প্লাবন
পাহাড়ি ঢল: ঝিনাইগাতীতে নতুন এলাকা প্লাবিত, পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে পাহাড়ি ঢলের পানি উজান থেকে নেমে গেলেও ভাটি অঞ্চলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ঢলের পানিতে ডুবে শুক্রবার বেলা ২টার দিকে ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের সারি কালিনগর (বালুর চর) এলাকায় ১৪ মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত দিয়ামনি ওই এলাকার রফিকুল ইসলামের মেয়ে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিজুল হক জানান, দিয়া মনি বাড়ির উঠানে খেলা করার সময় হঠাৎ তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বাড়ির পাশেই ঢলের পানিতে দিয়ামনিকে ভাসতে দেখা যায়। পরিবারের লোকজন তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন।
ঢলের পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল আলম ভূঁইয়া।
এদিকে, ঢলের পানির তোড়ে অনেক এলাকায় গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ভেঙ্গে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাড়ছে পথচারীদের দুর্ভোগ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শতশত মানুষ। মহারশি নদীর দিঘিরপার, খৈলকুড়া, রামেরকুড়া এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। শুক্রবার উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি কমতে শুরু করায় নতুন করে ভাটি এলাকায় চারটি ইউনিয়নের ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শতশত মানুষ। আকস্মিক পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পানিতে তলিয়ে শতাধিক পুকুরের কয়েক লাখ টাকা মূল্যের মাছ ভেসে যায় বলে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষী ও উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী শুভ বসাক বলেন, আকস্মিক পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে ধানশাইল-পানবর রাস্তার সূতিপাড়াসহ কয়েকটি স্থানে বিধ্বস্ত হয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আহাম্মদনগর-মোহনগঞ্জ বাজার পর্যন্ত রাস্তাটি খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা সদরে মহারশি নদীর পূর্বপাড় থেকে নলকুড়া রাস্তা, ডাকাবর থেকে শালচূড়া রাস্তা বিধ্বস্ত হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি ঢলের পানিতে কৃষির তেমন কোন ক্ষতি সাধিত হয়নি। ঢলের পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় সামান্য কিছু শাক সবজির ক্ষতি সাধিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক আল মাসুদ জানান, পাহাড়ি ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ মেট্রিক টন জিআর এর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে সুনামগঞ্জ
বন্যায় সুনামগঞ্জে শত কোটি টাকার ক্ষতি
কুড়িগ্রামে বাড়ছে পানি: বাঁধের দিকে ছুটছে মানুষ
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপূত্র নদের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজিবপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বসতভিটায় পানি প্রবেশ করায় লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধে অথবা অন্যত্র আশ্রয় নিতে ছুটছে।
জেলার বিভিন্ন অঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। খাদ্য সংকটের কারণে অনেক নিম্নবিত্ত পরিবার ই দিনে একবেলা খেয়ে জীবনযাপন করছেন। তৃণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় পশু খাদ্যেরও ব্যাপক সংকটা দেখা দিয়েছে।
এদিকে এলাকাগুলোর শৌচাগার ব্যবহার অনুপোযগী হয়ে ওঠায় শৌচ কাজ সম্পন্ন করতে বৃদ্ধ, নারী ও শিশুদের অনেক সমস্যার মধ্যে পরতে হচ্ছে। পাশাপাশি পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় পরিবেশ ও পানি দূষণ হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, নতুন এলাকা প্লাবিত
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, শনিবার সকালে ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৬৪ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি ব্রীজ পয়েন্টে ৫৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা ও ব্রহ্মপূত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই অববাহিকায় প্রায় ১লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বলে জনপ্রতিনিধিরা জানান।
উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দী জীবনযাপন করছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে করোনা: সীমাহীন চিকিৎসা ব্যয় অনেক মানুষকে দরিদ্র করে তুলেছে
অপরদিকে উলিপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু জানান, উলিপুরে ৮টি ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার পরিবারে পানিবন্দী হয়ে আছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক জানান, বন্যার ফলে জেলায় প্রায় ২৮ হাজার হেক্টর রোপা আমন, শাকসবজি ও বীজতলা তলিয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: আখাউড়ায় ২২ বছরের অপেক্ষা শেষে ভেঙে পড়ল সেতু
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, বন্যা দুর্গতদের আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরসহ তাদের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও ভ্রাম্যমাণ লেট্রিনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়াও উপ-বরাদ্ধকৃত ২৮০ মে.টন চাল ও ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দুর্গত এলাকায় বিতরণ শুরু হয়েছে।