বিদ্যুৎহীন
ঘূর্ণিঝড় মিধিলি: বিদ্যুৎহীন ঝালকাঠি, গাছপালা-ফসলের ক্ষতি
ঝালকাঠিতে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় পাঁচ শতাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে। এতে বিভিন্ন স্থানের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।
এ ছাড়া ঝড়ে আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে বলেও জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। এদিকে ঝড়ো হাওয়ায় হেলে পড়েছে ধান খেত। বেড়িবাঁধ না থাকায় কাঁঠালিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিষখালী নদীর পানি উঠে তলিয়ে আছে শীতকালীন সবজির খেত।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার চরভাটারাকান্দার কৃষক আল আমিন হাওলাদার বলেন, আমার এক একর জমিতে আমন ধান লাগানো আছে। ঝড়ো হাওয়ায় বেশিরভাগ গাছই হেলে পড়েছে। নদীর পানি উঠে তলিয়ে আছে ধানখেত। এতে ধান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ধান নষ্ট হয়ে গেলে আমার সর্বনাশ।
নলছিটি উপজেলার সরই গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন বলেন, নিলারভিটা এলাকায় বেশিরভাগ কৃষকের ধান চিটা হয়ে যেতে পারে। ধানখেত হেলে পড়েছে। টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের ফলে ক্ষেতে পানি জমে আছে। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না পারলে এ বছর সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মিধিলি: বরিশালে লঞ্চ চলাচল ফের শুরু
ঝালকাঠি শহরের কলাবাগ এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, শুক্রবার সকালে বিদ্যুৎ চলে গেছে শনিবার বিকাল পর্যন্ত আসেনি। বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজে রাখা খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কাঁঠালিয়া উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য নাসির উদ্দিন বলেন, ঝড়ে কাঁঠালিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছ উপড়ে পড়েছে। অনেক স্থানে বিদ্যুতের তারেও গাছ পড়েছে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
ঝালকাঠি ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, বিভিন্ন স্থানে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়। খুলনা ও বরিশাল থেকে টেকনিশিয়ান এনে ত্রুটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। কখন বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হবে, তা বলা যাচ্ছে না।
ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ঝড়ে জেলার অনেক স্থানে আমন ধানের খেত হেলে পড়ার খবর পেয়েছি। কয়েক জায়গায় শীতকালীন শাক সবজির ক্ষতি হতে পারে। আমাদের মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তারা কাজ করছে। ধানের বেশি ক্ষতি হবে না বলে ধারণা করছি।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মিধিলি: পটুয়াখালীতে ঘরবাড়ি ও আমনের ক্ষতি
ঘূর্ণিঝড় মিধিলি: বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে কোটি টাকার মাছ
জাপানে ৭ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্প, নিহত ৪
জাপানের উত্তরপূর্বাঞ্চলে বৃহস্পতিবার ৭ দশমিক ৪ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত চারজন মারা গেছে এবং ১০৭ জন আহত হয়েছে। ভূমিকম্পে বিপুল সংখ্যক ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বিশাল এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে দেশটির প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিরোকাজু মাতসুনো গণমাধ্যমকে বলেছেন, ভূমিকম্পের সময় চারজন মারা গেছে এবং ১০৭ জন আহত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, নিহতদের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
জাপানের কিয়োডো নিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভূমিকম্পের সময় সোমা শহরে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি দ্রুত তার বাড়ি থেকে বের হতে গিয়ে দোতলা থেকে পড়ে মারা যান। এবং সত্তরোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।
বৃহস্পতিবার ভোরে জাপানের আবহাওয়া সংস্থা ফুকুশিমা এবং মিয়াগি প্রিফেকচারের উপকূলে সুনামির ঝুঁকির কথা জানিয়েছে। রাজধানী টোকিও থেকে প্রায় ৩৯০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ইশিনোমাকিতে ৩০ সেন্টিমিটার উচ্চতার সুনামি ঢেউ উপকূলে আঘাত হানে।
আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্পের মাত্রা প্রাথমিক ৭ দশমিক ৪ থেকে ৭ দশমিক ৫ এবং সমুদ্রের নীচে এর বিস্তার ৬০ কিলোমিটার থেকে ৫৬ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
আরও পড়ুন: জাপানে অগ্নিকাণ্ডে ২৭ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা
বৃহস্পতিবার দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী সোমা, আইতাতে ও ফুকুশিমার অন্যান্য উপকূলীয় শহরগুলোর বাসিন্দাদের কাছে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করেছে। কারণ ভূমিকম্পে এসব এলাকার পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
‘ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক প্ল্যান্ট’ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি হোল্ডিংস বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ভূমিকম্পের সময় সাইটের কর্মীরা তেজস্ক্রিয় জল আওতার বাইরে ছিল।
তোহোকু ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি জানায়, টোকিও অঞ্চলসহ ১৪টি প্রিফেকচারে ২২ লাখেরও বেশি বাড়ি সাময়িকভাবে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফুকুশিমা এবং মিয়াগি প্রিফেকচারের প্রায় ৩৭ হাজার বাড়িতে সকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, ভূমিকম্পের কারণে ফুকুশিমা এবং মিয়াগির মধ্যে একটি তোহোকু শিনকানসেন এক্সপ্রেস ট্রেন আংশিকভাবে লাইনচ্যুত হয়েছিল, তবে কেউ হতাহত হয়নি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাতসুনো বলেছেন, ‘আমরা উদ্ধার তৎপরতায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং মানুষের জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছি।’
তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সম্ভাব্য বড় আফটার শকগুলোর জন্য অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১১ বছর আগে এই অঞ্চলেই ৯ মাত্রার ভূমিকম্প ও প্রলয়ংকারী সুনামির কারণে পারমাণবিক চুল্লি গলে যায়। ফলে ব্যাপক মাত্রায় বিকিরণ ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে এখনও এই অঞ্চলের কিছু অংশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে আছে।
আরও পড়ুন: ওমিক্রন: বিদেশি পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করছে জাপান
জাপানে কাদার স্রোতে ২ মৃত্যু, নিখোঁজ ২০