দেশত্যাগ
ঢাকা বিমানবন্দরে ২ মেয়েসহ জাপানি নারীকে দেশত্যাগে বাধা
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো ও তার দুই মেয়েকে শুক্রবার দেশ ছাড়ার সময় বাধা দিয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বাবা ইমরান শরীফ ইমিগ্রেশন পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এরিকোকে তার মেয়েদের নিয়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধা দেয়।
ইউএনবিকে ইমরান বলেন, ‘এরিকো তাদের মেয়েদের নিয়ে দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিমানবন্দরে পৌঁছেছি এবং আদালতের কপি দেখিয়েছি। যেখানে আদেশ জারি করা আছে যে দুই মেয়ের দেশ ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘নাসরিন নামে এক নারী এরিকোকে সাহায্য করেন। বিপদ টের পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন তিনি।’
২ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মেয়েদের নিয়ে বিদেশে যাওয়ার আদেশ চেয়ে এরিকোর আবেদন খারিজ করে দেয়।
১৭ মে এরিকোর কৌঁসুলি শিশির মনির তার মক্কেলকে দুই সন্তানকে নিয়ে বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন।
আবেদন সূত্র বলছে, এরিকো তার মেয়েদের সঙ্গে বাংলাদেশে অনেক দিন কাটিয়েছেন এবং জাপানে ছুটি কাটাতে বিদেশে যেতে চান।
একই সময়ে এরিকো তাদের দুই সন্তানের সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ না মানার জন্য ইমরানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনতে আবেদন জানান।
পরে ইমরান তার দুই সন্তানের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেয়ার জন্য হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করার অভিযোগ করে এরিকোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদনও দায়ের করেন।
১৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ পারিবারিক আদালতে ইমরান ও এরিকোর দুই সন্তানের হেফাজতে নিয়ে তিন মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন।
এই সময়ের মধ্যে, মেয়েরা বাংলাদেশে তাদের মায়ের সঙ্গে থাকবে বলে আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আর ইমরান তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারলেও দেশ ছাড়তে পারবে না।
আপিল বিভাগের আদেশে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর থেকে মেয়ে দুটি মায়ের হেফাজতে রয়েছে। তবে তাদের বাবা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন।
গত বছরের ২১ নভেম্বর বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেন যে ইমরান ও এরিকোর জাপানে জন্ম নেয়া মেয়েরা বাবার কাছে থাকবে।
আদালত নির্দেশ দেন, মা ১০ ও ১১ বছর বয়সী মেয়েদের আলাদাভাবে ১০ দিন করে বছরে তিনবার দেখা করতে পারবেন। এজন্য তার যাতায়াত ও থাকার খরচ বহন করতে হবে ইমরানকে।
গত ৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে আপিল বিভাগে আবেদন করেন এরিকো।
বিয়ের ১২ বছর পর গত বছরের ১৮ জানুয়ারি বৈবাহিক বিরোধের জেরে ধরে চিকিৎসক এরিকো ইঞ্জিনিয়ার ইমরানের কাছে তালাকের আবেদন করেন।
২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি তিনি তাদের তিন সন্তানের হেফাজতের জন্য টোকিও পারিবারিক আদালতে একটি মামলাও দায়ের করেছিলেন।
কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি জাপান থেকে দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন ইমরান। এরপর জাপানের একটি আদালত শিশুদের তাদের মায়ের হেফাজতে রাখার আদেশ দেন।
গত ১৯ আগস্ট এরিকো দুই মেয়েকে হেফাজতে চেয়ে এখানে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন।
চট্টগ্রামে ৫ শিল্পপতির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
চট্টগ্রামে ৪২ কোটি টাকা ঋণখেলাপির দায়ে পাঁচ শিল্পপতির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। সোমবার অর্থঋণ আদালত চট্টগ্রামের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন।
নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত পাঁচ শিল্পপতি হলেন- চট্টগ্রামভিত্তিক হাবিব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী, পরিচালক সালমান হাবিব, ইয়াসিন আলী, মাশরুর হাবিব ও তানভীর হাবিব।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে দেশীয় অস্ত্র জব্দ, গ্রেপ্তার ৫
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের করা ৪২ কোটি টাকা ঋণখেলাপি মামলায় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী, পরিচালক সালমান হাবিবসহ পাঁচ পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করা হয়। এরপর আদালত এ আদেশ দেন।
এর আগে গত ৮ আগস্ট এক কোটি ৮০ লাখ টাকার চেক প্রতারণা মামলায় চট্টগ্রামভিত্তিক হাবিব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যানসহ চার পরিচালকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ষষ্ঠ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমান।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনারে পাওয়া গেছে ৩টি এয়ারগান
চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে থাকা মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য ধ্বংসের কাজ শুরু
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: গোলাবর্ষণ এবং নাগরিকদের দেশত্যাগ অব্যাহত
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের দ্বিতীয় সপ্তাহ শেষ হয়ে গেলেও গোলাবর্ষণ এবং অবরুদ্ধ শহরগুলো থেকে বেসামরিক নাগরিকদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে কমপক্ষে দুই মিলিয়ন মানুষ ইউক্রেন থেকে পালিয়ে গেছে। যাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নারী ও শিশু এবং বেশিরভাগ মানুষ প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে।
ইতোমধ্যে রুশ সেন্যরা ইউক্রেনের দক্ষিণের বেশ কিছু এলাকা দখল করেছে। এছাড়া অন্যান্য অঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রচণ্ড প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, বুধবার রাশিয়া ও ইউক্রেনের অন্তঃসত্বা নারী, নারী ও শিশু এবং অন্যদের জন্য সুমি শহর ছেড়ে যাওয়ার মতো একটি মানবিক করিডোরের ব্যাপারে একমত হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার অনেক বিদেশি ছাত্রসহ প্রায় পাঁচ হাজার বেসামরিক নাগরিকদের নিয়ে একটি লাল ক্রস লোগো দ্বারা চিহ্নিত বাস শহর ছেড়ে বাইরে যায়।
আরও পড়ুন: ফের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা রাশিয়ার
বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন শহরগুলোতে জীবন ক্রমশ অসহনীয় হয়ে উঠেছে এবং খাদ্য ও ওষুধের সঙ্কট তীব্র হচ্ছে। বন্দর নগরী মারিউপোল; বেশ কয়েক দিন ধরে এখানে পানি, বিদ্যুৎ, স্যানিটারি সিস্টেম এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক ছাড়া রয়েছে। শহরটির রাস্তায় অগণিত লাশ পড়ে রয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অঙ্গীকার করেছেন যে, তার দেশ তার শহর, মাঠ এবং নদীতীরে’ সর্বত্র তারা রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
বেসামরিক নাগরিকদের কি নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে?
বুধবার উত্তর-পূর্ব সীমান্তের শহর সুমি থেকে পোল্টাভা শহরে ১২ ঘণ্টা-দীর্ঘ যাত্রার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলছেন, শহর থেকে ত্রাণ বহনকারী প্রায় দুই ডজন বাস দেশ ত্যাগে আগ্রহী নাগরিকদের নিয়ে যাবে।
ইউক্রেনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, মঙ্গলবার সুমি থেকে এক হাজার ৭০০ বিদেশি শিক্ষার্থীসহ পাঁচ হাজার জনকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা বাইডেনের
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা বেসামরিক নাগরিকদের জন্য রাশিয়ার কাছাকাছি কোনো নিরাপদ করিডোর স্থাপনের জন্য মস্কোর দেয়া প্রস্তাব গ্রহণ করবে না। তারা নাগরিকদের ইউক্রেনের পশ্চিমমুখী বিভিন্ন দেশে নিরাপদ প্রত্যাবাসন করাতে চায়।
মঙ্গলবার রুশ গোলাবর্ষণের কারণে নাগরিকদের স্থানান্তরের প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়।
ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী জানায়, মারিউপোল থেকে বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। কারণ রাশিয়ার সেনারা মঙ্গলবারও শহরে মানবিক পণ্যবাহী ইউক্রেনের একটি কনভয়ে গুলি চালায়।
তবে রাশিয়া জোর দিয়ে বলেছে যে তারা ইউক্রেনের পাঁচটি শহর ছেড়ে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মানবিক করিডোর দিতে প্রস্তুত। নাগরিকদের স্থানান্তরে আগে নেয়া প্রচেষ্টা ভেস্তে যাওয়ায়, দুই পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছে।
আরও পড়ুন: ২০ লাখ শরণার্থী ইউক্রেন থেকে পালিয়েছে: জাতিসংঘ
দেশত্যাগে অনির্দিষ্ট সময়ের নিষেধাজ্ঞা সংবিধানবিরোধী পদক্ষেপ: হাইকোর্ট
অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তির ওপর অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেশত্যাগে বিধিনিষেধ আরোপ সংবিধান ও মানবতাবিরোধী পদক্ষেপ, তাই এর সময়সীমা নির্দিষ্ট করতে হবে।
দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নরসিংদীর আতাউর রহমান ওরফে সুইডেন আতাউর রহমানের করা এক রিট আবেদনে জারি করা রুলের রায়ে এমন অভিমত দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রবিবার এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
অন্যদিকে হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে দুদক।
এর আগে ১৬ মার্চ দুদকের দেয়া নিষেধাজ্ঞার চিঠি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আরও পড়ুন:হত্যাচেষ্টা মামলায় ইরফান সেলিমকে কেন জামিন দেয়া হবে না: হাইকোর্ট
রবিবার প্রকাশিত রায়ে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আদালতের অভিমত হলো‘এই যে, অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে দেশত্যাগে বারিত করার প্রয়োজন হলে এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট আইন বা বিধি প্রণয়ন এখন সময়ের বাস্তবতা; এবং ওই আইন বা বিধিতে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশত্যাগে বারিত করার কারণ জানানো, গৃহীত পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির বক্তব্য/আপত্তি প্রদানের সুযোগ রাখতে হবে।’
‘অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কারোর ওপর এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ সংবিধান ও মানবতাবিরোধী পদক্ষেপ, তাই এর সময়সীমা নির্দিষ্ট করাও ন্যায়সংগত হবে। আমরা ইতোমধ্যে বিধিমালার বিধি ১৮ আলোচনা করেছি, যেখানে অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে অপরাধলব্ধ বা অবৈধ সম্পত্তি অবরুদ্ধ বা ক্রোক করার বিধান আছে। যদি অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে অপরাধলব্ধ বা অবৈধ সম্পত্তি অবরুদ্ধ বা ক্রোক করার বিধান থাকে সে ক্ষেত্রে একই যুক্তিতে অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তির দেশত্যাগে বারিত করার সুনির্দিষ্ট বিধি বা আইন প্রণয়নে দ্বিধা থাকা উচিত নয়। ’
আরও পড়ুন: দুদক গত ৫ মাসে কতজনকে অব্যাহতি দিল তালিকা চাইলেন হাইকোর্ট
‘সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে আদালতের সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট অভিমত এই যে, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত হবে যে, অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে যে কোন অপরাধের সাথে জড়িত সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তিকে দেশত্যাগে বারিত করার জন্য অবিলম্বে প্রয়োজনীয় আইন বা বিধি প্রণয়ন করা এবং যতক্ষণ পর্যন্ত এই ধরনের আইন বা বিধি প্রণয়ন করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অন্তবর্তী ব্যবস্থা হিসেবে এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতের নিকট এ ধরনের বারিত আদেশ প্রার্থনা করা এবং আদালতের অনুমতি গ্রহণ করা।’
অভিমতে আদালত আরও বলেন, যথাযথ আইন বা বিধি প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত অত্র রায়ের নির্দেশনা ও অভিমতের আলোকে অভিযোগের অনুসন্ধান কিংবা মামলার তদন্ত পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থা/কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট এখতিয়ারসম্পন্ন আদালত সন্দেহভাজন ব্যক্তির দেশ ত্যাগের বিষয়ে যথাযথ আদেশ প্রদানে সম্পূর্ণ এখতিয়ারবান হবে।
আরও পড়ুন: সিসিকে ১০ মাসে তালাকের আবেদন বেড়েছে ৮ গুণ
অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থা/কর্তৃপক্ষ যথাযথ প্রতিনিধির মাধ্যমে এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে আবেদন জানালে আদালত সন্তুষ্টি সাপেক্ষে একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য, যার মেয়াদ ৬০ দিনের অধিক হবে না বারিত আদেশ কিংবা স্বীয় বিবেচনায় ন্যায় সংগত অন্য কোনো আদেশ প্রদান করতে পারবে। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা পক্ষ ওই আদেশ বাতিল বা প্রত্যাহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন জানাতে পারবে এবং সেক্ষেত্রে আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে এবং নথিপত্র যদি দাখিল করা হয় পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান করতে পারবে। বারিত আদেশের মেয়াদ বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থা/কর্তৃপক্ষ পুনরায় সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন করতে পারবে এবং আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষ যদি নথিপত্র দাখিল করে তা বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ আদেশ দিবেন বলে রায়ে উল্লেখ করেন উচ্চ আদালত।
রায়ে উচ্চ আদালত আরও বলেন, আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৩৬ এ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার (ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশেন অব হিউম্যান রাইটস) অনুচ্ছেদ-১৩ এর প্রতিফলন ঘটেছে। ব্যক্তির চলাফেরার স্বাধীনতা যা তার জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার সাথে সম্পর্কিত তাতে হস্তক্ষেপ করা মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি। কোনো নাগরিকের চলাফেরা তথা ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হলে সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সুনির্দিষ্ট কারণ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অবশ্যই জানাতে হবে, যাতে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট তার বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পান।
সরকার কিংবা রাষ্ট্রের অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা শুধুমাত্র ‘সৌখিন’ বা ‘খেয়ালি ইচ্ছার’ বশবর্তী হয়ে দেশের কোনো নাগরিকের চলাফেরার স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করতে বা নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে না উল্লেখ করে আদালত বলেন, একজন নাগরিকের চলাফেরার স্বাধীনতা ব্যক্তিজীবনের স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত, যা শাশ্বত। এ স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে হলে আইন নির্ধারিত নিয়মে বা পদ্ধতিতে করতে হবে; অর্থাৎ কোনো নাগরিকের চলাফেরার মৌলিক অধিকার নিয়ন্ত্রণ বা বারিত করতে হলে তা করতে হবে আইন বা বিধি অনুসারে, জনস্বার্থে। যার বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তার অধিকার রয়েছে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের কারণসমূহ জানার।
‘আমাদের বলতে দ্বিধা নেই যে, নাগরিকের চলাফেরার সাংবিধানিক অধিকার কোন ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের খেয়াল খুশি অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ বা বারিত করা অসাংবিধানিক। ’
দুর্নীতি ও অর্থপাচার মামলার তদন্তের বিষয়ে আদালত বলেন,এটা বাস্তবতা যে, দুর্নীতি কিংবা মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত মামলাসমূহ অনুসন্ধান বা তদন্ত কিছুটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, যদিও বা সংশ্লিষ্ট বিধিতে অনুসন্ধান বা তদন্তের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। আমাদের বিচারিক অভিজ্ঞতা বলে যে, কমিশন কিংবা অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থা/কর্তৃপক্ষ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুসন্ধান বা তদন্ত কার্যক্রম আইন বা বিধিতে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে পারে না।
‘এটাও বাস্তবতা যে,অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সন্দেহভাজন বা অভিযুক্ত অনেকে বিভিন্ন অজুহাতে দেশত্যাগ করছে এবং পরবর্তীতে তাদের আর আইন-আদালতের সম্মুখীন করা সম্ভব হচ্ছে না। এই সকল বাস্তবতাকে আমলে নিয়ে দুর্নীতি বা মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত মামলায় কিংবা অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রেও অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে দেশত্যাগে বারিত বা তার চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন বা বিধি প্রণয়ন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, যা সময়ের চাহিদাও বটে। সুনির্দিষ্ট আইন বা বিধির অনুপস্থিতিতে কোনো তদন্ত সংস্থার দাপ্তরিক আদেশ দিয়ে এ ধরনের পদক্ষেপ বা কার্যধারা গ্রহণ সংবিধান পরিপন্থি। ’
২০২০ সালের ২৪ আগস্ট আতাউর রহমানের সম্পদের তথ্য চেয়ে নোটিশ দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। এ নোটিশের পর ২২ অক্টোবর তিনি তার সম্পদের তথ্য দুদকে দাখিল করেন। এরপর দুদক অনুসন্ধানে নামে। এ অনুসন্ধানকালে দুদক গত বছরের ২০ ডিসেম্বর আতাউর রহমানের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) চিঠি দেয়। ওই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন আতাউর রহমান।
পিকে হালদারের মাসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা পাচার করার অভিযোগ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর এবং সাবেক সচিব ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের চেয়ারম্যান এনআই খানসহ ২৫ জনের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে হাইকোর্ট।