মৈত্রী সেতু
অর্ধযুগ পার, সুনামগঞ্জের মৈত্রী সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে কবে
সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীর ওপর শাহ আরেফিন (র.)-অদ্বৈত মহাপ্রভু মৈত্রী সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে ৪ ডিসেম্বর। তবে অর্ধযুগ পেরিয়ে ৭ বছরে পড়লেও সেতুটি যাদুকাটার দুপাড়ের বাসিন্দাদের মৈত্রীর বন্ধনে বাঁধতে সক্ষম হয়নি। নদীর মাঝে সেতুর কয়েকটি গার্ডার খাড়া হলেও সেতুটি পূর্ণতা পেতে এখনও অনেক কাজ বাকি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্টদের গড়িমসির কারণে সেতুটি সংযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হওয়ায় সড়কপথের সুফল পাচ্ছে না সুনামগঞ্জের চারটি উপজেলার লাখ লাখ মানুষ। পাশাপাশি স্থানীয়দের দুর্ভোগ তো রয়েছেই। এ ছাড়াও জেলার দীর্ঘতম এই নির্মাণাধীন সেতুকে কেন্দ্র করে তিনটি শুল্ক বন্দর ও কয়েকটি পর্যটন স্পটে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের সুযোগ মিলছে না, যার নেতিবাচক প্রভাবের বলি হচ্ছে স্থানীয় কর্মক্ষম বেকার যুবসমাজ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যাদুকাটা নদীর ওপর শাহ আরেফিন (র.)-অদ্বৈত মহাপ্রভু মৈত্রী সেতুর নির্মাণকাজ ৩০ মাস, অর্থাৎ আড়াই বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করার নির্দেশনা ছিল। গত ৭ বছরে সেখানে এই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে চারবার, তবুও কাজ শেষ হয়নি।
তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের গড়কাটি ও বিন্নাকুলী গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত যাদুকাটা নদীর ওপর নির্মাণাধীন ৭৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটন স্পট, তিনটি শুল্ক বন্দরসহ চার উপজেলার যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের লক্ষ্যে এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু অর্ধযুগ পরেও সাধারণ মানুষ এখনও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হয়। এ নিয়ে স্থানীয় সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন: অবৈধ দখল-দূষণের কবলে ফেনীর ২৪৪ নদী ও খাল
ভারতের মেঘালয় পাহাড় আর তাহিরপুরের অপরূপ সৌন্দর্যে্যর যাদুকাটা নদীকে ঘিরে রয়েছে পর্যটন শিল্প। সেই শিল্পকে চাঙ্গা করা ছাড়াও সীমান্ত এলাকাও তিনটি শুল্ক বন্দর, সীমান্ত সড়ক হয়ে সুনামগঞ্জ-নেত্রকোণা-ঢাকার সড়ক যোগাযোগ এবং জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলার লাখ লাখ মানুষ যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রধান মাধ্যমে পরিণত হবে এই সেতু। কিন্তু সেতুটির পূর্ব পাড়ের অংশে কাজ শেষ না করায় প্রান্তিক এই উপজেলার মানুষের স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তে এসেও তা আলোর মুখ দেখছে না।
২০১৮ সালে ৪ ডিসেম্বর ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। তমা কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব। এরপর থেকে ৭৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুটির ৭৫টি গার্ডারের মধ্যে ৫৭টি এবং ১৫টি স্লাবের মধ্যে ১০টির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ১৮টি গার্ডার ও পাঁচটি স্লাবের কাজ সাত বছর পরেও এখনও বাকি রয়ে গেছে।
গত বৃহস্পতিবার বিন্নাকুলী গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আলমসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। সে সময় তারা বলেন, সেতুটি সম্পন্ন হলে আমাদের আর দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। সিএনজি বা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়েও অনেকের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ হতো। কিন্তু তাস বছরেও সেতুটির নির্মাণকাজ যখন শেষ হয়নি, তখন তা কবে শেষ হবে, তা নিয়ে আমরা আর কোনো আশা রাখি না।
গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানে যাদুকাটার ওপর সেতু না থাকায় যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়, সে কথাও বলেন তারা, নৌকা দিয়ে নদী পার হতে ৩০ মিনিট সময় লাগে আর বর্ষার সময় আরও বেশি সময় লাগে। নৌকা দিয়ে নদী পার হতে টাকাও খরচ হয়। নদী পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক সময় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।
বাদাঘাট বাজারের ব্যবসায়ী কবির ভূইয়া বলেন, ‘উপজেলার বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা ঢাকা থেকে মালামাল কিনে সরাসরি বাজারগুলোতে নিয়ে আসতে পারছেন না শুধু সেতু না হওয়ার কারণে। এখন মালামাল পরিবহনে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গত তিন বছর ধরে শেষ হবে বলে সময় পার করা হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না।’
বাদাঘাট ইউনিয়নের সমাজসেবক আবুল হোসেন বলেন, ‘সেতুটির নির্মাণ সম্পন্ন হলে স্থানীয় পর্যায়ে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে। পর্যটন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, সেইসঙ্গে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের উপায় হবে। অথচ সবকিছুই এখন আটকে রয়েছে।’
আরও পড়ুন: নিদ্রা সৈকত: অপার সম্ভাবনার এক নিসর্গ ভূমি
বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘সেতুর জন্য লাখ লাখ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। গুরুত্ব দিয়ে সেতুটির নির্মাণকাজ দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ সম্পন্ন করলে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। আর এই সেতু যোগাযোগ ব্যবস্থার মাইলফলক সৃষ্টি করবে।’
সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করতে কেন এত সময় লাগছে—জানতে চাইলে তমা কনস্ট্রাকশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাসির বলেন, ‘বারবার বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কাজ শেষ করা যায়নি।’ তবে ২০২৬ সালের মে মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
সেতুটির নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে বলে জানান সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনও।
২০৬ দিন আগে
সীমানা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাধা হওয়া উচিত নয়: প্রধানমন্ত্রী
রাজনৈতিক সীমানা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভৌত বাধা হয়ে উঠা উচিত নয় বলে মঙ্গলবার মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৭৩২ দিন আগে