স্থায়ী সমাধান
রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ: রাষ্ট্রদূত তারেক
রোহিঙ্গাদের রাখাইনে স্বেচ্ছা, নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে এই সংকটের একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার জন্য সব পক্ষের সাথে কাজ করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো. আরিফুল ইসলাম।
শুক্রবার (৪ জুলাই) জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের চলমান ৫৯তম অধিবেশনে ওআইসির উত্থাপিত ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার প্রাক্কালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা এবং তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য দ্রুত একটি অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত দায়িত্ব।
রাখাইনে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী এবং আরাকান আর্মির মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যকার চলমান সংঘাত মানবিক সহায়তা কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে বলেও মন্তব্য করেন এই রাষ্ট্রদূত।
শনিবার (৫ জুলাই) জেনেভায় বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, রাখাইনের সংঘাতে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলছে বলে বাংলাদেশের বক্তব্যে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
রাখাইন রাজ্যে চলমান হত্যাযজ্ঞ, নিপীড়ন এবং সহিংসতা এড়াতে শুধু ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ আঠারো হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বলে জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।
এ ছাড়াও, আগামী সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে রোহিঙ্গা নিয়ে অনুষ্ঠেয় উচ্চ-পর্যায়ের সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে বাস্তবমুখী এবং সময়াবদ্ধ সমাধান খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ এশিয়ায় জাপানের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার: ড. ইউনূসকে জাইকা শীর্ষ কর্মকর্তা
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের চলমান ৫৯তম অধিবেশনে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কিত প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের জন্য ক্রমহ্রাসমান মানবিক সহায়তার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অধিকতর দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে জোর দেয়া হয়।
এ ছাড়াও, এতে জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাগুলোকে রাখাইনে নিরবিচ্ছিন্ন এবং পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
প্রস্তাবটিতে রাখাইনে বিচারহীনতা ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি অবসানের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেয়া হয়। এর পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যের সব স্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের অংশগ্রহণ এবং অর্থপূর্ণ প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন কাঠামো স্থাপনের আহ্বান জানানো হয়।
গত ১৬ জুন শুরু হওয়া জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের চলমান ৫৯তম অধিবেশন আগামী ৯ জুলাই শেষ হবে।
১৫৩ দিন আগে
রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক সমর্থনের জন্য ওআইসি-ইউএনএইচসিআরের প্রতি আহ্বান বাংলাদেশের
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের উপর সংঘটিত নৃশংসতার জবাবদিহি নিশ্চিত, তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন বা তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসন হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সফররত ওআইসি-ইউএনএইচসিআরের (ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা-জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার) যৌথ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ কথা বলেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব ওআইসি-ইউএনএইচসিআর যৌথ প্রতিনিধি দলকে এই মর্মান্তিক সংকটের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে জোরালো আন্তর্জাতিক সমর্থন না পাওয়া ও প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
ওআইসি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন মানবিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিকবিষয়ক সহকারী মহাসচিব রাষ্ট্রদূত তারিগ আলী বাখেত; খালেদ খলিফার নেতৃত্বে ইউএনএইচআরসি প্রতিনিধি দল; হাইকমিশনারের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা; উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা (জিসিসি) ভুক্ত দেশগুলোর জন্য ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি এবং অন্যান্য উন্নয়ন অংশীজনরা ৬ থেকে ১১ আগস্ট বাংলাদেশ সফর করছেন।
আরও পড়ুন: বিশ্বজুড়ে সংকট সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের ভুলে যায়নি ইইউ: ইউএনবিকে গিলমোর
পররাষ্ট্র সচিব উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়েছে।
তিনি রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন এবং তাদের প্রত্যাবাসনের অধিকার নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ, আঞ্চলিক সংস্থা এবং অন্যান্য বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর অর্থবহ সম্পৃক্ততার বিষয়ে বাংলাদেশের অভিপ্রায় পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত মানবিক সহায়তারও প্রশংসা করেন।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ওআইসি ও ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি দলের সফরের প্রশংসা করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ। তিনি বলেন, প্রতিনিধি দলটি এই সংকট সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ধারণা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা লাঘবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত প্রচেষ্টা প্রত্যক্ষ করেছে।
তিনি বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব উৎস থেকে ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে বাস্তবায়িত ভাসানচর প্রকল্প সম্পর্কেও প্রতিনিধি দলকে জানান।
ওআইসি মহাসচিবের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করে পররাষ্ট্র সচিব গাম্বিয়ার দায়ের করা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলার প্রতি দৃঢ় সমর্থন এবং ওআইসির বিভিন্ন ফোরামে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোকপাত বজায় রাখার আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্য এর মহাসচিবের প্রশংসা করেন।
আরও পড়ুন: অনেক বৈশ্বিক নেতৃত্ব এই মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চান না: মোমেন
গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলাটি অপর্যাপ্ত অর্থায়ন এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য মানবিক কার্যক্রমে সহায়তা হ্রাস পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মাসুদ ওআইসির পাশাপাশি উপসাগরীয় দেশগুলোকে রোহিঙ্গাদের জন্য তাদের সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
বৈঠকে ওআইসির সহকারী মহাসচিব রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, সুরক্ষা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রশংসা করেন।
তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে গঠনমূলকভাবে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে ওআইসির অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘প্রত্যাবাসনই এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধান।’
হাইকমিশনারের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এবং জিসিসিভুক্ত দেশগুলোতে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি অর্থায়নের উৎসে বৈচিত্র্য আনার পরামর্শ দেন।
আরও পড়ুন: পুনর্বাসন কর্মসূচি: সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টা চলছে
এর আগে ওআইসি ও ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি দল ১০ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে মুখ্য সচিব কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়টি সফররত প্রতিনিধি দলের কাছে তুলে ধরেন এবং জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে (জেআরপি) আরও অবদানের আহ্বান জানান।
তিনি সফররত প্রতিনিধি দলকে রোহিঙ্গাদের জন্য যৌথভাবে নিবেদিত কর্মসূচি আয়োজনের অনুরোধ জানান এবং বিষয়টিকে বৈশ্বিক আলোচ্যসূচিতে সক্রিয় রাখতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
ওআইসি ও ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি দলে মিয়ানমারে নিযুক্ত ওআইসির বিশেষ দূত ইব্রাহিম আহদি খাইরাত, ইসলামিক সলিডারিটি ফান্ড (আইএসএফ), কাতার ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (কিউএফএফডি), কুয়েতের যাকাত হাউস এবং কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের (কেএফএইডি) প্রতিনিধিরা রয়েছেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করতে ওআইসির প্রতি আহ্বান বাংলাদেশের
৮৪৭ দিন আগে