রোহিঙ্গা
রোহিঙ্গা সংকটের বাস্তবসম্মত সমাধানে নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই ভাবতে হবে: বিআইপিএসএস সভাপতি
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (বিআইপিএসএস) সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) মুনিরুজ্জামান বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা অর্থনৈতিক বোঝা বাড়ায়, তাই নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই চিন্তাভাবনা করতে হবে এবং বাস্তবসম্মত সমাধান তৈরি করতে হবে।
বিআইপিএসএস সভাপতি রোহিঙ্গা শরণার্থী আগমনের ঐতিহাসিক সময়সীমা নিয়ে আলোচনা করেন এবং উল্লেখ করেন যে এর কোনো শেষ নেই।
আরও পড়ুন: কসমস-বিআইপিএসএস গোলটেবিল: ইউক্রেন সংঘাতের বিরূপ প্রভাব কাটাতে বাংলাদেশকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে
তিনি বলেন, ‘তার কথায়, প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট: ভবিষ্যৎ পুনর্নির্মাণ’ শীর্ষক লেকচার ক্লাবের আয়োজন করে বিআইপিএসএস।
বিআইপিএসএস-এর সভাপতিরি বক্তব্য দিয়ে শুরু হয় এবং পরে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস-এর নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার মনজুর হাসান ওবিই পরিচালনা করেন।
ব্যারিস্টার মনজুর হাসান বিশ্বব্যাপী অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে তার বক্তব্য শুরু করেন।
তিনি শরণার্থী শিবির থেকে নারী ও মেয়েদের পাচার হওয়া, শরণার্থীদের জন্য তহবিল হ্রাস এবং সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের পরিবর্তিত বাস্তবতার মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন।
তিনি আসিয়ান এবং জাতিসংঘের (ইউএন) মতো আন্তঃসরকারি সংস্থাগুলোর সমালোচনা করেছিলেন।
মনজুর হাসানের কথায়, কফি আনান রিপোর্টেই এর সমাধান রয়েছে।
তার কথা ও চিন্তার মধ্যে রয়েছে আলোচনার মাধ্যমে শাসন, আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গি, রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রহীন কর্তাব্যক্তিদের সমন্বিত ভূমিকা এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্ক।
রাখাইনের কর্তাব্যক্তিরা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সমস্যাটি সেই অঞ্চল থেকেই উদ্ভূত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিদেশি ও অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক, অবসরপ্রাপ্ত বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: আইএমএফের কাছে ঋণ চাইলেও অর্থনীতির অবস্থা খারাপ নয়: অর্থমন্ত্রী
বেইল আউটের জন্য নয়, সতর্কতা হিসেবে আইএমএফের ঋণ নিচ্ছে ঢাকা: কায়কাউস
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যা
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ময়নারঘোনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে পালিয়ে গেলে হাসপাতালে নেয়ার পরে তার মৃত্যু হয়।
নিহত হাফেজ মাহবুব (২৭) উখিয়ার ময়নারঘোনা ১৯ নম্বর রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের ডি-৯ ব্লকের বাসিন্দা সৈয়দ আমিনের ছেলে।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে রোহিঙ্গা মাঝিকে গুলি করে হত্যা
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. আলী জানান, দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করার পর দ্রুত ক্যাম্পের এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে পরে উখিয়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জি-৭ ব্লকের কাছে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে। এছাড়া পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।
আরও পড়ুন: উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হেড মাঝিকে গুলি করে হত্যা
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বেচ্ছাসেবককে গুলি করে হত্যা
রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আওয়াজ তোলার আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বৃটিশ-বাংলাদেশি প্রবাসীসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়া জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য তাদের আওয়াজ তুলতে আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকালে যুক্তরাজ্যের ক্যামডেনের মেয়র নাসিম আলী ওবিই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সময় তিনি এ আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি সম্পর্কে মেয়রকে অবহিত করেন।
যুক্তরাজ্যে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রবাসীদের প্রশংসা করে উভয়েই ব্রিটিশ সমাজ ও অর্থনীতিতে এবং গত পাঁচ দশকে এই দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের সেতু হওয়ার জন্য তাদের অবদানের কথা স্মরণ করেন।
ক্যামডেনের মেয়র ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রবাসীদের, বিশেষ করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য একটি অনুষ্ঠানের পরামর্শ দেন।
তারা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে জি২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক: পার্শ্ব বৈঠক করবেন মোমেন
দূতাবাস চালু ও সম্পর্ক গভীর করতে আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায়
ঢাকায় মোমেনের সঙ্গে আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক সোমবার
রোহিঙ্গা ও স্বাগতিকদের জন্য আরও ২৬ মিলিয়ন ডলার সহায়তা ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
মিয়ানমারের সহিংসতায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী, এই অঞ্চলে চলমান সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং উদ্বাস্তুদের আতিথেয়তাকারী দেশীয় সম্প্রদায়ের জন্য আরও প্রায় দুই কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার অতিরিক্ত মানবিক সহায়তা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তররের মুখপাত্র নেড প্রাইস নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘২০১৭ সালে যখন সাত লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজারে নিরাপত্তার জন্য পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল, সেই বছরের আগস্ট থেকে এই নতুন অর্থায়নের মাধ্যমে রাখাইন রাজ্য এবং রোহিঙ্গা সংকটে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আমাদের মোট সহায়তা প্রায় দুই দশমিক এক বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।’
তিনি বলেন, এই নতুন তহবিলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক অংশীদারদের মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের উভয় দিকে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের জীবন রক্ষাকারী সহায়তা প্রদান চালাবে। যার মধ্যে প্রায় ৯ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর আতিথ্য করছে বাংলাদেশ। গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, জাতিগত নির্মূল এবং রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সংঘটিত অন্যান্য ভয়ঙ্কর নৃশংসতা ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে প্রায় সাত লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ২০১৭ সালের আগস্টের পরের মাসগুলোতে তাদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৭৬ মিলিয়ন ডলার সহায়তার আহ্বান জানাল ইউএনএইচসিআর
এই তহবিল বাংলাদেশি স্বাগতিক সম্প্রদায়ের প্রায় পাঁচ লাখ ৪০ হাজার সদস্য এবং মিয়ানমারে চলমান সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত অন্যদের সহায়তা প্রদান করবে।
তিনি আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকার এবং অন্যান্য দেশের উদারতা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আতিথেয়তার প্রশংসা করেছে। বিশেষ করে এখন যে ‘আমরা এই দীর্ঘ সঙ্কটের ষষ্ঠ বছরে আছি।’
নেড প্রাইস বলেছেন, ‘আমরা সঙ্কটের টেকসই সমাধানের জন্য কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই মানবিক সংকটের জন্য একটি সমন্বিত এবং সহযোগিতামূলক প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে আমরা বাংলাদেশ সরকার, রোহিঙ্গা সম্প্রদায়, স্বাগতিক সম্প্রদায় এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জনগণের সঙ্গে অংশীদারিত্ব চালিয়ে যাব।’
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সংকটের প্রতিক্রিয়া সহ বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের দুর্দশা লাঘবের প্রতিশ্রুতিতে অবিচল থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের ৬ সংস্থার তহবিল বরাদ্দ বাস্তবায়ন
রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৭৬ মিলিয়ন ডলার সহায়তার আহ্বান জানাল ইউএনএইচসিআর
অনিশ্চয়তার ধোঁয়াশায় থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী বাংলাদেশের স্থানীয় জনগণের জন্য ইউএনএইচসিআর ও সহযোগী সংস্থাসমূহের জন্য ৮৭৬ মিলিয়ন ডলার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধি ইয়োহানেস ভন ডার ক্লাও।
মঙ্গলবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার প্রতিনিধি এই আহ্বান জানান ।
রোহিঙ্গা সংকট এর ষষ্ঠ বছরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী বাংলাদেশি স্থানীয় জনগণের জন্য টেকসই অর্থনৈতিক সহায়তা ও সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও সহযোগী সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পুনরায় আহ্বান জানাচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মানবিক কর্মকান্ডের যৌথ পরিকল্পনা বা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান বাস্তবায়নে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশি মিলিয়ে মোট ১৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষের জন্য মোট ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। এই কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকবে মোট ১১৬টি সংস্থা। এর প্রায় অর্ধেকই হচ্ছে বাংলাদেশি।
আরও পড়ুন: উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন: পুড়ে গেছে ২ হাজার ঘর
আজকের প্রস্তাবিত এই পরিকল্পনাটির লক্ষ্য হচ্ছে কক্সবাজারে ও ভাসান চরে আশ্রিত ৯ লাখ ৭৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের আশ্রয় প্রদানকারী চার লাখ ৯৫ হাজার বাংলাদেশি জনগণকে খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, সুপেয় পানি, সুরক্ষা, শিক্ষা, জীবিকার সুযোগ ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা।
মিয়ানমারের সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষদের প্রতিটি দিন কাটে অনিশ্চয়তার ধোঁয়াশায়। তারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে উদগ্রীব, কিন্তু সে ক্ষমতা তাদের নেই। অগত্যা তাদের বাস করতে হচ্ছে অতিরিক্ত ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থী শিবিরে; যেখানকার পরিবেশ কখনও কখনও বিপজ্জনক, আর বেঁচে থাকার জন্য তারা প্রায় সম্পূর্ণ মানবিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল।
সংকটটি বর্তমানে দীর্ঘায়িত হয়ে পড়লেও শরণার্থীদের চাহিদাগুলো পূরণ করা এখনও অতি জরুরি। এই শরণার্থীদের ৭৫ ভাগেরও বেশি নারী ও শিশু; যারা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও শোষণের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিতে রয়েছে। ক্যাম্পে অর্ধেকেরও বেশি শরণার্থীর বয়স ১৮ -এর নিচে, আর তাদের ভবিষ্যৎ আজ স্থবির।
২০১৭ সালে এই মানবিক সংকটের শুরু থেকেই বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় জনগণ ও মানবিক সংস্থাগুলো পৃথিবীর বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে থাকা এই মানুষগুলোর সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। তথাপি, বৈশ্বিক বাস্তুচ্যুতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগণের কথা ভুলে যাওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।
তহবিল সংকটের কারণে পর্যাপ্ত পুষ্টি, বাসস্থানের উপকরণ, পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা ও জীবিকার সুযোগ কমার মত অনেক চ্যালেঞ্জ এখন প্রতিদিনই এই শরণার্থীদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
অপর্যাপ্ত তহবিলের কারণে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ইতোমধ্যেই ক্যাম্পে সকল রোহিঙ্গার জীবন রক্ষাকারী খাদ্য সহায়তা কমাতে বাধ্য হয়েছে। মানবিক সংস্থাগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টার পরও ৪৫ শতাংশ রোহিঙ্গা পরিবার সুষম খাবার খেতে পারছে না, আর অপুষ্টির হারও ব্যাপক। খাদ্যের বরাদ্দ কমানোর ফলস্বরুপ খুব স্বাভাবিকভাবেই সামনে দেখা যেতে পারে আরও অপুষ্টি, স্বাস্থ্য সমস্যা, পড়ালেখা থেকে শিশুদের ঝরে পড়া, বাল্য বিবাহের নতুন নতুন ঘটনা, শিশুশ্রম ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের ৬ সংস্থার তহবিল বরাদ্দ বাস্তবায়ন
এ কারণে জীবন রক্ষাকারী ও জীবন ধারণকারী সহায়তাগুলো চালু রাখতে আর্থিক সহায়তা জারি রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে প্রয়োজন শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ ও জীবিকার সুযোগ; যেন শরণার্থীরা তাদের কিছু মৌলিক প্রয়োজন নিজেরাই মেটাতে পারে। ভাসান চরে স্থানান্তরিত প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গার জীবিকামূলক কাজ শুরুর জন্য প্রয়োজন উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ, যা চরের এই প্রকল্পকে টেকসই করার একটি পূর্বশর্ত।
দীর্ঘ শরণার্থী জীবন ও ক্যাম্পের পরিস্থিতির অবনতির কারণে রোহিঙ্গারা একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায় ক্রমবর্ধমান হারে বিপদজনক উপায়ে সাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করছে। শুধু গত বছরেই সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেছে, এবং তাদের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে কিংবা হারিয়ে গেছে।
রোহিঙ্গা সংকটের চূড়ান্ত সমাধান মিয়ানমারেই নিহিত। অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থীর কাছে আমরা শুনি প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিজ দেশে ফিরতে চাওয়ার আকূলতা। কিন্তু নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা নিকট ভবিষ্যতে দেখা যাচ্ছে না। সে জন্যেই প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত মিয়ানমারকে দ্রুত সাহায্য করা, এবং রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরার অধিকার সমুন্নত রাখতে কাজ করে যাওয়া। ঠিক একই সঙ্গে রোহিঙ্গারা অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফেরার আগ পর্যন্ত ক্যাম্পে তাদের কার্যকরী সুরক্ষা ও জীবন রক্ষাকারী সহায়তা প্রদানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য প্রয়োজন।
ভৌগলিক অবস্থানের কারণে ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশেপাশের স্থানীয় জনগণ প্রতি বছর ভারী মৌসুমী বৃষ্টি ও সাইক্লোনের উল্লেখযোগ্য ঝুঁকিতে থাকে। এই জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবিলা ও এর ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী করা, এবং পুনঃবনায়ন, পুনঃব্যবহার্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির উত্তরোত্তর প্রচারণার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা। শরণার্থীদের রান্নার জন্য গ্যাস- যা স্থানীয় পরিবেশের উপর চাপ কমিয়েছে দারুণভাবে চালু রাখতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণের কারণ খতিয়ে দেখছে সরকার: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের ৬ সংস্থার তহবিল বরাদ্দ বাস্তবায়ন
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে জাতিসংঘ কেন্দ্রীয় জরুরি সহায়তা তহবিল (সিইআরএফ) এর পক্ষ থেকে ৯ মিলিয়ন ডলারের বেশি তহবিল বরাদ্দের পর ছয়টি জাতিসংঘ সংস্থা কক্সবাজার ও ভাসানচরে অবস্থিত শরণার্থী শিবিরগুলোয় বিভিন্ন সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে।
বাংলাদেশ সরকার এবং তাদের অংশীদারদের সঙ্গে যৌথভাবে জাতিসংঘ সংস্থাসমূহ শরণার্থীদের জন্য তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডার, খাদ্য সহায়তা, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ডব্লিউএএসএইচ) পরিষেবা এবং সুরক্ষা প্রদান করছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের সহায়তায় সাড়ে ৪ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই করল জাপান-ইউএনএইচসিআর
নারী, বালিকা ও প্রতিবন্ধীদের জন্যও ওই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে সহায়তা দেয়া হবে।
কক্সবাজার জেলা এবং ভাসানচর দ্বীপের শিবিরে অবস্থানকারী ৯ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং উখিয়া ও টেকনাফে বসবাসকারী ১৭ হাজার ৮০০ বাংলাদেশির জন্য জীবন রক্ষাকারী সেবা দেয়ার লক্ষ্যে ২০২২ সালের নভেম্বরে সিইআরএফ কর্তৃক জাতিসংঘ অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), ইউএন উইমেন এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) মতো ছয়টি জাতিসংঘ সংস্থার অনুকূলে ৯ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়।
আইওএম ও ইউএনএইচসিআর কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরে অবস্থানকারী শরণার্থী পরিবারগুলোকে এলপিজি বিতরণ করছে। এর ফলশ্রুতিতে মোট ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫১ জন শরণার্থী তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডার পেতে শুরু করেছে।
এলপিজি বিতরণের ফলে শরণার্থীদের স্বাস্থ্য এবং বাসস্থানের পরিবেশ সুরক্ষিত হয়েছে। কারণ এতে শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ধোঁয়া গ্রহণের পরিমাণ এবং বন থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহকালীন সুরক্ষা ঝুঁকি হ্রাস পায়।
কক্সবাজারে আইওএম এবং ইউএনএইচসিআর-এর সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে নারী, শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধী শরণার্থীসহ সবচেয়ে ঝুঁকিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে কমিউনিটি আউটরিচ প্রোগ্রাম ও সচেতনতা সৃষ্টিকারী কার্যক্রমসহ বিভিন্ন সেবাও দেয়া হচ্ছে।
কক্সবাজার ও ভাসানচর এলাকায় যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য (এসআরএইচ) এবং জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা (জিবিভি) সমন্বয় মধ্যস্থতায় সহায়তা করার জন্য ইউএনএফপিএ দুই লাখ ৫০ হাজার ডলার বরাদ্দ পেয়েছে। ইউএনএফপিএ পরিচালিত প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো তিন লাখ ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী নারী ও বালিকাকে যেকোনো ধরনের জিবিভি হতে সুরক্ষা প্রদান এবং এ সংক্রান্ত সহায়তা কার্যক্রম জোরদার করা।
২০২৩ সালের শেষ নাগাদ বাস্তবায়িত হবে এমন যেসব প্রকল্পে ‘ইউএনএফপিএ’ সহায়তা প্রদান করেছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন প্রজনন স্বাস্থ্য কিট, পণ্য, ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী। যেমন-বিভিন্ন পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির পাশাপাশি ধর্ষণ-পরবর্তী শুশ্রূষা কিট সংগ্রহ ও বিতরণ, এসআরএইচ/জিবিভি সংক্রান্ত বিভিন্ন রেফারেল সেবা জোরদার করা, জিবিভি ও ঘনিষ্ঠ সঙ্গী কর্তৃক সহিংসতা পরবর্তী ক্লিনিক্যাল ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য কর্মীদের সামর্থ্য গঠন, মিডওয়াইফ নিয়োগের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা স্থাপনাগুলোর মধ্যে জিবিভি সংক্রান্ত ঘটনা সুরাহার ব্যবস্থা রাখার মাধ্যমে নারীবান্ধব পরিবেশে নানা ধরনের মৌলিক যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট ভুলে যাওয়ার নয়: ইইউ উচ্চ প্রতিনিধি
ইউনিসেফ ও এর অংশীদারগণ একটি সমন্বিত পদ্ধতির মাধ্যমে ভাসানচর এলাকায় জরুরি শিশু সুরক্ষা ও জিবিভি সংঘটন প্রতিহত করা এবং এ সংক্রান্ত সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর মাঝে সচেতনতা ও তাদের ক্ষমতায়নের অনুকূল বিভিন্ন কার্যক্রমের মিশ্রণে গঠিত হয়েছে উক্ত সমন্বিত পদ্ধতি। শিশুরা ঘটনা মোকাবেলা, মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা এবং জীবনমুখী দক্ষতাভিত্তিক শিখনের সুযোগ পেয়েছে। ইউনিসেফ কক্সবাজার ও ভাসান চরে বসবাসকারী ৪৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি (ডব্লিউএএসএইচ) পরিষেবাও দেবে।
ইউএন উইমেন রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে সহিংসতার পর বেঁচে থাকা এবং জিবিভি ঝুঁকিগ্রস্তদের জন্য জীবন রক্ষাকারী ও আবশ্যকীয় জিবিভি সেবাসমূহ এবং সহায়তা প্রাপ্তির সুযোগ বৃদ্ধি করছে। সংস্থাটি ইতোমধ্যে শিবিরগুলোতে পাঁচটি বহুমুখী নারী কেন্দ্র চালু করেছে এবং এই বহুমুখী কেন্দ্রগুলোতে জীবিকা সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা ও জিবিভি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সিইআরএফ তহবিল বরাদ্দ করা হবে।
‘ডব্লিউএফপি'’ বিভিন্ন ফুড ভাউচারের মাধ্যমে শরণার্থীদেরকে খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করছে। শিবিরগুলোর বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ডব্লিউএফপি আউটলেটগুলোয় ব্যাপক পরিসরে নানা ধরনের শুকনো ও তাজা খাবার এই ফুড ভাউচারগুলোর বিনিময়ে ক্রয় করা যাবে।
অবশ্য তহবিল স্বল্পতার কারণে ডব্লিউএফপি এই ফুড ভাউচারের মূল্য প্রতিমাসে জনপ্রতি ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলার করতে বাধ্য হয়েছে। যা ১ মার্চ থেকে চালু হবে। এই কর্তন এমন এক সময় এল যখন পুরো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের মৌলিক খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ডব্লিউএফপির ওপর নির্ভরশীল এবং এদের শিশু ও নারীরা ইতোমধ্যে উচ্চ হারে অপুষ্টিতে আক্রান্ত।
২০২২ সালের নভেম্বরে তহবিল বরাদ্দের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, ‘শরণার্থী ও এ দেশের জনগোষ্ঠীকে তাদের নিত্যদিনের বেঁচে থাকার সংগ্রামে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে অপর্যাপ্ত তহবিল নিয়ে পরিচালিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সহায়তা কার্যক্রমের অনুকূলে উক্ত তহবিলসমূহ বরাদ্দ প্রদানের ব্যাপারে জরুরি ত্রাণ সমন্বয়কারীর সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশে জাতিসংঘ সংস্থাগুলো স্বাগত জানায়। বাংলাদেশ সরকার ও স্থানীয় এনজিওসমূহের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সিইআরএফ কর্তৃক বরাদ্দকৃত এই অর্থের মাধ্যমে শরণার্থীদের সুরক্ষা প্রদান, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা মোকাবিলা এবং শরণার্থীদের অধিকার ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার অনুকূল পরিবেশ রচনা করা সম্ভব হবে।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা রেজুলেশন বাস্তবায়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
রোহিঙ্গা রেজুলেশন বাস্তবায়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
রোহিঙ্গা রেজুলেশন বাস্তবায়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ আব্দুল মোমেন।
নিরাপত্তা পরিষদে সম্প্রতি গৃহীত রেজুলেশনের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই ও স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে আয়োজিত রোহিঙ্গা বিষয়ক একটি উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্ব সম্প্রদায়ের ব্যাপক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সফলতা না আসায় হতাশা ব্যক্ত করেন।
তিনি এর ফলে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্ভাবনার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের মত ছোট আয়তনের দেশে বিশাল জনসংখ্যাসহ অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তার ওপর মিয়ানমার থেকে আসা এক দশমিক ২ মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া কোনওভাবেই বাস্তবসম্মত নয়।
এ প্রসঙ্গে তিনি আঞ্চলিক সংস্থা আসিয়ান-এর নেতৃত্বের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন।
আরও পড়ুন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দেবেন
সভায় ব্রুনেই দারুসসালাম, কানাডা, জিবুতি, মিশর, গাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সেনেগাল, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি এবং অন্যান্য পর্যায়ের কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এতে জাতিসংঘে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ওআইসির স্থায়ী পর্যবেক্ষণ মিশনের রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করেন।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের মত মিয়ানমারের পরিস্থিতি বিষয়ক একটি রেজুলেশন (২৬৬৯) গৃহীত হয়। এতে মিয়ানমারের বিদ্যমান রাজনৈতিক সমস্যাসহ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের বিষয়টিও বিশেষভাবে প্রাধান্য পায়।
এছাড়া, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিগত বছরগুলোতে নিয়মিতভাবে রোহিঙ্গা বিষয়ক রেজুলেশন পাস হয়। নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের রোহিঙ্গা বিষয়ক এই রেজুলেশনগুলোকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জোরালো আহ্বান জানানোই ছিল এই সভার মূল উদ্দেশ্য।
সভায় বক্তারা রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই ও স্থায়ী সমাধানে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
তারা আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐক্যমত্যের সফল বাস্তবায়নের ওপরও জোর দেন।
এছাড়া, রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ চিহ্নিত করে তা সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিরা।
সভায় অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিরা মিয়ানমার থেকে আসা বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় এবং সকল ধরনের মানবিক সহযোগিতা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান।
উল্লেখ্য, সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত।
আরও পড়ুন: ভ্যাকসিনকে ‘গ্লোবাল পাবলিক গুডস’ ঘোষণার ব্যাপারে জোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
মেক্সিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ আসছে মার্চে
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘর্ষ, দুই শিশু গুলিবিদ্ধ
কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই রোহিঙ্গা শিশু গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে উখিয়ার ইরানী পাহাড় পুলিশ ক্যাম্পে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১৯ জন গুলিবিদ্ধ
গুলিবিদ্ধ দুই শিশু হলো- ৮নং ক্যাম্পের ওবায়দুল হকের মেয়ে উম্মে হাফসা (১১) ও একই ক্যাম্পের আব্দুল খালেকের ছেলে আবুল ফয়েজ (৮)।
উখিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুটি সন্ত্রাসী গ্রুপে সংঘর্ষ এবং গুলি বিনিময় হয়েছে। এতে দুই শিশু গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের আবস্থা গুরুতর।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে রেস্টুরেন্টে ঢুকে প্রকাশ্যে গুলি, গুলিবিদ্ধ ২
মুন্সীগঞ্জে যুবলীগ নেতার গুলিতে যুবদল নেতা গুলিবিদ্ধ
রোহিঙ্গাদের সহায়তায় সাড়ে ৪ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই করল জাপান-ইউএনএইচসিআর
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা ও সহায়তার জন্য জাপান সরকার এবং ইউএনএইচসিআর একটি চুক্তি সই করেছে।
কক্সবাজারে এবং ভাসানচরে উদ্বাস্তু ও স্বাগতিক সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকার উন্নতির মাধ্যমে জীবন-রক্ষা এবং জীবন রক্ষাকারী পরিষেবাগুলোকে শক্তিশালী করতে সাড়ে চার মিলিয়ন মার্কিন ডলার(৬০০ মিলিয়ন জাপানি মুদ্রা) অনুদান ব্যবহার করা হবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে চিনি শিল্প, বায়োমাস বিদ্যুৎ ও প্রিপেইড গ্যাস মিটারে বিনিয়োগ করতে চায় জাপান
বুধবার ঢাকায় জাপানের দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি এবং বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি জোহানেস ভ্যান ডার ক্লাউ আজ একটি স্মারক বিনিময় করেন।
বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি জোহানেস ভ্যান ডার ক্লাউ বলেছেন, ‘ইউএনএইচসিআর-এর কিছু প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ও সহায়তা কর্মসূচির পাশাপাশি কক্সবাজার এবং ভাসানচরে শিবিরে জীবিকা নির্বাহের কার্যক্রমের জন্য জাপান সরকারের এই নতুন অনুদান এখন এমন একটি সংকটময় সময়ে এসেছে যখন আমরা ইতোমধ্যেই বিদ্যমান তহবিল সংকটের মুখোমুখি হয়েছি। যা উদ্বাস্তুদের খাদ্যপ্রাপ্তি হ্রাস করেছে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর কর্মসূচিতে সহায়তার ক্ষেত্রে জাপান আরও একবার এগিয়ে গেল। ‘আমরা আশা করি এই অবদান অন্যান্য দাতাদের জন্য অনুঘটক হিসাবে কাজ করবে যাতে এটি অনুসরণ করা যায়।’
গত মাসে কক্সবাজার সফরের সময় রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা বলেন, বাংলাদেশ সরকার এবং ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিবন্ধনের যৌথ ব্যবস্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি একটি জাপানি কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতায় শক্তিশালী জীবিকা সহায়তার প্রত্যক্ষ করতে পেরেও আনন্দিত, যেখানে রোহিঙ্গা নারীরা স্যানিটারি পণ্য উৎপাদন করে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, আমরা একটি স্বেচ্ছাসেবী, নিরাপদ এবং টেকসই প্রত্যাবর্তনের সমাধানে জড়িত থাকব এবং শরণার্থী এবং আতিথ্যদানকারী সম্প্রদায়ের উন্নত জীবনযাপনের সক্ষমতা অর্জনে ইউএনএইচসিআর এবং অন্যান্য মানবিক অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা করব।’
রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা আশা প্রকাশ করেন যে জাপান সরকারের সহায়তা রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় উভয় সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার উন্নতি করবে।
তিনি বলেন, ‘এছাড়াও, আমি বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ সংস্থা এবং এনজিওগুলোর অক্লান্ত কর্মকাণ্ডে গভীরভাবে মুগ্ধ হয়েছি। আমি তাদের জন্য ক্রমাগত সমর্থনের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছি এবং আমরা তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হব।’
২০১৭ সালের আগস্টে বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আগমনের পর থেকে জাপান আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং এনজিওগুলোর মাধ্যমে কক্সবাজারের পাশাপাশি ভাসান চরে বিভিন্ন হস্তক্ষেপে ২০৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি সহায়তা করেছে।
এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য সহায়তা, স্বাস্থ্যসেবা, ওয়াশ, আশ্রয়, সুরক্ষা এবং লিঙ্গ ভিত্তিক সহায়তা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে চায় জাপান: রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের জন্য ৫.৭ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে জাপান
ডব্লিউএফপি’র সহায়তা হ্রাসে রোহিঙ্গা শিবিরে বাড়তে পারে অপরাধ, উগ্রপন্থা: এআরএসপিএইচ
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল ঘাটতির কারণে তার সাধারণ খাদ্য সহায়তা ভাউচারের মূল্য প্রতিমাসে ১২ থেকে কমিয়ে ১০ মার্কিন ডলার করার সাম্প্রতিক ঘোষণার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ভিত্তিক আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস(এআরএসপিএইচ)।
তারা বলেছে, ‘শিবিরে বসবাসকারী শরণার্থী হিসাবে, আমরা প্রথম থেকে জানি যে প্রতি মাসে ১২ মার্কিন ডলারেও বেঁচে থাকা কতটা কঠিন, এবং এই হ্রাস আমাদের সম্প্রদায়ের ওপর ইতোমধ্যেই ভয়াবহ পরিস্থিতির বিধ্বংসী প্রভাব ফেলতে পারে।
বুধবার এআরএসপিএইচ-এর ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুর রহিমের সই করা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, আমরা কীভাবে প্রতি মাসে ১০ ডলারে বেঁচে থাকব তা বোঝা কঠিন, যখন প্রতি মাসে ১২ ডলার দিয়েও মানুষ চাহিদা পূরণে লড়াই করছে।
খাদ্য সহায়তা হ্রাসের ফলে চাঁদাবাজি, পতিতাবৃত্তি, মানব পাচার, মাদক পাচার এবং মৌলবাদীকরণসহ অনেকগুলো নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে যে ‘আমাদের জনগণের হতাশা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করবে, যেখানে এই কার্যকলাপগুলো আমাদের সম্প্রদায়ের সবচেয়ে দুর্বল সদস্যদেরকে বড় ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।’
আরও পড়ুন: দূতরা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সুযোগ-সুবিধা দেখে অভিভূত: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
দলটি রেশনের পরিমাণ না কাটা নিশ্চিত করতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘এটা অগ্রহণযোগ্য যে আমরা, উদ্বাস্তু হিসাবে, অর্থায়নের ঘাটতির বোঝা বহন করতে বাধ্য হচ্ছি যা আমাদের তৈরি নয়। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যে সহায়তা প্রয়োজন তা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই দায়িত্ব নিতে হবে।’
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে তারা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং অন্যান্য মানবিক সংস্থার কাছে ঘাটতি পূরণের জন্য তহবিলের বিকল্প উৎস খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে যে ‘রোহিঙ্গা সংকটে তাদের অবদান বাড়াতে আমরা দাতা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই। আমাদের জীবন এটির ওপর নির্ভর করে এবং আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের দুর্দশা থেকে চোখ না ফেরানোর জন্য অনুরোধ করছি।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে সহায়তা করুন: জাতিসংঘের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান