জলবায়ু
জলবায়ু অভিযোজনের জন্য সরকার প্রতি বছর ৩.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে: পরিবেশমন্ত্রী
সরকার জলবায়ু অভিযোজন কর্মকাণ্ডের জন্য প্রতি বছর ৩.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অভিযোজন কার্যক্রমের জন্য বছরে ৯ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন, তাই অতিরিক্ত অর্থ আমাদের সংগ্রহ করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে সরকার, এনজিও ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের মধ্যে সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন সাবের হোসেন চৌধুরী।
রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে যুক্তরাজ্য সরকারের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ এবং উন্নয়ন অফিসের (এফসিডিও) প্রকৃতিভিত্তিক অভিযোজন প্রতি সমৃদ্ধ ও দক্ষ জীবনধারা এবং জীবিকা বাংলাদেশ (নব্পল্লব) প্রকল্প উদ্বোধন করার সময় এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন: বন্যপ্রাণী পাচার-শিকার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মন্ত্রী সাবের চৌধুরী জানান, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন এবং পাখি ও মাছের প্রজননক্ষেত্র হাকালুকি হাওরের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা রক্ষায় কাজ করা হবে। আয় বৃদ্ধির কৌশল এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি এই এলাকাগুলোতে চ্যালেঞ্জ কমাতে আশেপাশের সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতা করা হবে।
পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া, সম্পদ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উন্নীতকরণ এবং সহনশীল ফসল এবং জলবায়ু-প্রতিরোধীর মতো সমাধানগুলো চালু করার ক্ষেত্রে জড়িত করা হবে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশে সহযোগিতা বাড়াবে এডিবি: পরিবেশমন্ত্রী
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) ড. ফাহমিদা খানম, কেয়ার এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক রমেশ সিং, প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরী, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত এবং নবপল্লবের চিফ অব পার্টি সেলিনা শেলী খান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে দাতা সংস্থা প্রতিনিধি, অতিথি ও বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষায় কর্মরত কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: নদীর দখল ও দূষণমুক্ত করতে একযোগে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
জলবায়ু সহনশীল ফসল উদ্ভাবনে গবেষণায় গুরুত্বারোপ বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের অধ্যাপকদের
জলবায়ু পরিবৃর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় জলবায়ু সহনশীল ফসল উৎপাদনে অধিকতর গবেষণা এবং প্রচলিত ফসলের বিকল্প শস্য চাষের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন বক্তারা।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সালফোর্ড এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্বব্যিালয়ের (বাকৃবি) মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের যৌথ উদ্যোগে কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাববিষয়ক একটি সেমিনারে তারা এসব সুপারিশ করেন।
শনিবার (৯ মার্চ) বাকৃবির কৃষি অনুষদের সম্মেলনকক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় ‘খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও জনসাধারণের জীবিকার উপর জলবায়ুর প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাকৃতিক ক্ষয়ক্ষতি কমানো ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রভাবের প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠার উপায় অন্বেষণে গুরুত্বারোপ করেন দুই দেশের অধ্যাপকেরা।
সেমিনারে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সালফোর্ডের অধ্যাপক বিঙ্গুনাথ ইনগিরিগে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন কেবল একটি নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা।
তিনি আরও বলেন, যদি একটি দেশও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী হয় এর প্রভাবে বিশ্বের প্রতিটি দেশকেই ভুগতে হবে।
আরও পড়ুন: বাকৃবিতে এনএসটির অর্থায়নে বিটরুট গবেষণায় দ্বিগুণ ফলন
এসময় তিনি জলবায়ুর পরিবর্তনে কৃষিতে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিধসের প্রভাব আলোচনা করেন।
কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জীবিকার প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি উৎপাদন যেমন কমেছে, দারিদ্র্যের হারও বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর পরিবর্তন ঘটেছে।
এ কারণে উচ্চ ফলনশীল কিছু কিছু ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, যা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর কৃষকদের জীবিকা ও অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
দেশের কৃষিতে জলবায়ুর প্রভাব কমানো ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায় সম্পর্কে এ অধ্যাপক বলেন, প্রচলিত সেচ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের পাশাপাশি ফসল রোপণ এবং কাটার সময়কাল জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। জলবায়ু সহনশীল ফসল উদ্ভাবনে অধিক গবেষণা করতে হবে এবং প্রচলিত ফসলের বিকল্প ফসল চাষ করতে হবে।
সেমিনারের এক পর্যায়ে পর্যায়ে উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন করা হয়।
এ পর্বে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষিতে নদীর ভূমিকা, উচ্চ ফলনশীল ও রপ্তানিযোগ্য কৃষি পণ্য উৎপাদনে গুরুত্বারোপ, চাষাবাদে অল্প পানি ব্যবহারে উচ্চ ফলন ও ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ কমানোর উপায়, স্বল্প সময়ে ফলন পাওয়া যায় এমন ফসল উৎপাদনে জোর দেওয়া, কৃষি উৎপাদনে জ্বালানির প্রভাব কমিয়ে সৌরশক্তির ব্যবহার, কৃষকদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনে কৃষকদের শহরমুখী হওয়ার কারণ এবং কৃষি উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও এনজিওর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এছাড়া সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন- কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রাব্বানী, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আবেদীন, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: বাকৃবিতে তিন দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় অনুষ্ঠিত
দেশে কম খরচে ও স্বল্প সময়ে গবাদিপশুর নির্ভুল রোগ নির্ণয় পদ্ধতি উদ্ভাবনের দাবি বাকৃবি অধ্যাপকের
জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে গ্রামীণ নারী, দরিদ্র ও বয়স্কদের ওপর অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাব পড়ছে: এফএও
নারী কৃষক, দরিদ্র মানুষ এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন এবং তাদের চাহিদার জন্য লক্ষ্যযুক্ত ব্যবস্থা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)।
মঙ্গলবার (৬ মার্চ) প্রকাশিত সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তঃসম্পর্ক জোরদারে এফএও মহাপরিচালকের গুরুত্বারোপ
‘আনজাস্ট ক্লাইমেট’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা গেছে- চরম আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার অসম ক্ষমতার কারণে কিছু সামাজিক গোষ্ঠী জলবায়ু সম্পর্কিত আয়ের বৈষম্যের কারণে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত হয়।
আটজন বিশেষজ্ঞ এবং বিভিন্ন পরামর্শকের একটি দল দুই বছর ধরে পরিচালিত এই গবেষণায় ২৪টি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের এক লাখ ৯ হাজার গ্রামীণ পরিবারের আর্থ-সামাজিক তথ্য সংগ্রহ করে। যা ৯৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে।
গবেষণাটি অনুসারে, গড় তাপমাত্রা যদি মাত্র এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তাহলে পুরুষের তুলনায় গ্রামীণ নারীরা তাদের মোট আয়ের ৩৪ শতাংশ বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
দরিদ্র পরিবারের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা তাদের জলবায়ু-সংবেদনশীল কৃষির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তোলে এবং বন্যার সঙ্গে তারা গড়ে অ-দরিদ্র পরিবারের তুলনায় তাদের মোটের ৪ দশমিক শতাংশ হারাবে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে বন্যা কবলিত কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ বিতরণ করল এফএও
লিঙ্গ, সম্পদ ও বয়স অনুসারে শ্রেণিবদ্ধ করা এই গবেষণার লক্ষ্য হলো- ক্ষতিগ্রস্থ গোষ্ঠীর বিভিন্ন চাহিদা মোকাবিলার জন্য উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া বিকাশে দেশগুলোকে গাইড করা।
এফএও'র জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ও প্রতিবেদনের প্রধান লেখক নিকোলাস সিটকো সিনহুয়াকে বলেন, ‘আমাদের আশা হচ্ছে, আমরা মানুষের দুর্বলতার পার্থক্যগুলো আরও বেশি করে বিবেচনা করা শুরু করব, কারণ দুর্বলতা সবার জন্য এক নয় এবং তাদের বিভিন্ন ধরনের সমর্থন প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে এফএও'র নতুন প্রতিনিধি হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পরিচয়পত্র পেশ করলেন ড. শি
পরিবেশ ও জলবায়ু মোকাবিলার ভিত্তিতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে: পরিবেশমন্ত্রী
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও জোরদার হবে।
তিনি বলেন, ‘এগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলবিষয়ক কর্মসূচিতে আমাদের সহযোগিতা করতে চায়।’
রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতারের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক কোনো আলাপ হয়নি। টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিশ্বজুড়ে যেসব বিষয় নিয়ে তাদের উদ্বেগ আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’
সুনির্দিষ্টভাবে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। পাঁচ বছর ধরে এই সরকার থাকবে। কাজেই আগামী দিনে তাদের যেসব কর্মসূচি আছে, যেসব জায়গায় তারা আমাদের সহযোগিতা করতে চান, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী, জলবায়ু আমরা কীভাবে দেখছি, এ সম্পর্কে তারা একটা ধারণা চেয়েছেন।’
আরও পড়ুন: অস্তিত্ব রক্ষায় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মন্ত্রী বলেন, তারা যখন তাদের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবেন, আমাদের চাহিদাগুলো তারা মাথায় রাখবেন।
সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য মার্কিন প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ সফর কি না- ‘প্রশ্নে তিনি বলেন, অবশ্যই। আমি মনে করি আমাদের সম্পর্ক উন্নত আছেই। আগামীতে সেটা আরও কীভাবে জোরালো করা যায়, সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তার আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন, সে জন্যই তারা এখানে এসেছে।’
সাবের হোসেন বলেন, ‘যখন দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্কের কথা বলব, সেখানে অনেকগুলো দিক থাকবে। কিছু কিছু দিক থাকে, যেখানে তারা একটু বেশি জোর দেবে। আমি মনে করি, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, এটা তাদের একটা অগ্রাধিকারমূলক বিষয়। তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে। এটার ওপর ভর করে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আগামী দিনে আরও জোরালো হবে।’
জলবায়ু সংকট নিয়ে তারা কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন তো প্রতিদিনই চ্যালেঞ্জ। আমরা বাংলাদেশেও এটার প্রভাব দেখছি। এটা যে একটা জরুরি বিষয়, তা তারা উপলব্ধি করেন। বাংলাদেশ যেভাবে বিগত বছরগুলোতে এগিয়ে গেছে, সেটা ধরে রাখতে গেলে এই উন্নয়নের একটা স্থায়িত্ব থাকা প্রয়োজন। এটা টেকসই হতে হবে।
‘টেকসই হতে হলে পরিবেশবান্ধব হতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। যেটা আমরা দিচ্ছি। তারা মনে করেন, বাংলাদেশ শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার কিংবা ক্ষতিগ্রস্তই নয়, জলবায়ু পরবর্তনের অনেক সমাধানও বাংলাদেশে আছে। তারা একটা রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে দেখে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন অ্যাডাপটেশনের (অভিযোজন) কথা বলি, তারা আমাদের কাছ থেকেও অনেক কিছু জানতে পারবে। অনেক কিছু তাদের দেশেও কাজে লাগাতে হবে।’
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় জাতীয় বন জরিপের উদ্বোধন করলেন পরিবেশমন্ত্রী
অর্থায়ন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা এখন কথা বলেছি তাদের নতুন কর্মসূচি ও বাংলাদেশ নিয়ে তাদের পরিকল্পনা নিয়ে। তাতে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের আলোকে সেই চাহিদা পূরণে কীভাবে তারা সহযোগিতা করবে, সেটা নিয়ে আমরা কথা বলেছি।’
তবে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কোনো কথা হয়নি বলে জানান মন্ত্রী। এছাড়া সোলার ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে দুপক্ষের আলাপ হয়েছে। সেখানে মার্কিন প্রযুক্তি নিয়ে কথা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করি, সেটা চাহিদার চেয়ে বেশি। কাজেই আমরা যখন নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা বলব, সেখানে আমরা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করব, সেটা যাতে আধুনিক প্রযুক্তি হয়। আমরা লিপ ফ্রগ (উল্লম্ফন) করতে চাই। আমরা ধাপে ধাপে না, একবার যদি কয়েকটা ধাপ উপরে চলে যেতে পারি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, সেই কাজটা আমরা করছি।’
পোশাক খাতের পরিবেশ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। তবে ১৫ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড গঠন নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা যেটা বলেছি, ‘আমরা নতুন একটা প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করাচ্ছি। সেখানে আমাদের সব উন্নয়ন সহযোগীরা সহায়তা করতে পারবেন। আমি আশাবাদী, আমেরিকাও থাকবে।’
পরিবশেমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ থেকে আমরা টাকার বিষয়ে কোনো চাচ্ছি না, আমাদের পরিকল্পনা একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করব, যেখানে সবাই থাকবেন। আমাদের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে দেখা যাবে, একাধিক উন্নয়ন সহযোগী একই বিষয়ে সহযোগতিা করছেন। আমরা সেটা চাই না।’
আরও পড়ুন: পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট তৈরিতে প্রণোদনা দিতে বিভিন্ন প্যাকেজ ঘোষণা করবে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
দ্রুত লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড পেতে পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত
প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষ দূত এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, কপ-২৮ এ কার্যকর লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড দ্রুত পেতে পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ। এজন্য বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের সক্ষমতা বাড়ানো হবে।
তিনি বলেন, উক্ত তহবিলে এ পর্যন্ত ১৯টি দেশ মোট ৭৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ফান্ড ভবিষ্যতে বৃদ্ধি পাবে। নতুন তহবিল প্রাথমিকভাবে চার বছরের জন্য বিশ্বব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত হবে।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকালে পরিবেশ অধিদপ্তরের অডিটোরিয়ামে ‘২৮তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন: প্রত্যাশা, প্রাপ্তি এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা’- শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবের হোসেন চৌধুরী এসব কথা বলেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরিটাস ড. আইনুন নিশাত।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব(প্রশাসন) ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ। প্যানেল আলোচনা পরিচালনা করেন পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের ডিএমডি ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ।
আরও পড়ুন: কপ-২৮ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক: সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও কম কার্বনের পথে বাংলাদেশ
বিষয়ভিত্তিক তিনটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ধরিত্রী কুমার সরকার, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জিয়াউল হক ও পরিচালক মির্জা শওকত আলী।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল এবার কপ-২৮ এ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের চেষ্টায় এবার ‘ইউএই ফ্রেমওয়ার্ক ফর গ্লোবাল ক্লাইমেট রেজিলেন্স’ গ্রহণ করা হয়েছে। যার লক্ষ্য হবে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত ক্রমবর্ধমান প্রতিকূল প্রভাব, ঝুঁকি ও দুর্বলতা হ্রাস করা; সেইসঙ্গে অভিযোজনমূলক কার্যক্রম ও সহায়তা বৃদ্ধি করা।
তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ক প্রোগ্রাম অন জাস্ট ট্রাঞ্জিশন পাথওয়ে’র কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ‘লো জিএইচজি এমিশনস এন্ড ক্লাইমেট রেজিলেন্ট ডেভেলপমেন্ট’ পথের সঙ্গে জলবায়ু অর্থায়ন প্রবাহ সামঞ্জস্যপূর্ণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখার লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টেকসইভাবে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাসের প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দিয়ে জিএসটি-তে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি সদস্য দলগুলোকে তাদের পরবর্তী এনডিসিকে আরও উচ্চাকাঙ্খী করে সব সেক্টরকে কভার করে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার সঙ্গে সংগতি রেখে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করার জন্য উৎসাহিত করেছে এবং ন্যায়সঙ্গত পদ্ধতিতে জীবাশ্ম জ্বালানি পরিহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) সঞ্জয় কুমার ভৌমিক বলেন, এবারের কপ-২৮ সম্মেলনে জলবায়ু বিষয়ক কর্মকাণ্ডে নেতৃস্থানীয় কণ্ঠস্বর হিসেবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিগ্রস্ত মানুষের পক্ষে বিশ্বব্যাপী অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করা হয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশকে ‘ইনোভেশন ইন ডিভলভিং ফাইন্যান্স’ বিভাগে ‘জিসিএ লোকাল এডাপ্টেশন চ্যাম্পিয়ন্স অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়েছে। যা স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা ও উদ্ভাবনের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে।
আরও পড়ুন: কপ-২৮ সম্মেলন : শুক্রবার শুরু হচ্ছে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক
কপ-২৮ সম্মেলনে স্থানীয় জলবায়ু নেতৃত্বে গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বাংলাদেশ
জলবায়ু আলোচনার চূড়ান্ত: দুবাই জলবায়ু প্যাকেজ নিয়ে শেষ দিনে সমঝোতার চেষ্টা
বহুল আলোচিত ও প্রথম দিনে ইতিহাস সৃষ্টি করা দুবাই জলবায়ু সম্মেলন শেষ হচ্ছে মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর)। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আজ শেষ দিনের আলোচনায় দুবাই জলবায়ু প্যাকেজ নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল জানায়, আজ কেবলমাত্র দুটি ইস্যু সামনে আছে। একটি হচ্ছে, জলবায়ু প্রশমনে বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন কমানোর উচ্চাভিলাসী লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে- জলবায়ু সংকট উত্তরণে দেশগুলোর সদিচ্ছা প্রকাশ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে জলবায়ু অগ্রাধিকার সমর্থনে ৪০০ মিলিয়ন ডলার দেবে এডিবি
দুবাই জলবায়ু সামিট শেষ দিনে চূড়ান্ত চুক্তিতে বিশ্ববাসীকে কী উপহার দেবে সেটা দেখার অপেক্ষায় অধীর বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো। আজ দুবাইয়ের স্থানীয় সময় রাত পর্যন্ত চলবে আলোচনা।
জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ বা কমিয়ে আনার প্রশ্নে দুবাই জলবায়ু আলোচনায় এক অচল অবস্থা বিরাজ করছে। এই অচল অবস্থা নিরসনে আপ্রাণ চেষ্টা চালিযে যাচ্ছন সম্মেলনের সভাপতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের পরিবেশমন্ত্রী সুলতান আল জাবের। তিনি যেকোনো মূল্যে দেশগুলোকে নিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছে দুবাইকে জলবায়ু সম্মেলনের ইতিহাসে স্মরণীয় করে রাখতে চাইছেন। এ লক্ষে সম্মেলনের (কপ) সভাপতি বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের সঙ্গে দফায় দফায় ‘মজলিশ’ করে সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
জলবায়ু সম্মেলনের শেষ দিনে এসে সব পক্ষকে সন্তুষ্ট করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া কঠিন কাজ। তাই শেষ দিনের কাজকে সহজ করার জন্য দুই দিন আগে থেকেই ‘গ্রাউন্ড ওয়ার্ক’ শুরু করেছেন কপ সভাপতি সুলতান আল জাবের।
রবিবার থেকে তিনি গ্রুপে গ্রুপে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেন। আরবি ভাষায় যাকে ‘মজলিশ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। তিনি বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি প্রতিনিধিদের সমঝোতার মানসিকতা নিয়ে চূড়ান্ত সামিটে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
কী আছে দুবাই জলবায়ু প্যাকেজে
আরও পড়ুন: জলবায়ু সংকটের বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানসহ অভিযোজন তহবিল দ্বিগুন করার দাবি বাংলাদেশের
ক্ষয়ক্ষতি তহবিল কার্যকর, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রযুক্তির বিকাশ ঘটানো, অভিযোজন কার্যক্রম দ্রততর করার জন্য গ্লোবাল গোল অ্যাডাপটেশন গ্রহণ, মিথেন গ্যাস নির্গমন কমিয়ে বৈশ্বিক ক্ষুধা নিবারণে একটি রোডম্যাপ প্রণয়ণ, কার্বন নির্গমন কমাতে ওয়ার্ক প্রোগ্রাম অন মিটিগেশন গ্রহণ, বৈশ্বিক মূল্যায়নের মাধ্যমে পাঁচশালা পরিকল্পনা গ্রহণ, ১০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন এবং ২০২৫ সাল থেকে নতুন অর্থায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ। মূলত জলবায়ু সংকট নিরসনে সব বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেই সাজানো হয়েছে দুবাই জলবায়ু প্যাকেজ।
এরমধ্যে বৈশ্বেক মূল্যায়নের পাঁচশালা পরিকল্পনাটি এবারের সম্মেলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্যারিস চুক্তিতে পাঁচ বছর পর পর বৈশ্বিক মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। সেই মূল্যায়নের মাধ্যমে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
এই মূল্যায়নেই বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে কী পরিমাণ কার্বন নির্গমন কমাতে হবে। এজন্য কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী জীবাশ্ম জালানি কতটা ফেজ আউট বা ফেজ ডাউন করতে হবে।
ক্ষয়ক্ষতির জন্য কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে, অভিযোজন বা প্রশমনের জন্য কী পরিমাণ অর্থ লাগবে সব বিষয়ই এই পরিকল্পনায় তুলে ধরা হয়েছে। এই মূল্যায়ন ও মিটিগেশন ওয়ার্ক প্রোগ্রাম অনুমোদন হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো। তাদের তেলের ব্যবসা কমে যাবে। এজন্য তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর চার শতাধিক লবিস্ট যেমন দুবাইতে সক্রিয় রয়েছে, তেমনি তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংস্থা ওপেক জীবাশ্ম জালানি বন্ধের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার জন্য সদস্য দেশগুলোকে চিঠি দিয়েছে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু অগ্রাধিকার সহায়তা হিসেবে এডিবির কাছ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার পাচ্ছে বাংলাদেশ
জলবায়ু সংকটের বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানসহ অভিযোজন তহবিল দ্বিগুন করার দাবি বাংলাদেশের
বিশ্ব জলবায়ু সংকটের বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানের পাশাপাশি অভিযোজন তহবিল দ্বিগুন করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ বলছে, ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে জীবাশ্ম জালানির ব্যাপারে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এসময় দুর্বল অভিযোজন লক্ষ্যমাত্রার খসড়ার ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করে বৈশ্বিক জলবায়ু অভিযোজনের অর্থ দ্বিগুণ করারও দাবি জানিয়েছে। বাংলাদেশ চাইছে বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন হ্রাসে প্রধান নির্গমনকারী দেশগুলোর রাজনৈতকি প্রতিশ্রুতি। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে উন্নত দেশগুলোকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।
আরও পড়ুন: ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় জলবায়ু সংকট থেকে মনোযোগ সরানো উচিত নয়: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের পার্টি হেড প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ুবিষয়ক দূত সাবের হোসেন চৌধুরী ইউএনবিকে বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হলে ফসিল ফুয়েলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। অনেক দেশ অনেক কথা বলছে। কিন্তু বিজ্ঞান কী বলছে আমদের সেটাতে গুরুত্ব দিতে হবে। ২৮তম জলবায়ু সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অবশ্যই বিজ্ঞানের ভিত্তিতে গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আলোচনার খসড়াগুলোতে সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আজ সোমবার ও আগামীকাল (মঙ্গলবার) দুই দিন হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই দিনে আশা করছি, আমরা এই সম্মেলন থেকে একটি গ্রহণযোগ্য ফল বের করে আনতে পারব।’
অভিযোজনের লক্ষ্যের দুর্বল খসড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “‘বৈশ্বিক অভিযোজন লক্ষ্যে’র যে খসড়া তৈরি করা হয়েছে তা আমরা পর্যালোচনা করছি। আশা করছি, সমমনা দেশগুলোকে নিয়ে আমরা শেষ দুই দিনে এই খসড়াকে শক্তিশালী করতে পারব।”
বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন ইউএনবিকে বলেন, আমরা নতুন ও অতিরিক্ত সরকারি অর্থায়নে গুরুত্ব দেব। বাংলাদেশ দৃঢভাবে ন্যাপ বাস্তবায়নের জন্য দ্বিগুণ অভিযোজন তহবিল চাই। আমরা জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা অর্জনের জন্য সময়সীমাবদ্ধ বাস্তবায়নযোগ্য লক্ষ্যগুলোর ওপর জোর দিয়ে অভিযোজন সংক্রান্ত গ্লোবাল গোলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য উন্মুখ।
ক্ষয়ক্ষতির অর্থ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রস্তুতির বিষয়ে পরিবেশ সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, এই তহবিল থেকে অর্থ নিতে বাংলাদেশ পুরোপুরি প্রস্তত। এ ব্যাপারে আমরা কাজ করছি।
আগামীকাল মঙ্গলবার শেষ হচ্ছে বহুল আলোচিত দুবাই জলবায়ু সম্মেলন। উদ্বোধনের দিনেই ক্ষয়ক্ষতি তহবিলকে কার্যকর করার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যদিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করা দুবাই জলবায়ু সম্মেলন শেষ দিনে চূড়ান্ত চুক্তিতে বিশ্ববাসীকে কী উপহার দেবে সেটা দেখার অপেক্ষায় অধীর বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো।
দুবাই জলবায়ু আলোচনা সোমবার চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। সেই সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রও ছোট হয়ে এসেছে। এখন কেবলমাত্র দুটি ইস্যু সামনে আছে। একটি হচ্ছে, জলবায়ু প্রশমনে বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন কমানোর উচ্চাভিলাসী লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে- জলবায়ু সংকট উত্তরণে দেশগুলোর সদিচ্ছা প্রকাশ।
এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘ জলবায়ু সংস্থার প্রধান সাইমন স্টিয়েল সোমবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুবাইয়ে একটি অর্থবহ চুক্তিতে উপনীত হতে হলে আমাদের বাধা সৃষ্টির মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। বৈশ্বিক মূল্যায়ন (গ্লোবাল স্টকটেক) অনুমোদনে সব দেশের সহযোগিতা প্রয়োজন। এখানে হারজিতের কিছু নেই। আমি জিতব, আপনি হারবেন- এই মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। এখানে একজনের পরাজয় মানে সবার ব্যর্থতা। যা বিশ্বের ৮০০ কোটি মানুষকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে। তাই আলোচনার টেবিলে প্রত্যেককে মঙ্গলের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সব দেশের লক্ষ্য হতে হবে বিশ্বের সব মানুষের মঙ্গলের জন্য চূড়ান্ত চুক্তিতে উপনীত হওয়া।’
দুবাইয়ে গত ৩০ নভেম্বর থেকে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ২০২৩ (কপ-২৮) শুরু হয়েছে। তা চলবে আগামীকাল ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত। ১৩ দিনব্যাপী এই সম্মেলনে ১৯৮টি দেশের সরকার প্রধানসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: আসন্ন জলবায়ু সংকট এড়াতে প্রধান অর্থনীতিগুলোকে অবশ্যই ন্যায্য অংশীদারিত্ব করতে হবে: জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী
বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জলবায়ু সংকট মোকাবিলার কৌশল নিয়ে ইইউ, দক্ষিণ এশিয়ার নীতি নির্ধারক-বিশেষজ্ঞদের আলোচনা
জলবায়ু অগ্রাধিকার সহায়তা হিসেবে এডিবির কাছ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার পাচ্ছে বাংলাদেশ
জলবায়ু সহনশীল অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন অর্জনে প্যারিস চুক্তির জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা ২০২৩-২০৫০ এবং জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) ২০২১ হালনাগাদ বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলারের নীতিভিত্তিক ঋণ স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং নিজ নিজ পক্ষে ঋণ চুক্তিতে সই করেন।
আরও পড়ুন: নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ ১ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পেয়েছে: বাংলাদেশ ব্যাংক
এই সহায়তা ৭০০ মিলিয়ন ডলারের জলবায়ু সহনশীল অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রথম উপকর্মসূচি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সবেচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি; যার বার্ষিক গড় ক্ষতি প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার।
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং বলেন, 'এই অঞ্চলের জলবায়ু ব্যাংক হিসেবে এডিবি বাংলাদেশের জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা জোরদার, স্বল্প কার্বন অর্থনীতিতে রূপান্তর, গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস এবং সরকারের জলবায়ু কার্যক্রমে লিঙ্গ সমতা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তির মূলধারায় বাংলাদেশের প্রগতিশীল পদক্ষেপে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ম্যানিলাভিত্তিক আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক বলেছে, এই কর্মসূচি জলবায়ু অর্থায়নকে একত্রিত করার জন্য সক্রিয় প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতিগত পরিবেশ তৈরি করবে। এটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এজেন্ডায় জলবায়ু কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেবে এবং কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবহন ও অবকাঠামো, নগর উন্নয়ন ও জ্বালানিসহ জলবায়ুবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খাতে সংস্কারে সরকারকে সহায়তা করবে।
এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সরকারের জলবায়ু অগ্রাধিকারের সার্বিক বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়।
সম্প্রতি কপ-২৮-এ উপস্থাপিত বাংলাদেশ জলবায়ু ও উন্নয়ন অংশীদারিত্ব বাস্তবায়নে এই কর্মসূচি সরকারকে নিবিড়ভাবে সহায়তা করবে।
প্রোগ্রামটি সরকারি পরিকল্পনা ও সম্পদ বরাদ্দের ক্ষেত্রে জলবায়ু অগ্রাধিকারকে মূলধারায় আনতে এবং সবুজ বন্ড ও টেকসই অর্থায়ন নীতির মাধ্যমে জলবায়ু অর্থায়নকে একত্রিত করতে সহায়তা করে।
সেক্টরাল পর্যায়ে, প্রোগ্রামটি জলবায়ু-স্মার্ট ও জলবায়ু সহনশীল কৃষি অনুশীলনগুলো বিশেষত নারী কৃষকদের পক্ষে প্রচার করে। একই সঙ্গে সৌর সেচ পাম্পের অভিযোজন, জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো নকশা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের অভিযোজন ও গণপরিবহন বহরে বৈদ্যুতিক বাস প্রবর্তনের জন্য নিয়ন্ত্রক কাঠামো প্রবর্তন করে।
এডিবি শহুরে বন্যা কমাতে জলবায়ু সহনশীল নগর কর্মপরিকল্পনা ও পৌরসভাগুলোর জন্য উন্নত নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রচারে সহায়তা করে।
২০২১ সালের অক্টোবরে এডিবি ঘোষণা করে, তারা ২০১৯ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল সদস্য দেশগুলোতে জলবায়ু অর্থায়ন ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি বাড়িয়েছে। এটি নতুন, জলবায়ুকেন্দ্রিক প্রযুক্তিগুলোতে প্রবেশাধিকার প্রসারিত করবে এবং জলবায়ু অর্থায়নের বেসরকারি মূলধনকে একত্রিত করবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে জলবায়ু অগ্রাধিকার সমর্থনে ৪০০ মিলিয়ন ডলার দেবে এডিবি
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ১.০৮ বিলিয়ন ডলার যোগ হতে পারে
বাংলাদেশে জলবায়ু অগ্রাধিকার সমর্থনে ৪০০ মিলিয়ন ডলার দেবে এডিবি
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) জলবায়ুকেন্দ্রিক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন অর্জনের জন্য শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) প্যারিসে তার জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা, ২০২৩-২০৫০ এবং জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) ২০২১ হালনাগাদ বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলার নীতিভিত্তিক ঋণ (পিবিএল) অনুমোদন করেছে।
ম্যানিলাভিত্তিক আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংকটি বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, যেখানে বার্ষিক গড় ক্ষতি প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার।
এই ঋণ হলো ৭০০ মিলিয়ন ডলার জলবায়ু স্থিতিস্থাপক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রথম সাবপ্রোগ্রাম।
এডিবি জানায়, এই ঋণ বাংলাদেশকে তার জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা শক্তিশালী করতে, কম কার্বন অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে, এর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করতে এবং সরকারের জলবায়ু কর্মে মূলধারার লিঙ্গ সমতা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তিতে সহায়তা করবে।
এডিবি’র প্রিন্সিপাল পাবলিক ম্যানেজমেন্ট ইকোনমিস্ট আমিনুর রহমান বলেন, ‘জলবায়ুর প্রভাব বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। জলবায়ু কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে অর্থায়ন প্রয়োজন। বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এডিবি এই অঞ্চলের জলবায়ু ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশকে তার প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে প্রস্তুত।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে খাদ্য-পুষ্টি নিরাপত্তার উন্নয়নে এফএও ও ইআরডির ৪ প্রকল্প চুক্তি সই
তিনি আরও বলেন, ‘এই কর্মসূচি জলবায়ু অর্থায়নকে একীভূত করার জন্য একটি সক্ষম প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতিগত পরিবেশ তৈরি করবে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এজেন্ডায় জলবায়ু কর্মকাণ্ডকে অগ্রাধিকার দেবে এবং কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবহন ও অবকাঠামো, নগর উন্নয়ন এবং জ্বালানিসহ জলবায়ু-সমালোচনামূলক খাতে সংস্কার বাস্তবায়নে সরকারকে সহায়তা করবে।’
এছাড়া সম্প্রতি কপ২৮-এ উদ্বোধন হওয়া ‘বাংলাদেশ জলবায়ু ও উন্নয়ন অংশীদারিত্ব’ কার্যকর করতে এই কর্মসূচি সরকারকে নিবিড়ভাবে সহায়তা করবে।
এটি সরকারি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সম্পদ বরাদ্দকরণের ক্ষেত্রে জলবায়ু অগ্রাধিকারকে মূলধারায় আনা এবং সবুজ বন্ড ও টেকসই আর্থিক নীতির মাধ্যমে জলবায়ু অর্থায়নের গতিশীলতা সমর্থন করে।
সেক্টরাল পর্যায়ে প্রোগ্রামটি স্মার্ট জলবায়ু এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপক কৃষি চর্চাকে উৎসাহিত করে। বিশেষ করে যেগুলো নারী কৃষকদের পক্ষে সৌর সেচ পাম্পগুলোর অভিযোজন, জলবায়ু স্থিতিস্থাপক অবকাঠামো নকশা ও পরিকল্পনা প্রবর্তন এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের অভিযোজনের জন্য নিয়ন্ত্রক কাঠামো ও গণপরিবহন বহরে বৈদ্যুতিক বাসের প্রবর্তন করে।
এছাড়াও, বন্যা কমাতে নগর পৌরসভার জন্য জলবায়ু সহনশীল শহরের কর্ম পরিকল্পনা এবং উন্নত নিষ্কাশন ব্যবস্থার প্রচারে সহায়তা করে এডিবি।
২০২১ সালের অক্টোবরে এডিবি ঘোষণা করেছে, এটি ২০১৯ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত তার উন্নয়নশীল সদস্য দেশগুলোতে জলবায়ু অর্থায়ন ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে দেওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়িয়েছে।
এটি নতুন জলবায়ুভিত্তিক প্রযুক্তির অভিগম্যতাকে প্রসারিত করবে এবং জলবায়ু অর্থায়নের দিকে ব্যক্তিগত পুঁজিকে সঞ্চয় করবে।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সমর্থন অব্যাহত রেখেছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মানবিক সহায়তায় শরণার্থীদের স্বস্তির ব্যবস্থা করতে বিদেশি সরকারগুলোর সমর্থন বাড়াতে হবে: আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপ
কপ-২৮ সম্মেলনে স্থানীয় জলবায়ু নেতৃত্বে গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বাংলাদেশ
চলমান জলবায়ু সম্মেলনে ইনোভেশন ইন ডেভেলপিং ফাইন্যান্স ক্যাটাগরিতে গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন (জিসিএ) লোকাল লেড অ্যাডাপটেশন (এলএলএ) চ্যাম্পিয়নশিপ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়িত স্থানীয় সরকার ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (লজিক) প্রকল্প এ সম্মান অর্জন করে। এই লজিক প্রকল্পটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইডেন, ডেনমার্ক, জাতিসংঘের মূলধন উন্নয়ন তহবিল (ইউএনসিডিএফ) এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) রেসিলিয়েন্স হাবে আয়োজিত এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোজন ও সহনশীলতা বিনির্মাণে বাংলাদেশের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এই পুরস্কার প্রদান করা হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো মোকাবিলায় স্থানীয়ভাবে পরিচালিত সৃজনশীল, প্রশংসনীয় এবং সম্প্রসারণযোগ্য প্রকল্পগুলোকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী এবং জনগণকে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করার উদ্দেশ্যে ২০২২ সালে জিসিএ এলএলএ চ্যাম্পিয়ন্স অ্যাওয়ার্ডস চালু করা হয়।
আরও পড়ুন: কপ-২৮: ৫ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে অন্য দেশের সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ
অর্থায়ন বৃদ্ধিতে উদ্ভাবনী পদ্ধতির জন্য এই পুরষ্কার দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ এই পুরস্কার গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের ৯টি প্রধান জলবায়ু ও ঝুঁকিপূর্ণ জেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ এই প্রকল্পের আওতায় উপকৃত হয়েছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আরো ভালোভাবে প্রস্তুত হওয়ার জন্য ৪ লাখেরও বেশি পরিবারের ক্ষমতায়ন করেছে।
এই মানুষগুলো এখন জলবায়ু-সহনশীল জীবিকায় বিনিয়োগ করতে পারেন, বৈচিত্র্যময় আয়ের উৎস বেছে নিতে পারে্ন এবং অভিযোজনের চর্চাগুলো বাড়ানোর জন্য বাজার এবং বিনিয়োগে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেন।
আরও পড়ুন: কপ-২৮: বিশ্বব্যাপী জলবায়ু প্রতিক্রিয়া ত্বরান্বিত করার আহ্বান
ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেন, ‘স্থানীয় সরকার ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (লজিক) প্রকল্পের স্বীকৃতি স্থানীয়ভাবে পরিচালিত জলবায়ু অভিযোজন ও সহনশীলতার প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকারের ফসল। এই পুরস্কার স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং এর উন্নয়ন অংশীদারদের নিষ্ঠার স্বীকৃতি।এটি জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উদ্ভাবনের শক্তিকে একটি নজির হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন এবং তাদের জন্য টেকসই ও জলবায়ু সহনশীল ভবিষ্যতে অবদান রাখতে রূপান্তরমূলক উদ্যোগকে সহায়তা যোগাতে ইউএনডিপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
উল্লেখ্য, জিসিএ অ্যাওয়ার্ডস কেবল বিজয়ীদের অর্জনকেই স্বীকৃতি প্রদান করে না বরং স্থানীয় পর্যায়ের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার সম্মিলিত প্রচেষ্টাকেও বিশ্বের কাছে তুলে ধরে। টেকসই আগামীর জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা এবং উদ্ভাবন এর যোগান দেওয়ার মাধ্যমে জলবায়ু সহনশীলতা গড়ে তুলতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে এই ধরনের পুরষ্কারগুলোর অনন্য ভূমিকা রয়েছে।
আরও পড়ুন: কপ২৮-এ বিশুদ্ধ জ্বালানির বিষয়ে অগ্রগতি আনতে হবে: যুক্তরাজ্য