বিশেষজ্ঞ
সহিংসতা ও ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে বৈশ্বিক সমর্থনের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের চলমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহিংসতা ও ভুল তথ্যকে দু’টি প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা।
তারা সহিংসতা ও ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে বিশ্ব বন্ধুদের আন্তরিক সমর্থন কামনা করেন।
৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে তারা অভিমত দেন, টেকসই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন তখনই সম্ভব, যখন সহিংসতা ও ভুল তথ্যের অপরাধীদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে দূর করা হবে।
পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশের দ্রুত অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে ওয়েবিনারের প্যানেলিস্টরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ১৫ বছরের ধারাবাহিকতার পূর্ণ কৃতিত্ব দেন।
'ভায়োলেন্স অ্যান্ড মিসইনফরমেশন: ব্যারিয়ারস টু ইকোনমিক প্রসপারিটি ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলম্যান, মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট লেখক ড. নুরুন নবী।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দৃঢ় পদক্ষেপ নিন, এসডিজি অর্জন করুন: বক্তারা
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্যানেলিস্টরা হলেন- অধ্যাপক আবদুর চৌধুরী, অধ্যাপক এবিএম নাসির, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক সেথ ওল্ডমিক্সন এবং জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. মাজহারুল ইসলাম রানা।
বক্তারা লাখ লাখ বাংলাদেশিকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী, বিধবা ও স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়া নারীদের জন্য ভাতা প্রবর্তনের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি তুলে ধরেন।
বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল যদি এই সময়ের মধ্যে 'নৈরাজ্য ও সহিংসতা' না করে, তাহলে বাংলাদেশ আরও অগ্রগতি অর্জন করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে প্যানেলিস্টরা ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপি-জামায়াতের সরকারবিরোধী সমাবেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল যেদিন উদ্বোধন করেন, সেদিন তারা রাজধানীতে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা, বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি যানবাহন ও হাসপাতালে থাকা অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা এবং বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে আহত করেন।
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির বিষয়ে বক্তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, দলগুলো কেন অসাংবিধানিক কিছু দাবি করছে।
আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ নিরসন করা উচিত: নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও রাজনীতিবিদগণ
তারা সংবিধানের কথা উল্লেখ করে মনে করিয়ে দেন, নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে হতে হবে।
অধ্যাপক আবদুর চৌধুরী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ বিশ্বের পরবর্তী শীর্ষ ১০টি উদীয়মান অর্থনীতির একটি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং যা ১৯৭১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে দেশটির অসাধারণ অগ্রগতি।
তবে ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের মতো বর্তমান বৈশ্বিক আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পক্ষে মত দেন।
ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন তার বক্তব্যে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) সাম্প্রতিক একটি জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বর্তমান সব অর্থনৈতিক সমস্যা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭০ শতাংশ অনুমোদনের রেটিং রয়েছে।
ব্ল্যাকবার্ন বলেন, বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন 'অনলাইনে একচেটিয়া ভুল তথ্য' বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রকৃত প্রভাব ফেলে। তাই ইউরোপীয় ও আমেরিকান উভয় অংশীদারদেরই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এগিয়ে আসা উচিৎ।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষতি করছে এবং বিএনপি অগ্নিসংযোগ ও গুজব ছড়ানো চালিয়ে যাচ্ছে।
ড. মাজহারুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ক্রমাগত ভুল তথ্য, গুজব ছড়িয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার চক্রান্ত সৃষ্টি করেছিল এবং একই শক্তি এখনো সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা তারেক রহমান, বঙ্গবন্ধুর খুনি ও জামায়াতের নির্দেশনায় সক্রিয় রয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্ক নিয়ে কসমস ফাউন্ডেশনের ওয়েবিনার বৃহস্পতিবার
অধ্যাপক এবিএম নাসির ইসলামি জঙ্গিবাদের উত্থান প্রতিহত করতে এবং প্রগতিশীল গণতন্ত্রের উদাহরণ ও একটি মডেল মধ্যপন্থী মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য আমেরিকান নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই ধারাবাহিক সহিংসতার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তাদের ৫ বছরের দুঃশাসন ছিল দেশের ইতিহাসের অন্ধকারতম অধ্যায়।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীরা ২০১৩-২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নেতা-কর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং প্রগতিশীল ব্লগারদের ওপর হামলা চালিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। অন্যদিকে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী আন্দোলন কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে একই ধরনের সহিংসতা পুনরায় দেখা দিয়েছে।
অধ্যাপক নাসির যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান, একটি টেকসই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কেবল তখনই কার্যকর হবে যখন সহিংসতা ও ভুল তথ্যের অপরাধীদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে দূর করা হবে। অন্যথায় এটি আফগানিস্তানের মতো বিপর্যয়ে পরিণত হবে।
সেথ ওল্ডমিক্সন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে সতর্ক করে বলেন, সহিংস চরমপন্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষকে নিযুক্ত করতে এবং বাংলাদেশে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার জন্য বেশ সক্রিয়। এই ভুল তথ্য প্রচারণার বিরুদ্ধে লড়াই করতে তিনি ইতিবাচক তথ্য দিয়ে প্রচারণা শুরু করার পরামর্শ দেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে গণহত্যা প্রত্যাখ্যান ন্যায়বিচার ও প্রতিকারের দাবিকে দুর্বল করে: ওয়েবিনারে বক্তা
‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও উচ্চ মূদ্রাস্ফীতির কারণে সামাজিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ছে’
কোভিড-১৯ মহামারি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও উচ্চ মূদ্রাস্ফীতির কারণে সামাজিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে দরিদ্রদের অনিশ্চয়তা, অপর্যাপ্ত সাহায্যপ্রাপ্তি ও এলাকাভিত্তিক বৈষম্যের উপর আয়োজিত একটি কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, এই ধরনের সংকটের প্রভাব মোকাবিলা করতে এবং পরিবারগুলোকে অনিশ্চয়তা থেকে রক্ষা করতে সামাজিক সুরক্ষা অত্যাবশ্যক। শহর অঞ্চলে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পরিসর বাড়ানো, শহরের নিম্ন আয়ের এলাকার বাসিন্দাদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, সহায়তার মর্যাদাপূর্ণ বিতরণ নিশ্চিত করা ও সমন্বিত নীতির উদ্যোগ নেওয়ার মতো সুপারিশও উঠে আসে আলোচনায়।
আরও পড়ুন: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে ক্ষমতাবাজী বন্ধ এবং বৈষম্যের অবসান করতে হবে: ইনু
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, উচ্চ মাত্রার দারিদ্র্যের যে স্থায়িত্ব, তা শুধু কোভিড-১৯-এর কারণে নয়। মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি সংকট ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপের কারণেও দারিদ্র্য বিদ্যমান।
“পোভার্টি ট্রানজিশানস অ্যান্ড সোশ্যাল প্রটেকশন: এক্সপেরিয়েন্স অব অ্যান্ড অ্যাটিটিউডস টুওয়ার্ডস আরবান পোভার্টি” শিরোনামে কর্মশালাটির আয়োজন করে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিআইজিডি), ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি।
কর্মশালায় যুক্তরাজ্য সরকারের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও ডেভেলপমেন্ট অফিসের কোভিড-১৯ লার্নিং, এভিডেন্স অ্যান্ড রিসার্চ প্রোগ্রামের আওতায় করা একটি গবেষণার ফলাফল ও সুপারিশসমূহ তুলে ধরা হয়।
কোভিড-১৯ চলাকালীন বিআইজিডি-পিপিআরসি যে গবেষণা করেছিল, গবেষণাটিতে সেখানকার তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। পরে এই গবেষণার অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে ঢাকার কল্যাণপুর ও চট্টগ্রামের শান্তিনগর থেকে গবেষকরা আরও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। নিম্ন-আয়ের এলাকায় বসবাসরত বাসিন্দাদের উচ্চ মাত্রার অনিশ্চয়তা, মানসিক স্বাস্থ্যের উপর দারিদ্র্যের প্রভাব, বৈষম্যের অভিজ্ঞতা এবং অপর্যাপ্ত সামাজিক সুরক্ষা সহায়তার মতো বিষয়গুলো এ গবেষণায় তুলে ধরা হয়।
প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ড. কিটি রোয়েলিন কর্মশালায় গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন। কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন- বিআইজিডির উপদেষ্টা এনএম জিয়াউল আলম, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগের যুগ্ম প্রধান ড. মুনিরা বেগম, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী।
আরও পড়ুন: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সু-সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তার আহ্বান জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞের
স্বাস্থ্যের অধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক তলালেং মোফোকেং মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ক্রমাগত সহিংস বাস্তুচ্যুতি ও হামলার হুমকি একটি বড় জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং জরুরি অবস্থা সৃষ্টি করেছে।
এই অঞ্চলে সহিংসতা বৃদ্ধির পর থেকে কমপক্ষে ১২জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত এবং ২৪ স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জেরে তিনি এসব কথা বলেন।
মোফোকেং বলেন, ‘সংঘাতে জড়িত সব পক্ষ এবং তাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের অবশ্যই দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্নভাবে খাদ্য, পানীয়, ওষুধ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎসহ প্রয়োজনীয় মানবিক পরিষেবাগুলোর সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘গাজার চিকিৎসা অবকাঠামোগুলোর অপূরণীয়ভাবে ক্ষতি হয়েছে এবং স্বাস্থ্য সেবাকারীরা চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবসহ একটি ভয়ানক পরিস্থিতিতে কাজ করছে।’
এই বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘মানবতাবাদী কর্মী, চিকিৎসক, সুশীল সমাজ, মানবাধিকার সংস্থা ও সাংবাদিকরা এই অঞ্চলে বোমাবর্ষণের মধ্যেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।’
অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলোতে ১১১ টিরও বেশি হামলার নথিভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যার মধ্যে গাজা উপত্যকায় ৪৮টি হামলা করা হয়েছে, এর ফলে কমপক্ষে ১২ জন স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
মোফোকেং বলেছেন, গাজায় খাদ্য, পানীয়, জ্বালানি, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় সরবরাহের প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল।
তিনি বলেন, ‘গাজা উপত্যকা ক্রমাগত বোমাবর্ষণ ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সম্মুখীন হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশটির স্বাস্থ্যখাত সহনসীমার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।’
আরও পড়ুন: গাজার দক্ষিণাঞ্চলে শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৪০ ফিলিস্তিনি
মোফোকেং মানবিক করিডোরের মাধ্যমে সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার দাবি করে সংঘাতের বৃদ্ধি রোধ করতে এবং সকলের স্বাস্থ্যের অধিকার রক্ষা ও সম্মান করার জন্য অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর জন্য খাদ্য, পানীয়, আশ্রয়, জ্বালানি, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, মনোসামাজিক সহায়তা এবং প্রাথমিক চিকিৎসার জরুরি সরবরাহ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ইসরায়েল ও অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সাম্প্রতিক আগ্রাসন বৃদ্ধিকে অবশ্যই উপক্ষো করা উচিত নয়। দখলদারিত্বের পর থেকে প্রতিদিন ফিলিস্তিনিদের উপর চলমান স্থূল কাঠামোগত, পদ্ধতিগত ও দীর্ঘমেয়াদি সহিংসতার একটি নিষ্পেষণ মুহূর্তকে প্রতিনিধিত্ব করে এটি।’
মোফোকেং বলেন, ‘আমি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং সদস্য দেশগুলোকে যুদ্ধের দামামা বাজানো বন্ধ করার আহ্বান জানাই।’
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণ ৭৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটি ৫৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে সামরিক দখলে রয়েছে। এই দখলদারিত্বের ফলে জবাবদিহিতার অভাব, চলমান স্থানচ্যুতি ও ধ্বংস, চলাচলে নিয়ন্ত্রণ এবং পদ্ধতিগত জাতিগত বৈষম্য প্রভৃতি ঘটেছে।’
এই বিশেষজ্ঞ স্মরণ করেন, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো ২০০৯ থেকে ২০২৮ সালকে ‘শান্তির দশক’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সব দেশের সার্বভৌম সমতা এবং তাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান বজায় রাখার জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
তিনি বলেন, ঘোষণাটি সংঘাত প্রতিরোধ করে এবং এর মূল কারণগুলোকে সমাধান করে শান্তি বজায় রাখার জন্য একটি বিস্তৃত পরিকল্পনা গ্রহণ করাকে সমর্থন করে।
মোফোকেং বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আদায়ের পদক্ষেপ তাদের মর্যাদা ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত। আপনারা মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে নিভিয়ে দিতে পারবেন না।’
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-হামাস দ্বন্দ্ব বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে: আইএমএফ প্রধান
সিরিয়ার আলেপ্পো বিমানবন্দরে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নীতি তৈরি করা প্রয়োজন: গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞ
প্রতিবছর দেশে সৃষ্টি হচ্ছে ৩০ লাখ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য। যার মধ্যে শুধু স্মার্ট ডিভাইসেই সৃষ্টি হচ্ছে সাড়ে ১০ টন ই-বর্জ্য। অন্তত ২ লাখ ৯৬ হাজার ৩০২ ইউনিট নষ্ট টেলিভিশন থেকে সৃষ্টি হচ্ছে ১ দশমিক ৭ লাখ টনের মতো ই-বর্জ্য।
শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এই বর্জ্য বাড়ছে ৩০ শতাংশ হারে।
হিসাব বলছে, ২০২৫ সাল নাগাদ কোটি টনের ই-বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হবে বাংলাদেশ। ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে বিলিয়ন ইউনিট স্মার্ট উৎপাদন হবে। কম্পিউটার পিসিবিভিত্তিক ধাতু রূপান্তর ব্যবসায় সম্প্রসারিত হবে।
হিসাব আরও বলছে, যা ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ মানবিক সংকট। সংকট নিয়ন্ত্রণে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার সঙ্গে দেশ থেকে দেশে প্রবেশ করা রিফার্বিশ ইলেকট্রনিক্স পণ্য আমদানি বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন।
শনিবার (৩ জুন) বিকেলে বাংলাদেশ আইসিটি জর্নালিস্ট ফোরামের (বিআইজেএফ) উদ্যোগে রাজধানীর প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত ‘ই-বর্জ্যের কার্বন ঝুঁকিতে বাংলাদেশ: কারণ ও উত্তরণের পথ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এমন আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন বক্তারা।
আরও পড়ুন: ই-বর্জ্য: পুনর্ব্যবহারের পরিবর্তে ফেলে দেয়া হবে ৫৩০ কোটি মুঠোফোন
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. সৈয়দ আখতার হোসেন।
তিনি বলেন, ই-বর্জ্যের কোনো গাইডলাইন নাই। অভিভাবকহীন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে একটি ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নীতিমালা তৈরি করা দরকার।
তিনি আরও বলেন, আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে আমরা বিআইজেএফ এর পতাকা তলে সবাইকে নিয়ে দেশজুড়ে আন্তর্জাতিক মানের ই-বর্জ্য সচেতনতা দিবস পালন করবো।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা একটি ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় হ্যাকাথন করতে চাই।
বিআইজেএফ সভাপতি নাজনীন নাহার জানান, স্বাগত বক্তব্যে ই-বর্জ্যের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এর ভয়াবহতা থেকে রক্ষায় বিআইজেএফ এর নেওয়া এ উদ্যোগ আগামীতে আরও জোরদার করা হবে।
গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সময়ের সঙ্গে খুবই প্রাসঙ্গিক।
এ জন্য সচেতনতা গড়ে তোলার পাশাপাশি ব্যবস্থাপনায় সুনির্দিষ্ট একটি কর্তৃপক্ষ থাকা দরকার। এটা বাস্তবায়নে বিআইজেএফ প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।
সার্ক সিসিআই (বাংলাদেশ) নির্বাহী কমিটির সদস্য শাফকাত হায়দারের সঞ্চালনায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিটিআরসি’র স্পেকট্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক প্রকৌশলী মো. মাহফুজুল আলম, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন, র্যাব-এর আইন ও মিডিয়া শাখার পরিচালক খন্দকার আলী মঈন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের উপসচিব সাঈদ আলী, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপি) উপ-পরিচালক (ঢাকা বিভাগ) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সিইআরএম পরিচালক রওশন মমতাজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোবোটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল।
সভায় ই-বর্জ্য ঝুঁকি থেকে বাংলাদেশকে স্মার্ট হিসেবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বে কাল-বিলম্ব না করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা।
বক্তাদের পরামর্শ সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে এনে বিআইজেএফ আগামীতে স্মার্ট সাংবাদিকতায় ভূমিকা পালন করবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে গোল টেবিল আলোচনায় উপস্থিত সবার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাব্বিন হাসান।
অধ্যাপক লাফিফা জামাল বলেন, আজকের ইলেকট্রনিক্স পণ্যেই আগামী দিনের ই-বর্জ্য। ল্যাপটপ-কম্পিউটারের চেয়ে কি-বোর্ড, মাউস থেকে ই-বর্জ্য বেশি হচ্ছে। তাই এগুলো কোথায় ফেলতে হবে তা নির্ধারণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালের ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিধিমালা অনুযায়ী, এসব পণ্য যারা উৎপাদন করবেন তাদেরই ফিরিয়ে নেওয়ার বিধান থাকলেও তা প্রতিপালিত হচ্ছে না। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার।
ডিএনসিআরপি উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার বলেন, ব্যাটারিচালিত গাড়ি থেকে দেশে ভয়াবহমাত্রায় সিসা ছড়াচ্ছে। তাই সবার আগে উৎপাদকদের দায়বদ্ধতার মধ্যে আনতে হবে। এ বিষয়ে নীতি নির্ধারকদের চাপের মুখে রাখতে বিআইজেএফ সমাজের আয়না হিসেবে পরিচিত গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সিইআরএম পরিচালক রওশন মমতাজ বলেন, আমরা বুয়েট থেকে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করে ই-বর্জ্য আইন ২০০১ এর একটি খসড়া করা হয়েছে। রি-ইউজ মনেই ই-বর্জ্য নয়। তাই আমি একে ই-রিসোর্স হিসেবে অভিহিত করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, এজন্য এটি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনাটা এখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। জাপান রিসাইকেল ই-বর্জ্য দিয়ে গোল্ড মেডেল তৈরি করতে চায়। হাইটেক পার্কে যদি রিসাইকেল প্ল্যান্ট করা হয় তবেই এটি সম্পদ হিসেবে উপযোগ সৃষ্টি করবে।
র্যাব-এর আইন ও মিডিয়া শাখার পরিচালক খন্দকার আলী মঈন খন্দকার আল মঈন বলেন, সব স্টেক হোল্ডারদের সমন্বিত উদ্যোগ নিলে ই-বর্জ্য ঝুঁকি কমানো সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে জনসচেতনতার বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, দেশে ব্যাগেজ পণ্যের চাহিদা রয়েছে। আমরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে একই ব্যক্তিকে চার বারও আটক করার পর তিনি একই ব্যবসা করছেন। আপনারা তথ্য দিলেই তদন্ত করে এ অভিযান অব্যাহত রাখবেন।
স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ই-বর্জ্যকে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ই-রিসোর্স এ রূপান্তর ব্যবসায়িক ভায়াবল না। আমাদের ইন্টারনাল ই-ওয়েস্ট ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভাবছি। তখন বাইরের দেশ থেকে ই-বর্জ্য বাংলাদেশে ডাম্পিং করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান ভিত্তিক কিছু ব্যবসায়ী বাংলাদেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ কাজ করছে। প্রতি মাসে ১৫-১২ হাজার রিফারবিশ ল্যাপটপ বাজারে ঢুকছে। এতে সরকার ৩০-৩১ কোটি টাকার মতো রাজস্ব পেতো।
আরও পড়ুন: খুলনা সিটি করপোরেশনে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা নেই, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা চূড়ান্ত পর্যায়ে: মন্ত্রী
বাংলাদেশ সরকারকে সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে: জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ
জাতিসংঘের চরম দারিদ্র্য ও মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক ওলিভিয়ার ডি শ্যুটার বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে প্রত্যাশিত স্তরে উন্নীত হওয়ার পর একটি অধিকারভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে।
তিনি বলেন, ‘মানুষকে দরিদ্রতার মধ্যে রেখে একটি দেশ তার আপেক্ষিক সুফল বা উন্নয়ন ভোগ করতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন মূলত তৈরি পোশাক শিল্পের মতো একটি রপ্তানি খাত দ্বারা ব্যাপকভাবে চালিত, যা সস্তা শ্রমের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল।’
সোমবার বাংলাদেশে ১২ দিনের সফর শেষে অলিভিয়ার ডি শ্যুটার এসব কথা বলেন।
ডি শ্যুটার সরকারকে ২০২৬ সালে এলডিসি মর্যাদা থেকে আসন্ন উন্নীতকরনের সুযোগকে ব্যবহার করে তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর তার নির্ভরতা পুনর্বিবেচনা করার জন্য আহ্বান জানান, কারণ এই শিল্প ৪ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের বর্তমান রপ্তানি আয়ে শতকরা ৮২ ভাগ অবদান রাখছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা পর্যালোচনা করছে ঢাকা ও বেইজিং
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যতো উন্নীতকরনের পথে এগুচ্ছে, ততো এটি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের ট্যাক্স-প্রণোদনা প্রদান এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে।’
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা, কর্মীদের শিক্ষিত করা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং সামাজিক সুরক্ষার উন্নতিতে সরকারকে আরও বেশি সময় এবং সম্পদ ব্যয় করা প্রয়োজন। তিনি জানান, ‘এ জাতীয় উদ্যোগ শুধু সুনামের চিন্তা করে এমন বিনিয়োগকারীদেরই আকৃষ্ট করবে না এটি বাংলাদেশে উন্নয়নের একটি নতুন রূপরেখা তৈরি করবে, যা বৈষম্যমূলক রপ্তানি সুযোগের পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ চাহিদা দ্বারা চালিত হবে।’
বিশেষ প্রতিবেদক স্বাধীনভাবে কাজে বিশ্বাসী সুশীল সমাজের ওপর সরকারের এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নানাবিধ প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি উল্লেখ করেন, উক্ত আইনের অধীনে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং শিক্ষাবিদদের তাদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার প্রয়োগের কারণে আটক করা হয়েছে।
ডি শ্যুটার বলেন, ‘এই বিষয়গুলো দেশটি যে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে চাচ্ছে কেবল তাদেরই শঙ্কিত করবে না, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে।’
তিনি বলেন, ‘আপনি জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত না করে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা বা সামাজিক সুরক্ষা দিতে পারবেন না।’
তার সফরকালে তিনি সারা দেশ ভ্রমণ করেন এবং দারিদ্র্যসীমায় থাকা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘দেশ সামগ্রিক আয়ের বৈষম্য হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করলেও, এখনও বহুমাত্রিক দারিদ্র্য রয়ে গেছে এবং বিশেষ করে, শহরাঞ্চলে আয়-বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা মামলা: সদস্য দেশগুলোর সমর্থন চেয়েছেন ওআইসি মহাসচিব
বিশেষ প্রতিবেদক বলেন, ‘সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি অসম হয়েছে; আদিবাসী, দলিত, বেদে, হিজরা এবং ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘু যেমন- বিহারীদের সুযোগ বঞ্চিত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার উন্নয়নের নামে অনানুষ্ঠানিক বসতিগুলোতে উচ্ছেদ চালিয়েছে। এক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বা পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন প্রদান না করে বাসস্থানের অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।’
ডি শ্যুটার সরকারকে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও যৌক্তিক করার জন্য আহ্বান জানান, যেটিকে তিনি ‘এডহক বা সাময়িক ভিত্তিতে ১১৯টি স্কিমের একটি সমন্বিত কর্ম হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে এগুলো দুর্বলভাবে সমন্বিত, যা বাংলাদেশিদের প্রত্যাশিত আয়ের নিরাপত্তা প্রদান করে না।’
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে কর থেকে প্রাপ্ত জিডিপি-এর অনুপাত উল্লেখযোগ্য হারে কম হয়েছে (প্রায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ) এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরনে অর্থায়নের জন্য প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সরকারি রাজস্ব আসে পরোক্ষ কর থেকে, অথচ আয়ের ওপর প্রত্যক্ষ কর থেকে আসে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ।
তিনি বলেন, ‘চিত্রটি উল্টো হওয়া উচিত। উচ্চ-আয় উপার্জনকারী মানুষ এবং বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জনসাধারণের পরিষেবা এবং সামাজিক সুরক্ষার অর্থায়নে অবদান রাখতে হবে, গ্রাহকদের নয়।’
বিশেষ প্রতিবেদক বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নতুন এবং উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি থেকে জনসংখ্যাকে রক্ষা করার জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি তৈরি করা উচিত।’
তিনি উল্লেখ করেন, শুধুমাত্র ২০২২ সালে, ৭ দশমিক ১ মিলিয়ন বাংলাদেশি নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং অন্যান্য বিপর্যয়ের কারণে বা জলের লবণাক্তকরণের কারণে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে ও তাদের জীবিকা হুমকির সম্মুখীন হয়।
আরও পড়ুন: বিআরআই’র আঞ্চলিক সংযোগে অবদান রাখতে আগ্রহী বাংলাদেশ ও চীন
বিশেষ প্রতিবেদকের মিশনের অংশ হিসেবে কক্সবাজার সফর অন্তর্ভুক্ত ছিল, ডি শ্যুটার সেই শরণার্থী শিবিরসমূহ পরিদর্শন করেন যেখানে ৯ লাখ ৭৭ হাজার ৭৯৮ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে, যাদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে তাদের মাতৃভূমির গণহত্যার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পালিয়ে এসেছে। প্রায় এক মিলিয়ন শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে জনাকীর্ণ দেশ বাংলাদেশের সরকারকে অভিবাদন জানানোর পাশাপাশি আশ্রয় শিবিরের বসবাস-অনুপযোগী অবস্থার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘প্রত্যাবাসনের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের একটি স্বচ্ছন্দ্য ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয়েরই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে।’
বিশেষ প্রতিবেদক জানান, এটি ‘অনভিপ্রেত’ যে ২০২৩ সালে রোহিঙ্গা শিবিরে জরুরি মানবিক প্রয়োজন মোকাবিলায় ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের যৌথ পরিকল্পনার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক দাতারা এতোই কম অবদান রেখেছে যে চাহিদার মাত্র শতকরা ১৭ ভাগ অর্থায়ন জোগাড় হয়েছে। মার্চ ২০২৩ সাল থেকে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে তার খাদ্য ভাউচারের মূল্য প্রতি মাসে ১২ মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলার করতে হয়েছে, এবং এটি আগামী জুনে আরও কমিয়ে ৮ ডলার করা হবে।
ডি শ্যুটার সতর্ক করেন, অপুষ্টি এবং যথেষ্ট পুষ্টির অভাব বৃদ্ধি পাবে, বিশেষ করে শিশুদের পরিণতি ভয়াবহ হবে। তার ভাষায়, ‘পরিবারগুলো মরিয়া হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ সরকার যদি রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থানের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং মানবাধিকার আইন অনুযায়ী তাদেরকে আয়-উপার্জনের সুযোগ করে দেয়, তবে অন্তত তাদের কিছুটা কষ্ট লাঘব হবে।’
২০২৪ সালের জুনে বিশেষ প্রতিবেদক তার বাংলাদেশ বিষয়ক সর্বশেষ প্রতিবেদন মানবাধিকার কাউন্সিলে পেশ করবেন।
খুলনাবাসী ফগার মেশিনের ধোঁয়ায় চিন্তিত, ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রতি ওয়ার্ডে মশা নিধনে ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটানোর ফলে পুরো এলাকায় ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট দূষণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
নগরীর বাসিন্দারা জানান, ফগার মেশিনের ধোঁয়ায় পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়া ধোঁয়ার গন্ধে ঘরে থাকা যায় না। সবার চোখমুখ জ্বালাপোড়া করে। এ অবস্থায় শিশুরা ছোটাছুটি করতে থাকে। ছোট-বড় সবার স্বাস্থ্যের জন্যই এ ধোঁয়া ক্ষতিকর।
খুলনা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলেন, ফগার মেশিনের ধোঁয়া অবশ্যই স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। আগামীতে এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা হবে বলে আশ্বাস দেন খুলনা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জলবায়ু সংকট মোকাবিলার কৌশল নিয়ে ইইউ, দক্ষিণ এশিয়ার নীতি নির্ধারক-বিশেষজ্ঞদের আলোচনা
ফগার মেশিনের ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে জানিয়ে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্বিবদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের (ইউআরপি) অধ্যাপক ড. মোস্তফা সারোয়ার বলেন, ‘ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানোর একটা নিয়ম আছে। সেটা অনুসরণ করলে ওষুধটা মূল জায়গায় পড়ে। এটি অনুসরণ করা জরুরি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দ্বিতীয়ত, একাধিকবার এ ধোঁয়ার সংস্পর্শে গেলে মাথা ঝিমঝিম করতে পারে। প্রতিনিয়ত এ ধোঁয়ার সংস্পর্শে গেলে শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। এটি ওষুধ ছিটানোর সময় কাছে গিয়েও হতে পারে কিংবা ছিটানোর পর ঘরের জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকেও হতে পারে। এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।’
খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন মশার ওষুধ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে বলেন, শিশুদের জন্য তো বটেই, বড়দের জন্যও ক্ষতিকর। তাই ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটানোর সময় সতর্ক হতে হবে। সিটি করপোরেশনের কর্মীদেরও সতর্ক হতে হবে।
পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন মাসাস-এর নির্বাহী পরিচালক শামীমা সুলতানা শিলু বলেন, এক্ষেত্রে সচেতনতার বিকল্প নেই। এটি কেবল দায়িত্বশীলরাই করবে।
তিনি বলেন, ‘এমন ভাবা ঠিক নয়। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল, নাগরিক নেতা, পরিবার অর্থাৎ সবারই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। মশার ওষুধ ক্ষতিকর আমরা সবাই জানি। তারপরও অসচেতনতার কারণেই গুরুত্ব দিই না। যে কারণে ওষুধ ছিটানোর সময় শিশুরা ধোঁয়াকে খেলনা ভেবে খেলায় মেতে ওঠে। তাদের নিষেধ করতে হবে।’
আরও পড়ুন: মানবাধিকারের ওপর দারিদ্র্যের প্রভাব পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ সফর করবেন জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ
এক্ষেত্রে করণীয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শামীমা সুলতানা বলেন, প্রথম পদক্ষেপ হলো সচেতনতা। ওষুধ ছিটানোর সময় পরিবর্তন, যেমন বিকালে ওষুধ না ছিটিয়ে যখন মানুষজন ঘরে থাকবে তখন ছিটাতে হবে।
তিনি আও বলেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে। কারণ অধিকাংশ সময় দেখা যায়, বিকালে ওষুধ ছিটানো হয়। তখন শিশুরা খেলতে বাইরে বের হয়। সন্ধ্যার পর ছোটবড় সবাই ঘরে থাকে। তখন ছিটানো যেতে পারে।
এ ব্যাপারে খুলনা সিটি করপোরেশনের সংরক্ষণ (কনজারভেন্সি) বিভাগের প্রধান আব্দুল আজিজ বলেন, মশা নিধনে ফগার মেশিনে ব্যবহার করা ওষুধ জটিল কোনো প্রভাব না ফেললেও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
তিনি আরও বলেন, তাই আগামীতে সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হবে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. স্বপন হালদার বলেন, শুধু শিশুদেরই না, মশার ওষুধের ধোঁয়া সবার স্বাস্থ্যের জন্যই ক্ষতিকর। এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি।
নগরীর টুটপাড়ার বাসিন্দা আকাশ শাহ বলেন, প্রতি সপ্তাহে বিকালে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা এসে ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটিয়ে যান। এতে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, বড়রা নাকে-মুখে কাপড় দিলেও শিশুরা ছোটাছুটি করে। তাই শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
ফগার মেশিনের শব্দ শুনলেই শিশুরা ঘর থেকে বেরিয়ে যায় উল্লেখ করে খুলনা মহানগরীর গোবরচাকার জব্বার মোল্লা বলেন, ধোঁয়ার কুন্ডলীর মধ্যে খেলায় মেতে ওঠে শিশুরা। অনেক পরিবার সচেতন না বিধায় শিশুদের নিষেধ করে না।
আরও পড়ুন: সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি বিশেষজ্ঞদের
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি বিশেষজ্ঞদের
সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা আরও বলেন, ডিজিটাল ও সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিএসএ বাতিল করে নাগরিক সমাজের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সরকার একটি নতুন আইন করতে পারে।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটিতে ৫ দিন সংবাদপত্র প্রকাশিত হবে না
রবিবার নিউজ নেটওয়ার্ক রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকায় এনজিও ফোরামের ট্রেনিং হলে ইন্টারনিউজ ও এনগেজমিডিয়ার সহযোগিতায় ‘সাইবারস্পেস, সাইবার আইন ও ডিজিটাল অধিকার বিষয়ে অ্যাডভোকেসি ক্যাম্পেইন’- শীর্ষক অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে গবেষক, মানবাধিকার কর্মী ও আইন বিশেষজ্ঞ রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, ডিএসএ একটি দমনমূলক আইন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করার অস্ত্রে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই আইনের অনেক ধারা সংবিধান ও জাতিসংঘ স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। এই আইনটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও বাধা।’
লেনিন উল্লেখ করেছেন যে ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত ডিএসএ-এর অধীনে মোট এক হাজার ১২৯টি মামলা করা হয়েছে।
এর মধ্যে ৩০১টি মামলা রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে এবং ২৮০টি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এবং ১৫৭টি শিক্ষক ও ছাত্রদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি উল্লেখ করেন, মামলার আসামিদের অধিকাংশই বিচার প্রক্রিয়া শুরুর আগে দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন। ‘ডিএসএ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া বেশিরভাগ লোক প্রাথমিক পর্যায়ে জামিন পাননি। কিছু লোককে এমনকি ডিএসএ মামলায় জামিন পেতে এক বছর জেলে থাকতে হয়েছে।’
ডিএসএর অপব্যবহার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেলেও সরকার এ আইন সংশোধনে আন্তরিক নয় বলে জানান তিনি।
তাছাড়া, শুধু আইন সংশোধন করলেই তা উত্থাপিত সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে পারবে না।
লেনিন জানান, ‘সরকার শুধু আইন সংশোধনের আশ্বাস দিচ্ছে, কিন্তু এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। আসলে আইনের সংশোধনই যথেষ্ট নয়। এই আইন অবিলম্বে বাতিল করা উচিত।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নিউজ নেটওয়ার্কের সম্পাদক ও সিইও শহীদুজ্জামান এবং এর প্রোগ্রাম অফিসার রেজাউল করিম। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ১২ জন সিনিয়র সাংবাদিক কর্মশালায় যোগ দেন এবং মিডিয়া শিল্পে ডিএসএর নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে তাদের মতামত বিনিময় করেন।
আরও পড়ুন: বাক স্বাধীনতা কিংবা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের জন্য আইসিটি আইন করা হয়নি: আইনমন্ত্রী
বঙ্গবন্ধুর নাম সংবাদপত্রে ছাপাতে বাধা দিয়েছিল জিয়া সরকার: খালিদ
২০৩৩ সালের মধ্যে গৃহস্থালির ৩৯ শতাংশ কাজ স্বয়ংক্রিয় হতে পারে: বিশেষজ্ঞরা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী এক দশকের মধ্যে গৃহস্থালির ও প্রিয়জনদের দেখাশোনার কাজের প্রায় ৩৯ শতাংশই স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা যেতে পারে।
যুক্তরাজ্য ও জাপানের গবেষকরা ৬৫ জন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিশেষজ্ঞকে ১০ বছরের মধ্যে সাধারণ গৃহস্থালির কাজে অটোমেশনের (স্বয়ংক্রিয়তা) পরিমাণ অনুমান করতে বলেন।
বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটায় সর্বাধিক অটোমেশন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে শিশু ও বয়স্কদের দেখাশোনা বা যত্ন নেয়ার কাজ এআই দ্বারা পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম।
গবেষণাটি পিএলওএস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও জাপানের ওচানোমিজু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানতে চেয়েছিলেন যে অবৈতনিক গৃহকর্মে রোবটের কী প্রভাব থাকতে পারে।
তারা প্রশ্ন করেন, ‘রোবট যদি আমাদের কাজ কেড়ে নেয়, তাহলে তারা কি আমাদের আবর্জনার মতো বাইরে ছুঁড়ে ফেলবে?’
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গবেষকরা পর্যবেক্ষণ করে বলেন যে গৃহস্থালি কাজের জন্য ভ্যাকুয়াম ক্লিনার রোবট বিশ্বে সর্বাধিক উৎপাদিত ও বিক্রিত হয়।
আরও পড়ুন: অ্যামেকা: বিশ্বের সর্বাধুনিক মানবিক রোবট
দলটি যুক্তরাজ্যের ২৯ জন ও জাপানের ৩৬ জন এআই বিশেষজ্ঞকে বাড়িতে রোবটের ব্যবহার সম্পর্কে তাদের পূর্বাভাসের জন্য জিজ্ঞাসা করে।
অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের পোস্ট-ডক্টরাল গবেষক ড. লুলু শি বলেন, ‘আপনার শিশুকে শেখানো, আপনার সন্তানের সঙ্গে থাকা বা পরিবারের কোনও বয়স্ক সদস্যের যত্ন নেয়ার মতো কাজগুলোসহ দেখাশোনার কাজের মাত্র ২৮ শতাংশ স্বয়ংক্রিয় হওয়ার পূর্বাভাস এসেছে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটায় যে সময় ব্যয় করা হয়, প্রযুক্তি তার ৬০ শতাংশ কমাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন যে আগামী দশ বছরে রোবট গৃহস্থালির কাজ থেকে মানুষকে মুক্তি দিবে এমন ভবিষ্যদ্বাণী করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং এতে বেশ কিছু সংশয়ও রয়েছে।
আরও পড়ুন: টেসলার রোবট ‘অপটিমাস’ দেখালেন ইলন মাস্ক
জাপানে ছোট দোকানগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে বুদ্ধিমান রোবট
তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে বিশেষজ্ঞদের সতর্ক থাকার আহ্বান রাষ্ট্রপতির
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের আরও সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আইটি একদিকে অপার সুযোগের দ্বার উন্মোচন করেছে, অন্যদিকে এর অপব্যবহার ও প্রতারণামূলক কার্যক্রম নতুন অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তাই আইটি বিশেষজ্ঞদের এ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সজাগ থাকতে হবে।’
বুধবার কিশোরগঞ্জে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ই-কমার্স ও অনলাইন ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে।
তিনি বলেন, কিছু অসাধু ব্যক্তি ও প্রতারক অনলাইন ডেলিভারির নামে জনগণের টাকা চুরির ফাঁদ পাতছে। অনেকে অনলাইনে টাকা পরিশোধ করেও কোনো পণ্য পাননি। আবার অনেকে পণ্য পেলেও এর মান খারাপ ছিল।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র পেশ করলেন রোমানিয়ার রাষ্ট্রদূত
তিনি আরও বলেন, এসব প্রতারক চক্র তথ্য প্রযুক্তিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন আকর্ষণীয় অফার দিয়ে প্রতারণা করছে।
আবদুল হামিদ বলেন, তবে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করে ই-কমার্স ও অনলাইন ব্যবসার সম্প্রসারণ অব্যাহত রাখতে হবে। ক্রেতাদের লোভনীয় অফার দেখলেই অর্ডার করার বিষয়টি পরিবর্তন করতে হবে।
এই প্রজন্মকে স্বাবলম্বী করতে ফ্রিল্যান্সিং একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে সাড়ে ছয় লাখ সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। এ খাতে অনেক তরুণের কর্মসংস্থান হয়েছে।
তিনি বলেন, নারীদেরও ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আসতে হবে, যাতে তারাও সমান তালে এগিয়ে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, যারা ফ্রিল্যান্সিং পেশায় সফল হয়েছেন, তাদের এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। বিনিয়োগের মাধ্যমে এ পেশার পরিধি বাড়াতে হবে। বিল গেটস, ইলন মাস্ক, জেফ বেজোসের মতো আইটি জায়ান্টরা এভাবেই তাদের ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন।
আরও পড়ুন: শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা দিন: রাষ্ট্রপতি
হামিদ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
তিনি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য উন্নত প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
দেশের জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের নিচে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের এই বিশাল যুবসমাজকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজে লাগাতে হবে। যাতে তারা এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।
তিনি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তা, পেশাজীবী এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশ্ববাজারে টেকসই অবস্থান তৈরি করতে মৌলিক গবেষণা ও উদ্ভাবনের বিকল্প নেই এবং সফটওয়্যারের পাশাপাশি হার্ডওয়্যার শিল্পের উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ সময় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ স্থানীয় সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ইসিকে সাহসের সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান রাষ্ট্রপতির
গ্যাসের দাম আরও বাড়লে জনগণের জন্য বড় চাপ হবে: জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা
বর্তমান পরিস্থিতিতে গৃহস্থালির গ্রাহকদের জন্য আবার গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে তা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে জনসাধারণের জন্য বড় চাপ হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিন আয়োজিত ‘উড ইট বি র্যাশোনাল টু ইনক্রিজ গ্যাস প্রাইজ নাউ?’ শীর্ষক অনলাইন সেমিনারে বক্তৃতাকালে বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড.এম তামিম বলেছেন, ‘জনগণ সত্যিই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে... টিসিবি পণ্য কেনার জন্য লাইন দিন দিন বাড়ছে।’
তামিম বলেন, হঠাৎ করে জ্বালানির দামের পরিবর্তন, ব্যবসার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি করবে।
তিনি বলেন, সরকারের উচিত উন্নয়ন প্রকল্প স্থগিত করা এবং জনগণের জীবন রক্ষায় তহবিল বরাদ্দ করা। কারণ তারা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর আগামী ২১ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত গণশুনানি করবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে প্রস্তাব দেয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো। এই গনশুনানির ওপর ভিত্তিতে এসব বক্তব্য দেন বিশেষজ্ঞেরা।
আরও পড়ুন: গ্যাস ও বিদ্যুতে ভর্তুকি ধাপে ধাপে কমানো উচিত: প্রধানমন্ত্রী
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান আবদুল জলিল, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এবং এফবিসিসিআই-এর জ্বালানি স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হুমায়ুন রশীদ।
আহসান মনসুর বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে তা অবশ্যই সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করবে।
তিনি বলেন, অনেকেই দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে।
তিনি বিশ্ব জ্বালানি বাজারে স্থিতিশীল অবস্থায় ফেরার জন্য সরকারকে কিছু সময় অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত রমজানের পর নেয়া উচিত।
সেমিনারটি পরিচালনা করেন ইপি সম্পাদক মোল্লা আমজাদ হোসেন।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল জলিল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানিতে ভর্তুকি ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও অন্যান্য শুল্কের বিষয়ে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত আছে কিনা তা জানাতে জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা সংশ্লিষ্ট বিভাগকে চিঠি পাঠিয়েছেন।
তিনি বলেন, এবার বিইআরসি টেকনিক্যাল টিমকে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর আপিল স্বাধীনভাবে বিশ্লেষণ করে তাদের পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় মহাসড়কে গ্যাস সিলিন্ডারবাহী ট্রাক বিকল, যানজটে দুর্ভোগে ৩২ জেলার মানুষ
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ওপর গণশুনানি ২১ থেকে ২৪ মার্চ