আবরার
আবরার হত্যা: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৭ আসামির জেল আপিল গ্রহণ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৭ আসামির করা জেল আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কারাগার থেকে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এসব মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি পৃথক জেল আপিল করেন, যা বুধবার হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ওঠে। পরে বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার জেল আপিলগুলো শুনানির জন্য গ্রহণ করেন।
আদালত বলেছেন, ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) সঙ্গে জেল আপিলগুলোরও শুনানি হবে। এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমি উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ মামলার ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।
আইন অনুযায়ী বিচারিক আদালতে কোন আসামিকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হলে তার মৃত্যু অনুমোদনের জন্য মামলাটির যাবতীয় নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এরপর এটি ডেথরেফারেন্স মামলা হিসেবে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় অন্তর্ভূক্ত হয়। পরে মামলার পেপারবুক (যাবতীয় নথি সম্বলিত ফাইল) প্রস্তুত হলে সিরিয়াল অনুসরণ করে ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হয়।
আরও পড়ুন: আবরার হত্যা: খালাস চেয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সেতুর হাইকোর্টে আপিল
এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-মেহেদী হাসান রাসেল (২৪), মো. অনিক সরকার ওরফে অপু (২২), মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত (২৩), ইফতি মোশাররফ সকাল (২০), মো. মনিরুজ্জামান মনির (২১), মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (২৩), মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ (২০), মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ (২১), খন্দকার তাবাকারুল ইসলাম ওরফে তানভির (২১), হোসেন মোহাম্মদ তাহো (২১), মো. শামীম বিল্লাহ (২১), মো. সাদাত এ এস এম নাজমুস সাদাত (২১), মুনতাসির আল জেমী (২০), মো. মিজানুর রহমান মিজান (২২), এস এম মাহমুদ সেতু (২৪), সামসুল আরেফিন রাফাত (২১), মো. মোর্শেদ ওরফে মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (২০), এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম (২০) (পলাতক), মোহাম্মদ মোর্শেদ উজ্জামান মন্ডল প্রকাশ জিসান (২২) (পলাতক), মুজতবা রাফিদ (২১) (পলাতক)। এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত আসামিরা হলেন- অমিত সাহা (২১), ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (২১), মো. আকাশ হোসেন (২১), মুহতাসিম ফুয়াদ (২৩) ও মো. মোয়াজ ওরফে মোয়াজ আবু হোরায়রা (২১)।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরের দিন ৭ অক্টোবর তার লাশ উদ্ধার করা হয়। আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে রাজধানীর চকবাজার থানায় বুয়েট শাখার ছাত্রলীগের ১৯ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও অনেক জনকে আসামি করা হয়। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর এ মামলায় আদালত অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়।
আরও পড়ুন: আবরার হত্যা: ২০ আসামির ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে
আবরার হত্যা: ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড, ৫ জনের যাবজ্জীবন
আবরার হত্যা মামলার রায়ে ন্যায়বিচার করা হয়েছে: আইনমন্ত্রী
আবরার হত্যা মামলার রায়ে প্রকৃত ন্যায়বিচার করা হয়েছে উল্লেখ করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আবরার হত্যা মামলার রায়ে এটা প্রমাণ হয় যে দেশে আইনের শাসন আছে।
বুধবার (০৮ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে নিজ আবাসিক কার্যালয়ে বুয়েটের ছাত্র আবরার হত্যা মামলার রায়ের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।আনিসুল হক বলেন, আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়েছে যে, এই মামলায় প্রকৃত ন্যায়বিচার করা হয়েছে। এই রায়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পেরেছে যে, দেশে আইনের শাসন আছে। এখন কেউ এরকম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে বা কোন রকম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে কোন অপরাধী ঘুরে বেড়াতে পারবে না। তারা রাজনীতি করতে পারবে না। বিরোধী দলীয় নেতা হওয়ার 'অডারসিটি' দেখাতে পারবে না।
আরও পড়ুন: বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ এখন বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ: আইনমন্ত্রী
তিনি বলেন, এই রায়ের নথিপত্র আগামী সাত দিনের মধ্যে হাইকোর্টে চলে যাবে। সেখানে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়ার ব্যাপারে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে।মন্ত্রী বলেন, সমাজে কিছু কিছু হত্যাকাণ্ড আছে যা সমাজকে নাড়া দেয়, সমাজের বিবেককে নাড়া দেয়। এই সব হত্যাকাণ্ডের বিচার করা না হলে সমাজে হতাশা দেখা দেয়। সরকারের দায়িত্ব এই মামলাগুলো তড়িৎ বিচার করে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে সমাজকে আশ্বস্ত করা যে, দেশে আইনের শাসন বিরাজ করছে। তিনি বলেন, এই দায়িত্ব পালনে শেখ হাসিনার সরকার এখন পর্যন্ত সক্ষম হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার জন্য ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বকে দায়ী করলেন আইনমন্ত্রী
খালেদা জিয়াকে আইন অনুযায়ী সুবিধা দেয়া হচ্ছে: আইনমন্ত্রী
আবরারের পরিবারকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রিট
ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র নাঈমুল আবরার রাহাতের পরিবারকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।