২০৩০ সাল
২০৩০ সালের জন্য কার্বন নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকার আরও জোরদার করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্যমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখতে ২০৩০ সালের জন্য নির্গমন হ্রাসের প্রতিশ্রুতি সাত গুন বাড়ানো দরকার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোকে তাদের ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য জোরালো আহ্বান জানিয়েছে। তিনি বলেন, সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ), স্বল্পোন্নত দেশের তহবিল (এলডিসিএফ), অভিযোজন তহবিল (এএফ) এবং জিইএফ ট্রাস্ট তহবিলকে পর্যাপ্ত সংস্থান দিয়ে শক্তিশালী করতে হবে এবং সেই তহবিলের প্রবেশাধিকার দ্রুত ও সহজ হওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: জলবায়ু সহনশীল প্রকল্পে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার তাগিদ
রবিবার (১০ ডিসেম্বর) সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে কপ২৮-এ বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সবংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পরিবেশমন্ত্রী।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, প্যারিস চুক্তির সিদ্ধান্তের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অভিযোজন ও প্রশমন এবং অনুদানভিত্তিক অর্থায়নের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ ৫০:৫০ বরাদ্দের পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ়। আমরা নতুন ও অতিরিক্ত সরকারি অর্থায়নে গুরুত্ব দেব। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে জাতিসংঘের ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যানস (এনএপি) বাস্তবায়নের জন্য দ্বিগুণ অভিযোজন তহবিল ও সমর্থনের উপর জোর দেয়, যা ৪৯টি দেশের অগ্রাধিকার। এসব দেশ ইতোমধ্যে তাদের এনএপি প্রস্তুত করেছে এবং জমা দিয়েছে। আমরা জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা অর্জনের জন্য সময়সীমাবদ্ধ বাস্তবায়নযোগ্য লক্ষ্যগুলোর ওপর জোর দিয়ে অভিযোজন সংক্রান্ত গ্লোবাল গোলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রস্তুত।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে জলবায়ুসংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি অটল, যার উদাহরণ "ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড" এবং "জিসিএ লোকাল অ্যাডাপ্টেশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড" প্রাপ্তি।
আরও পড়ুন: কপ-২৮ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক: সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও কম কার্বনের পথে বাংলাদেশ
শাহাব উদ্দিন সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে গৃহীত ৭০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষয়ক্ষতির তহবিলের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের জন্য কপ২৮-এর প্রেসিডেন্ট ও সংশ্লিষ্ট দেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
একই সঙ্গে তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, উভয় প্রশমন কর্ম কর্মসূচির অগ্রগতি, গ্লোবাল স্টক টেক (জিএসটি) এর অধীনে প্রশমন এবং ন্যায্য রূপান্তরের কর্মসূচি খুবই অপর্যাপ্ত। তিনি জরুরি ভিত্তিতে জলবায়ু অর্থের একটি সাধারণ সংজ্ঞা ঠিক করতে অর্থসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির (এসসিএফ) প্রতি আহ্বান জানান। জলবায়ু অর্থায়নের নিউ কালেক্টিভ কোয়ান্টিফাইড গোল (এনসিকিউজি) আলোচনার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) সঞ্জয় কুমার ভৌমিক এবং আবুধাবিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর এসময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি তহবিল নিয়ে আশার সঞ্চার
২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার পোশাক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়োজন দ্বিগুণ ডেনিম রপ্তানি
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ২০৩০ সাল নাগাদ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তা অর্জন করতে বাংলাদেশের ডেনিম রপ্তানি দ্বিগুণ করতে হবে।
বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর ১৫তম আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। কিন্তু ডেনিম রপ্তানিতে আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষস্থানে; এমনকি আমাদের অবস্থান চীনের চেয়েও উপরে।’
আরও পড়ুন: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে
তিনি আরও বলেন, ‘ডেনিম রপ্তানিতে বাংলাদেশের এই সাফল্যের পেছনে বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর বিশাল অবদান রয়েছে।’
প্রধান অতিথি হিসেবে আজ ঢাকায় বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর ১৫তম সংস্করণের উদ্বোধনকালে বাণিজ্যমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, বিজিএমইএ’র বর্তমান সভাপতি ফারুক হাসান, বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি এবং বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মোস্তাফিজ উদ্দিন।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসে ডেনিম ও ডেনিম সম্পর্কিত পণ্য রপ্তানি থেকে। সুতরাং, ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে ডেনিম রপ্তানি বাড়িয়ে দ্বিগুণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এটা সম্ভব। কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সাসটেইনিবিলিটির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে দৃষ্টান্তমূলক অগ্রগতি হয়েছে, তাতে আমরা বিশ্বাস করি যে ব্র্যান্ড এবং খুচরা বিক্রেতারা তাদের পছন্দের পোশাক সোর্সিং গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নেবে।’
ফারুক হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) থেকে লিড সনদপ্রাপ্ত ২০৩টি সবুজ পোশাক কারখানা রয়েছে। বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক সবুজ কারখানার উপস্থিতি সাসটেইনিবিলিটির প্রতি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের দূঢ় প্রতিশ্রুতি প্রমাণ করে।’
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের সেরা ১০০টি সবুজ কারখানার মধ্যে এখন ৫৩টি বাংলাদেশে অবস্থিত।
এস এম মান্নান কচি বলেন, ‘বর্তমানে বিজিএমইএ ও সরকার দেশে পোশাক শিল্প যাতে নির্বিঘ্নভাবে পরিচালিত হতে পারে, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে। বাংলাদেশে যে নিরাপদ ব্যবসায়িক পরিবেশে বিরাজমান, বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর ১৫তম আসরের সফল আয়োজন তাই প্রমাণ করে।’
এইচঅ্যান্ডএমের বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়ার রিজিওনাল কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, এইচঅ্যান্ডএম ২০৩০ সালের মধ্যে ৫৬ শতাংশ কার্বন ডাইঅক্সাইড কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কোম্পানির জন্য বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক করতে এইচঅ্যান্ডএম একটি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি সই করার উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি রিসাইক্লিয়ের জন্য আরও নিয়মিত পরিকল্পনা গ্রহণের উপর গুরোত্বারোপ করেন। এ ছাড়াও, উদ্ভাবনের ও নতুন কৌশলসমূহ যেগুলো পোশাক শিল্পের জন্য অত্যাবশ্যক সেগুলো আয়ত্ত্ব করার উপর জোর দেন তিনি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের রিজার্ভ-সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করছে আইএমএফ
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে, হ্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম গ্রিন সংক্রান্ত উদ্ভাবনের জন্য জিআইএফ এর সঙ্গে কাজ করছে।
অধিকন্তু, কার্বন নির্গমন ও পানি ব্যবহার কমাতে নতুন প্রযুক্তির প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ ছাড়াও তিনি পোশাক শ্রমিকদের উচ্চ মজুরি সম্পর্কে উল্লেখ করেন এবং এ বিষয়ে আলোচনা করার জন্য মন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানান।
মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘ডেনিম শিল্পে বাংলাদেশের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। ডেনিম শিল্পের সেই অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।’
বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর ১৫তম আয়োজনে ১২টি দেশের মোট ৮০ টি প্রদর্শক অংশ নিচ্ছে। আজ বুধবার থেকে শুরু হওয়া ২ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীতে অংশ নিতে দেশ-বিদেশের প্রায় পাঁচ হাজার দর্শনার্থী নিবন্ধন করেছেন।
ডেনিম এক্সপোর এবারের আসরে মোট চারটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়া হাই কমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি (ইকোনমিক) জোশুয়া গাকুটান; বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক কাজী ফাইয়াজ মুরশিদ, বিজিএমইএ’র সাবেক সহসভাপতি ও তুসুকা গ্রুপের চেয়ারম্যান আরশাদ জামাল দিপু; পুমার বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শাখা ব্যবস্থাপক মঈন হায়দার চৌধুরী; মুনির আহমেদ, পরিচালক, এম অ্যান্ড জে গ্রুপ; মোহাম্মদ আনিস আগুং নুগরোহো, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশ; মিস ক্যাথারিনা মায়ার, রিজিওনাল সিআরএম ম্যানেজার, ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট এবং তুরস্ক, ব্লুসাইন টেকনোলজিস এজি; এবং টাকার আসানো, ওয়াইকেকে বাংলাদেশ পিটিই লিমিটেডের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর ‘২০৩০ সালে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অবস্থান ও সামনের পথ’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেবেন।
'১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মানব সম্পদের উন্নয়ন ও সদ্ব্যবহার’শীর্ষক সভায় আলোচনা করবেন- জিয়াউর রহমান, রিজিওনাল কান্ট্রি ম্যানেজার, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়া, এইচএন্ডএম; ড. বার্ন্ড স্প্যানিয়ার, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেপুটি হেড অব মিশন; শরীফ জহির, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অনন্ত গ্রুপ; ড. শাহরিয়ার মাহমুদ, চিফ সাসটেইনেবিলিটি অফিসার, স্পিননোভা; সারওয়াত আহমেদ, সিনিয়র এডভাইজার, জিআইজেড; এবং ড. রবিচন্দ্রন এল, ডিরেক্টর - (প্রোডাক্ট ইনোভেশন/বিজনেস), আটলান্টিক কেয়ার কেমিক্যালস।
থিস উডস্ট্রা, বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর, আব্দুল্লাহ হিল রাকিব, পরিচালক, বিজিএমইএ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, টিম গ্রুপ; শফিউর রহমান, কান্ট্রি ম্যানেজার, জি-স্টার র; শামস মাহমুদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শাশা ডেনিমস লিমিটেড এবং সাবেক সভাপতি, ডিসিসিআই; মাত্তেও উরবিনি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সোকো কেমিক্যালস; এবং আন্দ্রেয়া ভেনিয়ার, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, অফিসিনা+৩৯ 'ডেনিম শিল্পের টেকসই পরিবর্তন' বিষয়ক প্যানেল আলোচনা করবেন।
শিল্পের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে করণী’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় বক্তাদের মধ্যে রয়েছে- আলী মুশতাক বাট, বাংলাদেশে ডেনমার্কের দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর অ্যান্ড হেড অব ট্রেড মিশন; মোহাম্মদ হাতেম, নির্বাহী সভাপতি, বিকেএমইএ; শহিদ উল্লাহ আজিম, সহ-সভাপতি, বিজিএমইএ; লুথমেলা ফরিদ, পরিচালক, প্যাসিফিক জিন্স; আদিব সাজ্জাদ, কান্ট্রি ম্যানেজার, সলভেই৮; এবং দীপক শাহ, গ্রুপ সিইও (বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনাম), টেক্স ফাস্টেনারস।
আরও পড়ুন: ড্রাইভারদের জন্য সাবস্ক্রিপশন প্যাকেজ চালু করল উবার
২০৩০ সালে লেদারপণ্যের রপ্তানি হবে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্য লেদার। লেদার শিল্পের উন্নয়ন ও রপ্তানি বৃদ্ধির প্রচুর সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে লেদার খাতের রপ্তানি এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি, আগামী ২০৩০ সালে এ রপ্তানি হতে পারে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, লেদার পণ্যের মান রপ্তানি বাজারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কাঁচামাল এবং দক্ষ জনশক্তি রয়েছে। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা লেদার শিল্পকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারি। আন্তর্জাতিক বাজারে লেদার পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে। অনেকগুলোর কাজ এখন শেষ পর্যায়ে এগুলোতে অতি সহজেই লেদার শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। ইতোমধ্যে বিনিয়োগের জন্য অনেক দেশ এগিয়ে এসেছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আরও প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি
বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবেন। দেশের দক্ষ জনশক্তির কর্মসংস্থান হবে। এ শিল্পকে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নেয়ার জন্য সরকার ঢাকার হাজারিবাগ থেকে লেদার শিল্প কলকারখানা সাভার ট্যানারিতে স্থানান্তর করেছে। এখন সেখানে উন্নত পরিবেশে আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় লেদার শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বুধবার, ৭ ডিসেম্বর ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধায় এক্সপো জোনে লেদারগুডস এন্ড ম্যান্যুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) আয়োজিত তিনদিনব্যাপী ‘লেদারটেক-২০২২’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানের সময় এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশন করে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। তখন বাংলাদেশের জন্য এলডিসিভুক্ত দেশের সুযোগ-সুবিধা থাকবে না। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করেই এগিয়ে যেতে হবে। চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে ভিয়েতনাম ও চায়নার মতো দেশগুলো থেকে লেদার শিল্প স্থানান্তর করা হচ্ছে। বাংলাদেশে জন্য এটা সুযোগ। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। উন্নতমানের পণ্য উৎপাদন করে লেদার শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে। দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের শিল্প উন্নয়নে সহায়তা দিচ্ছে। সরকারও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করছে।
লেদারগুডস এন্ড ম্যান্যুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) এর প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) এর চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ, ভারতের কমিটি অব এডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল অব লেদার এক্সপোর্টস এর সদস্য ভিপেন কুমার সেথ, ভারতের ফুটওয়্যার কমপোনেন্টস ম্যান্যুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এর ম্যানেজিং কমিটি মেম্বার ইরিক ইলিং, এএসকে ট্রেড এন্ড এক্সিবিশন প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক নন্দগোপাল কে। অনুষ্ঠানে ভোট অবে থ্যাংকস প্রদান করেন এএসকে ট্রেড এন্ড এক্সিবিশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিপু সুলতান ভূঁইয়া।
উল্লেখ্য, ৮ম বারের মতো আয়োজিত এ ‘লেদারটেক-২০২২’ এ ১০টি দেশের প্রায় ২০০টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। আগামী ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য সকাল ১১টা থেকে সন্ধা ৭টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে।
আরও পড়ুন: মিজোরামের মন্ত্রীর সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্য নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির বৈঠক
নেপালের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রীর বৈঠক
২০৩০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা ৩০ শতাংশে উন্নীত করতে চায় সরকার
কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীর বর্তমান সংখ্যা ১৭ শতাংশ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হিসেবে সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
একটি সরকারি নথি অনুসারে, সেই লক্ষ্যে সরকার স্টেম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) ভিত্তিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিচ্ছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চাহিদা পূরণের জন্য সরকার শ্রেণিকক্ষে উপযুক্ত প্রযুক্তি-ভিত্তিক বিষয় পড়ানোকে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং পাঠ্যক্রমে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বা এনসিটিবি-তে বাজেট বরাদ্দ করছে।
এছাড়া দক্ষ আইটি জনবল তৈরির লক্ষ্যে সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের চাহিদা মেটাতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৬০ হাজারেরও বেশি তরুণ-তরুণীকে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এক লাখ তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
ইতোমধ্যে ৩৬ হাজারের বেশি লোককে বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির আওতায় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) আয়োজিত প্রকল্পটি প্রায় ২ লাখ ৩৪ হাজার লোককে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে এবং তাদের বেশিরভাগই দেশে এবং বিদেশে বিভিন্ন আইসিটি কোম্পানি-প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে।
উদ্দীপিত বাস্তবতা এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটিসহ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে নথিতে বলা হয়েছে, দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপন করা হবে এবং এ ধরনের ৫৭টি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে।
৬৪টি জেলায় এবং ১৬টি ডিজিটাল ভিলেজে শেখ কামাল আইটি প্রশিক্ষণ ও ইনকিউবেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে যাতে তরুণদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়া যায়।
পাশাপাশি প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস, ব্লক-চেইন, রোবোটিক্স, বিগ ডেটা, ক্লাউড কম্পিউটিং ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি তার কার্যালয়ে (পিএমও) অনুষ্ঠিত জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) পরিচালনা পর্ষদের প্রথম বৈঠকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড কাজে লাগাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
তিনি উল্লেখ করেন, প্রতি বছর প্রায় ২২ লাখ লোক চাকরির বাজারে প্রবেশ করে। এই বিশাল জনশক্তিকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে সঠিকভাবে গড়ে তোলা গেলে তা দেশের জন্য বিরাট সুফল বয়ে আনবে।
তিনি আসন্ন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগগুলো কাজে লাগানোর জন্য প্রযুক্তি-ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্সূচিতে মনোযোগ দেয়ার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
সরকারি নথি অনুযায়ী, কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ১২ বছর আগে ছিল ১ দশমিক শুন্য শতাংশের কম, বর্তমানে এখন ১৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।
কারিগরি শিক্ষার তালিকাভুক্তির হার হল শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিসহ কারিগরি-বৃত্তিমূলক শিক্ষা কার্যক্রমে নথিভুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের শতকরা হার।
২০২২ শিক্ষাবর্ষে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ২৬ হাজার ৮৪৬ জন শিক্ষার্থী প্রাক-ভোকেশনাল কোর্সে নথিভুক্ত হয়েছে এবং ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩৪টি কারিগরি স্কুল ও কলেজের ৯ম শ্রেণির ২০ হাজার ৬১৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য নির্দেশিকা নিশ্চিতের সুপারিশ কারিগরি কমিটির
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কারিগরি কমিটির ৫ সুপারিশ
প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা হচ্ছে: শিক্ষামন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ দারিদ্র্যমুক্ত হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ দারিদ্র্যমুক্ত হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ, স্থিতিশীল, অসাম্প্রদায়িক অর্থনীতির সোনার বাংলা গড়ার মিশন নিয়েছেন। যেখানে ধনী-দারিদ্র্যের আকাশসম পার্থক্য থাকবে না।
শনিবার সন্ধ্যায় শহরতলীর খাদিমনগরের যেহীন আহমদ মিলনায়তনে ফ্রেন্ডস ইন ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ (এফআইভিডিবি) আয়োজিত শিক্ষাবৃত্তি বিতরণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এই সব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শোক
পররাষ্ট্রমন্ত্রী, দেশের মানবসম্পদকে কাজে লাগানো গেলে সমৃদ্ধ সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব। তাই, দেশের তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি বলেন, অতিদারিদ্রের সংখ্যা পাঁচ শতাংশের নিচে নামলে দেশ দারিদ্রমুক্ত বলে গণ্য হয়। আমাদের দেশে এখন অতিদারিদ্রের সংখ্যা সাড়ে ১০ শতাংশ। করোনার কারণে দারিদ্র্যের হার কমছে না। তবে, আমরা লক্ষ্য বাস্তবায়নে সফল হবো।
ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, কুয়েত, রোমানিয়াসহ ইউরোপের বিশ্বের বিভিন্ন দেশ স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ লোকবল নিতে আগ্রহী। আমরা সেভাবে লোকবল পাচ্ছি না। অনেক স্কলারশিপও পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে জানে না বলে আবেদন করেন না।
মন্ত্রী বলেন, এ বছর বঙ্গবন্ধু উচ্চশিক্ষা বৃত্তি-২০২১ চালু করা হয়েছে। এজন্য মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত তিন জন এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত দুই জন শিক্ষার্থীকে আগামী চার বছর প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে মোট ১৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: বহির্বিশ্বে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধির আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
এফআইভিডিবি পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মোহাম্মদ সাফওয়ান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, এফআইভিডিবির নির্বাহী পরিচালক বজলে মোস্তফা রাজী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান, এফআইভিডিবি পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।