এলএনজি টার্মিনাল
এলএনজি টার্মিনাল থেকে উৎপাদন শুরু, চট্টগ্রামসহ অন্য স্থানে গ্যাস সরবরাহে উন্নতি
মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের ৪৫ দিনের রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি শেষে উৎপাদন শুরু হওয়ার পর চট্টগ্রামসহ অন্যান্য স্থানে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে।
এক্সিলারেট এনার্জির এফএসআরইউ শনিবার (২০ জানুয়ারি) নির্ধারিত রক্ষণাবেক্ষণের পরে উৎপাদন শুরু করেছে।
রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এখন এটি প্রতিদিন ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) গ্যাস সরবরাহ করবে এবং আশা করছি শিগগিরই সরবরাহ ৫০০ এমএমসিএফডিতে পৌঁছাবে।
আরও পড়ুন: ফতুল্লায় গ্যাস বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৪ জন দগ্ধ
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান আরপিজিসিএল বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি এবং মহেশখালীতে বিদ্যমান দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে রি-গ্যাসিফিকেশন সেবা গ্রহণ করেছে। একটি সামিট গ্রুপ ও অন্যটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক্সেলারেট এনার্জি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।
প্রতিটি এলএনজি টার্মিনালে জাতীয় গ্যাস নেটওয়ার্কে ৫০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করার ক্ষমতা রয়েছে। এর বড় অংশ চট্টগ্রামে সরবরাহ করা হয়।
এক্সেলারেট এনার্জির এফএসআরইউ ৪৫ দিনের রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচিতে জাতীয় গ্যাস গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ স্থগিত করে এবং সামিটের এফএসআরইউ কারিগরি ত্রুটির কারণে জাতীয় গ্যাস নেটওয়ার্কে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। যার ফলে চট্টগ্রাম ও অন্য স্থানে গ্যাস সংকট দেখা দেয়।
আরও পড়ুন: তীব্র গ্যাস সংকটে চট্টগ্রাম নগরবাসী
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের অনেক এলাকায় চরম গ্যাস সংকট বা গ্যাসের নিম্নচাপের সমস্যা দেখা দিয়েছে।
আরপিজিসিএল কর্মকর্তা জানান, সামিটের এফএসআরইউ খুব স্বল্প পরিসরে উৎপাদন শুরু করেছে এবং ৫০০ এমএমসিএফডি ক্ষমতার বিপরীতে ১৩০ এমএমসিএফডি সরবরাহ করছে।
তিনি উল্লেখ করেন, গ্যাস সংকটের সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা নেই কারণ সামিটের এফএসআরইউতেও তিন থেকে চার দিনের মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি শুরু করার সময়সূচি রয়েছে।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, আমরা মনে করি পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে, তবে পুরোপুরি নয়।
এদিকে জ্বালানি বিভাগ মহেশখালীতে কারিগরি ত্রুটির কারণে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য স্থানে গ্যাস সংকট নিয়ে গ্রাহকদের অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন: ঢাকা ও আশপাশের শিল্পকারখানায় সিএনজি হিসেবে আসছে ভোলার গ্যাস
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মহেশখালী এলএনজি এফএসআরইউতে কারিগরি ত্রুটির কারণে শুক্রবার ভোর থেকে চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
পেট্রোবাংলা ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটাতে আরও ৩টি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করতে চায়
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলা আমদানি করা গ্যাস পুনরায় গ্যাসীকরণের জন্য বর্তমানে চালু থাকা দুটির পাশাপাশি আরও তিনটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জেনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, প্রস্তাবিত তিনটি নতুন এলএনজি টার্মিনাল পায়রা, মহেশখালী এবং মাতারবাড়িতে স্থাপন করা হবে যার মোট রিগ্যাসিফিকেশন ক্ষমতা হবে দুই হাজার থেকে তিন হাজার এমএমসিএফ/ডি।
জেনেন্দ্র জানান যে তিনটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হবে, তার মধ্যে দুটি ভাসমান হবে- যা ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) নামে পরিচিত, আর একটি হবে ভূমিভিত্তিক টার্মিনাল।
আরও পড়ুন: এলএনজি আমদানিতে জিডিএফ থেকে ২০০০ কোটি টাকা পাবে পেট্রোবাংলা
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, তিনটি এলএনজি টার্মিনালই দেশি-বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে প্রাপ্ত অযাচিত অফারগুলোর ভিত্তিতে স্থাপন করা হবে।
দু’টি ভাসমান স্টোরেজ এবং রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট ২০১৮ সাল থেকে চালু রয়েছে। যার মধ্যে একটি কক্সবাজারের মহেশখালীতে ইউএসএ এর এক্সেলরেট এনার্জি প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং একই এলাকায় একই ক্ষমতার আরেকটি সামিট গ্রুপ স্থাপন করেছিল।
স্থাপিত তিনটি টার্মিনালের মধ্যে এক্সেলরেট এনার্জি পায়রা অঞ্চলের জন্য একটি অফার দিয়েছে এবং সামিট গ্রুপ মহেশখালীর জন্য একটি অফার দিয়েছে। পেট্রোবাংলা মাতারবাড়ি এলাকার জন্য ১২টি প্রতিষ্ঠানকে তালিকাবদ্ধ করেছে।
পায়রা এবং মহেশখালীর প্রতিটি এফএসআরইউর ৫০০ থেকে এক হাজার এমএমসিএফ/ডি গ্যাস পুনরায় গ্যাসীকরণ করার ক্ষমতা থাকবে।
সম্প্রতি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘আলোচনা দ্রুত এগিয়ে চলছে... আমরা পায়রা এবং মহেশখালী টার্মিনালের জন্য মেয়াদী চুক্তিপত্র প্রস্তুত করেছি এবং অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে বাণিজ্যিকভাবে এলএনজি সরবরাহে সহায়তার আশ্বাস সৌদি আরবের
পেট্রোবাংলা মাতারবাড়ি ভূমিভিত্তিক টার্মিনালের জন্য জমির আসল মালিক বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছ থেকে একটি অনাপত্তি সনদ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
জেনেন্দ্র বলেন, ‘আমরা একবার এনওসি পেয়ে গেলে আমাদের দল এবং পরামর্শদাতা মাতারবাড়ি টার্মিনালের জন্য ফার্ম নির্বাচন করতে প্রস্তুত।’ মাতারবাড়ি ভূমি-ভিত্তিক টার্মিনালের প্রাথমিক ক্ষমতা থেকে সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প থাকবে।
তিনি অবশ্য বলেন, সরকার যদি এখন টার্মিনাল স্থাপনের অনুমোদন দেয়, তাহলে এগুলো স্থাপন ও অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হতে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে।
তিনি নতুন এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের জন্য পেট্রোবাংলার পদক্ষেপকে ন্যায্যতা দিয়ে বলেছেন যে দেশে গ্যাস সরবরাহের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে এবং এটি ২০৩০ সালের মধ্যে ছয় হাজার ৫০০ এমএমসিএফ/ডি-তে পৌঁছাবে যা বর্তমান চাহিদা ৪০০০ এমএমসিএফ/ডি সরবরাহের বিপরীতে ৩০০০ এমএমসিএফ/ডি।
এই পদক্ষেপ না নিলে দেশে গ্যাস সরবরাহে আরও ঘাটতি দেখা দেবে বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান।
আরও পড়ুন: এলএনজি আমদানি স্থগিত সত্ত্বেও সরবরাহকারী সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সরকারের