সহিংসতা
খাগড়াছড়িতে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ: চলছে অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধ, এলাকাজুড়ে থমথমে অবস্থা
স্কুলছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধ চলছে, বন্ধ রয়েছে সব ধরনের যানবাহন চলাচল। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া অবরোধকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংসতার পর এলাকাজুড়ে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, আতঙ্কে সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। কেউ বের হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশির মুখে পড়ছেন। এমনকি শহরতলীর দোকানপাটও খোলেনি।
আজ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। গতকাল (শনিবার) সড়কে পিকেটারদের দেখা গেলেও আজ তা চোখে পড়ছে না।
তবে জেলা শহরসহ আশপাশ এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী টহলের পাশাপাশি ৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।
এর আগে, শনিবার খাগড়াছড়ি পৌরসভা, সদর উপজেলা ও গুইমারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
আরও পড়ুন: খাগড়াছড়িতে চলমান অবরোধের মধ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি
খাগড়াছড়ির জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ি পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সিঙ্গিনালায় প্রাইভেট পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষণের শিকার হন ৮ম শ্রেণির এক ছাত্রী। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা করেন।
পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর সহায়তায় সন্দেহভাজন যুবক শয়ন শীলকে (১৯) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শয়ন শীলকে গ্রেপ্তার করা হলেও বাকি দুইজন এখনো পলাতক রয়েছে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্র জনতা ২৪ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে এবং পরদিন (২৫ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ি জেলায় অর্ধদিবস অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।
অবরোধে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সাজেকে প্রায় দুই হাজার এবং রাঙামাটি শহরে সহস্রাধিক পর্যটক আটকা পড়েন। আটকে পড়া পর্যটকদের রাতেই খাগড়াছড়িতে নিয়ে আসা হয়। তাদের অনেকেই ফিরে গেছেন গন্তব্যে।
৬৮ দিন আগে
গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক সমাবেশকে ঘিরে সহিংসতার তদন্তে কমিটি গঠন
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির পথসভাকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জের সদর উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, জেলা কারাগারসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, জানমালের ক্ষয়ক্ষতি ও নাগরিক নিরাপত্তা ব্যাহত হওয়ার বিষয় এবং অন্যান্য ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করবে এই কমিটি।
পড়ুন: এনসিপির পদযাত্রা ঘিরে সংঘর্ষ: গোপালগঞ্জে আরও দুই মামলা দায়ের
তদন্ত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি ও মুক্তিযোদ্ধা ড. মো. আবু তারিককে। এছাড়া কমিটির সদস্য রয়েছেন- স্বরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান, আইন ও বিচার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম, যশোরের ২১ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহীদুর রহমান ওসমানী, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক ও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক সরদার নূরুল আমিন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী।
কমিটিকে রাজনৈতিক সভায় আক্রমণ ও বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও সংগঠনের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ করবে কমিটি। আর কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।
তদন্ত কমিটি আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুস্পষ্ট মতামত ও সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
১৩৪ দিন আগে
দেশে বেড়েই চলেছে নারীর প্রতি সহিংসতা
সামাজিক প্রেক্ষাপট, বিচারহীনতাসহ নানা কারণে নারীরা নিপীড়িত বহুকাল ধরেই। তবে ২০২৩-২০২৪ এবং ২০২৫ এর মার্চ পর্যন্ত এই সংখ্যা বিশ্লেষণ করে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ার নতুন পরিসংখ্যান সামনে এসেছে। সেইসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের মতামত থেকে উঠে এসেছে নানা তথ্য।
সায়মা ছদ্মনাম (৩৬) নিয়মিত নির্যাতিত হচ্ছেন স্বামীর হাতে। তিনি বলেন, আমার স্বামী প্রতিদিন বাসায় এসে কারণে-অকারণে আমার গায়ে হাত তোলেন। আমি জানি, তার বিয়ে-বহির্ভূত সম্পর্ক আছে। তিনি মাসে দু-তিনবার বাসায় আসেন। কোনো দায়িত্ব পালন করেন না। আমার একটি ছোট চার বছরের মেয়ে আছে, তার দায়িত্বও পালন করেন না। সেগুলো নিয়ে কথা বললেই আমাকে অমানুষিকভাবে মারে।
পুলিশে অভিযোগ দেননি কেন—প্রশ্নে তিনি বলেন, এসবে মান-সম্মান থাকবে না। আমার পরিবারের কেউ জানে না; জানলে তারাও কষ্ট পাবে। তাছাড়া আমি চাকরি করি না। তাকে ছেড়ে কোথায় যাব, কী করব? এ সময় নিজের শরীরের ক্ষতগুলো দেখান এই নারী।
ডালিয়া (ছদ্মনাম) নামের ৩৮ বছর বয়সী আরেক নারী জানান, তিনি তার স্বামীর কাছে নিয়মিত নির্যাতিত হতেন। নির্যাতন মানে তো শুধু গায়ে হাত তোলা নয়, তিনি তাকে অকথ্য ভাষায় প্রয়োগও করতেন।
এই নারী বলেন, ‘আমি চাকরি করতাম না তবুও এসব অসম্মান সহ্য করতে না পেরে ৫ বছরের ছেলেকে নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে আসি। পরে অবশ্যই একটি চাকরি পাই। এখন একা থাকা ছাড়া তেমন কোনো কষ্ট নেই। সঙ্গে ছেলে আছে, তাকে নিয়ে ভালো আছি।’
বিগত কয়েক মাসে নারীর প্রতি এমন একাধিক সহিংসতার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এ সময়ে ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের অন্য ঘটনাও বেড়েছে।
আরও পড়ুন: ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করায় বিআরডিবি অফিসে তালাবদ্ধ নারী
পুলিশের অপরাধ পরিসংখ্যানের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের শেষ চার মাসে ৫ হাজার ৭৯৫টি নারী ও শিশু নির্যাতনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। সেখানে ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১৩টিতে।
২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে ১ হাজার ২৬৫টি, ফেব্রুয়ারিতে হয়েছে ১ হাজার ২৯৫, মার্চে ১ হাজার ৬৫২টি, এপ্রিলে ১ হাজার ৪৪৮টি, মে মাসে ১ হাজার ৮৬৭টি, জুন মাসে ১ হাজার ৮৩৩টি, জুলাই মাসে ১ হাজার ৭৯৪টি, আগস্ট মাসে ১ হাজার ৮৫১টি, সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ৬৯৯টি, অক্টোবরে ১ হাজার ৬২১টি, নভেম্বরে ১ হাজার ৪২৬টি এবং ডিসেম্বরে ১ হাজার ১৯৩টি।
২০২৪ সালে জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৩টি, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৩৭১, মার্চ মাসে ১ হাজার ৫০৯, এপ্রিল মাসে ১ হাজার ৬২৩, জুন মাসে ১ হাজার ৬৮৯টি, জুলাই মাসে ১ হাজার ৭০২ আগস্ট মাসে ১ হাজার ৭২, সেপ্টেম্বর মাসে ১ হাজার ৫৭৮, অক্টোবর মাসে ১ হাজার ৫৬০, নভেম্বর মাসে ১ হাজার ৪৫২ এবং ডিসেম্বর মাসে ১ হাজার ২০৫টি।
২০২৫ সালের, অর্থাৎ চলতি বছর মার্চ মাস পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ১ হাজার ৪৪০টি, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৪৩০টি এবং মার্চে তা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫৪টি। অর্থাৎ, মার্চ মাসে উল্লিখিত যেকোনো মাসের তুলনায় সবচেয়ে বেশি।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্য অনুসারে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে, বাংলাদেশে কমপক্ষে ১১ হাজার ৭৫৮ জন নারী ও মেয়ে শিশু নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ৬ হাজার ৩০৫ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় অ্যাসিড নিক্ষেপ, নারী-শিশুসহ দগ্ধ ৩
আরও আশঙ্কার বিষয় হলো, যাদের ধর্ষণ করা হয়েছে তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৪৭১ জনের বয়স ১৮ বছরের নিচে, যা মোট ঘটনার ৫৫ শতাংশেরও বেশি।
এর মধ্যে ১ হাজার ৮৯ জন নারী ও কন্যাশিশুকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে এবং ২০৭ জনকে যৌন সহিংসতার পর হত্যা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১১৮ জনই শিশু।
যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এ্যান্ড সার্ভিস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকারকর্মী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘হ্যারাসমেন্টের প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে যে প্রতি মাসে এক থেকে দেড় হাজারের বেশি নারী নির্যাতনের ঘটনা মিডিয়াতে আসে। কিন্তু এর পরিপ্রেক্ষিতে সাজা পাচ্ছেন কয়জন? আবার ভুক্তভোগীও যে সুরক্ষা পাচ্ছেন, সেই তথ্যও নেই।’
তিনি বলেন, নারী নির্যাতনকে রোধ করতে হলে আমাদের নারীর অধিকার সর্বস্তরে নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া নারী নির্যাতনকারী, বিদ্বেষী কর্মকাণ্ডকে সামাজিকভাবে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা নানা ধরনে, নানা আকারে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এগুলো যে আগেও ছিল না তা নয়। বছরের প্রথম তিন মাসে একরকম হলে শেষের তিন মাসে হয়তো কমত। তবে এখন সেটি বেড়েই চলেছে। এটি আতঙ্কিত হওয়ার মত বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘যে উপায়ে সহিংসতাগুলো হচ্ছে, তাতে নারী ও শিশুর সুরক্ষার প্রশ্নে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ ছাড়া দ্রুত বিচার না হওয়ার একটা সংস্কৃতি, নারী ও শিশুর প্রতি আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে পুরুষের যে দৃষ্টিভঙ্গি, সেখানে বিপরীত লিঙ্গ হিসেবে নারীর প্রতি একটা বিরুদ্ধ মনোভাব আছে যে নারীকে দমিয়ে রাখতে হবে।’
‘আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমাদের নারী ও শিশুর প্রতি যে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলো সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে না। আবার আইনে যে সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে, সেখানে বিচারের দীর্ঘসূত্রতাও তো আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সহিংসতা-পরবর্তী যে ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন একজন নারীকে সেই সুরক্ষা দেওয়া, সামাজিকভাবে আশ্রয় দেওয়া এবং ভুক্তভোগীর ক্ষমতায়ন—এগুলো থাকা দরকার। সেগুলো আমাদের দেশে নেই। এটি আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা।’
এই অধ্যাপকের মতে, যে নারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তিনি যদি প্রান্তিক পর্যয়ের হন, তাহলে তাকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কিন্তু সমাজে প্রতিষ্ঠিত কেউ সহিংসতার শিকার হলে তাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। এসব বিষয়ে আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে, সমাজকে বদলাতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
১৩৮ দিন আগে
গোপালগঞ্জে সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫
গোপালগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে রমজান মুন্সী (৩২) নামের আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ২টার দিকে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এর ফলে সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচজনে।
নিহত রমজান মুন্সী গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার থানাপাড়া এলাকার আকবর মুন্সীর ছেলে। রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, ঢামেকের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত আড়াইটার দিকে রমজানের মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশকে ঘিরে সংঘর্ষে নিহত ৩
রমজানের ভাই হিরা মুন্সী জানান, ঘটনার দিন (বুধবার) রিকশায় যাত্রী নামিয়ে সদর এলাকার সিনেমা হলের কাছ দিয়ে ফিরছিলেন তিনি। এ সময় তিনি সংঘর্ষের মাঝে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন। তার ডান হাতের কব্জির ওপর এবং ডান বগলে গুলি লাগে।
তিনি আরও জানান, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রথমে তাকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। এক দিন পরে ঢামেকে তার মৃত্যু হলো।
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা ও সমাবেশ ঘিরে মঙ্গলবার থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বুধবার গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে দফায় দফায় হামলার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। একপর্যায়ে পুরো শহরে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষের মধ্যে চারজন নিহত এবং অন্তত নয়জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। গুরুতর আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নিহতরা হলেন— শহরের উদয়ন রোডের সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (৩০), কোটালিপাড়ার হরিণাহাটি গ্রামের কামরুল কাজীর ছেলে রমজান কাজী (১৭), শহরের শানাপাড়ার সোহেল রানা (৩৫) এবং সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমন।
সংঘাতের শহরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বুধবার রাত থেকে কারফিউ জারি করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কারফিউয়ের মেয়াদ শুক্রবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
কারফিউ চলাকালে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শহরের বিভিন্ন স্থানে টহল দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জে কারফিউয়ের সময় বাড়ল
রাস্তাঘাটে জনসাধারণের চলাচল প্রায় নেই বললেই চলে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে না বের হতে অনুরোধ জানিয়েছে প্রশাসন।
এদিকে সহিংসতায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার।
১৪০ দিন আগে
শান্তিপূর্ণ কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয় ১১ জুলাই: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন এবং ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, ‘১১ জুলাই সেই দিন, যেদিন আমাদের শান্তিপূর্ণ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন পতিত স্বৈরাচার সরকার। সহিংসতার শুরুটা হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তাই '১১ জুলাইকে' আমি 'প্রথম প্রতিরোধ দিবস' ঘোষণা করছি।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত ২০২৪ সালের ১১ জুলাই কোটা প্রথার বিরুদ্ধে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধের ইতিহাস স্মরণে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার প্রথম প্রতিরোধ ১১ জুলাই’ শীর্ষক স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।
উপদেষ্টা আসিফ আরও বলেন, গত বছরের ১১ জুলাই যখন আমরা ঢাকায় আন্দোলন করছিলাম, তখন হঠাৎ করে শুনতে পারি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রুখে দাঁড়িয়েছিল। তারা কুমিল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের এই প্রতিরোধ সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার মানসিকতা তৈরি করেছিল। তাদের মনে সাহস দিয়েছিল। এরপর আবু সাঈদের মতো সাহসীরা বুক চিতিয়ে দিয়ে রক্ত দিয়ে আমাদের আন্দোলনকে স্বৈরাচার হটানোর আন্দোলনের দিকে ধাবিত করেন। তাই আপনাদের প্রতিরোধকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটাকে সাধুবাদ জানাই।
পড়ুন: ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিষয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
এসময় শিক্ষার্থীদের করা দাবির প্রেক্ষিতে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ঘোষণা দিয়ে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঠিক যে স্থানে কর্মসূচি পালন করেছিলেন সেখানে একটি প্রতিরোধ মিনার স্থাপন করা হবে। যাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করা মানুষ এই দিনটিকে স্মরণ রাখতে পারে। এটা আমাদের পক্ষ থেকে একটি ছোট উদ্যোগ৷ এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আপনারা যে দাবিগুলো করেছেন আমি তাদেরকে অনুরোধ করবো, তারা যেন সে দাবিগুলো রাখেন। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে৷ একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাস সংকটের একটি দাবি ছিল৷ আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি বাস উপহার দেওয়ার ঘোষণা করছি।
সবশেষে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাহসিকতার প্রশংসা জানিয়ে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাহসিকতা সারা বাংলাদেশের মানুষের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে৷ প্রয়োজনে আমরা আগামীতে এই সাহসিকতাকে স্মরণ রাখার জন্য আরও উদ্যোগ গ্রহণ করব৷
এর আগে, অনুষ্ঠানের শুরুর পূর্বে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরণে নির্মিত একটি বিশেষ স্মারক ফলক 'জুলাই মিনার' উন্মোচন করেন। পরে, জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে সভার অনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
পরে, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয় এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শুরুতে ১১ জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হামলার ঘটনা নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়।
এসময়, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে মঞ্চে বক্তব্য দেন ২৪’র জুলাই আন্দোলনে আহত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷ দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, '১১ জুলাই' দিনটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চান কুবির শিক্ষার্থীরা৷
এসময় স্মরণ সভায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম। অতিথিরাও তাদের বক্তব্যে ‘১১ জুলাই’ -কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান উপদেষ্টার কাছে।
পরে স্মরণ সভায় জুলাই আগষ্টে আন্দোলনে আহতদের সম্মাননা জানানো হয়। এসময়, স্মরণ সভায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
১৪৭ দিন আগে
নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে সোমবার মানববন্ধন করবে ছাত্রদল
ধর্ষণ, অনলাইনে হয়রানি ও নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে সোমবার সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন করবে বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
এই কর্মসূচির লক্ষ্য দেশে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির পাশাপাশি এই ধরনের অপরাধের শিকারদের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপক ঘাটতির প্রতিবাদ জানানো।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বলে সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলমের সেই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আরও পড়ুন: নেত্রকোণায় মাছ চুরি: ছাত্রদলের দুই নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩
এতে বলা হয়, নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন, ধর্ষণ ও অনলাইনে হয়রানির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলার সার্বিক অবনতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রতিবাদে সোমবার সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রদল।
ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ কর্মসূচি সফল করার জন্য দলের সকল সদস্য, নেতা-কর্মীকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
২৭১ দিন আগে
রবিবারের সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ৩৭ কলেজের শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা
পুরান ঢাকার বকশীবাজারের ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের আট হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
রবিবার(২৪ নভেম্বর) রাতে উপপরিদর্শক (এসআই) এ কে এম হাসান মাহমুদুল কবির বাদী হয়ে সূত্রাপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, তাদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর, দুই পুলিশ সদস্যকে আহত করা, একটি সশস্ত্র বাহিনীর গাড়ি ভাঙচুর ও একটি ম্যাগাজিন চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত ১৬ নভেম্বর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ডেমরার ডাক্তার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এইচএসসির ছাত্র অভিজিৎ হালদার হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। ১৮ নভেম্বর তিনি মারা যান।
এরপরই রবিবার হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে ভাঙচুর চালায় শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, যাত্রাবাড়ী-ডেমরায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
তাদের অভিযোগ, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের সমর্থন জানিয়ে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্ররা তাদের ওপর হামলা চালায়।
কলেজগুলো হলো- ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, ঢাকা কলেজ, ঢাকা আইডিয়াল কলেজ, সিটি কলেজ, গিয়াসউদ্দিন কলেজ, সরকারি তোলারাম কলেজ, ইম্পেরিয়াল কলেজ, বোরহানউদ্দিন কলেজ, বিজ্ঞান কলেজ, দনিয়া কলেজ, লালবাগ সরকারি কলেজ, উদয়ন কলেজ, আদমজী, নটরডেম, রাজারবাগ কলেজ, নূর মোহাম্মদ, মুন্সী আব্দুর রউফ কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী কলেজ, গ্রিন লাইন পলিটেকনিক, ঢাকা পলিটেকনিক, মাহবুবুর রহমান সাইন্স অ্যান্ড টিকনোলজী ইনস্টিটিউট, সহ রাজধানীর অন্যান্য কলেজ।
আরও পড়ুন: ডেমরায় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে আহত ৫০, কবি নজরুল কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
৩৭৫ দিন আগে
আশুলিয়ায় গুজব ছড়িয়ে সহিংসতা করা হয়েছে: শ্রম উপদেষ্টা
আশুলিয়ায় গুজব ছড়িয়ে সহিংসতা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
উপদেষ্টা বলেন, আশুলিয়ায় পোশাক কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে কাজ করে যাচ্ছিল।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, প্রথম থেকেই দেখছি, সুনির্দিষ্ট কিছু মানুষ উসকানি দিয়ে আসছে। রবিবারও যে ঘটনা ঘটেছে, সেটার মূল ঘটনা সবার জানা দরকার। একজন শ্রমিক সেখানে নিহত হয়েছেন, আমরা দুঃখিত। আমাদের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে ১৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘একটি গুজবের ভিত্তিতে রবিবার ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল। গুজব ছড়ানো হয়েছিল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একজনকে ধর্ষণ (রেপ) করেছে এবং দুইজনকে খুন করে লাশ ফেলে রেখেছে। এভাবে কারখানাগুলো থেকে শ্রমিকদের নামিয়ে আনা হয়েছিল’।
আরও পড়ুন: শ্রম-সংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন: শ্রম উপদেষ্টা
উপদেষ্টা আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি ভাঙচুরসহ তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে শ্রমিকরা। কিন্তু তখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের মধ্য থেকে অনুপ্রবেশকারী গুলি ছুড়েছিল প্রথম। প্রথম গুলিটি শ্রমিকদের ভেতর থেকে দুস্কৃতকারীরা ছুড়েছিল। সেখান থেকে গোলাগুলির সূত্রপাত হয়। দুঃখজনকভাবে সেখানে আমাদের একজন শ্রমিক নিহত হন। আরও সাতজন আহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও ১৩ সদস্য আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, আমরা এই পরিস্থিতি কখনোই চাই না, শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাই না। আশুলিয়ায় এতদিন ধরে আন্দোলন চলছে, সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রেখে এসেছে। মালিকদের সঙ্গে কথা বলে কীভাবে বেতন আদায় করা যায়, তারা সেই চেষ্টা করছে। সেনাবাহিনীও একই কাজ করেছে।
তিনি আরও বলেন, ২৪ সেপ্টেম্বর শ্রমিক-মালিকের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, যদি শ্রমিকদের বেতন না দেওয়া হয়, আমরা মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এ বিষয়ে সোমবার আলোচনা হয়েছে। যেসব কোম্পানির মালিক দীর্ঘদিন বেতন দিচ্ছেন না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আশুলিয়ার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই-তিনটি কারখানায় বেতন না হওয়ার কারণে সোমবার শ্রমিকরা বাইপাইলে সড়ক অবরাধ করেছেন। কারখানার মালিকদের খুঁজছি, কিন্তু তারা পলাতক। ব্যাংকেও তারা প্রচুর ঋণগ্রস্ত। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সেই আগের মতোই গুলি করে মানুষ হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুলিটা এসেছিল শ্রমিকদের ভেতরে অনুপ্রবেশ করা কারও পক্ষ থেকে। এরইমধ্যে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
আরও পড়ুন: কাজে যোগদান না করা পুলিশ সদস্যদের আইনের আওতায় আনা হবে: উপদেষ্টা
জুলাই-আগস্টে ঋণ গ্রহণের চেয়ে বেশি পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ: ইআরডি
৪৩০ দিন আগে
খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে: আইএসপিআর
খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আইএসপিআর চলমান উত্তেজনা প্রশমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে সম্প্রদায়ের নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।
আরও পড়ুন:জনগণের সঙ্গে অসদাচরণের জন্য দোষী সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: আইএসপিআর
এতে বলা হয়, এই অস্থিরতা তিন পার্বত্য জেলায় সহিংস দাঙ্গায় পরিণত হতে পারে। তাই তিন জেলার জনগণকে শান্ত থাকার এবং শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।
এর আগে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন ও রাঙামাটি জেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলাচল সীমিত করে।
গত বৃহস্পতিবার ও আজ শুক্রবার ভোরে খাগড়াছড়িতে সহিংস ঘটনায় ৩ জন নিহত ও ৯ জন আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: 'বৈঠকে তরুণ কর্মকর্তাদের অসন্তোষের মুখে সেনাপ্রধান,’ খবর প্রত্যাখান আইএসপিআরের
৪৪১ দিন আগে
বাংলাদেশিদের ওপর সকল প্রকার সহিংসতা নিন্দনীয়
বাংলাদেশে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সহিংসতা এবং দুর্দশার কথা উল্লেখ করে অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানিমন্ত্রী ক্রিস বোয়েন বলেছেন, এই কঠিন সময়ে আমাদের সমবেদনা সব বাংলাদেশির প্রতি রয়েছে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, 'সব ধরনের সহিংসতাকে ঘৃণা করতে হবে।
'আমি শুরুতেই বলেছি, সব বাংলাদেশির ওপর সব ধরনের সহিংসতার নিন্দা জানাতে হবে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের ওপর হামলার বিষয়টি উত্থাপনের জন্য তিনি এই সুযোগটি নিতে চান।
অস্ট্রেলিয়ান মন্ত্রী বলেন, ‘আমি পশ্চিম সিডনির অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গে মিলে মন্ত্রী ওংকসহ এই বিষয়টি উত্থাপন করে চিঠি দিয়েছি। আমরা এই উদ্বেগগুলো উত্থাপন অব্যাহত রাখব।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশে তাদের প্রতিনিধিরা সক্রিয়ভাবে নিশ্চিত করছে যে অস্ট্রেলিয়া স্থিতিশীলতায় বজায় রাখতে ও সহিংসতা থেকে বের হয়ে আসার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে মতামত উপস্থাপন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মোদিকে ইউনূসের ফোন, বাংলাদেশের হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার আশ্বাস
বোয়েন বলেন, ‘অতীতে এই সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা হয়েছে, বিশেষত ২০২১ সালে দুর্গাপূজার সময়, তবে আমি এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হাউসের অবগতির জন্য উত্থাপন করতে এবং জাতিগত সংখ্যালঘু বাংলাদেশিদের আশ্বস্ত করতে চেয়েছিলাম যে হাউস দেখছে এবং শুনছে।’
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার এই মন্ত্রী জানান, পার্লামেন্ট সদস্যদের একটি ব্রিফিং ছিল, যাতে তিনি অনলাইনে অংশ নেন।
তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে ড. চার্লটন, ড. ফ্রিল্যান্ডার, অ্যান স্ট্যানলি, থিসলথওয়েট এবং মন্ত্রী হুসিকের অফিস এবং মন্ত্রী রোলিনের অফিসের প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছিলেন। কাম্বারল্যান্ড সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলর সুমন সাহাসহ বাংলাদেশি কমিউনিটির ৪৬ জন নেতা নিজ নিজ ইস্যুতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।’
মন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশে সহিংসতার শিকার পরিবারের তিনজন সদস্যও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘সেখানে খুব জটিল বিষয় রয়েছে এবং প্রতিটি প্রতিবেদন সঠিক হবে না। তবুও, আমি সন্তুষ্ট, তবে সত্যিকারের যে সমস্যা রয়েছে যা সমাধান করা দরকার। এই বৈঠকে প্রকৃত ইস্যুগুলো উত্থাপিত হয়েছে। তথ্যমতে ৭২৫টি বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ৭২৪টি বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট করা হয়েছে, ৫৮টি বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, ১৭টি উপাসনালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ২১টি উপাসনালয় লুটপাট করা হয়েছে।’
এই পরিসংখ্যানের মধ্যে রয়েছে মানুষের গল্প উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, রাহুল আনন্দের বাড়িতে লুটপাট করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছে যে রাহুলের বাড়িটি সাংস্কৃতিক সম্প্রদায়ের কেন্দ্রস্থল ছিল। রাহুল বাংলাদেশি কমিউনিটিতে খুব জনপ্রিয় একজন সংগীতশিল্পী।
বোয়েন আরও বলেন, এর আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ তার বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। ‘কিন্তু হামলার পর থেকে রাহুল বাংলাদেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। এই ট্র্যাজেডির অনেক গল্পের মধ্যে এটি একটি। সকল সহিংসতাকে ঘৃণা করতে হবে। মন্ত্রী ওং স্পষ্ট করে বলেছেন, আমরা বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা দেখতে চাই। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের প্রচেষ্টাকে আমি সাধুবাদ জানাই।’
আরও পড়ুন: সংখ্যালঘুসহ প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষার আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার খবর অতিরঞ্জিত: মোদির সঙ্গে ফোনালাপে ইউনূস
৪৫০ দিন আগে