দুর্ভোগ
জামালগঞ্জে পরিত্যক্ত সেতু দিয়ে ঝুঁকিতে চলাচল, দুর্ভোগে ৩৫ গ্রামের মানুষ
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের দৌলতা নদীর উপর ৯৫ মিটার তেরানগর সেতুটি ৩৫ গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা। নির্মাণের সময়ে ত্রুটি থাকায় অল্প সময়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, ঘোষণা করা হয়েছে পরিত্যক্ত। তবুও ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে অটোরিকশা সিএনজি, মোটরসাইকেল, ট্রলিসহ বিভিন্ন ধরণের যানবাহন। ফলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
স্থানীয়রা বলছেন, পুরোনো এই সেতুর নির্মাণকালেই ত্রুটি ছিল। এ কারণে ২২ বছরের মাথায় যানবাহনের ভার সইতে পারছে না সেতুটি। এদিকে নতুন সেতু নির্মাণে এলাকাবাসীকে বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ নেই। একারণে চলাচলকারী মানুষজনের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
জামালগঞ্জ উপজেলার চলাচলের ভরসার সেতুটি ৩৫ গ্রামের মানুষকে দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হেমন্তে এটি ছাড়া ফেনারবাক ইউনিয়নের এসব গ্রামের সাথে যোগাযোগের আর কোন উপায় নেই। জানা যায়, তৎকালীন সংসদ সদস্য প্রয়াত নজির হোসেন উপজেলার গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় জামালগঞ্জে চারটি সেতু নির্মাণ করেন। সাচনা বেহেলী রোডে চৌধুরী বাড়ির পাশে, সাচনা পলক গ্রামের পিয়াইন নদীতে, তেরানগর দৌলতা নদীর উপর তেরানগর সেতু, দৌলতপুর বীনাজুরার কানাইখালী নদীর উপর তেরানগর সেতু।
আরও পড়ুন: সুরমার ভাঙনের কবলে ছাতক-আন্ধারীগাঁও-সুনামগঞ্জ সড়ক
এই সেতুর নির্মাণ কাজ ২০০২ সালে শুরু হয়ে ২০০৪ সালে শেষ হয়। ওই সময়ে এই পথে সাইকেল, মোটরসাইকেল ছাড়া কোনো যানবাহন চলতো না। হেঁটে সেতু দিয়ে চলাচল করতেন ৩৫ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। গেল প্রায় ২০ বছর হয় জামালগঞ্জ হয়ে তেরানগর সেতু পার হয়ে ফেনারবাক ইউনিয়নের লক্ষীপুর বাজার, নবীনচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত পাকা সড়ক হয়েছে। প্রতিদিন এই সড়কে শতশত মোটরসাইকেল অটোরিকশা, সিএনজি, মিনিট্রাক, ট্রলি চলাচল করে। একটি উচ্চ বিদ্যালয়, দুইটি বাজার, একটি মাদরাসা এবং প্রায় অর্ধশত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সড়ক যোগাযোগের পথ যুক্ত হয়েছে এই সেতুকে ঘিরে।
এছাড়াও মাতারগাঁও, রাজাপুর রসুলপুর লালপুর দৌলতপুর, উজান দৌলতপুর, রাজাবাজ, খোজারগাঁও, বীনাজুরা তেঘরিয়া গঙ্গাধরপুর, ছয়হারা, কামারগাঁও, ইনাতনগর, বিজয় নগর, কাশীপুর, উদয়পুর লক্ষীপুর ভেদারপুর ফেনারবাক, চাটনিপাড়া, নাজিমনগর হটামারা, উদয়পুর ছাড়াও দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া, নূরনগর, আলীনগর, ইসলামপুর, সেচনী, রফীনগর ইউনিয়নের খাগাউরা, সেচনী, কিত্তাগাঁও, স্বজনপুরসহ ১২টি গ্রামের মানুষকে এই ব্রিজ পার হয়েই যাতায়াত করতে হয়।
গেল কয়েকবছর হয় ভারী যানবাহন সেতুর উপর উঠলে কাঁপতে থাকে এটি। প্রতি বছরেই উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ থেকে সংস্কার করে অর্থের অপচয় হয়। কিছু দিনের মধ্যেই আবার খানাখন্দসহ সেতুর রেলিং ও অ্যাপ্রোচ ভেঙে যায়। ২০১৪ সালে সেতুটি জামালগঞ্জ এলজিইডি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। পরিত্যক্ত লেখা সাইনবোর্ড টাঙানোর পরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতুর উপর দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে শত শত যানবাহন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর বিভিন্ন অংশে ছোট ছোট গর্ত এবং খানাখন্দে ভরা। মাঝে মাঝে কিছু গর্ত ইট বালু দিয়ে জোড়াতালি দেওয়া হলেও, বাকী গর্তগুলোর উপর দিয়ে প্রতিদিন চলছে শতশত যানবাহন।
আরও পড়ুন: ভাঙন-ঝুঁকিতে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট
অটোরিকশা চালক নাসির বললেন, প্রতিদিন সেতুর গর্তে পড়ে কোনো না কোনো গাড়ি নষ্ট হচ্ছে। গাড়ি উঠলেই সেতু কাঁপতে থাকে, মনে হয় হেলে পড়ে যাবে। সেতুর রেলিং গাড়ির ধাক্কায় ভেঙে আরও ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সংকীর্ণ এই সেতু দিয়ে দুইটি গাড়ি একসঙ্গে চলাচল করতে পারে না।
স্থানীয় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অঞ্জন পুরকায়স্থ বলেন, ২০১৪ সালে সেতুটি পরিত্যক্ত ঘোষণা হয়, কিন্তু নতুন করে সেতু তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই সেতু দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ জন, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২ শতাধিক মানুষ। এছাড়াও ছাগল ভেড়া গবাদিপশু মারা গেছে অর্ধশত। প্রতিনিয়ত ভোগান্তি আর হয়রানির শিকার হচ্ছেন ৩৫ গ্রামের মানুষ। বিগত দিনে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা আশ্বাস দিলেও নতুন সেতুর বাস্তবায়ন হয়নি।
নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুজিত চন্দ্র সরকার বললেন, প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে, কেউ খবর রাখছে না। সেতু ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা হলে দায় কে বহন করবে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতু উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। দ্রুত দৌলতা নদীর উপর সেতু নির্মাণের দাবি আমাদের সকলের।
ভীমখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান তালুকদার জানান, এই সেতু দিয়ে ৪০ গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন। সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে। ২০১৪ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণার পরও প্রতিদিন শতশত যানবাহন সেতু দিয়ে চলাচল করছে। এতে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
আরও পড়ুন: উদ্বোধনের আগেই সমুদ্রে বিলীন কুয়াকাটার ‘মেরিন ড্রাইভ’
জামালগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. ছানোয়ার হোসেন জানান, দৌলতা নদীর উপর তেরানগর সেতুটি ২০০২ সালে শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে চলাচলের জন্য করা হয়েছিল। তখন এই উপজেলার কোথাও গাড়ির যোগাযোগ ছিল না। এখন এই সেতুর উপর দিয়ে প্রতিদিন শত শত গাড়ি চলাচল করছে। সেতুটিও এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। ইতোপূর্বে উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয় থেকে প্রকল্পের আওতায় দৌলতা নদীর সেতুসহ এই সংস্থার মাধ্যমে আগামী অর্থবছরে আরও কয়েকটি সেতুর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশাকরি, আগামী অর্থ বছরে অর্থ বরাদ্দ হবে এবং এই এলাকার জনসাধারণের অতিগুরুত্বপূর্ণ এই সেতু নতুন করে করা যাবে।
১৭৯ দিন আগে
নওগাঁ-বগুড়া-ঢাকা রুটে বাস চলাচল বন্ধ, যাত্রীদের দুর্ভোগ
বগুড়ায় শ্রমিক নেতাকে ছুরিকাঘাতের জেরে নওগাঁ থেকে বগুড়া-ঢাকা রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বুধবার (১৯ মার্চ) সকাল থেকে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোনো ঘোষণা ছাড়াই সকাল থেকে এ রুটে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ থাকায় এ পথে চলাচলকারী হাজারো যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছেন।
জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার বিকালে বগুড়ার স্টেশন রোডে মিতালী পাম্প এলাকায় নারিকেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সিএনজি চালকদের বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় তাদের থামাতে গেলে বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের দুই নেতা ছুরিকাঘাতে আহত হন। এর প্রতিবাদে নওগাঁ থেকে কোনো বাস বগুড়ার ওপর দিয়ে চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানায়, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নওগাঁ শহরের পার-নওগাঁ এলাকায় ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, বগুড়ার ওপর দিয়ে নওগাঁ থেকে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃজেলা ও ঢাকাসহ দূরপাল্লার কোনো বাস প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
ফলে বন্ধ রয়েছে বাস চলাচল। ঈদের আগে হঠাৎ করে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় এ পথের যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বাসস্ট্যান্ডে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের আনাগোনা ছিল বেশি। অনেক যাত্রী কাউন্টারে বাস না পেয়ে ইজিবাইকে করেই বগুড়ার যাচ্ছেন। তবে ঢাকাগামী কিছু কিছু বাসকে বিকল্প পথ হিসেবে বগুড়ার কাহালুর ভিতর দিয়ে ঢাকাসহ দূরপাল্লার বাসকে গন্তব্য ছেঁড়ে যেতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ বন্ধের প্রতিবাদে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবরোধ
বগুড়াগামী মোসলেম উদ্দিন নামে এক যাত্রী বলেন, ‘জরুরি কাজে বগুড়া যাওয়ার জন্য বাস টার্মিনালে এসে দেখি বাস চলাচল বন্ধ। বাধ্য হয়ে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে দ্বিগুণ ভাড়ায় বগুড়া যাওয়ার রওনা দিতে হচ্ছে। যে কারণে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এটি সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা ছাড়া কিছুই নয়।’
নওগাঁ বাস মালিক গ্রুপের সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বগুড়ায় শ্রমিক নেতাকে ছুরিকাঘাতের জেরে বগুড়ার উপর দিয়ে অপাতত নওগাঁ থেকে বগুড়া ও ঢাকাগামী সব বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে কিছু কিছু বাস বগুড়ার কাহালুর ভিতর দিয়ে বিকল্প পথে চলাচল করছে। আপাতত দুই জেলার সঙ্গে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।’
২৬১ দিন আগে
সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কমলেও দুর্ভোগ বাড়ছে হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের
দেশের উজানে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সুরমা নদীসহ জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে নদীর পানি কমলেও ভোগান্তি বেড়েছে হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের। নদীর পানি ধীরে কমায় ভোগান্তি দীর্ঘ হচ্ছে তাদের।
সরজমিনে দেখা যায়, সুনামগঞ্জের উঁচু এলাকায় পানি অনেকটাই কমেছে, তবে নিচু এলাকায় পানি এখনো স্থির হয়ে রয়েছে। অসংখ্য বাড়িঘরে এখনও পানি রয়েছে। জনবসতি ও সড়কে হাঁটু পানি। এছাড়া ভোগান্তিতে পড়েছেন সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ, ছাতক, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে সুরমা নদীতে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ৩
সদর উপজেলার খাইমতর গ্রামের জহুর উদ্দিন বলেন, ‘বাড়ি থেকে কোথাও বের হওয়া যাচ্ছে না। সকালে কলেজে গেছিলাম পানিতে ভিজে। রাস্তাঘাট ভাঙা, কাদা মাটি ভরা। গাড়ি চলে না। অনেক জায়গা হেঁটে হেঁটে যাওয়া লাগছে।’
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হাসননগর এলাকার মামুন আলী বলেন, ‘বন্যার পানি কমায় আমরা খুব অসুবিধায় আছি। ঘরের ভেতর থাকার মতো আর অবস্থা নেই। ঘরে এখনও হাটু পানি, হাওরের ঢেউয়ে ঘরের টিন সব ভেঙে ফেলছে। খাবার দাবারও ঘরে নেই।’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের তথ্য মতে, রবিবার (১৪ জুলাই) সকাল ৯টায় সুনামগঞ্জ পৌরশহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় (১৩ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই সকাল ৯টা পর্যন্ত) সুনামগঞ্জ পৌরশহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি কমেছে ১৭ সেন্টিমিটার। এই ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২৩ মিলিমিটার।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ‘সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করেছে। দেশের উজানে বৃষ্টি কম হচ্ছে। যার কারণে পাহাড়ি ঢলের তোড় কমে আসছে। সুনামগঞ্জেও বৃষ্টির পরিমাণ কমেছে। এখন বন্যা পরিস্থিত উন্নতির দিকে।’
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে তৃতীয় দফায় বন্যা, লাখো মানুষ পানিবন্দি
সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের সাড়ে ৩ লাখ ডলার সহায়তা
৫০৮ দিন আগে
গোয়ালন্দে জেঁকে বসছে শীত, দুর্ভোগে পদ্মা পাড়ের মানুষ
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে কয়েক দিন ধরে কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়া প্রবাহিত হওয়ায় জেঁকে বসেছে শীত। শুক্রবার সারাদিন দেখা মেলেনি সূর্যের। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না। কেবলমাত্র প্রয়োজনের তাগিতে বের হচ্ছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। এছাড়া নদী ভাঙন এলাকার শ্রমজীবী মানুষ শীতে বাড়তি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় গোয়ালন্দে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
গোয়ালন্দ উপজেলায় আবহাওয়া অধিপ্তরের কোনো কার্যালয় না থাকলেও প্রয়োজনের তাগিদে উপজেলা প্রশাসন আবহাওয়ার খোঁজ খবর নিয়ে থাকেন।
উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় গোয়ালন্দ উপজেলায় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চলছে। যা এ বছরের সর্বনিম্ন বলে মনে করছেন তিনি। তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। ১৮ জানুয়ারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এরপর তাপমাত্রা স্বাভাবিক হতে পারে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তীব্র শীতে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ
দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় দেখা যায়, ঘাট এলাকায় যাত্রীদের উপস্থিতি অনেক কম। নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষজন পেটের তাগিদে বাইরে বের হয়েছেন। লঞ্চ ও ফেরি ঘাটে মানুষের উপস্থিতি অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক কম। কিছু মানুষ এলেও বেশিরভাগ চায়ের দোকানে গরম কাপে চুমুক দিতে দেখা যায়। জরুরি কাজ না থাকলে সহজে কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। উপজেলার উজানচর, দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম অঞ্চলের নদী ভাঙন এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষজন অনেক কষ্টে দিন পার করছে। শীতে তাদের বাড়তি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আব্দুর রাজ্জাক (৫৫) একজন ভ্যানচালক। প্রতিদিন গোয়ালন্দ বাজার, দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করে থাকেন। কিছু মাছের ট্রিপ ধরতে এসেছেন দৌলতদিয়া ঘাটে।
দৌলতদিয়ার ৪ নম্বর ফেরি ঘাটে আলাপকালে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এমন শীত পড়েছে, মনে হচ্ছে জমে যাচ্ছি। এমন শীত আগে দেখিনি। ঘরে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে রয়েছে। রোজগার না করলে খাওন জুটবে না। ৩০০ টাকা ভাড়ায় দৌলতদিয়ায় আইছি। কনকনে ঠান্ডা বাতাসে দাঁড়ায় থাকতে পারছি না।
ঘাটে কর্তব্যরত বিআইডব্লিউটিসির সহকারী ব্যবস্থাপক আব্দুর রহিম পন্টুনের একটি কক্ষে গিয়ে বসে আছেন। এসময় তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড শীত পড়ছে। এরপর ঘাট এলাকায় শীতের সঙ্গে বাড়তি বাতাস থাকায় ডিউটি করা অনেক কষ্টকর। মাঝে মধ্যে বাতাস উঠলে দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। উপায় না পেয়ে একটু উষ্ণতা নিতে চায়ের দোকানে ঠাঁই নিতে হয়।
আরও পড়ুন: শীতে কাহিল কুড়িগ্রামের মানুষ, হাসপাতালে বাড়ছে শিশুরোগী
দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, এর আগে এত ঠান্ডা পড়েনি। আজকে সারাদিন ঘরেই বসে আছি। নদী ভাঙন এলাকার মানুষজন ঠান্ডায় কাতর হয়ে পড়ছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে কিছু কম্বল দিয়েছিল তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এত মানুষকে এখন কী দেব?
এদিকে প্রচণ্ড ঠান্ডা আর কুয়াশায় শীতকালীন অনেক ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। ধানের বীজতলা, দানা পেঁয়াজ, সরিষা।
দৌলতদিয়া তোরাপ শেখের পাড়ার কৃষক হুমায়ন আহম্মেদ বলেন, প্রচণ্ড ঠান্ডা আর কুয়াশায় ধানের বীজতলা হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। দুই দিন ধরে বীজতলার ওপর পলিথিন দিয়ে ঘিরে দিচ্ছেন। সরিষা খেতে পোকার আক্রমণ বাড়ার আশঙ্কাও করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান বলেন, প্রচণ্ড ঠান্ডা আর কুয়াশায় মুড়িকাটা ও দানা পেঁয়াজের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ অঞ্চলে পেঁয়াজ তোলা শেষের দিকে। সরিষার অনেক ভালো ফলন হয়েছে। সরিষা খেতে পাতায় এক ধরনের পোকার আক্রমণ হতে পারে। ধানের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ জন্য কৃষকদের সতর্কতার সঙ্গে কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে কাজ করতে বলেছি।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে জেকে বসেছে শীত, বিক্রি বেড়েছে হকার্স মার্কেটে
৬৯২ দিন আগে
সুনামগঞ্জে ২ দিনের বাস ধর্মঘটে দুর্ভোগে যাত্রীরা
সুনামগঞ্জে চার দফা দাবিতে শুক্রবার সকাল থেকে আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলা পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতির ডাকে দুইদিনের বাস ধর্মঘট চলছে। সকাল ৬ টা থেকে এই ধর্মঘট পালিত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. মোজাম্মেল হক ধর্মঘটের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, বাস ধর্মঘটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সিলেটসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আসা-যাওয়া যাত্রীরা।
সুনামগঞ্জ জেলা পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতির দাবি অনুযায়ী, তাদের চার দফা দাবির মধ্যে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের লামাকাজি সেতুতে বাসের টোল প্রত্যাহার, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও নিবন্ধনহীন সিএনজি বন্ধ, বিআরটিসি বাস বন্ধ এবং সুনামগঞ্জ বাস টার্মিনাল সংস্কার করে আধুনিকায়নের দাবিতে এই ধর্মধটের ডাক দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বিএনপির সমাবেশের দিন বাস ধর্মঘট
নৌ চলাচল বন্ধের পর এবার ভোলা-বরিশাল রুটে বাস ধর্মঘট
বরগুনায় বাসমালিকদের ২ দিনের বাস ধর্মঘট
১১১২ দিন আগে
ঘিওরে ইছামতি নদীর প্রবল ভাঙন, দুর্ভোগে নদী তীরবর্তী মানুষ
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ইছামতি নদীর ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে লণ্ড ভণ্ড হয়ে গেছে প্রায় দুইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী পুরাতন গরুর হাটের অধিকাংশ জায়গা। হাট সংলগ্ন প্রায় ৫০টি বসতবাড়িও চলে গেছে ইছামতির পেটে। গত তিনদিনের বৃষ্টি আর উজানের ঢলের পানিতে নতুন করে ভাঙনের শিকার হয়েছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঘিওর-গোলাপনগর রাস্তা, কুস্তা বেইলি ব্রিজ, দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সেতু-কালভার্টসহ নদী তীরবর্তী ১৬টি গ্রাম।
বৃহস্পতিবার থেকে ইছামতি নদীর ওপর নির্মিত কুস্তা এলাকায় বেইলী ব্রিজের দুই পাশের পাদদেশে ভাঙন শুরু হয়। গার্ডারের কাছ থেকে মাটি সরে সংযোগ সড়ক থেকে ব্রিজের মাঝে প্রায় দুই ফুট ফাঁকা হয়ে পড়ে। যে কোন সময় নদীগর্ভে ধসে পড়তে পারে ব্রিজটি। ঝুঁকি এড়াতে ব্রিজের ওপর দিয়ে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে আশপাশের অন্তত ২০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পড়েছে চরম ভোগান্তিতে।
আরও পড়ুন:কপোতাক্ষের ভাঙন: হুমকির মুখে পাইকগাছার বিস্তীর্ণ অঞ্চল
সরেজমিনে দেখা যায়, অনেকের বাড়ির অর্ধেক অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আসবাবপত্র, অন্যান্য সামগ্রী অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ভাঙনে কুস্তা কফিল উদ্দিন দরজি উচ্চবিদ্যালয় ও কুস্তা ব্রিজ, কুস্তা কবরস্থান, ঘিওর-গোলাপ নগরের রাস্তা, বেপারীপাড়া কবরস্থান, রসুলপুর গ্রামের বসতবাড়ি, বেপারীপাড়া কবরস্থানটি হুমকির মধ্যে রয়েছে। যেকোনো সময় নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে এসব স্থাপনা ও বসতবাড়ি।
এছাড়া পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনে শ্রীধরনগর, মাইলাগী, ঘিওর পূর্বপাড়া, ঘিওর নদীর উত্তর পাড়ের বাজার, উপজেলা খাদ্য গুদাম, ব্রিজসহ ১২-১৩টি প্রতিষ্ঠান হুমকির মধ্যে রয়েছে। খাদ্য গুদামের সামনের বেইলি ব্রিজটিও যেকোনো মুহূর্তে চলে যাবে।
ইছামতি নদী পাড়ের বাসিন্দারা বলেন, হঠাৎই এই রকম ভাঙন তারা এর আগে দেখেননি। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০-১২টি গ্রামের বেশ কিছু এলাকা তছনছ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় ভয় ও আতংকে তাদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে।
ঘিওর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম বলেন, ভয়াবহ ভাঙনে আমার ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক স্থাপনা ইতোমধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা সাহায্যের পরিবর্তে ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চান। এখন ভাঙন রোধে ভরা নদীতে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এসব বালুর বস্তায় কোন কাজই হচ্ছে না। স্থায়ী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ না করলে এই ভাঙন রোধ সম্ভব হবে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন।
ঘিওর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) হামিদুর রহমান বলেন, ঘিওর কুস্তা বেইলি ব্রিজের গার্ডারের কাছ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। আপাতত যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ব্রিজটি রক্ষায় এরই মধ্যে দুই পাড়ে ব্রিজের গাইড ওয়ালসহ জিও ব্যাগ রক্ষার চেষ্টা চলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, ইছামতি নদীটি খালের মত সরু। এর উৎস মুখে খনন করায় পানি প্রবাহ বেড়েছে। এতে হঠাৎই ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে সাড়ে ৮ হাজার জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ শুরু হয়েছে। আর বেইলী ব্রীজ রক্ষায় গাইড ওয়ালসহ জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। পানির প্রবাহ কমে গেলে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:শহররক্ষা বাঁধে ভাঙন: পাইকগাছা পৌরসদরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
কুড়িগ্রামে ধরলার ভাঙন মুখে তিন শতাধিক পরিবার
১১৭৫ দিন আগে
কুড়িগ্রামে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি
কুড়িগ্রাম জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও কমেনি মানুষের দুর্ভোগ। তবে চর ও নদ-নদীর অববাহিকার নিচু এলাকাগুলোতে এখনও পানি জমে আছে। পানিবন্দি রয়েছে হাজার হাজার মানুষ। অনেকের ঘর-বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও সেগুলো বসবাসের উপযোগী হয়নি। দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। গ্রামীণ ও চরের রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় যাতায়াতে ভোগান্তি বেড়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার নিচে নেমে যাওয়ায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতের চিহ্ন দৃশ্যমান হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, বন্যায় জেলায় প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সাত হাজার কৃষক। পুরো পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব নিরূপণ করা হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, চলতি বন্যায় প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত ৫৩৮ মেট্রিক টন চাল, ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ত্রাণ কার্যক্রম চলমান আছে।
তবে সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগ বানভাসিদের দুর্ভোগ কমাতে পারেনি। অনেক চরাঞ্চলে এখন পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছেনি। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, শৌচাগার ও গো খাদ্যের তীব্র সংকট রয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া ৩২৫টি স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি।
আরও পড়ুন: আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস, তবে রবিবার ১১টি জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
১২৫৭ দিন আগে
দোয়ারাবাজারে কমেছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে সুরমাসহ মেঘালয় থেকে নেমে আসা বিভিন্ন নদী-নালা, হাওর, খাল-বিলের পানি কচ্ছপ গতিতে হ্রাস পেলেও নিম্নাঞ্চলে রয়েছে অপরিবর্তিত। উপজেলার সুরমা, বগুলা, লক্ষ্মীপুর, বাংলাবাজার ও নরসিংপুর ইউনিয়ন থেকে ধীর গতিতে পানি কমলেও দুর্ভোগ বাড়ছে।
পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণ বন্ধ হলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ফসলি জমি ও বীজতলা চাষাবাদের উপযোগী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করছেন কৃষকরা। তবে দোহালিয়া, পান্ডারগাঁও, মান্নারগাঁও ও দোয়ারা সদর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় পানির স্থিতিশীলতায় আমনসহ আগামী মৌসুমি ফসল উৎপাদন অনিশ্চিতের আশংকা করছেন কৃষকরা। ওইসব ইউনিয়নের অনেক বাড়িঘর এখনও পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে শূণ্য বাড়িঘর ফেলে অনেক পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে ঠাঁই নিয়েছেন। কখন যে আপন ঠিকানায় ফিরে আসবে তা অনিশ্চিত। এছাড়া অন্যান্য এলাকায় এমনিতেই পরিবার পরিজন ও গবাদি পশু নিয়ে বিশেষত চরম বিপর্যয়ে পড়েছেন ওই এলাকাবাসী। খাদ্য সংকটে প্লাবিত এলাকার হালের বলদসহ গবাদি পশু-পাখিরা আহাজারি করছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যার পরিস্থিতির উন্নতি, গ্রামাঞ্চলে অপরিবর্তিত
এদিকে বন্যা উপদ্রুত এলাকায় বানভাসি অসহায় পরিবারে সরকারি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত থাকলেও চাহিদার তুলনায় একেবারে অপ্রতুল। অচিরেই দোয়ারাবাজারকে বন্যা দূর্গত এলাকা ঘোষণা করে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী এবং বন্যা পরবর্তী কৃষি ও আবাসন পূনর্বাসন ও বিনাসুদে কৃষিঋণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভূক্তভোগীরা। এদিকে, জেলা ও উপজেলা সদরের সঙ্গে বিভিন্ন ইউনিয়নের সংযোগ সড়কগুলো অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের তোড়ে অনেক ব্রিজ-কালভার্ট ভেসে নেয়াসহ অধিকাংশ স্থানে ভাঙন ও ফাঁটল সৃষ্টি হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া ইরি-বোরো, আউশ, আমনের বীজতলা ও সবজি খেত বিনষ্ট হওয়াতে চরম বিপাকে পড়েছেন উপজেলাবাসী। জমি থেকে পানি না নামায় আমনসহ অগ্রহায়ণী মৌসুমী ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার হতাশায় ভুগছেন কৃষকরা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাংশু কুমার সিংহ বলেন, বর্তমানে সুরমাসহ সকল নদনদী ও হাওর খাল-বিলের পানি ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। উপদ্রুত এলাকায় বানভাসি পরিবারের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
অপরদিকে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।
আরও পড়ুন: ত্রাণ নিয়ে হাহাকার
১২৯০ দিন আগে
পানিতে ভাসছে সিলেট, বন্যার্ত মানুষের চরম দুর্ভোগ
সিলেট নগরীতে বন্যার্ত মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বাসা-বাড়ি বিশেষ করে বিভিন্ন কলোনীতে পানি উঠায় লোকজন ছুটছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। নগরীতে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে খোলা হয়েছে দুটি আশ্রয় কেন্দ্র।
সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে সিলেট নগরীতে বন্যার পানি প্রবেশ করতে থাকে। বন্যার পানিতে এরই মধ্যে উপশহর, তালতলা, কানিশাইল এবং দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি লোকজন ঘর-বাড়ির জিনিসপত্র সামলাতে গিয়ে পড়েছেন বিপাকে।মঙ্গলবার সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বেড়েছে নদ-নদীর পানি। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।উজানে বৃষ্টি ও ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা পানি উন্নয়ন বোর্ডের। ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার লক্ষাধিক মানুষ।মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সিলেট ও কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার প্রায় দেড় সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে। বেড়েছে কুশিয়ারা নদীর পানিও।নদীর পানি উপচে সোমবার থেকেই তলিয়ে যেতে শুরু করেছে নগরের বিভিন্ন এলাকা। মঙ্গলবার প্লাবিত এলাকার পানি আরও বেড়েছে। নগরের উপশহর, তেররতন, মেন্দিবাগ, ছড়ার পাড়, সোবহানিঘাট, মাছিমপুর, তালতলা, কালিঘাট, কাজিরবাজার, শেখঘাট, লালাদীঘির পাড়, জামতলাসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।সকালে নগরের উপশহর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অভিজাত এই এলাকার প্রধান সড়কে হাঁটুর ওপরে পানি। পানি ঢুকে পড়েছে আশপাশের দোকানপাট ও এলাকার বাসাবাড়িতেও। পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল।উপশহরের বি ব্লকের ব্যবসায়ী আজমল আলী বলেন, ‘দোকানের ভেতরে হাঁটুর ওপরে পানি। কাল রাতেও পানি ছিল না। সকালে এসে দেখি দোকানে পানি ঢুকে সব মালপত্র ভিজে গেছে।’
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, হাজারো মানুষ পানিবন্দি
১২৯৭ দিন আগে
ফরিদপুরে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে তিন শতাধিক পরিবার
পানি নিষ্কাশনের জায়গা দখলের অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতায় ভুগছে ফরিদপুর শহরতলী সিএন্ডবি ঘাট সংলগ্ন আইজউদ্দিন মাতুব্বরের ডাগি গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার। জলাবদ্ধতার ফলে জমে থাকায় পানিতে পরিবেশ নোংরা এবং নানা রোগের উপদ্রব বাড়ছে।
সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পার্শ্ববর্তী পদ্মা নদী থেকে বেশ কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী ট্রলার বা জাহাজ থেকে তুলে সিএন্ডবি ঘাট পদ্মা পাড়ের (আইজমুদ্দিন মাতুব্বরের) এলাকায় জড়ো করে। আর এই বালু থেকে বের হওয়া পানি এলাকাতে ছড়িয়ে পড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। এছাড়াও বর্ষা ও বৃষ্টির পানিতেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এই অবস্থা গত চার বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকেই বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচলের কাজ চারিয়ে নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: সংযোগ সড়ক না থাকায় কাজে আসছে না ৩১ লাখ টাকার সেতু
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পানি নিষ্কাশনের যে পথ ছিল সেগুলো নানাভাবে দখল হয়েছে, এছাড়াও ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী ও অর্থবৃত্তের মালিক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়টি অনেকবার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে দ্রুত এই জলবন্ধতা নিরসন করা হবে।
পানিবন্দি এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম, আসমা বেগমসহ অনেকে জানান, এই গ্রামে পাশে যে মাঠ সেখানে ধানসহ বিভিন্ন ফসল হতো, কিন্তু গত চার বছর হলো সারাবছর পানি জমে থাকে। সেখানে কোনে খেতখামার করা যায় না, এছাড়াও প্রত্যেকটি বাড়ি চার পাশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়া পরিবেশটি বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে গেছে। এখানকার ছেলে-মেয়েরা সব সময় বিভিন্ন রোগে ভুগছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য পাঞ্জু শেখ বলেন, বালুর ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পথ বহু আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের পথগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয় না। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে চলা জলাবদ্ধতা সমস্যারও সমাধান হয় না।
আরও পড়ুন: বাঁশের সাঁকোই ৩০ হাজার মানুষের ভরসা
তিনি জানান, বর্ষার সময়ে পানি গোটা এলাকায় নিমজ্জিত হলে সেই পানি বের হওয়ার তেমন কোনো পথ থাকে না ফলে জলাবদ্ধতার সমস্যাও প্রকট হয়।
স্থানীয় মাদরাসার শিক্ষক মাওলনা নাজমুল হাসান বলেন, ‘এই জলাবদ্ধতায় আমরা বাস করতে পারছি না, শিশুসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিপদে রয়েছি। গৃহপালিত পশু পালন করা যাচ্ছে না।’
ডিক্রীরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু ফকির বলেন, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা উন্নয়ন সভায় তুলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরশন করা হবে।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে এবার মিলল সাড়ে ছয়শ’ বছর আগের তৈজসপত্র!
ফরিদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকতা মাসুদুল আলম বলেন, ‘জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। নানাবিধ সমস্যার কারণে বর্ষা বা বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে যেতে পারছে না। তাছাড়া আমাদের পানি নিষ্কাশনের পথগুলো অত্যন্ত নাজুক। আমরা দ্রুতই এই জলাবদ্ধাতার সমাধানের চেষ্টা করবো।’
১৩৯৮ দিন আগে