মিয়ানমার
কক্সবাজারে মানবপাচারকারী চক্রের ৫ সদস্য আটক
কক্সবাজারে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দায়ে ১৯ মিয়ানমারের নাগরিক ও পাঁচ বাংলাদেশি মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যকে আটক করেছে টেকনাফ থানা পুলিশ।
শুক্রবার (২৬ মে) রাত ১১টা ১০ মিনিটের দিকে টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়ার আমিন শরীফের বাড়ি থেকে তাদের আটক করা হয়। ১৯ জনের মধ্যে ছিল ছয়জন নারী, ছয়জন পুরুষ ও সাত শিশু। এর আগে তারা টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে এদেশে প্রবেশ করে।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে ২ জন আটক, ১৩ লাখ টাকার গাঁজা জব্দ
আটক পাঁচ মানবপাচারকারী হলেন- টেকনাফ নাইট্যংপাড়ার সেলিমের ছেলে জাহিদ (৩০), মো. হাশেমের ছেলে জামাল (৩৮), আমিন শরীফের স্ত্রী হাজেরা (৫০) ও বরইতলীর আলী জোহরের ছেলে ইউনুছ (২৪) এবং মোহাম্মদ শাহ’র ছেলে দ্বীন ইসলাম।
ওসি জানান, শুক্রবার রাতে গোপন সংবাদে ভিত্তিতে টেকনাফ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড নাইট্যংপাড়ার আমিন শরীফের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ১৯ জন মিয়ানমারের নাগরিককে চিহ্নিত করা হয়।
তিনি আরও বলেন যে এ ঘটনায় জড়িত পাঁচ মানবপাচারকারীকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে জাল রুপি ও নোট তৈরির সরঞ্জাম জব্দ, আটক ১
রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে ওআইসি সদস্যদের দায়িত্ব নিতে হবে: মোমেন
বাংলাদেশ বলেছে, সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী- রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে ওআইসি সদস্য দেশগুলোকে অবশ্যই সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব ভাগ করে নিতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহিতার জন্য ওআইসি অ্যাডহক মন্ত্রী পর্যায়ের কমিটির উন্মুক্ত বৈঠকে এই আহ্বান জানান।
শুক্রবার (১৭ মার্চ) মৌরিতানিয়ার রাজধানী নোয়াকচটতে ৪৯তম ওআইসি ফরেন কাউন্সিলের মন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য মিয়ানমারকে জবাবদিহি করতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার অবস্থার সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরেন।
শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর স্বেচ্ছায় অবদানের অবস্থা এবং মামলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তহবিলের প্রয়োজনীয়তার সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়েছে।
মোমেন আন্তঃদেশীয় আর্থ-সামাজিক বিপর্যয়, বিশেষ করে অনিশ্চিত ভবিষ্যত সহ হাজার হাজার কিশোর ও যুবকদের ধ্বংস হওয়া এড়াতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন।
গাম্বিয়া ও ওআইসিকে ধন্যবাদ জানাতে এবং আইনি পদক্ষেপে সদয় সমর্থনের জন্য রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার প্রদানে মামলার গতি নিশ্চিত করার গুরুত্বের উপর আলোকপাত করেন তিনি।
আরও পড়ুন: রিয়াদে জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপিত
তিনি মামলার আইনি খরচে স্বেচ্ছায় অবদান রেখে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে ভার ভাগাভাগি করার আহ্বান জানান।
বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সৌদি আরব, তুর্কি, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ইরান, মিশর, পাকিস্তান ও গাম্বিয়া।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যামেরুন ও মৌরিতানিয়ার প্রতিপক্ষের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
উভয় দেশ বাংলাদেশের দ্রুত ও ধারাবাহিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং আশা প্রকাশ করে যে কৃষি, মৎস্য, বাণিজ্য, শিক্ষা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সুযোগ ঘটবে।
মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিবের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি।
মোমেন ১৬-১৭ মার্চ মৌরিতানিয়ার নোয়াকচটতে অনুষ্ঠিত ৪৯তম ওআইসি কাউন্সিল অব ফরেন মিনিস্টারস (সিএফএম)-এ বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
আরও পড়ুন: লস এঞ্জেলেসে বঙ্গবন্ধুর ১০৩তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে কাজ চালিয়ে যাবে জাপান
বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তার প্রথম সরকারি সফরে এসে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে জাপানের কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
এ সংক্রান্ত তৎপরতা চলমান দেখে রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এটাই তার প্রথম সফর এবং বর্তমান পরিস্থিতি তিনি নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিক্ষাকেন্দ্রের উদ্বোধন করলেন তুর্কি রাষ্ট্রদূত
রোহিঙ্গাদের শীতবস্ত্র উপহার ইরানের
মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের শীতবস্ত্র উপহার দিয়েছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান।
শীতের প্রকোপ থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষায় এ উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের স্বাধীনতার হীরক জয়ন্তীতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত বাংলাদেশের
গত সপ্তাহে ইরানের একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজরের উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের চার নম্বর ক্যাম্পে এ শীতবস্ত্র বিতরণ করে।
এই প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে বলা হয় বাংলাদেশ আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি ইরানের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
এছাড়া রোহিঙ্গারা ২০১৭ সালের আগস্টে বৃহৎ আকারে সঙ্কটে পড়ে। এরপর থেকেই রাষ্ট্রবিহীন এসব মানুষের প্রতি ইরানের সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিক্ষাকেন্দ্রের উদ্বোধন করলেন তুর্কি রাষ্ট্রদূত
ঘুমধুম সীমান্তে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে মিয়ানমার বিজিপি’র সঙ্গে কুশালাদি বিনিময়
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্যগণ। এসময়, ঘুমধুম ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজের কাছে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সঙ্গে কুশালাদি বিনিময়সহ মিষ্টি বিতরণ করেন।
শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল ১১টা থেকে ১২টা ৩০মিনিট পর্যন্ত বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্যগণ ৩৪ বিজিবি’র অধীনস্থ সীমান্ত এলাকাটি পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন: বেনাপোল সীমান্তে বিজিবি বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত
পরিদর্শনকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদের (ঢাকা-২০ সংসদ সদস্য) সঙ্গে মো. হাবিবুর রহমান (বগুড়া-৫ সংসদ সদস্য), শামসুল আলম দুদু (জয়পুরহাট-১ সংসদ সদস্য), পীর ফজলুর রহমান (সুনামগঞ্জ-৪ সংসদ সদস্য), নূর মোহাম্মদসহ (কিশোরগঞ্জ-২ সংসদ সদস্য) কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজম-উজ সাকিব ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিজিবি’র মহাপরিচালক এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ঘুমধুম বিওপি পরিদর্শনের সময় দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ এবং সৈনিকদের সঙ্গে কুশালাদি বিনিময় করেন।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় সীমানা পেরিয়ে দুই যুবকের ভারতে প্রবেশ, ফিরিয়ে আনল বিজিবি
কক্সবাজারে ৫.৬ কোটি টাকার মাদক উদ্ধার: বিজিবি
মিয়ানমারে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত মনোয়ার হোসেন
মিয়ানমারে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মো. মনোয়ার হোসেন।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তিনি বিদায়ী রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরীর স্থলাভিষিক্ত হবেন।
মনোয়ার হোসেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২০তম ব্যাচে পররাষ্ট্র ক্যাডার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন।
বর্তমানে তিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি ২০০১ সালে সার্ভিসে যুক্ত হয়ে ওয়াশিংটন ডিসি ও সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ মিশনসহ নানা দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাস্থ্য নীতি, পরিকল্পনা ও অর্থায়ন বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং সিঙ্গাপুরের নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে জনস্বাস্থ্য যোগাযোগে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
আরও পড়ুন: আশিয়ান: বৈঠকের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য না থাকার ঘোষণা মিয়ানমারের
‘আমরা ফিরে আসব’ লিখে কি সতর্কতা দিচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী!
সীমান্তে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার থেকে ব্যাপক গোলা বর্ষণ
টেকনাফে বিজিবি-বিজিপির মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত
সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী পুলিশের (বিজিপি) মধ্যে এক পতাকা বৈঠক অনুষ্টিত হয়েছে। রবিবার সকাল ১০ টায় টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাট সংলগ্ন বিজিবির রেস্ট হাউজে অনুষ্ঠিত হয় এই বৈঠক। টানা ৫ ঘন্টার পতাকা বৈঠকটি শেষ হয় বিকাল ৩ টায়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্তে মিয়ানমারের গোলা বাংলাদেশ এসে পড়া এবং আকাশ সীমা লঙ্ঘনের ঘটনায় বৈঠকে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ভবিষ্যতে এ রূপ ঘটনা ঘটবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ।
বৈঠক শেষে বিকাল সাড়ে ৪ টায় টেকনাফে বিজিবি ২ ব্যাটালিয়নে অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার বলেন, বৈঠকের শুরুতে বিজিবি সীমান্তে গোলাগুলির বিষয়ে আলোচনা করেন। সম্প্রতি একাধিকবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গোলা এসে পড়া ও মিয়ানমারের হেলিকপ্টার আকাশ সীমা লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানালে বিজিপির পক্ষে এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
আরও পড়ুন: আশিয়ান: বৈঠকের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য না থাকার ঘোষণা মিয়ানমারের
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এ রূপ ঘটনা আর ঘটবে না বলে প্রতিশ্রুত দিয়েছে মিয়ানমার।
তিনি আরও জানান, একই সঙ্গে সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি-বিজিপি এক সঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। বৈঠকে অনুপ্রবেশ রোধ, মাদক চোরাচালন বন্ধ করতে কাজ করার জন্য উভয় পক্ষে আলোচনা হয়েছে।
বিজিবি অধিনায়ক জানান, বৈঠকে বিজিপির পক্ষে বলা হয়েছে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদি সন্ত্রাসী গোষ্ঠি বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে সীমান্তে নানা অপরাধ করছে। বিজিবির পক্ষ থেকে এ ঘটনার অস্বীকার করা হয়।
বিজিবির পক্ষে জানানো হয়, কখনও কোন সময় বাংলাদেশের ভূখণ্ড কোন প্রকার সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতে দেয়া হয়নি। সন্ত্রাসীদের বাংলাদেশ কোন সহায়তা করেন না। ভবিষ্যতেও সন্ত্রাসীদের রোধে বাংলাদেশ কঠোর অবস্থানে থাকবে।
প্রেস ব্রিফিং এ উপস্থিত বিজিবি কক্সবাজার সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ আজিজুর রউফ জানিয়েছেন, পতাকা বৈঠকটি নিয়মিত বৈঠকের একটি অংশ। গত তিন মাস ধরে মিয়ানমার অভ্যন্তরে চলমান ঘটনাকে কেন্দ্র করে সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে বৈঠক করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ে শুরু থেকে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে নানা পর্যায়ে যোগাযোগ ছিল। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিজিবির পক্ষ থেকে বিজিপির কাছে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়। এর প্রেক্ষিতে বিজিপি বৈঠকে বসতে রাজী হয়। এই বৈঠকে আন্তরিক পরিবেশে অনুষ্টিত হয়েছে।
তিনি জানান, রবিবার সকাল ৯ টায় টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিপির ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল টেকনাফ পৌঁছেন। এর পর শুরু হয় বৈঠক। সেখানে বিজিবির ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, বৈঠকে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার। বিজিপির পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন মিয়ানমারের ১১ বর্ডার গার্ড পুলিশের অধিনায়ক কর্নেল ইয়ে ওয়াই শো।
আরও পড়ুন: সীমান্তে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার থেকে ব্যাপক গোলা বর্ষণ
মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনায় আরাকান আর্মি ও আরসার ওপর দায় চাপাল মিয়ানমার
আশিয়ান: বৈঠকের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য না থাকার ঘোষণা মিয়ানমারের
দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা স্বীকার করেছেন যে মিয়ানমারে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের প্রচেষ্টা সফল হয়নি এবং তারা দেশটিতে সহিংসতা বন্ধে দৃঢ় সংকল্প বৃদ্ধিতে ঐক্যমত হয়েছে। দেশটিতে গত বছর একটি সামরিক অভ্যুণ্থানের কারণে সংকট তৈরি হয়েছে যা এই অঞ্চলের অস্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
রবিবার মিয়ানমারের কাচিনে সামরিক বিমান হামলা চালিয়ে নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর ৪০ জনেরও বেশি সদস্যকে হত্যা এবং জুলাই মাসে রাজনৈতিক বন্দীদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করাসহ সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সংস্থা (আশিয়ান) সদস্য দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে৷
বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় মিয়ানমারের ওপর এক বিশেষ বৈঠকে আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেছেন যে তাদের প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। গত বছরের এপ্রিলে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে গ্রুপটি পাঁচ দফা ঐকমত্যে পৌঁছেছে তার বাস্তবায়নকে শক্তিশালী করতে ‘জোরলো, বাস্তবসম্মত এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ’ গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পরপরই আসিয়ান অন্তর্ভুক্ত মিয়ানমারে শান্তি স্থাপনের ভূমিকা পালনের চেষ্টা করেছে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে স্কুলে হেলিকপ্টার হামলা, ৭ শিক্ষার্থীসহ নিহত ১৩
পাঁচ দফা ঐকমত্য অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ, সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে একটি সংলাপ, একজন আসিয়ান বিশেষ দূতের মধ্যস্থতা, মানবিক সহায়তার ব্যবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে দেখা করার জন্য বিশেষ দূতকে মিয়ানমার সফরের আহ্বান জানানো হয়েছে।
মিয়ানমার সরকার প্রাথমিকভাবে ঐকমত্যে সম্মত হলেও তারা এটি বাস্তবায়নে খুব কম চেষ্টা করে। মানবিক সাহায্য এবং আসিয়ানের দূত কম্বোডিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রাক সোখোনকে স্বল্প পরিসরে সফর করার অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু তাকে সু চির সাথে দেখা করার অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। সু চিকে গ্রেপ্তার করে বিভিন্ন অভিযোগে বিচার করা হচ্ছে। সমালোচকরা বলছেন রাজনীতি থেকে তাকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে এটি করা হয়েছে।
এসবের প্রতিক্রিয়ায় আসিয়ান জোট মিয়ানমার নেতাদের তাদের অফিসিয়াল বৈঠকে অংশ নিতে দেয়নি। যদিও কর্মরত পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা যোগ দিয়েছেন।
সর্বশেষ আশিয়ান বৈঠকের সভাপতিত্বকারী প্রাক সোখোন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বৈঠক থেকে বলা হয় যে, আসিয়ানের নিরুৎসাহিত হওয়া উচিত নয়, বরং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করতে মিয়ানমারকে সাহায্য করতে আশিয়ান আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি বলেছেন, কিছু ক্ষেত্রে ঐকমত্য বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় মন্ত্রীরা তাদের উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন ‘অগ্রগতির পরিবর্তে পরিস্থিতির অবনতি এবং অবনতি হচ্ছে বলেও বৈঠকে বলা হয়।
মারসুদি আরও বলেন, ‘আবার সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।’ ‘সহিংসতা বন্ধ না করলে এই রাজনৈতিক সংকটের সমাধানের কোনও অনুকূল পরিস্থিতি থাকবে না।’
আরও পড়ুন: ‘আমরা ফিরে আসব’ লিখে কি সতর্কতা দিচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী!
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতিতে বলেছে যে এটি ‘বৈঠকের ফলাফলের দ্বারা তারা প্রভাাবিত হবে না। কারণ বৈঠকে মিয়ানমারের উপস্থিতি ছাড়াই আসিয়ানের অন্য নয় দেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা জোর দিয়েছে যে, মিয়ানমারের সামরিক সরকার আসিয়ানের বিশেষ দূতকে সহযোগিতা করে। জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালানোর পাশাপাশি মানবিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে পাঁচ দফা রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করছে।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকটি ১১ থেকে ১৩ নভেম্বর আসিয়ানের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনের আগে অনুষ্ঠিত হলো। আসিয়ানের শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনায় থাকবে মিয়ানমার সংকট। এই সমস্যাটি গ্রুপের ঐক্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে। আশিয়ান সদস্যরা ঐতিহ্যগতভাবে একে অপরের সমালোচনা করা এড়িয়ে চলে। তবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত সহিংসতাকে ব্যাপকভাবে দেখা হয়। একটি ভূ-রাজনৈতিক এবং মানবিক জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় গোষ্ঠীটির দুর্বলতা প্রকাশ করে যা তাদের সকলকে প্রভাবিত করতে পারে।
ক্রমবর্ধমান শরণার্থী মিয়ানমার ছেড়ে পুরো অঞ্চল জুড়ে আশ্রয় খুঁজছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্রুপ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে, সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে আনুমানিক সাত লাখ মানুষ প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে গেছে। সংস্থাটি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় নেতাদের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে য, এসব জনগণকে যেন ওইসব দেশের সরকারগুলো মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে বাধ্য না করে।
এই সংস্থাটির গবেষক শায়না বাউচনার বলছেন, ‘জান্তার সহিংসতা এবং নিপীড়ন থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের রক্ষা করার পরিবর্তে আঞ্চলিক নেতারা মিয়ানমারের শরণার্থী এবং অন্যান্য নাগরিকদের ক্ষতির পথে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য করছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ মিয়ানমারে নির্বাসন ত্বরান্বিত করেছে, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাকে তাদের আশ্রয়ের দাবিগুলো অবজ্ঞা করে গত এপ্রিল থেকে দুই হাজার জনেরও বেশি লোককে ফিরিয়ে দিয়েছে। থাই কর্তৃপক্ষ আশ্রয়প্রার্থীদের তাদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা যাচাই না করেই মিয়ানমারের সীমান্তে ফিরিয়ে দিয়েছে।
আসিয়ান গঠিত হয়েছে- ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামকে নিয়ে।
আরও পড়ুন: সীমান্তে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার থেকে ব্যাপক গোলা বর্ষণ
‘আমরা ফিরে আসব’ লিখে কি সতর্কতা দিচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী!
মিয়ানমারের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর মধ্য মিয়ানমারে তার শিরশ্ছেদ করা দেহ বিভৎসভাবে প্রদর্শনের জন্য রেখে দেয়া হয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বৃহস্পতিবার বলেছেন, সেনাবাহিনী সামরিক শাসনের বিরোধিতাকে দমনের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করা অনেকগুলো অপকর্মের সর্বশেষ ঘটনা এটি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং গ্রামীণ ম্যাগওয়ে অঞ্চলের তাউং মিন্ট গ্রামে তোলা ছবিতে দেখা যায়, ৪৬ বছর বয়সী স তুন মো-এর মাথাবিহীন দেহটি স্কুলের বন্ধ গেটের সামনে মাটিতে ফেলে রেখে তার মাথাটি ওপরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। গত বছর থেকে বন্ধ থাকা স্কুলটিও পুড়িয়ে দেয়া হয়।
সামরিক সরকার বা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম কেউই এই শিক্ষকের মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ করেনি।
গত বছর অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখলের পর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কয়েক হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। দুই হাজার ৩০০ এর বেশি বেসামরিক মানুষকে হত্যার জন্য দায়ী করা হয় এই জান্তা সরকারকে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস টুইটারে বলেছেন, ‘মিয়ানমার সামরিক শাসকদের দ্বারা ম্যাগওয়ে অঞ্চলে স্কুল শিক্ষককে গ্রেফতারের পর শিরোচ্ছেদ করে বিকৃতভাবে প্রকাশ্যে আনার খবরে আমরা হতবাক।’ ‘শিক্ষককে হত্যা সহ সকল নৃশংস সহিংসতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কঠোর প্রতিক্রিয়া দাবি করেন তিনি।’
সেপ্টেম্বরে, উত্তর-মধ্য মায়ানমারের সাগাইং অঞ্চলে বৌদ্ধ বিহারের একটি স্কুলে হেলিকপ্টার হামলায় অন্তত সাতজন তরুণ ছাত্র নিহত হয়। সামরিক সরকার হামলার দায় অস্বীকার করেছে। জাতিসংঘ শিশু অধিকার কমিটি জুন মাসে বলেছে, সেনাবাহিনী দেশটির ক্ষমতা দখলের পর থেকে স্কুল ও শিক্ষা কর্মীদের ওপর ২৬০টি হামলার ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমার সব সময় একই দাবি করে: ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমার অশান্ত হয়েছে। নাগরিকরা দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছে। বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনী মারাত্মক শক্তি প্রয়োগ করেছিল।জান্তা বাহিনীর নিপীড়ন ব্যাপকভাবে সশস্ত্র প্রতিরোধের দিকে পরিচালিত করে। যা পরবর্তীতে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা এটিকে গৃহযুদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
দেশটির সেনাবাহিনী গ্রামাঞ্চলে বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করেছে। অভিযানকালে তারা গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া এবং লক্ষাধিক মানুষকে তাদের বাড়িঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়া, এমনকি আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় কোনও সংস্থাকে তাদের মানবিক সহায়তার সামান্য বা কোনও প্রবেশাধিকার দেয়নি।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে দীর্ঘদিন ধরেই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালত মনে করছে যে ২০১৭ সালে বিদ্রোহ বিরোধী অভিযানে সেখানে একটি নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছে। এতে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের প্রায় সাত লাখের বেশি সদস্যকে জীবন রক্ষার্থে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে।
নিহত শিক্ষক স টুন মো একজন প্রবীণ শিক্ষাবিদ ছিলেন।যিনি তার জন্মস্থান থিত নি নাউং গ্রামে দেশের গণতন্ত্রপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠিত একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেয়ার আগে সামরিক সরকার বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন।
সামরিক শাসনের বিরোধী একটি আন্ডারগ্রাউন্ড সংগঠন হলো জাতীয় ঐক্য সরকার। যারা নিজেকে দেশের বৈধ প্রশাসনিক সংস্থা হিসেবে দাবি করে। চলতি বছর দেশের কিছু অংশে একটি অন্তর্বর্তী শিক্ষা ব্যবস্থা হিসাবে স্কুলগুলোর একটি নেটওয়ার্ক খোলা হয়েছে। তারা বিশ্বাস করেছিল নিজেদের রক্ষা করতে এটির প্রতি অনুগত সশস্ত্র মিলিশিয়ারা যথেষ্ট শক্তিশালী।
স টুন মো তার গ্রামের স্কুলে এবং নিকটবর্তী অন্য একটি স্কুলে গণিত পড়াতেন এবং থিট নি নাউং-এর প্রশাসনের সাথে জড়িত ছিলেন, যেখানে তিনি তার পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। তিনি এর আগে ম্যাগওয়েতে একটি বেসরকারি স্কুলে ২০ বছর শিক্ষকতা করেছেন। স্কুলটি ম্যাগওয়ে নামেও পরিচিত।
বৃহস্পতিবার তার মৃত্যুতে দেরীতে একটি বিবৃতিতে এনইউজি-এর শিক্ষা শাখা শোক প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে তাকে এবং অন্যান্য নিহত শিক্ষকদের ‘বিপ্লবী নায়ক’ হিসেবে প্রশংসা করেছে এবং সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়া শিক্ষক ও ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
চলতি মাসে প্রায় ৯০ জন সরকারি সৈন্যের একটি বাহিনী অন্তত বেশ কয়েকটি গ্রাম্য এলাকায় অভিযান চালানোর সময় তার মৃত্যু ঘটে।
একজন গ্রামবাসী ফোনে দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে(এপি) জানিয়েছেন যে তিনি স টুন মো সহ প্রায় দুই ডজন গ্রামবাসীর মধ্যে ছিলেন যারা রবিবার সকাল সাড়ে নয়টায় একটি চিনাবাদাম খেতে একটি কুঁড়েঘরের পিছনে লুকিয়ে ছিলেন। যখন বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে 80 টিরও বেশি সশস্ত্র সৈন্যের একটি দল এসে পৌঁছায়। আকাশে তাদের সামরিক অস্ত্র দিয়ে গুলি করছিল এবং তারা গাইড হিসেবে বেসামরিক লোকদের নিয়োগ করে অভিযানে অংশ নেয়।
কর্তৃপক্ষের শাস্তি পাওয়ার আশঙ্কা এড়াতে গ্রামবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছিলেন। কারণ তারা সৈন্যদের হাতে ধরা পড়েছিল। তাদের ফোন এবং অন্যান্য জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করেছিল তারা। এবং একজন অফিসারের নির্দেশে দল থেকে তিনজনকে আলাদা করেছিল। সে সময় কেবলমাত্র টুন মো স'কে নিয়ে গিয়েছিল।
গ্রামবাসী বলেছিলেন, ‘সে সময় আমাদের মাথা নত ছিল এবং আমরা তাদের দিকে তাকানোর সাহস করিনি। পরে একজন সৈন্য তাকে ডাকল এসো।’ ‘ মোটাসোটা এসো, আমাদের অনুসরণ কর,’ এবং তাকে নিয়ে গেল। সৈন্যরা তার সঙ্গে নম্র আচরণ করেছিল, তাই আমরা ভাবিনি যে এটি ঘটবে’।
তিনি বলেন, স তুন মোকে থিট নি নাউং থেকে এক কিলোমিটার (প্রায় এক মাইল) উত্তরে তাউং মিন্ট গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরের দিন তাকে সেখানে হত্যা করা হয়।
গ্রামবাসী আরও বলেন, ‘সোমবার সকালে জানতে পারি তাকে হত্যা করা হয়েছে। একজন ভালো শিক্ষককে হারানো খুবই দুঃখজনক যার ওপর আমরা আমাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য নির্ভরশীল ছিলাম।’
তাউং মিন্ট গ্রামের আরেকজন গ্রামবাসী বলেছেন, সৈন্যরা চলে যাওয়ার পর সোমবার বেলা ১১টার দিকে তিনি স তুন মো-এর লাশ দেখতে পান।
তাউং মিন্টের গ্রামবাসী বলেছেন , ‘প্রথমে আমি আমার বন্ধুদের ডেকেছিলাম। তারপরে আমি শরীরের দিকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে তাকিয়েছিলাম। আমি অবিলম্বে জানতাম যে এটি শিক্ষক স তুন মো। তিনি গত কয়েক মাসে একজন স্কুল শিক্ষক হিসেবে আমাদের গ্রামে যেতেন। তাই আমি তার মুখ চিনতে পেরেছি।’ যিনি নিজের নিরাপত্তার জন্য নাম প্রকাশ না করতে বলেছিলেন।
তার বন্ধুর তোলা ফটোতে শিক্ষকের শরীর ও মাথা দেখা গেছে। সু চির ছবি সম্বলিত একটি পুরনো প্রচারণার পোস্টারে মৃতদেহের উরু ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
গ্রামবাসীদের মতে, তার ডান হাত থেকে বিচ্ছিন্ন আঙ্গুলগুলো তার উরুর মধ্যে রাখা হয়েছিল। একটি তিন আঙুলের স্যালুট হল একটি অঙ্গভঙ্গি যা দেশের আইন অমান্য আন্দোলন দ্বারা গৃহীত হয়েছে।, যা ‘দ্য হাঙ্গার গেমস’ সিরিজ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে।
রবিবার সৈন্যদের দ্বারা আংশিকভাবে পুড়িয়ে দেওয়া স্কুলের বাইরের দেওয়ালে একটি অশুভ সতর্কবাণীসহ গ্রাফিতি লেখা রয়েছে: ‘আমরা ফিরে আসব, তুমি (অপরাধী) যারা পালিয়েছিল।’
আরও পড়ুন: সীমান্তে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার থেকে ব্যাপক গোলা বর্ষণ
মিয়ানমারে স্কুলে হেলিকপ্টার হামলা, ৭ শিক্ষার্থীসহ নিহত ১৩
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: বেইজিংয়ের প্রচেষ্টার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইতে পারে ঢাকা
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের উপায় খুঁজে বের করার প্রচেষ্টার বিষয়ে বাংলাদেশ বৃহস্পতিবার চীনা পক্ষের কাছ থেকে সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে। যেখানে রোহিঙ্গা ইস্যুটি উত্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে।
চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ত্রিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার অধীনে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য একটি চুক্তি সই করে, কিন্তু প্রক্রিয়াটি স্থবির হয়ে আছে।
বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার ধারণাটি নিয়ে চার বছর আগে নিউইয়র্কে কয়েকটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য পদক্ষেপ নিতে পটভূমির পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হয়েছিল।
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত জিমিং ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তারা মিয়ানমারের পক্ষের সঙ্গে যেসব কথা বলেছেন তার ভিত্তিতে তারা ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ফলাফল’ তুলে ধরতে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন ‘আমি এখনই এটি প্রকাশ করতে যাচ্ছি না।’
মিয়ানমারের আশ্বাস সত্ত্বেও গত পাঁচ বছরে একজনকেও ফেরত নেয়া হয়নি। বাংলাদেশ কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে।
১৩ অক্টোবর চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন যে একটি নির্দিষ্ট দেশের একতরফা প্রচেষ্টা নয় বরং রোহিঙ্গা ইস্যুটির মূল বিষয় হচ্ছে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে আস্থা তৈরি করা ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়েই চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হওয়ায় আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহায়তার জন্য চীন কাজ করছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, যদিও মিয়ানমারের বর্তমান অভ্যন্তরীণ অবস্থা এখনও অনিশ্চয়তার সম্মুখীন তবুও ‘চীনের মধ্যস্থতায়’ উভয় পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়নি এবং প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমারের বর্তমান কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে।
এমতাবস্থায় তিনি বলেন, চীনের পক্ষ আশা করে যে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার একই দিকে কাজ করতে পারে যাতে প্রত্যাবাসন তাড়াতাড়ি শুরু হয়।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুন ...
১৭ অক্টোবর মোমেন বলেছিলেন যে রোহিঙ্গাদের আদিস্থান ‘রাখাইন রাজ্যে’ তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের ‘প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা উচিৎ’।
তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের ফেরত পাঠাতে প্রস্তুত। মিয়ানমারের উচিৎ তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। তাদের এগিয়ে আসা উচিৎ এবং তাদের কাজ করা উচিৎ।’
একইসঙ্গে মোমেন সেইসব দেশগুলোর সমালোচনা করেন, যারা মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কথা বললেও তাদের সঙ্গে ‘স্বাভাবিক ব্যবসা’ করছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। আপনি যদি সত্যিকার অর্থে মানবাধিকারকে মূল্য দেন, তবে আপনাকে এটি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।’
মোমেন বলেন, মিয়ানমার তাদের যাচাই-বাছাই শেষে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে এবং আশ্বস্ত করেছে যে তারা সেখানে শরণার্থীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেবে।
তিনি বলেন, ‘তারা নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি শর্তারোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।’ কিন্তু সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো একজন রোহিঙ্গাও ফিরতে পারেনি।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেখানে ইচ্ছা আছে, সেখানে সমস্যা সত্ত্বেও উপায় আছে।
আরও পড়ুন: ভাসানচরে পৌঁছেছে আরও ৯৬৩ রোহিঙ্গা