বাংলাদেশ ব্যাংক
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম আগামী সপ্তাহে শুরু হবে: গভর্নর
আর্থিকভাবে দুর্বল শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক নিয়ে গঠিত ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের’ কার্যক্রম ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘চতুর্থ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলনে’ যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ কথা জানান।
দৈনিক বণিক বার্তা আয়োজিত এই সম্মেলনের এবারের প্রতিপাদ্য ছিল, অর্থনীতির ভবিষ্যৎ গতিপথ ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার (Economies Future Trajectory and Political Commitment)।
গভর্নর বলেন, বর্তমান সরকারের সামনে থাকা বড় ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকারকে গভীরভাবে বুঝতে হবে। কারণ এগুলো ‘সঞ্চিত সমস্যা’ হিসেবে রয়ে গেছে। তিনি বলেন, আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকে বাংলাদেশ ব্যাংককে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।
এলসি খোলার ওপর আরোপিত সব ধরনের বিধিনিষেধ ও প্রতিবন্ধকতা বাংলাদেশ ব্যাংক তুলে নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এলসি খোলার বিষয়টি বিভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ বেড়েছে; গতবারের এই সময়ের চাইতে বেশি।
তার ভাষ্যে, আমাদের এক্সটারনাল সেক্টরটা (বহির্বাণিজ্য খাত) স্থিতিশীল হয়েছে, সেখানে কোনো ভালনারবিলিটি (দুর্বলতা) নেই। ব্যাংকিং খাতে ডলারের কোনো অভাব নেই; যেকোনো পরিমাণ ডলার আপনারা কিনতে পারবেন যদি আপনি বাংলাদেশের টাকা নিয়ে আসেন।
৬ দিন আগে
প্রশাসক বসবে একীভূত হতে যাওয়া সংকটাপন্ন পাঁচ ইসলামী ব্যাংকে
সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংককে একীভূত করে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ইসলামী ব্যাংক গঠনের লক্ষ্যে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যান্য বোর্ড সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই প্রশাসক নিয়োগ ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করার বিষয়ে অফিস আদেশ জারি করা হবে।
তিনি জানান, এ প্রক্রিয়া সহজ করতে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ও সহায়ক আইনসমূহে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।
প্রতিটি ব্যাংকে একজন করে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে, যিনি চারজন কর্মকর্তার সহায়তায় দায়িত্ব পালন করবেন। আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষিত রাখা এবং ব্যাংকিং খাতে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য বলে জানান তিনি।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংককে একীভূত করে গঠন করা হবে একটি নতুন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক, যার সম্ভাব্য নাম হবে ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’। নতুন এ ব্যাংকটির জন্য লাইসেন্স ইস্যু করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করেন, এ একীভূতকরণ দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করবে এবং পুনর্গঠনের মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে।
একীভূত হওয়ার পর বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা বিলুপ্ত হবেন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর শেয়ার বাতিল ঘোষণা করা হবে। ব্যাংকগুলোর সব সম্পদ ও দায় নতুন প্রতিষ্ঠানের অধীনে স্থানান্তরিত হবে।
সরকারি বিনিয়োগ পুনরুদ্ধারের জন্য নতুন ব্যাংকের শেয়ার পরবর্তীতে বেসরকারি খাতে বিক্রি করা হবে। বড় অঙ্কের আমানতকারীদের ক্ষেত্রে তাদের আমানতের একটি অংশ শেয়ারে রূপান্তরের সুযোগ দেওয়া হতে পারে, তবে ছোট আমানতকারীরা বিনা বাধায় অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, আর এক্সিম ব্যাংকের মালিক নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নাজরুল ইসলাম মজুমদার।
৮০ দিন আগে
ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক
প্রথমবারের মতো দেশে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদন আহ্বান করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন জমা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিকখাতে বৈশ্বিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক খাতের দক্ষতা বাড়ানো, সেবার পরিসর বিস্তৃত করা আর ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (সিএমএসই) অর্থায়নের সুযোগ সহজ করাই এর লক্ষ্য।
এতে আরও বলা হয়েছে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুযোগ কাজে লাগিয়ে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে এই উদ্যোগ। একই সঙ্গে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সহজে ঋণ পৌঁছে দিতে ডিজিটাল ব্যাংক একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে বলেও মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
আবেদনকারীদের নির্ধারিত প্রস্তাবপত্রের সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকা (অফেরতযোগ্য) ফি জমা দিতে হবে। এ টাকা যেকোনো তফসিলি ব্যাংক থেকে ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে দিতে হবে। শর্ত পূরণ না করলে আবেদন বাতিল হবে।
আরও পড়ুন: নতুন ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদনের কথা ভাবছে বাংলাদেশ ব্যাংক
এ ছাড়া আবেদনপত্র সরাসরি জমা দেওয়ার পাশাপাশি ই-মেইলের মাধ্যমেও সব নথি জমা দেওয়া যাবে। বিস্তারিত নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনের আওতায় ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হবে। পেমেন্ট সার্ভিস পরিচালিত হবে ২০১৪ সালের বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশনের অধীনে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংকের কেবল একটি প্রধান কার্যালয় থাকবে, কোনো শাখা, উপশাখা, এটিএম, সিডিএম বা সিআরএম থাকবে না। সব ধরনের সেবা অ্যাপভিত্তিক হবে যা মোবাইল ফোন বা অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পাওয়া যাবে। অর্থাৎ এই ব্যাংক ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) সেবা দেবে না।
এর আগে, ২০২৩ সালের ১৪ জুন ডিজিটাল ব্যাংকের নীতিমালা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ছিল ১২৫ কোটি টাকা। সম্প্রতি তা বাড়িয়ে ৩০০ কোটি টাকা করা হয়েছে।
১০১ দিন আগে
নতুন ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদনের কথা ভাবছে বাংলাদেশ ব্যাংক
নতুন ডিজিটাল ব্যাংককে লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি বোর্ড সভার আলোচ্যসূচিতে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ২৭ আগস্ট বোর্ড সভা হওয়ার কথা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) ইউএনবিকে জানান, ২০২৩ সালে দেওয়া ডিজিটাল ব্যাংক লাইসেন্সের অভ্যন্তরীণ বিরোধিতা এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
গত ১৩ আগস্টের শেষ বোর্ড সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কয়েকজন পরিচালক নতুন ডিজিটাল ব্যাংক অনুমোদনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। ব্যাংকিং খাতের বর্তমান অবস্থা উল্লেখ করে তারা বলেন, বেশ কয়েকটি প্রচলিত ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সদস্যদের অনেকেই যুক্তি দিয়েছেন ডিজিটাল অবকাঠামো এখনও সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক শিগগিরই নতুন ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন আহ্বান করতে পারে।
পড়ুন: ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য ৫২ আবেদন জমা বাংলাদেশ ব্যাংকে: মুখপাত্র
২০২৩ সালে ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য প্রথম লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। সেসময় লাইসেন্স নেওয়ার জন্য ৫২টি আবেদন জমা পড়েছিল। প্রাথমিক পর্যালোচনার পর, নয়জন আবেদনকারীকে লাইসেন্স দিতে বাছাই করে বোর্ড।
আবেদনকারীদের মধ্যে পাঁচজন - নগদ, কোরি, স্মার্ট ডিজিটাল ব্যাংক, নর্থ ইস্ট ডিজিটাল ব্যাংক এবং জাপান-বাংলা ডিজিটাল ব্যাংক - লেটারস অব ইনটেন্ট (এলওআই) পেয়েছে। বিকাশ, ডিজি টেন এবং ডিজিটাল ব্যাংকের মতো অন্যান্য আবেদনকারীদের ডিজিটাল ব্যাংকিং শাখা খোলার অনুমতি দেওয়া হয়। এছাড়া প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আবেদন বাতিল করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র জানিয়েছে, লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়াটি যাতে সহজেই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হতে না পারে সেজন্য নতুন অনুমোদন প্রক্রিয়াটি উল্লেখযোগ্যভাবে আরও স্বচ্ছ হবে এবং বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলের তুলনায় অনেক কঠোর মানদণ্ড বজায় রাখবে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগদের লাইসেন্স স্থগিত করেছে। এছাড়া কোরি ডিজিটাল ব্যাংক এখনও চূড়ান্ত লাইসেন্স পায়নি।
অর্থ পাচারের জন্য এই ব্যাংকগুলোর মালিকানা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সিঙ্গাপুরভিত্তিক শেল কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
নগদের মালিকানা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত পাঁচটি বিদেশি কোম্পানির মালিকানাধীন। কোম্পানিগুলো হলো- ফিনক্লুশন ভেঞ্চারস (সিঙ্গাপুর), ব্লু হেভেন ভেঞ্চারস, ওসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনার্স, জেন ফিনটেক ও ট্রুপ টেকনোলজিস (ইউএস)।
অন্যদিকে, কোরি ডিজিটাল ব্যাংক চারটি মার্কিন-নিবন্ধিত কোম্পানির মালিকানাধীন—যাদের আসল পরিচয় এবং আর্থিক অবস্থা অস্পষ্ট।
১০৬ দিন আগে
কৃষি ঋণে কি বেসরকারি ব্যাংক ও প্রান্তিক কৃষকের অনাগ্রহ বাড়ছে?
চলতি অর্থবছরের জন্য কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যেখানে গত বছরের চেয়ে এ বছর ঋণের পরিমাণ নতুন করে ১ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালার হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা, যার বিপরীতে ঋণ প্রদান করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঋণ প্রদান কম ৬৭৪ কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক, ২টি বিশেষায়িত ব্যাংক, ৪২টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ৮টি বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করেছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৯৮.২৩ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা, বিপরীতে ঋণ প্রদান করা হয়েছে ৩৭ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ৪ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা বেশি।
অন্যান্য বছরগুলোতে কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঋণ প্রদান কমে আসার কারণ অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ক্ষুদ্র কৃষক, প্রান্তিক চাষি এবং নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে কৃষি ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমেছে। বিশেষত আশপাশের যারা কৃষি ঋণ নিয়েছেন, তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন বাকিরা।
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বেসরকারি দেশীয় ব্যাংকের মধ্যেও ঋণ প্রদানের পরিমাণ কমেছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকেও ঋণ প্রদানের পরিমাণ অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক উইংয়ের সর্বশেষ মে মাসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সঙ্গে তুলনা করলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকে কৃষি ঋণ প্রদানের পরিমাণ কমেছে ১১.৩৫ শতাংশ।
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে এই ঋণ প্রদানের পরিমাণ কমেছে ৯.৭৪ শতাংশ এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকে তা কমেছে ০.৩০ শতাংশ। এই তিন ক্যাটাগরির ব্যাংকের অধীনে লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে ২৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ প্রদানের কথা থাকলেও সবচেয়ে কম ঋণ দিয়েছে এসব ব্যাংকই।
অন্যদিকে, দুই বিশেষায়িত ব্যাংকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ঋণ প্রদানের পরিমাণ বেড়েছে ১১.৬৯ শতাংশ। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের অধীনে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
এদিকে, ঋণ প্রদান কমলেও বেড়েছে ঋণ আদায়ের পরিমাণ। মে মাসের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২০২৩-২৪-এর তুলনায় ঋণ আদায় বেড়েছে ৪.৬৮ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ঋণ আদায় বেড়েছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে, ৮.৭৬ শতাংশ; যাদের হাতে ঋণ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ২৪ হাজার ১২১ কোটি টাকা।
অর্থাৎ, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণ কম দিলেও আদায়ের ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল এবং এটিই কৃষকদের ওপর চাপ বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ মাঠ সংশ্লিষ্টদের।
ক্ষুদ্র কৃষক এবং কৃষি উদ্যোক্তাদের অনাগ্রহ
কৃষি ঋণে ধীরে ধীরে অনাগ্রহ তৈরি হচ্ছে ক্ষুদ্র কৃষক এবং নতুন কৃষি উদ্যোক্তাদের মধ্যে। বাংলাদেশের দুই জেলা ময়মনসিংহ এবং বরিশালের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই তারা ঋণ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছেন।
ময়মনসিংহের কৃষি উদ্যোক্তা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘কৃষি ঋণ আমাদের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকে কাঠখড় পুড়িয়ে ঋণ পেলেও এ ঋণের দেনা শোধ করতে বিক্রি করতে হচ্ছে জমি। স্বল্প সুদের কথা বললেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুদ বাড়ছে। অন্যদিকে, বৈরি আবহাওয়ার কারণে কৃষি ফসলে ক্ষতি হয়েছে, অনেকের মাছের ঘের ডুবে গেছে। তাদের জন্য ঋণ শোধ করা কষ্টসাধ্য।’
নিজের প্রসঙ্গে আবু বকর বলেন, ‘ঋণ নিয়ে ফসল ফলানোর পর ফসলের ক্ষতি হলে সেখানে কৃষককে কে বাঁচাবে তার কোনো পরিকল্পনা নেই। এতে করে আমিসহ আশপাশের অনেক কৃষক আছেন যারা পাঁচ-ছয় মাস ঋণের কিস্তি দিতে পারেননি। তাদের অনেকের নামে মামলার নোটিশ এসেছে।’
একই জেলার আরেক কৃষক সামসুদ্দিন বলেন, ‘কৃষককে ঋণ দেওয়ার নামে প্রতি মাসে যদি সুদ বাড়িয়ে ব্যবসা করার চিন্তা করে ব্যাংক, তাহলে কৃষকদের উন্নতি কীভাবে হবে? একদিকে ফসল হয়নি, যা বিক্রি করেছি তা থেকেও মুনাফা ওঠেনি, অন্যদিকে প্রতিমাসে সুদের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত।’
কৃষি ঋণের খোঁজ নিতে গিয়ে বরিশালে দেখা গেল একেবারেই ভিন্ন চিত্র। দক্ষিণাঞ্চলের এ জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় যেসব কৃষক কৃষি ঋণ নিয়েছেন, তারা কৃষক হলেও ঋণের অর্থ কাজে লাগিয়েছেন অন্য খাতে।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার এক কৃষক বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং মেম্বারদের থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে অনেকে কৃষি ঋণ নিয়েছেন। ঋণের অর্থে কেউ দিয়েছেন দোকান, কেউবা করছেন জমির ব্যবসা।’
ঋণ নেওয়া এমন আরও কয়েকজন কৃষক জানান, কৃষি ঋণ নিয়ে ফসলের মাঠে অর্থলগ্নি করলে ঋণের টাকা শোধ করা কঠিন হয়ে ওঠে। বেশিরভাগ সময়ই ফসলের যে দাম অনুমান করে ঋণ নেওয়া হয় তার অর্ধেক দামও ওঠে না। তাই ফসলের চাষ করার পাশাপাশি ঋণের অর্থ দোকান বা জমি বেচা-কেনায় অর্থ লগ্নি করেন তারা।
কৃষকরা জানান, একমাত্র বিনা সুদে ঋণ দিলে কৃষকরা ঋণের সুবিধাভোগী হতে পারবে। সুদের চাপ থাকলে ঋণ নিয়ে তারা মুনাফা অর্জন করতে পারে না। যারা একবার কৃষি ঋণ নিয়ে শুধু কৃষিকাজই করেছেন তারা আর দ্বিতীয়বার ঋণ নেননি, তারপরও মেটাচ্ছেন আগের ঋণের দেনা।
বিনা সুদে ঋণ কতটা যৌক্তিক?
নির্দিষ্ট কিছু আমদানি বিকল্প ফসলে ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদে ঋণ দেওয়ার নির্দেশনা আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। এর বাইরে ৫-৬ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে হয় কৃষকদের, অনেক ক্ষেত্রে এ ঋণে সুদের পরিমাণ আরও বেশি।
সুদহার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, কৃষি ঋণের সুদহার ব্যাংকগুলো নিজেরাই নির্ধারণ করবে, তবে সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে মানতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী, এ খাতে সুদহার হবে সরল এবং নমনীয়।
কৃষকদের বিনা সুদের ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক উপাচার্য এবং কৃষি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ আবদুল বায়েস বলেন, ‘বিনা সুদে ঋণ দিলে ব্যাংক ব্যবস্থার কাঠামো বলে কিছু থাকে না। এই ঋণ অপারেশনের (পরিচালনা) ক্ষেত্রেও ব্যাংকের একটি খরচ আছে। বেসরকারি ব্যাংককে ঋণ প্রদানের আওতার মধ্যে রাখতে চাইলেও সুদের ব্যবস্থা রাখতে হবে। তবে এই সুদ যাতে কৃষকবান্ধব হয় সেদিকে নজরদারির দায়িত্ব সরকারের।’
তিনি বলেন, ‘বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করলে টাকা যাবে অন্যদের পকেটে, বঞ্চিত হবে কৃষক। এ ক্ষেত্রে কৃষক যাতে ঋণের ফাঁদে না পড়ে, সেজন্য আলাদা ভর্তুকি এবং বিশেষ ব্যবস্থায় ঋণের গ্রেস পিরিয়ড বাড়ানোর মতো উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। কোনো এলাকায় বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ঘটনা ঘটলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত এসব এলাকায় ঋণ নেওয়া কৃষকদের ঋণ পরিশোধে ছাড় দেওয়া।’
এক মৌসুমের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্য মৌসুম পর্যন্ত কৃষকদের ছাড় দেয়ার ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জোর দিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক যেন ঋণ পরিশোধে ১২ কিস্তি পর্যন্ত সুযোগ পায় এবং মামলার মতো হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে জোর দেন এই কৃষি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ।
ঋণ প্রদানে বেসরকারি ব্যাংকের অনাগ্রহ
বেশ কয়েকটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামানত নীতি থেকে শুরু করে অনেক বেসরকারি ব্যাংকের মাঠ পর্যায়ে ঋণ প্রদানে যাচাই বাছাইয়ের সক্ষমতা নেই। এ ছাড়া উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে বেসরকারি অনেক ব্যাংকের কোনো শাখা না থাকায় তারা কৃষকদের কাছে পৌঁছাতে পর্যন্ত পারে না। প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র কৃষকরাও শহরে এসে ঋণ গ্রহণে আগ্রহী হয় না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, শস্য জামানত নীতিতে ফসল উৎপাদনের জন্য একজন কৃষককে সর্বোচ্চ ১৫ বিঘা জমি চাষাবাদের জন্য ঋণ প্রদান করা যাবে। সে হিসাবে যারা প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষি, তাদের প্রত্যেকের জমির পরিমাণ ০.৪৯৪ একর থেকে ২.৪৭ একর। এরা প্রত্যেকেই জামানত হিসাবে শস্য-ফসল দায়বদ্ধকরণ বা ক্রপ হাইপোথিসিসের মাধ্যমে ঋণ নিতে সক্ষম। সেক্ষেত্রে কৃষক ঋণ পরিশোধে সক্ষম না হলে ব্যাংক ফসল থেকে দেনা মেটাতে পারবে।
তবে এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় না বেসরকারি ব্যাংকগুলো। তাদের কর্মকর্তারা জানান, কৃষককে যে পরিমাণে ঋণ দেওয়া হয়, শুধু ফসলের জামানত দিয়ে সেই ঋণের অর্থ আদায় ব্যাংকের জন্য কঠিন।
এ প্রসঙ্গে সায় দিয়ে শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রিপন কুমার মণ্ডল বলেন, ‘বেসরকারি ব্যাংকের মূল সমস্যা ঋণ প্রদানের পর তাদের ঋণ আদায়ের সক্ষমতা নেই। এ ধরনের নিরাপত্তাহীনতার কারণেই তারা ঋণ দিতে চায় না। আবার অনেক বড় বড় ব্যাংক এসব ক্ষুদ্র ঋণের জন্য লোকবল নিয়োগেও আগ্রহী নয়।’
এ ছাড়া বেশিরভাগ কৃষক জানেনই না যে কোন ব্যাংকে কত সুদে এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে এবং কীভাবে ব্যাংকে গিয়ে ঋণের আবেদন করবেন। এজন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে স্থানীয় এনজিও বা সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংকের দ্বারস্থ হন বলে মনে করেন রিপন।
তবে কৃষি ঋণে বেসরকারি ব্যাংক আরও সম্পৃক্ত হচ্ছে জানিয়ে ট্রাস্ট ব্যাংকের পরিচালক আনিসউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, ‘কৃষি ঋণ প্রদানে ব্যাংকের অনেক লোকবল দরকার, যারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে যাচাই বাছাই করে ঋণ দেবে। এত লোকবল নিয়োগের সক্ষমতা বেসরকারি ব্যাংকের নেই। তাই ক্রেডিট এবং ডেভেলপমেন্ট ফোরামের রেটিং দেখে (সিডিএফ) ভালো এনজিওর মাধ্যমে ঋণ ছাড়ের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো।’
জামানত নীতি বদল নয়, বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কৃষকদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের হার ৯৫ শতাংশ, যা সবচেয়ে বেশি। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর জামানত নিয়ে শঙ্কিত না হয়ে সক্ষমতা বাড়ালে একদিকে প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র কৃষকরা লাভবান হবেন, অন্যদিকে দেশের কৃষিখাতেও প্রবৃদ্ধি বাড়বে।’
১০৮ দিন আগে
সুশাসন নিশ্চিতে কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক এমডির পদত্যাগ
দেশের ব্যাংকিং খাতে বড় পরিবর্তনের মধ্যে সুশাসন নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থানে আছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত এক বছরে অন্তত ১২ জন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদত্যাগ করেছেন।
সর্বশেষ পদত্যাগ করেছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তিনি গত বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) পদত্যাগপত্র জমা দেন।
তিনি পদত্যাগের কারণ হিসেবে সরকারের পরিবর্তনের পর অভ্যন্তরীণ চাপ বৃদ্ধিকে উল্লেখ করেছেন। ব্যাংক সূত্র জানায়, কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক বোর্ড সদস্য অত্যন্ত সক্রিয় হওয়ায় অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
শেখ মারুফ ২০২৩ সালের অক্টোবরে ঢাকা ব্যাংকে যোগদান করেন। এর আগে তিনি সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার পদত্যাগ নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমাদের ব্যক্তিগত কোনো সমস্যা ছিল না, তবে তিনি কিছু বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনে চলেননি। পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে, সোমবার বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হবে।’
পড়ুন: সূচকের বড় উত্থান ঢাকা-চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান নির্বাহীদের দায়িত্ববোধ এবং ব্যাংকিং নিয়ম অমান্য বা আর্থিক অনিয়মের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতার উপর জোর দিচ্ছেন, যার ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানের গোপন অনিয়ম প্রকাশ হচ্ছে।
নিয়ম অনুযায়ী, এমডি বা সিইও-এর মূল দায়িত্ব হলো সুশাসন নিশ্চিত করা। কোনো ধরনের আর্থিক অনিয়ম ধরা পড়লে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে। বোর্ড সদস্যরা এমডিকে অনিয়মে জড়িত করার চেষ্টা করলে, এমডি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করবেন। প্রয়োজন হলে ব্যাংকিং বোর্ড বিলুপ্ত করার অধিকারও বাংলাদেশ ব্যাংকের আছে।
মূলত এই নিয়ম মানতে ব্যর্থ বা অনিয়মে জড়িত এমডিরা ধারাবাহিক পদত্যাগ করছেন। আগস্টের শুরুতেই আরও তিন ব্যাংকের এমডি — সাউথইস্ট ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক এবং কমার্স ব্যাংক — এক সপ্তাহের মধ্যে পদত্যাগ করেছেন।
এমডির পদত্যাগ তাৎক্ষণিক কার্যকর হয় না এবং এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন প্রয়োজন।
১১০ দিন আগে
রিজার্ভ চুরিতে জড়িত ৫ দেশের নাগরিক, চার্জশিট শেষ পর্যায়ে
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘটা বহুল আলোচিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ছাড়াও অন্তত চার দেশের নাগরিকের এই অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। মামলার চার্জশিট প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে, শিগগিরই আদালতে দাখিল হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র ইউএনবিকে জানিয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক রয়েছেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিভাগের তৎকালীন কয়েকজন কর্মকর্তা, কর্মচারী ছাড়াও ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তার গুরুতর গাফিলতি ছিল। এমনকি তাদের কারও কারও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততাও ছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, অত্যাধুনিক ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক হ্যাকার চক্র এ চুরির ঘটনা ঘটায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিভাগ থেকে সচেতনভাবেই ওই ম্যালওয়্যারযুক্ত ফাইল খোলা হয়েছিল। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার অবৈধভাবে স্থানান্তরিত হয়।
তিনি আরও বলেন, চার্জশিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) বিস্তারিত প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যাতে বিদেশি নাগরিকদের সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে। ওই প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠাতে এরই মধ্যে এফবিআইকে অনুরোধ করা হয়েছে। সেটি হাতে পেলেই তদন্ত শেষ করে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) রাতে সংঘটিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি বিশ্বের অন্যতম বড় সাইবার ডাকাতির ঘটনা। সে সময় বাংলাদেশে ব্যাংক কার্যক্রম বন্ধ ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রেও সাপ্তাহিক ছুটি শুরু হয়েছিল। সেই সুযোগে হ্যাকাররা নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার স্থানান্তরের চেষ্টা করে, তবে ১০১ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার সরাতে পারে তারা।
আরও পড়ুন: ৮৬ বারের মতো রিজার্ভ চুরি মামলার প্রতিবেদন পেছাল
চুরি হওয়া ওই অর্থের বড় অংশ দুর্বল নজরদারির ফাঁক গলে ফিলিপাইনের ক্যাসিনো শিল্পের গোপনীয়তা আইনের অধীনে পাচার হয়ে যায়। এর মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনে এবং প্রায় ২ কোটি ডলার শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয়। পরে শ্রীলঙ্কায় প্রেরিত অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হলেও ফিলিপাইন থেকে অর্থ উদ্ধার জটিল হয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে সরকার।
এ ঘটনার তদন্তে সিআইডির পাশাপাশি এফবিআই, ফিলিপাইনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এনবিআই) এবং শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক অংশ নেয়। পরবর্তীতে জাতিসংঘকেও এ অপরাধে ব্যবহৃত কৌশল ও লেনদেনের ধারা সম্পর্কে জানানো হয়।
ঘটনার ৩৯ দিন পর ওই বছরের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব ও বাজেট বিভাগের তৎকালীন উপপরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মতিঝিল থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন। পরে মামলাটি সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
প্রায় নয় বছরের তদন্তে দেশি-বিদেশি শতাধিক সাক্ষীর জবানবন্দি, আইপি ঠিকানা, নেটওয়ার্ক লগ, ব্যাংক লেনদেনের তথ্য এবং ড্রিডেক্স ম্যালওয়্যার কোডসহ বিস্তৃত প্রযুক্তিগত প্রমাণ খতিয়ে দেখা হয়েছে। এর ফলে হামলার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি মামলা: প্রতিবেদন ফের পিছিয়ে ২ জুলাই
সিআইডির আরেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, এই তদন্তে আন্তর্জাতিক আর্থিক অপরাধ চক্রের কৌশল, তাদের দেশীয় সহযোগীদের ভূমিকা এবং আমাদের সাইবার নিরাপত্তার দুর্বলতার মতো বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চার্জশিট এমনভাবে প্রস্তুত করতে চাই যাতে অপরাধীরা শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আইনের মুখোমুখি হয়।’
চার্জশিট দাখিলের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম আলোচিত এ সাইবার ডাকাতির রহস্য উন্মোচিত হবে এবং বাংলাদেশের আর্থিক খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আশা করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
১১০ দিন আগে
৫ ইসলামী ব্যাংক একীভূতের উদ্যোগকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলছেন বিশেষজ্ঞরা
সংকটাপন্ন পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগে গতি এসেছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে এটি বাস্তবায়িত হতে পারে। বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সোমবার (১১ আগস্ট) এ কথা জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
অর্থনীতিবিদরা এটিকে দেশের আর্থিক খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন, সরকারের এই পাঁচটি দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত দেশের সংকটাপন্ন ব্যাংকিং খাতকে সংস্কারের পথে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
তবে সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা এবং কেবল সংমিশ্রণের বাইরে একটি সমন্বিত কৌশলের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন: খসড়া অর্ডিন্যান্স: কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গভর্নর নিয়োগ দেবে রাষ্ট্রপতি, বাড়বে মেয়াদ
একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলো হলো— ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। এদের অনাদায়ী ঋণের (নন-পারফর্মিং লোন) হার ৪৮ থেকে ৯৬ শতাংশের মধ্যে বলে খবরে বলা হয়েছে। সরকার এই ব্যাংকগুলোকে একক, রাষ্ট্রায়ত্ত কাঠামোর অধীনে পরিচালনার পরিকল্পনা করছে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং সরকারকে প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমরা সবাই চাই ব্যাংকগুলো সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসুক। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ধরনের উদ্যোগ ভালো খবর।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচেষ্টা সফল হোক, আমরা সেই কামনা করি।
তবে ড. তৌফিক সতর্ক করে বলেছেন, কেবল সংমিশ্রণ ব্যাংক খাতের অন্তর্নিহিত সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানকে তার দলের মধ্যে থেকেও রাজনৈতিক বাধার কারণে ৫০০টি ব্যাংক শাখা বন্ধের পরিকল্পনা স্থগিত করতে হয়েছে। তাই শুধু একীভূত করলেই হবে না। এতে অনেক রাজনৈতিক সংকট দেখা দেবে।
সমস্যার মূল কারণ হিসেবে, বিশেষ করে অনাদায়ী ঋণ সমস্যা সমাধানের গুরুত্ব উল্লেখ করেন ড. তৌফিক। তিনি একীভূতকরণের ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন রেখে বলেন, পরিকল্পনাটি মূলধন পর্যাপ্ততার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।
সমস্যা হলো নন-পারফর্মিং লোন এবং সেটি সমাধান করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন: খাদের কিনারা থেকে ফিরে এসেছে দেশের ব্যাংক খাত: গভর্নর
দায়িত্বের বিষয়েও প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, কোনো ব্যাংক তার আমানতকারীদের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য কে দায়ী?
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ ইউএনবিকে বলেন, ব্যাংকিং হলো বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা। আর যদি সেই বিশ্বাস হারায়, তাহলে এই খাত টিকে থাকতে পারবে না।
তিনি ব্যাংক শক্তিশালী করার ও ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
এ ছাড়াও অযোগ্য কর্মী বাদ দিয়ে যোগ্যদের রাখার পরিকল্পনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তিনি বলেন, সমস্যার মূল স্রষ্টা প্রায়শই অযোগ্যরাই। কিন্তু তারা প্রতিবাদ শুরু করলে সরকার নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। তবে আর্থিক খাতকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে।
১১৩ দিন আগে
সাবেক তিন গভর্নর ও ৬ ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাব তলব
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সাবেক তিনজন গভর্নর ও ছয়জন প্রাক্তন ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য তলব করেছে।
বুধবার (১৩ আগস্ট) ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগের অংশ হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুরোধের ভিত্তিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক তিন গভর্নর হলেন— ড. আতিউর রহমান, ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদার। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনকালে দায়িত্বে ছিলেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, তাদের সময় দেশের ব্যাংকিং খাতকে পদ্ধতিগতভাবে দুর্বল করা হয়েছিল।সাবেক ছয়জন ডেপুটি গভর্নর হলেন— সীতাংশু কুমার সুর চৌধুরী, মাসুদ বিশ্বাস, এসএম মনিরুজ্জামান, আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান, কাজী ছাইদুর রহমান ও আবু ফরাহ মোহাম্মদ নাসের।
প্রাক্তন গভর্নরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
ড. আতিকুর রহমানের সময় নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান দুর্বল ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে হল মার্ক ও ব্যাসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি সম্ভব হয়। ২০১৬ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতে তিনি ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত তার পদত্যাগের কারণ হয়।
পড়ুন: ঋণখেলাপীদের জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না: অর্থ উপদেষ্টা
ফজলে কবিরের সময় ইসলামি ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের বিতর্কিত অধিগ্রহণ অনুমোদনের অভিযোগ রয়েছে, যা ব্যাংকে ব্যাপক লুটপাটের পথ সুগম করেছে।
তিনি ঋণ নীতিতে শিথিলতা আনেন, সুদের হার কৃত্রিমভাবে ৯ শতাংশ রাখেন এবং ঋণখেলাপীদের সীমিত পরিশোধে ছাড় দেন।
আবদুর রউফ তালুকদার দুই বছর গভর্নর ছিলেন। তার সময়ও বিতর্কিত সিদ্ধান্তের অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি পদত্যাগ করে আত্মগোপনে চলে যান।
অভিযোগে বলা হয়েছে, তার সময়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে ঋণ বিতরণে জালিয়াতি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তিন প্রাক্তন গভর্নরের মধ্যে ড. আতিকুর রহমান দেশ ছেড়ে গেছেন বলে মনে করা হয়, যদিও তার পাসপোর্ট ব্লক করা হয়েছে। ফজলে কবির দেশের মধ্যে রয়েছেন কিন্তু প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। আবদুর রউফ তালুকদার ৫ আগস্টের পর গোপন রয়েছেন, তবে দেশে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তদন্তের আওতায় ডেপুটি গভর্নররাও
প্রাক্তন ডেপুটি গভর্নরের মধ্যে সীতাংশু কুমার সুর চৌধুরী ও মাসুদ বিশ্বাস বর্তমানে আইন বর্হিভূত আয়ের মামলায় কারাগারে আছেন।
বাকি অভিযুক্তরা হলেন—
এসএম মনিরুজ্জামান: ব্যাংক পরিদর্শন বন্ধ রাখা।
রাজী হাসান: মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ব্যর্থ।
কাজী সাইদুর রহমান: বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি।
আবু ফারাহ মোহাম্মদ নাসের: ঋণ নীতি শিথিল করে ব্যাংকিং খাতকে দুর্বল করা।
১১৪ দিন আগে
ভরসা রেমিট্যান্সের ওপর, ভবিষ্যৎ নিশ্চিত কতখানি?
দেশের রিজার্ভ বৃদ্ধি, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ, আমদানি ব্যয় মেটানোর অনেকটাই রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল। বিগত ছয় মাসে রেমিট্যান্সের পালে সুবাতাস বইছে, কিন্তু রেমিট্যান্স নির্ভরতার ভবিষ্যৎ কতটা নিশ্চিত—এমন প্রশ্ন অর্থনীতিবিদ ও অভিবাসন সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি, অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে আড়াই বিলিয়ন ডলার। চলতি বছর মার্চে দেশের ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে ৩ বিলিয়ন ডলার। রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রতিটি হিসাবে বিগত সময়ের তুলনায় এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
রেমিট্যান্সের ওপর দিন দিন ভরসা বাড়লেও আগামীতে এ খাত থেকে অর্থনীতিতে কতটা সহায়তা মিলবে, বিশ্ব বাজারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সে কথা হলফ করে বলা কঠিন।
বাংলাদেশ কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাইরে প্রায় দেড় কোটি প্রবাসীর বাস, যাদের মধ্যে নিয়মিত রেমিট্যান্স পাঠান ৬০-৬৫ লাখের মতো প্রবাসী। প্রবাসীদের পাঠানো এ রেমিট্যান্সের বড় অর্থ আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। এক মধ্যপ্রাচ্যেই ৩৪ শতাংশ প্রবাসী থাকেন যাদের বেশিরভাগ কাজ করেন বিভিন্ন খাতে শ্রমিক হিসাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স হালনাগাদ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত ও কাতারের মতো দেশ থেকে বড় সংখ্যক রেমিট্যান্স আসে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে যারা বিদেশে কাজের সন্ধানে পাড়ি জমিয়েছেন, তাদের ৭০ শতাংশের বেশির গন্তব্য সৌদি আরব।
অন্যান্য দেশে কেন প্রবাসীদের চাপ কমছে—এমন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আপতত সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিচ্ছে না যেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে। ওমানেও বন্ধ শ্রমবাজার। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্য সবচেয়ে বেশি শ্রমিক যেত মালয়েশিয়া। গত বছর থেকে সেখানেও শ্রমিক পাঠানো একেবারেই বন্ধ। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালি শ্রমিকদের বড় গন্তব্য, অথচ বৈধ পথে দেশটিতে পাড়ি জমানো দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। ইউরোপের অন্যান্য দেশেও সুবিধা করতে পারছেন না বাংলাদেশি শ্রমিকরা। অনেকেই দেশে ফিরে আসছেন কাজ না পেয়ে।
আরও পড়ুন: জুলাইয়ের ২৭ দিনে রেমিট্যান্স ২০০ কোটি ডলার ছাড়াল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনোমিকস স্টাডি সেন্টারের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রকৃত উৎসের চিত্র।
‘দ্য ইকোনোমিক সিগনিফিকেন্স অব রেমিট্যান্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের সবচেয়ে বড় মাধ্যম বিদেশে কর্মরত শ্রমিক বা যারা ছোট খাটো চাকরি করেন এমন মানুষ।
‘ব্লু-কলার’ ট্যাগধারী নিম্ন আয়ের এসব শ্রমিকের ঘামে ভেজা অর্থ দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করলেও মানবেতর হয়ে পড়েছে তাদের জীবন। বিদেশে কাজ করে নিজের অবস্থা উন্নয়নের যে পথ এতদিন সুগম ছিল, ধীরে ধীরে তা কঠিন হয়ে উঠছে।
বিএমইটির তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে যেখানে ১৩ লাখের মতো মানুষ কাজের সন্ধানে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে, সেই সংখ্যা ৩ লাখ কমে ২০২৪ সালে নেমেছে ১০ লাখে। ২০২৩ সালে যারা বিদেশে গিয়েছিলেন তাদের অনেকে আবার ফিরে এসেছেন কাজ না পেয়ে। প্রতি বছর কত সংখ্যক শ্রমিক আউটপাস নিয়ে দেশে ফিরে আসছেন, তার কোনো সঠিক হিসাব নেই সংস্থাটির কাছে।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, সবশেষ ২০২৪ সালে ৮০ হাজারের ওপরে শ্রমিক আউটপাস নিয়ে দেশে ফিরেছেন। ১০ বছর আগেও দেশে ফিরে আসার এ সংখ্যা ছিল ৫০ হাজারের কিছু বেশি। যারা দেশে ফিরে আসছেন তাদের অনেকেই সহায়সম্বল বিক্রি করে, অনেকে আবার ঋণ নিয়ে কিংবা ধারকর্জ করে বিদেশে গিয়েছিলেন কাজের সন্ধানে। কিন্তু যে কাঙ্ক্ষিত কাজের কথা বলে তাদের নেওয়া হয়েছিল, সেই কাজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। অনেকে আবার বৈধ পথে গিয়ে ফিরে এসেছেন অবৈধ শ্রমিক হিসেবে।
যারা কোনোরকমে পেটের দায়ে দেশের বাইরে সর্বাত্মকভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন তাদের বেশিরভাগই ভুগছেন হতাশায়, পড়ছেন অপমৃত্যুর কবলে।
রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) এ বছরের এক জরিপে দেখা যায়, দেশে গড় আয়ু ৭০ বছরের ওপরে হলেও প্রবাসী শ্রমিকদের গড় আয়ু ঠেকেছে মাত্র ৩৭ বছরে।
যে কাজের কথা বলে দেশ থেকে শ্রমিকদের প্রবাসে পাঠানো হয়, সিংহভাগ ক্ষেত্রে তাদের সেই কাজ দেওয়া হয় না। টিকে থাকতে কম টাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হয় প্রবাসী শ্রমিকদের। প্রবাসে যেসব বাংলাদেশি কর্মী থাকেন তাদের ৩১ শতাংশের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়, ১৬ শতাংশ মারা যান কোনো না কোনো দুর্ঘটনায় এবং ২৮ শতাংশের ভাগ্যে জোটে স্বাভাবিক মৃত্যু। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে, প্রবাসের হতাশ জীবনের ভার বইতে না পেরে ১৫ শতাংশ কর্মী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
যারা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখেন, তাদের ভাগ্য এমন নির্মম হলে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে রামরুর পরিচালক অভিবাসন বিষয়ক গবেষক মেরিনা সুলতানা বলেন, ‘প্রবাসী কর্মীদের কেবল টাকার মেশিন মনে করা হয়। তারা টাকা পাঠাচ্ছে, রিজার্ভ বাড়ছে। কিন্তু যারা টাকা পাঠাচ্ছে তাদের নিশ্চিত ভবিষ্যৎ নির্ধারণে নীতি নির্ধারকদের বরাবরই অবহেলা। অন্যান্য দেশ যেখানে নিজ দেশ থেকে প্রেরিত শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার, সেখানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এতে করে একটু একটু করে বিদেশে যাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছে মানুষ। এতে চাপ পড়ছে দেশের কর্মসংস্থানে; বাড়ছে বেকারত্ব। সর্বোপরি প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে।’
বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক বিদেশে পাঠাতে প্রায় ৩ হাজারের মতো এজেন্সি রয়েছে। এসব এজেন্সির বিরুদ্ধে বহুকাল ধরে উঠছে নানা ধরনের অভিযোগ। কয়েকটি এজেন্সি শাস্তির মুখোমুখি হলেও আসেনি কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন। রাজনৈতিক প্রভাবে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে অনেক রিক্রুটিং এজেন্সি নিজেদের আলাদা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।
রিক্রুটিং এজেন্সির দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠেছে এ বছর এপ্রিলে হাইকোর্টে জমা দেয়া প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছে, গত বছর ১৭ হাজার ৭৭৭ শ্রমিক মালয়েশিয়া যেতে না পারার দায় একান্তই এসব এজেন্সির। একদিকে তারা মালয়েশিয়া কর্মী পাঠাতে পারেনি, অন্যদিকে সরকার-নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার পরিবর্তে গমনেচ্ছু শ্রমিকদের থেকে আদায় করেছে অতিরিক্ত অর্থ।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের মে মাসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মালয়েশিয়া যেতে ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা সরকার-নির্ধারিত ফি হলেও গমনেচ্ছুদের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা করে আদায় করেছে এসব এজেন্সি। বিভিন্ন পর্যায়ে ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৩টি এজেন্সির তালিকা করেছে দুদক, যারা হাজার কোটি টাকার ওপরে আত্মসাৎ করেছে প্রবাস গমনেচ্ছু কর্মীদের থেকে।
আরও পড়ুন: প্রবাসীদের স্বীকৃতি ও প্রণোদনার পর রেমিট্যান্স প্রবাহে রেকর্ড
প্রবাসে শ্রমিক পাঠানোর নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে রেমিট্যান্সের প্রসঙ্গ টেনে মেরিনা বলেন, ‘যতদিন না এথিকাল রিক্রুটিং নিশ্চিত করা যাবে ততদিন পর্যন্ত রেমিট্যান্সকে অর্থনীতির একটি স্থায়ী মজবুত ভিত্তি হিসাবে বিবেচনা করা যাবে না। দেশে এত এত এজেন্সি, তারা কেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে, কেন দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছে—এসব সমস্যার সমাধান না করলে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ হঠাৎ করে মুখ থুবড়ে পড়বে।’
অদক্ষ শ্রমিক পাঠানো এবং রেমিট্যান্সের বাজারকে বিস্তৃত না করা আগামীর জন্য বিপজ্জনক উল্লেখ করে মেরিনা বলেন, ‘নেপাল-শ্রীলঙ্কার মতো দেশ বিদেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশে এত এত ট্রেনিং সেন্টার থাকার পরও শ্রমিকদের কেন দক্ষ করে গড়ে তোলা যাচ্ছে না, সেটি বড় প্রশ্ন। চাইলেই হংকং-সিঙ্গাপুরের মতো দেশে নারী শ্রমিক পাঠানো যায়, বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য ভালো বাজার এটি, কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক অদক্ষ শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীলতা এখন ভালো রেমিট্যান্স এনে দিলেও আগামীতে তা কতদিন বহাল থাকবে সেটি অনিশ্চিত।’
অভিবাসন বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে দক্ষ শ্রমিকদের চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আহরণের প্রাণকেন্দ্র সৌদি আরবে ২০৩৪ ফিফা বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে যেসব কর্মী নেওয়া হচ্ছে, তাদের জন্য দক্ষতার মাপকাঠি ঠিক করে দিচ্ছে দেশটি। একই অবস্থা অন্যান্য দেশেও।
এ অবস্থায় রেকর্ড রেমিট্যান্স নিয়ে উদযাপনের পাশাপাশি রেমিট্যান্সের মূল উৎস প্রবাসী কর্মীদের ব্যাপারে কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনই বলে মত খাত সংশ্লিষ্টদের।
১২৪ দিন আগে