গ্লোবাল সাউথ
গ্লোবাল সাউথে পরিবর্তনের প্রতিনিধি হতে হবে মেয়েদের: ব্রিকস মধ্যাহ্নভোজে প্রধানমন্ত্রী
গেলাবাল সাউথে নারী ও মেয়েদের পরিবর্তনের প্রতিনিধি হওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি-৫ অর্জনে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘গ্লোবাল সাউথে আমাদের নারী ও মেয়েদের পরিবর্তনের প্রতিনিধি হওয়ার জন্য অবশ্যই একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এসডিজি-৫ অর্জনে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে মধ্যাহ্নভোজে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করে জোটটির বর্তমান সভাপতি রাষ্ট্র দক্ষিণ আফ্রিকা।
ব্রিকস সদস্য দেশ এবং অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ৫টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে মঙ্গলবার ঢাকা ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী
সেগুলো হলো-
প্রথমত, আমাদের নারী ও মেয়েদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার উপর চলমান খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক সংকটের বিরূপ প্রভাব প্রশমিত করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, মেয়েদের স্কুলে রাখতে অতিরিক্ত প্রচেষ্টা করুন, সাইবার অপরাধ থেকে তাদের সুরক্ষিত রাখুন এবং তাদের মধ্যে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল বিভাজন হ্রাস করুন।
তৃতীয়ত, নারীদের লাভজনক কর্মসংস্থান, উপযুক্ত কাজ, মজুরি সমতা ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুযোগ প্রসারিত করুন।
চতুর্থত, ক্রমবর্ধমান জলবায়ু প্রভাবের কারণে নারীদের সুরক্ষা ও স্থিতিস্থাপকতার প্রয়োজনীয়তার দিকে গভীরভাবে নজর দিন।
পঞ্চমত, সক্রিয় ও দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়তে নারীদের জন্য সুষম প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্র গড়ে তুলুন।
আরও পড়ুন: ১৫তম ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে দ. আফ্রিকা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
তিনি সংবিধানের ২৮(২) অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে বলেন, রাষ্ট্র ও জনজীবনের সব ক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে নারীর সমান অধিকার থাকবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতীয় সংসদে একটি অনন্য ঘটনা রয়েছে। যেখানে আমাদের স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধী দলীয় নেতা ও সংসদের উপনেতা সবাই নারী।’
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক, বেসামরিক প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিভিন্ন পদে নারীদের জন্য দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীদের জন্য ৩০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকায় ক্রমবর্ধমান সংখ্যক নারী রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি মনে করেন শিক্ষা ও কর্মসংস্থান দুটি মূল উপাদান, যা নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘তাই নারী শিক্ষার উপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে জোহানেসবার্গ পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা বিনামূল্যে করা হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ে ভর্তির হার বেড়েছে দাঁড়িয়েছে ৯৯ শতাংশে। মেয়ে ও ছেলেদের স্কুলে ভর্তির অনুপাত বেড়ে হয়েছে ৫৩:৪৭।
তিনি আরও বলেন, প্রায় আড়াই কোটি শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন উপবৃত্তি ও বৃত্তি কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে এবং উপবৃত্তির টাকা সরাসরি তাদের মুঠোফোনের মাধ্যমে মা বা বৈধ অভিভাবকদের কাছে পৌঁছানো হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হচ্ছে। নারী শিক্ষার ক্রমবর্ধমান হার বাল্যবিবাহের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষায় ৬০ শতাংশ শিক্ষকের পদ নারীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত ছিল।
আরও পড়ুন: ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার যাত্রায় যোগ দিন: দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, নারীরা আমাদের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের মেরুদণ্ড, যেখানে ২৫ লাখ নারী সরাসরি এই খাতে কাজ করছেন। নারীরা ব্যবসায়ও ভালো করছেন এবং সরকার ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগগুলোতে তাদের জন্য ঋণ, প্রশিক্ষণ ও বাজারে প্রবেশাধিকারের ব্যবস্থা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের গ্রামের নারীদের অনেকেই এখন আইটি ফ্রিল্যান্সার বা স্থানীয় ডিজিটাল সেন্টারে অংশীদার হিসেবে কাজ করেন।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় প্রতিবন্ধীসহ সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা নারীরাও রয়েছেন। আমি আমার বিনামূল্যে আবাসন প্রকল্প আশ্রয়ণের আওতায় স্বামী ও স্ত্রীর যৌথ মালিকানার ব্যবস্থা করেছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সাউথ সাউথ কো-অপারেশন বিষয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের নতুন ফোরাম গঠনের জোরালো আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সাউথ সাউথ কো-অপারেশন বিষয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের নতুন ফোরাম গঠনের জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, এ ফোরামের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে গ্লোবাল সাউথের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করার সুযোগ পাবে।
আরও পড়ুন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দেবেন
শনিবার নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে ‘সাউথ সাউথ কো-অপারেশনকে আরও দৃঢ় করার প্রত্যয়ে একটি নতুন মন্ত্রী পর্যায়ের ফোরাম প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব’- বিষয়ে আয়োজিত একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এসময় এই ফোরাম প্রতিষ্ঠার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এই মুহুর্তে সাউথ সাউথ কো-অপারেশনে মন্ত্রী পর্যায়ের কোন প্ল্যাটফর্ম নেই। তাই তিনি ২০১৯ সালের মার্চে আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত বিএপিএ+৪০ সম্মেলনে গ্লোবাল সাউথের পররাষ্ট্র/অর্থ/উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রীদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের ফোরাম প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন।
এ বৈঠকে আর্জেন্টিনা, চীন, কিউবা, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালাউই, মরক্কো, নেপাল, ফিলিপাইন, রুয়ান্ডা, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, সলোমন দীপপুঞ্জ, থাইল্যান্ড, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম ও সংযুক্ত আরব আমিরাত-এর স্থায়ী প্রতিনিধি এবং রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
অংশগ্রহণকারী দেশগুলো টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ সালের এজেন্ডা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি অর্জনে সাউথ সাউথ কো-অপারেশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।
তারা এই গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব আনয়নের জন্য বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
কিউবা, কেনিয়া, মিশর, রুয়ান্ডা এবং মরক্কো-এর প্রতিনিধিরা এই ফোরাম প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবের প্রতি অকুন্ঠ সমর্থনের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
এছাড়াও, এ বিষয়ে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নেপালের প্রতিনিধিরা গঠনমূলক বক্তব্য রাখেন। বক্তারা প্রস্তাবটিকে বাণিজ্য, অর্থ, বিনিয়োগ, জ্ঞান ভাগাভাগি সহ সাউথ সাউথ কো-অপারেশন এর অব্যবহৃত সুযোগ কাজে লাগানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচনা করছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বৈঠকটি পরিচালনা করেন এবং এতে তিনি স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এসময় সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের জাতিসংঘ অফিসের একজন প্রতিনিধিও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মানে নিউইয়র্কে বিসিআইইউয়ের বাণিজ্যবিষয়ক বৈঠক
রোহিঙ্গা রেজুলেশন বাস্তবায়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর