শান্তি ও স্থিতিশীলতা
শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্থবহ ও টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত: ড. ইউনূস
বৈশ্বিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বিশ্বনেতাদের অবশ্যই একত্রিত হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘মিয়ানমারের দীর্ঘস্থায়ী সংকট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) কাতারের দোহায় আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশ ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে— যার কারণে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত উল্লেখযোগ্য ক্ষতি রয়েছে। সংহতির নিদর্শন হিসেবে সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। বৈশ্বিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বিশ্বনেতাদের অবশ্যই একত্রিত হতে হবে।’
আরও পড়ুন: টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় ড. ইউনূস
তিনি বলেন, ‘আজকের সংকটপ্রবণ বিশ্বে যুদ্ধ ও সংঘাত অধিকার খর্ব করে এবং অর্থনীতিকে ব্যাহত করে। শান্তি ও স্থিতিশীলতা যেকোনো অর্থবহ ও টেকসই উন্নয়নের মৌলিক পূর্বশর্ত। ফিলিস্তিন থেকে শুরু করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা পর্যন্ত যে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে, তা বিশ্বের উপেক্ষা করা উচিত নয়।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিচারহীনতা এবং মানবাধিকারের প্রতি নির্লজ্জ অবজ্ঞা বিশ্বের যেকোনো দেশের উন্নয়নের জন্য হুমকি। ফিলিস্তিনে চলমান দুর্দশা কেবল একটি অঞ্চলকে নয়, পুরো মানবতাকে উদ্বিগ্ন করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদিও আমরা সবার জন্য একটি স্থিতিস্থাপক, সমৃদ্ধ ও টেকসই ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখি, তবে বিভিন্ন হুমকি রয়েছে, যা আমাদের ভবিষ্যতের উন্নয়নকে লাইনচ্যুত করতে পারে। আমরা গভীর অনিশ্চয়তার সময়ে বাস করছি, যেখানে বহুপাক্ষিকতা মারাত্মক হুমকির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তন ত্বরান্বিত হচ্ছে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে এবং মানবিক সংকট গভীর হচ্ছে। উদীয়মান নিয়ম, প্রযুক্তি ও শাসন মডেলগুলো বিশ্বকে দ্রুত নতুন আকার দিচ্ছে; অতীতের অনেক অনুমানকে অপ্রচলিত করে তুলছে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার নবায়নযোগ্যতার তাগিদ কখনও এতটা ছিল না।’
দোহায় আজ (মঙ্গলবার) শুরু হওয়া দুদিনব্যাপী দ্বিতীয় আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আমাদের উত্তরাধিকার গড়ে তোলা: স্থায়িত্ব, উদ্ভাবন ও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান’।
আরও পড়ুন: নির্বাচন নিয়ে ড. ইউনূসের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখতে চায় জামায়াত
এই শীর্ষ সম্মেলন এমন একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে, যেখানে ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান ও উদ্ভাবনী পন্থাগুলো আধুনিক টেকসই উন্নয়নে কীভাবে অবদান রাখতে পারে, তা অনুসন্ধান করা হয়, যা একটি আরও সহনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গঠনে সহায়তা করবে।
২২৭ দিন আগে
ইন্দো-প্যাসিফিক জুড়ে ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা’ চায় যুক্তরাজ্য
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্বাগতিক সম্প্রদায়ের জন্য জরুরি মানবিক সেবা দিতে আরও ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ডের তহবিল ঘোষণা করেছেন যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়কমন্ত্রী অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ান।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ব্যাংককে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) আঞ্চলিক সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডির সঙ্গে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ব্যাংককে রোহিঙ্গা শরণার্থীবিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের আঞ্চলিক বৈঠক ১৭ অক্টোবর
ট্রেভেলিয়ান বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধান খুঁজতে যুক্তরাজ্য অঙ্গীকারবদ্ধ। এর মধ্যে রয়েছে মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন অন্তর্ভুক্ত, যখন সেখানকার পরিস্থিতি উপযুক্ত হবে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে যেতে না পারা পর্যন্ত আমরা চলমান মানবিক সহায়তা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এজন্য আমরা বাংলাদেশে শরণার্থীদের সুরক্ষা সেবা, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির জন্য যুক্তরাজ্যের আরও ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ড সহায়তা ঘোষণা করছি।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে টেকসই সমাধান এবং রোহিঙ্গা ও তাদের স্বাগতিক দেশগুলোর প্রতি সমর্থন নিয়ে আলোচনার জন্য আজকের সম্মেলন একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।’
৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ডের তহবিলের মধ্যে রয়েছে-
রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির জন্য আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মাধ্যমে ২ দশমিক ১ মিলিয়ন পাউন্ড।
শরণার্থী ও স্বাগতিক সম্প্রদায়ের সুরক্ষার জন্য এনজিওগুলোর মাধ্যমে ২ মিলিয়ন পাউন্ড। এনজিওগুলির মধ্যে রয়েছে- নরওয়েজিয়ান রেফিউজি কাউন্সিল, ড্যানিশ রেফিউজি কাউন্সিল, ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি এবং হিউম্যানিটি অ্যান্ড ইনক্লুশন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের আঞ্চলিক বৈঠকে যোগ দিতে ব্যাংককে মোমেন
লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিক্রিয়া জানাতে এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) মাধ্যমে ৪ লাখ ৫০০০০ হাজার পাউন্ড।
সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডির সঙ্গে বৈঠক করবেন ট্রেভেলিয়ান।
২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সহায়তার জন্য ৩৭০ মিলিয়ন পাউন্ড এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘুদের সহায়তার জন্য প্রায় ৩০ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়েছে যুক্তরাজ্য।
এর মধ্যে খাদ্য, পানীয়, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যসেবা এবং সুরক্ষা পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যা ক্যাম্পগুলোর নারী ও মেয়েদের জন্য অত্যাবশ্যক।
যুক্তরাজ্য ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা’ সমর্থন করে এবং মিয়ানমারের জনগণের পাশে রয়েছে বলে জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘আমরা সকল সহিংসতার অবসান এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য এবং প্রয়োজনীয় সকলের কাছে নিরাপদ ও বাধাহীন মানবিক অভিগম্যতার জন্য আমাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি।’
২০২৩ সালের মার্চে প্রকাশিত ইন্টিগ্রেটেড রিভিউ রিফ্রেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রোহিঙ্গাদের প্রতি যুক্তরাজ্যের অব্যাহত সমর্থন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতি তার দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে।
আরও পড়ুন: আসন্ন সফরে নির্বাচন ও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবেন মার্কিন কর্মকর্তা আফরিন আখতার: মোমেন
৭৮০ দিন আগে