ব্লিংকেন
'দ্রুত আঞ্চলিক নেতা হয়ে উঠছে' বাংলাদেশ: ব্লিংকেন
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন বলেছেন, বাংলাদেশ দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি, ক্রমবর্ধমান সুশিক্ষিত জনশক্তি এবং একটি গতিশীল যুব জনসংখ্যার সঙ্গে ‘দ্রুত আঞ্চলিক নেতা হয়ে উঠছে’।
ব্লিংকেন বলেন, তিনি আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব আরও গভীর করতে আগ্রহী।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিবৃতিতে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘এই যুগের সংজ্ঞায়িত ইস্যুতে আমাদের সহযোগিতার কারণে আমেরিকান ও বাংলাদেশিরা একসঙ্গে আরও শক্তিশালী।’
ব্লিংকেন বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব ও গত পাঁচ দশকে অর্জিত অর্জনে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত।
আরও পড়ুন: ব্লিংকেনকে লেখা চিঠিতে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার প্রত্যয় ঢাকার
তিনি বলেন, ‘অতি সম্প্রতি, আমরা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং একটি মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রচারের জন্য একসঙ্গে সত্যিকারের অগ্রগতি অর্জন করেছি। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা সকলের জন্য উন্মুক্ত।’
গণতান্ত্রিক রীতিনীতি, সুশাসন, মানবাধিকার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে ব্লিংকেন বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন বাংলাদেশ তার বিশাল সম্ভাবনা অর্জন করবে।
তিনি বলেন, ‘আপনারা যখন আপনাদের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছেন, তখন বাংলাদেশের গর্ব করার অনেক কারণ রয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের উদারভাবে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য তার মানবিক অঙ্গীকার প্রদর্শন করেছে।’
ব্লিনকেন বলেন, জলবায়ু সংকটে অভিযোজন কৌশল প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিবেশ রক্ষা এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা জোরদারে নেতৃত্ব দেখিয়েছে।
আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়ে ব্লিংকেনকে চিঠি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
ব্লিংকেনকে লেখা চিঠিতে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার প্রত্যয় ঢাকার
গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের উন্নয়নে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছে, আমাদের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় জাতি হিসেবে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছি আমরা।
রবিবার ওয়াশিংটনের একটি কূটনৈতিক সূত্র ইউএনবিকে জানিয়েছে, ২৪ ডিসেম্বর পাঠানো এই চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেনকে বড়দিন ও ২০২২ সালের ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এর পাশাপাশি গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার, সংখ্যালঘু ও শ্রম অধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান জানিয়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পর্যালোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
চিঠিতে এ কে আব্দুল মোমেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের মূল ভিত্তি। ১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার যখন জনগণের দাবি ও নির্বাচনের ফলাফল উপেক্ষা করেছিল; তখন বাঙালি তার গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারকে সমুন্নত রাখতে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। এই আদর্শকে ঘিরে ঢাকা- ওয়াশিংটন অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব, নিরাপত্তা সহযোগিতা ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগের বিকাশ ঘটেছে।
এসময় মোমেন আরও বলেন, দেশে ৪৩টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল, ৫৫০টি জাতীয় দৈনিক এবং হাজার হাজার অনলাইন সংবাদপত্রসহ বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চর্চাকারী দেশ। এসব গণমাধ্যম পূর্ণ স্বাধীনতার সঙ্গে কাজ করছে বলে সরকার মনে করে।
মোমেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান, বিস্তৃত ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগের ফলে দেশে তথ্যের প্রবাহ বাড়ানো হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কখনও কখনও যোগাযোগের এই অবাধ সুযোগের কারণে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা তৈরি করে। এমনকি তা অনেক সময় জনগণের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার জন্যও হুমকি হয়ে যায়।
মোমেন আরও জানান, সাইবার হামলা, মানহানি ও অপরাধীদের দ্বারা সাইবার ডোমেনের অপব্যবহার থেকে নাগরিকদের সুরক্ষিত রাখতে দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন চালু রয়েছে। আইনটি আমাদের সকলের জন্য নিরাপদ ও প্রয়োজনীয়। এর ফলে সাইবারস্পেস ব্যবহার করা এখন অনেক বেশি নিরাপদ।
আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়ে ব্লিংকেনকে চিঠি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
তবে, এই আইনের কিছু বিধানের বিষয়ে আমাদের অংশীদারদের মতামত সম্পর্কেও আমরা সচেতন। এবিষয়টি সমাধানে বাংলাদেশ, জাতিসংঘ ও এর অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
সংখ্যালঘু পরিস্থিতি
ড.মোমেন বলেন, আপনারা হয়ত বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের ‘বানোয়াট ও ভিত্তিহীন’ গল্প শুনে ‘আশাহত’ হয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনকে জানান, বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার ধর্মনিরপেক্ষ সরকার। বর্তমান সরকার সব ধর্ম ও বিশ্বাসের মানুষকে স্বাধীনভাবে তাদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা ভোগের অধিকার নিশ্চিত করেছে। আমরা কখনই ধর্ম, জাতি বা বর্ণের ভিত্তিতে মানুষের প্রতি বৈষম্য করি না। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি- বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত অফিসারদের প্রায় সিংহভাগই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। যদিও দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৯শতাংশ মানুষ হিন্দু।
তিনি আরও বলেন, দেশের কিছু উগ্রপন্থী রাজনৈতিক দল ও মতাদর্শের মানুষ সরকারের এই ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি নিয়ে অসন্তুষ্ট।
আরও পড়ুন: এটি রাতারাতি সমাধান হবে না: মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
কুমিল্লা ও রংপুরের সাম্প্রতিক সংখ্যালঘু হামলার কথা উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, ধর্মের নামে এগুলো ধর্মান্ধতা ও উগ্রপন্থার বহিঃপ্রকাশ; দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে অস্থিতিশীল করার জন্য এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্য আমরা অত্যন্ত দুঃখবোধ করি।
শ্রম অধিকার
এছাড়াও চিঠিতে ব্লিংকেনকে দেশের শ্রম অধিকারের বিষয়ে সরকারের সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ সম্পর্কে জানিয়েছেন ড.মোমেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে মিলে দেশের শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নে আন্তরিকভাবে কাজ করছে। কয়েক মাস আগেই বাংলাদেশ ২০২১- ২০২৬ (অনুলিপি সংযুক্ত) সময়কালের মধ্যে বাংলাদেশের শ্রম খাত সংস্কারের ওপর একটি কর্মমুখী ও সময় সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ জমা দিয়েছে। বর্তমানে আমরা এই রোডম্যাপ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। এসব পদক্ষেপ অবশ্যই দেশে শ্রম অধিকারের প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষায় আমাদের সরকারের প্রতিশ্রুতির গুরুত্বকে প্রতিষ্ঠা করে।
আরও পড়ুন: বাঙালি জাতি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে জানে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়ে ব্লিংকেনকে চিঠি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর ‘নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার’ করার আহ্বান জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে. ব্লিংকেনকে চিঠি লিখেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
রবিবার ওয়াশিংটনের এক কূটনৈতিক সূত্র ইউএনবিকে এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়,আব্দুল মোমেন তার চিঠিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনকে বড়দিন ও ২০২২ সালের ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এর পাশাপাশি গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার, সংখ্যালঘু ও শ্রম অধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান জানিয়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পর্যালোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা আত্মবিশ্বাসী যে বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের মধ্যে হওয়া আন্তরিক সংলাপ পারস্পরিক সম্মান ও সুবিধার ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
আরও পড়ুন: এটি রাতারাতি সমাধান হবে না: মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিশ্চিত যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বিশ্বস্ত এবং অবদানকারী অংশীদার হিসেবে আমাদের জ্ঞান-ভিত্তিক, প্রযুক্তি-সচেতন ও উন্নত জাতি হিসেবে উদীয়মান হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে।
মোমেন বলেন, বছরের পর বছর ধরে র্যাব সরকারের সবচেয়ে দক্ষ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে সন্ত্রাস, মাদক পাচার, মানব পাচার এবং অন্যান্য আন্তদেশীয় অপরাধ দমনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। অপরাধ দমনে র্যাবের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নাগরিকদের মধ্যে অনেক বেশি আস্থা তৈরি করেছে।
মোমেন আরও জানিয়েছেন, র্যাব ও এর কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, নারীর প্রতি সহিংসতা, মাদক পাচার ও দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার প্রচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ সরকার তার 'জিরো টলারেন্স' নীতি অব্যাহত রাখবে।
ড. মোমেন মনে করেন, আমরা আমাদের জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করি এমন বিষয়গুলো মোকাবিলায় র্যাবের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা আমাদের উপকৃত করবে।
আরও পড়ুন: বাঙালি জাতি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে জানে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এছাড়াও চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর করা ফোনকলের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বলেন এই ধরনের খোলামেলা ও উন্মুক্ত আলোচনা সবসময় চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে সুসংহত করতে সহায়তা করে।
এসময় ড. মোমেন আবারও বলেন, র্যাবের ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা অপ্রত্যাশিত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য এই ঘোষণাটি ‘আকস্মিক’ ও ‘বিস্ময়কর’, কারণ এমন সময়ে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে; যখন দুই দেশই পারস্পারিক সম্পর্কের পাঁচ দশক উদযাপন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার সবসময় র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া মাত্র তার আইনানুগ বিচার করেছেন। এর জন্য কোনোভাবেই পুরো সংগঠনটির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেয়া যেতে পারে না।
ড.মোমেন তার চিঠিতে আরও জানিয়েছেন, বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত কিছু এনজিও তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাদের দেশের সরকার ও আরও বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে মিথ্যা, মনগড়া ও বিকৃত তথ্য প্রচার করে। যাতে করে বাংলাদেশের বন্ধু ও অংশীদারেরা বিভ্রান্ত হয়।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের মানবতার কথা নিয়ে প্রশ্ন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর