বিদ্যুৎ উৎপাদন
নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৪০% বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশের প্রয়োজন ২৬.৫ বিলিয়ন ডলার
নতুন একটি সমীক্ষা বলছে ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৪০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশের প্রয়োজন হবে ২৬ দশমিক পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের বহুমুখী হলরুমে ‘রিনিউয়েবল এনার্জি ফাইন্যান্সিং, প্রসপেক্টস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য তুলে ধরেন গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ।
চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী ও প্রধান গবেষক জাকির হোসেন খান মূল উপস্থাপনায় বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে প্রায় ৩৮ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এছাড়া ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ছয় দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন পেয়েছে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক পরিবেশ সুবিধা, গ্লোবাল ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যালায়েন্স, জিসিএফ-পিপিএফ, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড, গ্লোবাল এনার্জি এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে ক্লিন টেকনোলজি ফান্ডসহ বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থায়ন এসেছে।
তিনি বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৬ লাখ ৮৬ হাজার একর অকৃষি বিশেষ জমি রয়েছে।
এসব অকৃষি জমির পাঁচ শতাংশ ব্যবহার করা গেলে সৌরবিদ্যুৎ বা নবায়নযোগ্য খাত থেকে ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব।
এমনকি শুধুমাত্র চট্টগ্রাম অঞ্চলের খাস জমিতেই ২২ হাজার ৩১৯ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াসেকা আয়শো খান।
আরও পড়ুন: সিলেটে জ্বালানি সংকট, অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ঘোষণা
এছাড়াও সেমিনারে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সাবেক সচিব ও সাবেক রাষ্ট্রদূত আবুল কালাম আজাদ,পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন, পলিসি রিসার্চার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রমুখ।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, সোলার যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক কমানো এখন সময়ের দাবি।
তিনি আরও বলেন, আগামী ১৫ বছরের জন্য এই শুল্ক কমানো উচিত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিত। ভবিষ্যতে কোনো ছাদ খালি রাখা যাবে না।
মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ২০০৯ সালের শেষ দিকে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য প্রায় ৩ শতাংশ সৌরবিদ্যুৎ বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি পরিবর্তন করছি। প্রধানমন্ত্রী চান মোট বিদ্যুতের ৪০ শতাংশ আসবে ক্লিন এনার্জি থেকে। টাকা কোনো সমস্যা নয়।’
আরও পড়ুন: জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে দিনাজপুরে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন: নসরুল হামিদ
তিনি বলেন, উন্নয়ন সহযোগীরা এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করতে চাইছে। সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তির দামও কমেছে। ‘সুতরাং সৌর আমাদের পরবর্তী অগ্রাধিকার।’
অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশে গত এক দশকের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ক্লিন এনার্জি এখন তিন শতাংশ।
তিনি বলেন, ‘এটা মোটেও সুখকর নয়। ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে পুরো ইউরোপ এখন বায়ু বিদ্যুতে ঝুঁকেছে।’ বাংলাদেশে তা সম্ভব নয়, তাই আমাদেরকে দ্রুত নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে অগ্রসর হতে হবে।
বর্তমানে চার ধরনের সৌরবিদ্যুৎ যন্ত্রাংশ আমদানিতে ১১ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক রয়েছে এবং এসব শুল্ক কমানো বা সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি উঠেছে সেমিনারের একাধিক বক্তার কাছ থেকে।
সুপারিশের মধ্যে রয়েছে আগামী ১০ বছরের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগকারীদের কর ছাড়সহ বিভিন্ন প্রণোদনা প্রদান।
প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি, দ্রুত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ (বিশেষ) আইন বাতিল করা এবং বিনিয়োগকারীদের একটি নির্দিষ্ট হারে অকৃষি খাস জমি পাওয়ার অনুমতি দেয়াও সুপারিশের অন্তর্ভুক্ত।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের জ্বালানি ও বন্দর খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী সৌদি আরব: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকৃত খরচ দিতে প্রস্তুত থাকুন: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার অঙ্গীকার পূরণ করেছে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সরকারকে দেশে কয়েকদিন লোডশেডিং দিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে হয়েছে। ‘তবে ‘এখন সেই সমস্যা শেষ হয়েছে’।
তিনি বলেন, গত সপ্তাহে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: আ. লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের অনেক পরিবর্তন হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
রবিবার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হলেও সরকার ভর্তুকি মূল্যে সবাইকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।
কিন্তু বৈশ্বিক মন্দা বিবেচনায় কম দামে বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব হবে না বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বেড়েছে।’ তাই (জনগণকে) প্রকৃত মূল্য দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের ব্যবসায়ীসহ সবাইকে মিতব্যয়ীতা অবলম্বন করতে হবে এবং গ্যাস উৎপাদনে আমাদের যে টাকা খরচ হয় এবং পরিবহন খরচ হয় তা সবাইকে দিতে হবে। তা না হলে আমরা বিদ্যুৎ দিতে পারব না। আপনারা যদি (বিদ্যুৎ) চান, আপনাদেরকে প্রকৃত মূল্য দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুত, গ্যাস, পানি ও জ্বালানির খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব।
আরও পড়ুন: আমরা বাংলাদেশে মানবাধিকার সমুন্নত রাখি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
তথ্য প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার পার্ক
কাপ্তাই হ্রদে পানির স্বল্পতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিন্মে
কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর নিচে নেমে যাওযায় রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে অবস্থিত দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিন্ম পর্যায়ে এসেছে।
রবিবার সকাল ১০টায় এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক ও নির্বাহী প্রকৌশলী জালাল উদ্দিন জানান, কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার ফলে কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে শুধুমাত্র দুই নম্বর ইউনিট হতে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কাপ্তাই হ্রদে স্পিডবোট ও নৌকার সংঘর্ষ: নিখোঁজ ২ শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
তিনি আরও জানান, এ কেন্দ্রের এক নম্বর ইউনিটের মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে এবং যে কোন সময়ে এটি চালু করা হবে। তবে কাপ্তাই হ্রদের পানি স্বল্পতায় এক নম্বর ইউনিটসহ ৩,৪ ও ৫ নম্বর ইউনিট চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, রবিবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ১০টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ ছিল ৯০ দশমিক ০৯ ফুট মিন সি লেভেল (এম,এস,এল)।
হ্রদের রুল কার্ভ অনুযায়ী বর্তমানে পানি থাকার কথা ১০৬ দশমিক চার (এম,এস,এল) এবং কাপ্তাই হ্রদে পানির ধারণ ক্ষমতা ১০৯ (এস,এস,এল)।
উল্লেখ্য, পানির ওপর নির্ভরশীল কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রর পাঁচটি ইউনিট দিয়ে ২৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।
তবে বছরের এই মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে তীব্র পানির সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হবার পাশাপাশি নৌ চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে।
এতে করে নৌ পথে চলাচলরত যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।
আরও পড়ুন: কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানায় নৌ চলাচল ব্যাহত: সীমাহীন দুর্ভোগে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা
কাপ্তাই হ্রদে স্পিডবোট ও বালুভর্তি ট্রলারের সংর্ঘষে আহত ৭, নিখোঁজ ২
দেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং শুরু
ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা মঙ্গলবার এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং এর সম্মুখীন হয়েছেন।
নগরীর তেজগাঁও এলাকার এক বাসিন্দা জানান, সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত তারা এক ঘণ্টার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সম্মুখীন হন, অন্যদিকে নিকেতনের আরেক বাসিন্দা জানান,তাদের এলাকায় সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল।
একটি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির নির্বাহী মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বনানীতে তাদের অফিস দুপুর ১২টা থেকে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন ছিল।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে প্রভাবিত করে জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় দৈনিক দুই ঘণ্টা লোডশেডিং এর বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানান।
আরও পড়ুন: ঢাকার কোন এলাকায় কখন লোডশেডিং, জানাল ডিপিডিসি
পরে দৈনিক এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের সংশোধিত সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেন, ‘এলাকা অনুযায়ী, আমরা সারা দেশে প্রতিদিন এক ঘণ্টার লোডশেডিং শুরু করব। প্রয়োজন হলে, সিদ্ধান্তটি এক সপ্তাহ পরে পুনর্বিবেচনা করা হবে।’
সরকার রাত ৮ টার মধ্যে শপিং মল বন্ধ, এয়ার কুলারের সীমাবদ্ধ ব্যবহার সহ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের ঘোষণা করেছে। অফিসের সময় সীমিত করার পরিকল্পনাও চলছে।
আরও পড়ুন: লোডশেডিং সরকারের ভুল নীতির ফল: বিএনপি
জ্বালানি সাশ্রয়ে এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিংয়ের কথা ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং চালু করার কথা ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আজ, আমি মনে করি যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কিছু সময়ের জন্য (প্রতিদিন) বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে বলব, যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানি সংরক্ষণ করা যায়।’
মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসে পিজিআর সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে অনলাইনে কর্মসূচিতে যোগ দেন।
তিনি বলেন, অতীতে ৮-১০ ঘণ্টা লোডশেডিং ছিল যেখান থেকে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সংকটের কারণে দেশব্যাপী লোডশেডিং বাড়ছে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে সক্ষম হয়েছে।
সব এলাকায় গণহারে লোডশেডিং হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট এলাকা এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঘোষণা করে এটি করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি আমরা এখন থেকে নির্দিষ্ট এলাকার জন্য লোডশেডিংয়ের সময় নির্দিষ্ট করতে পারি তাহলে আমরা সামনের কঠিন দিনগুলো থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারব।
করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে বিশ্বের অনেক দেশেই বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে।
তিনি বলেন, ডিজেল, জ্বালানি তেল, এলএনজির মতো বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপকরণের দাম ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে।
তিনি সকলকে মিত্যব্যায়ী হয়ে সঞ্চয় বাড়ানোর আহ্বান জানান যা ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের সংকট মোকাবিলায় সাহায্য করবে।
আরও পড়ুন: উত্তরের অনেক জেলায় জ্বালানি সংকট, যানবাহন চলাচলে ভোগান্তি
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি প্রত্যেক পরিবারের মধ্যে সঞ্চয়পন্থী মানসিকতা গড়ে ওঠে এবং খাদ্যশস্যের সর্বোত্তম উৎপাদনশীলতার জন্য তাদের নিজস্ব জমি ব্যবহার করে, তবে এটি ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে।
তিনি বলেন, সব খালি জায়গা উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করতে হবে, তা যাই হোক না কেন। বাজারের উপর চাপ কমাতে এবং অবশিষ্ট উদ্বৃত্ত খাবার বিক্রি করে লাভ করার জন্য আমাদের নিজেদের খাদ্য উৎপাদনের চেষ্টা করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রত্যেক ব্যক্তি, পরিবার ও প্রতিষ্ঠানকে এ পদক্ষেপ নিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমেরিকা, ব্রিটেনসহ অনেক দেশই বিদ্যুতের স্বল্পতার কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সম্মুখীন হচ্ছে। যদি আমরা সতর্ক থাকি আমাদের কোন সমস্যা হবে না।
ফোর্সেস গোল ২০৩০ অনুসরণ করে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করব না, আমরা শান্তি চাই। এক্ষেত্রে আমরা জাতির পিতার প্রতিরক্ষা নীতি মেনে চলি। তবে একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে হবে, বিশেষ করে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক সংগঠনগুলো গড়ে তুলতে হবে। আমরা সে জন্য পদক্ষেপ নিয়েছি এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করেছি।
আরও পড়ুন: আ.লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করছে একটি মহল: প্রধানমন্ত্রী
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দুর্নীতির অভিযোগ এনে আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্য, মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও সচিবকে অসম্মান করতে চেয়েছিল বা বাংলাদেশকে অসম্মান করতে চেয়েছিল, আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণ করে তাদের যোগ্য জবাব দিয়েছি।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অনন্য জাতিসত্তার বহিঃপ্রকাশ।
শেখ হাসিনা বলেন, এই একটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ সম্পর্কে সারা বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার দারিদ্র্য কমাতে সক্ষম হয়েছে, সব ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছে এবং এমন পদক্ষেপ নিয়েছে যেখানে কেউ গৃহহীন থাকবে না।
সিলেট অঞ্চলের বন্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে কোনো দুর্যোগ যে কোনো সময় আসতে পারে এবং জাতির পিতা শিখিয়েছেন কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি ভালো ভবিষ্যতের জন্য ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এর মতো ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়েছি।
সম্প্রতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় তিনি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের মাইলফলক: প্রধানমন্ত্রী
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। গ্রাহকদের সেবা দেয়ার জন্য সরকার প্রচুর ভর্তুকি দিচ্ছে।
রবিবার ৭৭৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম পাঁচটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ভবনে বিদ্যুৎ বিভাগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উদ্বোধন করেন।
পাঁচটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলো- হবিগঞ্জের জুলদায় বিবিয়ানা-৩ ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, চট্টগ্রাম ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইউনিট -২, নারায়ণগঞ্জে মেঘনাঘাট ১০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বাগেরহাটে মধুমতি ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সিলেট ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে উন্নত করে ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উত্তরণ।
আরও পড়ুন: জনগণের ভোগান্তিমুক্ত ভূমি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে: প্রধানমন্ত্রী
সবাইকে বিদ্যুতের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারে সচেতন থাকার অনুরোধ জানিয়ে হাসিনা বলেন, ‘যদি আপনার কোন প্রয়োজন না থাকে তাহলে বিদ্যুতের সুইচগুলো বন্ধ রাখবেন।’
তিনি বলেন, ‘যদি মানুষ সচেতন না হয় তাহলে সরকার কতটা ভর্তুকি দিতে পারে। গ্রাহকদের এটি দেখতে হবে।’
বাংলাদেশে বিদ্যুতের বিপুল উৎপাদনের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চাহিদা মেটাতে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সঞ্চালন লাইন স্থাপন করতে হবে। তাই আমরা ট্রান্সমিশন লাইনও নির্মাণ করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে ব্যাপকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: মাসে এক কোটির বেশি টিকার ব্যবস্থা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশকে বিশ্বের যোগাযোগের কেন্দ্রে পরিণত করতে চাই: প্রধানমন্ত্রী
কোভিড -১৯ মহামারি সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, যত টাকাই লাগুক না কেন সরকার সব মানুষের জন্য টিকার ব্যবস্থা করবে।
তিনি সবাইকে টিকা নেয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান বক্তব্য দেন।
বৃষ্টি না হওয়ায় দিন দিন কমে যাচ্ছে কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় টানা খরা চলছে। বৃষ্টি না হওয়ায় কাপ্তাই লেকে পানির স্তর দিন দিন কমে যাচ্ছে। লেকে পানি কম থাকায় কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনও কমে যাচ্ছে।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দায়িত্বশীল একটি সুত্র থেকে জানা যায়, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রুলকার্ভ (পানির পরিমাপ) অনুযায়ী বর্তমানে মঙ্গলবার কাপ্তাই হ্রদে পানি রয়েছে ৭৫.১২ ফুট মীন সী লেভেল (এমএসএল)। কিন্তু রুলকার্ভ অনুযায়ী হ্রদে এই মুহুর্তে (১৮ মে) পানি থাকার কথা ৭৯ ফুট এমএসএল। প্রয়োজনের তুলনায় কাপ্তাই হ্রদে বর্তমানে ৪ ফুট পানি কম রয়েছে।
আরও পড়ুন: কাপ্তাই হ্রদের মৎস্যজীবীদের জন্য আরও ৪৩৯.১২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ
হ্রদের পানি কম থাকায় কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনও কমিয়ে আনা হয়েছে।
দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি জেনারেটরের মধ্যে ৪টি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সম্পুর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। ২ নম্বর জেনারেটরটি রক্ষনাবেক্ষনের কাজের জন্য বর্তমানে বন্ধ রাখা হয়েছে। ৪টি জেনারেটর প্রস্তুত থাকা সত্বেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে রয়েছে ১টি মাত্র জেনারেটর। এই জেনারেটর থেকে বর্তমানে ২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। স্বাভাবিকের চেয়ে লেকে পানি কম থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম থাকা সত্বেও ৩, ৪ ও ৫ নম্বর জেনারেটর চালানো সম্ভব হচ্ছেনা।
আরও পড়ুন: কাপ্তাই হ্রদে আগামী ৩ মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এটিএম আব্দুজ্জাহের কাপ্তাই লেকে পানি কম থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা থাকা সত্বেও হ্রদের পানি কম থাকায় সব জেনারেটর সচল রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছেনা।
অচিরেই ভারি বৃষ্টি হবার আশা প্রকাশ করে ব্যবস্থাপক বলেন, বৃষ্টি হলে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। তখন সব জেনারেটর চালু করা গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনও বাড়ানো সম্ভব হবে।
সুত্র জানায় কাপ্তাইয়ে মোট ২৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। কাপ্তাই লেকে ৯০ ফুট এসএমএলের উপর পানি থাকলে এবং সবগুলো জেনারেটর একযোগে চালানো সম্ভব হলে এই কেন্দ্র থেকে ২৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
জানা গেছে, কাপ্তাই থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ প্রতি ইউনিট মাত্র ২৫ পয়সা। বাংলাদেশে আর কোথাও এত কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়না বলেও সুত্র নিশ্চিত করেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন: দেশে প্রচলিত উৎস থেকে অনেক পিছিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি
টানা তিন মেয়াদে দেশের সামগ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছিল, তা অর্জনে সরকারের প্রচেষ্টা থাকলেও সফল হয়নি।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্থানীয় কয়লা উত্তোলন সাশ্রয়ী নয়: নসরুল হামিদ
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, এখন পর্যন্ত করা সব গবেষণায় দেখা গেছে যে স্থানীয় কয়লা উত্তোলন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব ও সাশ্রয়ী নয়।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিদ্যমান পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন: সরকারকে সিপিডি
বিদ্যুৎ উৎপাদনে চলমান পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান (পিএসএমপি) ২০১৬ থেকে সরকারকে সরে আসার পরামর্শ দিয়েছে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। তারা বলছে, চলমান ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩৭ শতাংসে এসে দাঁড়িয়েছে যা মাত্রাতিরিক্ত।