ত্রাণ
বন্যা দুর্গত এলাকায় কি ধরনের খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রী পাঠাবেন
প্রতি বছর ঝড়ের সম্মুখীন হওয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য বন্যা মোকাবিলা করা বেশ স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপরেও ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কমছে না; বরং বেড়েই চলেছে। প্রতি বছর ঝড়-প্লাবনে প্রাণহানি যেন অগত্যা সাধারণ সংবাদে রূপ নিয়েছে। এ অবস্থার উন্নতির জন্য সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে প্রয়োজন তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক বন্যা দুর্গত এলাকায় কি ধরনের খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো যায়।
বন্যা দুর্গত এলাকায় বিতরণের জন্য খাদ্য সামগ্রী
বিশুদ্ধ খাবার পানি
ঝড় ও বন্যার সময় নদী, পুকুর এবং ঘরের ভেতরের পানি দূষিত হতে পারে। তাই আশ্রয়কেন্দ্রে সরবরাহকৃত পানি সঞ্চয় করা উত্তম। সাধারণত একজন ব্যক্তির পানীয় এবং খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিদিন গড়ে ন্যূনতম ১ গ্যালন এবং গোসল, দাঁত ব্রাশ ও থালা-বাসন ধোয়ার জন্য দেড় থেকে আড়াই গ্যালন পানি প্রয়োজন হয়৷ অবশ্য টিনজাত ফলের রস, কোমল পানীয় এবং শাকসবজির রস খাবার পানীয়’র কিছু অংশ পূরণ করতে পারে।
এই পানি সরবরাহের সময় টাইট-ফিটিং বা স্ক্রু টপ ঢাকনা সহ পরিষ্কার পাত্র ব্যবহার করা উচিত। হালকা ওজনের প্লাস্টিকের পাত্র এক্ষেত্রে ভালো কাজ দিতে পারে। যদি কাচের জগ বা বোতল ব্যবহার করা হয়, তাদের মধ্যে খবরের কাগজ বা অন্যান্য প্যাকিং সামগ্রী রেখে সেগুলোকে ভেঙ্গে যাওয়া থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। ধাতব পাত্রগুলোতে পানি রাখলে পানির স্বাদ বদলে যায়; আর মরিচা ধরতে পারে।
খুব জরুরি অবস্থায় বাড়ির গরম পানির ট্যাঙ্ক থেকে নিষ্কাশন করা পানি সংগ্রহ করা যেতে পারে। তবে এগুলোতে দূষণের সম্ভাবনা থাকে। তাই এই পানি সরবরাহের আগে বিশুদ্ধ করা উচিত।
প্রায় সময় অনেক বেশি পানি বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে ক্লোরিন ডাই অক্সাইড বা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ফিটকিরি ইত্যাদি নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। এতে করে প্লাবিত লোকজন নিজেরাই পানি বিশুদ্ধ করে নিতে পারবেন।
আরো পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প
যথাসম্ভব সংরক্ষণ করে রাখার মত বিশুদ্ধ খাবার
যে কোন দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় দুর্যোগ পরবর্তী খাবারের চাহিদা পূরণের জন্য মুড়ি, চিড়া, সবজি খিচুড়ি ইত্যাদি খাদ্য ত্রাণ হিসেবে দেয়া যেতে পারে। জরুরি অবস্থায় ত্রাণ হিসেবে সরবরাহের জন্য আগে প্রয়োজনীয় খাদ্যগুলো সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এখানে খাবারের পরিমাণ এবং ধরণ বিভিন্ন কারণের ওপর নির্ভর করে। যেমন- দুর্গত এলাকার পরিবারের সদস্যদের বয়স এবং বিশেষ খাদ্য চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি যেমন- শিশু, গর্ভবতী মহিলা, বয়স্ক। এছাড়াও তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং খাদ্য প্রস্তুত করার ক্ষমতার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।
স্বল্পমেয়াদী খাদ্য সরবরাহের জন্য সাধারণত পানীয় এবং বিশেষ খাদ্যের চাহিদা মেটাতে হয়। কাচের পাত্র ভেঙ্গে যেতে পারে। তাই জরুরি খাদ্য সরবরাহের জন্য টিনজাত পণ্যই সেরা। টিনজাত খাবারের মধ্যে রয়েছে-
শাকসবজি, মটরশুটি, ফল ও ফলের রস, স্যুপ, দুধ এবং বোতলজাত পানি। এছাড়াও তালিকাভুক্ত করা যেতে পারে চিনি, লবণের মতো প্রধান খাবার, বিস্কুট, চকলেট, উচ্চ শক্তির খাবার যেমন পিনাট বাটার, জেলি, বাদাম, শুকনো ফল, চাল এবং আলু। বাচ্চাদের জন্য সুজি, সেরেলাক নেয়া যেতে পারে।
টিনজাত খাবার প্রায় অনির্দিষ্টকালের জন্য রাখা যেতে পারে, যতক্ষণ না টিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে এগুলো সরবরাহের পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রে তা সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা যে কোনও সময় সেগুলো পোকামাকড় এবং ইঁদুরের মতো কীটপতঙ্গের পাশাপাশি বন্যার পানি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আরো পড়ুন ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: ভোলায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ বিপর্যস্ত
বন্যা দুর্গত এলাকায় বিতরণের জন্য অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী
খাবার ছাড়াও বন্যার্তদের টিকে থাকার জন্য আরও কিছু জিনিসের প্রয়োজন হয়। অতিবৃষ্টি অথবা বন্যার কারণে অনেক সময় অসহায় লোকদের এক কাপড়েই কাটিয়ে দিতে হয় দীর্ঘ দিন। তাই নারী-পুরুষ ও ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য আলাদাভাবে কাপড় নেয়া যেতে পারে। বন্যার পানি থেকে পা বাঁচানোর জন্য দেয়া যেতে পারে গামবুট। এ ব্যাপারে শিশু ও বয়স্কদের ওপর বিশেষ নজর দেয়া যেতে পারে।
স্বাস্থ্যবিধি সামগ্রীর মধ্যে সাবান, টুথব্রাশ ও টুথপেস্ট, মশা ও পোকা-মাকড় নিরোধক, মশা স্প্রেয়ার ত্রাণ হিসেবে সঙ্গে নেয়া যেতে পারে।
ওষুধপত্রের মধ্যে খাবার স্যালাইন, জ্বর ও মাথা ব্যথার ওষুধ, কাশির সিরাপ নেয়া যেতে পারে।
বিভিন্ন মাত্রার বর্ষণ থেকে বাঁচার জন্য ছাতা ও রেইন কোট উত্তম। কাপড়ের বিকল্প হিসেবে নয়; বরং আলাদা কাপড়ের তালিকায় এই সামগ্রী রাখা উচিত।
ঝড়ের মধ্যে বিদ্যুৎ বিভ্রাট খুব সাধারণ বিষয়। এই লোডশেডিং-এর কথা মাথায় রেখে মোমবাতি, টর্চ লাইট, ম্যাচ দেয়া যেতে পারে।
দুর্যোগ যখন বন্যা তখন এ থেকে বাঁচার জন্য নৌকাই একমাত্র ভরসা। তাই ত্রাণ হিসেবে নৌকার কথাও ভাবা যেতে পারে। স্থানীয় নৌকার দাম সাধারণত সাধ্যের বাইরে থাকে। তাই ত্রাণ হিসেবে কয়েকটি ইনফ্ল্যাটেবল বোট পেলে অসহায় মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচতে পারে। গ্যাসে ভরা এসব নৌকা ওজনে বেশ হালকা হয়; আর দামেও সাশ্রয়ী। ৩ জন মানুষের জায়গা সংকুলান হয় এই নৌকায়। ফলে সহজেই তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করতে পারেন।
আরো পড়ুন পাকিস্তানে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কারণ
শেষাংশ
বন্যা দুর্গত এলাকায় খাদ্য ও ত্রাণ সরবরাহ বির্পযস্ত জনজীবনকে কেবল টিকিয়েই রাখে না, এটি ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক দিক থেকে পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা বজায় রাখে। প্রতিবারের মত এবারো সিত্রাং ঘূর্ণিঝড়ে হাজার হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে বিভিন্ন রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে। এ সবকিছুর সঙ্গে লড়াই করে অসহায় মানুষ তীর্থের কাকের মত ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করে। তাই পর্যাপ্ত খাবার ও ওষুধসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী তাদের এই ক্ষতিগুলো অনেকাংশে পুষিয়ে দিতে পারে। প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসা উচিত এই দুর্গত মানুষদের সাহায্যার্থে।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ডব্লিউএফপিএ'র কান্ট্রি ডিটেক্টরের সাক্ষাৎ
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ডব্লিউএফপিএ'র কান্ট্রি ডিটেক্টর ডোমেনিকো স্কেল পিলি। রবিবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর অফিসকক্ষে সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে বলপূর্বক ব্যস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলোচনা হয়। ব্যস্তুচ্যুত এসকল মিয়ানমার নাগরিকের সহায়তা দানে বাংলাদেশ সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর মানবীয় পদক্ষেপের প্রশংসা করা হয়।
কক্সবাজারের ক্যাম্পসমূহে এ সকল নাগরিকদের আহার, সুপেয় পানি, চিকিৎসা, শিক্ষা, পয়:নিস্কাশন ইত্যাদি বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়।
আরও পড়ুন: জিএম কাদেরের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ, আলোচনায় রাজনীতি-অর্থনীতি
এছাড়া সিলেট বিভাগসহ সারাদেশে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি, উদ্ধার কার্যক্রম এবং আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত মানুষজনের নিকট শুকনো ও রান্না করা খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ ইত্যাদি বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।
প্রতিমন্ত্রী মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিক রোহিঙ্গাদের তাঁদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিবছর হাজার হাজার নতুন শিশু জন্ম নিচ্ছে, এতে প্রতিবছরই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ব জনমত গঠনে এগিয়ে আসতে প্রতিমন্ত্রী বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।
এ সময় মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ইইউ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে জিএম কাদেরের সাক্ষাৎ
মির্জা ফখরুলের সঙ্গে জাপানের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা
প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলার অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট সব দুর্যোগ কাটিয়ে বাংলাদেশ তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে।
তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ প্রতিরোধী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে নিজের অবস্থান করে নিয়েছে। আমরা দুর্যোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম…আমাদের এটি বজায় রাখতে হবে।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন দিবস ২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
আরও পড়ুন:অভিন্ন নদীর পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করুন, দুর্যোগ এড়ান: ফারাক্কা কমিটি
এসময় তিনি ২৫টি জেলায় ত্রাণ গুদাম ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র, ৮০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র এবং ৫০টি মুজিব কিল্লা বা বন্যার সময় জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য নির্মিত স্থাপনা উদ্বোধন করেন।
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিড়ে বিএনপির দায়িত্বহীনতার সমালোচনা করে, ভবিষ্যতে যাতে বিএনপির মতো শক্তি আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য দেশের জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন,তার দল যখন সংসদে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে বিএনপি সরকারের গাফিলতির কথা তুলে ধরেছিল, তখন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া দাবি করেছিলেন যে চট্টগ্রাম অঞ্চলে যে ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল তাতে খুব বেশি মানুষ মারা যায়নি।
শেখ হাসিনা বলেন,এ ধরনের মন্তব্য করে বিএনপি তাদের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ এড়াতে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
১৯৯০ সালের শেষ দিকে এইচএম এরশাদের পতনের পর একটি নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি দেশের ক্ষমতায় আসে এবং খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন।
১৯৯১ সালের এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আনুমানিক এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল এবং প্রায় এক কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। সামগ্রিক সম্পত্তির আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল বিলিয়ন ডলারে।
বিশেষজ্ঞরা জানান যে এটি এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা সবচেয়ে মারাত্মক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে একটি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সরকারের সাফল্য ও পদক্ষেপের প্রতি আলোকপাত করে তিনি বলেন,বাঙালি জাতিকে কেউ আর অবমূল্যায়ন করতে পারবে না।
তিনি ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী দল বিএনপি ও তার মিত্রদের রাজনৈতিক সহিংসতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগই নয়, বাংলাদেশ অগ্নিসংযোগের মতো মানবসৃষ্ট দুর্যোগেরও সম্মুখীন হয়।’
তিনি বলেন, দেশকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে কোনো কিছুই বাধা দিতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন,‘আমরা সব ধরণের দুর্যোগ মোকাবিলা করে আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাব – হোক সেটা প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ ডিজাইন করেছে এবং এটি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে।
তিনি বলেন, যে কোনো পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় তার সরকার সব সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সতর্ক থাকে। ‘রাস্তা,সেতু ও স্কুল নির্মাণের সময় আমরা বৃষ্টির পানি বা বন্যার পানির চ্যানেল করার প্রক্রিয়াটি অন্তর্ভুক্ত করা বিষয়েও সজাগ থাকি।’
তিনি আরও বলেন, পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে সরকার খাল-বিল ও অন্যান্য জলাশয় পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি নদীগুলো ড্রেজিং করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নদীভাঙন রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন,সরকার দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস,প্রস্তুতি, প্রতিক্রিয়া ও পুনরুদ্ধার ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫) প্রণয়ন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, সারাদেশে মোট চার হাজার ২০০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, ৪২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র এবং ৬৬টি ত্রাণ গোডাউন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র নির্মাণ করেছে তার সরকার।
এছাড়া সরকার প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ, অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী হওয়ার মতো কার্বন নিঃসরণ করে না বাংলাদেশ, তবুও আমাদের দেশটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
তিনি বলেন,উন্নত দেশগুলো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে জলবায়ু তহবিল প্রদানে অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে দুর্ভাগ্যজনক যে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো তাদের (উন্নত দেশের) প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী খুব কমই তহবিল পায়।
আসলে আমাদের নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষা করতে উপকূলীয় অঞ্চলে সবুজ এলাকা সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
দেশে ‘দুর্যোগের জন্য প্রাথমিক সতর্কতা, সবার জন্য পদক্ষেপ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন দিবস-২০২২ উদযাপিত হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. কামরুল হাসান।
অনুষ্ঠানে সাইক্লোন প্রিপারেডনেস প্রোগ্রামের (সিপিপি) আওতায় দুইজন সেরা স্বেচ্ছাসেবক- লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার জয়শ্রী রানী দাস এবং ভোলার লালমোহনের মো. জসিম উদ্দিনকে পুরস্কৃত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ডা. এনামুর রহমান তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
ভবিষ্যতে পুরস্কারপ্রাপ্তদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: বৈদেশিক আয় বৃদ্ধিতে কৃষিপণ্য বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
সামনের কঠিন দিনগুলো মোকাবিলা করার জন্য খাদ্য উৎপাদন বাড়ান: প্রধানমন্ত্রী
পাকিস্তানে বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১২শ’ ছাড়িয়েছে
পাকিস্তানের বন্যা কবলিত এলাকাগুলোর মানুষদের মাঝে জরুরি ভিত্তিতে বিমানে করে মানবিক সহায়তা বিশুদ্ধ খাবার সরবরাহ করার পরও মৃত্যু বেড়ে ১২শ’ ছাড়িয়েছে।
শুক্রবার দেশটির কর্মকর্তারা বলেন, বাস্তুচ্যুত পরিবার ও তাদের শিশুরা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিতে আছে।
বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বন্যায় প্রায় ৩০ লাখ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধার অভিযানে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করতে আরব আমিরাতের ৯টি বিমান ও উজবেকিস্তানের একটি বিমান এসেছে।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের আরও দুটি ত্রাণবাহী বিমান শুক্রবারের পর পাকিস্তানে পৌঁছাবে এবং বন্যা আক্রান্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণে তুরস্কের একটি ট্রেন পণ্যসামগ্রী নিয়ে পাকিস্তানের পথে রয়েছে।
ইতোমধ্যে তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বন্যায় নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিয়ো গুতরেসেসহ অনেক কর্মকর্তা বর্ষা পরবর্তী এই অস্বাভাবিক বন্যার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন। তিনি এই সপ্তাহের শুরুতে বিশ্বকে এই ভয়ানক সংকটের মুহূর্তে ‘সজাগ ভূমিকা’ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
শুক্রবার জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেন, জাতিসংঘের বুধবারের তহবিলের আবেদনের ফলাফল ‘খুবই উৎসাহব্যঞ্জক’ হলেও আরও সহযোগিতা প্রয়োজন।
পড়ুন: পাকিস্তানে বন্যা: ১৬ কোটি ডলারের জরুরি সহায়তার আবেদন জাতিসংঘের
ইউএনএইচসিআর এর মুখপাত্র ম্যাথিও সল্টমার্শ বলেন, বন্যার্তদের জন্য তারা খুব দ্রুতই তাবু, কম্বল, প্লাস্টিক শিট, বাকেট ও অন্যান্য গৃহস্থালি পণ্যসামগ্রী পাঠাবে।
তিনি বলেন, ‘দেশটিতে থাকা আমাদের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, মানুষ অকল্পনীয় ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে।’
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, বিমানে করে খাদ্যসামগ্রী, ওষুধ ও তাবু পাঠানো হয়েছে। দেশের বন্যা পরিস্থিতির কারণে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সংযুক্ত আরব আমিরাতের সফর স্থগিত করা হয়েছে।
এর আগে চীন, সৌদি আরব, কাতার, তুরস্ক, উজবেকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং অন্যান্য দেশ ত্রানসামগ্রী পাঠিয়েছে পাকিস্তানে। চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের বন্যা কবলিতদের জন্য তিন কোটি মার্কিন ডলার ত্রাণ সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
পড়ুন: পাকিস্তানে বন্যা: ৩ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
পাকিস্তান দাবি করছে, সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভারী বর্ষণ ও বন্যা হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অসিম ইফতেখার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিজ্ঞানীরা বলেছিল এই সংকট জলবায়ু পরিবর্তনের সতর্কতাকে বিশ্বাসযোগ্যতা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এটি কোন ষড়যন্ত্র নয়, এটি বাস্তবতা এবং আমাদের সচেতন হওয়া দরকার।’
সরকারের প্রাথমিক হিসাবে বন্যার এই ধ্বংসযজ্ঞে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যা: পাকিস্তানে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
গাইবান্ধায় বন্যার পানি কমলেও বেড়েছে রোগব্যাধি
একটু সাহায্যের আশায় বাড়ির সামনে কলাগাছের ভেলায় বসে থাকলেও গাইবান্ধার বন্যা কবলিত খরজানির চরের করিমন বেগমসহ অনেকের মিলছে না কোনো সহায়তা।
করিমন বেগম ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা কীভাবে বেঁচে আছি, আমরা কী খাচ্ছি তা দেখতে এখনও কেউ আসেনি।’
গাইবান্ধার চর উপজেলার বন্যা কবলিত মানুষের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে বন্যার পানির কারণে সৃষ্ট চর্মরোগ। ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগও উদ্বেগের বিষয়।
আর কোনো সমাধান না পেয়ে ওই এলাকার করিমন ও তার প্রতিবেশী হালিমা, মতিন কোবাজ্জামান, মিঠু মিয়াসহ আরও অনেকে জানান, ক্রমাগত চুলকানি থেকে কিছুটা উপশমের জন্য কেরোসিন তেলের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে লাগাচ্ছেন তারা।
আরও পড়ুন: বন্যা: আরও ২ জনের মৃত্যু, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮৪
করিমন বলেন, রাত দিন চুলকায়। পায়ে কেরোসিন তেলে হলুদ মেখে কষ্ট নিবারনের চেষ্টা করেন। রাতে ঘুম নেই, কখন সাত বছরের ছোট ছেলেটা পানিতে ভেসে যায় সেই ভয়ে। যেমনটা অন্য অনেক পরিবারের ক্ষেত্রে ঘটেছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্যা কবলিত অঞ্চলে পর্যাপ্ত সংখ্যক মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে কিন্তু করিমনরা এখনও সেই সহায়তা পান নি।
করিমন আরও বলেন, এ অঞ্চলে পানীয় জলের সংকট প্রকট। এমনকি এই পরিস্থিতিতেও দিনের বেলা নদীর ওপার থেকে পানীয় জল আনতে আমাদের নৌকা ভাড়া দিতে হয়।
গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার কিছুটা নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও রবিবার কিছুটা কমছে।
কামারজানীর চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, সুন্দরগঞ্জ,সাঘাটা,ফুলছড়ি ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার বেশ কয়েকদিন যাবৎ পানি বন্দি কামারজানি, মোল্লারচর, কাপাসিয়া, হরিপুর, ফজলুপুর, উড়িয়া, রতনপুর, ফুলছড়ি,গজারিয়া, এ্যাড়েন্ডাবাড়ি, কঞ্জিপাড়া, শ্রীপুর, তারাপুর, বেলকা সহ ২৫টি চর ইউনিয়নের বাসিন্দারা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্যার পানিতে আটকা পড়েছেন।
আরও পড়ুন: সিলেটে পানি নামায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান
তিনি বলেন, অনেকের ঘরে খাবার আছে। কিন্তু রান্না করার মতো জায়গা নাই। তাই পানিতে নেমে কলার ভেলায় চুলা রেখে তাতে রান্না করছেন। এক বেলার রান্না খাচ্ছেন তিন বেলায়। খাবার পানির তীব্র সংকটের পাশাপাশি কোনো টয়লেটও নেই।
কর্তৃপক্ষের মতে, জেলায় মোট ৬০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে তবে মাত্র ১২টিতে আশ্রয় নিতে পেরেছে মানুষ। কারণ অধিকাংশ কেন্দ্রই পানির নিচে অথবা নদী ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, অনেক লোক তাদের একমাত্র আয়ের উৎস, গবাদি পশু নিয়ে লড়াই করছে যা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে রাখা যাচ্ছে না।
জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এসএম ফয়েজ উদ্দিন জানান, এখন পর্যন্ত পুরুষ, নারী এবং শিশু সহ মাত্র ১৩৫ জন কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ১২৫ মেট্রিক টন চাল, ৬ লাখ টাকা ও শিশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে বন্যার্ত মানুষের সহায়তায় কনসার্ট সোমবার
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ
কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নদ-নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তা, ধরলাসহ অন্যান্য নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জানা গেছে, গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পানিবন্দি থাকার কারণে চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও শৌচাগারের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে অনেক এলাকার বন্যার্তরা। একই সঙ্গে গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যার্তদের সহায়তায় শাবি শিক্ষক সমিতির কার্যক্রম অব্যাহত
রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের নামা জয়কুমর গ্রামের এনছাফুল হক জানান, গো খাদ্যের অনেক দাম। তাই বৃষ্টির কারণে নষ্ট হওয়া খড় বাধ্য হয়ে গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো গোখাদ্য বিতরণ করা হয়নি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ৩২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ১৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত থাকায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এদিকে দুর্গম এলাকার অনেকেই ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করেছে। চাহিদার তুলনায় এখনও প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ায় সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ।
সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন জানান, তার ইউনিয়নে অন্তত পাঁচ হাজার দরিদ্র পরিবার পানিবন্দী হলেও এই পর্যন্ত ৯ মেট্রিক টন চাল পাওয়া গেছে। যা দিয়ে ৯০০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল সহায়তা দেয়া যাবে।
আরও পড়ুন: বন্যার্তদের সহায়তায় শাবি শিক্ষক সমিতির কার্যক্রম অব্যাহত
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে, ত্রাণের কোনো সমস্যা নেই। পর্যায়ক্রমে সবাই ত্রাণ পাবেন। জেলার বন্যার্তদের জন্য আরও ২০০ মেট্রিক টন চাল ও ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
তিনি জানান, এই নিয়ে জেলায় ৫৩৮ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য বাবদ ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ও পশু খাদ্য বাবদ ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ করা হয়েছে। যা বিতরণ করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রামে বন্যা: ত্রাণের জন্য পানিবন্দি মানুষের হাহাকার
কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকার দুই লাখের বেশি পানিবন্দি মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন।
ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপরে এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, জেলার ২৯৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ৬৫ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে।
এছাড়া বন্যার কারণে ২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সাতটি মাদরাসা ও একটি কলেজ বন্ধ রয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বানভাসিদের দুর্ভোগ বেড়েছে, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
এদিকে খাদ্য, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের অভাবে বন্যার্তদের দুর্ভোগ তীব্র হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ জানান, বন্যা কবলিত এলাকায় টিউবওয়েল স্থাপন ও পুরাতনগুলো মেরামতের পাশাপাশি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ ও অস্থায়ী টয়লেট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ত্রাণ নিয়ে হাহাকার
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে শনিবার দুপুরে ত্রাণ বিতরণ করতে যান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি স্থানীয় থানা বাজারে ত্রাণ বিতরণ শেষে ফিরে আসেন। এরপর ত্রাণ নিয়ে উপস্থিত বন্যার্ত লোকজনের মধ্যে কাড়াকাড়ির ঘটনা ঘটে।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনাতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। তবে এতে কেউ আহত হননি।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৫০ হাজার লোক পানিবন্দি থাকলেও মন্ত্রী যে ত্রাণ নিয়ে এসেছেন সেটি ছিল অপ্রতুল। মন্ত্রী চলে যাওয়ার পর ত্রাণ নিয়ে মানুষজনের মধ্যে কাড়াকাড়ি শুরু হয়।
আরও পড়ুন: করোনা: উপকূলীয় অঞ্চলে নৌবাহিনীর ত্রাণ বিতরণ
তারা জানান, মন্ত্রী দুপুরে থানা বাজার এলাকায় ৩০ জন মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। তখন ওখানে ত্রাণের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন কয়েকশ’মানুষ। মন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোম্পানীগঞ্জের ছয়টি ইউনিয়নে ১৩০টি ত্রাণের প্যাকেট বিতরণ করা হয়। বাকিরা ত্রাণ পেতে হাহাকার শুরু করে। এতে করে সেখানে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, আমরা যতই ত্রাণ দেই না কেন, তারপরও কিন্তু কম পড়বে। আমরা কোনো ইউনিয়নে ১০০ মণ চাল দিলে ১০০ জন পাবে, যদি ২০০ জন চলে আসে, তাহলে অর্ধেক করে সেটা দেয়া যায়, যদি খোলা চাল ও গম থাকে। কিন্তু প্যাকেট করা খাবার তো ভাগ করা যায় না। তাই যারা আগে থেকে তালিকাভুক্ত হয়েছে তাদেরকে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, কেউ যদি নির্দিষ্টভাবে দেখাতে পারে যে তালিকায় অনিয়ম হয়েছে, আমি কঠিন ব্যবস্থা নেব। আগে এরকম হয়েছে, কিন্তু এখন এই অপবাদ আমি মাথায় নেবো না। যেহেতু ত্রাণ পায় নাই, তাই গণ্ডগোল করেছে, এটা ফেয়ার গণ্ডগোল না, আনফেয়ার গণ্ডগোল।
আরও পড়ুন: মানিকগঞ্জে ১ হাজার পরিবারের মাঝে যুবলীগের ত্রাণ বিতরণ
ইমরান আহমদ বলেন, সরকারও যতই দিক না কেন, এরকম হবে আর এর মধ্যেই কিন্তু মানুষকে বুঝিয়ে বলতে হবে যে এখন পাননি, কিন্তু অবশ্যই আপনি পরবর্তীতে পাবেন। আলটিমেটলি ঘুরে ঘুরে সবার কাছেই যাবে এবং কেউই বাদ পড়বে না।
খুলনায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ‘এক টাকায় আহার’
খুলনায় অসহায় মানুষের জন্য শুরু হয়েছে এক টাকায় আহার বিতরণ কার্যক্রম। স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে মহানগরী ও জেলার তিনটি স্পটে বিতরণ করা হয়েছে এক টাকার আহার।
শুক্রবার রূপসার রাজাপুরের একটি বস্তিতে শতাধিক অসহায় মানুষকে এক টাকায় আহার বিতরণ করা হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রথম দিন জোড়া খাসি দিয়ে এক টাকার আহার বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। প্রতিদিন তাদের এ কার্যক্রম চলবে। পাশাপাশি অসহায় মানুষকে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।
আরও পড়ুনঃ বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ভাসমান হাসপাতালের যাত্রা শুরু
ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা জানায়, শুক্রবার ভাত ও মুরগির গোশত রান্না করে নগরীর জেলাখানা ঘাটের ওপারে রূপসা উপজেলার রাজাপুরের এক টাকায় শতাধিক হত দরিদ্র মানুষকে আহার দেওয়া হয়েছে। এদিন সবুরণনেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে ১০৫ জন অসহায় দুস্থ শিশুদের মধ্যে এক টাকার আহার বিতরণ করা হয়। এ সময় প্রতিটি শিশু এক টাকার বিনিময় এই খাদ্য গ্রহণ করে।
এর আগে বৃহস্পতিবার নগরীর ফুলবাড়িগেটে এ্যাজাক্স জুট মিল শ্রমিকদের শিশু ও দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা এলাকায় জোড়া খাসির গোশত ও ভাত দিয়ে এক টাকায় আহার কার্যক্রম শুরু করা হয়। ওই দিন ২৫০ জন শিশু ও বৃদ্ধদের খাবার বিতরণ করা হয়।
তারা বলেন, এক বেলার এই খাবার যেন অসহায় মানুষেরা ভিক্ষাবৃত্তি বলে মনে না করেন সেজন্য সবার কাছ থেকে এক টাকা নেয়া হচ্ছে। এক টাকায় এক প্যাকেট খাবার পেয়ে খুশিতে আত্মহারা দরিদ্র মানুষগুলো।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন খুলনা শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান সম্রাট বলেন, ১ আগস্ট নগরীর সোনাডাঙ্গা গোবরচাকা মোল্লাবাড়ি মোড়ের শিকদার প্লাজায় অফিস নিয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এখন থেকে খুলনা শাখার আওতায় প্রতিদিন এক টাকায় আহার বিতরণ করা হবে। শুধুমাত্র দরিদ্র, অসহায় ও বঞ্চিতদের এ খাবার দেয়া হবে। পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলবে। তবে বৃহস্পতিবার প্রথম জোড়া খাসি রান্না করে এক টাকায় আহার বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আজ দ্বিতীয় দিনের মতো জেলখানা ঘাটের নদীর ওপারে এক টাকায় আহার বিতরণ করা হয়। এছাড়া আজ আমরা সাতক্ষীরার গাবুরা ও কয়রার গেতেরঘেরীতে ত্রাণ বিতরণ করেছি।
তিনি বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল যেহেতু দুর্যোগ প্রবণ এলাকা। এখানে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিল। এখানকার উপকূল অঞ্চলের মানুষের ক্ষতি বেশি হয়। তাদের পাশে দাঁড়াতে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে। গত এক মাসে খুলনা বিভাগের যশোর, নড়াইল, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
কক্সবাজারে ৩৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টিকা দেয়া শুরু
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থিত ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মঙ্গলবার থেকে করোনার টিকা প্রদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
সকাল ১১টায় উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশন এ আনুষ্ঠানিকভাবে টিকা প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কমিশনার অতিরিক্ত সচিব শাহ রেজওয়ান হায়াত।
আরও পড়ুনঃ ঢাকার পথে সিনোফার্মের ১৭ লাখ টিকা
অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান, ইউএনএইচসিআর, আইওএমসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রথম দফায় ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে ৪৮ হাজার রোহিঙ্গাকে ৫৬টি কেন্দ্রে করোনা টিকা দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি একই সময়ে ক্যাম্পের মাঝি, মসজিদের ইমাম এবং টিকাদান কাজে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদেরও টিকা দেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ দুর্গম পাহাড়েও পৌঁছালো টিকা
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত জানান, ১০ আগস্ট বেলা ১১টা থেকে ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫৬টি কেন্দ্রে টিকা দেয়া হচ্ছে। প্রথম দফায় ৫৫ বছরের বেশি প্রায় ৪৮ হাজার রোহিঙ্গাকে টিকা দেয়া হচ্ছে। ৫৫ বছরের ঊর্ধ্ব ছাড়াও ক্যাম্পে টিকাদান কার্যক্রমে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবক, ক্যাম্পের মাঝি, মসজিদের ইমামসহ প্রায় ১৮ হাজার জনকে টিকা দেয়া হবে। টিকাদান কার্যক্রমে স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১৮৬টি টিম কাজ করছে।
আরও পড়ুনঃ বাসায় টিকা নেয়ার অভিযোগে আটক ২
তিনি বলেন, আগামী ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ক্যাম্পে এই টিকা প্রদান কার্যক্রম চলবে। মঙ্গলবার প্রথম দিন ৫৬টি টিকা দান কেন্দ্রে ৭ হাজার জন রোহিঙ্গাকে টিকা দেয়ার জন্য কার্ড দেয়া হয়েছে। টিকা দেয়ার জন্য আসা রোহিঙ্গারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই টিকা দিচ্ছে।