছাত্রদের নিয়ে মিছিল বের হয়। এই মিছিলে তৎকালীন ঝালকাঠির হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী লাইলী বেগম ও বায়তুল মোকাররম মসজিদের তৎকালীন মোয়াজ্জেম ও পত্রিকার এজেন্ট আব্দুর রশীদ ফকির ছাত্রদেরকে উৎসাহ দেয়ার জন্য মিছিলের অগ্রভাগে থেকে তাদের সাহস জোগায়। তারা পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে সকল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
অনুষ্ঠানে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো.কামাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শঙ্কর কুমার দাস উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: কৃষিতে আজীবন সম্মাননা পেলেন কৃষিমন্ত্রী
শাবিপ্রবিতে ২৩ শিক্ষককে বিশেষ সম্মাননা
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস: গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে সারাদেশে পালিত হলো 'অমর একুশে'
জাতি সোমবার 'অমর একুশে', ভাষা শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে।
মহান ভাষা আন্দোলন জাতির ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যার লক্ষ্য ছিল মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি স্ব-সত্তা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষা করা।
আরও পড়ুন: ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগেই বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে: পররাষ্ট্র সচিব
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘অমর একুশে’-আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহিদ দিবস উপলক্ষে ভাষা আন্দোলনের শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম রবিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী মধ্যরাতের এক মিনিটে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
অমর একুশের ৭০ বছর এবং স্বাধীন বাংলাদেশে অমর একুশে পালনের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও একটি ডাটা কার্ডও অবমুক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: ভাষা শহীদদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানালেন সজীব ওয়াজেদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান সকালে ঢাবি ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি' গান গেয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে খালি পায়ে হেঁটে সর্বস্তরের মানুষ ভাষা আন্দোলনের সেই বীর শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন যারা বাংলা ভাষার স্বীকৃতি অর্জনের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।
সোমবার বিকেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা শহীদ মিনার এলাকা পরিষ্কার করতে গিয়ে ফুল অপসারণ করেন।
ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগেই বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে: পররাষ্ট্র সচিব
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনে শহিদদের আত্মত্যাগে আজ বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সোমবার সকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
রফিক, সালাম, জব্বার, বরকত, শফিউরসহ ১৯৫২ এর সকল ভাষা শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘তাঁদের আত্মত্যাগেই আমাদের মাতৃভাষার অধিকার, আমাদের পরিচয় এবং নিজস্ব সংস্কৃতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
আরও পড়ুন: পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সাক্ষাত
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই আমাদের সকল যুগান্তকারী আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছে এবং অবশেষে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছি।’
মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের জন্য তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত-সহ সকল ভাষা সৈনিকের অবদানের কথা পররাষ্ট্র সচিব শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহিদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা এবং জাতীয় চার নেতাসহ সকল শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তাঁদের সকলের আত্মত্যাগেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে এবং উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভাষা আন্দোলন— শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রথম সুসংগঠিত আন্দোলন— যা আমাদের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস সুদৃঢ় করে জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত করেছিল।’
১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোর মাধ্যমে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তাঁর নির্দেশনা এবং নেতৃত্বে এই গৌরবময় স্বীকৃতি অর্জন সম্ভব হয়েছে। তিনি একইসঙ্গে এই স্বীকৃতি অর্জনের জন্য তৎকালীন কানাডা প্রবাসী রফিক, সালাম-সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা বিশেষ করে, প্যারিসে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত (এ বছর একুশে পদকপ্রাপ্ত) প্রয়াত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর অবদানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাবেক কূটনীতিক সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর ছেলে সৈয়দ নাজিব মুস্তাফা আলী। এছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা নিজেদের মাতৃভাষায় অনুভূতি প্রকাশ করে ভাষা শহিদদের অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
আরও পড়ুন: ভাষা শহীদদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানালেন সজীব ওয়াজেদ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম রাষ্ট্রীয় কাজে দেশের বাইরে অবস্থান করায় শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে তাঁদের প্রদত্ত বাণী অনুষ্ঠানে পড়ে শোনানো হয়। এছাড়া বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবরা, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এবং ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে বাংলাদেশ মিশনগুলোর প্রধানরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এবং ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা শোভাযাত্রাসহ ফরেন সার্ভিস একাডেমি প্রাঙ্গণে শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ভারত-বাংলাদেশের ‘নো ম্যান্স ল্যান্ডে’ ভাষাপ্রেমীদের মিলন মেলা
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দুই বাংলার ভাষাপ্রেমীদের মিলন মেলা বসে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টের নো ম্যান্স ল্যান্ড এলাকায়। কেবলমাত্র ভাষার টানে সোমবার সকালে দু’দেশের মানুষ যোগ দেন ২১ শের এই মিলন মেলায়।
নো ম্যান্স ল্যান্ডে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে সকাল সাড়ে সাড়ে ১০ টায় যৌথভাবে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, ভারতের পক্ষে পশ্চিমবঙ্গ বনগাঁও অঞ্চলের এমএলএ শ্রী বিশ্বজিত রায়, এমপি মমতা ঠাকুর, জেলা তৃণমূল সভাপতি আলোরানী সরকার, বনগাঁও পঞ্চায়েত প্রধান পরিতোষ বিশ্বাস এবং বাংলাদেশের পক্ষে যশোর-১ আসনের সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিন, কাস্টমস কমিশনার মো. আজিজুর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু, শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলিফ রেজা, অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল, ওসি কামাল ভূইয়া, ওসি রাজু আহমেদ, বেনাপোল পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি এনামূল হক মকুল ও সাধারণ সম্পাদক মো. নাছির উদ্দিন, যুগলীগের সভাপতি অহেদুজ্জামান অহিদ ও সাধারণ সম্পাদক সোহরাব চেয়ারম্যান।
দুই দেশের জনগণই নয়, রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তারাও বাদ যায়নি শহীদ বেদীতে ফুল দিতে। আজকের একুশ দু’দেশের বাঙালি জাতিকে দিয়েছে মর্যাদার আসন। পরে বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষে থেকে মিষ্টি পাঠানো হয় দুই দেশের জনগণের জন্য।
পরে বিকালে ওপারে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে হিলি বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষাকে এগিয়ে নিতে কন্টেন্টের মান নিশ্চিত করতে হবে: মোস্তাফা জব্বার
প্রযুক্তিতে ভাষা ব্যবহারের সুবিধার্থে বাংলা কন্টেন্টের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
শনিবার রাজধানীতে টেলিকম অপারেটর রবি আয়োজিত ‘প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আগামী প্রজন্মের জন্য ভাষার প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলাকে সমৃদ্ধ করার জন্য ১৬টি টুল তৈরি করা হচ্ছে।’
বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ বলেন, ‘ বাংলা বিশ্বের সপ্তম সর্বাধিক জনবহুল ভাষা হলেও এটি এখনো ইন্টারনেটে ব্যবহৃত শীর্ষ ৪০ টি ভাষার মধ্যেও স্থান পায়নি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য, বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়াতে হবে।’
আরও পড়ুন: মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ কেন জরুরি?
রবির চিফ কমার্শিয়াল অফিসার শিহাব আহমেদ বলেন, আমাদের বিনোদন ভিত্তিক বিষয়বস্তুর ওপর নির্ভরশীলতা থেকে সরে এসে ব্যবহারিক বিষয়বস্তুর বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। এছাড়াও, বাংলা ভাষায় অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিভিন্ন কন্টেন্ট খুঁজে পাওয়া যায় কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশের টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক-এর সভাপতি রাশেদ মেহেদী বলেন, ‘আমাদের ইন্টারনেটে বাংলা পরিভাষার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।’
টেকশহর ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক মুহাম্মদ খান বলেন: ‘প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহারে সন্তুষ্টি ৫০ শতাংশের বেশি নয়। এই ক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য সরকারের আরও পদক্ষেপ প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, বাংলা নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও অনেক কাজ করার রয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই নাগরিক সেবা প্লাটফর্মে অনেক ভাষায় যোগাযোগ ও সেবা পাওয়া যায়। এতে প্রবাসীরা নিজ নিজ ভাষায় সহজে যোগাযোগ করতে পারে। দেশগুলোর এসব প্লাটফর্মে যেনো বাংলা ভাষাও থাকে সে বিষয়ে দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন: গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ ইতিহাসের এক অসাধারণ দলিল: জাফর ইকবাল
২০২২ সালে একুশে পদক পাবেন ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক
মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ কেন জরুরি?
যোগাযোগের চিরায়ত মাধ্যম ভাষা মানুষকে পরস্পরের সঙ্গে মনের ভাব প্রকাশে সহায়তা করে। কিন্তু যখন শিক্ষা গ্রহণের প্রশ্ন আসে, তখন ভাব বিনিময়ের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি সেখানে আরও কিছু নির্ণায়ক জুড়ে যায়। যুগ যুগ ধরে বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা পদ্ধতির বিকাশের চাকার ঘূর্ণনকে নানা দিকে বদলেছেন বিশ্ব শিক্ষার নীতি নির্ধারকগণ। সব কিছুকে ছাপিয়ে বারবার যে বিষয়টি এই অগ্রগতির রূপরেখায় অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েছিল, তা হলো মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের গুরুত্ব। এই পরিপ্রেক্ষিতেই মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক তুলে ধরা হলো এই ফিচারে।
সামঞ্জস্য বিধানের সহজাত দক্ষতা
স্কুলে যেয়ে একটি শিশু যখন তার পরিবারের লোকদের বলা কথাগুলোই শুনতে ও বুঝতে পারে, তখন তার ভেতরে ইতোমধ্যে সংরক্ষিত শব্দগুলো দিয়ে স্কুলের শেখানো শব্দগুলোর সামঞ্জস্য বিধান করতে পারে। ভিন্ন ভাষার শব্দ হলে তখন তার এই সামঞ্জস্য করার দক্ষতা বিলম্বিত হয়। প্রতিটি শিশুর ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। শিশুর যাচাই করার ক্ষমতার এই প্রাথমিক স্তরে কাঠামোর ভিত্তি গড়তে তাই প্রয়োজন তার মস্তিষ্কে তার মাতৃভাষার শব্দগুলোর প্রবেশ ঘটানো।
আরও পড়ুন: বর্ণিল আয়োজনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
অনুশীলনের সুবিধা
পরিবারের গণ্ডিতে যে কথ্য ভাষায় তিন থেকে চার বছর শিশুটি লালিত হয়, সে ভাষাটি স্কুলেও পেলে শিক্ষক ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে তা নিয়ে তার অন্তর্নিহিত ভাবগুলো অনায়াসেই প্রকাশ করতে পারে। তাছাড়া স্কুলে দেয়া হোমওয়ার্কগুলো বাবা-মার সহায়তায় বাসায় চর্চার সুবিধা তো আছেই। বিশেষত নতুন কোন কিছু বা জটিল বিষয়গুলো শেখার ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে বেশি কাজে দেয়। আশেপাশের মানুষদের সাথে ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে অনুশীলনের ফলাফল হিসেবে অনুশীলনকৃত বিষয়টির ঠিক-বেঠিক নির্ণয়ে মাতৃভাষা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
সৃজনশীলতার সহায়ক
শিশুটির মস্তিষ্ক যখন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শব্দভান্ডারে বিকশিত হয়, তখন সময় আসে সে সেগুলো নতুন করে ব্যবহার করতে পারছে কিনা তা যাচাই করে দেখার। অবশ্য এটি বিভিন্ন শিশুর মধ্যে তার পরিবেশ ও শিক্ষা গ্রহণের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন সময়ে পরিলক্ষিত হয়। তবে জীবনের প্রাথমিক স্তরে মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ শিশু মস্তিষ্কে সৃজনশীলতার বীজ বুনতে সাহায্য করে। এমনকি, এর ওপর নির্ভর করে শিশুর স্বাভাবিক মানসিক ক্রমবিকাশ পরিচালিত হয়। এর পরিধি কয়েকটি বর্ণ মিলিয়ে একটি শব্দ গঠন থেকে শুরু করে নতুন অনুভূতি প্রকাশ করা পর্যন্ত বিস্তৃত।
আরও পড়ুন: ২০২২ সালে একুশে পদক পাবেন ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক
সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার প্রয়োজন
সংস্কৃতির মধ্যে নিহিত থাকে প্রতিটি মানুষের শিকড়। আর এর উপরেই মাটি ভেদ করে আকাশের দিকে ধীরে ধীরে ডালপালা গজাতে শুরু করে মূল্যবোধের বৃক্ষটির। ব্যক্তির আচার-আচরণ থেকে শুরু করে ভুল-শুদ্ধ নিরূপণের ভীত রচনা করার মোক্ষম হাতিয়ার সংস্কৃতি। মাতৃভাষা শুধু এই হাতিয়ার বানাতেই সাহায্য করে না বরং একজন পরিণত মানুষের জন্য এই হাতিয়ারকে শাণীত রাখার একমাত্র মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। ফলশ্রুতিতে নিজ গোষ্ঠী ও প্রথাগুলোকে মর্যাদাপূর্ণ করার পাশাপাশি ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গেও পারস্পরিক লেনদেনের উৎস উন্মোচিত হয়।
মাতৃভাষায় শিক্ষা পদ্ধতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
পাঠ্যক্রমগুলোতে মাতৃভাষার দারুণ প্রয়োগ দেখা যায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। জাপান, জার্মানি, ও ফ্রান্স বিভিন্ন চড়াই-উৎড়াইয়ের পরেও দেশ গঠনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের মাতৃভাষা প্রয়োগ থেকে বিরত থাকেনি। বরং সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাব্রত পালন করতে এই দেশগুলোতে ভীড় জমানোর সময় তাদের মাতৃভাষা শেখায় গুরুত্ব দেয়।
আরও পড়ুন: গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ ইতিহাসের এক অসাধারণ দলিল: জাফর ইকবাল
বলিভিয়ার জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ আদিবাসী হওয়ায়, বলিভিয়ান ক্যাম্পেইন ফর দ্য রাইট টু এডুকেশন (সিবিডিই) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করে। ২০১০ সালে বলিভিয়ার জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রম প্রত্যেক শিশুকে স্প্যানিশ ছাড়াও একটি আদিবাসী ভাষা এবং সংস্কৃতি শেখার বিধান জারি করে।
জিম্বাবুয়ে স্কুল পরীক্ষা পরিষদ আদিবাসী ভাষা শিক্ষায় উৎসাহিত করতে সংখ্যালঘু ভাষায় পরীক্ষা চালু করেছে।
আরও পড়ুন: রাজু ভাস্কর্যের সামনে নৃত্যরত ইরা: সপ্রতিভ উত্থানে এক বাংলাদেশি ব্যালেরিনা
২০১৬ সালে মাদাগাস্কারের আনালাভরি কমিউনের একটি স্কুল তাদের মাতৃভাষা মালাগাসিতে লেখা গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন (জিপিই) থেকে ৫৪টি পাঠ্যপুস্তক পেয়েছে। এগুলো শিশুদেরকে তৃতীয় গ্রেড পর্যন্ত তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুবিধা দিয়েছে। চতুর্থ শ্রেণি থেকে তারা দেশের দ্বিতীয় সরকারী ভাষা ফরাসি শেখা শুরু করে।
২০১৪ সালে জিপিই-এর ৩৫ দশমিক দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদানের একটি অংশ দেয়া হয়েছিলো জাম্বিয়ার চাভুমা জেলায়। এতে করে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিশুরা তাদের মাতৃভাষা লুভালে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। সে বছর থেকে জাম্বিয়ান প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো গণিত সহ উচ্চতর পরীক্ষায় ক্রমাগত সাফল্য পেয়ে আসছে।
আরও পড়ুন: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আফসান চৌধুরীসহ ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ৬ লেখক
১২৩ টিরও বেশি ভাষা থাকলেও নেপালি ভাষা নেপালের স্কুলগুলোর প্রধান ভাষা। ২০১৫ সালে নেপালি মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য নতুন সংবিধান চালু করা হয়।
শেষাংশ
শুরুটা হোক মাতৃভাষায়- এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে শিক্ষা লাভের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে একটি নিরবচ্ছিন্ন গতি দেয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রগুলোতে জাতীয়ভাবে যথাযথ সুযোগ-সুবিধার প্রণয়নে মাতৃভাষার পেশাগত মর্যাদার পাশাপাশি বজায় থাকবে সাংস্কৃতিক উন্নয়নের ধারা। বিদেশি ভাষা বয়কট নয়; বরং বিশ্ব দরবারে মাতৃভাষাকে সমুন্নত করতেই বিদেশি ভাষা শিক্ষার নিমিত্তে মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করতে হবে।
আরও পড়ুন: লিটল ম্যাগাজিন প্রদর্শনীর সময় বাড়ল
কিভাবে আত্মবিশ্বাসের সাথে ইংরেজিতে বলা রপ্ত করবেন?
বিশ্ব সংস্কৃতি ও যোগাযোগের একটি সার্বজনীন ভাষা হওয়ার কারণে আত্মবিঃশ্বাসের সাথে ইংরেজিতে কথা বলা সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দক্ষতা হয়ে দাড়িয়েছে। বর্তমানে প্রযুক্তির উত্তরোত্তর প্রসারের ফলে আপনি ক্লাসরুমের পুরোনো পাঠ্যপুস্তক কেন্দ্রিক ব্যবস্থা ছাড়াই ইংরেজি বলা রপ্ত করতে পারেন। মজার মজার বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে কোনও রকম চাপ নেয়া ছাড়াই এই ভাষাটি আপনার আয়ত্ত্বে নিয়ে আসতে পারেন। চলুন, কিভাবে আপনি ইংরেজি কথোপকথনে আরো সাবলীল হয়ে উঠবেন সে ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক।
আত্মবিঃশ্বাসের সাথে ইংরেজিতে কথা বলার ৫টি উপায়
সঠিক উচ্চারণের সাথে নতুন শব্দে কথা বলা
অধিকাংশ সময় আপনি ইংরেজি শব্দটির বাংলা অর্থ শিখেই অব্যহতি দেন। ফলে শত শত শব্দ জানার পরেও সঠিক উচ্চারণ করে সেগুলো দিয়ে আপনি কথা বলতে পারেন না। তাই নতুন শব্দটি শেখার পাশাপাশি বোঝার চেষ্টা করুন- শব্দটি কোন ক্ষেত্রে কেন ব্যবহার করা হয়। তারপর আশেপাশের প্রতিটি ঘটনা বা বস্তুর সাথে ঐ শব্দটি মিলিয়ে কথা বানিয়ে নিজে নিজে আওড়াতে থাকুন; কোথাও লিখুন অথবা পরিবার ও বন্ধুদের সাথে তা শেয়ার করুন। এতে আপনার শব্দটি জানার পাশাপাশি তা দিয়ে বাক্য গঠন এবং সঠিক উচ্চারণও শেখা হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: কঠোর ডায়েটের স্বাস্থ্য ঝুঁকিসমূহ জেনে নিন
কথনের প্রতিবিম্বকরণ
এটি মুলত কোনো একটি নির্দিষ্ট ভাষাভাষি লোকের অনুকরণে কথা বলাকে বোঝানো হচ্ছে। এই ব্যাপারটি খুব বেশি দেখা যায় শিশুদের ক্ষেত্রে, যখন তারা বাবা-মার ভঙ্গিমা অনুকরণ করে কথা বলার চেষ্টা করে। যে কোনো জায়গায় বহিরাগত ভিন্ন ভাষার লোক এ পদ্ধতিতেই নিজেকে মানিয়ে নেয়। প্রথমে শিশুর মত ভাঙা ভাঙা শব্দ বলতে বলতে ক্রমান্বয়ে সেই ভিন্ন ভাষার লোকদেরই একজনে পরিণত হয়।
আপনিও সেরকমি ইংরেজি কোনো মুভি তারকা বা শিল্পীকে আদর্শ ধরতে পারেন। প্রথমে ভিডিওর সাবটাইটেল দেখে দেখে মুখ মেলানোর চেষ্টা করুন। এভাবে বারবার চেষ্টার পর দেখবেন সেই মুভি তারকা সংলাপ বলার পূর্বেই অবিকল তার মত করে আপনি বলে ফেলতে পারছেন। পরবর্তীতে ভিডিও বন্ধ করে শুধু আপনার বলা কথা রেকর্ড করে শুনুন। নিজের কথা শুনে আপনি নিজেই চমকে যাবেন।
আরও পড়ুন: বর্ষাকালে ভ্রমণের পূর্বে কিছু সতর্কতা
ইংরেজিতে ভাবা ও নিজের সাথেই বলা
ইংরেজি বলার আগে আপনি নিশ্চই প্রথমে বাংলাতে কথাগুলো মনের ভেতর সাজিয়ে নেন। তারপর সেগুলোর ইংরেজি অনুবাদ করে প্রকাশ করেন। এতে আপনার কথোপকথনে সাড়া দিতে দেরি হবে। তাই চিন্তা করুন ইংরেজিতেই। এতে আপনার স্বতঃস্ফূর্ততা বাড়বে। আপনার ধরণ আলাদা বোঝা গেলেও নিরবচ্ছিন্ন যোগোযোগ সম্ভব হবে। এছাড়া নিজের সাথে ইংরেজিতে উচ্চস্বরে কথা বলুন। একটি ইংরেজি বই বা পত্রিকা নিয়ে জোরে জোরে কিছুক্ষণ পড়ুন। এই অনুশীলনটি আপনার মস্তিষ্কে পরপর অনেকগুলো শব্দের প্রবেশ ঘটাবে। ফলে আপনার আত্মবিঃশ্বাসের সাথে ইংরেজিতে কথা বলা অনেকটা বেড়ে যাবে।
আরও পড়ুন: বর্ষায় পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে বাঁচতে করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন
ইংরেজি ভাষার প্রাকৃতিক ধরনে অভ্যস্ত হওয়া
ভেবে দেখুন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোনও অধিবাসির কথা বলার ধরন অন্যরকম হলেও জনপ্রিয় আধুনিক গানগুলো গাওয়ার সময় কিন্তু শব্দগুলোর সঠিক উচ্চারণ করছে। এর কারণ হলো- গানগুলো প্রতিনিয়ত শুনতে শুনতে একসময় গানের শব্দগুলোর উচ্চারণের ঢং, গতি ও সুরের ব্যাপারে সবাই অভ্যস্ত হয়ে যায়। আর মুলত এজন্যেই ইংরেজি ভাষা শিক্ষার ব্যাপারে ইংরেজি মুভি ও গান শুনতে বলা হয়। এভাবে ইংরেজি শব্দগুলোর স্বাভাবিক ধরণ বুঝতে পারলে একদম ইংরেজি ভাষাভাষি লোকদের মত করেই আপনি ইংরেজি বলতে পারবেন।
আরও পড়ুন: সাইক্লিং, দৌড় কিংবা সাঁতার: ওজন কমাতে কোনটি বেশি কার্যকরী?
কম্পিউটার এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা
বর্তমানে ইংরেজিতে কথা বলার সবচেয়ে আনন্দদায়ক উপায় হলো ইংরেজি ভাষাভাষি লোকদের সাথে কথা বলার জন্য বিভিন্ন কম্পিউটার ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা। এধরণের ফ্রি অ্যাপগুলোর মাধ্যমে আপনার ইংরেজি অনুশীলনের জন্য একজন সঙ্গী পাবেন। পাশাপাশি বিভিন্ন কুইজ ও মজার মজার সব গেমের মাধ্যমে ইংরেজি শব্দ ও ব্যকরণ শিখতে পারবেন। এমন কয়েকটি জনপ্রিয় অ্যাপ স্পিকিং২৪, স্পিকি এবং হ্যালোটক। এছাড়া ইউটিউবের টিউটোরিয়ালের অফুরন্ত ভান্ডার থেকে সুক্ষ্মভাবে প্রত্যক্ষ করতে পারেন ইংরেজি উচ্চারণে মুখের ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহারগুলো।
আরও পড়ুন: কিভাবে বাড়িতেই ভেজাল দুধ শনাক্ত করবেন
পরিশিষ্ট
এই আত্মবিশ্বাসের সাথে ইংরেজিতে কথা বলা গুণটিই আপনাকে সবার কাছে আরো গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে। আপনার কথা কত সহজে অপরকে বোঝাতে পারছেন তার উপর অনেকটাই নির্ভর করছে আপনার ব্যক্তি-জীবনের সমস্যাগুলোর সমাধান। সেখানে এই মোক্ষম হাতিয়ারটি বিশ্বের যে কোনো স্থানে আপনার অবাধ বিচরণের পথকে অনায়াসেই সুগম করে তুলতে পারে।
চা শ্রমিকদের ‘দেশোয়ালি’ ভাষা সংরক্ষণ ও গবেষণার প্রয়োজন: গবেষক
ফেব্রুয়ারি হচ্ছে আমাদের ভাষার মাস। এই ভাষার মাসে সিলেটের চা শ্রমিকদের ‘দেশোয়ালি’ ভাষা সংরক্ষণ ও গবেষণার প্রধান দাবি হওয়া উচিৎ বলে জানিয়েছেন ‘দেশোয়ালি’ ভাষা গবেষক সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আশ্রাফুল করিম।
প্রোগ্রামিং হবে ভবিষ্যতের ভাষা: পলক
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, প্রোগ্রামিং হবে ভবিষ্যতের ভাষা। কেননা এটি যন্ত্রের সঙ্গে মানুষ এমনকি যন্ত্রের সঙ্গে যন্ত্রের যোগাযোগের মাধ্যমও বটে।