প্লাস্টিক পণ্য
প্রকৃতি ধ্বংস বন্ধ করুন, গাছ লাগান: অধ্যাপক ইউনূস
সুস্থ জীবনযাত্রার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সকলকে প্রকৃতি ধ্বংস বন্ধ করে গাছ না কেটে গাছ লাগানো ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এই সুন্দর পৃথিবী উপভোগ করতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করারও আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘প্লাস্টিক একটি বিষ। শুধু মানুষের জন্য নয়, এই বিশ্বের সবকিছুর জন্য। আমরা এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি না, কারণ এটি ধীরে ধীরে এবং ধীরে ধীরে ঘটছে। আসুন আমরা এটির সমাধান করি। আসুন আমরা এই বিষ থেকে নিজেদের রক্ষা করি।’
৫ জুন 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' উপলক্ষে বুধবার (২৫ জুন) বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রেআয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পরিবেশ রক্ষা করা নাগরিকদের নেতৃত্বাধীন একটি আন্দোলন হওয়া উচিত, কেবল সরকারের উপর নির্ভর করা নয়।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতনতার গুরুত্ব তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এটা আমার পরিবেশ। আমাকেই এটা রক্ষা করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমরা যদি বেঁচে থাকতে চাই—তাহলে আমাদের পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।’
তিনি বলেন, সারা দেশে ব্যাপক বৃক্ষরোপণের প্রচারণার মতো গাছ কাটা বন্ধ করতে একটি অভিযান চালানো উচিত।
নতুন প্রজন্ম ঢাকার কাছাকাছি দূষণমুক্ত নদী এবং সবুজ বন দেখতে পাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক ইউনূস।
তিনি বলেন, ‘তরুণরা আমাদের একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করেছে। এই তরুণ প্রজন্ম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সৃজনশীল শক্তি।’
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং পরিবেশকে দূষণ থেকে রক্ষা করতে তরুণ প্রজন্মকে কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান অধ্যাপক ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা দেশের সকল নাগরিককে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার বন্ধ করার আহ্বান জানান। বলেন, ‘আমাদের আত্ম-ধ্বংসাত্মক চিন্তাভাবনা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য পরিবেশের ক্ষতি করা যাবে না।’
প্লাস্টিক পণ্যের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য বর্ণনা করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে জনগণ যদি এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে পরিবর্তন করতে না চায়—তাহলে তাদের অবশ্যই পরাজয় বরণ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন বন্ধ করলে এর ব্যবহার এড়ানোর প্রশ্নই উঠবে না। এটাই মূল কারণ।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, মানুষ প্রকৃতিকে ধ্বংস করছে, কিন্তু তারা বুঝতে পারে না প্রকৃতিরও একটি ধ্বংসাত্মক রূপ রয়েছে।
গ্রহে প্লাস্টিকের বিরূপ প্রভাব তুলে ধরে তিনি বলেন, প্লাস্টিক জলবায়ু সংকট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকে ত্বরান্বিত করছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সঠিক প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনার অভাবে দেশের জলাশয় এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।
প্রকৃতিতে প্লাস্টিকের স্থায়িত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, সবকিছুরই একটি আয়ু আছে কিন্তু প্লাস্টিক এমন একটি জিনিস যার কোনো মৃত্যু নেই।
মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্ষতিকারক প্রভাব তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা যদি প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ না করি—তাহলে ধ্বংস আমাদের পিছু ছাড়বে না.....আমরা আত্মঘাতী পথে আছি, কারণ প্লাস্টিক এবং পলিথিনের নির্বিচার ব্যবহার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।’
অধ্যাপক ইউনূস জুলাইয়ের বিদ্রোহের শহীদদের স্মরণ করেন এবং আন্দোলনে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তোলা
অধ্যাপক ইউনূস অনুষ্ঠানে পরিবেশ মেলা-২০২৫' এবং 'জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০২৫' উদ্বোধন করেন।
তিনি পরিবেশ সুরক্ষা এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রাপকদের মধ্যে জাতীয় পরিবেশ পুরস্কার, জাতীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ পুরস্কার এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ পুরস্কার বিতরণ করেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং পরিবেশ সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
পরিবেশ মেলা ২৫ জুন থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত চলবে, আর বৃক্ষমেলা ২৪ জুলাই পর্যন্ত চলবে।
উভয় মেলাই প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
এ বছরের বৃক্ষরোপণ অভিযানের প্রতিপাদ্য হলো: ‘আসুন পরিকল্পিতভাবে গাছ লাগাই, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি’।
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনকে রক্ষায় সরকারের উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নির্মল পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ রেখে যাব।’
প্রধান উপদেষ্টা ২৫ জুন 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' উপলক্ষে এক বার্তায় এই মন্তব্য করেন, যা মূলত ৫ জুন পালিত হয় এবং প্লাস্টিক দূষণ রোধ করার উপায় বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সরকার পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পুনরুদ্ধারের জন্য পর্যটন সীমিত করার এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পরিবেশ সুরক্ষা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' পালিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত।’
তিনি বলেন, 'প্লাস্টিক দূষণের অবসান' প্রতিপাদ্যে এবারের জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) নির্ধারিত বিশ্ব পরিবেশ দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত দশকে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, প্লাস্টিক সামগ্রীর বহুমুখী ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, বিশেষ করে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অত্যধিক উৎপাদন, ব্যাপক ব্যবহার এবং অব্যবস্থাপনা পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমাদের পরিবেশ ও পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্লাস্টিক দূষণের কঠোর নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ করার জন্য দেশব্যাপী নিয়মিত পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
পলিথিন ব্যাগের পরিবেশবান্ধব বিকল্প উদ্ভাবন, অনুমোদন এবং প্রবর্তনের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ট্রান্সবাউন্ডারি প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং প্লাস্টিক বর্জ্য ও সামুদ্রিক আবর্জনার সুষ্ঠু ও পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এছাড়া, ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১’-এর আওতায় ইপিআর (বর্ধিত উৎপাদক দায়িত্ব) নির্দেশিকা প্রণয়নের কাজ চলছে, যেখানে উৎপাদনকারী নিজ দায়িত্বে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহপূর্বক তা ব্যবস্থাপনা করবেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলই বর্তমানে পরিবেশ ও প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন।
আরও পড়ুন: প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে জাতিসংঘ মহাসচিবের চুক্তির আহ্বান
১৬৩ দিন আগে
প্লাস্টিক পণ্য বর্জনের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক পদ্ধতি অনুসরণের আহ্বান সংশ্লিষ্টদের
রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের বাসিন্দা গোলাম রাব্বি তার এলাকায় স্বপ্ন সুপার শপের আউটলেটে কেনাকাটা করতে যান। প্রয়োজনীয় পণ্য নেওয়ার পর সেগুলোর মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে পণ্য বহনের পাটের ব্যাগের জন্য বাড়তি ১১ টাকা দেওয়া নিয়ে ক্যাশ কাউন্টারে দায়িত্বরত কর্মীর সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে যান তিনি।
গত ১ অক্টোবর থেকে সরকার সুপার শপে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পর থেকে এ ধরনের বিবাদ প্রায়ই দেখা যাচ্ছে।
শেষ পর্যন্ত ১১ টাকা দিয়ে পাটের ব্যাগ কেনা নিয়ে বিরক্ত হয়ে প্রায় ১৩০০ টাকা মূল্যের সামগ্রী না কিনেই আউটলেট ছেড়ে চলে যান রাব্বি।
বিক্রয়কর্মীরা সুপার শপগুলোতে সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী পলিথিনের ব্যাগ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি তাকে বুঝানোর চেষ্টা করলেও তিনি এ ব্যাখ্যা মানতে রাজি হননি।
সরকারি নিষেধাজ্ঞার পর থেকে সুপার শপগুলোয় পলিব্যাগের পরিবর্তে কাগজের ব্যাগে মাছ, মাংস ও অন্যান্য হিমায়িত পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। যা নিয়ে ক্রেতা-বিক্রয়কর্মীদের মধ্যে এমন ভুল বুঝাবুঝির ঘটনা অহরহ ঘটছে।
আরও পড়ুন: মাইক্রো প্লাস্টিক কী? কীভাবে এটি মানবদেহে প্রবেশ করে? কী কী প্রভাব ফেলে?
বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৮৭ হাজার টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়, যার বেশিরভাগই বর্জ্যে পরিণত হয়। এ কারণে সরকার মুদি ব্যাগ থেকে শুরু করে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার কমানোর চেষ্টার অংশ হিসেবে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে শুরু করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাস্টিক দূষণ বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ সমস্যায় পরিণত হচ্ছে। দেশের দ্রুত শিল্পায়ন ও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা বেড়েছে।
এছাড়াও অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অবকাঠামোও এর জন্য দায়ী। বিশেষ করে শহরাঞ্চল ও নৌপথে ব্যাপক প্লাস্টিক দূষণের কারণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ঠিকমতো না হওয়া।
এই সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক আদেশ অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৭টি খাতে 'সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক' (এসইউপি) অর্থাৎ এক বার ব্যবহার ব্যবহারের প্লাস্টিক পণ্য পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার জন্য গত ২৭ আগস্ট একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
প্রজ্ঞাপনে পরিবেশ সুরক্ষা ও দূষণ কমাতে অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যা ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা
বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ ইউএনবিকে বলেন, ১৭টি খাতে এসইউপি নিষিদ্ধ করার আদেশ জারির আগে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা প্রয়োজন। না হলে প্রায় ৬ হাজার শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে।
দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, 'সরকারি কর্মকর্তারা এর আগেও এ ধরনের বৈঠকে অংশ নিয়েছেন কিন্তু কোনো মাঠ পর্যায়ের গবেষণা ছাড়াই। ফলে তারা (কর্মকর্তারা) বুঝতে পারছেন না এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তটি ফলপ্রসূ হবে এবং প্লাস্টিক পণ্যের বিকল্প হিসেবে কি ব্যবহার করা যায়।’
সম্প্রতি জাপানে প্লাস্টিক পণ্যের একটি কর্মশালায় যোগ দিয়ে সিঙ্গাপুর সফর করেন শামীম আহমেদ।
তিনি বলেন, এশিয়ার উন্নত দেশগুলোও বাংলাদেশের মতো প্রতিটি ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যবহার করছে। কিন্তু তারা (জাপান ও সিঙ্গাপুর) শতভাগ প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে তা পুনর্ব্যবহার করে।
শামীম আহমেদ বলেন, অপর্যাপ্ত সরবরাহ, উচ্চমূল্য এবং প্লাস্টিকের বিকল্প উৎস পাওয়ার সক্ষমতার অভাবে জাপান ও সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত দেশগুলোও এখন পর্যন্ত প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহারে সফল হতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার দিকে মনোনিবেশ করছে, যা এখন পর্যন্ত একটি ভালো বিকল্প।
আরও পড়ুন: সরকারি অফিসে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহারের নির্দেশনা
রপ্তানিমুখী ও দেশীয় ভোগ্যপণ্যে প্লাস্টিক প্যাকেজিংয়ের উদাহরণ দিয়ে শামীম আহমেদ বলেন, আয়োডিনযুক্ত লবণ, ভোজ্যতেল ও তরল দুধের প্যাকেজিং প্লাস্টিক ছাড়া করা অসম্ভব।
২০২২ সালের ২ মার্চ জাতিসংঘের পরিবেশ পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবে বিশ্বব্যাপী সার্কুলার ইকোনমিতে প্লাস্টিকের অনুপাত বিবেচনায় কার্যকর পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থা তৈরির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ
প্লাস্টিক পণ্যের উপযুক্ত বিকল্প উদ্ভাবনের আগে পরিবেশ ও শিল্পকারখানা রক্ষায় প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ)। সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
এছাড়াও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত করা, বাস-রেল স্টেশন, পার্ক, ওয়াকওয়েসহ বিভিন্ন স্থানে প্লাস্টিক বর্জ্যের জন্য পর্যাপ্ত 'বিন' স্থাপনসহ একটি নির্দিষ্ট স্থানে প্লাস্টিক ফেলার বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দিয়েছে বিপিজিএমইএ।
শহরাঞ্চলে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট স্থাপনের বিষয়ে জানতে এবং ভর্তুকি হারে সরঞ্জাম পেতে স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটে (এলজিআই) যোগাযোগের কথা বলা হয়েছে।
টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্লাস্টিক সার্কুলারিটি চালু করা হবে যার মাধ্যমে অন্যান্য উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হবে। এর জন্য সরকারকে প্রযুক্তি সরবরাহ এবং কম হারে সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয় এমন শিল্পখাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্লাস্টিক উৎপাদন নিষিদ্ধ করা কোনো সমাধান নয়। তাই বাংলাদেশকে এই পদ্ধতিই অনুসরণ করতে হবে, নাহলে শিল্প ব্যবস্থা পরিচালনা করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়বে। যেমন- খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, ফার্মাসিউটিক্যালস প্যাকেজ, হাসপাতালের সরঞ্জাম, কৃষি আধুনিকায়ন ও রপ্তানি প্যাকেজিং খাতগুলো প্লাস্টিক পণ্য ছাড়া চলবে না। প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করলে এসব শিল্পে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।
প্লাস্টিকসংশ্লিষ্ট শিল্পের পরিসংখ্যান
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী,
সিরিয়াল নং
শিল্পের ধরন
শিল্পের সংখ্যা
উৎপাদন মূল্য (টাকা)
১
খাদ্যপণ্য
৯৩৯৭
১২৬৩৭৪৭ মিলিয়ন টাকা
২
পানীয়
৩৭
১২৩৩৩০ মিলিয়ন টাকা
৩
তামাকজাত দ্রব্য
১৮১
২৮৬১৭১ মিলিয়ন টাকা
৪
রাসায়নিক ও রাসায়নিক পণ্য
২৫১
১২১৫২৬ মিলিয়ন টাকা
৫
ফার্মাসিউটিক্যালস, ঔষধি রাসায়নিক ও বোটানিক্যাল পণ্য
১৪৯
২৬৮৬২৪ মিলিয়ন টাকা
৬
রাবার ও প্লাস্টিক পণ্য
৯৪৩
৬৬১৪৬৯ মিলিয়ন টাকা
যা বলছেন পলিথিন বা প্লাস্টিক পণ্যের গ্রাহকরা
শীর্ষস্থানীয় ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার বাংলাদেশ এসইউপি পণ্যের বড় ক্রেতা। কোম্পানিটি বাংলাদেশে ও বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমেই পণ্য বাজারজাত করে থাকে।
ইউনিলিভার প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানি না হলেও তাদের পণ্যগুলো একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের প্যাকেট বা বোতলে বাজারজাতকরণ করে থাকে তারা।
ইউনিলিভারের ডিরেক্টর অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স শামীমা আক্তার ইউএনবিকে বলেন, প্লাস্টিক পণ্য বর্জনের প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
আরও পড়ুন: পলিথিন নিষিদ্ধের পক্ষে ক্রেতারা, বিকল্প নিয়ে শঙ্কা
এই ফেজ-আউট পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পণ্যের সচেতনতা ও অগ্রাধিকারের জন্য এ খাতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপের ওপর জোর দেন তিনি।
শামীমা আক্তার বলেন, ইউনিলিভার বাংলাদেশে প্রায় ১৩ লাখ দোকান মালিকের কাছে পণ্য বিক্রয় করে থাকে। পণ্যের গুণমান নিশ্চিত করার কথা বিবেচনা করে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করে তাদের বিপুল সংখ্যক পণ্য বাজারজাত করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘যদি প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে সাশ্রয়ী ভালো মানের কোনো প্যাকেজিং সিস্টেম তৈরি করা হয় তাহলে ইউনিলিভার সেটি ব্যবহার করতে আগ্রহী। সে পর্যন্ত প্লাস্টিক প্যাকেজিংয়ের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে গবেষণার ওপর জোর দিয়ে শামীমা আক্তার বলেন, এর কোনো বিকল্প বিবেচনা করার বদলে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার ওপর মনোনিবেশ করা উচিত।
আরও পড়ুন: পরিবেশ রক্ষায় পলিথিন ও এসইউপির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সরে আসা সময়ের দাবি: উপদেষ্টা
৪১৪ দিন আগে
শাবিপ্রবিতে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে সচেতনতার আওয়াজ
পরিবেশ দূষণরোধে প্লাষ্টিকের যথাযথ ব্যবহারে উদ্দেশ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুইডেন অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের সহযোগিতায় সারাদেশের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শাবিপ্রবিতে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে এ ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইভেন্ট রিপ্রেজেন্টটেটিভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ক্যামিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড পলিমার সাইন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শফিউল হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যামিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড পলিমার সাইন্স বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাসহ অন্যান্যরা অংশ নেন।
আরও পড়ুন: করোনার ছুটি শেষে শাবিপ্রবিতে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা: মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে থাকছে নজরদারিকর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর কবীর, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো.শফিকুল ইসলাম, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ড. সুব্রত সরকার, প্রভাষক মিজানুর রহমান, প্রভাষক সাজ্জাদুর রহমান প্রমুখ।অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিংশ শতাব্দীকে বলা হয় প্লাস্টিকের যুগ। এই প্লাস্টিক একটি অপচনশীল উপাদান। বর্তমানে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের সামগ্রী শেষ গন্তব্য হয় জলাধারে, নদী আর মহাসাগরে যা জলজ প্রাণীর ওপর ভয়ংকর প্রভাব ফেলছে। প্রকৃতির জন্য, জীববৈচিত্র্যের জন্য, সর্বোপরি মানুষের শরীরের জন্য প্লাস্টিক কতটা ক্ষতিকর নিত্যনতুন গবেষণায় তা বেরিয়ে আসছে। পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের দ্বারা পরিবেশের ক্ষতি যাতে না হয় এইজন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
আরও পড়ুন: ‘ব্যক্তিগত হতাশা’: শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
১৪৭১ দিন আগে