জ্বালানি সংকট
সিলেটে জ্বালানি সংকট, অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ঘোষণা
সিলেটে জ্বালানি সংকটের কারণে বুধবার (১৮ জানুয়ারি) থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস এ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট বিভাগীয় কমিটি। এছাড়া আগামী রবিবার (২২ জানুয়ারি) থেকে তেল বিক্রী বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনটি।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে সিলেটের চণ্ডিপুলে কুশিয়ারা কনভেশন হলে কমিটির জরুরি সভা শেষে এই ঘোষণা দেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সিলেট বিভাগীয় কমিটির নবনির্বাচিত সভাপতি জুবায়ের আহমদ চৌধুরী ও নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন আহমেদ।
সভায় জানানো হয়, দীর্ঘদিন থেকে সিলেটের ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি তেল সরবরাহ করছে না। এমন পরিস্থিতিতে বারবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেও কোন সুরাহা হচ্ছে না। এ অবস্থায় আন্দোলন ছাড়া কোন উপায় নেই সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের।
সভায় বুধবার (১৮ জানুয়ারী) থেকে সিলেটের ব্যবসায়ীরা ডিপো থেকে তেল নেয়া বন্ধ ও পরবর্তী রবিবার (২২ জানুয়ারি) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তেল বিক্রী বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আরও পড়ুন: উত্তরের অনেক জেলায় জ্বালানি সংকট, যানবাহন চলাচলে ভোগান্তি
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস এ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল ইসলামের উপস্থিতিতে এই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ঘোষণা দেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সভায় সংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম থেকে রেলের ওয়াগনের মাধ্যমে সিলেটে তেল আসে। নানা কারণে রেলের ওয়াগন চলাচল অনিয়মিত হয়ে পড়া ও কোনো কোনো দিন বন্ধ থাকায় অধিকাংশ পাম্পে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
তাছাড়া সিলেটের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে যে কনডেনসেট পাওয়া যায়, তা আগে সিলেটের বিভিন্ন প্লান্টেই জ্বালানি তেলে রূপান্তর করা হতো। সরকারি মালিকানাধীন এ প্লান্টগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এখন চট্টগ্রামের বেসরকারি মালিকানাধীন প্লান্টে কনডেনসেট থেকে জ্বালানি তেলে রূপান্তর করা হয়।
এতে এখানকার সংকট আরও তীব্র হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, ডিপোগুলোর কর্মকর্তারা তৎপর হলে এ সংকট অনেকটাই কমে আসতো।
এবিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি জুবায়ের আহমদ চৌধুরী বলেন, সিলেটে আবারও জ্বালানি তেল সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। তেল সরবরাহে কর্তৃপক্ষ বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন।
তারা বিভিন্ন অযুহাতে তেল সরবরাহ বন্ধ রেখে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। তাই বাধ্য হয়েই আমরা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছি।
আরও পড়ুন: গ্রীষ্মের জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় তথ্য সংগ্রহ করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
জ্বালানি সংকট: ঢাকায় আজ কোন এলাকায় কখন লোডশেডিং
গ্রীষ্মের জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় তথ্য সংগ্রহ করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পেট্রোলিয়ামের দাম বিষয়ে কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দুটি বিভাগ এবং তাদের সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন গ্রীষ্মে একটি কঠিন সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিষয়গুলো আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকতে পারে- এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য পিএমও শিগগিরই সম্প্রতি স্থগিত হওয়া বৈঠকের পুনঃআবেদন করবে।
তারা বলেছে যে পিএমও ১৫ ডিসেম্বর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি বৈঠক ডেকেছিল। বিদ্যুৎ বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ‘কিন্তু শেষ মুহূর্তে বৈঠক স্থগিত করা হয়।’
আরও পড়ুন: জাতীয় উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করুন: জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, ‘যেদিন সভা স্থগিত করা হয়েছিল সেদিন প্রধানমন্ত্রীর একজন নতুন মুখ্য সচিব ও একজন নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আমরা আশা করি শিগগিরই স্থগিত সভা ডাকা হবে যেখানে দুই শীর্ষ আমলা উপস্থিত থাকতে পারেন।’
তিনি বলেন যে খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের শুল্ক বৃদ্ধির বিষয়টি প্রস্তাবিত বৈঠকে শীর্ষ অগ্রাধিকার পাবে। বিদ্যুৎ খাতের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি সংবেদনশীল হওয়ায় নাম প্রকাশ করেননি।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন যে তার প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী পিএমও ও বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করেছে।
সরকারি সূত্র বলছে, পাওয়ার সেক্টরের রাজস্ব সংগ্রহের বিশাল ত্রুটি ঢাকতে খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের শুল্ক বাড়ানোর সরকারের পরিকল্পনার পটভূমিতে পিএমও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে।
বেসরকারি খাত থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকদের কাছে কম দামে বিক্রির কারণে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) লোকসান হয়েছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা।
কর্মকর্তারা বলেছেন, সাম্প্রতিক ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর পাইকারি বাজারে বিদ্যুতের দাম প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে লোকসান মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমতে পারে।
অবশিষ্ট ক্ষতি পূরণের জন্য ছয় বিতরণ কোম্পানিকে বিদ্যুৎ বিভাগ তাদের নিজ নিজ প্রস্তাবনা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে জমা দিতে বলেছে। তারা ইতোমধ্যেই বিইআরসিতে খুচরা বিদ্যুতের দাম প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
কিন্তু সরকারের খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জরুরি প্রয়োজনে বিইআরসিকে এই বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য একটি গণশুনানি অনুসরণ করতে হবে এবং পুরো প্রক্রিয়াটির জন্য প্রায় ৯০ দিন সময় লাগবে।
আরও পড়ুন: সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন: বিজিবির প্রতি প্রধানমন্ত্রী
এমতাবস্থায়, কমিশনের গণশুনানি ও সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করে সরকারকে বিশেষ পরিস্থিতিতে নিজস্বভাবে জ্বালানি দাম নির্ধারণের ক্ষমতা দেয়ার জন্য ২৮ নভেম্বর মন্ত্রিসভা বিইআরসি অধ্যাদেশ ২০২২ এর একটি সংশোধনী অনুমোদন করেছে।
খুচরা বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের জন্য গণশুনানির আয়োজন করবে না-কি সরকার নিজেই খুচরা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে তা নিয়ে বিইআরসি এখন দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে।
কর্মকর্তারা বলেছেন যে পিএমও পুরো পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চায়, যাতে এটি ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে একটি নির্দেশ দিতে পারে।
কর্মকর্তারা আরও বলেছেন যে পরবর্তী গ্রীষ্মে পরিস্থিতি মোকাবিলায় পিএমও সভা থেকে একটি নির্দেশনাও আশা করা হচ্ছে, যা সাধারণত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহে অতিরিক্ত লোড দিয়ে শুরু হয়। সাধারণত প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াটের অতিরিক্ত লোড আগামী গ্রীষ্মে কৃষি সেচ খাত থেকে আসছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা আগামী বছরের মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া রোজার মাসেও আরও তিন হাজার মেগাওয়াটের লোড পড়বে।
তবে প্রাথমিক জ্বালানি সংকটের কারণে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর চাপে রয়েছে এবং আগামী বছরে একটি বড় ঘাটতির আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এই সমস্ত বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বৈঠকে আলোচনা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে যেখানে প্রতিমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি এক বৈঠকে বলেছেন, উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হলেও সরকার ভর্তুকি মূল্যে সবাইকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। কিন্তু বৈশ্বিক মন্দা বিবেচনায় কম দামে বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, ‘প্রকৃত মূল্যই দিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দামও বেড়েছে। দেশের ব্যবসায়ীসহ সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে এবং গ্যাসের (বর্ধিত) মূল্য ও পরিবহন খরচের জন্য ব্যয়িত অর্থ পরিশোধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তা না হলে আমরা বিদ্যুৎ দিতে পারব না। আপনি যদি বিদ্যুৎ চান, তাহলে আপনাকে আসল দাম দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন যে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও জ্বালানির খরচ মিতব্যয়িতার মাধ্যমে কমিয়ে আনা সম্ভব।
বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি, যেখানে প্রাথমিক জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন ১২ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
আরও পড়ুন: বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের ডাককে প্রত্যাখ্যান করেছে জনগণ: প্রধানমন্ত্রী
জ্বালানি সংকট কাটিয়ে উঠার আশা তৌফিক-ই-ইলাহীর
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে চলমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট উত্তরণে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।
সম্প্রতি ওয়াশিংটন ডিসিতে হাডসন ইনস্টিটিউট নামে একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আয়োজিত ‘এনার্জি সিকিউরিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট চ্যালেঞ্জ ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিস: বাংলাদেশ কেস’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে জ্বালানি উপদেষ্টা এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস এ তথ্য জানিয়েছে।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলামসহ দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
হাডসন ইন্সটিটিউটের ইনিশিয়েটিভ অন দ্য ফিউচার অব ইন্ডিয়া অ্যান্ড সাউথ এশিয়ার ডিরেক্টর ড. অপর্ণা পান্ডে গোলটেবিলটি পরিচালনা করেন।
ড. চৌধুরী বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যা বাংলাদেশের একার নয়, এটি এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা।
আরও পড়ুন: পশ্চিমারা আমাদের বিপদে ফেলেছে: প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা
তিনি বলেন, গণমাধ্যমসহ দল-মত নির্বিশেষে আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে সমস্যার সমাধান হতে পারে।
ড. চৌধুরী বলেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং সরবরাহের ঘাটতির কারণে বিশ্বে যে আঘাত এসেছে তা বাংলাদেশেও পড়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে তিনি এই বৈশ্বিক সংকটের সমাধান খুঁজতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আরও জোরালো উদ্বেগ প্রকাশ করা উচিত।
জ্বালানি উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে এবং কৃষি ও শিল্প খাতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যাপক অবদান রাখায় দেশের অর্থনীতি দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে।
ড. চৌধুরী উল্লেখ করেন যে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে সরকার সৌরবিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন বাড়াতে পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যেখানে বাংলাদেশ জলবিদ্যুৎ ব্যবহারে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতার জন্য কাজ করছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর, হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি, ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল, ন্যাশনাল ব্যুরো অব এশিয়ান রিসোর্সেস, ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিস এবং আটলান্টিক কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা ঘণ্টাব্যাপী গোলটেবিলে যোগ দেন।
আরও পড়ুন: জ্বালানি সংকট: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ২দিন ছুটি ঘোষণা নিয়ে ভাবছে সরকার
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারকে যেভাবে সহযোগিতা করবে শাবিপ্রবি
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের কথা বিবেচনা করে সপ্তাহের একদিন অনলাইনে ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওইদিন সশরীরে ক্লাসের পরিবর্তে অনলাইনে ক্লাস নিবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।
গত বৃহস্পতিবার উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ডিন ও বিভাগীয় প্রধানদের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সপ্তাহের বৃহস্পতিবার অনলাইনে এবং অন্য চারদিন সরাসরি ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে যা আগামী বৃহস্পতিবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এছাড়া ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সেবা পুরোপুরি বন্ধ থাকবে এবং অন্যান্য দিনেও কিছু পরিবহন সেবা কিছুটা হ্রাস করা হবে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে শাবিপ্রবিতে সপ্তাহে ১ দিন অনলাইন ক্লাস
সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক সমস্যার কারণে সৃষ্ট জাতীয় এ সমস্যায় আমরা দেশবাসীর পাশে থাকতে চাই। আমাদেরকে দেশপ্রেমের সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয় করোনা মহামারিতে ক্যাম্পাসে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দেশের মানুষের পাশে ছিল। এবারও বিশভাগ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে তাদের পাশে থাকবো। তবে কোনকিছুতেই যাতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকার জন্য বিভাগীয় প্রধান ও শিক্ষকদের প্রতি তিনি অনুরোধ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. মো.কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক যে সংকট তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ সরকার জ্বালানি সাশ্রয় নীতি গ্রহণ করেছে। সেই হিসেবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ২০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয়ের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান তাই বিশ্ববিদ্যালয় এটি মানতে বাধ্য।
তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডারের যাতে কোনো রকম বিঘ্নতা না ঘটে এবং একই সঙ্গে সরকারের জ্বালানি সাশ্রয়ের নির্দেশ পালন করা হয় সেই লক্ষ্যেই আমাদের একদিনের অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের একটি উপদেষ্টা কমিটি আছে। উপদেষ্টা কমিটির সুপারিশেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, প্রতি বৃহস্পতিবার আমাদের পরিবহন দপ্তরের গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি পরিবহনগুলো (বিশেষ করে অ্যাম্বুলেন্স সেবা) ও অন্যান্য জরুরি দপ্তরের গাড়ি চলাচল চালু থাকবে। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে যদি বলি যেহেতু একদিনের সশরীরে ক্লাস কার্যক্রম বন্ধ থাকবে সেক্ষেত্রে অনেক লাইট, ফ্যান ও এসিও বন্ধ থাকবে। এছাড়াও বৃহস্পতিবারের পর শুক্র ও শনিবার সাধারণ ছুটি হিসেবে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তর থেকে সাশ্রয়ী সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর কাছে হত্যার বিচার চাইলেন শাবির শিক্ষার্থী বুলবুলের মা
তিনি বলেন, আমাদের কাছে যে নির্দেশনা আছে তা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্বালানি ও বিদ্যুতের যে বাজেট সে জায়গাটিতে ২০ শতাংশ সাশ্রয়ী করতে হবে। সেই আদেশ বাস্তবায়নে,সরকারকে সহযোগিতা করতে এবং একাডেমিক কার্যক্রম বিঘ্নতা না ঘটাতে এই একদিনের অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এমরান আহমেদ চৌধুরী জানান, বর্তমানে প্রতিদিন বিশ্বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ৮টি বাস ৩৩টি, শিক্ষার্থীদের জন্য ১০টি বাস ৩৭টি ও স্টাফদের জন্য ৪টি ট্রিপসহ মোট ৭৪টি ট্রিপ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তর থেকে পরিচালিত হয়। সরকারের জ্বালানি সাশ্রয়ের সহযোগিতায় শাবিপ্রবি প্রশাসন এই বাসট্রিপ বন্ধ রেখে পাশে থাকার চেষ্টা করবে। তবে জরুরি খাতের পরিবহনগুলো সচল রাখা হয়েছে।
জ্বালানি সংকটের পেছনে রয়েছে দুর্নীতি, লুটপাট, আত্মঘাতী চুক্তি: বিএনপি
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বর্তমান সংকটের জন্য সরকারের ‘ব্যাপক দুর্নীতি, আত্মঘাতী চুক্তি এবং ভ্রান্ত পরিকল্পনা’কে দায়ী করেছে বিএনপি।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি ও ব্যাপক লুটপাটের মূল্য এখন সাধারণ মানুষকে দিতে হচ্ছে। দুই-তিনজনের জন্য লোডশেডিং। শহরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এবং গ্রামাঞ্চলে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা বিদুৎ থাকছে না। জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। তিনি সম্মেলনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব কালো আইন ও বিধিবিধান বাতিল, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের চুক্তি বাতিল এবং অনুসন্ধানসহ ১২ দফা পদক্ষেপ তুলে ধরেন। তাদের দল ক্ষমতায় এলে বঙ্গোপসাগর থেকে গ্যাস, পেট্রোলিয়াম ও অন্যান্য খনিজ সংগ্রহ করবে বলেও তিনি জানান।
ফখরুল বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি যখন মানুষকে ভীষণভাবে আঘাত করছে, তখন লোডশেডিং সেই কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছে। মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে। কারণ তাদের পিঠ দেয়ালের ঠেকে গেছে।’
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি সব ক্ষেত্রে বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট এবং পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মোকাবিলায় ব্যর্থতার দায়ভার কাঁধে তুলে সরকারকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান।
অন্যথায়, তাদের দল সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নামবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন এই বিএনপি নেতা।
ফখরুল বলেন, ১৯টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট অপ্রয়োজনীয়ভাবে এখনও চালু রয়েছে, যদিও সেগুলো চালু হওয়ার ২/৩ বছর পর বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও ক্যাপাসিটি চার্জে মোটা অংকের টাকা পাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘সরকারকে এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াই ক্যাপাসিটি চার্জে ৯০ হাজার কোটি টাকা দিতে হয়েছে। ক্যাপাসিটি চার্জ অযৌক্তিক, অনৈতিক এবং জনস্বার্থের পরিপন্থী। এটাও একটা অপরাধ।’
তিনি বলেন, দেশের মোট বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাত্র ৪৩ শতাংশ এখন ব্যবহার হচ্ছে। বাকি ৫৭ শতাংশ নিষ্ক্রিয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াই ভাড়া হিসেবে টাকা পাচ্ছে।
ফখরুল বলেন, অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতার মধ্যে আরও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে যা কেবল নিষ্ক্রিয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের খরচ আরও বাড়িয়ে দেবে।
ফখরুল বলেন, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হচ্ছে। ‘বর্তমানে ভারত থেকে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। এর জন্য, গত তিন অর্থ বছরে প্রায় পাঁচ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ভারতীয় আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ‘বাংলাদেশের প্রায় ৬০ শতাংশ ওভার ক্যাপাসিটি থাকা অবস্থায় ভারত থেকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ আমদানি করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।’
বিএনপি নেতা বলেন, এই বিদ্যুতের আমদানির প্রায় ৪০ শতাংশ যায় ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে। ‘বাংলাদেশকে ২৫ বছরে আদানি গ্রুপকে এক লাখ কোটি টাকার বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে, যা তিনটি পদ্মা সেতু, নয়টি কর্ণফুলী টানেল বা দুটি মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য যথেষ্ট।’
তিনি বলেন, আদানি গ্রুপকে তিন বছরে মোট ভাড়া দেয়া হয়েছে ৫৩ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতিসহ মোট ব্যয় ৩০ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা।
সরকার গ্যাস অনুসন্ধানের সক্ষমতা না বাড়িয়ে আইপিপি’র মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জনগণের ওপর অন্যায়ভাবে বড় বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল।
আরও পড়ুন: এটা জনগণের সঙ্গে তামাশা, মোমেনের মন্তব্য নিয়ে বিএনপি
তিনি বলেন, ‘সরকার গত দশ বছরে অফ-শোর গ্যাস অনুসন্ধানের সম্ভাবনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার করেনি।’
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, তাদের দল ক্ষমতায় ফিরলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট সমাধান করবে। ‘আমরা কুইক এনহ্যান্সমেন্ট অব ইলেক্ট্রিসিটি অ্যান্ড এনার্জি সাপ্লাই (স্পেশাল প্রভিশন) অ্যাক্ট এবং কুইক রেন্টাল কোম্পানির সঙ্গে সমস্ত চুক্তিসহ সমস্ত কালো আইন বাতিল করব৷ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও অন্যান্য কাজ স্বচ্ছ প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে করা হবে।’
তিনি বলেন, তাদের দল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতেও পদক্ষেপ নেবে।
এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে বলে জানান বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন এবং বিতরণ লাইনগুলি জরুরিভাবে স্থাপন করা হবে।’
ফখরুল বলেন, তারা বাপেক্স এবং অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্থানীয় গ্যাস ও খনিজ অনুসন্ধানে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি: নয়াপল্টনে চলছে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ
জ্বালানি সংকট: ঢাকায় আজ কোন এলাকায় কখন লোডশেডিং
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রবিবার এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো)।
তালিকা অনুযায়ী ডেসকোর আওতাধীন এলাকার গ্রাহকরা রবিবার তিন ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের মধ্যে থাকতে হতে পারে।
ডেসকো এলাকার মধ্যে রয়েছে উত্তরা, গুলশান, বারিধারা, বসুন্ধরা, বনানী, বাড্ডা, উত্তরা খান, দক্ষিণখান, আগারগাঁও, মিরপুর, কাফরুল, কল্যাণপুর, খিলক্ষেত, পল্লবী, রূপনগর এবং টঙ্গী।
তবে ডিপিডিসি আওতাধীন এলাকায় এক ঘণ্টা এবং কোথাও কোথাও দুই ঘণ্টা লোডশেডিং থাকবে।
উভয় প্রতিষ্ঠানই আজ লোডশেডিংয়ের জন্য পৃথক তালিকা দিয়েছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজধানী ও আশপাশে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকবে।
লোডশেডিংয়ের সময়সূচী DPDC এবং Desco ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
চলমান জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সরকার গত ১৯ জুলাই থেকে সারা বাংলাদেশে দৈনিক এক ঘণ্টা এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং শুরু করে।
পড়ুন: জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি: বিপাকে ভোলার লক্ষাধিক জেলে
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি: চট্টগ্রামে বাস চলাচল বন্ধ
বিদ্যুৎ সাশ্রয়: মঙ্গলবার থেকে দেশে দৈনিক এক ঘণ্টা লোডশেডিং
জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় মঙ্গলবার থেকে দেশব্যাপী দৈনিক এক ঘণ্টা এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিং কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে, পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে দৈনিক এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টার লোডশেডিং দেয়া হবে। এক সপ্তাহ পর প্রয়োজনে আমরা সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবো।’
সোমবার বিকালে নিজ মন্ত্রণালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সংশোধিত ঘোষণায় এসব তথ্য জানান প্রতিমন্ত্রী।
এর ঘণ্টাখানেক আগে দিনে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং ঘোষণা করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী এ ঘোষণা করেছিলেন। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সংকট কাটিয়ে উঠতে রেশনিং প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: সরকার অফিসের সময় কমাতে বা ভার্চুয়াল অফিস চালু করতে পারে: জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী
সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠক শেষে উপদেষ্টা এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
নসরুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
তৌফিক-ই-এলাহী বলেন, বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো শিডিউলের অধীনে লোডশেডিং পরিচালনা করবে যাতে জনগণ এর জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময় পায় এবং কোনো ঝামেলা অনুভব না করে।
তবে প্রতিবার আধা ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং চলবে না।
তিনি বলেন, পেট্রোলিয়াম জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকবে এবং শপিংমল ও বাজার রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার মতো কিছু বিকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারি অফিসের সময় পুনঃনির্ধারণ করা হতে পারে এবং সশরীরে উপস্থিতির পরিবর্তে ভার্চুয়াল মিটিং অনুষ্ঠিত হবে।
নসরুল তার প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। পরিবহন পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনা করে তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
আরও পড়ুন: কাল থেকে এলাকাভিত্তিক ২ ঘণ্টা লোডশেডিং
মসজিদ, মন্দির ও গির্জার মতো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তারা যেন শুধু নামাজের সময় এয়ার কন্ডিশনার চালু রাখে।
তিনি বলেন, কোনোভাবেই রাত ৮টার পর মার্কেট ও শপিংমল খোলা রাখা যাবে না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডিজেল-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করলে ১০ শতাংশ পেট্রোল আমদানি সাশ্রয় হবে এবং পরিবহন খাতে ডিজেলের সাশ্রয়ী ব্যবহারের মাধ্যমে আরও ১০ শতাংশ সাশ্রয় করা যেতে পারে।
কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে প্রায় ১০টি ডিজেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে যার ১২৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অধিকাংশই বেসরকারি খাতে।
জ্বালানি সংকটে শ্রীলঙ্কায় আরও এক সপ্তাহ স্কুল বন্ধ
তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে থাকা শ্রীলঙ্কায় রবিবার আরও এক সপ্তাহের জন্য স্কুল বন্ধের মেয়াদ বাড়িয়েছে, কারণ দেশটিতে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের জন্য শিশুদের ক্লাসরুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি নেই।
এদিকে, জ্বালানিমন্ত্রী কাঞ্চনা উইজেসেকেরা নতুন তেল কেনার জন্য অর্থায়নের জন্য দেশের প্রবাসীদের ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কায় অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল বন্ধ ঘোষণা
তিনি বলেন, ‘অর্থের যোগান দেশটির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ।’
দেশটির কর্মকর্তারা জরুরি অবস্থার জন্য জ্বালানি এবং ডিজেল সংরক্ষণের জন্য জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব জ্বালানি বিক্রয় বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে।
জ্বালানিমন্ত্রী বলেন, সরকার নতুন জ্বালানি মজুদের নির্দেশ দিয়েছে এবং ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেলসহ প্রথম জাহাজ ২২ জুলাই আসবে। আরও বেশ কিছু জ্বালানি চালান পাইপলাইনে রয়েছে।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কায় তীব্র সংকটের মুখে সরকারের পদত্যাগ দাবি শিক্ষার্থীদের
তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা সাতটি জ্বালানি সরবরাহকারীর কাছে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে।
উত্তরের অনেক জেলায় জ্বালানি সংকট, যানবাহন চলাচলে ভোগান্তি
দিনাজপুরসহ উত্তরের আট জেলায় তীব্র জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। যানবাহনে ব্যহারের জ্বালানি পেট্রোল ও সীমিত পরিমাণ অকটেন মিললেও তাতে যানবাহনের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না।
জানা গেছে, ঈদের আগে খুলনা থেকে সর্বশেষ দুই লাখ লিটার পেট্রোল সরবরাহ করা হয়েছিল ডিপোতে। ফলে পেট্রোলের পরিবর্তে যানবাহনে অকটেন ভরতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। এতে চাপ পড়েছে অকটেনে। অন্যদিকে সীমিত পরিমাণে অকটেন পাওয়া গেলেও তা চাহিদার তুলনায় নগণ্য। ফলে পর্যাপ্ত সরবরাহ না পাওয়ায় জ্বালানি বহনকারী ট্যাংকারের ভিড় জমেছে ডিপোর সামনে।
আরও পড়ুন: পরিত্যক্ত পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি তেলসহ এলপি গ্যাস উদ্ভাবন
সংশ্লিষ্টরা জানায়, উত্তরাঞ্চলের চাহিদা অনুযায়ী পেট্রোল, অকটেনসহ ডিজেল চট্রগ্রাম থেকে খুলনা হয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে রেলওয়ে হেড ডিপোতে পৌঁছে। তবে ঈদের পর ডিপোতে এক লিটার পেট্রোলও সরবারহ করা হয়নি। ফলে পেট্রেল নির্ভর মোটরযান ও মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যান্ত্রিক বাহন চালকদের চরম বিপাকে পড়তে হয়েছে।
কবে নাগাদ এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা বলতে পারছেন না পেট্রো বাংলার স্থানীয় কর্মকর্তারা। তবে সোমবার খুলনা থেকে পেট্রোল ও অকটেন বহনকারী রেলওয়ে রেকার ডিপোর উদ্দেশে রওনা দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন তারা।
এ বিষয়ে পার্বতীপুরে রেলওয়ে হেড ডিপোর ব্যবস্থাপক ইমরান জানান, রবিবার ডিপোতে দুই লাখ লিটার অকটেন সরবরাহ করা হয়েছিল। উত্তরের আট জেলায় পেট্রোল পাম্পের সংখ্যা ১২৫টি।
আরও পড়ুন: রাজশাহী, রংপুর ও খুলনায় জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ
তিনি জানান, ডিপোতে পেট্রোলের ধারণ ক্ষমতা এক লাখ ৫৭ হাজার লিটার এবং অকটেন এক লাখ ৮০ হাজার লিটার। প্রায় খালি পড়ে রয়েছে ডিপোর প্রতিটি স্টোরের ট্যাংক।
প্রসঙ্গত, উত্তেরের আট জেলায় চাহিদা মত দ্রুত জ্বালানি সরবরাহের লক্ষ্যে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে রেলওয়ে হেড ডিপো স্থাপন করে পেট্রোবাংলা। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদে জ্বালানি সংকট দূর করতে ডিজেলের পাশাপাশি অন্যান্য জ্বালানি পেট্রোল ও অকটেন সরবারহ করা হয় ওই ডিপো থেকে।