একনেক সভা
শতভাগ বিদ্যুতায়ন একটি যুগান্তকারী অর্জন: প্রধানমন্ত্রী
দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া একটি যুগান্তকারী অর্জন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই অর্জনের মাধ্যমে সরকার জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন।
তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, শিগগিরই সকল গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে বঙ্গবন্ধুর আরেকটি স্বপ্ন।
শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কঠোর পরিশ্রমকারী সকল সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো বেসরকারি উদ্যোগে বিদেশি বিনিয়োগে ৪৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার মেঘনা ঘাট ও ৩৬০ মেগাওয়াট হরিপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে, আওয়ামী লীগে সরকার ২০০৯ সাল থেকে অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে যার ফলে শতভাগ বিদ্যুৎ কভারেজ অর্জন সম্ভব করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ অর্জনের ধারাবাহিকতায় জাতির পিতার আরেকটি স্বপ্ন পূরণে দেশের সব গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর নির্মাণের কাজ চলমান।
অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলে বিগত বছরগুলোতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, গতকাল (সোমবার) পটুয়াখালী জেলায় সবচেয়ে বড় পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পায়রা সমুদ্র বন্দর, সেনানিবাস, নৌ ঘাঁটিও অন্যান্য অবকাঠামোর মতো অনেক বড় স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে যা এই অঞ্চলের সামগ্রিক দৃশ্যপটকে বদলে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: শতভাগ বিদ্যুতায়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রধানমন্ত্রীকে এফবিসিসিআই সভাপতির অভিনন্দন
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খুব শিগগিরই এই মেগা প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হবে এবং দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ চিরতরে শেষ হবে।
বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন দক্ষিণাঞ্চলকে ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও অন্যান্য দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী বৃক্ষরোপণ ও সবুজ বনায়নের প্রচারণার পাশাপাশি উপকূলীয় অঞ্চলে কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ বন তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং গত ১৩ বছর ধরে জনগণের রায়ে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারকে দেশের জন্য এই বড় অর্জনে সহায়তা করেছে।
আরও পড়ুন: ‘জয় বাংলা’ স্লোগান না দেয়া মানে স্বাধীনতার আদর্শকে অবিশ্বাস করা: প্রধানমন্ত্রী
একনেক সভায় অনুমোদন পেলো দক্ষিণ সিটির ম্যাকানাইজড পার্কিং স্থাপন প্রকল্প
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক সভায় অনুমোদন পেলো ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধিভুক্ত এলাকায় বর্জ্য অপসারণ ও ব্যবস্থাপনা, সড়ক মেরামতে ব্যবহৃত আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ এবং ম্যাকানাইজড পার্কিং স্থাপনের মাধ্যমে যানজট নিরসন করণ’ শীর্ষক প্রকল্প।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এনইসি সম্মেলন কক্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এনইসি সম্মেলন কক্ষের বৈঠকে অংশ নেন।
অনুমোদিত এই প্রকল্পের আওতায় আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহের মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং যান-যন্ত্রপাতিসমূহ রক্ষণাবেক্ষণ ও যত্রতত্র বর্জ্যবাহী গাড়ির পার্কিং রোধ করতে একটি আধুনিক পার্কিং গ্যারেজ নির্মাণ করে যানজট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।
প্রকল্পের আওতায় একটি আধুনিক ম্যাকানাইজড পার্কিং গ্যারেজ নির্মাণ করা হবে। ফলে, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়িগুলোর সড়কের যত্রতত্র পার্কিং রোধ করা এবং মেরামতসহ পার্কিং ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এই গ্যারেজে ৫০০ গাড়ির আধুনিক ব্যবস্থাপনা ও পার্কিং করার সুযোগ থাকবে। এতে যানজট কমার পাশাপাশি বর্জ্যবাহী গাড়ির আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬.৯৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে: পরিকল্পনামন্ত্রী
প্রকল্পের গ্যারেজ নির্মাণ অনুষঙ্গে গ্যারেজের সীমানা প্রাচীর, কার ওয়াশ রুম, ৬টি ওয়াচ টাওয়ার, ফ্যাসিলিটিজ এরিয়ার পার্কিং ফ্লোর ডেভেলপমেন্ট ও পার্কিং শেড নির্মাণ, মটর গ্যারেজের ইলেকট্রিফিকেশন, শেড লাইটিং, টয়লেট ফ্যাসিলিটিস, আন্ডারগ্রাউন্ড রিজারভার, নামাজের ঘর ও ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণ, অফিস বিল্ডিং, সাব-স্টেশন, ইন-আউট গেইট, গভীর নলকূপ ও ওভারহেড পানির ট্যাংক নির্মাণ, ফ্যাসিলিটিজ এরিয়ার সড়ক ও ড্রেনেজ নির্মাণ, অফিস ব্লক সংলগ্ন এরিয়ার সড়ক ও ড্রেনেজ নির্মাণ, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও সাউন্ড সিস্টেম সংযোজন ইত্যাদি উপাদান থাকবে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে বর্জ্য অপসারণ ও ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত যান যন্ত্রপাতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ, সড়ক মেরামত ও উচ্ছেদ কার্যক্রমে ব্যবহৃত আধুনিক ভারী যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হবে।
এই অনুষঙ্গে ২০টি হাইড্রোলিক ল্যাডার, পাঁচটি এক্সাভেটর চেইন মাউন্টেড (সর্ট বুম), একটি এক্সাভেটর চেইন মাউন্টেড (লং বুম), পাঁচটি চেইন ডোজার, পাঁচটি বেকহো লোডার, ১০টি চাকার রোড রোলার (১০ টন), পাঁচটি তিন চাকার রোড রোলার (৮ টন),তিনটি জীপ, পাঁচটি ডাবল কেবিন পিকআপ, চারটি পুলিশবাহী প্রটেকশন ট্রাক, পাঁচটি ম্যাজিষ্ট্রেটবাহী মাইক্রোবাস, পাঁচটি পে লোডার, তিনটি টায়ার ডোজার, একটি লো-বেড ট্রেইলর, দুটি হুইল মাউন্টেড স্কেভেটর, ১০টি তিন হাজার লিটার সক্ষমতার পানির গাড়ি ক্রয় করা হবে।
এছাড়াও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠান যথা- ঈদ-উল আযহা, ঈদ-উল ফিতর, ১লা বৈশাখ, দুর্গাপূজা, ২৬শে মার্চ, ১৬ই ডিসেম্বর, ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৫ই অগাস্ট, প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন প্রোগ্রাম, বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ বৈদেশিক বিভিন্ন ভিআইপি ও সাধারণ ব্যক্তিদের মোবাইল টয়লেট সেবা নিশ্চিত করতে প্রকল্পের আওতায় ১০টি মোবাইল টয়লেট ক্রয় করা হবে।
মোট ৩৩৩ কোটি ৩২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০২১ সাল থেকে জুন ২০২৪ সাল মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ২৯৯ কোটি ৯৯ লাখ ২৯ হাজার টাকা সরকারি অর্থায়নে এবং ৩৩ কোটি ৩৩ লাখ ২৬ হাজার টাকা দক্ষিণ সিটির নিজস্ব অর্থায়নে উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
আরও পড়ুন: চসিকের উন্নয়নে একনেকে ২৪৯০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন
যশোর, সৈয়দপুর ও রাজশাহী বিমানবন্দরের উন্নয়নে ৫৬৭ কোটি টাকা
দেশের অভ্যন্তরীণ তিনটি বিমানবন্দরের (যশোর, সৈয়দপুর ও রাজশাহী) উন্নয়নে ৫৬৭ কোটি টাকার প্রকল্পসহ মোট চারটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পেয়েছে।