মক্কা-মদিনা
হজযাত্রীদের সেবায় চালু হচ্ছে হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার: থাকবে অ্যাপ
হজযাত্রীদের নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত সেবা দিতে দেশে ও মক্কা-মদিনায় ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’ স্থাপন করা হচ্ছে। সেন্টার থেকে হজযাত্রীদের লাগেজ হারানো ও অসুস্থ হওয়াসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান, উদ্ভূত সমস্যার সমাধান, অভিযোগ নিষ্পত্তি, প্রশ্নের জবাব এবং প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত একত্রে পাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণে একটি অ্যাপও চালু করা হচ্ছে।
এই সেন্টার থেকে নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে ঢাকায় বসে সৌদি আরবে বাংলাদেশি হাজিদের মনিটর করা হবে। প্রত্যেক হজযাত্রীকে সেই অ্যাপের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক দেখভাল করা হবে।
এছাড়া এ বছরের হজে হজযাত্রীদের নগদ টাকা বহন করতে হবে না। এজন্য একটি ডেবিট কার্ড দেওয়া হবে। একই সঙ্গে স্বল্পমূল্যে হজযাত্রীদের রোমিং (বাংলাদেশি সিম ব্যবহার করে সৌদি আরবের মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার) সুবিধা দিতে যাচ্ছে সরকার। হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার থেকে হজযাত্রীদের লাগেজ ট্র্যাকিং করারও ব্যবস্থাও চালু হচ্ছে।
আরও পড়ুন: আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হচ্ছে: ধর্ম উপদেষ্টা
এসব সেবা শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উদ্বোধন করবেন বলে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে। ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন ইউএনবিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানান তিনি।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় হজ পালন নির্বিঘ্ন করতে দেশে এবং মক্কা ও মদিনায় ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর একটি অ্যাপের মাধ্যমে হজযাত্রীদের বিভিন্ন সেবা প্রদান, উদ্ভূত সমস্যার সমাধান, অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত একত্রে প্রাপ্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের কাজ চলছে। এটি আশকোনা হজ অফিসে স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে মক্কা ও মদীনায় আমাদের হজ অফিসে এটি থাকবে। একটি অ্যাপ করা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা সেন্টার ও অ্যাপ উদ্বোধন করবেন। এবারের হজকে সামনে রেখেই এটা করা হবে। অ্যাপটি ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হজযাত্রীদের ডেবিট কার্ড দেওয়া হবে। হজযাত্রীরা এখন থেকে টাকা রিচার্জ করে যাবেন, ওখানে গিয়ে খরচ করবেন। মোবাইল ফোন রোমিংয়ের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত আছে। হজযাত্রীদের আর সেখানে গিয়ে সিম কিনতে হবে না, তারা স্বল্পখরচে রোমিং সুবিধা পাবেন। আগামী ২০-২২ এপ্রিলের মধ্যে এ বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। আশা করি, এবার আরও নির্বিঘ্নে আমাদের হজযাত্রীরা হজ পালন করতে পারবেন।’
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগ থেকে জানান, হাজযাত্রীদের যাত্রার আগে, যাত্রা চলাকালীন এবং ফিরে আসার পরেও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিবে অ্যাপটি। অ্যাপটি বাংলা ভাষায় রিয়েল-টাইম নির্দেশনা ও সহায়তা দিবে। সরকার-সমর্থিত ইসলামী ব্যাংকের বিশেষ ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশের স্থানীয় মুদ্রায় আর্থিক লেনদেন নিশ্চিত করা হবে। কারণ অনেক সময় হজযাত্রীদের নগদ অর্থ বহনে সমস্যা হয়। কেউ কেউ নগদ অর্থ হারিয়ে চরম বিপদে পড়ে যান।
আরও পড়ুন: হজ পালনকারীর সর্বনিম্ন বয়স ১৫ বছর নির্ধারণ
তারা আরও জানান, লাগেজ যাতে হারিয়ে না যায়, সেজন্য লাগেজ ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। কারণ হজে গিয়ে বাংলাদেশিদের লাগেজ হারানোর ঘটনা খুবই কমন। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় হজযাত্রীদের। লাগেজে এক ধরনের ইলেকট্রিক চিপ থাকবে; এজন্য কল সেন্টারে বসে লাগেজ মনিটরিং করা যাবে।
অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে মোবাইল ফোনের হজযাত্রীরা প্রত্যেক দিন ওই দিনের করণীয় ও যাতায়াতের বিস্তারিত বিবরণ জানতে পারবেন, যেদিন যে দোয়া পড়তে হবে সেটা স্মরণ করিয়ে দেবে, যেসব পবিত্র স্থানে যাবেন সেসবের ছবিসহ ইতিহাস বর্ণনা করবে।
হাজীদের মনে কোনো প্রশ্ন জাগলে কল সেন্টারে ফোন করে সে প্রশ্নের উত্তর পাবেন। শরীর খারাপ লাগলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবে কল সেন্টারের কর্মকর্তারা। হাজীদের কোনো পরামর্শ থাকলে সেটা পরামর্শ পৃষ্ঠায় লিখে দিতে পারবেন। ভ্রমণের দৈনন্দিন ঝামেলা যেন হজের মূল লক্ষ্যকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে সেজন্য সব ব্যবস্থা অ্যাপে থাকবে বলেও জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এবার বাংলাদেশ থেকে সরকারি মাধ্যমে ৫ হাজার ২০০ জন এবং বেসরকারি মাধ্যমে এজেন্সির মাধ্যমে ৮৭ হাজার ১০০ জন হজ পালন করবেন। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয়ে শেষ হয় ২৬ ডিসেম্বর। হজযাত্রীদের ভিসা ইস্যু শুরু হয়েছে ১৯ ফেব্রুয়ারি। হজ ফ্লাইট শুরু হবে ২৯ এপ্রিল। এবার হজ কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে ৯৪১টি হজ এজেন্সি।
চলতি বছর সরকারি মাধ্যমে হজ পালনে খরচ সাধারণ প্যাকেজ-১ এ ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা এবং সাধারণ প্যাকেজ-২ এ ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা ধরা হয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি মাধ্যমে হজ পালনে সাধারণ প্যাকেজে সর্বনিম্ন ব্যয় হচ্ছে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা।
আরও পড়ুন: ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’ চালুর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এবার হজে বাংলাদেশ থেকে ৮৭ হাজার ১০০ জন হজযাত্রী হজ পালন করবেন। আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে
২৩১ দিন আগে
হজযাত্রীদের জেদ্দা, মদিনা ও মক্কার বাইরে ভ্রমণ নিষিদ্ধ: সৌদি মন্ত্রণালয়
এখন থেকে হজযাত্রীরা জেদ্দা, মদিনা ও মক্কার বাইরে আর কোথাও ভ্রমণ করতে পারবে না বলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সৌদি আরব।
হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সৌদি আরবে হজ ভিসায় যাওয়া দর্শনার্থীদের এই তিন শহরের বাইরে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, এই ভিসা শুধু হজ পালনের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে, কোনো কাজে যোগ দেওয়া, বসবাস শুরু করা বা জেদ্দা, মদিনা ও মক্কার বাইরে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: হজযাত্রীদের টিকা গ্রহণে লাগবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট
গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করলে বিতিাড়িত করা এবং ভবিষ্যতে হজে অংশগ্রহণের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞাসহ আরও গুরুতর শাস্তি হতে পারে।
এছাড়াও মন্ত্রণালয় জানায়, জিসিসি ভুক্ত দেশগুলো যাদের হজ পারমিটের প্রয়োজন নেই, তাদের ছাড়া সব আন্তর্জাতিক দর্শনার্থীদের অবশ্যই অফিসিয়াল চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে হজ ভিসা নিতে হবে।
হজ ভিসা নেওয়ার পদ্ধতি সহজ করে তুলতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভিসা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে হজ ভিসার জন্য নিবন্ধনের সুযোগ করে দিয়েছে হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট।
তবে আবেদনকারীদের অবশ্যই যিলহজ্জ মাসের ৭ তারিখের মধ্যে অথবা হজযাত্রীদের কোটা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধন করতে হবে।
ভিসা প্ল্যাটফর্মে লগ ইন করে হজ ভিসা নির্বাচন করে নির্দেশাবলী অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র সরবরাহ করতে হবে।
আবেদনপত্রগুলো তিন কার্যদিবসের মধ্যে তৈরি হয়ে যায়। তবে আবেদনকারীদের যত দ্রুত সম্ভব আবেদন করতে অনুরোধ করা হয় যাতে যথাসময়ে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়।
আরও পড়ুন: হজ ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে কাজ করছে সরকার: ধর্মমন্ত্রী
৫৭৭ দিন আগে
রমজানে পবিত্র নগরী মক্কা-মদিনায় ওমরাহ পালনকারীদের উপচে পড়া ভিড়
পবিত্র রমজান মাসে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সৌদি আরবে আসছেন হাজারো মুসল্লি। রমজানের শুরু থেকে সৌদি আরবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ওমরাহ পালনকারীদের সংখ্যা বাড়ছে।
আরবি বর্ষপঞ্জির নবম মাস রমজান। এ সময় সৌদি আরবে সবচেয়ে ভালো আবহাওয়া বিরাজ করে এবং প্রার্থনা, আত্মমূল্যায়ন ও ধর্মীয় নিষ্ঠার জন্য উৎসর্গ করা এই পবিত্র মাস ঐতিহ্যগতভাবে ওমরাহ পালনের শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে গণ্য করা হয়।
যদিও অত্যধিক উষ্ণ তাপমাত্রার জন্য মক্কা সুপরিচিত তবে আশ্চর্যজনকভাবে মার্চ মাসে একটি মনোরম আবহাওয়া বিরাজ করছে।
রমজানের প্রথম জুমা শুক্রবার (১৫ মার্চ) মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ ও মদিনার মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ আদায় করেছেন হাজার হাজার মুসল্লি।
গ্র্যান্ড মসজিদ ও এর আঙিনাজুড়ে ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের ভিড় ছিল এবং কেন্দ্রীয় হারাম এলাকার রাস্তা জুড়েও অবস্থান নেন তারা।
অনেকেই নিজ নিজ হোটেল থেকে জুমা আদায় করেছেন, যেসব স্থান অডিও ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে গ্র্যান্ড মসজিদের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে।
এদিকে, দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম বাদশাহ সালমান ২০২৪ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এক হাজার জনকে ওমরাহতে নিমন্ত্রণ জানান।
২০২৪ সালের চতুর্থ ও চূড়ান্ত ব্যাচের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশের ১৬টি দেশের ২৫০ জন বিশিষ্ট ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও নারী-পুরুষ ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব সফর করছেন।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে রয়েছেন ইসলামিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, ইনফ্লুয়েন্সার, লেখক, বক্তা, শিক্ষক।
শিক্ষক মুনজেরিন শহীদ বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। এসব ঐতিহাসিক স্থানের গল্প জানতাম। এবার নিজের চোখে দেখার সুযোগ পেলাম।’
তিনি বলেন, এখানে ভাষাগত কোনো বাধা বা সাংস্কৃতিক কোনো বিভাজন নেই।
স্বামী আয়মান সাদিকের সঙ্গে প্রথম ওমরাহ পালন করতে আসা মুনজেরিন বলেন, ‘আমি মানুষের মধ্যে অসাধারণ ঐক্য দেখতে পাচ্ছি। আমার আবার আসার ইচ্ছা আছে।’
৬৩০ দিন আগে