হাট
বাগেরহাটে জমে উঠেছে পশুর হাট
বাগেরহাটে কোরবানির পশুর হাট জমে উঠেছে। হাটে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে পশু বেচা-কেনা। হাটে দেশি-বিদেশি জাতের বিভিন্ন সাইজের গরুর সরবারহের ঘাটতি নেই। তেমনি ক্রেতারও কমতি নেই। তবে হাটে দেশি জাতের গরুর চাহিদা বেশি।
ক্রেতারা বলছেন, গেল বছরের চেয়ে এ বছর গরুর দাম অনেক চড়া।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জেলায় এ বছর ৫০ হাজার গরু এবং ৭০ হাজার ছাগল ও বেড়া প্রস্তুত রয়েছে।
বাগেরহাটের ফকিরহাটের বেতাগা পশুর হাট শুক্রবার সকাল থেকে জমে উঠেছে। দেশি-বিদেশি জাতের বিভিন্ন সাইজের কয়েক হাজার গরু আনা হয়েছে হাটে। দুর-দুরান্ত থেকে ক্রেতা আসছে হাটে। গভীর রাত পর্যন্ত এই হাটে গরু কেনা-বেচা চলবে।
বৃহস্পতিবার বিকালে বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার ফয়লাহাট কামাল উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে বিশাল গরুর হাট। ট্রাক এবং পিকআপ থেকে গরু নামানো হচ্ছে হাটে। মাঠ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হওয়ায় আশে পাশে ফাঁকা জায়গায় খুটি গেড়ে গরু রাখা হয়েছে। ক্রেতারা এসে নানাভাবে গরু দেখার পর বিক্রেতাদের সাথে দরকষাকষি করছেন। চাহিদা মতো মূল্য না পাওয়ায় অনেকই গরু বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন।
ফয়লাহাটের এক প্রাশে গিয়ে দেখা গেলো, অস্টেলিয়ান হলেস্টিয়ান জাতের সাদা রঙের একটি গরু দেখতে ভিড় জমিয়েছে ক্রেতা এবং উৎসুক জনতা। ওই গরুটি হাটের সব চেয়ে বড় সাইজের বলে দাবি খামারীর। ওই গরুটির দাম হাকানো হয়েছে পাঁচ লাখ ২০ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন: রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটে ২২টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম
হলেস্টিয়ান জাতের ওই গরুর খামারি খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার আনন্দনগর গ্রামের নিয়ামুল ইসলাম জানান, গত তিন বছর ধরে সে ব্যবসার জন্য বাড়িতে গরুর খামার গড়ে তুলেছে। তার খামারে ছোট-বড় মিলে মোট আটটি গরু রয়েছে। খামারের সব চেয়ে বড় দু’টি গরু বিক্রির জন্য হাটে তুলেছে। এর মধ্যে সাদা রঙের উপর হালকা কালোছোপ দেয়া গরুটি তার খামারের সব চেয়ে বড়। আর কালো রঙে গরুটির তার চেয়ে একটু ছোট। বড় গরুটির ওজন হবে ১৪ মণ। বিক্রির জন্য পাঁচ লাখ ২০ হাজার টাকা দাম হাকিয়েছে। ক্রেতারা সর্বোচ্চ চার লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছেন। আর কালো রঙের গরুটির ওজন হবে ১২ মণ। দাম হাকিয়েছে চার লাখ ৫০ হাজার টাকা।
খামারি নিয়ামুল ইসলামের তথ্যমতে, তার খামারে হলেস্টিয়ান জাতের সাদা রঙের ওই গরুটি তিন বছর ২ মাস আগে জন্ম নিয়েছে। সে গরুটিকে লালন পালন করে বড় করে তুলেছে। প্রতিদিন ওই গরুটির খাবারের জন্য তার ব্যয় হচ্ছে এক হাজার টাকা। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ওই খামারী তার গরু দু’টি বিক্রি করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন।
দেলোয়ার হোসেন, কালাম শেখ, আরিফুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন খামারী ও গরু ব্যবসায়ী জানান, বছরজুড়ে তারা গরুর খাবার হিসেবে খড়, ভুট্টারগুড়া, ভুসি,সরিষার খৈল,তুলার খৈল, সয়াবিনের খৈল দিয়ে থাকে। গো খাদ্যোর মূলো বেড়ে যাওয়ায় গরুর মূল্যে বেড়ে গেছে। যে মূল্যে গরু বিক্রির টার্গেট নিয়েছে তার কমে বিক্রি করলে তাদের লোকসান গুনতে হবে।
ক্রেতা রামপাল উপজেলার সোলাকুড়া গ্রামের রাসেল গাজী জানান, দুপুর থেকে সে হাটে ঘুরে ঘুরে গরু দেখছে। হাটে গরুর আমদানি থাকলেও দাম অনেক। গত বছরের চেয়ে এ বছর গরুর দাম অনেক চড়া। বিগত বছর সে যে সাইজের গরু এক লাখ টাকায় ক্রয় করেছে এ বছর ওই সাইজের গরুর দাম এক লাখ ৩০ হাজার টাকার উপরে। দাম বেশি হওয়ায় রাসেল গাজীর মতো অনেক ক্রেতা বাজেট করে গরুর হাটে এসে হিমশিম খাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: কোরবানির পশু কেনাবেচায় ডিজিটাল হাট চালু
ফয়লাহাটের ইজারাদার গাজী আক্তারুজ্জামান জানান, হাটে ছয় থেকে সাত হাজার গরু উঠেছে। ছাগলও আছে কয়েক হাজার। বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোরসহ বিভিন্ন জেলার খামারি এবং ব্যবসায়ীরা গরু নিয়ে এসেছে হাটে। গভীর রাত পর্যন্ত চলবে হাট। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সুবিধার্থে হাটে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। সরকারি নিয়ম মেনে খাজনা নেয়া হচ্ছে।
বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান জানান, জেলায় এ বছর ঈদুল আজহা সামনে রেখে ৫০ হাজার গরু এবং ৭০ হাজার ছাগল ও বেড়া প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে জেলায় ৩৮ থেকে ৪০ হাজার গরু এবং ১৫ থেকে ২০ হাজার ছাগল ও বেড়ার চাহিদা রয়েছে। লাভবান হতে খামার এবং পারিবারিক পর্যায়ে মানুষ গরু লালন পালন করছে। হাটগুলোতে ভ্যাটেনারী মেডিকেল টিম কাজ করছে। হাটের পাশাপাশি অনলাইনেও গরু বিক্রি হচ্ছে।
গরুর দাম যাতে কম হয় এজন্য দানাদার খাবারের পরিবর্তে ঘাস খাওয়ানোর পরামর্শ দিচ্ছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, জেলায় স্থায়ী ১৩টি এবং অস্থায়ী পাঁচটি মিলে মোট ১৮টি গরুর হাট বসেছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হাটে প্রবেশ এবং বাইর হওয়ার জন্য আলদা পথ রাখতে বলা হয়েছে।
এছাড়া জাল টাকা রোধে আইনশৃ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। সরকার নির্ধারিত হারে ইজারা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাস্তায় পশুর হাট নয়
রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটে ২২টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম
রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল সেবা দানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ২২টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার থেকে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের টিমগুলো এ কাজে নিযুক্ত হয়।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অনুমোদিত পশুর হাটগুলোতে এ টিমগুলো কাজ শুরু করেছে।
রোগাক্রান্ত ও কোরবানির অনুপযুক্ত গবাদিপশু যাতে হাটে ক্রয়-বিক্রয় না হয় সেজন্য এ মেডিকেল টিম কাজ করছে।
এছাড়াও সারাদেশের কোরবানির হাটে এক হাজার ৭৩৯টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করছে। একই সঙ্গে একটি বিশেষজ্ঞ ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমও কাজ করছে।
অপরদিকে, রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের কার্যক্রমসহ অন্যান্য কার্যক্রম তদারকি করবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
এ জন্য মন্ত্রণালয়ের ৯জন উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাকে নির্ধারিত পশুর হাটে দায়িত্ব দিয়েছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ১২টি মনিটরিং টিমও রাজধানীর কোরবানির পশুর হাট তদারকি করবে।
আরও পড়ুন: রাত ১০টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা হবে: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
কোরবানির পশু নিয়ে ঢাকার পথে ক্যাটল স্পেশাল ট্রেন
রাস্তায় পশুর হাট নয়
আসন্ন ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এবার রাস্তায় পশুর হাট বসতে দেয়া হবে না। আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
রবিবার বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মুক্তিযদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, রাস্তার ওপর পশুর হাট, হাটে যে খাজনা নেয়া হয় বা হাসিল, পশুর ট্রাকে বাঁধা দিয়ে চাঁদাবাজি, জোর করে হাটে পশু নামানো এ বিষয়গুলো বৈঠকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রশাসন যেন সতর্ক থাকে কোন ব্যবসায়ী বা ক্রেতাদের যাতে ভোগান্তিতে পড়তে না হয়।
তিনি বলেন, যত্রতত্র যাতে পশুর হাট না বসে।অনেক সময় দেখা যায়, ঢাকার বাইরেও রাস্তার পাশে হাট বসছে। ফলে গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। কাজেই রাস্তার পাশে কোন অবস্থায় সাময়িকভাবেওযেনো কোরবানির পশু বিক্রি না হয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, এখন থেকেই বড় সাইনবোর্ড থাকবে টোল রেট (হাসিল) কতো। তারা তাদের ইচ্ছা মতো নেয়। শতকরা হার কতো তা হাটে চার্টটা দৃশ্যমান থাকতে হবে। পত্রপত্রিকার মাধ্যমেও ব্যাপক প্রচার প্রচারণা করা হবে। যাতে বেশি নিতে না পারে সে জন্য সেখানে (পশুর হাট) ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে।
তিনি বলেন, পশুর চামড়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। দুই বছর আমরা লক্ষ্য করেছি মানুষ চামড়ার ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। আমাদের দেশে প্রসেসিংয়ের ব্যবস্থাটা নেই, কাঁচা চামড়া বিদেশে বিক্রি করা যায় না। মধ্যস্বত্ব ভোগীরাই সব সুবিধা ভোগ করে। যারা চামড়া বিক্রি করে তারা খুব কম দাম পায়।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেড় লাখের বেশি কোরবানি পশু প্রস্তুত: জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর
তিনি আরও বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয় অচিরেই সভা করে চামড়ার রেট ঘোষণা করবে। আগামী দুই দিনের মধ্যে শিল্প ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা সাভারের চামড়া শিল্প নগরী পরিদর্শন করবেন। যাতে ওখানকার কারখানাগুলো ইফেক্টিভলি রান করতে পারে। কোনো অজুহাত যাতে ব্যবসায়ীরা দাঁড় করাতে না পারে, সেটা দেখার জন্য।
একই সঙ্গে মিলকারখানার মালিকদের জন্য আমাদের পরামর্শ সময়ের মধ্যে যেনো তাদের শ্রমিকরা বেতন-ভাতা, তাদের প্রাপ্য পেয়ে যায়। টাকা পয়সার জন্য তাদের মধ্যে যেনো কোনো অসন্তোষ সৃষ্টি না হয়। স্থানীয় প্রশাসন আগে থেকেই এসব মিল কলকারখানা খবর নিতে থাকবে।
পদ্মা সেতুসহ দেশের অন্যান্য সেতু, ওভারব্রিজে ডিজিটাল টোল ব্যবস্থা চালুর করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, কয়েকদিন পরেই ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য দেশের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর আমরা দেখেছি পদ্মা সেতুতে অনেক টোল আদায় হচ্ছে। এই টোল দিতে অনেক কষ্ট হয়। কারণ ম্যানুয়ালি সংগ্রহ করা হয়।
'আসন্ন ঈদে হাজার হাজার গাড়ি যাবে। তখন দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। তাই এই ঈদে কিছু করা যাবে না। ভবিষ্যতের জন্য সারা দেশে যাতে অটোমেশন টোলের ব্যবস্থা করা যায়, এ জন্য আমাদের প্রত্যেকের গাড়িতে ইলেকট্রনিক ডিভাইস স্থাপন করতে হবে। এতে করে কাউকে আর ম্যানুয়ালি টোল দিতে হবে। এই ব্যবস্থা দ্রুত চালুর জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছি' বলেন আ ক ম মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নয়, দেশের অন্যান্য সকল সেতুতে যেখানে টোল দেয়া হয় সেখানেই মানুষের অনেক কষ্ট হয়। এ জন্য সেতুর সুফলটা মানুষ ঠিক মতো পায় না। তাই ব্রিজ ও ওভারব্রিজের সুবিধা পেতে হলে দ্রুত ডিজিটাল টোল ব্যবস্থায় যেতে হবে। তাহলে মানুষ এর সুবিধা পাবে। যত দ্রুত সম্ভব প্রতিটি গাড়িতে এই ব্যবস্থা করতে হবে। যেটা আমরা উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে দেখে থাকি। এ বিষয় আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।
এ সময় তিনি আরও জানান, বৈঠকে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরে যেতে হবে। তবে যে পর্যন্ত তারা বাংলাদেশে থাকবে, সে সময়ে কোনো অপরাধ করলে কি আইনে ব্যবস্থা নেয়া যায়। সে বিষয়ে আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঈদ উপলক্ষে সারাদেশে ৪৪০০টির বেশি পশুর হাট বসবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
এবার ১.২১ কোটির বেশি কোরবানির পশু প্রস্তুত: মন্ত্রী
কোরবানির হাট মাতাবে ‘সম্রাট’ ও ‘ট্রাম্প’
আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে খুলনায় কোরবানির জন্য সাড়ে ২৭ মণ ওজনের সম্রাট এবং ২৬ মণের ট্রাম্পকে প্রস্তুত করা হয়েছে। শুধু সম্রাট-ট্রাম্পই নয় এই ফার্মে রয়েছে সম্রাটের ভাই নবাব, আছে ডন, বাদশা, টাইটেন, জেমস, কালুসহ বিভিন্ন বাহারি নাম আর রংয়ের ৬৫টি গরু।
খুলনা মহানগরীর দৌলতপুরের মধুমতি ডেইরি ফার্মে এবারের ঈদে কোরবারির জন্য ৯টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। সম্রাট আর ট্রাম্প এবারের কোরবানির পশুর হাট মাতাবে বলে মন্তব্য করেছেন ফার্মের সংশ্লিষ্টরা।
ফার্মের দেখভালের দায়িত্বে থাকা ইমতিয়াজ হোসেন রনি বলেন, ফার্মটি আমার চাচা শামীম শেখের। আমি নিজেসহ বেশ কয়েকজন ফার্মটি দেখাশোনা করি। কিছু কর্মচারী রয়েছে। এই খামারের শুরুতে সাড়ে ৩ থেকে ৪ বছর আগে ১৪টি গরু আনা হয়। এখন চার প্রজাতির ৬৫টি গরু রয়েছে খামারে। এই সময়ের মধ্যে আরও ছয়টি গরু বিক্রি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কোরবানির হাটের জন্য প্রস্তুত খুলনার ৩২ মণের ‘কালো মানিক’
তিনি বলেন, এটি দুগ্ধ খামার। এখানে এবার কোরবানি ঈদের জন্য ৯টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। যার মধ্যে আকার-আকৃতি, গঠন, রং, স্বভাব, চেহারা সবদিক থেকে আকর্ষণীয় হচ্ছে সম্রাট। যে কারোরই পছন্দ হবে। এটির দাম ১৩ লাখ টাকা বলেছিল একজন। কিন্তু আমরা ২৫ লাখ টাকা বলেছি। আশা করছি হাটে নেয়ার পরই বিক্রি হবে। ট্রাম্পও ভালো দামে বিক্রি হবে-ইনশাআল্লাহ। দু’টি গরুই শান্ত প্রকৃতির।
ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, এরা সাধারণ খাবারই খায়। গমের ভূষি, সয়াবিনের খৈল, ধান ও ভুট্টার কুড়া খেয়ে থাকে। এর সঙ্গে দুপুরে নিজেদের ফার্মেই উৎপাদিত ঘাস খাওয়ানো হয়।
ফার্মের কর্মচারী জাফর ভূঁইয়া বলেন, এই ফার্মের শুরু থেকে এখানে কাজ করি। গরুগুলোকে সাধারণ খাবার খাওয়ানো হয়। আর দুধের গরুগুলোকে এসব খাবারের পাশাপাশি ভিটামিন ওষুধ খাওয়ানো হয় ক্যালসিয়ামের জন্য। খাবারের সঙ্গে আয়োডিনযুক্ত লবণ দেয়া হয়। এসব খাবার দুই বেলা দেই আর এক বেলা ঘাস।
আরও পড়ুন: এবার ১.২১ কোটির বেশি কোরবানির পশু প্রস্তুত: মন্ত্রী
ফার্মের মালিক শামীম শেখ জানান, কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য ফার্মে ৯টি গরুর মধ্যে আকর্ষণীয় হচ্ছে সম্রাট ও ট্রাম্প। এর মধ্যে সম্রাটের ওজন সাড়ে ২৭ মণ হবে। আর কালো রংয়ের ট্রাম্পের ওজন ২৬ মণ হবে। গরুগুলো ঢাকা গাবতলীর হাটে নেয়া হবে। আকর্ষণীয় এই দু’টি গরুর দাম ৩২ থেকে ৩৩ লাখ টাকা প্রত্যাশা করছি। যার মধ্যে সম্রাট ১৭ থেকে ১৮ লাখ এবং ট্রাম্প ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা। বাকি গরুগুলো বিভিন্ন দামে বিক্রি করা হবে।
খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অরুণ কান্তি মন্ডল বলেন, বিগত দিনে কোরবানির জন্য ৮০ হাজার গরু-ছাগল বিক্রি হয়েছে। এই বছর তার চেয়ে কিছু বেশি হবে। কারণ করোনার প্রভাব না থাকার কারণে আমরা সকল উৎসবে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখছি। মানুষের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ পরিলক্ষিত হচ্ছে। তার প্রেক্ষিত আমরা মনে করি এবার কোরবানির ঈদ আনন্দময় হবে।
তিনি বলেন, এবার ৭ হাজার ৬১৪ জন খামারি ২৩ হাজার ৯১৭টি গরু কোরবানির জন্য লালন-পালন করেছে। এছাড়া মহিষ ১৭টি, ছাগল প্রায় ৯৩ হাজার এবং দুই হাজার ৩৫০টি ভেড়া রয়েছে।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেড় লাখের বেশি কোরবানি পশু প্রস্তুত: জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর
তিনি বলেন, খামারির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে কোয়ালিটিও বাড়ছে। অনেকেই এখানে বড় অংকের টাকা বিনিয়োগ করছে। প্রাণিসম্পদে লাভ আকাশচুম্বি না হলেও লাভ অবশ্যই আছে। এই সময়ে মৌসুমী কিছু খামারিও গরু প্রস্তুত করে। বরাবরই তারা লাভ পেয়ে আসছেন। এবারও তারা লাভ পাবে। বেকার যুববকরা অনেক বিনিয়োগও করছে।
এবার কুষ্টিয়ায় হাট কাঁপাবে ‘শের খান’
‘শের খান’ নাম শুনে এলাকার কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি মনে হলেও প্রকৃত অর্থে এটি বিশাল আকৃতির একটি গরু। প্রায় এক হাজার ৬০০ কেজি ওজনের গরুটি এবার কুষ্টিয়ার কোবরানির হাট কাঁপাবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ধুবইল ইউনিয়নের হাজীপাড়া গ্রামের প্রান্তিক খামারি আকমাল ইসলাম। দীর্ঘ চার বছর ধরে ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি নিজের সন্তানের মত লালন পালন করে বড় করেছেন। আদর করে গরুটি’র নাম দিয়েছেন ‘শের খান’।
সুঠাম দেহের অধিকারী সুউচ্চ এই গরুটিকে কোরবানির হাটে তোলার জন্য অনেক কষ্টে গোয়ালঘর থেকে বের করতে হয়েছে তাকে। গরুটির জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে উপজেলার সেরা খামারি হিসেবেও প্রশংসিত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: কোরবানির গরু ‘সম্রাটের’ দাম ৬ লাখ টাকা!
গরুটির মালিক আকমাল ইসলাম জানান, চার বছর ধরে গরুটিকে ঘাস, খোল, ভূষি, কলা, মাল্টাসহ বিভিন্ন ফল-ফলাদি খাইয়ে নজের সন্তানের মত অতিকষ্টে লালন-পালন করে বড় করে তুলেছি। আদরের পশু সেরখানকে লালন-পালন করতে তার অনেক অর্থ ব্যয় হয়েছে।
তিনি বলেন, সেরখানকে বড় করতে অনেক টাকা ঋণী হয়ে পড়েছি। ঋণের টাকা পরিশোধ করতেই তাকে এবারের কোরবানির হাটে বিক্রি করতে হচ্ছে। কোরবানির হাটে যে সমস্ত গরু উঠছে তার মধ্যে ‘শের খান’ এখনও সবচেয়ে বড় কোরবানির পশু।
আরও পড়ুন: কোরবানির গরুর নাম যখন বিন লাদেন, সাদ্দাম, গাদ্দাফি!
মিরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সোহাগ রানা বলেন, এই উপজেলায় পশু স্বাস্থ্য সম্মতভাবে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন কৃষকরা। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস তাদের নানাভাবে বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়েছেন। প্রতিদিন শত শত মানুষ উপজেলার ধুবইল ইউনিয়নের হাজীপাড়া এলাকায় কৃষক আকমালের বাড়িতে গরুটিকে দেখতে তার বাড়িতে ভিড় করছেন। গরুটি দেখতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে আমরাও গিয়েছিলাম। গরুটির মালিক স্বাস্থ্য সম্মতভাবে লালন-পালন করে গরুটিকে বড় করে তুলেছেন।
কুমিল্লায় স্কুল মাঠগুলোতে চলছে অবৈধ গরুর হাট!
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায় স্কুল মাঠেই অবৈধ গরুর হাট চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া উপজেলার ২৩টি পশুর হাটের মধ্যে ১১টি হাটেরই কোনও অনুমোদন নেই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলার দোল্লাই নবাবপুর ইউনিয়নের নবাবপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, জোয়াগ ইউনিয়নের ধেরেরা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ ও বরকইট ইউনিয়নের শ্রীমন্তপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে সপ্তাহে দুইদিন করে গরুর হাট চলে। এর মধ্যে নবাবপুর ও ধেরেরা অস্থায়ী হাট অন্য জায়গা দেখিয়ে সরকারিভাবে ইজারা নিয়ে পরবর্তীতে বিদ্যালয় মাঠে হাট বসায়।
আরও পড়ুন: পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কঠোর ব্যবস্থা: মেয়র আতিক
এদিকে শ্রীমন্তপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের হাট ইজারা ছাড়াই জোরপূর্বক হাট চলছে।
জানা গেছে, ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে চান্দিনা উপজেলায় চারটি স্থায়ী গরুর বাজার রয়েছে। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে উপজেলায় আরও আটটি অস্থায়ী গরুর হাটের ইজারা দেয় উপজেলা প্রশাসন। স্থায়ী ও অস্থায়ী ১২টি গরুর বাজারের স্থলে বর্তমানে চান্দিনায় অন্তত ২৩টি গরুর হাট রয়েছে। চান্দিনার শ্রীমন্তপুর, ছয়ঘড়িয়া, শুহিলপুর, কালিয়ারচর, গল্লাই-তালতলা, মহিচাইল-ছেঙ্গাছিয়াসহ আরও অন্তত পাঁচটি হাট অবৈধভাবে চলছে। করোনা সংক্রমণ রোধে প্রশাসনের অনুমতি না মিললেও, স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ওই সব হাটে পশু বেঁচা-কেনা হচ্ছে। এতে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
চান্দিনার শ্রীমন্তপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুনুর রশিদ বলেন, ‘কে বা কারা গরুর বাজার বসিয়েছে আমি কিছুই জানি না। শনিবার স্কুলে এসে মাঠে খুঁটি দেখে শুনেছি শুক্রবার নাকি গরুর হাট বসেছিল।’
ধেরেরা গরু হাটের ইজারাদার আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ধেরেরা মৌজার ৫৫১ দাগে ইজারা নিয়েছি। মাঠের এক পাশে খুঁটি বসাই। যেখানে আমাদের ইজারা আছে। স্কুলের জায়গায় খুঁটি দেইনি।’
নবাবপুর গরু বাজার পরিচালনা পর্ষদ সদস্য আশেক এলাহী জানান, ‘নবাবপুরে স্থায়ী গরুর বাজার আছে। ঈদের সময় ওই জায়গাতে সংকুলান না হওয়ায় স্কুল মাঠে নিয়ে আসি। ঈদের সময় মাত্র দু’টি বাজারই হয় স্কুল মাঠে।’
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে ১৭ শর্তে বসবে পশুর হাট
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুন নাহার বলেন, ‘আমরা ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সরকারি জায়াগায় অস্থায়ী গরুর হাট ইজারা দিয়েছি। কোন বিদ্যালয়ের মাঠে নয়। যারা বিদ্যালয় মাঠে গরুর হাট বসিয়েছে, খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এছাড়া অনুমোদনহীন গরুর হাট বন্ধে মাঠে ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে।’
পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কঠোর ব্যবস্থা: মেয়র আতিক
কোরবানির পশুর হাটে সরকারি নির্দেশনাসহ সকল প্রকার স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করা না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সতর্ক করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।
শনিবার রাজধানীর গুলশানে নগর ভবনে মনিটরিং টিমের সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এই সতর্কবার্তা দেন।
আরও পড়ুনঃ ডিজিটাল কোরবানির পশুর হাটের উদ্বোধন
ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাট বসানো হয়েছে। স্থায়ী একটিসহ নয়টি পশুর হাটের ইজারা শর্ত সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে ১৫ সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে। ১৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মফিজুর রহমানের নেতৃত্বে এই দলে ১৩ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং দু'জন ভেটেরিনারি কর্মকর্তা রয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসবে পশুরহাট: স্থানীয় সরকার মন্ত্রী
মেয়র বলেন, ডিএনসিসির আওতাধীন প্রতিটি পশুর হাটে সরকারি নির্দেশনাসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ডিএনসিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী হাকিমের নেতৃত্বে একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। শক্তি ফাউন্ডেশন প্রতিটি বাজারে ২০০ প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক, ২০০ টিশার্ট এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক মাস্ক সরবরাহ করেছে। এছাড়াও, ইজারাদাররা সমস্ত গরুর বাজারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করেছেন।
মেয়র বলেন, পশুর হাটগুলোতে যথাযথ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের উভয়কেই মাস্ক পরতে হবে এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকায় তিন পশুর হাট বাতিল
তিনি জানান, করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধকল্পে গবাদি পশুর হাটগুলোতে শারীরিক উপস্থিতি এড়ানোর লক্ষ্যে ‘ডিএনসিসি ডিজিটাল হাট -২০২১’এর আয়োজন করা হয়েছে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ডিএনসিসির নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা এবং শক্তি ফাউন্ডেশনের উপ-নির্বাহী পরিচালক ইমরান আহমেদ।
ডিজিটাল কোরবানির পশুর হাটের উদ্বোধন
দেশব্যাপী ডিজিটাল কোরবানির পশুর হাটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি(আইসিটি) ডিভিশন ও ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর যৌথ ব্যবস্থাপনায় এই অনলাইন হাট পরিচালিত হবে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইন আহমেদ পলক এমপির সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুনঃ ডিজিটাল হাট থেকে কোরবানির পশু কেনার আহ্বান ডিএনসিসি মেয়রের
রেজাউল করিম এমপি বলেন, ‘দেশ এগিয়ে চলছে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ মাথা উচু করে দাঁড়াবে। এই ডিজিটাল হাটের মাধ্যমে একদিকে বিক্রেতারা ন্যায্যমূল্য পাবেন অন্যদিকে ক্রেতারা পাবেন সঠিক পশু ক্রয়ের নিশ্চয়তা। হাটে না গিয়ে নিজেকে নিরাপদ রেখে ঘরে বসে কোরবানি পশু পাওয়ার এই সুবিধা আমরা পাচ্ছি কারণ বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করছে। আজ আমরা যদি ডিজিটালি সক্ষম না হতাম তাহলে এই হাটের মাধ্যমে মানুষকে আজ এতটা সুরক্ষা দেয়ার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়তো কঠিন হয়ে যেত।‘
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার এই কর্মযজ্ঞে বিভিন্ন বিভাগের সংশ্লিষ্ঠ ব্যক্তিরা নিরলসভাবে কাজ করছে। কৃষক এবং খামারিরা খাদ্য ও পশু উৎপাদন করে দেশকে খাদ্য ও পশু উৎপাদনে স্বাবলম্বী করে তুলেছে। তিনি সংশ্লিষ্ঠ সকলকে ধন্যবাদ জানান।
আরও পড়ুনঃ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসবে পশুরহাট: স্থানীয় সরকার মন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, দেশের ১৮৪৩ টি অনলাইন শপের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের ২৪১টি হাট একটি প্লাটফর্মে যুক্ত হয়েছে। এতে ই-ক্যাব ও একশপ সার্বিক সহযোগিতা করছে। তিনি ডিজিটাল হাটকে নিরাপদ সাশ্রয়ী এবং পরিবেশ বান্ধব বলে অভিহিত করেন। অনুষ্ঠান উদ্বোধন শেষে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী স্ক্রো সেবার মাধ্যমে একটি গরু ক্রয় করেন এবং এটি মানবসেবায় দান করেন।
মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ বলেন, সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্ঠায় ও সহযোগিতায় দেশ গবাদি পশুর ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। গত বছর আমাদের এক কোটি ১৮ লাখ কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল,কিন্তু করোনার কারণে বিক্রি হয়েছে ৯৪ লাখ পশু। চলতি বছর এক কোটি ১৯ লাখ কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। এ বছর ১৮৪৩টি অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে আমরা রেকর্ড সংখ্যক পশু অনলাইনে বিক্রি করতে পারব।
আরও পড়ুনঃ করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকায় তিন পশুর হাট বাতিল
অনুষ্ঠানে এটুআই এর প্রকল্প পরিচালক ড. আব্দুল মান্নান পিএএ বলেন, সরকারি সেবাগুলো তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের জীবনকে কল্যাণময় করে তুলেছে। ডিজিটাল হাটের ধারণা এখন উপজেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এবার সকল প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে এই ডিজিটাল হাট প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
এটুআই এর যুগ্ম প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে স্বাধীন জাতিসত্ত্বা উপহার দিয়েছেন এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী একটি সমৃদ্ধ দেশ উপহার দিতে কাজ করছেন। কোনোদিন হয়তো কেউ চিন্তা করেনি তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ আজ এই অবস্থানে থাকবে। কোভিড ১৯ নিয়ন্ত্রণে আজকের ডিজিটাল হাট যুগপৎ ভূমিকা পালন করবে।
আরও পড়ুনঃ চট্টগ্রামে ১৭ শর্তে বসবে পশুর হাট
ই-ক্যাবের প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার বলেন, সম্পদের সুষম বন্টনে আমরা যদি তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে পারি তাহলে এর সুফল প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব। ই-ক্যাব পেন্ডামিকের শুরু থেকে ডিজিটাল হাট, লকডাউন ম্যানেজমেন্ট, টিসিবি’র পণ্য বিক্রি সব বিষয়ে সরকার এবং জনগণের পাশে রয়েছে।
এর আগে গত ৩০ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণলায় অনলাইনে পশু বিক্রি সংক্রান্ত একটি গাইড লাইন প্রকাশ করে। এই উদ্বোধনের মাধ্যমে গত ৪ জুলাই চালু হওয়া ঢাকা মহানগরী কেন্দ্রীক ডিজিটাল হাটকে মুলত দেশব্যাপী সম্প্রসারণ করা হলো।
করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকায় তিন পশুর হাট বাতিল
চলমান করোনা মহামারি বিবেচনায় তিন পশুর হাট বাতিল করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
বাতিল করা পশুর হাট তিনটি হলো লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা ও কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউন এর আশপাশের খালি জায়গা এবং শ্যামপুর কদমতলী বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন খালি জায়গা।
আরও পড়ুনঃ লকডাউন অমান্য করায় চাঁদপুরে গরুর হাট ভেঙে দিল প্রশাসন
উল্লেখ্য, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ করপোরেশন এলাকায় ১৩টি অস্থায়ী পশুর হাটের ৩ পর্যায়ে দরপত্রের আহবান জানিয়ে ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের দরপত্র শেষে ১০টি অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা প্রদান করা হয়। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় তৃতীয় পর্যায়ের দরপত্র শেষে আর কোন পশুর হাট ইজারা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আরও পড়ুনঃ গরু কিনে ‘ডিজিটাল পশুর হাট’ উদ্বোধন করলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
পশুর হাটগুলোতে ঈদ-উল-আযহা'র দিনসহ মোট ৫ দিন পশু কেনা-বেঁচা করা যাবে। হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি পালনসহ অন্যান্য শর্তাবলী সাপেক্ষে অস্থায়ী ১০ পশুর হাট ইজারাপ্রাপ্তদের সাথে চুক্তি সম্পন্ন করা হচ্ছে।