পানি উন্নয়ন বোর্ড
সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সিলেট জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কুশিয়ারা ছাড়া অধিকাংশ নদ-নদীর পানি কমেছে।
তবে কুশিয়ারার পানি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বন্যাদুর্গত মানুষের দুর্ভোগও। বিশেষ করে এ নদী তীরবর্তী এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে থাকা মানুষের দিন কাটছে চরম উৎকন্ঠায়। কবে ঘরে ফেরা সম্ভব হবে, সে অপেক্ষায় আছেন তারা।
কানাইঘাট পয়েন্টে রবিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমার পানি বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সোমবার একই সময়ে তা ছিল ৩৪ সেন্টিমিটার ওপরে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ পয়েন্টে পানি কমেছে প্রায় ৮ সেন্টিমিটার।
আরও পড়ুন: বন্যায় লণ্ডভণ্ড সিলেট-ছাতক রেলপথ
সিলেট পয়েন্টে সুরমা রবিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বইছিল বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। সোমবার একই সমযে তা ছিল ৩৫ সেন্টিমিটারের নিচে। এ পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় পানি কমেছে ৭ সেন্টিমিটার।
এদিকে কুশিয়ারার পানি কমছেই না। রবিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমলশিদ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বইছিল বিপদসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। আর সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এই পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বইছিল বিপদসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। ২৪ ঘণ্টায় এ পয়েন্টে পানি বেড়েছে ১৮ সেন্টিমিটার।
রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত শেওলায় কুশিয়ারার পানি বইছিল বিপদসীমার শূণ্য দশমিক ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। আর সোমবার বিকাল তিনটা পর্যন্ত বইছিল ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। এ সময়ে পানি বেড়েছে প্রায় ১২ সেন্টিমিটার।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, সিলেটের নদীগুলোর পানি সুনামগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এবং সেখানে পানির উচ্চতা এখনো অনেক বেশি থাকায় কিছুটা সময় লাগছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা: ক্ষতিগ্রস্ত ৫ হাজার পরিবারকে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ
বন্যা: সিলেটে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এএফডব্লিউসি) জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আরেক দফা বন্যার আশঙ্কা
বন্যায় বিধ্বস্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষ এখনো বেঁচে থাকার জন্য হিমশিম খাচ্ছেন। এমন সময়ে আগামী কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে এই অঞ্চলে আরেক দফা বন্যার পূর্বাভাস দিচ্ছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, আগামী কয়েকদিন সিলেট বিভাগে ভারী থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, ‘ভারতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে উজান থেকে আসা পানি সিলেট অঞ্চলকে প্লাবিত করতে পারে।’
এছাড়া বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (বিডব্লিউডিবি) জানিয়েছে, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম ও হিমালয় পাদ্দেশীয় পশ্চিমবঙ্গের (জলপাইগুড়ি, সিকিম) বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলাসহ উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের নিচু এলাকার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে বলে সর্বশেষ সতর্কবার্তায় জানিয়েছে সংস্থাটি।
আরও পড়ুন: বন্যায় আরও একজনের মৃত্যু, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮৮
তবে স্বাধীন আবহাওয়া গবেষণা দল বাংলাদেশ ওয়েদার অবসেরভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) জানিয়েছে, জুলাইয়ের মাঝামাঝি পরে বন্যা পরিস্থিতির আর অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর ফলে সুরমা, জাদুকাটা, চিলাই, খাসিয়ামারা, চেলাসহ জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বুধবার দুপুরে সুরমা নদীর পানি ছাতক উপজেলায় বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার এবং দিরাই উপজেলায় বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তবে সুনামগঞ্জ শহরে নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যায় ঘরবন্দী সাড়ে ৪ লাখ শিক্ষার্থী
গত দুই দিনে সুরমা নদীর পানি ২২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও জানায় সংস্থাটি।
এদিকে সিলেট জেলায় মঙ্গলবার সকালে ও রাতে বৃষ্টি হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
প্রায় দুই সপ্তাহ পর সিলেটের অধিকাংশ এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেছে। তবে সিলেটের বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, ফেঞ্চুগঞ্জ, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে।
এসব এলাকার বাসিন্দারা এখন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
দুই দফা বন্যায় ইতিমধ্যে বোরো ও আমন ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি কৃষি, মৎস্য ও পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
গত ৪৮ ঘণ্টায় কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেটের কিছু অংশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, শুক্রবার সকালে কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুশিয়ারার পানি বাড়ায় জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, ওসমানীনগর, বিশ্বনাথ, দক্ষিণ সুরমা, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, কুলাউড়া, রাজনগর, জুড়ি, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরসহ নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে সিলেট নগরীসহ জেলার অনেক এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদীর পানি কমলেও কুশিয়ারা সংলগ্ন এলাকাগুলোতে বাড়ছে পানি।
ভারত থেকে প্রবাহিত নদ-নদীর প্রবাহ ও মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি ও সিলেটে অতি ভারী বৃষ্টির কারণে এ অঞ্চলে বন্যার ভয়াল রূপ। বন্যায় ৫০ লাখ মানুষ পানিবন্দী ছিলেন।
গত চারদিন ধরে ধীরে পানি কমতে শুরু করেছে। সুরমা নদীর পানি কমলেও এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, গত তিন দিন বৃষ্টি না হলেও কুশিয়ারা অববাহিকতায় পানি বাড়ছে।
সুরমা নদীর পানি কমতে থাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ ও সিলেট-ভোলাগঞ্জ মহাসড়ক থেকে পানি নেমেছে। শুরু হয়েছে যান চলাচল। কিন্তু, সড়ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। কিছু উপজেলার সড়কেও পানি কমেছে।
পড়ুন: পদ্মায় প্রবল স্রোত: পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া ত্রাণসামগ্রী বিভিন্ন ওয়ার্ডে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
এদিকে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বন্যার পানির স্রোতে ভেসে গেছেন সানু মিয়া (৬৫) নামের এক বৃদ্ধ। শুক্রবার (২৪ জুন) সকাল ১০টা পর্যন্ত তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, বিষয়টি শুনেছি। পুলিশ উদ্ধার অভিযানে কাজ করছে।
সিলেট জুড়ে বন্যার্তদের এক হাজারের বেশি আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ৪৮ জনের প্রাণহানির হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ
বরিশালে ৫ নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে
বরিশাল বিভাগের পাঁচ নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পূর্ণিমার প্রভাব ও চন্দ্রগ্রহণের কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তা বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্ভেয়ার আহসান আলম জানান, ভোলা খেয়াঘাট এলাকার তেঁতুলিয়া নদীর পানি বিপদসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, দৌলতখান উপজেলার সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি তিন সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, তজুমদ্দিন উপজেলার সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি ৪১ সেন্টিমিটার, বরগুনা জেলার বিশখালী নদীর পানি সাত সেন্টিমিটার ও পাথরঘাটা উপজেলার বিষখালী নদীর পানি ছয় সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বিপদসীমার নিচে নেমে গেলে এসব এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বর্ষা মৌসুমে বিভাগের মোট ২৩ নদীর পানি প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করা হয়। তবে বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ ৯টি নদীর পানি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় নিম্নাঞ্চলের অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: টানা বর্ষণে সিলেট-সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি
বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও নদীর পানি সংরক্ষণের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
পানি ভবন উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
রাজধানীর গ্রিনরোডে নবনির্মিত পানি ভবন বৃহস্পতিবার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সকাল ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এটি উদ্বোধন করবেন।
দেশে ১০০০ খাল খননের পরিকল্পনা রয়েছে: পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী
দেশে ৫০০ খাল খননের কাজ চলছে উল্লেখ করে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক জানিয়েছেন, বন্যার পানি যাতে দ্রুত সরে যায় সে জন্য আরও ৫০০ খাল খননের পরিকল্পনা রয়েছে।
পুনরায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড
পুনরায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।