রুল শুনানি
রাষ্ট্রপতিকে স্পিকারের শপথ পড়ানোর বৈধতার প্রশ্নে রুল শুনানি ৭ জুলাই
প্রধান বিচারপতির পরিবর্তে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে শপথ পড়াতে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর বিধান কেন ’৭২ এর সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না—তা জানতে চেয়ে জারি করা রুল শুনানির জন্য আগামী ৭ জুলাই দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট।
কবি, গীতিকার, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট শহীদুল্লাহ ফরায়জীর করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১১ মার্চ এই রুল জারি করেছিলেন।
সোমবার (২৩ জুন) বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানির দিন নির্ধারণ করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। এর আগে ১০ মার্চ শহীদুল্লাহ ফরায়জী এ রিট দায়ের করেন।
প্রধান বিচারপতিকে দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে শপথ পড়ানোর বিধান পরিবর্তন করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে দিয়ে শপথ পড়ানোর বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক বলেন, প্রথম থেকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি একজন আরেকজনকে শপথ পড়াতেন। সেটি চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে স্পিকারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ৫ম সংশোধনীতে সেটা বাতিল করে প্রধান বিচারপতির কাছে আনা হয়। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতিকে প্রধান বিচারপতি শপথ পড়াতেন। কিন্তু ২০১১ সালে ১৫তম সংশোধনীতে আবার স্পিকারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেটি চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। রিট আবেদেনে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘রাষ্ট্রপতির শপথে প্রধান বিচারপতির অনিবার্যতা’ শীর্ষক প্রকাশিত একটি কলামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যেটি লিখেছেন রিটকারী শহীদুল্লাহ ফরায়জী।
পড়ুন: জুলাই আন্দোলন নিয়ে চলচ্চিত্র ‘দ্য রিমান্ড’ প্রদর্শনীর অনুমতি দিতে নির্দেশ হাইকোর্টের
ওই কলামের একটি অংশে বলা হয়, বিশ্বের অধিকাংশ দেশে রাষ্ট্রপতি বা প্রেসিডেন্টকে শপথ বাক্য পাঠ করান সেই দেশের প্রধান বিচারপতি। সংসদীয় সরকার পদ্ধতি বা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির দেশেও রাষ্ট্রপতি শপথ গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতির নিকট। এটা বিশ্বব্যাপী সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত রেওয়াজ। কিন্তু বাংলাদেশে এর ব্যত্যয় দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতিকে শপথ বাক্য পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার। রাষ্ট্রের প্রধানের শপথ গ্রহণের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগকে উপেক্ষা করা প্রকারান্তরে রাষ্ট্রের তিন বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য বিনষ্ট করা। এতে সংবিধানের গভীর দার্শনিক ভিত্তি থেকে রাষ্ট্র বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেই দার্শনিক ভিত্তি হচ্ছে রাষ্ট্রপতি সংসদের নির্বাচিত হয়ে প্রধান বিচারপতির নিকট শপথ গ্রহণ করে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন—এটাই হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য সাংবিধানিক নির্দেশনা। রাষ্ট্রপতির প্রধান বিচারপতির নিকট শপথবাক্য পাঠ করার এই বাধ্যবাধকতা এবং মহিমান্বিত সাংবিধানিক মর্যাদা প্রজাতন্ত্রের কেউ বিনষ্ট করতে পারেন না, কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তা করেছে।
সংবিধানের চতুর্থ ও পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এই আইন বলবৎ করা হয়েছে, যা প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে চরমভাবে সাংঘর্ষিক। এটা আইন ও বিচারবিভাগের প্রতি ছিল আওয়ামী সরকারের অসম্ভব বিদ্বেষমূলক আচরণ প্রকাশের নজির— যা সাংবিধানিক ন্যায্যতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। ‘৭২ সালের সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য ও প্রধান বিচারপতির মর্যাদা সুরক্ষার প্রশ্নে শপথ ও ঘোষণার তৃতীয় তফসিলে বলা হয়েছিলো— ‘রাষ্ট্রপতি, স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকারের শপথ প্রধান বিচারপতি কর্তৃক পরিচালিত হইবে।’ এগুলো আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের সঙ্গে বিচারবিভাগের ভারসাম্যপূর্ণ নীতি—যা সংবিধান প্রণয়নের সময়ই চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত।
১৯৭২ সালের সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য এবং চরিত্র যতটুকু সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিলো, আওয়ামী লীগ অতি দ্রুত তা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশ নামক প্রজাতন্ত্রকে আওয়ামী লীগ নামক দলটি কীভাবে দেখতে চায়— তার প্রতিফলন ঘটেছে তাদের আনীত সংবিধানের চতুর্থ ও পঞ্চদশ সংশোধনীতে। রাষ্ট্রপতির শপথ স্পিকারের নিকট; এমন দেশ খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর। বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য পুনরুদ্ধারে— রাষ্ট্রপতি, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের শপথ প্রধান বিচারপতি কর্তৃক পরিচালিত হবে, এ বিধান বাংলাদেশে আবার চালু বা পুনর্বহাল করতে হবে। প্রজাতন্ত্রের গণতান্ত্রিক ও শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিকাশের স্বার্থেই তা করা প্রয়োজন।
১৬৫ দিন আগে
তারেক-জোবায়দার দুর্নীতি মামলার রুল শুনানি ৫ জুন
ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের করা রিটের চূড়ান্ত শুনানির দিন পিছিয়ে আগামী ৫ জুন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। তারেক-জোবায়দা বিদেশে পলাতক থাকা অবস্থায় আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন কি না, সে বিষয়েও ওইদিন শুনানি হবে।
তাদের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার (২৯ মে) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ এদিন ধার্য করেন।
অন্যদিকে ওয়ান ইলেভেনে সময় অবৈধ সম্পাদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলা বাতিল চেয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারের করা আবেদনের শুনানির জন্যও সময় নিয়েছেন আসামিপক্ষ।
রবিবার সকালে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ মামলায় সময় পিছিয়ে ৫ জুন দিন ধার্য করেন।
আদালতে তারেক-জোবায়দার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। এদিন শামীম ইস্কান্দারের পক্ষে সময় আবেদন করেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
পড়ুন: ১৫ বছর পর তারেক-জোবায়দার রিট মামলা চূড়ান্ত শুনানির দিন ধার্য
তারেক-জোবায়দা
জানা যায়, ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করা হয়। মামলায় তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ও শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। পরে একই বছরে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী পৃথক রিট আবেদন করেন। রিটে জরুরি আইন ও এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন। হাইকোর্ট রুল জারি করে স্থগিতাদেশ দেন। এরপর রিট মামলাগুলো গত ২০ এপ্রিল কার্যতালিকায় আসে। পরে রুল শুনানির জন্য ২৯ মে দিন ঠিক করেন হাইকোর্ট।
আদালতে তারেক রহমান ও জোবায়দার পক্ষে তাদের আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেয়ায় দুদকের আইনজীবী প্রশ্ন তুলে বলেন, পলাতক থাকা অবস্থায় তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমান আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেন না। তখন আদালত বলেন, পলাতক থাকা অবস্থায় তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমান আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেন কি না, ৫ জুন এ বিষয়েও শুনানি হবে।
এদিকে একই মামলার বৈধতা নিয়ে আরেকটি ফৌজদারি আবেদন করেছিলেন ডা. জোবায়দা। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। ওই রুলের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে মামলা বাতিলে জারি করা রুল খারিজ করে দেন। একইসঙ্গে জোবায়দা রহমানকে আট সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন জোবায়দা রহমান। যা গত ১৩ এপ্রিল খারিজ করেন আপিল বিভাগ।
শামীম ইস্কান্দার ও তার স্ত্রী
সম্পদের তথ্য চেয়ে ২০০৭ সালে শামীম ইস্কান্দারকে নোটিশ দেয় দুদক। নোটিশের পর সম্পদের তথ্য গোপন করায় তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। ২০০৮ সালে রমনা থানায় মামলা করে দুদক। এ মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিনও নেন শামীম ইস্কান্দার ও তার স্ত্রী। ২০১৬ সালে এ মামলা বাতিল চেয়ে করা শামীম ইস্কান্দারের আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এরপর আবারও মামলা বাতিল চেয়ে এবার আপিল বিভাগে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই ও তার স্ত্রী। এর আগে গত ১৭ এপ্রিল শুনানির দিন পিছিয়ে আজ ২৯ মে নির্ধারণ করেছিলেন আপিল বিভাগ। তারই ধারাবাহিকতায় আজ এ বিষয়ে শুনানির জন্য ওঠে। পরে এদিন শামীম ইস্কান্দারের পক্ষে সময় আবেদন করেন তার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন। পরে শুনানির দিন পিছিয়ে ৫ জুন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।
পড়ুন: জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চলবে: আপিল বিভাগ
১২৮৬ দিন আগে