মৃত্যুদণ্ডাদেশ
মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেমড সেলে রাখার বিষয়ে রায় যেকোনো দিন
বিচারিক ও প্রশাসনিক ফোরামে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে দণ্ডিত ব্যক্তিকে কনডেমড সেলে রাখা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে জারি করা রুলের উপর চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়েছে।
শুনানি গ্রহণ শেষে মঙ্গলবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও মো. বজলুর রহমান মামলাটি রায়ের জন্য সিএভি (আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ) রেখেছেন।
রিটের পক্ষে শুনানিকারী আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানিয়েছেন, রুলের উপর চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়েছে। আদালত মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন। এখন যেকোনো দিন আদালত রায় ঘোষণা করবেন।
আরও পড়ুন: ভোটার উপস্থিতি কতটা জরুরি?
এর আগে গত বছরের ৬ এপ্রিল এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বিচারিক ও প্রশাসনিক ফোরামে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে দণ্ডিত ব্যক্তিকে কনডেমড সেলে রাখা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, আইজি প্রিজন্স, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপারকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
বিচারিক ও প্রশাসনিক ফোরামের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে দণ্ডিত ব্যক্তিকে কনডেমড সেলে রাখার বৈধতা চ্যলেঞ্জ করে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত হয়ে কনডেমড সেলে থাকা তিন আসামি ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বরে ওই রিট করেন।
তিন রিট আবেদনকারী হলেন- চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি সে সময় সাংবাদিকদের বলেন, জেল কোডের ৯৮০ বিধি অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের পৃথকভাবে কনডেমড সেলে রাখার কথা বলা আছে। জেল কোডের ৯৮০ বিধি চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। ৯৮০ বিধি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
রিটে বলা হয়, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করার আইনগত কোনো বিধান নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুসারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) নিতে হয়।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুসারে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি হাইকোর্টে আপিল করতে পারেন।
হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করার সুযোগ আছে দণ্ডিত ব্যক্তির। সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করার সুযোগ আছে।
এ ছাড়া সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন। ক্ষমার এ আবেদন রাষ্ট্রপতি যদি নামঞ্জুর করেন, তাহলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আইনগত বৈধতা পায়।
অথচ বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশের পরপরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কনডেমড সেলে বন্দী রাখা হচ্ছে। হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের আগে দণ্ডিত ব্যক্তিকে কনডেমড সেলে রাখা তার মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।
আরও পড়ুন: জনসেবক হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে পুলিশ এগিয়ে যাচ্ছে: আইজিপি
জয়পুরহাটে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ
জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যার দায়ে তার স্বামী- জুয়েল হোসেনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এছাড়া তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলার অতিরিক্ত দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক- আব্বাস উদ্দীন এ রায় দেন।
মৃত লাইলী বেগম মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জুয়েল হোসেনের স্ত্রী এবং ওই উপজেলার রসুলপুর দাহাড়পুকুর এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে ২ উপজাতি তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা: একজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ
এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জুয়েলের বাবা- জলিল হোসেন ও মা লিলি বেগমকে এ মামলা থেকে খালাস দিয়েছে আদালত।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, দণ্ডপ্রাপ্ত জুয়েল সংসারকালীন লাইলী বেগমকে যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই নির্যাতন করতো। সে সময় লাইলী বেগম ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০০৭ সালের ২৩ জুলাই রাতে জুয়েল তার স্ত্রীকে মারধর করে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পরের দিন বাদী হয়ে নিহতের বোন রাবেয়া খাতুন তিনজনের নামে ক্ষেতলাল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রী ও গর্ভে থাকা সাত মাসের সন্তানকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত মঙ্গলবার (আজ) এ রায় দেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসামির বাবা ও মাকে মামলা থেকে খালাস দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেমড সেলে রাখা কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট
সিনহা হত্যা: সাত দিনের মধ্যে হাইকোর্টে যাবে প্রদীপ-লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ডাদেশ
আগামী সাত দিনের মধ্যে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামি ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীর মৃত্যুদন্ডাদেশ হাইকোর্টে যাবে। কক্সবাজারের সিনিয়র আইনজীবী ও সিনহা হত্যা মামলার বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, কোন ব্যক্তি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত হলে আদালতের নিয়ম অনুযায়ী মামলার রায় হওয়ার সাত দিনের মধ্যে সমস্ত নথি, কেস ডায়েরি, সাক্ষীপ্রমাণাধীসহ কাগজপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এ সময় ‘লালসালু’ দিয়ে বিশেষ ধরনের প্যাকেট করে এসব কাগজ পত্র হাইকোর্টে পাঠাতে হয়। একারণে নিয়মানুযায়ী সিনহা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীর মামলার রায়ের কপিও সেভাবে হাইকোর্টে যেতে পারে বলে।
এডভোকেট জাহাঙ্গীর বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির আদেশ হাইকোর্টকে অবহিত করতে হয়। হাইকোর্টকে অবহিত না করা পর্যন্ত কার্যকর হবে না। এছাড়াও আসামি পক্ষ তো আপিল করতে পারে। মামলায় সন্তুষ্ট না হলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার এখতিয়ার সবার রয়েছে।’
৩১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামি প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে কনডেম সেলে রাখা হচ্ছে। খাবার থেকে শুরু করে সকল সুযোগ-সুবিধা জেল কোড অনুযায়ী হবে বলে জানিয়েছে কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার নেছার আলম।
আরও পড়ুন: সিনহা হত্যা: সাবেক ওসি প্রদীপ, লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড, ৬ জনের যাবজ্জীবন
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বিকালে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক (বরখাস্ত) লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় আদালত। এছাড়াও ছয় আসামি এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাগর দেব, রুবেল শর্মা, পুলিশের সোর্স নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দীনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। এর মধ্যে চারজন কনস্টেবল সাগর দেব, পুলিশের সোর্স নুরুল আমিন, মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিনকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা দেয়া হয়। অনাদায়ে ছয় মাসের জেল দেয়া হয়। এছাড়াও এপিবিএন’র এসআই শাহজাহান আলী, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আব্দুল্লাহ, পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুনকে খালাস দেন আদালত। সন্ধ্যায় পুলিশ ভ্যানে করে কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হয় তাদের।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজারের ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্যচিত্র নির্মাণের শুটিং শেষে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে রিসোর্টে ফেরার পথে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানা। ঘটনার পাঁচদিন পর ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে হত্যা মামলা করেন নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। আসামি করা হয় প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলীসহ পুলিশের ৯ সদস্যকে। টানা চার মাস তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে র্যাব। দেড় বছরে এ মামলার রায় দেয়া হলো।
আরও পড়ুন: সিনহা হত্যা মামলার রায় পড়া শুরু
কুষ্টিয়ায় হত্যা মামলায় একজনের মৃত্যুদণ্ড
কুষ্টিয়া, ২৪ সেপ্টেম্বর (ইউএনবি)- কুষ্টিয়ায় আব্দুল্লাহ হোসেন হত্যা মামলায় এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।