সঞ্চয়
প্রাইজবন্ড কি? কোথা থেকে কিনবেন ও ভাঙাবেন? কেনার সুবিধা-অসুবিধা
আর্থ-সামাজিক জীবনধারায় প্রাইজবন্ড একটি পরিচিত নাম। এটি অনেকের কাছে সঞ্চয়ের নিরাপদ মাধ্যম এবং একই সঙ্গে ভাগ্য পরীক্ষা করার এক দারুণ সুযোগ। বিনিয়োগ, উপহার কিংবা দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিকদের কাছে এটি এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। তাই প্রাইজবন্ড কেনা ও ভাঙানোর নিয়ম, এর সুবিধা ও অসুবিধা, প্রাইজবন্ডের লটারী ও পুরুষ্কার সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা জরুরি। চলুন, প্রাইজবন্ডের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
প্রাইজবন্ড কি
বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের একটি বিশেষ বিনিয়োগ প্রকল্প প্রাইজবন্ড। এখানে বিনিয়োগকারী যেকোনও সময় বিনিয়োগ করতে পারেন এবং প্রয়োজনে বন্ড ফেরত দিয়ে মূলধন তুলে নিতে পারেন। তবে এই প্রকল্প থেকে সরাসরি কোনও মুনাফা বা সুদ দেওয়া হয় না।
প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময় অন্তর লটারির মতো ‘ড্র’ অনুষ্ঠিত হয়। সেই ড্র-এর মাধ্যমে বিজয়ীরা বিভিন্ন মূল্যমানের পুরস্কার পান। সাধারণত বছরে চারবার ড্র আয়োজন করা হয়, এবং তার দিনক্ষণও নির্দিষ্ট- ৩১ জানুয়ারি, ৩০ এপ্রিল, ৩১ জুলাই, এবং ৩১ অক্টোবর। এই তারিখগুলোর কোনওটি সরকারি ছুটির দিনে পড়লে সেই ড্র পরবর্তী কার্যদিবসে অনুষ্ঠিত হয়।
সব বিক্রিত বন্ড একসঙ্গে ড্র-এর আওতায় আসে না। নির্দিষ্ট ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখের কমপক্ষে দুই মাস আগে যে বন্ড বিক্রি হয়েছে, শুধুমাত্র সেগুলোই ড্র-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। অর্থাৎ, কোনও বন্ড কেনার পর অন্তত দুই মাস অতিক্রম না হলে সেটি লটারিতে অংশ নিতে পারবে না।
আরো পড়ুন: সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে নগদায়ন বা পুনরায় চালু করার উপায়
ড্র অনুষ্ঠিত হয় সরকার অনুমোদিত স্থানে। এর আয়োজন ও পরিচালনায়ও থাকে সরকার কর্তৃক গঠিত বিশেষ কমিটি। ড্র-এর নিয়ম একক ও সাধারণ পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়, যেখানে প্রত্যেক সিরিজের জন্য একই নম্বর প্রযোজ্য হয়। বাজারে শুধুমাত্র চলমান প্রাইজবন্ড সিরিজগুলো ড্র-এর অংশ হয়।
প্রাইজবন্ড কেন কিনবেন: এর সুবিধা কি
অনেকেই প্রাইজবন্ডকে লটারির সঙ্গে তুলনা করেন। কিন্তু এ দুয়ের মাঝে রয়েছে সুক্ষ্ম পার্থক্য। লটারিতে একবার ড্র শেষ হয়ে গেলে সেই টিকিটের কোনও মূল্য থাকে না। টিকিটে জিততে না পারলে পুরো টাকাই হারাতে হয়। কিন্তু প্রাইজবন্ডে বিষয়টি ভিন্ন। একটি ড্র শেষ হয়ে গেলেও বন্ডের মেয়াদ শেষ হয় না। পরবর্তী ড্র’তেও সেটি অংশ নিতে পারে। তাই একবার বন্ড কিনলে তা দিয়ে একাধিকবার ড্র’তে অংশ নেয়ার সুযোগ থাকে।
প্রাইজবন্ডের আরেকটি দিক হলো- এতে কোনও মাসিক সুদ বা লভ্যাংশ নেই। কারণ প্রাইজবন্ড বিক্রির মাধ্যমে সরকার আসলে জনগণের কাছ থেকে সরাসরি ঋণ সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে গ্রাহক বন্ড ফেরত দিলে সরকার সেই ঋণ শোধ করে। অর্থাৎ এটি সুদভিত্তিক সঞ্চয় নয়, বরং একটি নিরাপদ বিনিয়োগ যা আবার যেকোনও সময় ভাঙানো যায়।
যে কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে সরাসরি নগদ অর্থ উপহার দেওয়া অনেক ক্ষেত্রেই বিব্রতকর। সেখানে প্রাইজবন্ড একটি উৎকৃষ্ট উপায়। যেমন- বিয়েতে উপহার হিসেবে প্রাইজবন্ড দিলে নবদম্পতি চাইলে তা সঙ্গে সঙ্গে ভাঙাতে পারেন। আবার চাইলে তারা বহু বছর রেখে দিয়ে ভবিষ্যতের ড্র-তে ভাগ্য পরীক্ষা করতে পারেন। এতে এক ধরনের স্বাধীনতা থাকে।
আরো পড়ুন: জুলাই ২০২৫ থেকে পরিবার সঞ্চয়পত্রে নতুন মুনাফার হার: বাংলাদেশের জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের পুনঃনির্ধারিত রিটার্ন রেট
শুধু বিয়েতেই নয়, জন্মদিন, শিশুর মুখে ভাত কিংবা অন্য যেকোনও পারিবারিক অনুষ্ঠানে প্রাইজবন্ড অর্থবহ উপহার হতে পারে। এর মাধ্যমে উপহারপ্রাপ্ত ব্যক্তি ভবিষ্যতে বাড়তি সম্ভাবনারও সুযোগ পান। তাই এটি বিনিয়োগ, সঞ্চয় এবং উপহার- সবক্ষেত্রেই একটি কার্যকর বিকল্প।
প্রাইজবন্ডের পুরষ্কার
একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো পদ্ধতিতে প্রাইজবন্ডের পুরস্কার প্রদান করা হয়ে থাকে। এটি পূর্বনির্ধারিত এবং প্রতিটি সিরিজের জন্য একইভাবে প্রযোজ্য। কোন স্তরের পুরস্কারের জন্য প্রতিটি সিরিজ থেকে কতজন বিজয়ী হবেন- তা পুরস্কার ঘোষণার সময় স্পষ্টভাবে জানানো হয়।
প্রথম পুরস্কারের জন্য ৬ লাখ টাকা নির্ধারিত। ড্র-এর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট নম্বর বাছাই করা হয়। তবে প্রতিটি সিরিজে সেই একই নম্বরের বন্ডধারী একজন করে এই পুরস্কার পান। বর্তমানে ৮২টি সিরিজ চালু রয়েছে। ফলে একটি নম্বর নির্বাচিত হলে মোট ৮২ জন প্রথম পুরস্কার পান।
একই নিয়মে দ্বিতীয় পুরস্কারের পরিমাণ ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এখানেও প্রতিটি সিরিজ থেকে একজন করে বিজয়ী নির্বাচিত হন। অর্থাৎ মোট ৮২ জন এই পুরস্কার পাবেন।
আরো পড়ুন: ই-রিটার্ন: অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন যেভাবে
তৃতীয় পুরস্কারের জন্য প্রতিটি সিরিজ থেকে দুটি করে নম্বর নির্বাচন করা হয়। পুরস্কারের পরিমাণ এক লাখ টাকা। তাই মোট বিজয়ীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬৪ জন।
চতুর্থ পুরস্কারের ক্ষেত্রে প্রতিটি সিরিজ থেকে দুটি করে নম্বর বাছাই করা হয়। এখানে পুরস্কারের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা। তাই মোট বিজয়ী হন ১৬৪ জন।
সবচেয়ে বেশি বিজয়ী নির্ধারিত হয় পঞ্চম পুরস্কারের ক্ষেত্রে। প্রতিটি সিরিজ থেকে ৪০টি নম্বর নির্বাচন করা হয়। পুরস্কারের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা। ফলে মোট ৩ হাজার ২৮০ জন বিজয়ী হন।
সব মিলিয়ে প্রতি ড্র-তে মোট ৩ হাজার ৭৭২টি পুরস্কার দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন: সঞ্চয়পত্রের সঙ্গে সংযুক্ত ব্যাংক পরিবর্তন করে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরের উপায়
প্রাইজবন্ড কোথা থেকে কিনবেন
সরকারের নির্দিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাইজবন্ড কেনা বা ভাঙানোর কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করে থাকে। ময়মনসিংহ শাখা ব্যতীত বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কার্যালয়ে প্রাইজবন্ড পাওয়া যায়।
এছাড়াও যে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বন্ড কেনা যায়, সেগুলো হলো:
- শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলো বাদে দেশের সব তফসিলি ব্যাংক- জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীনস্থ সঞ্চয় ব্যুরো অফিস- ডাকঘর
ক্রেতাকে শুধু নগদ অর্থ নিয়ে উপস্থিত হতে হয়। আলাদা কোনও আবেদনপত্র জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
পুরস্কারের অর্থ পাওয়ার জন্য আবেদনের নির্ধারিত নিয়ম রয়েছে। বিজয়ীকে মূল প্রাইজবন্ডসহ ফর্ম পিবি-২৩ সঠিকভাবে পূরণ করতে হয়। অতঃপর তা বাংলাদেশ ব্যাংকের যে কোনও কার্যালয় (ময়মনসিংহ বাদে) সহ উপরোল্লিখিত যেকোনও প্রতিষ্ঠানে জমা দিতে হয়। সাধারণত আবেদন করার তারিখ থেকে দুই মাসের মধ্যে পুরস্কারের টাকা প্রদান করা হয়। প্রাপকের ব্যাংক হিসাবে সরাসরি সেই অর্থ জমা হয়। একইভাবে এসব কার্যালয় থেকে প্রাইজবন্ড ভাঙানোও যায়।
আরো পড়ুন: পুরনো স্বর্ণ বিক্রির সময় যে কারণে দাম কেটে রাখা হয়
প্রাইজবন্ডের নেতিবাচক দিক
সুবিধার পাশাপাশি প্রাইজবন্ডের কিছু সীমাবদ্ধতা ও অসুবিধাও রয়েছে। সেগুলো হলোঃ
- প্রাইজবন্ডের ড্র-তে জেতার সম্ভাবনা খুবই কম। বিনিয়োগ করে পুরস্কার পাওয়া সম্পূর্ণ ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল।এটি আসলে কোনও দ্রুত লাভের উপায় নয়। স্বল্পমেয়াদি মুনাফার আশায় প্রাইজবন্ড কিনলে হতাশা আসতে পারে।বছরান্তে প্রাইজবন্ডের যে লভ্যাংশ দেওয়া হয় তার হার মাত্র ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক ডিপোজিটের তুলনায় এটি অনেক কম।- লভ্যাংশের হার এমনিতেই কম, তার উপর পুরস্কারের অর্থের উপর আয়কর দিতে হয়। আয়কর আইন ২০২৩-এর ১১৮ ধারা অনুযায়ী পুরস্কারের অর্থের উপর আরোপিত উৎসে কর ২০ শতাংশ।- নকল টাকা শনাক্তে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলেও নকল প্রাইজবন্ড ধরা অত্যন্ত কঠিন। এতে ক্রেতারা প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।- পুরস্কার তুলতে গেলে অনেক কাগজপত্র জমা দিতে হয়। সঠিকভাবে ফরম পূরণ করা এবং গেজেটেড অফিসার দ্বারা সত্যায়ন করা বাধ্যতামূলক। এতে সময় বেশি লাগে এবং ভোগান্তিও পোহাতে হয়।- সময়ের সাথে সাথে টাকার ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ফলে ১০০ টাকা মূল্যের প্রাইজবন্ডের প্রকৃত মূল্য আগের তুলনায় অনেক হ্রাস পেয়েছে। দশ বছর আগে ১০০ টাকায় যে পরিমাণ জিনিস কেনা যেত, এখন একই টাকায় তা সম্ভব নয়।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করার পদ্ধতি
প্রাইজবন্ড লটারীর ফলাফল জানার উপায়
প্রাইজবন্ডের ড্র–এর ফলাফল চেক করার জন্য রয়েছে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট। এখানে প্রতিটি ড্র–এর বিজয়ীর সিরিজ ও নাম্বারের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এছাড়া প্রাইজবন্ড সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব একটি পোর্টাল রয়েছে- https://prizebond.ird.gov.bd/। এই সাইটে প্রাইজবন্ডের নাম্বার এবং সিরিজ লিখে আপনি সহজেই চেক করতে পারবেন যে আপনি প্রাইজবন্ড লটারী জিতেছেন কি না।
পরিশিষ্ট
সর্বসাকূল্যে, প্রাইজবন্ড কি, কোথা থেকে কিনবেন, কেন কিনবেন, এবং এর সুবিধা-অসুবিধাগুলো সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হলো। বিনিয়োগের পাশাপাশি ভাগ্য পরীক্ষার এক আকর্ষণীয় সুযোগ এই প্রাইজবন্ড। এটি সহজে কেনা যায়, যেকোনও সময় ভাঙানো যায় এবং বছরে চারবার এ থেকে পুরস্কার প্রাপ্তির সুযোগ থাকে। তবে এর ড্র-তে জেতার অনিশ্চয়তা, স্বল্প লভ্যাংশ বা কর কর্তনের বিষয়গুলোও বিবেচনায় রাখা উচিত। সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতা দুটোর প্রতিই গুরুত্বারোপ সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সহায়তা করবে।
আরো পড়ুন: ডলার এনডোর্সমেন্ট কী, কীভাবে করবেন
১০২ দিন আগে
সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে নগদায়ন বা পুনরায় চালু করার উপায়
দীর্ঘমেয়াদি উপযুক্ত লাভসহ আর্থিক সঞ্চয়ের একটি নির্ভরযোগ্য উপায় হলো সঞ্চয়পত্র। বিভিন্ন কিস্তিতে এর মুনাফা লাভের পাশাপাশি, মেয়াদ পূর্ণ হলে ফিরতি মূলধন নানা আর্থিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সহায়ক হয়। অপরদিকে, অনেকেই সঞ্চয়পত্র নবায়নের মাধ্যমে সঞ্চয় বৃদ্ধি এবং মুনাফাপ্রাপ্তির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেন। উভয় ক্ষেত্রেই পদ্ধতিগত বিষয়গুলো মূলত ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ তথা সরকার এবং সঞ্চয়পত্রটি যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে। চলুন, মেয়াদ শেষে সঞ্চয়পত্রের নগদায়ন বা নবায়নেরর পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিই।
সঞ্চয়পত্র নগদায়নের উপায়
প্রদানকারী ব্যাংকের ওপর নির্ভর করে মেয়াদ শেষে সঞ্চয়পত্রের নগদায়নে সাধারণত ২ থেকে ৩ কার্যদিবস সময় লাগে। কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া কিছুটা বেশি সময় নিতে পারে।
নগদায়নের জন্য প্রতিটি ব্যাংকের নিজস্ব ফরম রয়েছে। টাকা উত্তোলনের জন্য প্রথমে ওই ফরমটি পূরণ করতে হবে। এরপর, ফরমে স্বহস্তে সই করে সেটি সঞ্চয়পত্র কেনা ব্যাংকের শাখায় জমা দিতে হবে।
আরো পড়ুন: পুরনো স্বর্ণ বিক্রির সময় যে কারণে দাম কেটে রাখা হয়
যদি ক্রেতা সশরীরে ব্যাংকে উপস্থিত হতে বা সই করতে অপারগ হন, তবে তার নমিনি নগদায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। তবে এই ক্ষেত্রে, ক্রেতার শারীরিক অবস্থার প্রমাণ হিসেবে চিকিৎসকের সনদ দেখাতে হবে।
এছাড়া, নমিনির বাইরে বিনিয়োগকারীর মনোনীত ব্যক্তি শুধু মুনাফার অর্থই নগদে উত্তোলন করতে পারবেন। তবে এজন্য সঞ্চয়পত্রের ক্রেতা বা মালিকের পক্ষ থেকে লিখিত অনুমতিপত্র এবং মুনাফা কুপনের ছাড়পত্র দিতে হবে। সঞ্চয়পত্রের আসল অর্থ কোনোভাবেই অনুমতিপত্র বা অথরাইজেশন লেটারের মাধ্যমে উত্তোলন করা যায় না।
তবে, অনলাইন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াগুলোর প্রয়োজন হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম থেকে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মূলধন মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার দিনই গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে জমা হবে। এমনকি মুনাফাগুলোও কিস্তি অনুযায়ী সঠিক সময়ে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাবে। এই সমস্ত লেনদেনের জন্য ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) সিস্টেম ব্যবহৃত হবে। এর ফলে, বিনিয়োগকারী বা তার মনোনীত ব্যক্তিকে মুনাফা বা মূলধন উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে যেতে হবে না।
আরো পড়ুন: সঞ্চয়পত্রে যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
সঞ্চয়পত্র পুনরায় চালু করার পদ্ধতি
নতুন পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়করণ ব্যবস্থা থাকায় নথিপত্র সংক্রান্ত জটিলতাগুলো দূর হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে সঞ্চয়পত্র রিনিউ পদ্ধতির পরিবর্তনগুলো নিম্নরূপ:
* পরিবার সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে শুধু বিনিয়োগকৃত আসল অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনরায় বিনিয়োগ হবে।* ৫ বছর মেয়াদি এবং ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে মুনাফাসহ আসল অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনরায় বিনিয়োগ হবে।* এই নবায়নের ক্ষেত্রে পুনঃবিনিয়োগের তারিখ থেকে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা অনুসরণ করা হবে।* পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ত্রৈমাসিকের বদলে প্রতি মাসে প্রদান করা হবে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশ সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করার পদ্ধতি
শেষাংশ
সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে নগদীকরণ অথবা নবায়নের সাম্প্রতিক অগ্রগতিগুলো বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্তে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত, সেভিংস স্কিমের অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম পুরোদমে সক্রিয় হয়ে উঠলে মূলধনের টাকা পাওয়া নিয়ে যাবতীয় হয়রানির অবসান ঘটবে। মেয়াদপূর্তির দিনই টাকা সরাসরি অ্যাকাউন্টে ইএফটি (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) হলে আলাদা করে আর ব্যাংকে যাওয়া লাগবে না। বিষয়টি স্বয়ংক্রিয় নবায়নের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এই নথিবিহীন পদ্ধতি প্রশাসনিক বিলম্বসহ সামগ্রিক জটিলতা দূর করবে, যা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সহায়ক হতে পারে।
আরো পড়ুন: সঞ্চয়পত্রের সঙ্গে সংযুক্ত ব্যাংক পরিবর্তন করে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরের উপায়
৩৮৬ দিন আগে
জোর করে কাবুল দখল করবে না তালেবান
সশস্ত্র বিদ্রোহী তালেবান যোদ্ধারা রবিবার কাবুলের উপকণ্ঠে প্রবেশ করলে আতঙ্কিত কর্মকর্তারা সরকারি অফিস থেকে পালিয়ে বের হয়ে যায়। এসময় হেলিকপ্টারগুলো দেশটির রাজধানীতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসে অবতরণ করছিল।
তিন আফগান কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, তালেবানরা রাজধানীর কালাকান, কারাবাগ এবং পাগমান জেলায় অবস্থান করছে। বিদ্রোহীরা ‘জোর করে’ রাজধানী দখল না নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় যদিও রাজধানীতে বিক্ষিপ্ত গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।
আরও পড়ুনঃ আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চল দখল শেষে কাবুলের পথে তালেবান
তালেবান বলছে, ‘কারও জীবন, সম্পত্তি এবং মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এবং কাবুলের নাগরিকদের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে না।’
মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে দেশব্যাপী তালেবানরা আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে পরাজিত করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর তাত্ক্ষণিকভাবে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি।
আক্রমণ শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো শনিবার জাতির উদ্দেশে কথা বলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি।
ভবিষ্যতের আশঙ্কায় হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ এখন কাবুলের পার্ক এবং খোলা জায়গায় বাস করতে শুরু করেছে। শত শত ব্যক্তি বেসরকারি ব্যাংকের সামনে জড়ো হয়ে তাদের সঞ্চয় প্রত্যাহারের চেষ্টা করলে কিছু এটিএম ক্যাশ বিতরণ বন্ধ করে দেয়।
আরও পড়ুনঃ তালেবান হামলায় ২০১৯ সালে নিহত ২,২১৯ বেসামরিক আফগান
বেশ কয়েকটি পয়েন্টে গোলাগুলি শুরু হয়, যদিও আফগান প্রেসিডেন্ট এটি কমানোর চেষ্টা করছেন।
এমন বিশৃঙ্খলার মধ্যে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘কাবুল শহরের নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
১৫৭২ দিন আগে