অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখেও আসন্ন বাজেটে যা থাকছে
আগামী ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য জাতীয় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের অর্থনীতি নানা চাপের মুখে পড়লেও এই বাজেট স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এটি হতে যাচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন দিলে অন্তর্বর্তী সরকারের একমাত্র বাজেট হবে এটি।
বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অনিশ্চয়তার মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বেসরকারি বিনিয়োগ জোরদার করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে মজবুত করার মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বর্তমান সরকার।
সংসদ না থাকায় ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট এবার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হবে। আগামী ২ জুন সোমবার বিকাল ৪টায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের বাজেট বক্তৃতা সম্প্রচার করা হবে। বৃহস্পতিবার এক তথ্যবিবরণীতে এমন খবর দিয়েছে সরকার।
সবশেষ সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই বছরের ৯ জুন তখনকার অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন।
এবারের বাজেট কিছুটা ছোট হবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়ে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
জুলাইয়ে নতুন অর্থবছর শুরুর পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এবার বাজেটের আকার সামান্য ছোট হবে বলে ধারণা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। খসড়া অনুযায়ী বাজেটের আকার ঠিক হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার মত।
ওই অংক চূড়ান্ত হলে স্বাধীনতার পর এই প্রথম বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের তুলনায় কমছে।
অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এবারের বাজেট কমানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি দুই লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে, যা চলতি বছরের দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার থেকে কম।
অর্থাৎ বাজেট ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩.৬২ শতাংশ হবে। এই ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার বিদেশি ঋণ, ব্যাংক ঋণ এবং সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করবে।
অর্থ উপদেষ্টা জানান, জিডিপির উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫.৫ শতাংশ, যা চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটের ৫.২৫ শতাংশের থেকে কিছুটা বেশি। তবে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৫ শতাংশের নিচে প্রবৃদ্ধি অনুমান করছে।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটিতে এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ
সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। এটিকে সাত শতাংশে নামিয়ে আনতে চাচ্ছে সরকার। যদিও অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেছেন যে, চলমান মূল্যস্ফীতির চাপ এই লক্ষ্য পূরণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর আর্থিক সুরক্ষার জন্য বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারিত হবে। সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও ভাতা উভয়ই বৃদ্ধি পাবে। কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং প্রযুক্তি খাত বাজেটের অগ্রাধিকারপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ চলতি রাজস্ব বছরে দুই লাখ ৬৫ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এতে সরকার যে বিনিয়োগবান্ধব পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
আসন্ন বাজেটকে ব্যবসা-বান্ধব আখ্যায়িত করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে করনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও পাঁচ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার আগ্রাসী লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা আইএমএফ।
অনুন্নয়ন বাজেট পাঁচ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এতে বর্তমান রাজস্ব বছরের বরাদ্দের চেয়ে যা ২৮ হাজার কোটি টাকা বাড়বে।
সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখবে। কৃষি, সার ও বিদ্যুতের জন্য ভাতা অব্যাহত থাকবে। তবে, বাজেট ঘোষণার প্রাক্কালে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের আশা করছেন, আবার কেউ বাস্তবায়নের জটিলতাকে নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
কাঠামোগত সংস্কার ও কার্যকর বাস্তবায়ন ছাড়া বাজেটের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য পূরণ কঠিন হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা সম্পদ কর বাড়ানো এবং কর আদায় ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে সরাসরি কর বৃদ্ধি এবং পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
১৮৮ দিন আগে
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে ‘মন্থর সংস্কার’ নিয়ে সতর্ক করলেন ড. দেবপ্রিয়
বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক করেছেন শ্বেতপত্রবিষয়ক কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সরকার তার সংস্কার কার্যক্রম ত্বরান্বিত না করলে বাংলাদেশে সংস্কারপন্থী মনোভাবের গুরুত্ব কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এর মানে হলো, যারা এখন সংস্কারের পক্ষে, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে একপর্যায়ে তারা ভারসাম্যপূর্ণ সংস্কার থেকে সরে আসতে পারেন।’
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘শ্বেতপত্র ও অতঃপর: অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রবৃদ্ধির প্রবণতা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সুরক্ষা মোকাবিলার গুরুত্বের কথাও তুলে ধরেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক।
দেশে নির্বাচন ও সংস্কারকে কেন্দ্র করে বর্তমানে সংঘাতের সৃষ্টি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ড. দেবপ্রিয়। এছাড়া ধীরগতির প্রবৃদ্ধি, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের অভাব ও কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জকে জরুরি বিষয় হিসেবে উল্লেখ করে আসন্ন বাজেট নিয়ে বিস্তৃত আলোচনার আহ্বান জানান তিনি। তার মতে, ‘প্রবৃদ্ধির হার বিশেষ করে ধীর হয়ে পড়ছে, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে না, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও সমস্যা বিদ্যমান।’
আরও পড়ুন: ১৫ বছরে অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি: শ্বেতপত্র
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সুস্পষ্ট অর্থনৈতিক ইশতেহার উপস্থাপন না করায় সরকারের সমালোচনা করেন এই গবেষক।
তিনি বলেন, একটি সমন্বিত নীতি কাঠামোর এই অভাব মূল্যায়ন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের গৃহীত বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপগুলো স্বীকার করার পাশাপাশি তিনি একটি সুষম ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য বিস্তৃত পরিকল্পনার ঘাটতির কথাও তুলে ধরেন।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, এলডিসি উত্তীর্ণ হওয়ার মতো বিষয়গুলো সরকার কীভাবে মোকাবিলা করবে এবং পিছিয়ে পড়াদের মধ্যমেয়াদি সহায়তা দেবে— সে বিষয়েও আমাদের স্পষ্টতা প্রয়োজন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রণীত বাজেটের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান সরকার সংশোধিত বাজেট পেশ না করায় আগের বাজেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সূচক অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।
উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে স্বচ্ছতার অভাবেরও সমালোচনা করেন এই অর্থনীতিবিদ। বলেন, ‘এসব প্রকল্প যাচাই-বাছাই করার জন্য দৃশ্যমান নীতিমালা না থাকলে এগুলোর প্রভাব ও সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে।’
আরও পড়ুন: ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত
৩২১ দিন আগে
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠবে বাংলাদেশ: ডিসিসিআই সভাপতি
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ও টাকার অবমূল্যায়নের মতো কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে সেসব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠবে দেশ।
শনিবার (২০ জানুয়ারি) রাজধানীতে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সভাপতি।
অতীতের মতো বাংলাদেশ যত দ্রুত সম্ভব এসব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত বিরোধী দল রাজপথ ছাড়বে না: বিএনপি
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতই অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চেষ্টা করছে।
তবে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীলতার ধারায় ফিরিয়ে আনতে এ বছর বেসরকারি খাতকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ডিজিটাল সংযুক্তির মাধ্যমে সিএমএসএমইগুলোকে প্রযুক্তিভিত্তিক করা এবং সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে শরণার্থীদের দায়িত্ব নেওয়া উচিত প্রতিটি দেশের: ডেভিড ক্যামেরন
তিনি আমদানি বিকল্প শিল্পের উপর গুরুত্বারোপ করেন। একই সঙ্গে ডেডিকেটেড ক্রেডিট লাইন, ঋণ গ্যারান্টি ও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল উদ্যোগের মাধ্যমে সিএমএসএমই এবং শিল্পভিত্তিক স্টার্টআপগুলোর জন্য অর্থায়নে অ্যাক্সেস বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, রপ্তানি ফ্যাক্টরিং, আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহে আরও প্রণোদনা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি করতে পারে।
বাণিজ্য অবকাঠামো ও পুঁজিবাজারে অংশগ্রহণের জন্য অল্টারনেটিভ ট্রেড বোর্ডকে (এটিবি) উৎসাহিত করারও দাবি জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকার ২টি ফ্লাইট নামল সিলেটে
ডিসিসিআই সহসভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী, সহসভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
৬৮৫ দিন আগে