কুড়িগ্রাম
বাঁশের সরু সাঁকোই আট গ্রামের মানুষের ভরসা
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে আটটি গ্রামের ১০ হাজারের বেশি মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে একটি সরু বাঁশের সাঁকো।
উপজেলার ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের নীলকমল নদীর ওপর নির্মিত এই সাঁকো ব্যবহার করছেন বালাটারী, চন্দ্রখানা, জেলেপাড়া, কুমারপাড়া, বামনটারী, আবাসন, বৈরাগিপাড়া ও দাশিয়ারছড়ার মানুষ। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয়রা জানান, গত তিন বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে তারা প্রতিদিন এই সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছেন। আগে এখানে একটি কাঠের সেতু ছিল, কিন্তু সেটি ভেঙে যাওয়ার পর এ দুর্ভোগ শুরু হয়। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজন এসে আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
তাদের অভিযোগ, এ ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো থেকে পড়ে অনেকেই আহত হয়েছেন। এক যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণও হারিয়েছেন। তারপরও নিরুপায় গ্রামবাসী প্রতিদিন সাঁকোটি ব্যবহার করছেন। তবে ভারী মালপত্র আনা-নেওয়ার জন্য তাদের নৌকার ওপর নির্ভর করতে হয়।
আরও পড়ুন: ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় চট্টগ্রামের মেগা সড়ক প্রকল্পে বিলম্ব
৬০ বছর বয়সী কৃষক এহসান আলী জানান, এক বছর আগে তার ছেলে আতিকুর রহমান (৩৬) সাঁকো থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন এবং এক মাস চিকিৎসার পর মারা যান।
কান্নাজড়ানো কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও দুইবার এই সাঁকো থেকে পড়ে আহত হয়েছি। প্রতিবার শুধু প্রতিশ্রুতি পাই, সেতু পাই না। কবে নীলকমলের ওপর একটি সেতু হবে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।’
৮৯ দিন আগে
রৌমারীতে অটোভ্যানের চাকার নিচে পড়ে প্রাণ গেল শিশুর
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে অটোভ্যানের চাকার নিচে পড়ে মো. রায়হান ওরফে রাহাব (৪) নামের এক শিশু নিহত হয়েছে।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার কাশিয়াবাড়ি গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত রাহাব রৌমারী উপজেলার কাশিয়াবাড়ি গ্রামের মো. রফিকুল ইসলামের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, রাহাব বাড়ির উঠানে খেলছিল। একপর্যায়ে সে রাস্তার দিকে চলে গেলে চলন্ত একটি অটোভ্যানের চাকায় পিষ্ট হয়। এতে সে গুরুতর আহত হয়।
আরও পড়ুন: হানিফ ফ্লাইওভারে বাসের নিচে সিএনজি, নিহত ২
স্থানীয়রা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে রৌমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম মলিক ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পরিবারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে একটি অপমৃত্যু মামলা (ইউডি) করা হয়েছে।
৯০ দিন আগে
কুড়িগ্রামে ৬২৯ কোটি টাকার ধরলা প্রকল্পে ধস, আতঙ্কে হাজারো পরিবার
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব গ্রামে ধরলা নদীর তীরে নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। এতে বিপর্যয়ের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন আশপাশের বাসিন্দারা।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) রাত থেকে প্রায় ৩৫০ মিটার দীর্ঘ বাঁধটির ৩০ মিটার অংশে একের পর এক সিসি ব্লক ধসে পড়ছে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে সহস্রাধিক পরিবার ও কয়েক হাজার হেক্টর আবাদি জমি।
স্থানীয়রা জানান, একের পর এক সিসি ব্লক দেবে যেতে দেখে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। বাঁধ রক্ষায় জরুরি ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও অবহেলার কারণে বারবার এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িকভাবে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, ডাম্পিং জোনে পর্যাপ্ত সিসি ব্লক ফেলা হয়নি। ফলে পানির প্রবল স্রোত বাঁধটিকে আঘাত করছে এবং ধসের ঝুঁকি বাড়ছে।
সারডোব গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই বাঁধ আমাদের রক্ষার কবচ। ধসে গেলে কয়েক হাজার হেক্টর আবাদি জমি ও সহস্রাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ২০২২ সালের বন্যার ক্ষতি আমরা এখনও সামলে উঠতে পারিনি। এবার যদি বাঁধ ভেঙে যায়, গ্রামটি পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।’
কৃষক আব্দুল হোসনের অভিযোগ করে বলেন, ‘বাঁধের কাজে অনিয়ম হয়েছে। প্রয়োজনীয় সিসি ব্লক না ফেলার কারণে বাঁধ এখন স্রোতের আঘাত সহ্য করতে পারছে না। বাঁধটি যদি রক্ষা না হয়, আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।’
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মুন্না হক বলেন, ‘উজানে চর জেগে ওঠায় নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে স্রোত সরাসরি বাঁধে আঘাত করছে। এ কারণে বাঁধের কিছু অংশ দেবে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আপাতত জিও ব্যাগ ফেলছি। পানি কমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করা হবে।’
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান জানান, ধসে যাওয়া প্রকল্প এলাকায় রংপুরের ঠিকাদার হাসিবুল হাসান কাজ করেছেন, তবে কাজ হস্তান্তর হয়নি। বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সম্পূর্ণ দায়ভার ঠিকাদারকেই নিতে হবে।
তিরি আরও বলেন, ‘আমরা সর্বদা বাঁধটির ওপর নজর রাখছি। আপাতত জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষা করা হচ্ছে। পানি নেমে গেলে নিয়ম অনুযায়ী মেরামত করা হবে।’
আরও পড়ুন: কাজ শেষ হওয়ার আগেই রংপুরে নদী তীর রক্ষা বাঁধে ধস
কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য ২০২০ সালে ৬২৯ কোটি টাকার ‘ধরলা প্রকল্প’ হাতে নেওয়া হয়। এর আওতায় ২০ কিলোমিটার ২৯০ মিটার নদীতীর সংরক্ষণ, ১৭ কিলোমিটার ৯০০ মিটার বিকল্প বাঁধ নির্মাণ এবং ১৪ কিলোমিটার ৮৮৯ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এই প্রকল্পের ফলে প্রায় ২২ হাজার ৪০০ পরিবার, ৫০টি হাট-বাজার, ৩০টি নৌ-ঘাট ও ১০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবে সারডোব গ্রামের বাঁধে নতুন করে ধসের শঙ্কা প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রশ্ন তুলছে।
৯৫ দিন আগে
বহুল প্রতীক্ষীত তৃতীয় তিস্তা সেতু চালু হচ্ছে আজ
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে তিস্তাপাড়ের মানুষের। আজ বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হতে চলেছে বহুল প্রত্যাশিত তৃতীয় তিস্তা সড়ক সেতু।
এর আগে পাঁচ দফা সময়সীমা পেছালেও অবশেষে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। প্রায় দেড় কিলোমিটার (১.৪৯ কিলোমিটার) দীর্ঘ এই সেতুটি কুড়িগ্রামের চিলমারী এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মানুষের বহুকালের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে নির্মিত এ সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৬৭ কোটি টাকা। আর সংযোগ সড়ক, নদীশাসন, কালভার্ট ও জমি অধিগ্রহণে খরচ হয়েছে আরও ৩৬৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। তিস্তা নদীর বুকে এটি হলো তৃতীয় সড়ক সেতু। তবে ধৈর্ঘ্যে এই সেতুটিই সবচেয়ে বড়।
প্রথম তিস্তা সড়ক সেতুটি নির্মিত হয় ২০১২ সালে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা এলাকায়, যার দৈর্ঘ্য ৭৫০ মিটার এবং ব্যয় হয়েছিল ৮৭ কোটি টাকা। দ্বিতীয়টি নির্মিত হয় ২০১৮ সালে রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুরে। সেটির দৈর্ঘ্য ৮৫০ মিটার এবং ব্যয় হয়েছিল ১৩১ কোটি টাকা।
এবার চালু হতে যাচ্ছে সবচেয়ে আধুনিক তৃতীয় সেতুটি, যা উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।
এলজিইডি কার্যালয় সুত্র জানায়, এলজিইডির অধীনে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ইফাদের (ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট) অর্থায়নে এবং চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের মাধ্যমে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। শুরুতে ২০২৩ সালের জুনে শেষ করার কথা থাকলেও, নানা কারণে পাঁবার সময়সীমা পিছিয়ে অবশেষে এ বছরের আগস্টে শেষ হয় কাজ।
আরও পড়ুন: রংপুরে তিস্তা বাঁধে ধস, শঙ্কায় হাজারো পরিবার
সেতুটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে ২৯০টি পাইল, ৩০টি পিলার, ২৮টি স্প্যান এবং ১৫৫টি গার্ডার। উভয় প্রান্তে পানি নিষ্কাশনের জন্য তৈরি করা হয়েছে ১২টি ব্রিজ ও ৫৮টি বক্স কালভার্ট। পাশাপাশি ১৩৩ একর জমি অধিগ্রহণ করে নদীশাসনসহ মোট ৫৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
১০৭ দিন আগে
কুড়িগ্রামের বন্যাকবলিত চরাঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘গুচ্ছ বসতভিটা’
কুড়িগ্রামের বন্যাপ্রবণ নদ-নদীবিধৌত চরাঞ্চলে টিকে থাকার লড়াইয়ে নতুন করে আশার আলো জাগিয়েছে ‘গুচ্ছ বসতভিটা’। বন্যা মোকাবিলায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর তীরবর্তী চরবাসীর যৌথ উদ্যোগে গড়ে উঠছে এসব উঁচু বসতভিটা। প্রতিটি বসতভিটায় ৫ থেকে ১০টি পরিবার একসঙ্গে বসবাস করে যা বন্যার সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
সমতল থেকে ৮-১০ ফুট উঁচুতে গড়ে তোলা হচ্ছে এসব বসতভিটা। ১৫ থেকে ২৫ শতক জমিজুড়ে নির্মিত একেককটি গুচ্ছ বসতভিটা নির্মাণে খরচ পড়ে প্রায় ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
কুড়িগ্রামে বর্তমানে চরের সংখ্যা প্রায় ৪৬৯টি। এসব চরের অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে গুচ্ছ বসতভিটার এই অভিনব মডেল।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রাম–চিলমারী রেলপথ আধুনিকায়ন প্রকল্পে অগ্রগতি নেই
এ বিষয়ে চিলমারী উপজেলার চর মনতলার মিজানুর রহমান (৫৫) বলেন, ‘গত বছর আমরা দশটি পরিবার মিলে ২৫ শতক জমিতে গুচ্ছ বসতভিটা তৈরি করি। এতে খরচ হয়েছিল ৬০ হাজার টাকা। বন্যার সময় যখন চারপাশ ডুবে যায়, তখন আমাদের ভিটা নিরাপদ থাকে। আশেপাশের অনেক পরিবারও এসে তখন আশ্রয় নেয়।’
১১৭ দিন আগে
কুড়িগ্রাম–চিলমারী রেলপথ আধুনিকায়ন প্রকল্পে অগ্রগতি নেই
মাত্র ২৯ কিলোমিটার রেলপথ। কিন্তু এই পথ পাড়ি দিতেই সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা। কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী থেকে জেলা শহর কুড়িগ্রাম পর্যন্ত চলাচলকারী একমাত্র লোকাল ট্রেনটি প্রতিদিন মাত্র একবার চলাচল করে, তাও নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে। ভাঙাচোরা লাইনে ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ১০–১৫ কিলোমিটার, যেখানে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলে ৪০–৪৫ কিলোমিটার বেগে।
কুড়িগ্রাম–রমনা রেলরুটে কুড়িগ্রাম, পাঁচপীর, উলিপুর, বালাবাড়ী ও রমনা—এই পাঁচটি স্টেশন থাকলেও কার্যত রেলসেবার মান এখন নাজুক। চিলমারীর রমনা স্টেশনে প্রতিদিন শত শত যাত্রী ট্রেনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন।
৬৫ বছর বয়সী ট্রেনযাত্রী মফির উদ্দিন বলেন, ‘একসময় রমনা স্টেশন ছিল ব্যস্ততম। প্রতিদিন তিন জোড়া ট্রেন চলত। এখন কখনো চলে, কখনো চলে না। তবুও অপেক্ষা করি, কারণ ট্রেনেই সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও নিরাপদ যাতায়াত হয়।’
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘চিলমারী নদীভাঙন ও দারিদ্র্যপীড়িত এলাকা। এখানকার অনেক মানুষ কুড়িগ্রাম বা অন্য শহরে গিয়ে দিনমজুরির কাজ করেন। স্বল্প খরচে যাতায়াতের জন্য ট্রেনই তাঁদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু রেললাইন এত খারাপ যে যাতায়াত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।’
আরও পড়ুন: রেলপথ হবে পরিকল্পিত ও লাভজনক, রেশনালাইজেশন হবে গবেষণার ভিত্তিতে: শেখ মইনউদ্দিন
তিনি আরও বলেন, ‘রেলপথ পুনর্বাসনের একটি প্রকল্প শুরু হলেও কার্যত কোনো অগ্রগতি নেই। দুদফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও কাজ হয়নি। চিলমারীকে বরাবরই অবহেলিত রাখা হচ্ছে। আমরা আর বৈষম্য চাই না।’
চিলমারী নৌবন্দরকেন্দ্রিক যাত্রীচাপের কথাও তুলে ধরেন সালাম। ‘প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই বন্দরে আসা–যাওয়া করেন। রেলসুবিধা উন্নত করা গেলে তাঁদের বড় উপকার হতো,’ বলেন তিনি।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, চিলমারী–কুড়িগ্রাম রেলপথ পুনর্বাসন ও আধুনিকায়নের জন্য ২০২৩ সালে দুটি পৃথক প্যাকেজে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কুড়িগ্রাম–উলিপুর ১৯ কিলোমিটার অংশের ব্যয় ধরা হয় ২৯ কোটি টাকা এবং রমনা–উলিপুর ১০ কিলোমিটার অংশে ব্যয় ধরা হয় ৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
প্রকল্পের আওতায় মাটি ভরাট, প্রটেকশন ওয়াল নির্মাণ, নতুন রেললাইন ও স্লিপার বসানো এবং ১২টি সেতু–কালভার্ট সংস্কারের কথা ছিল। কাজ শুরুর সময় ছিল ২০২৩ সালের নভেম্বর এবং শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের জানুয়ারি। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন এবং সর্বশেষ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা বিশ্বাস কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ম্যানেজার রুবেল ইসলাম বলেন, ‘আর্থিক সংকটে ভুগছি। রেলওয়ের কাছ থেকে আমাদের কাজের অর্ধেক বিল এখনো বকেয়া। ফলে প্রয়োজনীয় মালামাল কিনতে পারছি না, কাজও এগোচ্ছে না।’
তিনি জানান, ‘কুড়িগ্রাম–উলিপুর অংশে প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও রমনা–উলিপুর অংশে কাজ হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। আমরা যদি সম্পূর্ণ বিল পেতাম, তাহলে দ্রুত কাজ শেষ করা সম্ভব হতো।’
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী শিপন ইসলাম বলেন, ‘ঠিকাদার আর্থিক সংকটে থাকায় প্রকল্পের অগ্রগতি হয়নি। তাঁদের বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। আমরা উপরের দপ্তরে জানিয়েছি, যাতে বিল অনুমোদন হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘রেলপথটির পুনর্বাসন শেষ হলে চিলমারী–কুড়িগ্রাম রুটে দ্রুত গতিতে ট্রেন চালানো যাবে এবং নতুন ট্রেনও যুক্ত করা সম্ভব হবে। চলতি বছরের মধ্যেই প্রকল্প শেষ করার চেষ্টা চলছে।’
১২২ দিন আগে
কুড়িগ্রামে ড্রাম ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশার চালকসহ নিহত ২, আহত ৩
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে ড্রাম ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশা উল্টে অটোচালকসহ দুইজন নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন আরও তিনজন।
রবিবার (১২ জুলাই) দুপুরে উপজেলার ঘুন্টিঘর নামক স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন— পাইকেরছড়া ইউনিয়নের অটোচালক বানু মিয়া (৩০) ও রায়গঞ্জ ইউনিয়নের আনিকা (১২)।
আহতরা হলেন— রতনপুরের আবুবকর সিদ্দিক (৩৮), তার স্ত্রী মোর্শেদা বেগম (৩৫) ও ফাতেমা (৯)। তাদের ভূরুঙ্গামারী হাসপাতাল থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে বলে জান গেছে।
জানাগেছে, আজ (রবিবার) দুপুরে সোনাহাট থেকে যাত্রী নিয়ে একটি অটোরিকশা ভূরুঙ্গামারী আসার পথে ঘুন্টিঘর নামক স্থানে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ড্রামট্রাক অটোকে ধাক্কা দিলে অটো উল্টে ঘটনা স্থলেই আনিকার মৃত্যু ঘটে।
আরও পড়ুন: রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
এরপর সঙ্গে সঙ্গে অটোচালক বানু মিয়াকে ভূরুঙ্গামারী হাসপাতালে নিয়ে গেল চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারও মৃত্যু হয়।
ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল হেলাল মাহমুদ জানান, দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই একজন মারা গেছে এবং অটোচালক চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছেন। ঘাতক ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা চলমানন বলেও জানান ওসি।
১৪৪ দিন আগে
ধরলার ভাঙনে নিঃস্ব অর্ধশতাধিক, ঝুঁকিতে আরও পাঁচ শতাধিক পরিবার
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চরগোরকমন্ডল এলাকায় ধরলার তীব্র ভাঙনে অর্ধশতাধিক পরিবারের ঘরবাড়িসহ শত শত বিঘার ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই আগে থেকে ঘরবাড়ি অন্য এলাকায় সরিয়ে নিচ্ছেন।
এ ছাড়া বাড়িঘর, ভিটামাটিসহ শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন আরও পাঁচ শতাধিক পরিবার। ধরলার ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে টেকসই তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শেষ সম্বল ঘরবাড়ি ও ভিটেমাটিটুকু নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন চরগোরকমন্ডল গ্রামের বাসিন্দা আলা-বকস (৬৫)। ভাঙতে ভাঙতে ধরলা নদী তার বাড়ির কাছে এসে পড়েছে। আগ্রাসী ধরলার কবল থেকে ঘরবাড়ি রক্ষা করতে ইতোমধ্যে অন্য জায়গায় চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছের তিনি। কিন্তু নতুন জায়গায় নতুন করে ঘর তুলতে গেলেও তো টাকা লাগে। তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটছে এই বৃদ্ধের।
আলা-বসক বলেন, ‘কী কই বাহে! ৬৫ বছর বয়সে কমপক্ষে পাঁচবার বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাড়িঘর, জমিজমা হারিয়ে পথে বসেছি। আমার নিজস্ব জমি না থাকায় গত চার বছর ধরে মানুষের জমিতে ঘরবাড়ি করে স্ত্রীসহ অতিকষ্টে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। কিন্তু ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাস! ধরলার তীব্র ভাঙন আবারও বাড়ির কাছেই চলে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমার শ্যালকের জমিতে বসবাস করার জন্য ঘরবাড়ি সরানোর কাজ শুরু করেছি। কিন্তু টাকার অভাবে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।’
আরও পড়ুন: ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭ স্থানে ভাঙন, ৩৫ গ্রাম প্লাবিত
একই এলাকায় জহুরুল ইসলাম (৩৫) ও তার স্ত্রী মাহমুদা বেগম বলেন, নদী ভাঙতে ভাঙতে একেবারে আমাদের বাড়ির পাশে চলে এসেছে। বাড়ি থেকে এখন নদীর দূরত্ব ২০ গজ। যেকোনো মুহূর্তে আমাদের বাড়িঘর সব নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
তারা আরও জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে ধরলার ভাঙন ঠেকাতে না পারলে অনেক পরিবার পথে বসে যাবে।
১৪৬ দিন আগে
সাঁকো ভেঙেছে এক মাস, সাঁতরে নদী পার হচ্ছে ৮ গ্রামের মানুষ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নে বারোমাসিয়া (বাণিদাহ) নদীর ওপর ২২০ ফুট লম্বা বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দুই পাড়ের অন্তত আট গ্রামের মানুষ। প্রায় এক মাস ধরে কেউ এক বুক পানি মাড়িয়ে, কেউবা সাঁতরে নদী পার হচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন শিশু, নারী ও শিক্ষার্থীরা। এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে ভাঙা সাঁকোটি দ্রুত পুনর্নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত শিমুলবাড়ীর বারোমাসিয়া (বাণিদাহ) নদীর নবিউলের ঘাট বা আমিন মেম্বারের ঘাট এলাকায় ২২০ ফুট লম্বা বাঁশের সাঁকোটির দক্ষিণ দিকে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ফুট দীর্ঘ অংশ ভেঙে পড়েছে। ফলে দুপাড়ের বাসিন্দাদের কেউ কেউ এক বুক পানি পাড়ি দিয়ে হেঁটে পার হচ্ছেন, অনেককে আবার সাঁতরিয়েও নদী পারাপার হতে দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতার পর থেকে বারোমাসিয়া নদীটি তারা পাড়ি দিয়ে আসছিলেন ছোট ছোট ডিঙি ও মাঝারি নৌকা দিয়ে। সেই সময় থেকে করিমের, নবিউলের এবং সর্বশেষ আমিন মেম্বারের ঘাট ইজারাদারের মাধ্যমে পারাপার হতো দুপাড়ের মানুষ। পরবর্তীতে নদীর আকার ছোট হয়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ বছর ধরে ওই সাঁকোটিই ছিল তাদের পারাপারের একমাত্র উপায়।
তবে বর্ষাকালে নদীর স্রোতের কথা মাথায় রেখে বৃষ্টির মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই সাঁকোটির মেরামত করা হয়ে থাকে। এ বছরও সেই প্রস্তুতি ছিল, কিন্তু মাসখানেক আগে তীব্র স্রোতের কারণে সাঁকোর নিচে জমে থাকা কচুরিপানার চাপে সেটি ভেঙে পড়ে।
তারপর থেকে চরম বিপাকে পড়েছেন নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত শিমুলবাড়ী, চরগোরকমন্ডল, ঝাঁউকুটি, পশ্চিম ফুলমতি ও নাওডাঙ্গা; শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের হকবাজার এবং পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাহাট ইউনিয়নের চরখারুয়া ও খারুয়াসহ ৮ গ্রামের হাজারো মানুষ।
আরও পড়ুন: পুকুরে যেতে কৃষকের সর্বনাশ করে রাস্তা বানালেন মেম্বার
১৬৭ দিন আগে
কুড়িগ্রামে ট্রাক্টরচাপায় ২ বোন নিহত
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় রাস্তা পারাপারের সময় ট্রাক্টরচাপায় দুই নারী নিহত হয়েছেন।
বুধবার (১৮ জুন) রাত ৮টার দিকে কুড়িগ্রাম-রংপুর সড়কের কাঁঠালবাড়ী ডিগ্রি কলেজের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন— ছিনাই ইউনিয়নের মৃত রহমতের স্ত্রী রোকেয়া ও কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের আগমনী এলাকার আমজাদের স্ত্রী পারভীন। নিহতরা আপন বোন বলে জানা গেছে।
কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল্লাহ এ দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন: গাংনীতে সড়ক দুর্ঘটনায় এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত, আহত ২
তিনি জানান, নিহত রোকেয়া ও পারভীন কাঁঠালবাড়ী ডিগ্রি কলেজের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় কাঁঠালবাড়ীগামী দ্রুতগতির একটি ট্রাক্টর তাদের চাপা দিয়ে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা তাদের কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি আরও জানান, ট্রাক্টরটি নিয়ে চালক পালিয়ে গেছেন। এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
১৬৯ দিন আগে