ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও দক্ষিণ সিরিয়ায় সংঘাতে সহস্রাধিক প্রাণহানি
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও দক্ষিণ সিরিয়ার সুয়েইদা অঞ্চলে সংখ্যালঘু দ্রুজ সম্প্রদায়, বেদুইন গোষ্ঠী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘাতে হাজারের অধিক প্রাণহানি হয়েছে। রবিবার (২০ জুলাই) যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের (এসওএইচআর) বরাতে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান এই তথ্য জানিয়েছে।
যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাটি জানিয়েছে, গত রবিবার (১৩ জুলাই) থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে ৩৩৬ জন দ্রুজ যোদ্ধা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টির ২৯৮ জন বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে ১৯৪ জন বেসামরিক ব্যক্তিকে দেশটির প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদস্যরা বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে এসওএইচআর।
এ ছাড়া, সংস্থাটির তথ্যমতে, নিহতদের মধ্যে ৩৪২ জন সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং ৩ জন বেসামরিক নাগরিকসহ ২১ জন সুন্নি রয়েছেন। ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরও ১৫ জন সরকারি বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে এসওএইচআর।
পড়ুন: ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে নির্বিচারে গুলি, ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ১৩ জুলাই দক্ষিণ সিরিয়ায় দ্রুজ সম্প্রদায়ের একজন ব্যবসায়ীকে অপহরণ নিয়ে সিরিয়ায় নতুন করে অস্থিরতা শুরু হয়। অপহরণের খবর ছড়িয়ে পড়লে দ্রুজ মিলিশিয়া এবং সুন্নি বেদুইন যোদ্ধারা মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একই দিন, সংঘাত থামাতে এসে উল্টো দ্রুজদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় সিরীয় বাহিনী।
এরপর, বুধবার (১৬ জুলাই) দ্রুজদের ওপর ব্যাপকহারে সহিংসতার অভিযোগ তুলে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের কাছে ব্যাপক হামলা চালায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। এরপর যুদ্ধবিরতি ঘোষণা দিয়ে সুয়েইদা ত্যাগ করেন সিরীয় সেনারা।
পরে, সিরিয়ার সরকার জানায়, শান্তি বজায় রাখতে দক্ষিণাঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে এবং লড়াই বন্ধ রাখার জন্য সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।
তবে, বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পরদিন শুক্রবার (১৮ জুলাই) নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়।
এ বিষয়ে, গতকাল শনিবার (১৯ জুলাই) সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা জানান, দ্রুজ-অধ্যুষিত সুয়েইদা শহর থেকে বেদুইন যোদ্ধাদের সরানো হয়েছে এবং সেখানে সংঘর্ষ বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বেদুইন এবং দ্রুজ সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে যুদ্ধবিরতির নির্দেশ দেওয়ার পর এই ঘোষণা আসে।
এমন পরিস্থিতিতেও সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও প্রাণহানি চলমান রয়েছে।
১৩৮ দিন আগে
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ‘ইতিবাচক’ সাড়া দেওয়ার দাবি হামাসের
ইসরায়েলের সঙ্গে সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেওয়ার কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তবে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে আরও আলোচনার প্রয়োজন বলে দাবি করেছে তারা। শুক্রবার (৪ জুলাই) এক বিবৃতিতে হামাস এ তথ্য জানিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছে কি না, হামাসের সর্বশেষ বিবৃতি থেকে তা স্পষ্ট নয়। যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিশ্চিত করতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। এ বিষয়ে আলোচনা করতে আগামী সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
তবে, হামাস বেশ কিছুদিন ধরে বলে আসছে, ২১ মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধের নিশ্চয়তা ছাড়া সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে যেতে রাজি নয় তারা।
আরও পড়ুন: গাজার জনাকীর্ণ ক্যাফেতে ইসরায়েলের ৫০০ পাউন্ডের বোমা হামলা
যুদ্ধ বন্ধে চেষ্টা চলছে
গত মঙ্গলবার (১ জুলাই) এক বিবৃতিতে ট্রাম্প দাবি করেন, ‘ইসরায়েল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে।’
তিনি হামাসকে দ্রুত সমঝোতায় আসার আহ্বান জানান। অন্যথায়, পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হবে বলে হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের। এরপর, গতকাল (শুক্রবার) রাতে হামাস এক বিবৃতি দেয়, তারা মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ‘ইতিবাচক সাড়া’ দিয়েছে।
গোষ্ঠিটি আরও জানায়, যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়নের কাঠামো নিয়ে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত তারা। তবে, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে হামাসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, আলোচনা সফল হলে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই যুদ্ধবিরতি শুরু হতে পারে। তবে কতজন ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করা হবে এবং যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় কী পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশ করবে, তা ঠিক করতে আলোচনা দরকার।
তিনি বলেন, হামাস জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে গাজায় ত্রাণের পরিমাণ বাড়ানোর দাবি করেছে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, যুদ্ধবিরতি শুরু হলে একই সঙ্গে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে আলোচনাও শুরু হবে। এ জন্য যুদ্ধবিরতির সময়সীমার ‘বেশি সময়’ প্রয়োজন হলেও ট্রাম্প তা বাড়ানোর নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগের আলোচনাগুলো যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে হামাস ও ইসরায়েলের মতবিরোধে ভেস্তে গেয়েছিল। নেতানিয়াহু যুদ্ধের প্রথম থেকেই বলে আসছে, ‘হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস না করে যুদ্ধ থামানো হবে না।’
আরও পড়ুন: গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইসরায়েল: দাবি ট্রাম্পের
এদিকে, বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী এয়ারফোর্স ওয়ান বিমানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে হামাস ইতিবাচক মনোভাব’ দেখিয়েছে, এটি খুবই ভালো বিষয়। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।
তিনি জানান, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে একটি চুক্তি হতে পারে।
১৮ ফিলিস্তিনি নিহত
যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেও ইসরায়েলি আগ্রাসন থামেনি। দোহাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার তথ্যমতে, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এর আগে, শুক্রবার সকালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় অন্তত ১৫ ফিলিস্তিনি নিহত হন। এদিকে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘ক্ষুধাস্ত্র’ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে অপেক্ষারত ক্ষুধার্ত ও যুদ্ধপীড়িত বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। স্থানীয় হাসপাতালগুলোর বরাতে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, শুক্রবার সারাদিনে ত্রাণ নিতে গিয়ে অন্তত ২০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, গত এক মাসে গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে অন্তত ৬১৩ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের বেশিরভাগ নিহত হয়েছেন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত ২৬ মে থেকে ইসরায়েলের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচটি) নামে নতুন ত্রাণ বিতরণ কাঠামো চালু হয়েছে।
আরও পড়ুন: নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন: মুসলমানদের মধ্যে আশা জাগাচ্ছেন মামদানি
বিতর্কিত এই ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের সাবেক এক নিরাপত্তা কর্মী বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমি দেখেছি যে আমার সহকর্মীরা একাধিকবার নিরস্ত্র ও ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়েছে। এমনকি মেশিনগানের ব্যবহারও করতে দেখেছি। অথচ, তারা কোনো ধরনের হুমকি ছিলেন না।’
তিনি জানান, ‘একবার একটি নিরাপত্তা টাওয়ার থেকে একজন নিরাপত্তাকর্মী কয়েকজন নারী, শিশু ও বৃদ্ধ মানুষের ওপর মেশিনগান দিয়ে গুলি চালায়। যার কারণ তারা কেন্দ্র থেকে ফেরার সময় ধীরগতিতে হাঁটছিলেন!’
১৫৩ দিন আগে
ইসরায়েলে হামলা অব্যাহত থাকবে: ইরানি সেনাকর্মকর্তা
ইসরায়েলে ইরানের হামলা অব্যাহত থাকবে বলে দাবি করেছেন দেশটির সামরিক বাহিনীর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তার বরাতে ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ফারস জানিয়েছে, ‘গতরাতের সীমিত পদক্ষেপের মধ্যেই এই সংঘাত শেষ হবে না। আগ্রাসনকারীদের জন্য এই হামলা হবে যন্ত্রণাদায়ক ও অনুশোচনামূলক।’-খবর আল-জাজিরা ও বিবিসির।
ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইরান আগামীতে এই অঞ্চলের মার্কিন ঘাঁটিগুলোতেও পাল্টা হামলা চালাবে।
শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে ইসরায়েল তাদের দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষ ইরানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় বিমান হামলা চালায়। একের পর এক বিমান হামলায় প্রথমে ইরানের সামরিক নেতৃত্ব ও গোয়েন্দা কাঠামোতে আঘাত করে।
এরপর ধারাবাহিক হামলায় ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র এবং শেষে দেশটির বৃহত্তম ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতানজে হামলা চালানো হয়। হামলায় ইরানের শীর্ষ তিন সামরিক কর্মকর্তা ও ৬জন পরমাণু বিজ্ঞানীসহ অন্তত ৭৮ জন নিহত ও ৩২৯ জন আহত হয়েছেন।
এরপর পাল্টা হামরা চালায় ইরান। এতে, এখন পর্যন্ত ৩ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ: দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ
এদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, তারা এখনো ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনাগুলোকে নিশানা করে হামলা চালাচ্ছে। এমনকি তারা ইরানের ভূমি থেকে ভূমিতে ও ভূমি থেকে আকাশে হামলার ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনাকেও লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে।
১৭৪ দিন আগে
গাজার ৫০ শতাংশ ইসরায়েলের দখলে, নিজ ভূমিতে পরবাসী ফিলিস্তিনিরা
গত মার্চ মাসে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজা উপত্যকায় হামলা শুরুর পর ক্রমাগতভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণ করে চলেছে দখলদার ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত উপত্যকাটির ৫০ শতাংশ অংশ দখলে নিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। এতে নিজ ভূমিতে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছেন ফিলিস্তিনিরা।
ইসরায়েলি সেনা ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, গাজা সীমান্তের আশপাশে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা সবচেয়ে বড় এলাকায় ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর, কৃষিজমি এবং অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব এলাকা এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই সামরিক বাফার জোনের পরিধি দ্বিগুণ করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সাময়িক যুদ্ধবিরতের মাধ্যমে বেশ কিছু জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসকে চাপ দেওয়ার সাময়িক প্রয়োজনের অজুহাতে হামলা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি গাজার ভূমির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করে ইসরায়েল।
তবে মানবাধিকার গোষ্ঠী ও গাজা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের দখলে থাকা অঞ্চলটির উত্তর-দক্ষিণের ভূমিকে বিভক্ত করা করিডোরটি দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে বলেছেন, হামাস পরাজিত হওয়ার পরও ইসরায়েল গাজায় নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে এবং ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হবে।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও দুই সাংবাদিক নিহত
পাঁচ ইসরায়েলি সেনা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সীমান্তের কাছে ধ্বংসযজ্ঞ এবং বাফার জোনের ধারাবাহিক সম্প্রসারণ ১৮ মাস আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে চলমান।
গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর যে দলটি ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তাদের সুরক্ষায় মোতায়েন করা ট্যাংক স্কোয়াডের এক সদস্য বলেন, ‘তারা যা কিছু পেয়েছে, তাই ধ্বংস করেছে। তাদের সামনে যা কিছু কার্যকর মনে করছে, তারা সেখানেও তারা গুলি করেছে ...যাতে (ফিলিস্তিনিদের) ফিরে আসার কিছুই না থাকে। তারা আর ফিরতে পারবে না, কখনই না।’ নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি এবং আরও চার সেনা এপিকে এসব কথা বলেন।
সোমবার (৭ এপ্রিল) বাফার জোনে থাকা সেনাদের বিবরণ নথিভুক্ত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দখলদারবিরোধী ভেটেরান্স গ্রুপ ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স। হাতেগোনা কয়েকজন সেনাদের মধ্যে কয়েকজন এপির সঙ্গে আলাপও করেছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ওই অঞ্চলটিকে একটি বিশাল পতিতভূমিতে পরিণত করছে বলে জানিয়েছেন।
গোষ্ঠীটি বলেছে, ‘ব্যাপক, পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী ভবিষ্যতে ওই এলাকায় ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণের ভিত্তি তৈরি করেছে।’
সৈন্যদের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা তার দেশকে রক্ষার জন্য এবং বিশেষত ৭ অক্টোবরের হামলায় বিধ্বস্ত দক্ষিণাঞ্চলীয় সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা উন্নত করতে কাজ করছে। ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন। এছাড়া ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস।
বিভক্ত গাজা
ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের মতে, যুদ্ধের প্রথমদিকে ইসরায়েলি সেনারা সীমান্তের নিকটবর্তী গাজার এক কিলোমিটারের বেশি এলাকায় বাস করা ফিলিস্তিনিদের জোর করে সরিয়ে একটি বাফার জোন তৈরি করতে সেখানে থাকা সব স্থাপনা ধ্বংস করে দিয়েছে।
ইসরায়েলি সৈন্যরা ‘নেতজারিম করিডোর’ নামে পরিচিত গাজার একটি বিশাল ভূমিও দখল করেছে। এই করিডোরটি গাজা সিটিসহ উত্তরাঞ্চলকে সংকীর্ণ ও উপকূলীয় উপত্যকাটির বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। গোটা গাজা উপত্যকাটিতে ২০ লাখের বেশি মানুষের আবাসস্থল।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রকাশ করা একটি মানচিত্রে দেখা যায়, গত মাসে ইসরায়েল যখন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে পুনরায় হামলা শুরু করে, তখন এটি বাফার জোনের আকার দ্বিগুণ করেছে। কিছু জায়গায় এটি গাজার অভ্যন্তরে তিন কিলোমিটার (১.৮ মাইল) পর্যন্ত দখলে নেয়।
বেন গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশগত গবেষণার অধ্যাপক ইয়াকভ গার্ব বলেন, বাফার জোন এবং নেতজারিম করিডোর উপত্যকাটির কমপক্ষে ৫০ শতাংশ এলাকা নিয়ে গঠিত। এই অধ্যাপক কয়েক দশক ধরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি ভূমি ব্যবহারের ধরন পরীক্ষা করে আসছেন।
গত সপ্তাহে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইসরায়েল দক্ষিণ গাজায় আরেকটি করিডোর তৈরি করতে চায়—যা রাফাহ শহরকে অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। গাজায় ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়বে। গাজার ওই অঞ্চলে সম্প্রতি পরিকল্পিত হামলার আগে বেসামরিক নাগরিকদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তারা।
বাফার জোন ‘কিল জোন’, দাবি সেনাদের
সৈন্যরা বলেছে, বাফার জোনের কোনো নির্দিষ্ট সীমানা নেই। তবে এসব এলাকায় যে ফিলিস্তিনিরা প্রবেশ করেছিলেন, তাদের গুলি করা হয়েছে।
ট্যাংক স্কোয়াডে থাকা ওই সেনা কর্মকর্তা বলেন, একটি সাঁজোয়া বুলডোজার ভূমি সম্প্রসারণ করে একটি ‘কিল জোন’ তৈরি করেছে। ট্যাংকের ৫০০ মিটারের মধ্যে কেউ এলে, তাকে গুলি করা হয়। যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৪৪, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি-আমেরিকান কিশোরকে হত্যা
কম্পিত ও ভীত অবস্থায় তিনি বলেন, ‘অনেক সেনা ৭ অক্টোবরের হামলার প্রতিশোধ নিতে এ কাজ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি, কারণ তারা আমাদের হত্যা করেছে। এখন আমরা তাদের হত্যা করতে এসেছি। আমি বুঝতে পারছি যে, আমরা কেবল তাদের হত্যা করছি না, আমরা তাদের স্ত্রী, শিশু, বিড়াল, কুকুরকে হত্যা করছি। ধ্বংস করছি তাদের বাড়িঘর।’
সেনাবাহিনী বলেছে, ‘যতটা সম্ভব বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি এড়াতে’ গোয়েন্দা তথ্যের উপর ভিত্তি করে তারা আক্রমণগুলো চালাচ্ছেন।
এদিকে, ২০২৩ সালের পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫০ হাজার ৬৯৫ জন ফিলিস্তিনি, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আর পোলিও টিকার অভাবে গাজার ৬ লাখ ২ হাজার শিশু স্থায়ীভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।
২৪২ দিন আগে
গাজায় চিকিৎসাকর্মী হত্যার ঘটনায় ভুল স্বীকার ইসরায়েলের
গাজায় আগ্রাসনের সময় চলতি বছর ১৫ জন জরুরি চিকিৎসাকর্মীকে হত্যার ঘটনায় ভুল স্বীকার করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে গত ২৩ মার্চ এই হত্যাকাণ্ডটি চালিয়েছে আইডিএফ।
রাফাহর কাছে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (পিআরসিএস) অ্যাম্বুলেন্স, জাতিসংঘের একটি গাড়ি এবং গাজার সিভিল ডিফেন্সের একটি অগ্নিনির্বাপক গাড়িকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করেছিল আইডিএফ। এতে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল।
ওই ঘটনার পর ইসরায়েল প্রাথমিকভাবে দাবি করেছিল যে, গাড়ি বহরটিকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে ইসরায়েলি সৈন্যরা গুলি চালিয়েছিল। কারণ, বহরটির গাড়িগুলোর হেডলাইট বা ফ্ল্যাশিং লাইট ছাড়াই অন্ধকারে চালানো হয়েছিল। তারা আরও দাবি করেছে যে, এসব যানবাহন চলাচলের আগে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় বা অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
তবে নিহত হওয়া একজন জরুরি চিকিৎসাকর্মীর মোবাইলে ধারন করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আহতদের সাহায্য করতে যাওয়ার সময় গাড়িগুলোতে আলো জ্বলছিল। গাড়িগুলোতে স্পষ্ট লোগো লাগানো ছিল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জোর দিয়ে বলেছে যে, ওই বহরে থাকা কমপক্ষে ছয়জন চিকিৎসাকর্মী হামাসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন—তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি তাদের দাবির পক্ষে। ইসরায়েলি সেনারা যখন গুলি চালিয়েছিল, তখন তারা নিরস্ত্র ছিল বলে স্বীকারও করেছেন তারা।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের শেয়ার করা মোবাইল ভিডিওতে দেখা যায়, ভোর হওয়ার ঠিক আগেই যখন গাড়িগুলো সড়কে চলছিল, ঠিক তখনই কোনো প্রকার সতর্ক বার্তা না দিয়েই গুলি চালানো শুরু করে সেনারা।
পাঁচ মিনিটেরও বেশি সময় ধারণ করা ভিডিতে রেফাত রাদওয়ান নামের ওই চিকিৎসাকর্মীকে শেষ প্রার্থনা করতেও শোনা যায়। তিনি কাঁদতে কাঁদতে ও ক্ষীণ কণ্ঠে বলছিলেন, 'আমাকে ক্ষমা করে দাও মা। এই পথটাই আমি বেছে নিয়েছি মা, মানুষকে সাহায্য করার জন্য।’
আইডিএফের এক কর্মকর্তা শনিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, এর আগে সৈন্যরা তিন হামাস সদস্যকে বহনকারী একটি গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
অ্যাম্বুলেন্সগুলো যখন সাহায্যের জন্য ওই এলাকায় পৌঁছায়, তখন ইসরায়েলের আকাশ থেকে নজরদারিকারীরা ঘটনাস্থলে থাকা সেনাদের তাদের অগ্রসর হওয়াকে 'সন্দেহজনক’ বলে জানায়।
আরও পড়ুন: গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ১৭
যখন অ্যাম্বুলেন্সগুলো হামাসের গাড়ির পাশে এসে থামে, সৈন্যরা ধরে নিয়েছিল যে তারা হুমকির মধ্যে রয়েছে এবং জরুরি দলের কেউই সশস্ত্র ছিল— এমন কোনো প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও গুলি চালানো হয়।
ইসরায়েল স্বীকার করেছে যে, অ্যাম্বুলেন্সগুলো বাতি না জ্বালিয়ে অগ্রসর হয়েছিল বলে তারা পূর্বে যে বক্তব্য দিয়েছিল তা ভুল ছিল। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেনাদের দায়ী করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, গাড়িগুলো স্পষ্টভাবে লোগো দিয়ে চিহ্নিত করা ছিল এবং জরুরি চিকিৎসাকর্মীরা রিফ্লেক্টিভ হাই-ভিস ইউনিফর্ম পরিধান করেছিলেন।
ওই কর্মকর্তা দাবি করেন, সৈন্যরা বন্য প্রাণীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ১৫ জন মৃত কর্মীর দেহ বালিতে পুঁতে রাখে। রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য পরের দিন গাড়িগুলো সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ওই এলাকায় চলাচল নিরাপদ করার ব্যবস্থা করতে না পারায় ঘটনার এক সপ্তাহ পরও তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
ত্রাণবাহী একটি দল যখন লাশগুলো খুঁজে পায়, তখন তারা রিফাত রাদওয়ানের মোবাইল ফোনও উদ্ধার করে। আর সেই মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওগুলো থেকে এসব তথ্য উঠে আসে।
হত্যাকাণ্ডের শিকার কোনো চিকিৎসককে হাতকড়া পরানোর কথা অস্বীকার করে ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা বলেন, খুব কাছ থেকে তাদের হত্যা করা হয়নি—যেমনটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এ সপ্তাহের শুরুর দিকে বেঁচে যাওয়া একজন চিকিৎসা কর্মী বিবিসিকে বলেন, অ্যাম্বুলেন্সগুলোর লাইট জ্বালিয়ে রাখা হয়েছিল এবং তার সহকর্মীদের কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার কথা অস্বীকার করেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এই ঘটনার ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছে যে তারা ‘ঘটনার প্রেক্ষাপট এবং পরিস্থিতি পরিচালনা করবে।’
ওই ঘটনায় ৮ জন রেড ক্রিসেন্ট কর্মী, ৬ জন দমকল কর্মী ও একজন জাতিসংঘের কর্মী নিহত হয়েছেন।
রেড ক্রিসেন্ট এবং অন্যান্য অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন। এসময় ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা। এরপর যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে বেশিরভাগ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যদিও ইসরায়েলও অসংখ্য মৃতদেহসহ মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনিদের ‘মানবঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করত ইসরায়েলি বাহিনী
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয়টির দেওয়া হিসাবে বেসামরিক নাগরিক ও যোদ্ধার আলাদা হিসাব দেওয়া হয়নি। তথ্যমতে, নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু। ইসরায়েল প্রায় ২০ হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করার দাবি করলেও এর সমর্থনে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
চলমান এই যুদ্ধ গাজাকে ধ্বংস করেছে। বেশিরভাগ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি হামলার মাত্রা এতো বেশি যে, ভূখন্ডটির নজনসংখ্যার ৯০ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
সূত্র: বিভিন্ন এজেন্সি
২৪৩ দিন আগে
গাজায় হামাসবিরোধী সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় হামাসবিরোধী সবচেয়ে বড় বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে অবরুদ্ধ উপত্যকাটির শত শত মানুষ। এসময় বিক্ষোভকারীদের দমনে হামাসের সদস্যরা বল প্রয়োগ করেছেন। হামাস সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠসোঁটা ও অস্ত্রে সজ্জিত ছিল।
হামাসবিরোধী বিক্ষোভের বেশকিছু ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন হামাসের সমালোচক অ্যাক্টিভিস্টরা। এতে দেখা যায়, বুধবার (২৬ মার্চ) উপত্যকার বেইত লাহিয়ার রাস্তায় বিক্ষোভে অংশ নেওয়া তরুণরা স্লোগান দিয়ে বলছেন, হামাস তুমি চলে যাও, হামাস তুমি চলে যাও।
বিক্ষোভ নিয়ে হামাস সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বুধবার(২৬ মার্চ) এক বিবৃতিতে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে দায়ী করেছে হামাস।
আরও পড়ুন: ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ‘বিশেষ উদ্বেগজনক’ দেশ ভারত, র’য়ের ওপর যুক্তরাষ্ট্রকে নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ
অন্যদিকে হামাসের সমর্থকরা বিক্ষোভটিকে গুরুত্বসহকারে দেখছে না এবং অংশগ্রহণকারীদের বিশ্বাসঘাতক বলে অভিযুক্ত করেছে।
ইসলামিক জিহাদের সদস্যরা ইসরায়েলে রকেট হামলা চালানোর একদিন বেইত লাহিয়ার বিশাল অংশ খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। এর পরই মূলত বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং গাজার উত্তরাঞ্চলে এই বিক্ষোভ শুরু হয়।
প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর গাজায় আবারও সামরিক অভিযান শুরু করেছে দখলদার ইসরায়েল৷ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রস্তাব হামাস প্রত্যাখান করেছে বলে অভিযোগ ইসরায়েলের৷ অন্যদিকে হামাস অভিযোগ করেছে, জানুয়ারিতে সই করা মূল চুক্তি লঙ্ঘণ করেছে ইসরায়েল।
চলতি মাসের ১৮ তারিখ ইসরায়েলি সামরিক অভিযান পুনরায় শুরুর পর থেকে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
বুধবারের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বেইত লাহিয়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ দিয়াব বলেন, এক বছর আগে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এবং তার ভাইকে তিনি হারিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা কারও জন্য, কোনো দলের কর্মসূচি বা বিদেশি রাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য মরতে রাজি নই।’
তিনি বলেন, ‘হামাসকে অবশ্যই ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে এবং শোকাহতদের দাবি মানতে হবে, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উঠে আসা কণ্ঠস্বর- এটি সবচেয়ে বাস্তব কণ্ঠস্বর।’
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া শহরটির ভিডিওতে 'হামাসের শাসন নিপাত যাক, মুসলিম ব্রাদারহুডের শাসন নিপাত যাক' বলে বিক্ষোভকারীদের স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
ফিলিস্তিনি নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে ২০০৭ সাল থেকে গাজা এককভাবে শাসন করছে হাসাস। এর এক বছর আগে সহিংসভাবে প্রতিপক্ষকে উৎখাত করেছিল হামাস।
তবে ২০২৩ সালের শেষ দিকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজার সড়কে এবং অনলাইনে হামাসের প্রকাশ্য সমালোচনা বেড়েছে। যদিও এখনও এমন অনেকে আছেন যারা প্রচণ্ডভাবে হামাসকে সমর্থন করেন। যদি গোষ্ঠীটি কতটুকু সমর্থন হারিয়েছেন—তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা কঠিন।
গাজায় যুদ্ধের অনেক আগে থেকেই হামাসের বিরোধিতা ছিল। প্রতিশোধের ভয়ে এর বেশিরভাগই প্রকাশ্যে নয়।
মোহাম্মদ আল-নাজ্জার নামে গাজার এক বাসিন্দা তার ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন, ‘মাফ করবেন, কিন্তু হামাস আসলে কিসের উপর বাজি ধরছে? তারা আমাদের রক্তের উপর বাজি ধরছে, রক্ত যাকে সারা বিশ্ব শুধু সংখ্যা হিসেবে দেখে।’
আরও পড়ুন: ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনকে ‘অপরাধ’ স্বীকৃতি দিচ্ছে আলজেরিয়া
তিনি লিখেছেন, ‘এমনকি হামাসও আমাদের সংখ্যা হিসেবে গণনা করে। পদত্যাগ করুন এবং আমাদের ক্ষতের নিরাময়ের সুযোগ দিন।’
হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালালে গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়। সেসময় হামাসের হামলা প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। আর ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।
হামাসকে ধ্বংস করতে গাজায় সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ইসরায়েল ওই হামলার জবাব দেয়। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় ৫০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজার ২১ লাখ জনসংখ্যার অধিকাংশই এখন বাস্তুচ্যুত। বাস্তুচ্যুতদের অনেকেই বেশ কয়েকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
গাজায় আনুমানিক ৭০ শতাংশ ভবন ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। ধসে পড়েছে জনপদটির স্বাস্থ্যসেবা, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও আশ্রয়ের প্রবল সংকটের মুখোমুখি উপত্যকাটির বাসিন্দারা।
সূত্র: বিভিন্ন নিউজ এজেন্সি
২৫৪ দিন আগে
ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি স্থগিত করল ইসরায়েল: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
আরও জিম্মিকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় চলমান ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি স্থগিত করেছে ইসরায়েল। রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে ইসরায়েল এই ঘোষণা দেয়।
শনিবার হামাস ছয় জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পর ইসরায়েল প্রায় ৬২০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে বলে আশা করা হয়েছিল। তিন ধাপের চুক্তির প্রথম ধাপে মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও জীবিত জিম্মিদের মধ্যে এই ছয়জনই ছিল শেষ দল।
এদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, 'লজ্জাজনক অনুষ্ঠান ছাড়াই পরবর্তী জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত' শনিবারের নির্ধারিত ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি বিলম্বিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'আমাদের জিম্মিদের অসম্মান করে এমন লজ্জাজনক (জিম্মি মুক্তি) অনুষ্ঠান এবং প্রচারণার উদ্দেশ্যে জিম্মিদের নিন্দনীয় ব্যবহারসহ বারবার লঙ্ঘন করেছে হামাস।’
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ গেল অন্তঃসত্ত্বা ফিলিস্তিনি নারীর
হামাস এবং ইসরায়েল উভয়ের বিরুদ্ধে প্রচারণার জন্য বন্দীদের ব্যবহার করার
অভিযোগ রয়েছে। হামাস মঞ্চে জিম্মিদের ওঠায় এবং ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দীদের পরিহিত ব্রেসলেট এবং টি-শার্টে অবমাননাকর লেখা সংযুক্ত করে এবং অসম্মানজনক ভঙ্গিতে তাদের ছবি তোলে।
ইসরায়েলি তথ্য অনুযায়ী, মোট ৬৩ জন জিম্মি গাজায় রয়ে গেছে, যাদের অর্ধেকেরও বেশি মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২৮৫ দিন আগে
হিজবুল্লাহর মিডিয়া প্রধানকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
হিজবুল্লাহর মিডিয়া বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আফিফকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
রবিবার মধ্যবৈরুতে একটি বিমান হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে মোহাম্মদ আফিফকে হত্যা দাবি জানায় ইসরায়েল।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ভবন খালি করার বিষয়ে কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই রবিবার দুপুরে রাস আল-নাবা জেলায় একটি বহুতল ভবনে আঘাত হানে ইসায়েলি বাহিনী। এ হামলায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: আরও এক হিজবুল্লাহ নেতাকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
আফিফ ১৯৮০-এর দশকে হিজবুল্লাহতে যোগ দেন এবং গোষ্ঠীর প্রয়াত নেতা হাসান নাসরাল্লাহর মিডিয়া উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। নাসরাল্লাহকে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে হত্যা করে ইসরায়েল।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী এই হামলাকে 'গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক হামলা' হিসেবে বর্ণনা করেছে। তারা অভিযোগে করে, আফিফ 'অপপ্রচার ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য মাঠের ফুটেজ সংগ্রহ করতে হিজবুল্লাহর কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন।’
আরও পড়ুন: সীমান্তে ১৭ ইসরায়েলি সেনা হত্যার দাবি হিজবুল্লাহর
৩৮২ দিন আগে
ইসরায়েলি বিমান হামলায় সিরিয়ায় নিহত ৭
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এ হামলায় ২০ জন আহত হয়েছেন।
রবিবার বিকেল এ হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার দিকে (১৪০০ জিএমটি) গোলান মালভূমি থেকে দামেস্কের সায়িদা জয়নাব এলাকার একটি আবাসিক ভবন লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা চালায়।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৩০ ফিলিস্তিনি নিহত
বিবৃতিতে বলা হয়, এ হামলায় ব্যক্তিগত মালকানাধীন ওই ভবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
ব্রিটেনভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এর আগেতাদের প্রতিবেদনে বলে, এই হামলা একটি আবাসিক ভবনের এক ফ্ল্যাটে আঘাত হানে। ভবনটিতে লেবাননের নাগরিক ও হিজবুল্লাহ সদস্যরা বসবাস করছিলেন।
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের দক্ষিণে শিয়াদের গুরুত্বপূর্ণ মাজার এলাকা সায়িদা জয়নাব। এর আগেও এখানে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে।
সম্প্রতি কয়েক বছরে ইসরায়েল সিরিয়ায় একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে। ইরানি সামরিক সম্পদ ও হিজবুল্লাহর কাছে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত অস্ত্র ওই হামলার লক্ষ্য ছিল বলে দাবি করে তারা।
আরও পড়ুন: গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ২৫
৩৮৯ দিন আগে
পূর্ব লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৬০
পূর্ব লেবাননের বেকা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় দুই শিশুসহ অন্তত ৬০ জন নিহত ও ৫৮ জন আহত হয়েছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবারের এই হামলায় উপত্যকার ১২টি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার বেশিরভাগই বালবেক অঞ্চলের।
এই হামলাকে লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ওই এলাকায় চালানো 'সবচেয়ে সহিংস' হামলা বলে অভিহিত করেছেন বালবেকের গভর্নর বাছির খোদর।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে লেবাননে বিমান হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। সম্প্রতি লেবাননের উত্তর সীমান্তে স্থল অভিযানও শুরু করেছে তারা।
এদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৪৩ হাজার ২০ জন নিহত ও ১ লাখ ১ হাজার ১১০ জন আহত হয়েছে।
এই যুদ্ধে হামাসকে সমর্থন জানিয়ে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরোধিতা শুরুর পর থেকে লেবাননে হিজবুল্লাহর ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালাতে থাকে ইসরায়েল।
৪০২ দিন আগে