গণবিক্ষোভ
ইমেইল পাঠিয়ে পদত্যাগ করলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট
গণবিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে অবশেষে পদত্যাগ করেছেন বলে দেশটির সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুর থেকে ইমেইলের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তিনি।
এর আগে রাজাপাকসে ও তার স্ত্রী বুধবার ভোরে মালদ্বীপের উদ্দেশে শ্রীলঙ্কান বিমান বাহিনীর একটি ফ্লাইটে দেশ ছেড়েছেন। তার অনুপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট বানানোর পদক্ষেপ জনসাধারণের বিক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলে।
পরে মালদ্বীপ থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর পৌঁছেন গোতাবায়া রাজাপাকসে।
সিঙ্গাপুরের সংবাদ মাধ্যম দ্য স্ট্রেইট টাইমস জানিয়েছে, রাজাপাকসেকে বহনকারী সৌদি এয়ারলাইন্সের বিমানটি স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ১৭ মিনিটে (১১১৭ জিএমটি) সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
তিনি কতদিন সিঙ্গাপুরে থাকবেন বা এরপর তার গন্তব্য কোথায় সে বিষয়টি স্পষ্ট নয় বলে সংবাদ মাধ্যম টি জানিয়েছে।
এদিকে দেশটিতে চলমান কারফিউ শুক্রবার পর্যন্ত থাকবে বলে সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। ফলে বিক্ষোভকারীদের প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সরে যেতে দেখা গেছে।
পড়ুন: সিঙ্গাপুর পৌঁছেছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট
বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কায় সংসদ ভবনে সেনাবাহিনীর ব্যারিকেড
শ্রীলঙ্কায় দেশব্যাপী কারফিউ জারি করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট
গণবিক্ষোভের মুখে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের
শ্রীলঙ্কায় একদিন আগে জারি করা জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করেছে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। এর আগে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে গণবিক্ষোভের জেরে জরুরি অবস্থা জারি করে প্রেসিডেন্ট।
মঙ্গলবার রাতে জারি করা এক ডিক্রিতে গোতাবায়া রাজাপাকসে বলেছেন, তিনি জরুরি আদেশ প্রত্যাহার করছেন।
এদিকে মঙ্গলবার শাসক জোটের প্রায় ৪০ জন আইনপ্রণেতা বলেছেন, তারা জোটের নির্দেশনা অনুযায়ী আর ভোট দেবেন না। তাদের বারবার আহ্বানের পরও প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগ করা ও অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখান করছেন। আইনপ্রণেতাদের দাবি গোতাবায়া অন্তর্বর্তী সরকার গঠন না করলে সহিংসতার জন্য তাদেরকে দায়ী করা হবে।
গত সপ্তাহে রাজধানী কলম্বোতে প্রেসিডেন্টের বাড়ির কাছে বিক্ষোভকারীদের তুমুল বিক্ষোভের পর গোতাবায়া রাজাপাকসে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন।
রান্নার গ্যাস, পেট্রোল, বিদ্যুৎ ও গুঁড়ো দুধের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতি নিয়ে প্রথমদিকে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এই বিক্ষোভ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এখন বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও তার সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কায় অন্তর্বর্তী সরকার নিয়োগের আহ্বান আইনপ্রণেতাদের
সোমবার থেকে টিভি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতাসীন দলের আইন প্রণেতাদের অফিস ও বাড়িতে ঢুকে পড়েছে এবং কিছু জায়গা ভাংচুর করেছে।
মঙ্গলবার, বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর প্রথম নতুন সংসদ অধিবেশনে আইনপ্রণেতারা স্পিকারকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেছেন।
জনগণের ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী রাজাপাকসে পরিবার থেকে প্রেসিডেন্ট এবং তার বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ক্ষমতায় ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ক্রীড়ামন্ত্রী নামাল রাজাপাকসের সঙ্গে যারা পদত্যাগ করেছেন তাদের মধ্যে আরও দুই ভাই, অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকসে এবং সেচ মন্ত্রী চামাল রাজাপাকসে ছিলেন।
রবিবার রাতে ৪০ জন মন্ত্রী পদত্যাগ করে এবং গোতাবায়া রাজাপাকসে সকল দলকে ঐক্য সরকারে যোগদানের আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকট, লোডশেডিং, জ্বালানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতির সমাধানের দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরে বিক্ষোভ করছেন জনগণ।
দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও তীব্র জ্বালানি সংকট নিয়ে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের মুখে পড়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালো ক্ষমতাসীন জোট
ঐক্য সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধী দলের