হজ প্যাকেজ
বেসরকারিভাবে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ ৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা
বেসরকারি এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে সাধারণ হজ প্যাকেজে সর্বনিম্ন খরচ হবে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা গত বছরের তুলনায় এবার খরচ কমেছে ৮২ হাজার ৮১৮ টাকা। একই সঙ্গে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আগামী বছর বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হবে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেন।
চলতি বছর বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছিল ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা।
সভাপতি বলেন, কোরবানি খরচ প্রত্যেক হজযাত্রীকে আলাদাভাবে নিজ দায়িত্বে সঙ্গে নিতে হবে। হজযাত্রীকে কোরবানি বাবদ আনুমানিক ৮০০ সৌদি রিয়াল নিতে হবে এবং কোরবানি নিজ দায়িত্বে সম্পন্ন করতে হবে। সৌদি আরবে ৩০ থেকে ৪৮ দিন অবস্থান করতে পারবেন। মদিনায় অবস্থান করতে পারবেন পাঁচ থেকে আটদিন।
আরও পড়ুন: হজের বিমান ভাড়া পুনর্নির্ধারণের দাবি হাবের
পাসপোর্টের মেয়াদ আগামী বছরের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকতে হবে। এ বছর ৬৫ বা এর বেশি বয়সীরা হজে যেতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘এজেন্সিগুলো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসহ বিভিন্ন মানের ও নিজ নিজ প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে। প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিষেধক টিকার সনদ লাগবে।’
তিনি আরও বলেন, একটি স্বতন্ত্র কারিগরি কমিটির মাধ্যমে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া পুনর্নির্ধারণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে গত ৫ নভেম্বর আবেদন দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করছি প্রধানমন্ত্রী হজ যাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। বিমান ভাড়া কমানো হলে হজ প্যাকেজের মূল্যও কমানো হবে।
শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘হজযাত্রীদের সৌদি আরবের ইমিগ্রেশন ঢাকায় নিশ্চিত করার জন্য সব হজ ফ্লাইট ডেডিকেটেড হতে হবে। কোনোভাবেই কোনো সিডিউল ফ্লাইটে হজযাত্রী পরিবহন করা যাবে না।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ১৬ জুন (১৪৪৫ হিজরি সনের ৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছরের মতো আগামী বছরও (২০২৪ সাল) বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি মাধ্যমের কোটা ১০ হাজার ১৯৮ জন ও বেসরকারি এজেন্সির কোটা এক লাখ ১৭ হাজার জন বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।
গত ২ নভেম্বর সরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সরকারিভাবে আগামী বছর হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হবে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা।
ঘোষিত সাধারণ প্যাকেজ অনুযায়ী, আগামী বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রায় প্রত্যেক হজযাত্রীর গত বছরের চেয়ে ৯২ হাজার ৪৫০ টাকা কম খরচ হবে। সরকারি দুটি প্যাকেজের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বেসরকারি এজেন্সিগুলো প্যাকেজ ঘোষণা করলো।
আগামী বছর (২০২৪ সাল) হজে যেতে নিবন্ধন শুরু হবে বুধবার (১৫ নভেম্বর)।
নিবন্ধনের শেষ সময় ১০ ডিসেম্বর বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালের হজ প্যাকেজ সাশ্রয়ী হবে
হজ প্যাকেজ ফি অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য মুদ্রার বিনিময় হারকে দায়ী করছে সরকার
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেছেন, স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন ডলার ও সৌদি রিয়ালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে হজ প্যাকেজ ফি বাড়াতে হয়েছে সরকারকে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি সরকার ঘোষণা করেছে যে এই বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজ ফি হবে ছয় লাখ ৮৩ হাজার টাকা- যা আগের তুলনায় অভূতপূর্ব ৩০ শতাংশ লাফিয়ে বেড়েছে।
রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে রিলিজিয়াস রিপোর্টার্স ফোরাম (আরআরএফ) আয়োজিত ‘হজ প্যাকেজ ২০২৩ ও ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের পক্ষ থেকে হজ ব্যবস্থাপনার কোনো খরচ বাড়াইনি। সৌদি রিয়াল ও মার্কিন ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে আমাদের ব্যয় বাড়াতে হচ্ছে।
২০২২ সালে সৌদি রিয়াল-এর দাম ছিল মাত্র ২১ টাকা যেখানে এখন এটি প্রতি সৌদি রিয়াল ২৯ টাকা।
মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের তীর্থযাত্রীদের ‘ডি’ ক্যাটাগরির প্যাকেজের আওতায় পাঠিয়ে খরচ কমাতে পারি। কিন্তু হজযাত্রীরা সেই বিভাগের অধীনে দেওয়া পরিষেবাগুলোর সঙ্গে সন্তুষ্ট হবেন না।’
আরও পড়ুন: হজ নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত
ফরিদুল হক খান উচ্চ ফি নিয়ে হজযাত্রীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বলেন, আগামী বছরের হজযাত্রার জন্য সময়মতো একটি ন্যায্য ও স্বচ্ছ পদ্ধতি নির্ধারণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন, যাতে হজ ফি ও বিমান ভাড়া একটি যৌক্তিক পদ্ধতিতে স্থির করা যেতে পারে।
হজ এজেন্সিগুলোর অ্যাসোসিয়েশন হাব-এর সভাপতি শাহাদাত হোসেন তসলিম প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের জন্য নির্ধারিত হজ প্যাকেজ ফি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন এবং হজযাত্রীদের কষ্ট লাঘবের জন্য প্যাকেজ থেকে উচ্চতর খরচ বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আরআরএফ সভাপতি উবায়দুল্লাহ বাদলের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসেন তসলিম, মহাসচিব ফারুক আহমেদ সরদার ও আরআরএফের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উল্লাহ ভূঁইয়া।
আরও পড়ুন: হজ প্যাকেজের অতিরিক্ত খরচ কেন জনস্বার্থ পরিপন্থী নয়: হাইকোর্ট
হজ প্যাকেজের অতিরিক্ত খরচ কেন জনস্বার্থ পরিপন্থী নয়: হাইকোর্ট
সরকার ঘোষিত বর্তমান হজ প্যাকেজের অতিরিক্ত খরচ নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন কেন জনস্বার্থ পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে সব আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাকে হজ যাত্রী পরিবহনে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ময়মনসিংহের সেই শিশুকে ১৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের
রবিবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
আদেশের আগে শুনানিকালে আদালত বলেন, সরকার হাজিদের পক্ষে বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে কোনো দর কষাকষি করতে পারেনি। এছাড়া তারা দায়িত্বে অবহেলা করেছে।
আদালত আরও বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় বাংলাদেশিদের জন্য হজের খরচ অনেক বেশি।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে ধর্ম সচিব, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক, হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব), সৌদি রাষ্ট্রদূতসহ পাঁচজনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট গাজী মো. মহসীন, অ্যাডভোকেট আশরাফ-উজ জামান খান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও অ্যাডভোকেট আহসান উল্লাহ।
এদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
আদেশের পরে আইনজীবী আশরাফ-উজ জামান বলেন, হজ নিয়ে আমাদের আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেছেন।
আরও পড়ুন: যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানোর একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কেন অসাংবিধানিক নয়: হাইকোর্ট
আদেশের আগে শুনানিকালে আদালত বলেন, সরকার হাজিদের পক্ষে বিমানের সঙ্গে কেন দর কষাকষি করেনি। তারা দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। সৌদি আরব এত ধনী দেশ, সৌদি এয়ারলাইন্সকে অতিরিক্ত ভাড়া কেন দিতে হবে।
আদালত আরও বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় বাংলাদেশিদের জন্য হজের খরচ অনেক বেশি। অথচ এদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এত কম হওয়া সত্ত্বেও অন্য দেশের তুলনায় হজ প্যাকেজ এতো বেশি, মেনে নেওয়া যায় না।
এছাড়া ভারত-পাকিস্তান সরকার যেখানে এক লাখ টাকা ভর্তুকি দিতে পারে সেখানে বাংলাদেশ কিভাবে হজ প্যাকেজে খরচ বৃদ্ধি করেছে।
ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করে হজের প্যাকেজ ঘোষণা চ্যালেঞ্জ করে গত ১২ মার্চ রিট দায়ের করেন হাইকোর্টের আইনজীবী আশরাফ-উজ জামান।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রবিবার রুল জারি করেন।
এর আগে গত ৬ মার্চ হজের প্যাকেজ মূল্য সংশোধন করে চার লাখ টাকা নির্ধারণ করতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আল কোরআন স্টাডি সেন্টারের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আশরাফ-উজ জামান ধর্ম মন্ত্রণালয়কে এ নোটিশ পাঠিয়েছিলেন।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলতি মৌসুমে হজের খরচ ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।
পরে এ প্যাকেজ সংশোধন করে ১১ হাজার টাকা কমিয়ে দেয় সরকার।
আরও পড়ুন: ইউএনওদের উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক: হাইকোর্ট
হজ প্যাকেজের খরচ কমল ১১,৭২৫ টাকা
সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনার অধীনে হজ প্যাকেজের খরচ ১১ হাজার ৭২৫ টাকা হ্রাস করা হয়েছে। কারণ, সৌদি আরব বিশ্বব্যাপী ইচ্ছুক হজযাত্রীদের জন্য এই পরিষেবা চার্জ কমিয়েছে।
এ বছর ১১ হাজার ৭২৫ টাকা বাদ দিয়ে হজ পালনের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের প্রত্যেককে ছয় লাখ ৭১ হাজার ২৯০ টাকা দিতে হবে।
এছাড়া যারা প্রাইভেট ব্যবস্থাপনায় যাবেন, তাদের প্রত্যেককে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৮৯৩ টাকা দিতে হবে।
আরও পড়ুন: হজের খরচ কমানোর বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি: ধর্ম মন্ত্রণালয়
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, যারা ইতোমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে নিবন্ধন করেছেন তারা খাবারের দাম ফেরত দিলে ঢাকায় হজ অফিস থেকে ৪৬ হাজার ৭২৫ টাকা ফেরত পাবেন।
বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো আগে নিবন্ধন করা প্রত্যেক হজযাত্রীকে ১১ হাজার ৭২৫ টাকা ফেরত দেবে।
এদিকে, সরকার হজ নিবন্ধনের সময়সীমা ২৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
এছাড়া রেজিস্ট্রেশনের কোটা পূরণ হলে হজ নিবন্ধনের সার্ভার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক হজ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যাংকগুলোকে ২৭ মার্চ তাদের শাখা খোলা রাখতে বলেছে।
১ ফেব্রুয়ারি সরকার প্রতিটি হজযাত্রীর জন্য ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করে যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার টাকা বেশি ছিল।
এছাড়া প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় হজের বর্ধিত ব্যয় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।
এর মধ্যে প্রতিটি যাত্রীর জন্য বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা।
১৪ মার্চ হাইকোর্ট প্রশ্ন তোলেন সরকার নির্ধারিত প্যাকেজের খরচে সাধারণ মানুষ কীভাবে হজ করবে।
এতে প্রশ্ন করা হয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সরকার কেন হজের জন্য বাজেট বরাদ্দ করে না?
চলতি বছরের হজ প্যাকেজ সংশোধন নিয়ে এক রিট আবেদনের শুনানিকালে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
গত ১৫ মার্চ রিট আবেদনের শুনানি শেষে হজের খরচ কমানোর উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
এরপর ১৭ মার্চ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিমানের ভাড়া যৌক্তিকভাবে কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়।
এদিকে গত ১৯ মার্চ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম বলেন, এ বছর হজ ফ্লাইটের ভাড়া কমানোর কোনো সুযোগ নেই।
আরও পড়ুন: এবছর আর হজ ফ্লাইটের ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই: বিমানের এমডি
হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর নির্দেশ সরকারের
এত টাকা লাগলে সাধারণ মানুষ কীভাবে হজে যাবে: প্রশ্ন হাইকোর্টের
হাইকোর্ট বলেছেন, এত টাকা লাগলে সাধারণ মানুষ কীভাবে হজে যাবে? এত টাকার প্যাকেজ নির্ধারণ তো অমানবিক। বিশ্বের অন্যান্য দেশে হজের জন্য সরকার আলাদা বরাদ্দ রাখে, আমাদের এটি নেই কেন?
চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজের খরচ কমিয়ে পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে করা এক রিটের শুনানিতে মঙ্গলবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন।
আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য বুধবার দিন রেখেছেন।
আদালতে রিটের পক্ষে আশরাফ-উজ-জামান নিজেই শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আওলাদ হোসেন।
পরে আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, ‘আদালত ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে হজ প্যাকেজের সর্বশেষ অবস্থা আমাকে জানাতে বলেছেন। এরপর বুধবার রিটের ওপর পরবর্তী শুনানি হবে।’
আরও পড়ুন: বেসরকারি হজ প্যাকেজে ন্যূনতম খরচ ৬.৭২ লাখ টাকা: হাব
হাইকোর্ট আরও বলেছেন যে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার হজ ফান্ড আছে। বাংলাদেশ ও ভারতের ফান্ড কম। একমাত্র বঙ্গবন্ধু এ বিষয়ে চিন্তা করেছিলেন। তারপর এ বিষয়ে কেউ চিন্তা করেননি।
সৌদি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বাইরে অন্য যে কোনো এয়ারলাইন্সের টিকিট ক্রয় করার সুবিধা না থাকার বিষয়ে আদালত বলেন, এখানে ব্যবসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক স্মারকে হজ প্যাকেজ (২০২৩ সাল) ঘোষণা করে। হজ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীর এই খরচ কমিয়ে চার লাখ টাকার মধ্যে পুনর্নির্ধারণ করতে অনুরোধ জানিয়ে ৬ মার্চ ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাবর আইনি নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আশরাফ-উজ-জামান।
নোটিশে ওই স্মারক সংশোধন বা পরিবর্তন করে চার লাখ টাকার মধ্যে হজ প্যাকেজ (২০২৩ সাল) সাত দিনের মধ্যে পুনর্নির্ধারণ করতে অনুরোধ জানানো হয়। এতে ব্যর্থ হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। এতে ফল না পেয়ে ১২ মার্চ রিটটি করেন।
আরও পড়ুন: সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের খরচ নির্ধারণ
আইনজীবী আশরাফ উজ জামান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ-সৌদি-বাংলাদেশ রুটে প্লেন ভাড়া ৭৬ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা। প্রতি বছর দুই দেশের সরকার হজ যাত্রীদের সৌদি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট কিনতে বাধ্য করে। এ কারণে টিকিট কিনতে হজ যাত্রীদের স্বাধীনতা ধ্বংস হয়। এসব কারণসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে চার লাখ টাকার মধ্যে হজ প্যাকেজ-২০২৩ সংশোধন, পরিবর্তন এবং পুনর্নির্ধারণ করতে আইনী নোটিশে অনুরোধ করা হয়।
পরে নোটিশের জবাব না পেয়ে গত ১২ মার্চ আইনজীবী আশরাফ উজ জামান জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন। রিটে ধর্ম সচিব, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।
আরও পড়ুন: হজযাত্রীদের ডলার সংকট এড়াতে আগাম প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে: ধর্মপ্রতিমন্ত্রী
চলতি মাসেই হজ প্যাকেজ ঘোষণা: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, চলতি মাসের ২৫/৩০ তারিখের মধ্যে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে।
তিনি বলেন, হজ প্যাকেজ বাড়াতে চায় না বাংলাদেশ, গতবছরেরটাই রাখতে চায়। তবে রিয়াল বা ডলার বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য কিছুটা বাড়তে পারে।
রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় প্রতিমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবনে সৌদিআরব-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় হজচুক্তি-২০২৩ পরবর্তী বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৮ জুন (৯ জিলহজ্ব, ১৪৪৪) তারিখ পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। হজে যাওয়ার সকল ব্যবস্থা নেয়ার লক্ষ্যে গত ৯ জানুয়ারি সৌদি আরব-বাংলাদেশ হজ চুক্তি হয়েছে।
আরও পড়ুন: নড়াইলের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি হবে: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
প্রতিমন্ত্রী বলেন, হজ চুক্তিতে সৌদি আরব এর পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রী ডা. তৌফিক বিন ফাউজান আল-রাবিয়া এবং বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান।
তিনি বলেন, হজচুক্তি-২০২৩ অনুযায়ী করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে এ বছর বাংলাদেশের কোটার পূর্ণ সংখ্যক হজযাত্রী হজে যেতে পারবেন। এ বছর মোট এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী বাংলাদেশ থেকে হজে যাবেন। এদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী হজে যাবেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ৫০শতাংশ এবং সৌদি এয়ারলাইন্স ৫০শতাংশ হজযাত্রী পরিবহন করবেন। এ বছর বয়সের সর্বোচ্চ সীমার শর্ত তুলে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ, ৬৫ ঊর্ধ্ব হজযাত্রীরা এ বছর হজে যেতে পারবেন।
তিনি বলেন, রোড-টু-মক্কা ইনিশিয়েটিভ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ হতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে হজে গমনকারী সকল হজযাত্রীর প্রি-এরাইভেল ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন করা হবে।
ফরিদুল হক খান বলেন, তবে কোভিড পরিস্থিতির অবনতি হলে হজযাত্রীর সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন। এ বছর বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ৭০ শতাংশ বা ৮৯ হাজার ৩৮ জন হজযাত্রী জেদ্দা বিমান বন্দর হয়ে আগমন ও প্রস্থান করবেন এবং ৩০ শতাংশ বা ৩৮ হাজার ১৬০ জন হজযাত্রী মদীনা বিমানবন্দর হয়ে আসা-যাওয়া করবেন।
আরও পড়ুন: মহানবীর শিক্ষা ও আদর্শ মুসলিম উম্মাহকে উদার ও মানবিক হতে শিক্ষা দেয়: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা এবার হজে যেতে পারবেন না: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
হাবের হজ প্যাকেজ ঘোষণা
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যারা হজ পালন করবেন, তাদের জন্য হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম এই প্যাকেজ ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: এ বছর হজ ফ্লাইটে যাত্রীপ্রতি ভাড়া ১ লাখ ৪০ হাজার
তিনি জানান, বেসকারিভাবে হজে যেতে খরচ পড়বে চার লাখ ৬৩ হাজার ৭৪৪ টাকার। তবে যে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে তাতে হজের আবশ্যিক পশু কোরবানির খরচ ধরা হয়নি। এতে করে খরচের পরিমাণ বেড়ে যাবে।
তিনি জানান, এজেন্সিগুলো আবারও স্পেশাল প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে, তবে তা হাব ঘোষিত প্যাকেজ মূল্যের কম হওয়া যাবে না।
আরও পড়ুন: হজ ফ্লাইট শুরু ৩১ মে
সরকারি ঘোষণার একদিন পর বেসরকারিভাবেও হজ প্যাকেজের ঘোষণা এলো।