আপিল বিভাগ
সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের সম্পত্তি স্থিতাবস্থায় রাখার নির্দেশ আপিল বিভাগের
রাজধানীর গুলশানে খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহসভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা বাড়ির দখল ও অবস্থানের ওপর আট সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে সালাম মুর্শেদীর করা আবেদনের শুনানি নিয়ে রবিবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
এর আগে বাড়িটি নিয়ে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত ১৯ মার্চ হাইকোর্ট ওই সম্পত্তি ‘পরিত্যক্ত সম্পত্তি’ উল্লেখ করেন। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির মাধ্যমে তিন মাসের মধ্যে সরকারের কাছে বাড়িটি হস্তান্তর করতে সালাম মুর্শেদীকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
সম্পত্তির দখল ও অবস্থান বুঝে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিবকে আদালতে প্রতিবেদন (অ্যাফিডেভিট ইন কমপ্লায়েন্স) দিতেও বলা হয়।
আরও পড়ুন: সালাম মুর্শেদীর সেই বাড়ির মূল নকশা ৭ দিনের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ
হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে সালাম মুর্শেদী আপিল বিভাগে আবেদন করেন। যা রবিবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। চেম্বার বিচারপতির আদালতে সালাম মুর্শেদীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম ও মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা। রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক।
পরে আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, গুলশানের ওই সম্পত্তির দখল ও অবস্থানের ওপর দুই পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন চেম্বার বিচারপতির আদালত। গুলশানের বাড়িটি আপাতত সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকছে।
এর আগে ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর গুলশানের এই বাড়িটি সালাম মুর্শেদীর দখলের রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
রিট আবেদনে বলা হয়, রাজধানীর গুলশান-২ এর ১০৪ নম্বর সড়কে সি ই এন (ডি)-২৭ এর ২৯ নম্বর বাড়িটি ১৯৮৬ সালের অতিরিক্ত গেজেটে ‘খ’ তালিকায় পরিত্যক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত। কিন্তু আব্দুস সালাম মুর্শেদী সেটি দখল করে বসবাস করছেন।
রিটে ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল, ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি ও ২০২২ সালের ৪ জুলাই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যানকে দেয়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তিনটি চিঠি যুক্ত করা হয়েছে।
২০১৫ ও ২০১৬ সালে দেয়া চিঠিতে পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকা থেকে বাড়িটি অবমুক্ত না হওয়ার পরও আব্দুস সালাম মুর্শেদী কীভাবে বাড়িটি দখল করে আছেন রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে এ ব্যাখ্যা চেয়েছিল পূর্ত মন্ত্রণালয়। কিন্তু রাজউক চেয়ারম্যান সে চিঠি আমলে না নেয়ায় ফের ২০২২ সালের ৪ জুলাই চিঠি দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: সালাম মুর্শেদীর বাড়ি: দুটি ভিডিও সরাতে ব্যারিস্টার সুমনকে নির্দেশ
চিঠিতে বলা হয়, পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকা থেকে ভবনটি অবমুক্ত না হওয়ার পরও কীভাবে রাজউক চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে সেটির নামজারি ও দলিল করার অনুমতি দেওয়া হলো সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু রাজউক চেয়ারম্যান সে ব্যাখ্যা দিতে অনীহা দেখিয়েছেন।
রিটের পর ২০২২ সালের ১ নভেম্বর আদালত রুল জারি করে আদেশ দেন। রুলে বাড়িটি বেআইনিভাবে দখলে রাখার অভিযোগে আবদুস সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। আর বাড়ি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র হলফনামা আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দেন। পরে পাশাপাশি আদেশ ও কোর্টের কার্যক্রম ছাড়া এ মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে কোনো প্রকার প্রচার-প্রচারণা না করতে উভয়পক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়।
চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি শুনানিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী আদালতকে জানান, আদালতের নির্দেশের পর বাড়িটি নিয়ে দুদক অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানে বাড়িটির বিষয়ে জাল–জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়।
আরও পড়ুন: এমপি সালাম মুর্শেদীর বাড়ি ৩ মাসের মধ্যে হস্তান্তরের নির্দেশ
মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষীর ভিত্তিতে দুদক সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে যাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ পেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ৫ ফেব্রুয়ারি মামলা করে। পরে গত ৩ মার্চ এ সংক্রান্ত রুলের ওপর শুনানি শেষ হয়। ১৯ মার্চ বাড়িটির দখল সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে হাইকোর্ট আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা বাড়ির নথি ও তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ
আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করায় রোজায় খোলা থাকবে স্কুল
রমজান মাসে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: রোজায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ থাকবে: হাইকোর্ট
এ আদেশের ফলে রমজানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল খোলা রাখতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ কে এম ফয়েজ।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। ফলে রমজানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল খোলা থাকবে।
এর আগে রবিবার রমজানের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: রমজানে স্কুল বন্ধ: মঙ্গলবার আপিল বিভাগে শুনানি
ঢাকায় শুরু হয়েছে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের ডিগ্রিতে ইউসিবি’র আর্লি এনরোলমেন্ট গ্র্যান্ট
হেফাজত নেতা মামুনুলের ২ মামলায় জামিন আপিল বিভাগে বহাল
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর করার অভিযোগে দায়ের করা দু’টি মামলায় হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
সোমবার (৫ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে মামুনুল হকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ আর রায়হান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম।
পরে জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, প্রায় তিন বছর থেকে জেলে আছেন মামুনুল হক। এ দু’টি মামলায় আজ পর্যন্ত পুলিশ অভিযোগ পত্র দাখিল করেননি। ফলে তিনি জামিন পেতে পারেন। পরে আপিল বিভাগ তার জামিন বহাল রেখেছেন।
আরও পড়ুন: দুই মামলায় মামুনুল হকের জামিন আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ
২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টের একটি কক্ষে মামুনুল হককে নারীসহ অবরুদ্ধ করেন স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ লোকজন।
পরে পুলিশ গিয়ে মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় খবর পেয়ে হেফাজত ও মাদরাসার ছাত্ররা ওই রিসোর্টে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালিয়ে তাকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন। পরে হেফাজতের নেতা–কর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করেন এবং টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান নেতা-কর্মীরা।
এরপর একই বছরের ১৮ এপ্রিল মামুনুল হককে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে ঢাকা মহানগর তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
রয়েল রিসোর্ট কাণ্ডের ২৭ দিন পর ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় হাজির হয়ে কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর, রয়েল রিসোর্টে ভাঙচুরসহ বেশ কিছু অভিযোগে পৃথক মামলা হয় তার বিরুদ্ধে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর ঘিরে সহিংসতা ও রিসোর্টকাণ্ডে রাজধানীর পল্টন থানা ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় দু’টি মামলা হয় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে। পরে তাকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গত বছরের ৯ মে বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ নারায়ণগঞ্জের সোনাগাঁও থানায় করা দুই মামলায় মামুনুল হককে জামিন দেন।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১০ মে এই দুই মামলায় জামিন স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। এরপর বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আপিল বিভাগ দু’টি মামলায় তার জামিন বহাল রাখেন।
আরও পড়ুন: আরও ৩ মামলায় জামিন পেল মামুনুল হক
ডিআইজি প্রিজন্স বজলুর রশীদের জামিন মেলেনি আপিল বিভাগেও
দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ডিআইজি বজলুর রশীদকে জামিন দেননি আপিল বিভাগ।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বোরহান উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ বজলুর রশীদকে জামিন না দিয়ে শুনানির জন্য ১২ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এবং বজলুর রশীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শ. ম. রেজাউল করিম।
আরও পড়ুন: আদালত অবমাননা: ব্যাখ্যা জানাতে সুরক্ষা সচিবসহ কারা মহাপরিদর্শককে আপিল বিভাগে তলব
গত বছরের ৫ এপ্রিল বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত জামিন দেন। এ জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে দুদক।
গত ২ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ২৯ মে পর্যন্ত জামিন আদেশ স্থগিত করেন। একইসঙ্গে শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান।
২০২২ সালের ৩ নভেম্বর বজলুর রশীদের খালাস চেয়ে করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তার জরিমানা স্থগিত করে নিম্ন আদালতের নথি তলব করেন।
এ আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তিনি জামিন চেয়ে আবেদন করেন। এরপর ২৭ নভেম্বর তার জামিন আবেদন খারিজ করেছিলেন হাইকোর্ট।
এর আগে একই বছরের ২৩ অক্টোবর জ্ঞাত আয়ের বাইরে তিন কোটি টাকার বেশি সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কারা কর্তৃপক্ষ থেকে বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি বজলুর রশিদকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
এছাড়া তাকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. ইকবাল হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন চেয়ে আপিল বিভাগে ইনসানিয়াতের মামলা
বিএনপির ৭ শীর্ষ আইনজীবী নেতাকে আপিল বিভাগে তলব
আদালত অবমাননা: ব্যাখ্যা জানাতে সুরক্ষা সচিবসহ কারা মহাপরিদর্শককে আপিল বিভাগে তলব
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী ও কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হককে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আদালত অবমাননার অভিযোগে করা পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ছয় কারা কর্মকর্তার পদোন্নতিসংক্রান্ত সর্বোচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে আগামী ৪ ডিসেম্বর তাদের আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সুজনের হাফিজ-বদিউলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা মামলার আবেদন
আদালত অবমাননার অভিযোগে করা আলাদা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আদালত অবমাননার অভিযোগে করা আলাদা পাঁচটি আবেদন শুনানির জন্য আগামী ৪ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
জানা যায়, পদোন্নতি নিয়ে ছয় কারা কর্মকর্তার (জেল সুপার) করা পুনর্বিবেচনার আবেদনের (রিভিউ) উপর গত বছরের ২২ এপ্রিল আপিল বিভাগ রায় দেন। রায়ে ১৯৮৪ সালের অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফ (ডিপার্টমেন্ট অব প্রিজন্স) রিক্রুটমেন্ট বিধিমালার আলোকে দ্রুত আবেদনকারীদের (ছয় জেল সুপার, চলতি দায়িত্ব) পদোন্নতির বিষয়টি বিবেচনা করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়।
রায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় আদালত অবমাননার অভিযোগে পদোন্নতিপ্রত্যাশী মো. নুরুন্নবী ভূঁইয়াসহ পাঁচ কর্মকর্তা গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর আলাদা পাঁচটি আবেদন করেন।
আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইব্রাহীম খলিল। কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সফিকুল ইসলাম।
আবেদনকারীদের আইনজীবী ইব্রাহীম খলিল বলেন, আদালত অবমাননার আবেদনগুলো গত ৬ নভেম্বর আপিল বিভাগে শুনানির জন্য উঠে। ওই দিন কারা কর্তৃপক্ষের আইনজীবী ছয়জনকে পদোন্নতি দিতে রিভিউয়ের রায় বাস্তবায়নের জন্য দুই সপ্তাহ সময় নেন।
তিনি আরও বলেন, সে অনুযায়ী সোমবার ফের শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় আসে। শুনানিতে বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির ১৬ নভেম্বরের এক সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন কারা কর্তৃপক্ষের আইনজীবী।
ওই সিদ্ধান্তে বলা হয়- ছয় কর্মকর্তাকে ১৯৮৪ সালের নিয়োগবিধির আওতায় এ পর্যায়ে ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার সুযোগ নেই। সর্বোচ্চ আদালতের রায় সত্ত্বেও এ ধরনের সিদ্ধান্ত ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ বলে মন্তব্য করেন আপিল বিভাগ।
পরে ছয় কর্মকর্তার পদোন্নতির রায় কেন বাস্তবায়িত হয়নি, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী ও কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হককে ৪ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় সশরীরে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
আদালত সূত্র জানায়, ছয় কর্মকর্তা ২০০৮ সালে জেল সুপারের চলতি দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৮৪ সালের নিয়োগবিধি অনুসারে পূর্ণ নিয়োগ পেতে তথা পদোন্নতির জন্য ২০১৬ সালে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে বিফল হন।
এ নিয়ে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করলে তাদের পক্ষে রায় পান। এর বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ আপিল ট্রাইব্যুনালে গেলে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়।
এর বিরুদ্ধে তারা আপিল বিভাগে আপিল করেন, যা ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল খারিজ হয়। আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ছয় কর্মকর্তা ২০১৯ সালে ছয়টি আবেদন (রিভিউ) করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ গত বছরের ২২ এপ্রিল ওই রায় দেন।
আরও পড়ুন: জামায়াতে ইসলামীর কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা ও আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানি ৬ নভেম্বর
মেয়র তাপসের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা: শুনানি ১৪ আগস্ট
বিএনপির ৭ শীর্ষ আইনজীবী নেতাকে আপিল বিভাগে তলব
আপিল বিভাগের দুই বিচারপতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল সমাবেশ করায় আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বিএনপির সাত শীর্ষ আইনজীবী নেতাকে তলব করেছেন আপিল বিভাগ।
আগামী ১৫ জানুয়ারি তাদের আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: সাকিবকে নিয়ে সমালোচনা: ধারাভাষ্য থেকে ওয়াকারের নাম প্রত্যাহারে হাইকোর্টের রুল
সাত আইনজীবী নেতা হলেন- জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ফোরামের সভাপতি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আইনজীবী ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি আইনজীবী আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহসম্পাদক আইনজীবী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী গাজী কামরুল ইসলাম সজল।
তবে আদালত অবমাননার অভিযোগে স্বেচ্ছায় পক্ষভুক্ত হতে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মহসিন রশীদের আবেদন গ্রহণ করেননি সর্বোচ্চ আদালত।
এ সময় আদালতে অবমাননার অভিযোগের আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যূথী।
গত ১৫ আগস্ট শোক দিবসের আলোচনা সভায় সংবিধান অনুসারে বিচারপতিরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ উল্লেখ করে বক্তব্য দেওয়ায় আপিল বিভাগের দু’জন বিচারপতির বিরুদ্ধে একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এছাড়া ওই দু’জন বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে বিএনপিপন্থী আইনজীবী নেতারা মিছিল-সমাবেশও করেন।
এরপর দুই বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে ২৭ আগস্ট ওই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে দেওয়া বক্তব্যের কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করে ২৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. নাজমুল হুদা আবেদনটি করেন। আবেদনে বিচারপতিদের নিয়ে ব্যানার, লিফলেটসহ বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মিছিল ও অবস্থানের ছবি যুক্ত করা হয়।
আরও পড়ুন: হাইকোর্ট এলাকায় বাসে আগুন
দুই মন্ত্রীর সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ বৈধ: আপিল বিভাগ
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের নির্বাচনী আসন পিরোজপুর-১ এবং সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নির্বাচনী আসন পিরোজপুর-২ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ বৈধ বলে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন- জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান, ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান, আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
আরও পড়ুন: বাফুফেতে ফিফার দেওয়া অর্থ নিয়ে অনিয়ম অনুসন্ধানে আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থা জারি
শুনানিতে আপিল বিভাগ অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের মত জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংবিধানের ১২৪ অনুচ্ছেদে সীমানা পুর্নির্ধারণের আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ওই ক্ষমতাবলেই সংসদ বা সরকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইন অনুযায়ী পিরোজপুর ১ ও ২ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করেছে ইসি।
তিনি বলেন, আর এই সীমানা পুনর্নির্ধারণ কোনো আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলেও সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবেদনকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রাথমিক প্রস্তাবনায় কোনো পরিবর্তন না থাকায় আপত্তি দেওয়ার সুযোগ হয়নি। তাই এখানে সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইনের পুরো প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি।
শুনানি শেষে আপিল বিভাগ আবেদন খারিজ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।
এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের নির্বাচনী আসন পিরোজপুর-১ ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নির্বাচনী আসন পিরোজপুর-২ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের বৈধতা নিয়ে জারি করা রুল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে রবিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে আদালত বলেন, নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী সীমানা পুনর্নির্ধারণ করেছেন। আইনের কোন ব্যত্যয় হয়নি। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন রিটকারীরা।
আরও পড়ুন: আপিল বিভাগে মেয়র জাহাঙ্গীরের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা
গত ৩০ জুলাই মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের নির্বাচনী আসন পিরোজপুর-১ ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নির্বাচনী আসন পিরোজপুর-২ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রজ্ঞাপন কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের ২ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান, ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামাল হোসেন মিয়াজী।
এর আগে পিরোজপুর-১ ও পিরোজপুর-২ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন পিরোজপুরের কাউখালীর বাসিন্দা আবু সাঈদ মিয়া, ভান্ডারিয়া পৌরসভার বাসিন্দা মো. কায়কোবাদ, মো. আহসানুল কিবরিয়া, ইন্দুরকানী উপজেলার বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান, নেছারাবাদ উপজেলার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম শরীফ।
গত ৩ জুন প্রকাশিত নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পিরোজপুর-১ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে পিরোজপুর-২ আসনে থাকা ইন্দুরকানি উপজেলা। আর পিরোজপুর-১ আসন থেকে কেটে নেছারাবাদ উপজেলাকে যুক্ত করা হয়েছে পিরোজপুর-২ আসনের সঙ্গে। ফলে এখন পিরোজপুর-১ আসনের সীমানায় থাকছে পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানি উপজেলা।
অন্যদিকে পিরোজপুর-২ আসনে থাকছে কাউখালী, ভান্ডারিয়া ও নেছারাবাদ উপজেলা। ইন্দুরকানি উপজেলা বাদ দিয়ে এখানে নেছারাবাদকে যুক্ত করায় নাখোশ এ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য হলেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
আরও পড়ুন: বিচারপতিকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য, মেয়রকে আপিল বিভাগে তলব
সুপ্রিম কোর্টে মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধের রায় কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশ
সুপ্রিম কোর্টে সমাবেশ ও মিছিল না করার বিষয়ে ২০০৫ সালের উচ্চ আদালতের একটি রায় কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
বুধবার (৩০ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম।
একই সঙ্গে দুই বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করার প্রেক্ষাপটে বিএনপি সমর্থক সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে যে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়েছে সে বিষয়ে শুনানির জন্য ১৯ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আপিল বিভাগে মেয়র জাহাঙ্গীরের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা
আদালত অবমাননার আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন- নাহিদ সুলতানা যুথি। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
আদেশের পরে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব আদালত প্রাঙ্গণে কোনো ধরনের মিছিল, সভা-সমাবেশ ও লিফলেট বিতরণ করা যাবে না।
সুপ্রিম কোর্টের এ রায় এখন থেকে মানা না হলে তা হবে আদালত অবমাননা। কারণ আপিল বিভাগ আজ ২০০৫ সালে দেওয়া ওই রায় মেনে চলতে বলেছেন। নিষেধ অমান্য করে কেউ মিছিল, সভা-সমাবেশ ও লিফলেট বিতরণ করলে সেই আইনজীবী আইনি কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবে বলেও তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, মূলত ২০০৫ সালে তৎকালীন হাইকোর্টের বিচারপতি আবদুল মতিনের বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এসব নিষেধাজ্ঞা দেন। আজ থেকে সেই রায় কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে। তবে আদালত অবমাননার অভিযোগ ওঠা বিএনপির ৭ আইনজীবীর ক্ষেত্রে এই রায় কার্যকর হবে না বলেও জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।
গত ১৫ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত শোক দিবসের এক আলোচনা সভায় দুই বিচারপতি তাদের বক্তব্যে বলেন, ‘বিচারপতিরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’। ওই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তাদের অপসারণ চেয়ে সংবাদ সম্মেলনের পাশাপাশি কয়েকটি কর্মসূচি পালন করেছেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিএনপি সমর্থক সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহণ চেয়ে সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেন মো. নাজমুল হুদা নামে এক আইনজীবী। সেই আবেদন আপিল বিভাগে উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথী।
বিএনপির যে সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হলেন- জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাবেক সহসম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফাহিমা নাসরিন মুন্নি এবং ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল।
বুধবার (৩০ আগস্ট) আবেদনটি শুনানির জন্য আদালতে আবেদন করেন আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথি।
এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা আবেদনটি অবকাশের পর শুনানি গ্রহণ করব। এরপরই ২০০৫ সালে হাইকোর্টের দেওয়া রায় কঠোরভাবে অনুসরণের আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে বিচারপতি এম.এ মতিন ও বিচারপতি এএফএম আব্দুর রহমানের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রায়ে বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ বা মিছিল করা যাবে না। বহন করা যাবে না কোনো প্ল্যাকার্ড। এ ধরনের কর্মকাণ্ড করলে তা হবে বিচার প্রশাসনে হস্তক্ষেপের সামিল। এমনকি তা আদালত অবমাননাও বটে।
এ ছাড়া কর্মসূচি দিয়ে কোনো আইনজীবীকে মামলা পরিচালনা করতে বাধা দেওয়া যাবে না বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এই রায় গত ১৮ বছরেও মেনে চলেনি আইনজীবীদের সংগঠনগুলো।
আরও পড়ুন: বিচারপতিকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য, মেয়রকে আপিল বিভাগে তলব
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আপিল বিভাগেও খারিজ
আপিল বিভাগে মেয়র জাহাঙ্গীরের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার রায় প্রসঙ্গে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করার ঘটনায় আপিল বিভাগে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে হাজির হয়ে তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
তবে, এদিন আদালত মেয়রকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেননি। তার বিরুদ্ধে জারি করা আদালত অবমাননার রুলের শুনানির জন্য আগামী ১২ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়েছে। ওইদিন মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে কোর্টে ফের হাজির হতে হবে।
এর আগে গত ১৭ আগস্ট আপিল বিভাগ তাকে তলব করে।
আরও পড়ুন: বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা স্থগিত
এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ জারি করেন। নোটিশে বিচারপতি সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করায় কেন তাকে শাস্তি দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে চার আইনজীবীর করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ওই আদেশ দেন।
আবেদনকারী চার আইনজীবী হলেন- হারুন অর রশীদ, মাহফুজুর রহমান রোমান, মনিরুজ্জামান রানা ও শফিক রায়হান শাওন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে নিয়ে একটি ইউটিউব চ্যানেলে জাহাঙ্গীর আলমের করা মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আইনজীবীরা এ আবেদন জমা দেন।
সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যানকে অবিলম্বে ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্ম থেকে জাহাঙ্গীরের মন্তব্যসহ ভিডিওটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন শাহ মঞ্জুরুল হক এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। এছাড়া পৌর মেয়রের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
জানা গেছে, দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বিএনপির রংপুর বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি দিনাজপুর পৌরসভার পরপর তিনবারের নির্বাচিত মেয়র।
আরও পড়ুন: গাজীপুরের বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ফরিদপুরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে আনা যৌন নির্যাতনের মামলার শুনানি শুরু আপিল বিভাগে
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আপিল আদালত শুক্রবার (১৯ আগস্ট) মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনা দুজন ভুক্তভোগীর মামলা শুনানি শুরু করেছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার দ্বিতীয় ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট অব আপিলের তিন বিচারকের একটি প্যানেল ওয়েড রবসন ও জেমস সেফচাক নামের ওই দুজনের মামলা শুনানি শুরু করেছেন।
এই বিচারকদের মতে, এই দুজনের মামলা নিম্ন আদালতের খারিজ করা উচিত নয়। তারা জ্যাকসনের মালিকানাধীন দুটি কর্পোরেশনের সঙ্গে আইনগত লড়াই চালানোর বৈধ দাবি করতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়ার নতুন একটি আইনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল আদালত যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলো পুনরায় বিচার শুরু করেছে।
এর আগে ২০১৩ সালে রবসন এবং পরের বছর সেফচাক এই অভিযোগ উত্থাপন করেন।
তবে ২০১৯ সালে এইচবিও ডকুমেন্টারি ‘লিভিং নেভারল্যান্ড’-এ তাদের গল্প বলার জন্য দুই তরুণ ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করে।
একজন বিচারক ২০২১ সালের মামলাগুলো খারিজ করে দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: মাইকেল জ্যাকসনের স্মৃতিমাখা ওয়েস্টলেক স্টুডিওতে চিরকুট
তিনি বলেছিলেন, এমজেজে প্রোডাকশন ইনকরপোরেশন ও এমজেজে ভেনচারস ইনকরপোরেশন বয় স্কাউট বা চার্চের মতো কাজ করবে তা আশা করা যায় না। অভিযোগকারীরা আশা করছে প্রতিষ্ঠান দুটি শিশুদের সব ধরনের সুরক্ষার দেবে।
২০০৯ সালে মারা যাওয়া জ্যাকসন কোম্পানিগুলোর একমাত্র মালিক এবং একমাত্র শেয়ারহোল্ডার ছিলেন।
উচ্চ আদালতের বিচারকরা এই মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন।
তাদের প্রতিবেদনে উচ্চ আদালতের বিচারকরা লিখেছেন: ‘শিশুদের যৌন নির্যাতনকারী একজন কর্মচারীকে সুবিধা দেয় একটি প্রতিষ্ঠান এবং তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় না। কারণ যৌন নির্যাতনকারী নিজেই ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক।’
তারা আরও বলেছে, ‘শুধু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার হওয়ার কারণে অপরাধীর কিছুই হবে না, এটা এক ধরনের বিকৃতি। তাই আমরা করপোরেশনগুলো জন্য দেওয়া রায় বাতিল করি।”
অন্যদিকে, জ্যাকসন এস্টেটের অ্যাটর্নি জোনাথন স্টেইনসাপির জানিয়েছেন তারা ‘হতাশ’।
আরও পড়ুন: মাইকেল জ্যাকসনের বায়োপিকে অভিনয় করবেন ভাতিজা জাফর
স্টেইনসাপির অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) একটি ইমেলে বলেছেন, ‘দুইজন বিশিষ্ট বিচারক গত এক দশকে বারবার এই মামলাগুলো বহুবার খারিজ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করি যে মাইকেল এই অভিযোগগুলো থেকে নির্দোষ প্রমাণিত হবে। শুধুমাত্র অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে মাইকেলের মৃত্যুর কয়েক বছর পরে এসব মামলা করা হয়েছে।’
শুক্রবার স্টেইনসাপির বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি আবারও মাইকেল ন্যায়বিচার পাবেন এবং আমরা জয়লাভ করব।’
রবসন ও সেফচাকের একজন অ্যাটর্নি ভিন্স ফিনাল্ডি একটি ইমেলে বলেছেন, তারা ‘সন্তুষ্ট এবং বিস্মিত নন’ যে আদালত পূর্ববর্তী বিচারকের ‘এই মামলাগুলোতে দেওয়া ভুল রায়গুলো বাতিল করেছেন।’
তিনি বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ায় এ ধরনের অপরাধে শাস্তির জন্য কোনো আইন ছিল না। তাই রাজ্য ও দেশজুড়ে শিশুরা বিপন্ন ছিল। আমরা ন্যায়বিচারের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।’
আরও পড়ুন: মাইকেল শিরোনামে নির্মিত হবে ‘কিং অফ পপ’ মাইকেল জ্যাকসনের বায়োপিক
রবসন (৪০) একজন কোরিওগ্রাফার। তিনি ৫ বছর বয়সে জ্যাকসনের সঙ্গে পরিচিত হন। তিনি তিনটি জ্যাকসন মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছেন।
মামলায় তিনি অভিযোগ করেছেন, জ্যাকসন তাকে সাত বছর ধরে শ্লীলতাহানি করেছেন।
সেফচাক (৪৫) বলেন, পেপসির একটি বিজ্ঞাপনের চিত্রগ্রহণের সময় তিনি জ্যাকসনের সঙ্গে দেখা করেন। সেসময় তার বয়স ছিল ৯ বছর। জ্যাকসন তাকে প্রায়ই ডাকতেন এবং নির্যাতন করার আগে তাকে উপহার দিতেন।
এপি সাধারণত যৌন নির্যাতনের শিকারদের নাম প্রেকাশ করে না। কিন্তু রবসন ও সেফচাক তাদের পরিচয় ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছেন।