শেওলা স্থলবন্দর
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে ব্যর্থ শেওলা স্থলবন্দর
সরকারের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-ডিসেম্বর) লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেনি বিয়ানীবাজারের শেওলা স্থলবন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ সময়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ কোটি ৮৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও তারা পিছিয়ে আছে ১০ কোটি টাকা।
সর্বশেষ ২০২৪ পঞ্জিকাবর্ষের শেষ দিন লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক রাজস্বও আহরণ করতে পারেনি শেওলা কাস্টমস।
শেওলা কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি অর্থবছরের শুরুতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বেশ কয়েকদিন পণ্য শুল্কায়ন থেকে খালাস প্রক্রিয়া পুরোদমে ব্যাহত হয়। এর প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে।
আরও পড়ুন: আইএমএফের শর্ত নয়, রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য ভ্যাট বাড়ানো হবে: অর্থ উপদেষ্টা
তাদের দাবি, শেওলা কাস্টমসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখার তৎপরতা বাড়ানোর কারণে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি কমেছে। আবার খালাসেও রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নিতে পারেনি সুযোগসন্ধানীরা।
তবে শ্রমিকদের দাবি উল্টো। পণ্যের ওজন কারচুপির কারণে সৃষ্ট অনিয়মের কারণেই এই বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কমেছে বলে দাবি তাদের।
কাস্টমস কর্মকর্তাদের দূর্নীতির অভিযোগে সম্প্রতি এই বন্দরে ব্যাপক শ্রমিক অসন্তোষের সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে শ্রমিকরা জানান, ওজন কারচুপির মতো দূর্নীতি এই বন্দরের একটি বড় সমস্যা। ভারত থেকে যে পাথর আমদানি করা হয়, তা সরাসরি মাইন থেকে গাড়িতে বোঝাই হয়ে চলে আসে। ফলে এসব পাথরের সঙ্গে মাটি ও বালি মিশে থাকে। এর আগে তামাবিল ও শেওলায় পাথর শুল্কায়নের আগে বন্দর কর্তৃপক্ষ মাটি ও বালির ওজন বাদ দিয়ে পাথরের ওজন নির্ণয় করত এবং সে অনুযায়ী শুল্কায়ন করা হতো। বর্তমানে শেওলার নতুন কর্মকর্তারা মাটি ও বালির ওজন ছাড় দিতে চাচ্ছেন না।
শেওলা কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, এই বন্দর দিয়ে গত ৬ মাসে ১১ কোটি টাকার কয়লা, আদা, কমলা, আপেল, সাতকড়া, চুনাপাথর ও চাল আমদানি হয়েছে। নতুন বছরের প্রথম মাস হওয়ায় আগের মাসের বকেয়া রাজস্ব আদায় হওয়ার কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আদায় দেখা গেছে, যা প্রকৃত চিত্র নয়। প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় আগস্ট মাস থেকে।
কয়লা আমদানিকারক ইকবাল হোসেন জানান, বাজারে ডলারের দাম বাড়ার কারণে অনেক ব্যবসায়ী আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারেননি। যারা এলসি খুলেছেন তাদের অনেককে খোলা মার্কেট থেকে বেশি দামে ডলার কিনে ব্যাংকে শতভাগ মার্জিন দেখিয়ে ঋণপত্র খুলতে হয়েছে। ফলে সামগ্রিক নেতিবাচক একটি প্রভাব পড়েছে আমদানিতে।
এ বিষয়ে শেওলা কাস্টমসের সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা শিমুল সেন বলেন, ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়। আবার ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ও বাড়ে। তবে বেশিরভাগ সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া যায় না। এবার লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা সহনীয় ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উচ্চ শুল্কে পণ্য আমদানি কমে যাওয়ার কারণে এই অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমরা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারিনি।
আরও পড়ুন: রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউরের বিদেশ যাওয়ার অনুমতি চেয়ে করা রিট খারিজ
৩৩৩ দিন আগে
ডলারের ঊর্ধ্বগতিতে শেওলা স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে মন্দাভাব
টাকা ও রুপির বিপরীতে ডলারের ঊর্ধ্বগতির কারণে মন্দাভাব বিরাজ করছে বিয়ানীবাজারের শেওলা স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে।
বিগত অর্থবছরের তুলনায় ভারতে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ কমেছে ৫০ শতাংশেরও বেশি। ফলে তলানিতে ঠেকেছে সরকারের রাজস্ব আদায়।
আরও পড়ুন: হিলি ও সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু
বন্দরসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেওলা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রায় সব ধরনের পণ্য রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। ভারত থেকে কয়লা, পাথর, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, বাংলাদেশে আমদানি করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্য, হস্ত শিল্প, তাতের তৈরি দ্রব্য, বেতের তৈরি দ্রব্য, ফল মূল, শুঁটকি মাছ, সাতকড়া, প্রাণের পণ্যসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি ভারতে রপ্তানি করা হয়ে থাকে।
সুতারকান্দি ইমিগ্রেশন পয়েন্ট এর তথ্যমতে, প্রতিদিন এই সীমান্ত দিয়ে গড়ে ২০ জন যাওয়া আসা করে। শীত মৌসুমে এ হার আরও বাড়ে।
শুল্ক বন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তার তথ্যমতে, প্রতিবছর বন্দর থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। তবে চলতি বছরে তা অর্ধেকের কম হবে বলে তাদের ধারণা।
এদিকে বিগত অর্থবছরগুলোর তুলনায় রপ্তানির পরিমাণও অর্ধেকেরও বেশি কমেছে।
মূলত ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ভাটা পড়ে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরের বছর মহামারির ধকল কাটিয়ে আবারও চাঙ্গা হতে থাকে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য।
আরও পড়ুন: ভোমরা বন্দর দিয়ে ২৮৭ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি
তবে নতুন করে রপ্তানি বাণিজ্যে আবারও সংকট তৈরি করছে ডলারের ঊর্ধ্বগতি।
রুপির বিপরীতে ডলারের ঊর্ধ্বগতিতে আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে পণ্য নেওয়া কমিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।
বর্তমানে সিমেন্ট, বরফজাত মাছ ও প্লাস্টিকসহ কয়েকটি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রায় এক বছর ধরে গম আমদানি করতে পারছেন না তারা। গত বছরের ৩০ মের পর বন্দরে গমের কোনো চালান আসেনি।
তারা বলেন, যেসব পণ্য আমদানির অনুমতি আছে তার বেশিরভাগই ত্রিপুরার বাইরের রাজ্য থেকে আনতে হয়। ফলে আমদানি খরচ বেড়ে যায়। এছাড়া এখন ডলার সংকটের কারণে চাহিদামতো এলসিও করা যাচ্ছে না।
শেওলা স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সুমন আহমদ বলেন, কখন কোন পণ্যের চাহিদা তৈরি হবে, সেটি আগে থেকে বলা যাবে না। সেজন্য সব পণ্য আমদানির অনুমতি প্রয়োজন, যাতে যখন যে পণ্যের চাহিদা থাকবে তখন যেন সে পণ্য আমদানি করা যায়।
তিনি আরও বলেন, যদি এ সুযোগটি দেওয়া হয় তাহলে ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি সরকারেরও রাজস্ব বাড়বে। পাশাপাশি আমদানি না হওয়ায় এখন বন্দরে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, সেটি কেটে গিয়ে বন্দর আরও চাঙ্গা হবে।
এ বিষয়ে শেওলা স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা রোকন উদ্দিন বলেন, বিগত অর্থবছরগুলোর তুলনায় এবার রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ একেবারেই কম। রাজস্ব বোর্ড থেকে তালিকার পণ্যগুলো আমদানির অনুমতি দিলে আবারও বন্দর দিয়ে আমদানি বাড়বে বলে আশা করছি। আর আমদানি বাড়লে বন্দর এবং কাস্টমস কর্তৃপক্ষের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।
আরও পড়ুন: ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু, কেজিতে কমল ২০ টাকা
৯০৪ দিন আগে
জরাজীর্ণ রাস্তা: শেওলা স্থলবন্দরে ব্যবসা বাণিজ্য ব্যাহত
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার শেওলা ব্রিজ থেকে শেওলা স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়কটি অসংখ্য গর্তে জরাজীর্ণ হয়ে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে তিন কিলোমিটার রাস্তাটি মেরামতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার অভিযোগ করা হলেও এখন পর্যন্ত তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
আরও পড়ুন: বাড়িরপাশে মরিচের আড়ৎ, ন্যায্য মূল্য পেয়ে খুশি কৃষক
ইউএনবি’র সঙ্গে আলাপকালে গাড়ি চালকরা জানান, রাস্তার গর্তে বৃষ্টির পানি জমে বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। ওই রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
সিলেট কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে রাস্তাটি মেরামতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গত ১১ এপ্রিল তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, সড়ক ভবন, চৌহাট্টা, সিলেট এ আবেদন করা হয়।
এর আগেও ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যেগে রাস্তাটি মেরামত করেছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে রাস্তাটি আবার জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
সড়কটি সংস্কার করা না হলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুন: এক মণ ধানের দামেও মিলছে না শ্রমিক
শেওলা স্থল বন্দর সিলেট বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থল বন্দর। ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ পাথর, কয়লা, বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রী পেঁয়াজ ও আদা আমদানি হয়ে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ সিমেন্ট, মাছ, তুলা ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রী রপ্তানি হয়ে থাকে।
এই স্থলবন্দর দিয়ে সরকার বাণিজ্য থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করে।
এছাড়া শেওলা স্থলবন্দর দিয়ে শত শত যাত্রী ভারতে যাতায়াত করে।
এদিকে, গত ৯ মে সিলেট কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের একটি প্রতিনিধিদল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমানের কার্যালয় সড়ক ভবনে সাক্ষাত করেন ও স্মারকলিপি প্রদান করেন।
আরও পড়ুন: হাসপাতালের বেডে ঈদ
সিলেট কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি চন্দন সাহা আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা ও সরকারের রাজস্বের স্বার্থে সড়কটি দ্রুত সংস্কারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান সড়কটি সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
১২৮৬ দিন আগে